#সিঙ্গেল_মাদার
#ফারিন
পর্ব: ০৫
ইরিন চলো না আজ একটু পাগলামী করি
– মাথা খারাপ হলো নাকি তোমার ?
– হুম হয়েছে আজ কয়েকটা দিন ।
– তা কি পাগলামী করতে চাইছো শুনি ??
– বিয়ে করতে চাইছি এখনই
– পাগল নাকি !!
– হুম অনেক বেশি , চলো এখনই
– কি বলছো আব্বু আম্মু জানলে অনেক বকবে ।
– এখন জানানোর দরকার নেই , আমি যখন চাকরি পেয়ে যাবো তখন সরাসরি প্রস্তাব দিয়ে আরো একবার না হয় বিয়ে করবো আমরা ।
– এতো পাগলামী করা কি ঠিক হবে ?
– মন চাইছে আজ একটু পাগলামী হোক ।
ইরিন আর অমত করলো না ,
বাইকে করে দুজনে সোজা চলে গেল কাজী অফিসে , ফোন করে ডেকে নিল মিথি, আশা আপু কে , সাথে রাহাত ও এলো ।
বিপত্তি বাঁধলো রেজিস্ট্রি করার সময় ইরিন কিছুতেই সাইন করতে পারছে না ইরিন কান্না করছে থামানো যাচ্ছে না, আশা ইরিন কে বাইরে নিয়ে এলো আলাদা করে
– ইরিন কান্না করছিস কেন সব ঠিক হয়ে যাবে তো
– আশা আপু আমি আব্বু আম্মু র পারমিশন ছাড়া এতো বড় কাজ কখনো করিনি ।
– তবে রাজি হইলি কেন ?
– ওর পাগলামীতে আপু ।
সৌমিক যা যা বলেছে সব খুলে বললো আশা কে ইরিন
– আচ্ছা তবে ভয় কেন পাচ্ছিস ?? সৌমিক তো তোকে সব কিছু বুঝিয়ে বলেছে আমার ও মনে হয় না কোন সমস্যা হবে ।
আচ্ছা একটা কাজ কর বাসায় একটা ফোন কর , একটু কথা বল দেখ ভালো লাগবে ।
ইরিন আশার কথা মতো বাড়িতে ফোন করে কথা বললো একটু তারপর হাসি মুখে চলে এলো ভেতরে
সব কিছু ঠিকঠাক মতো হয়ে গেল ।
কাজী অফিস থেকে বের হয়ে সবাই যে যার যার মতো যেতে গেলে রাহাত বাঁধা দেয়
– সবাই কোথায় যাওয়া হচ্ছে ?
– ইরিন বললো ” হলে যাব আমরা”
– না বোন তা হচ্ছে না , আমি বাসা ঠিক করে এসেছি সবাই মিলে সেখানে যাব ।
– আশা আপু রাহাত ভাইয়া কি বলছে ??
– “আচ্ছা আমরা এখন গেলে তো ফিরে আসতে পারবো না তো রাহাত ”
– কে বলছে ফিরে আসতে আজ ওখানেই সবাইকে থাকতে হবে ।
– সৌমিক চুপ চাপ শুনছে ইরিনের কান্না দেখে কিছু বলার সাহস হয়ে উঠেছে না ইরিনের দিকে তাকাতেই চোখাচোখি হলো সৌমিকের
সৌমিক চোখ নামিয়ে নিল,
সৌমিকের চোখের ভাষা ইরিনের বুঝতে দেরি হলো না কোথায় যেন একটা খারাপ লাগা কাজ করলো ।
মিথিকে ইশারা করলো ইরিন –
মিথি বলে উঠলো “তবে তাই হোক বেয়াই সাহেব , আমার বান্ধবীর বিয়ে একটু মজা হবে না তা আমিও মেনে নিতে পারছি না ”
– আচ্ছা তোরা যখন এতো করে বলছিস তবে চল , আমি হলে একটা ফোন করে দিই ।
সৌমিক আর ইরিন বাইকে আসলো আর একটা বাইকে রাহাত , আশা আর মিথি উঠলো ।
সৌমিক সারা পথে আর একটা কথাও বলে নি , ইরিন বুঝতে পেরেছে সৌমিকের মন খারাপ হয়ে গেছে , ও কথা বলার চেষ্টা করেছে সৌমিক শুধু জবাব দিয়েছে ।
সবাই চললো রাহাতের ঠিক করা বাসায় সেখানে গিয়ে আবাক সারা বাসা ফুল দিয়ে সাজানো –
তিনটা রুম আছে বাসাটায় সৌমিকের কথা মতো ইরিনের শাড়ি , সৌমিকের পাঞ্জাবী কিনে আনা হয়েছে ।
আশা , মিথি আর ইরিন একটা রুমে গিয়ে বসলো
সৌমিক রাহাত অন্য রুমে গেল ।
– আমার সাথে সৌমিক কথা বলছে না !
