সীমাহীন ভালোবাসার নীড় পর্ব -০২

#সীমাহিন_ভালোবাসার_নীড়
#লেখিকাঃনওশিন আদ্রিতা
#সিজানঃ২
#পার্টঃ২

,
,
,
,
হামিদ আহমেদের রক্তাত দেহের সামনে বসে আছে রেয়ান এবং নাহিদ খান। রেয়ানের মুখে তেমন কোন ভাবাবেগ না দেখা গেলেও নাহিদ খানের চেহারায় স্পষ্ট আতংক আর রাগের ছায়া বেশ স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছে আদ্রিয়ান।সকালে আননোন নাম্বার থেকে ফোন দিয়ে তাকে জানানো হয় হামিদ আহমেদের ডেড বডির বিষয়ে।

—আই ওয়ান্ট দা কিলার। আমি আমার ভাইয়ের খুনিকে চোখের সামনে চায় যেকোনো ভাবে।

নাহিদ খানের হুংকারে অফিস স্টাফ গার্ড রা কেপে উঠলেও রেয়ান আর আদ্রিয়ান ছিলো অনুভূতি শূণ্য যেনো এমন টা হওয়ার ই ছিলো এতে তাতে বিন্দু মাত্র যায় আসে না।

নাহিদ খান এবার কঠিন দৃষ্টিতে তাকান এর উপরে

—কেমন ছেলে তুই যে নিজের বাবার হত্যকারী কে না খুজে এইভাবে চুপ করে বসে আছিস তোর রাগ উঠছেনা তোর রক্ত কি এতোটাই ঠান্ডা হয়ে গেছে

রেয়ান নাহিদ খানের দিকে কঠিন দৃষ্টিতে তাকায়। চেহারায় কাঠিন্য থাকলেও চোখে রয়েছে এক রাশ ব্যাথা হাজার হোক বাবা ছিলো। ছোট বেলা থেকে বাবা কে এক মহূর্তের জন্য না পেলেও পৃথিবীর কোন এক প্রান্তে নিশ্বাস নেওয়া মানুষ টা তার বাবা ছিলো।যতোই অন্যায় করুক দিন শেষে তার বাবাই তো ছিলো মানুষ টা আজ তার নিথর দেহটা দেখে ছেলের কষ্ট পাওয়াটা স্বাভাবিক কিন্তু তাকে যে খুন করেছে তার প্রতি বিন্দু মাত্র আক্ষেপ নেই তার

—রাগ করে করবো কি বড় আব্বু তোমার ভাই কম তো পাপ করেনি তার পাপের কলস পূর্ণ্য হয়েছে তাই কারো না কারো হাতে প্রান হারিয়েছে কম মানুষের জীবন তো আর নষ্ট করে নি। যায় হোক তুমি বিদেশে ছিলা দেখে উনাকে এই ভাবে রাখা হয়েছে যেহেতু এসেছো নিজের ভাই বন্ধুকে নিজ হাতে দাফন করে দিও।

রেয়ানের চলে যেতেই আদ্রিয়ান নিজের বাবাই এর সামনে এসে বসে।

—বুঝলে তো ড্যাড পাপ তার বাপ কেউ ছাড়েনা। হামিদ চাচ্চুর বডি টা ঠিক ভাবে দেখে নিও তার শরীরে যখম গুলো।আর নিজেকে প্রস্তুত করে নিও একদিন এই অবস্থা তোমার ও হবে।

আদ্রিয়ান বেরিয়ে যেতেই নাহিদ খান দেওয়ালে পিঠ ঠেকিয়ে বসে পরে। চোখ দুইটা বন্ধ করে নিশ্বাস নেন তিনি।ভাইয়ের দিকে তাকিয়ে তাচ্ছিল্যের হাসি দেয় মনে মনে নতুন করে ছোক কষা শুরু করে। সাথে প্ল্যানিং করতে থাকে তার সম্পত্তির এক ভাগ কমে যাওয়াই তার ভাগে কতো আসবে। হঠাৎ হামিদ আহমেদের হাত কাপড়ের নিচ থেকে বেরিয়ে আসে নাহিদ খান সেদিকে দৃষ্টি নিক্ষেপ করতেই থমকে যান চোখ মুখে আলাদা ভয়ের সঞ্চার হয়

