#সীমাহীন_ভালোবাসার_নীড়
#লেখিকাঃনওশিন-আদ্রিতা
#সিজানঃ২
#পার্টঃ৩
,
,
,
,
—কাম ইন,,
হঠাৎ কারো গম্ভির আওয়াজে আদ্রির ভাবনার ছেদ ঘটে।তার বুঝতে বাকি থাকে না আওয়াজ টা ভিতর থেকে এসেছে সে সেদিকে এগিয়ে যায়।
—আপনার সাইকোলজিস্ট আমেরিকা গেছেন উনার কিছু কাজে আজ থেকে আপনার চিকিৎসার সম্পূর্ণ্য ভার আমার উপরে। প্লিজ সিট
আদ্রি অবাক হয়ে দেখছে লোকটাকে একমনে ফাইলের দিকে তাকিয়ে কি সুন্দর করে কথা গুলো বলে ফেললো কিছু একটা ছিলো সে আওয়াজে কিন্তু কি সেটা ভাবতে ব্যার্থ হলো আদ্রি শুধু কানে বেজে উঠতে লাগলো পুরুষালী কন্ঠের মুগ্ধতাই জড়ানো সে আওয়াজ
—মিস আদ্রিতা আই ডোন্ট লাইক টু রিপিট মাই সেল্ফ আই হোপ ইউ ক্যান আন্ডার্স্টেড দেন প্লিজ সিটেড
আদ্রি বিনা বাক্যে বসে পড়লো নির খুব সাবধানে আদ্রির সাথে কথা বলে তার ব্যাপারে সম্পূর্ণ ডিটেইলস জেনে নিলো শুধু এক জায়গায় এসে সব গড়মিল পেকে গেলো
—আপনার ফ্যামিলিতে কে কে আছে
—আমি আর আমার ভাইয়া আদ্রিয়ান খান
আদ্রির গম্ভির আর সহজ সিকারউক্তিতে ভ্রু জোড়া কুচকে ফেললো নির। তার হাতে যে ফাইল আছে সেখানে স্পষ্ট লেখা তারা বাবা আর মায়ের নাম তাহলে আদ্রি কেন অস্বিকার করছে নাকি সে তাদের পরিচয় দিতে চাচ্ছেনা যদি দ্বিতীয় টা হয় তাহলে এতে নির এর ই লাভ ভাবতেই তার ঠোটের কোণে ফুটে উঠলো বাকা হাসি ভয়ংকর প্রলয় কারী হাসি।
নিজেকে স্বাভাবিক করে পুনরায় বলে উঠলো
—বাবা মা
—আমার ১২ বছর বয়সে মা মারা গেছে আর আমার বাবা আমার জন্মের পর পর মারা গেছে।
—আজকে এতো টুকু নেক্সট মিটিং সামনের রবিবারে সময় মতো উপস্থিত হবেন বলে আশা করি আর ম্যাডিসিন সময় মতো নিবেন।
আদ্রি মাথা হেলিয়ে চলে যায়।আদ্রির যাওয়ার দিকে এক দৃষ্টিতে তাকায় থাকে নির কোথায় কোন গনিত উনিশ-বিশ ঠেকছে তার কাছে যার কারণে হিসাব মিলতে যেয়েও মিলছেনা। নির আর কিছুনা ভেবে নিজের কর্ট গায়ে জড়িয়ে বেরিয়ে পরলো।
,
,
,
আবর্জনার স্তুপের পাশেই খালি জায়গায় বসে আছে আদ্রি। নোংরা পচে সেখান থেকে বাজে এক স্মেল বের হচ্ছে কিন্তু সে গন্ধ যেনো আদ্রির নাকে যেয়ে লাগছেনা অনুভূতি শুন্য হয়ে বসে আছে উচু মাটির পাশে।
চোখ দিয়ে পানি গরিয়ে পড়লেও ঠোঁটে লেগে আছে অমায়িক এক হাসি