– কেন ?
– জানিনা , বুঝতে পারছি না
– আসলে তুই তখন কান্না করেছিস তাই হয়তো একটু অপরাধবোধ কাজ করছে বুঝলি ।
– আমি কি করতাম বল আমার খুব কান্না পাচ্ছিলো
– কান্না পাওয়াটাই স্বাভাবিক ইরিন তুই চিন্তা করিস না সৌমিক বুদ্ধিমান ছেলে ও রাগ করে থাকবে না
– আচ্ছা আপু ।
মেয়েদের মহলে কি আমি আসতে পারি ??
বেয়াই সাহেব এতো মেয়েদের মহলে কি ??
– সুন্দরী বেয়াইন থাকলে সেখানে না এসে থাকতে পারা যায় ।
ইরিন আর আশা হেসে ওঠলো ওদের কথা শুনে ।
রাহাত কিছু বলবে ?
হুম আশা এগুলো নিয়ে আমার বোনটা কে সাজিয়ে দাও একটু !
– আচ্ছা দাও
– তা বিয়ায় সাহেব আমরা কি না খেয়ে থাকবো ??
– আপনি যদি রান্না করে খাওয়ান বিয়ান সাহেবা তবে মন্দ হবে না ।
– গেস্ট দের এমন খাতির যত্ন করেন , আগে জানলে আসতাম না
– এমন খোঁটা কিন্তু মেনে নেব না আপনাদের জন্য কাচ্চির ব্যাবস্থা করা হয়েছে এখনই চলে আসবে –
– আগে বললেই হতো !!
আশা আর ইরিন এই দুজনের মজা দেখছে
ইরিন ভাবছে “মানুষ বদলায় ভীষণ ভাবে বদলায়, হয় ভালো ভাবে নয়তো খারাপ ভাবে” রাহাত ভাইয়া ও বদলে গেছে যেই মিথির চোখে ভয় জড়ানো কান্না ছিল সেই মিথির চোখে আজ গভীর ভালোবাসার প্রলেপ যেটা ইরিন ছাড়া আর কেউ জানে না রাহাত ও না !!
রাহাত কিছু কসমেটিকস আর শাড়ি দিয়ে চলে গেল-
“ইরিন রানী চল তোরে সাজাইয়া দিই একটু পর তো তোর বাসর রাত” বলেই চোখ টিপ দিল মিথি
ইরিনের মুখে লজ্জার আভা ফুটে উঠেছে
“ভালো হচ্ছে না কিন্তু মিথি” !
ঐ তোরা ইয়ার্কি থামা চল আগে রেডি করিয়ে দেই –
সাজগোজের জিনিস পত্র দেখে বড্ড অবাক হলো ওরা
একটা মেরুন রঙের শাড়ি, একটা লিপস্টিক , একটা ঝুমকো দুল , দুডজন চুড়ি , বেলী ফুলের মালা , একটা আলতা , একদম বাঙালিয়ানা সাজের জিনিস পত্র ।
মেরুন রঙের জামদানী শাড়িতে ইরিন কে যেন একটা পুতুল লাগছে সাজগোজ কম্পিলিট ।
খাওয়া দাওয়া করে সবাই যে যার যার মতো শুয়ে পড়লো ইরিন কে সৌমিকের রুমে পাঠিয়ে দেওয়া হলো ,
হুম উল্টোটাই ঘটলো বর অপেক্ষায় বউ রুমে ঢুকলো ।
সৌমিক একটা সাদা রঙের পাঞ্জাবী পরে বসে আছে টেবিলে । ইরিন সামনে আসতেই এগিয়ে এলো ইরিনের কাছে
ইরিন সালাম করতে গেল কিন্তু সৌমিক করতে দিল না
হাত ধরে নিয়ে গিয়ে ইরিন কে চেয়ারে বসিয়ে নিজে মেঝেতে বসে পড়লো ওর সামনে ইরিনের হাত দুটো মুঠোয় পুরে বললো
আমাকে ক্ষমা করে দাও ইরিন !
ইরিন অনেক অবাক হয়ে গেল
“কেন কি হয়েছে” ??
