সীমাহীন ভালোবাসার নীড় পর্ব -০১

ভার্সিটির গেটে পা দিতেই পর পর দুইটা গুলি আদ্রির কান ছুই ছুই করে চলে যায়।ভয়ে আৎকে উঠে আদ্রি ।কানে এসে প্রচন্ড জোড়ে বার বার বারি খেতে শুরু করে গোলাগুলির তীব্র শব্দ। কানে হাত দিয়ে সেখানেই স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে পড়ে সে। সেখান থেকে যে দৌড়ে অন্য কোন জায়গায় যাবে সেটাও যেনো সম্ভব হচ্ছেনা। হঠাৎ তার মানসপটে ভেসে উঠে কিছু আবছা ছবি।কিন্তু সেই ছবি বেশিক্ষন স্থায়ী হয়না হঠাৎ বিকট আওয়াজ তার কানে এসে পড়তেই চোখে আপন মনেই খুলে যায় চোখের সামনে একজন পুরুষের রক্তাক্ত দেহ দেখে চিল্লিয়ে সেখানে পড়ে যেতে নিলেই কেউ যত্ন করে নিজের বাহু বন্ধনে আবদ্ধ করে নেয়। যুবোকটির মুখ শান্ত গম্ভির থাকলেও চোখ দুইটা ছিলো বিরক্ত আর রাগ এ ভরা কালো লঙ্গ হুডি পরা ব্যাক্তিটি ভিতর ভিতরে রেগে থাকলেও তার চেহারা দেখে সে রাগ অনুমান করা সম্ভব নয়।ভিতরে সে যতোটা রেগে আছে বাহির টা ঠিক ততোটাই শান্ত আর স্বাভাবিক যেনো কিছুই হয়নি।

তার চেহারা আটকে যায় আদ্রির কানে লেগে থাকা রক্তে।আলতো হাতে রক্ত স্পর্শ করতে নিবে তার আগেই কানে কারো আওয়াজ আসতেই হাত টা থেমে যায় একটা মহিলা গার্ড কে চোখ দাড়া ইশারা করতেই মহিলাটি দ্রুত আদ্রিকে ধরে ফেলে।যুবোক টি নিজের হুডি ঝেড়ে রক্তাক্ত ব্যাক্তির দিকে এগিয়ে যায়

—নির এই কিছু স্বিকার করতেই রাজি না। একটাই কথা বলছে সে নাকি কিছু জানেনা

—ওই না জানলেও ওকেই বলতে হবে রিয়াজ হাজার হোক নাহিদ খানের রাইট হ্যান্ড বলে কথা গোডাউনে নিয়ে আই

নির যেতে নিলেই মহিলা গার্ড নির কে উদ্দেশ্য করে বলে উঠে

—স্যার মেয়েটার কি করবো

—ভার্সিটিতে যেহেতু এসেছে ভার্সিটির স্টুডেন্ট হবে ওইখানে কোন মহিলা টিচার এর কাছে ফেলে দিয়ে আসো

—ওকে স্যার

গার্ড চলে যেতে নিলে নির পুনরায় তাকায় কেন জেনো পা টা বাড়াতে ইচ্ছা করছেনা। অজনা অস্বস্তি তে ভর করে ফেলেছে হঠাৎ করে তার সারা শরীর আসাঢ় হয়ে এসেছে।দুই মহূর্ত সময় নিয়ে নিজেকে স্বাভাবিক করে চোখে সানগ্লাস চোখে পড়ে গাড়িতে উঠে বসে।

(গম্ভির রাগী ২৮ বছরের যুবোক নির চৌধুরী না আছে টাকার অভাব না আছে সৌন্দর্যের অভাব। যতোটা সুন্দর তার চেহারা ঠিক ততোটাই কঠোর তার হৃদয় ঠিক পাথর এর ন্যায়।মাফিয়া নামক শব্দ টার সাথে আমরা সবাই পরিচিত সে ভয়ংকর কালো দুনিয়ার প্রশাসক বলা চলে যার চোখের ইশারা আন্ডার গ্রাইন্ডের সবাই চলে।

আদ্রিতা আদ্রি খান।নাহিদ খান এবং নওরিন খানের ছোট মেয়ে। বাংলাদেশের টোপ 10 হার্ট সার্জন মাঝে স্থানপ্রাপ্ত আদ্রিয়ান খানের আদরের ছোট বোন। এবার ব্যবসা বানিজ্যের উপর অনার্স করছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে।)

______

চেয়ারে হাত পা বাধা অবস্থাই অর্ধজীবিত অবস্থায় পরে আছে নাহিদ খানের বিসস্ত ব্যাক্তি হামিদ আহমেদ।পুরো শরীর ক্ষত বিক্ষত অবস্থায় চোখ বন্ধ হওয়ার জন্য হাজারো চেষ্টা করছে কিন্তু সেটা সম্ভব হয়ে উঠছেনা যখন ই চোখ বন্ধ করছে ঠিক তার ২ সেকেন্ড পরেই বরফের ন্যায় ঠান্ডা পানি এসে তার শরীর কে হিম করে দিচ্ছে।