হামিদ খানের তালুতে স্পষ্ট লেখা “NC”

ভয়ের আরেক নাম NC যাকে ভয় পাওয়ার জন্য তার চেহারা বা তার আওয়াজের দরকার পরেনা শুধু তার নামটাই যথেষ্ট। আজ পর্যন্ত কেউ জানেনা NC আসলে দেখতে কেমন শুধু মানুষ তার দেহের গঠন হিসবেই তাকে সুদর্শন হিসেবে গন্য করে ন্যায়। হাতে গুনা কয়জন বাদে আজও এনসির চেহারা অদৃশ্য।।।।
,
,
,
,
আমেরিকার ডুপ্লিক্স বাড়ির জানালাই দাঁড়িয়ে অত্যান্ত এক রুপসী নারী কফির মগে ছোট ছোট চুমুক দিয়েই চলেছে। যেনো এটা ছাড়া বর্তমানে আর কোন কিছুই নেই করার মতো

হঠাৎ ইন্টারকোমে কল আসতেই ভাজহীন কপালে ভাজ পড়তে সময় নেয় না। বিরক্তিতে কপাল কুচকে ফোন কানে ধরতেই হাত থেকে কফির মগটা ফ্লোরে পরে ঝংকার তুলে উঠে সে ঝংকারের সাথে নেচে উঠে মেয়েটাও।

খুশিতে পাশে থাকা একটা ফোট ফ্রেম হাতে নিয়ে বুকের সাথে জড়িয়ে ধরে মেয়েটি ছবির উপরে পর পর কয়েকবার নিজের ঠোঁট ছুয়ে সেটা বুকে জোরায় ধরে

—ফাইনালী আই ক্যান মিট ইউ আই ক্যান টাচ ইউ আই ক্যান ফিল ইউ। ইউ নো হোয়াট আই ক্যান ওয়েট ফোর এ সেকেন্ড বাট আই হ্যাভ টু ওয়েট ফর এ উইক বাট দেন ইউ উইল বি মাইন ফোর এভার

২২ বছরের অত্যন্ত সুন্দরী যুবতী ছবিটি বুকে নিয়েই ঘুমিয়ে পরে।যেনো ছবি নয় বরং ছবিতে থাকা কাঙ্ক্ষিত মানুষ টি তার খুব নিকটে।যাকে এক মহূর্তের জন্যেও ছাড়া যাবেনা।

,
,
,
প্রতিদিনের মতো আজও আদ্রি তৈরি হয়ে রওনা দিলো তার সাইকোলজিস্ট এর চেম্বারের উদ্দেশ্য আদ্রিয়ান ব্যাস্ত হওয়াই আজকে তাকে একাই যেতে হচ্ছে।চোখ মুখ এখনো শুকিয়ে আছে। সে ভয় এখনো কাটনি এখনো চোখ জোড়া বন্ধ করলে মনে হয় গুলি তাকে ভেদ করে চলে যাবে। এক কানে অবশ্য এখন কম শুনছে সে অবশ্য এটা সাময়িক ঔষুধ খেলেই ঠিক হয়ে যাবে। হস্পিটালে প্রবেশ করতেই তার চোখ জোড়া আটকে যায় ব্যান্ডেজ করা এক লোকের উপরে। ব্যান্ডেজ ভেদ করে এখনো রক্ত বেরুচ্ছে।হাত পা হঠাৎ ই কাপতে শুরু করলো অস্বাভাবিক ভাবে।কানে বাজতে শুরু করলো বাচ্চা একটা মেয়ের ব্যাথায় কাতরানো আওয়াজ চোখের পর্দায় ফুটে উঠলো অবচেতন অবস্থায় পড়ে থাকা এক নারি আর তাদের সামনে চাবুক হাতে দাঁড়িয়ে থাকা ভয়ংকর পুরুষ।

