সিঙ্গেল মাদার পর্ব ৬

#সিঙ্গেল_মাদার
#ফারিন
পর্ব: ০৬

সকাল ১০ টায় ক্লাস আছে , ইরিন হন্ত দন্ত হয়ে ছুটছে হল থেকে বেরোতেই মাথাটা কেমন ঝিমঝিম করে উঠলো পাত্তা দিল না ।

আর কয়েক পা এগোতেই ইরিন পড়ে গেল , চোখের সামনে পৃথিবীটা ঝাপসা হয়ে এলো , মা বলে আওড়ে উঠলো তারপরটা আর কিছু মনে নেই ।

যখন ইরিন চোখ খুললো তখন দেখলো আতিক পাশে বসে আছে ।
– কি ব্যাপার নিউরোলজিস্ট বাবু আপনি এখানে কেন ??
– আপনি এসেছেন আমার কাছে আমি আসবো না , সেটা বেমানান দেখাবে ।
রুমে প্রবেশ করলো আলো, মিথি আর আশা ।

মিথি আতিক কে জিজ্ঞেস করলো ” ভাইয়া এখন কেমন আছে ইরিন ” ?
– আমি তো বলতে পারবো না ইরিনের ডাক্তার আসুক উনিই বলবেন
কথা বলতে বলতেই রুমে ডাক্তার ইলিয়াস প্রবেশ করলো রুমে

– ইলিয়াস ভাই রুগির কি অবস্থা দেখে বলুন তো –
– হুম আতিক দেখে নিই আগে ।
সবাই বাইরে চলে গেল

খাওয়া দাওয়া ঠিক ঠাক মতো করা হয় ??
– জ্বি করা হয় ।
– হঠাৎ এমন মাথা ঘুরে পড়ে গেলেন কেন ?
কোনো সমস্যা ছিল আগে থেকে‌ ??
– জ্বি না , তবে খাওয়া দাওয়া তে কিছু দিন অরুচি হয়েছে , বমি লাগছে কিছু খেতে গেলে ।
– আপনি কি ম্যারিড ?
– জ্বি ।
– পিরিয়ড কি মিস গিয়েছে ?
– জ্বি ৩ মাস ।
– টেস্ট করেন নাই কেন ?
– আমার এমন প্রবলেম প্রথম থেকেই হয় তাই আর টেস্ট করি নাই ।
– আচ্ছা এখন টেস্ট করে আসুন ।

ইরিন কিছুক্ষণ পর ফিরে এসে দেখালো টেস্টের রেজাল্ট
– ‘রেজাল্ট তো পজেটিভ , মা হতে চলেছেন নিজের খেয়াল রাখুন” বলেই চলে গেল ডাক্তার ।

ইরিনের মুখে চাপা আনন্দ সে মা হতে চলেছে
ডাক্তার বের হতেই রুমে আতিক, মিথি, আলো, আশা ঢুকলো ।
ইরিন সাথে সাথে আলো মিথি কে জড়িয়ে ধরে কান্না করে দিল , ওরা ও ইরিনের খুশিতে কান্না করে ফেলেছে ।
– কি রে ইরিন রানী, ছোট্ট মেয়েটা ও মা হয়ে গেলি –
– আশা আপু আমি বোঝাতে পারবো না আজ আমার কতো আনন্দ হচ্ছে ।

আতিক মুখে এক চিলতে হাসি টেনে বললো “অভিনন্দন অপরিচিতা”
অনেক ধন্যবাদ নিউরোলজিস্ট বাবু ।

ইরিন ফোন নিয়ে সৌমিক কে কল করলো রিং হয়ে যাচ্ছে কিন্তু ফোন উঠাচ্ছে না , মন খারাপ হয়ে গেল তবুও কাউকে বুঝতে দিল না আরো একবার ফোন দিতেই সৌমিক ফোন উঠালো, ইরিন ফোন নিয়ে বারান্দায় চলে গেল
– এতো বার ফোন দিচ্ছ কেন ইরিন ? দেখছো তো ফোন উঠাচ্ছি না ।