খট করে অন্ধকার রুমের সকল আলো জ্বলে উঠে।তার সামনে দাঁড়িয়ে আছে কালো পোশাক পরিহিত কিছু সংখ্যক লোক যাদের গুনার মতো ধৈর্য শক্তি অবশিষ্ট ন্যায় হামিদ আহমেদের মস্তিষ্কে কিন্তু ঠিক ঘন্টা ৩ এক আগেই নাহিদ খানের কালো ব্যাবসার সকল টাকা তিনি হিসেব করতেন।
হামিদ খান কষ্টে চোখ তুলে তাকিয়ে দেখে স্বয়ং নির চৌধুরী তার সামনে দাঁড়িয়ে আছে।

— “দা ড্যাভিল,”

হামিদ খানের বিরবির করে বলা কথা গুলো যেনো স্পষ্ট টের পেলো নির। সেজন্যই তো গম্ভির মুখে বিরাজিত লাল ঠোঁট জোড়ার কোণে ভেসে উঠলো মুচকি হাসি যেটা দেখে ব্যাথাতুর শরীর নিয়ে যেনো মুগ্ধ হন হামিদ আহমেদ।

—মিস্টার হামিদ আহমেদ কেমন আছেন আমার এই সুঠাম দেহী ছেলেরা আপনাকে খাতির যত্ন করেছে তো ঠিক ভাবে কোন কমতি রাখেনি তো

—মেরে ফেল আমাকে

—ওহ কাম ওন আমি এতো সুন্দর করে কথা বলছি আর আপনি আমাকে ছেড়ে যেতে চাচ্ছেন দেটস টোটালি আনফেয়ার বেবি

নির এর মজা করে বলে উঠা বাক্য গুলা হামিদ আহমেদ কে ঘামতে বাধ্য করছে।সে জানে খুব তাড়াতাড়ি তার সামনে আসতে চলেছে এই অত্যান্ত সুদর্শন যুবোকের ভয়ংকর রুপ।

—তুই মেরে ফেললেও আমি তোকে কিছুই বলবোনা সেটা তুই জানিস তাহলে কেনো আমাকে বাচিয়ে রেখেছিস

এবার সত্যি সত্যি নির এর চোখ মুখের রং পাল্টে গেলো শান্ত চোখ জোড়া হয়ে উঠলো অস্বাভাবিক আর ভয়ংকর।চেহারায় রক্তিম আভা ফুটে উঠতেই সিউরে উঠলো হামিদ নামক ব্যাক্তিটি তার চোখ মুখে আতংক। নির রিয়াজ নামক ছেলেকে ইশারা করতেই সে একটা মাঝারি আকারের চিমটা এনে নির এর তালুতে রাখলো।সেটা দেখে হামিদ আহমেদ নিজের আখি জোড়া মুঝে নিলেন নিজেকে মানষিক ভাবে প্রস্তুত করতে লাগলেন নিজের অস্বাভাবিক মৃত্যুর জন্য চোখের পর্দায় ভাসতে শুরু করলো নিজের সমস্ত অপকর্ম শেষ দৃশ্যতে ফুটে উঠলো অসম্ভব সুন্দরী এক নারীর অসহায় চেহারা আর তার নিকটেই দাঁড়িয়ে কান্না করা এক ছোট বাচ্চা।

ঠিক সেই মহূর্তে নির হামিদ আহমেদের সব আঙ্গুল গুলো একটা একটা করে উপড়ে ফেলতে শুরু করলো

হামিদ খানের গগন কাপানো চিৎকার যেনো তার কান কে অদ্ভুদ প্রশান্তি দিলো অজান্তেই তার মুখ দিয়ে বেরিয়ে গেলো

—তোর এই নোংরা আঙুল এই পৃথিবীর সবচেয়ে পবিত্র নারীকে স্পর্শ করেছে।তোর এই নোংরা আঙ্গুল তাকে কষ্ট দিয়েছে এই আঙ্গুল এর ন্যায় তোর শরির প্রত্যেক টা অঙ বিভক্ত করবো হাজারো টুকরাই। তোদের রক্ত আমার মানসিক পিড়াকে শান্ত করবে অদ্ভুদ প্রশান্তি দিবে।

_________

হস্পিটালের আলিসান কেবিনে শুয়ে আছে আদ্রি।চোখ জোড়াই ভেসে উঠলো তখন কার গোলাগুলির দৃশ্য।চট করে খুলে যায় আখি জোরা। পুরো শরীর ঘেমে ন্যায় একাকার হয়ে যায়। মাথা বাথায় ছিড়ে পরে হাত টান লাগায় ক্যনোলার সুই এ হাত রক্তাক্ত হয়ে যায়।