হঠাৎ পানির ছিটা পড়তেই অবাক হয়ে যায় আদ্রি।তাড়াতাড়ি চোখ খুলতেই তার চোখ আটকে যায় অসম্ভব সুন্দর দুই চোখের কৌটায়। ধূসর রংগের আখিজোড়া বড্ড পরিচিত ঠেকলো তার কাছে।যুবোকটিকে নিজের দিকে এগুতে দেখতেই নিজের পা পিছিয়ে নিতে চাইলে ব্যালেন্স রাখতে না পারায় পরে যেতে নিলেই তার শক্ত বাহু ডোরে নিজেকে আবিষ্কার করতেই যুবোক কে ধাক্কা দিয়ে নিজের থেকে দূরে সরায় দেয় এতে যুবোকটির মাঝে তেমন কোন ভাবাবেগ দেখা গেলো না কিন্তু তার ঠোঁটের বাকা হাসি আদ্রির দৃষ্টি হরণ কররে বাধ্য করলো।অবচেতন মন বলে ফেললো

—এই হাসিতে মরণ অনিবার্য

আদ্রির কথাটা কুর্ণগুহ্বরে প্রবেশ করতেই যুবোক টি হাসে। আগের চেয়ে চওড়া সে হাসি হঠাৎ আদ্রির মুখের কাছে মুখ আনতেন আদ্রি দ্রুত নিজের মাথা পিছনে হেলিয়ে নেওয়ার প্রচেষ্টা করতেই যুবোক হাত দিয়ে বাধা দিলো।

—এই মরণ তোমার জন্য যতোটা সুখ দিবে ঠিক তার যেতে দ্বিগুন তোমাকে ভোগাবে মরণ যন্ত্রণায় অসম্ভব ব্যাথায় কাতরাবে এই হাসি নামক বিষ থেকে রেহাই পেতে।কিন্তু যখন রেহাই দেওয়া হবে পুনরায় এই হাসিতেই আটকানোর জন্য পাগল হয়ে উঠবে৷ না পারবে সাথে থেকে সহ্য করতে আর না পারবা দূরে গিয়ে ভালো থাকতে।। যেমন পাখিরা দিন শেষে তার নীড়ে ফিরে। তাদের #ভালোবাসার নীড়ে

আদ্রি হা হয়ে ওইখানে দাঁড়িয়ে রইলো। তার কানে কথা গুলো ঢুকলেও মস্তিষ্ক অব্দি পৌছাতে অক্ষম হলো এক এক টা শব্দ।কিন্তু মন তার অজনা ভালো লাগায় দোলা দিয়ে উঠলো। এই অনুভূতি কিসের ছিলো সে জানেনা কিন্তু তার মনে অদ্ভুদ এক প্রশ্ন ভাবাচ্ছে তাকে আচ্ছা সে কি আগেও দেখেচে মানুষ টাকে কিন্তু কোথায়?কেন মনে হচ্ছে এই ধূসর রাঙা চোখ সে দেখেছে এর আগেও বহুবার।

আদ্রি ডক্টরের কেবিনে প্রবেশ করতেই আরও একবার ঝটকা খেলো।লোকটা এখানেও থাকবে সে সেটা আসা করেনি চোখ ডোলে সাইনবোর্ডের দিকে পুনরায় দৃষ্টি নিক্ষেপ করতেই চোখ যায় নেম প্লেটের দিকে পুরাতন নেম প্লেটের বদলে নতুন নেম প্লেট যেখানে স্পষ্ট ইংলিশ শব্দে লিখা

“সাইকোলজি স্পেশালিষ্ট NIR Chowdhury ”

আপন মনেই কয়েকবার নামটা বিরবির করে বলে উঠে আদ্রি নামে কেমন যেনো কিছু একটা খুজার চেষ্টা করছে সে কিন্তু কি সেটা সে নিজেও জানেনা কিন্তু কিছু একটা খুজে তাকে বের করতেই হবে যেনো এটা মনে মনে ঠিক করে তার ডক্টর আবিদুর রহমানের কেবিন খুজার জন্য পা বারাতে নিলেই ভিরর থেকে গম্ভির গলার আওয়াযে আদ্রির গলা শুকিয়ে কাঠ হয়ে যায় পা নড়ার অবস্থা থাকেনা।

চলবে!

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here