সুঁই সুতোর আসক্তি পর্ব -০৯

#সুঁই_সুতোর_আসক্তি
#পর্বঃ০৯
#লেখিকাঃঅনন্যা_অসমি

গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন কায়াসা।তার পায়ের কাছে বসে আছে এশান।সে কায়াসার পাশে যত্ন সহকারে মলম লাগিয়ে দিচ্ছে।মলম লাগানো শেষ হলে এশান কায়াসার মাথার কাছে এসে তার মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে থাকে।

” আমি জানি সুঁই তোমার এই অবস্থা কে করেছে।আর যে করেছে তাকে তো আমি এতো সহজে ছাড়বোনা।তাকে তার কাজে জন্য অবশ্যই শাস্তি পেতে হবে।আমার সুঁইকে কষ্ট দিয়ে কেউ কখনো ভালো থাকতে পারেনি আর পারবেওনা।আমি দেবোনা তাকে ভালো থাকতে।”

অন্যদিকে,

নাইট ক্লাব থেকে পার্টি করে বেরিয়েছে জেমি।প্রতিদিন রাত পর্যন্ত নাইট ক্লাবে থাকা তার কাছে নতুন কিছুনা।(অনেকেই হয়তো ভাবছেন জেমি যদি এতোটা খারাপ হয় যে যে রাত-বিরেতে নাইট ক্লাব যায় তাহলে সে কি করে মেডিকেল চান্স পেলো।তো আসল কথাটা হচ্ছে জেমির এসব পড়াশোনার প্রতি কোন ইন্টারেস্ট কোন কালেই ছিলনা।সে পড়াশোনায় তেমন একটা ভালোনা।সে তার বাবা-মায়ের চাপে পড়ে মেডিকেলে ভর্তি হয়ে।আর মেডিকেলেও সে নিজের যোগ্যতাই নয় বরং নিজের বাবার ক্ষমতায় ভর্তি হয়েছে।)

জেমি অনেক নেশা করেছে তাই সে ঠিকঠাক মতো হাঁটতেও পারছেনা।জেমি টলতে টলতে তার গাড়ির দিকে যেতে থাকে।হঠাৎ কোথা থেকে একটা লোক এসে জেমি ধাক্কা দিয়ে রাস্তায় ফেলে দেয় যার ফলে জেমি খুব খারাপ ভাবে পায়ে হাতে ব্যথা পাই।

” ইউ বাস্টার্ড।আর ইউ ব্লাইন্ড?ইফ আই ক্যাচ ইউ দ্যান আই উইল কিল ইউ।” রেগে কথাগুলো বলে জেমি।জেমি অনেক কষ্ট করে উঠে তার গাড়ির কাছে যায়।জেমির গাড়ির ড্রাইভিং সিটে আগে থেকেই একটা ছেলে বসা ছিল।জেমি দেখে ছেলেটা তাকে জরিয়ে ধরে।

” বেবি তোমার এতো দেরি হলো কেন?”

” আর বলোনা রোহান বেবি একটা বাস্টার্ড আমাকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিয়েছিল।”

” ও সো স্যাড।আচ্ছা তাহলে যাওয়া যাক?”

” না বেবি আজ না।আমি পায়ে ব্যথা পেয়েছি।তুমি বরং আমাকে বাড়ি পৌঁছে দাও।”

” কিন্তু আমি যে এতো কিছু প্ল্যান করলাম?”

” আই এম সো সরি বেবি।কিন্তু তুমি একটু বুঝো আমার পায়ে তো ব্যথা পেয়েছি।এখন এসময়ে কোন মজাই করতে পারবোনা আমরা।”

” আচ্ছা ঠিক আছে তবে কালকে পাক্কা যেতে হবে কিন্তু।”

” ইয়া বেবি কাল অবশ্যই আমরা আলাদা করে টাইম স্পেন্ড করবো।”

পরেরদিন সকালে,

সময় মতো সব কাজ শেষ করে কলেজে উদ্দেশ্য বেরিয়ে পড়ে কায়াসা।এখন তার পা পুরোপুরি ঠিক আছে।সে মনে করছে এমনিতেই ঠিক হয়ে গিয়েছে কিন্তু সে তো আর আসল কথাটা জানেনা।

কায়াসা যখন কলেজের গেটের কাছাকাছি চলে এসে তখন একটা সিলবার কালারের গাড়ি এসে থাকে।কায়াসা গাড়ির পাশে দিয়ে যেতে নেবে তখনিই গাড়ির দরজা খুলে যায়।কায়াসা পিছিয়ে আসে।গাড়ি থেকে বেরিয়ে আসে জেমি,তবে সে এখনো কিছুটা খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে হাঁটছে।জেমি কায়াসার দিকে একবারের জন্যও ফিরে তাকাইনি।কায়াসাও আর সেদিকে মনযোগ না দিয়ে নিজের ক্লাসে চলে আসে।

ক্লাসের মাঝে কায়াসা ওয়াশরুমে আসে।সে যখন বেসিনে হাত ধুচ্ছিল তখন দরজা বন্ধ করার শব্দ তার কানে আসে।কায়াসা পেছন ফিরে দেখে জেমি দরজার কাছে দাঁড়িয়ে আছে।কায়াসা সেদিন ওতোটা মনোযোগ না দিয়ে হাত ধুয়ে চলে যেতে নেয় কিন্তু জেমি তাকে যাওয়া থেকে আঁটকে দেয়।

” কিছু বলবেন আপু?”

” কিসের আপু হ্যাঁ?জেমি আমার নাম।”

” জ্বি কিছু বলবেন? কায়াসা যথেষ্ট বিনয়িভাবে কথা বলার চেষ্টা করছে।

” এই তোর কি কোন বয়ফ্রেন্ড আছে নাকি?”