হঠাৎ প্রচন্ড উত্তেজিত হয়ে যায় চোখের সামনে ভেসে উঠে অস্পষ্ট কিছু রক্তাক্ত দেহের ছবি।পাশে থাকা স্টান্ড ছুড়ে ফেলে দেয়। নিশ্বাস আটকে আসায় জোড়ে জোড়ে শ্বাস নিতে থাকে।

—মেরো না ছেড়ে দেও প্লিজ প্লিজ ছাড়ে দেও ব্যাথা উহ ব্যাথা আহ নাহ আর মেরো না

আদ্রির আহজারিতে আদ্রিয়ান এর কানে যেতেই ছূটে আসে।বোন এর কাছে এগুতে নিলেই আদ্রিতা ভয় পেয়ে দেওয়ালে সেটে যায়।দুই হাত দিয়ে মুখ ঢেকে ফেলে কানে ভেসে আসছে চাবুকের তীব্র আওয়াজ সাথেই বারছে আদ্রিতার ব্যাথায় কাতরানো আওয়াজ

আদ্রিয়ান জোড় করে বোন কে বুকে আগলে নেয়।

—ভাই ভাই লক্ত ভাই বাচাও আমাকে লক্ত ব্যাথা আম্মু যাবো ভাইয়া তুমি কই।মেরো না আমি খেলবোনা সত্যি মেলোনা আমাকে

—বোন আমার সোনা বাচ্চা চোখ খুল দেখ আমি তোর ভাইয়া তোর আদ্রিয়ান ভাইয়া তুই আমার কাছে আছিস ঠিক আছিস বোন আমার তাকা দেখ ভাইয়া ডাকছে

আদ্রিয়ান এর কোন কথাই আদ্রির কানে ঢুকতে সক্ষম হয়না তার মস্তিষ্ক এক জায়গায় এসেই আটকে গেছে।আদ্রিয়ান আর উপায় না পেয়ে আদ্রিকে ঘুমের ইঞ্জেকশান পুশ করে দেয় কিছুক্ষন ছুটার জন্য হাত পা ছুড়লেও পরে একসময় আদ্রিয়ানের বুকে নিজের নিস্তেজ শরীর টা ছেড়ে দেয় অজ্ঞান অবস্থায় বলে উঠে

—ভাইয়া বাচাও

কথা টা শুনা মাত্রই শক্ত করে বুকের মাঝে আদ্রিকে জড়িয়ে ধরে কেদে দেয় বিরবির করে বলে উঠে

—আমাকে মাফ করে দে সোনা বাচ্চা আমি পারিনি আমার বোন কে সেভ রাখতে আমি ব্যার্থ ভাই ব্যার্থ ছেলে।

আদ্রিয়ান আদ্রির কপালে ভালোবাসার পরশ দিয়ে তাকে বেডে শুয়ায় দেয়। তখন ই কেবিনে প্রবেশ করে রেয়ান(সম্পর্কে আদ্রিয়ানের বেস্ট ফ্রেন্ড আরও একটা সম্পর্ক আছে সেটা পরে বলবো)

—কি করে হলো এসব রেয়ান গার্ড থাকার স্বর্তেও

আদ্রিয়ানের গম্ভির কন্ঠে রেয়ান ঘাবড়ে গেলেও নিজেকে ধাতস্ত করে সকালে ঘটে যাওয়া ঘটনা বর্ণনা করে

—বোনু রোজকার মতোই ভার্সিটি পৌছেছিলো সাথস গার্ড দুইজন ও ছিলো। হঠাৎ বনু একজন কে পাঠায় পানি আনতে আরেকজন কে পাঠায় আইস্ক্রিম আনার জন্য ওর উদ্দেশ্য ছিলো ওদের দুইজনকে বোকা বানিয়ে মাইশার সাথে ঘুরতে যাওয়ার সেজন্য গেটের কাছে দাড়িয়েই ওর জন্য অপেক্ষা করছিলো হঠাৎ সেখানে মাফিয়া লিডার N.Cচ এবং তার লোক গুলো আসে আর ফায়রিং শুরু করে।গার্ড গুলো এগুতে নিলে তারাও আহত হয় N.C এর গ্যাং এর ই মহিলা গার্ড বনুকে হস্পিটালে থুয়ে আসে

সব শুনে আদ্রিয়ান এর ভ্রু যুগোল কুচকে গেলো। হঠাৎ করে গভীর এক ভাবনায় যেনো হারিয়ে গেলো সে। কিছু একটা ভাবতে নিলেই তার আগেই তার ফোন বেজে উঠে।

#সীমাহীন_ভালোবাসার_নীড়
#সিজানঃ২
#লেখিকাঃনওশিন আদ্রিতা
#পার্টঃ১

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here