সৌমিকের এমন প্রশ্নে ইরিনের অনেক খারাপ লাগলো নিজেকে সামলে নিয়ে বললো

– সৌমিক আমি হসপিটালে !
– কি বলছো ? কি হয়ছে ? তুমি ঠিক আছো ? আমাকে বলো নাই কেন ??
– জ্ঞান ছিল না সেন্সলেস ছিলাম , মিথি ফোন দিয়েছিল উঠাও নি তাই বললো ।
– ইরিন আমি দলের সাথে আছি , তাই অনেক ব্যাস্ত রাগ করো না পাগলি ।

ইরিনের সব অভিমান একটা কথায় গলে পানি হয়ে গেল ।
– আচ্ছা কখন দেখা করতে পারবে ?
– বিকেলে রেডি থেকো আমি তোমাকে নিয়ে যাবো এসে
– আচ্ছা ঠিক আছে ।

“মেয়েদের অভিমান গুলো বড্ড অদ্ভুত , সামান্য কোনো কথা বা আদরের কোনো ডাকে পাহাড় সমান অভিমান গুলো গলে জলে পরিণত হয়ে যায় ,কিন্তু
আফসোস কিছু প্রিয়তম গুলো হয়তো সেগুলো বুঝতে নারাজ ”

সবাই হলে ফিরে এলো যতোটা ভালো লাগা সকালের আরোষ্ঠ আলোর বিমুগ্ধতাই ছিল ঠিক ততোটাই বেলা গড়িয়ে যেতেই সব যেন কালো আঁধারে ঢেকে এলো ।

– ইরিন কেন এতো চিন্তা করছিস ভাইয়া সব সামলে নেবে –
– আলো আমার খুব টেনশন হচ্ছে তবে এর থেকেও অনেক বেশি খুশি লাগছে আমি মা হয়েছি এটা ভেবে , কিন্তু আব্বু আম্মু কে কিভাবে সব বলবো , কিভাবে ম্যানেজ করবো !
– আচ্ছা আজ ভাইয়ার সাথে দেখা কর তবে দেখ ভাইয়া কি বলে ।

ইরিন রেডি হয়ে বসে ছিল সৌমিকের অপেক্ষায় অবশেষে সৌমিক ফোন দিল
ইরিন হন্তদন্ত হয়ে ফোন রিসিভ করলো

– আসসালামু আলাইকুম কোথায় আপনি ??
– ওয়ালাইকুমুস সালাম , আমি বাইরে আছি তুমি আসো

ইরিন বেরিয়ে গেল , বাইকে উঠে ওরা একটা রেস্টুরেন্টে গিয়ে বসলো
– তোমার কি হয়েছিল সবটা বলো‌
ইরিন সবটা খুলে বললো
– কি বলছো ইরিন আমি বাবা হতে চলেছি ?
ইরিন যেন একটু লজ্জা পেল ও মুখটা নামিয়ে ছোট করে উত্তর দিল ” হুম ”
– আমার অনেক আনন্দ হচ্ছে ইরিন এই প্রথম বাবা হওয়ার এক অন্য রকম অনুভূতি কাজ করছে ।
– একই রকম ভালোলাগা কাজ করছে আমারো ।
– তোমার পড়াশোনার কি হবে ইরিন ?
– আমি সামলে নিতে পারবো কিন্তু আমার অন্য ভয় করছে !
– কিসের ভয় ?
– আমার আব্বু আম্মুকে কিভাবে জানাবো ? কিভাবে সব টা ম্যানেজ করবো ?
– তুমি চিন্তা করো না , আমি আর তুমি তোমাদের বাসায় রওনা হবো কালকেই সন্ধ্যার বাসে , যা হওয়ার হবে ।
– আমার অনেক ভয় করছে সৌমিক ।
– কেন এতো ভয় পাচ্ছো ?
– যদি আমাদের , আমার বাচ্চা কোনোটাই মেনে না নেয় তখন কি হবে ??
– তুমি ভুলে যাচ্ছো কেন তুমি আমার বউ প্রেমিকা নয় আমরা আমাদের সংসার শুরু করবো কষ্ট হবে তবুও না হয় হবে একটা টুনা ,টুনি ও টুনটুন এর পরিবার ।

ইরিন সৌমিকের কথাই খুশিতে কান্না করে দিল হঠাৎ করেই কালো আঁধারের মেঘ গুলো সরে গিয়ে এক চিলতে হাসি ফুটে উঠল ইরিন সৌমিকের মুখে ।

চলবে….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here