– আমি তোমার মতের বিরুদ্ধে জোর করে বিয়ে করলাম আর তুমি আমার পাগলামি তে সাঁই দিলে
– তখন আসলে ভয় পেয়ে গেছিলাম সৌমিক , কখনো এতোবড় ডিসিশন নেয় নি এর আগে তাই নার্ভাস হয়ে পড়েছিলাম তুমি রাগ করো না প্লিজ
– না ইরিন আমি রাগ করি নি কিন্তু আমার পাগলামি র লেভেল টা একটু বেশী হয়ে গেছে পারলে আমাকে মাফ করে দিও
ইরিন সৌমিকের মন ভালো করার জন্য প্রসঙ্গ পাল্টালো চেয়ার থেকে উঠে গিয়ে অন্য দিকে মুখ ফিরিয়ে ইরিন অভিমানী সুরে বলল
“আজ যে আমি কারোর বউ হয়ে এসেছি তাই আমাকে আর ভালো লাগছেনা এতো সাজগোজ করা একদম অনর্থক , যখন প্রেমিকা ছিলাম না সেজে আসলেও কতো প্রশংসা করতো লোকজন আর আজ ইচ্ছে করেই দেখছেনা আমাকে , লোকে ঠিকই বলে বউ আর প্রেমিকা এক নয় ”
সৌমিক বুঝতে পারলো ইরিনের অভিমান করাটা পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে বললো “আমার পাহাড়ী ফুল কে আজ একদম গ্ৰামের বধু লাগছে আজ আমার বউ এর রূপ ঠিকরে বেরোচ্ছে এই রূপ
শুধু বাইরের না মায়া কন্যা তোমার ভেতরের সত্তার রূপ বলেই ইরিনের চুলের খোঁপা খুলে মুখ গুঁজলো সৌমিক
একটা ঘোরের মাঝেই সব কিছু কেটে গেল –
একটা নতুন সকালের শুরু , নতুন সকালের আকাশ জুড়ে মেঘেদের আনাগোনা ।
বেলা বাড়তেই সবাই হলে ফিরলো ইরিন ক্লাসে যায় নি আজ শুয়ে শুয়ে ভাবছে কোথায় যেন একটা খারাপ লাগা কাজ করছে কিন্তু বুঝে উঠতে পারছে না ।
এরই মাঝে আলো ফিরেছে হলে সব টা শুনে তো সে অবাক, খুব করে জিদ ধরেছে তাকে ট্রিট দিতে হবে
আলো ,মিথি ইরিন মিলে শাটল ট্রেন ধরে শহরে এলো একটা রেস্টুরেন্টে ঢুকে অর্ডার দিয়ে বসে গল্প করছে ।
– দেখা হওয়াটা ভাগ্যে ছিল তাই হয়তো আবার দেখা হলো ।
ইরিন পেছন ফিরতেই দেখতে পেল সেদিনের বাসের অচেনা লোকটা
– খুব ভুল না করলে “আতিক” তাইতো ??
– একদম তাই
– নিউরোলজিস্ট
– সবটাই মনে রেখেছেন দেখছি ।
– রাখবো না বলছেন , আমার এক রাত্রির ঘুম হারাম করে দিয়েছেন
– তবে তাই বেশ ভাগ্যিস ঘুম টা সেদিন এসেছিল নয়তো আপনার মনের কোণে মনে রাখার মত জায়গাটা পেতাম না ।
আলো আর মিথি অবাক হয়ে দেখছে এরা কি বলাবলি করছে ।
– আচ্ছা হঠাৎ এখানে ডাক্তারবাবু , রুগী দেখতে নাকি ??
– এভাবে লজ্জা না দিলেও পারেন ডাক্তার বলে কি ঘুরতে নেই নাকি !!
– ঠিক তা নয় , আমাদের সাথে জয়েন করতে পারেন ।
– যদি সেদিনের সরির ট্রিট টা গ্ৰহণ করেন তবেই জয়েন করতে পারি ।
– না তা হচ্ছে না
– আজ ও কি অপরিচিতের খাতায় নাম টা উঠে আছে ??
– আচ্ছা তাহলে এক কাপ কোল্ড কফি আমাদের খাওয়াতে পারেন ।
আতিক কে সবার সাথে পরিচয় করিয়ে দিল ,
গল্প গুজবে বেশ কাটলো বিকেল টা ।
অনেক টা দিন কেটে গেল ইরিন সংসার এখনো পেতে উঠতে পারে নি দিন গুলো বেশ ছন্দময় গতিতে কেটে যাচ্ছে ।
এদিকে হুরমুড়িয়ে এগোচ্ছে রাহাত আর মিথির প্রেম কাহিনী ।
– কি ব্যাপার ম্যাডামের কোথায় যাওয়া হচ্ছে ??
– রাহাত যেতে বলেছে রে একটু বাইরে যাবো ঘুরতে ।
– একটু একটু করে তবে ট্রেন গাড়ি টা ছুটলো অবশেষে ।
– তুই না থাকলে হতো না ইরিন , তোর জন্যই আমি সাহস করে পা বাড়িয়েছি কিন্তু রাহাত যে এতোটা আমাকে ভালোবাসবে সেটা কল্পনাতীত ছিল।
মিথি বেরিয়ে যেতেই সৌমিককে ফোন দিল ইরিন তিন বার ফোন দিল কিন্তু রিসিভ হলো না রাগে ফোনটা আওড়া দিল বিছানার উপর
ইরিন মনে মনেই ভাবলো আজকাল সৌমিক একটু বেশীই ব্যাস্ততা দেখাচ্ছে চিন্তার রেখা ফুটে উঠলো ওর মুখের ছায়ায় ।
চলবে …