—কেমন আছো আম্মু।নিশ্চয় খুব ভালো আছো।ভালো থাকার জন্যই তো গেছো কিন্তু আমাকে নিয়ে গেলা না এতোটা সার্থপর না হলে কি চলতোনা মা। আমাকে সাথে নিয়ে গেলে কি আমি তোমার সুখের ভাগ বসাতাম। উপরে যেয়ে তো ভালোই আছো তাহলে আমি কেনো ভালো নেই মাম্মা। বাবা মা কেউ নেই আর ভাইয়া সে তো ব্যাস্ত অনেক ব্যাস্ত তার বাবার ব্যাবসা কালো দুনিয়া হস্পিটাল এইসব সামলাতে সামলাতে আমার দিকে তার নজর পরেনা। ছোটবেলায় যখন আমাদের সবচেয়ে বেশি তার প্রয়োজন ছিলো তখন ও সে ছিলোনা এখন ও নাম মাত্রই আছে। আচ্ছা মাম্মা এই এতো বড় পৃথিবীতে কি কেউ একজন নেয় যে সম্পূর্ণ আমার হবে যার সবটাই আমিময় হবে।সবার আগে আমি হবো তার জন্য।যার ভালোবাসার নীড়ে দিন শেষে আমার ঠায় হবে।
আদ্রি তার মাম্মার কবরেই মাথা রেখে ঘুমিয়ে পড়ে তার চোখের পানি ভিজিয়ে দিচ্ছে ময়লার আবর্জনার নিচে দাবিয়ে রাখা তার মাম্মাম এর বুকটা।
দূর থেকে অবাক নয়নে তাকিয়ে সেটা লক্ষ করে চলেছে কেউ একজন ফোন হাতে নিয়ে সম্পূর্ণ টা ক্যামারায় বন্দি করে সেখান থেকে রওনা দেয় কালো মুখোশ ধারী লোকটা।
,
,
,
রাত প্রায় গভীর সারা শহর আদ্রিকে তন্ন তন্ন করে খুজে চলেছে রেয়ান আর আদ্রিয়ান হঠাৎ তারা গাড়ি থামায় নাসরিন(আদ্রির মা)বেগমের কবরের সামনে। লাইট নিয়ে এগিয়ে যেতেই তাদের চোখে পড়ে গুটিশুটি মেরে শুয়ে থাকা আদ্রির উপরে আদ্রিয়ান ফোস করে নিশ্বাস ছেড়ে তাকে কোলে তুলে নেয় আলতো করে।
রেয়ান আদ্রির মাথায় হাত বুলিয়ে হাটা ধরে
—বনু ঠিক কি করতে চাইছে বুঝছিনা আর তুই সব জেনেও কেন চুপ করে আছিস
—সিংহ শিকার করার আগে কি করে।
—কোথাকার সাথে কি কথা বলছি
—সিংহ আগে পিছনে যায় শিকার কে বুঝায় সে নিরীহ হয়ে গেছে। ঠিক যে সময়টা শিকারী ভেবে নেয় সে সিংহ ভয় পেয়ে লুকায় গেছে ঠিক সেই মহূর্তে সিংহ শিকারীকে খুবলে খাই। কিছু বুঝলি মেরে ভাই
রেয়ান সেখানেই নিজের মাথা চুলকাতে শুরু করে। আদ্রিয়ান সম্পূর্ণ কথা তার মাথার উপর দিয়ে যায় এই দুই ভাই বোনের মাথায় কখন কোন খিচুরি পাকে তারা নিজেরাও আদৌ বুঝে কি না আল্লাহ জানে৷
,
,
,
,
অফিসার আবির নিজের চেম্বারে ক্রিমিনাল এর ফাইল দেখছিলো মনোযোগ সহকারে।এমন সময় তার সামনে কনস্টেবল আতিফ কেবিনে প্রবেশ করতেই চোখ তুলে তার দিকে দৃষ্টি নিক্ষেপ করলো। বিরক্তি তার চেহারায় স্পষ্ট
—নক না করে প্রবেশ করতে কতোবার মানা করেছি তোমাকে আতিফ কথা কানে যায়না
—সরি স্যার আসলে একটা ইনফর্মেশান দেওয়ার ছিলো
—বলে ফেলো
—স্যার গোপণ সূত্রে যান গেছে আন্ডারওয়াল্ডের দুইজন বড় বড় মাফিয়া মারা গেছে একজন নাহিদ খানের ভাই হামিদ রহমান আর দ্বিতীয় জন নিহাল চৌধুরীর ভাই নিশান চৌধুরী তাও আবার একই দিনে
আবির এর মুখ টা এবার গম্ভির হয়ে উঠলো কপালে তিক্ষ্ণ ভাজ স্পষ্ট পরিলক্ষিত হলো।
—তোমার কি মনে হয় আতিফ এই দুইটা খুনের পিছনে কে জড়িত
—আই ডোন্ট নো স্যার বাট আমার মতে এই দুইটা খুনের সাথে নিহাল বা নাহিদ দুইজনের মধ্যে কারো হাত ই ন্যায়
—এতো আত্নবিশ্বাস নিয়ে বলার কারণ
—তাদের মৃতুর সময় দুইজনেই ছিলো বাহিরের দেশে কিন্তু অবাক করার বিষয় এতো বছর পরে দুইজন পুনরায় নিজেদের ভাইয়ের মৃত্যুর খবর শুনে দেশে ফিরেছে যেটা সবচেয়ে অবাক করা বিষয়
—হয়তো এই দুইটা খুন করার উদ্দেশ্য ছিলো একটাই এই দুই ব্যাক্তিকে দেশে আনা
—এতে কিন্তু আমাদের দেশের ই ক্ষতি হবে স্যার
—কিভাবে
—এই দুইটা কিট টাকার পূজারী টাকার জন্য নিজের মেয়েকেও হয়তো বেচে দিতে পিছপা হবেনা তারা দেশের ক্ষতি করতে কতোটুকু সময় নিবে। এছাড়াও কম অন্যায় তো করে নি এই দুইটা মানুষ
—এই দুইটার ডেড বডি কই পাওয়া যাবে
—স্যার ডেড বডি তো পাওয়া সম্ভব না কিন্তু হ্যা এই দুইটার ডেড বডির ছবি সেন্ড করেছে গুপ্তচর
আতিফ ফোন বের করে দুইটা ভিডিও ল্যাপটপে সেন্ড করে দুইটা পাশাপাশি রেখে জুম করে দেখতে থাকে। অনেক ক্ষন এক মনে দুইটা দেখার পরে আবির ল্যাপটপের স্ক্রিন টা আতিফের দিকে ঘুরায়
—দুইজনার মাডারার এক না
আতিফ অবাক হয়ে একবার স্ক্রীনের দিকে তো একবার অফিসারের দিকে দৃষ্টি নিক্ষেপ করছে কিছুই তার মাথায় ঢুকছেনা।
—স্যার আপনি সিউর হয়ে কি করে বলতে পারেন এই কথা দুইজনাকে মারার উপায় একেবারে একই দেখেন একটুও উনিশ বিশ নেই এখানে
—হামিদ রহমানের ডেড বডির দিকে তাকাও নরমাল মৃত্যু হলে যেমন চেহারা হয় ঠিক তেমন কিন্তু নিশান চৌধুরীর শরীর একদম সাদা হয়ে গেছে যেনো তারা শরীরে এক বিন্দু রক্র অবশিষ্ট নেয়।এদের বুকের গুলির দিকে এবার তাকাও একজনার বুকে চাকু দিয়ে আঘাত করা হয়েছে চাকুর দাগ স্পষ্ট কিন্তু সে দাগে কোন রক্তর ছিটা ফোটা ন্যায় তারমানে আগে নিশান চৌধুরীর শরীর থেকে রক্ত টেনে নেওয়া হয়েছে তার পরে সেটাতে চাকুর আঘাত করা হয়েছে নির্মম ভাবে দুইটা মৃত্যু দেহতে শুধু একটাই মিল আর সেটা হলো আঙ্গুল কাটা। দুইজনার ই আঙ্গুল কেই উপড়ে ফেলেছে খুনি চাইলে কেটে ফেলতে পারতো কিন্তু তারা সেটা না করে উপড়ে ফেলেছে।
আতিফ চৌধুরী অবাক হয়ে তাকাই রইলো আবির এর দিকে তারা এতোটা নিক্ষুত ভাবে পর্যবেক্ষণ করতে না পারলেও অফিসার আবির কিছু মহূর্তে দুইটা বডির মধ্যে কারের বিস্তার তফাৎ বের করে ফেললো।অফিসার আবিরের বুদ্ধিমত্তা কে এইজন্য বুঝি এতো বাহ বাহ দেওয়া হয়।ভেবে পেলোনা আতিফ।
চলবে!