” এসব কি বলছেন আপনি?”

” যেটা জিজ্ঞেস করছি সেটার উওর দে।আমার তো মনে হয় তুই এসব করিয়েছিস।”

” কি করিয়েছি আমি?”

” এই শোন আমার সামনে এতো নাটক করার দরকার নেই।আমি জানি কাল তুই তোর কোন বয়ফ্রেন্ডকে দিয়ে আমাকে ধাক্কা মারিয়েছিস।যাতে আমি পড়ে যায় আর পায়ে ব্যথা পাই।তোকে কাল ফেলে দিয়েছিলাম এটাই প্রতিশোধ নিয়েছিস তুই।তাইনা?” কায়াসার হাত চেপে ধরে ধরে জেমি।

” আ….আপু আমার লাগছে।আর আমি সত্যি বলছি আমি এরকম কিছু করাইনি।”

” সত্যি বলছিস তো?” আরো জোরে হাত চেপে ধরে জিজ্ঞেস করে জেমি।

” হুম সত্যি।”

” যা ছেড়ে দিলাম।তবে তুই এটা ভাবিস না যে আমি তোকে ছেড়ে দিয়েছি।আমি যদি জানতে পারি যে এটা তুই করেছিস তাহলে তোকে ছাড়বোনা।কথাটা মনে রাখিস।”

জেমি কথাগুলো বলে দরজা খুলে চলে যায়।কায়াসা নিজের হাতের দিকে তাকাই।হাতে জেমির আঙ্গুলের ছাপটা বসে গিয়েছে।

বাসায় এসে ধম করে দরজা বন্ধ করে কায়াসা তারপর নিজের ব্যাগটা সোফায় ছুড়ে মেরে মাথায় হাত দিয়ে সোফায় বসে পড়ে সে।তার এখন রাগে মাথা ফেটে যাচ্ছে।

” আ………” মাথা চেপে ধরে জোরে চিৎকার করে উঠে কায়াসা। ” এমনিতেই আমার লাইফ কম ঝামেলা নেই তার উপর না জানি এই সাইকো,পাগল খুনিটা কোথা থেকে উড়ে এসেছে।আ……এইযে আপনি কি শুনতে পাচ্ছেন?পাচ্ছেন আমাকে শুনতে?শুনতে পেলে শুনুন আমার লাইফ থেকে চলে যান।কেন আমার লাইফে ইন্টারফেয়ার করছেন?আমার সমস্যা আমি বুঝে নেবো আপনাকে নাক গলাতে হবেনা।শুনতে পেয়েছেন আপনি?” রাগে চিৎকার করে কথাগুলো বলে কায়াসা।আসলে জেমি চলে যাওয়ার পর কায়াসা ক্লাসে চলে এসেছিল তবে সে তখনো জেমির বলা কথাগুলোই ভাবছে।হঠাৎ তার বইয়ের পেজে চোখ পড়লে মনে পড়ে সুতো মানে এশানের দেওয়া চিঠির কথা।এরপর কায়াসার আর বুঝতে সমস্যা হয়নি যে জেমির সাথে কাজটা কে করে।এশান এসব করেছে জেনে কায়াসা রাগে ফুসে উঠে।সে অনেক কষ্ট করে ক্লাসে নিজের রাগ সংযত রেখেছিল কিন্তু বাসায় এসে আর নিজেকে কনট্রোল করতে পারেনি।

” কুল ডাউন কায়ু কুল।তুই শুধু শুধু চিৎকার করছিস।তোর কথা তো কেউ শুনতে পাচ্ছে না তাহলে চিৎকার করে কি লাভ?আ……যদি আমি একবার ওই চিঠিওয়ালা সুতো না কি যেন নাম ওকে পাই বা ওর সাথে কথা বলতে পারিনা তাহলে ওর গুষ্টির ষষ্ঠী করিয়ে ছাড়বোনা।তা না হলে আমার নামও কায়াসা না।”

কথাগুলো বলে কায়াসা নিচে থেকে ব্যাগটা উঠিয়ে রুমে চলে আসে।এদিকে এতোক্ষণ টিভি স্ক্রিনে কায়াসার কান্ডগুলো দেখছিল এশান।সে গম্ভীর মুখ করে স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে আছে।হঠাৎ করেই এশান জোরে জোরে হাসতে শুরু করে।

” সুঁই আমি তোমার লাইফে যখন এসেছি তখন তো আর এতো সহজে যাবোনা।আমি যে আসক্তিতে আসক্ত হয়েছি তা যে যাওয়ার নয়।আর লাইফে ইন্টারফেরার কথা?সেটা তো আমি অবশ্যই করবো।কারণ ওটা তোমার লাইফ হলেও এখন তাতে আমার রাজত্ব চলবে।আমি যা চাইবো তাই হবে।তবে সুঁই তুমি এটা ভেবোনা আমি তোমাকে বন্দী করে রাখবোনা।না তা কখনোই হবেনা,তুমি নিজের মতো স্বাধীন ভাবে চলতে পারবে তবে আমার ইচ্ছের বিরুদ্ধে তুমি কিছুই করতে পারবেনা।কিছুনা।”

সন্ধ্যায় টিউশন থেকে ফিরছে কায়াসা।সে রাস্তায় আনমনে হাঁটছে।হাঁটতে হাঁটতে সে হঠাৎ একটা বাইকের সামনে পড়ে যায়।

” সরি।” এটা বলে কায়াসা চলে যেতে নিলে বাইকওয়ালাটা তাকে পেছন থেকে ডাকে।

” এইযে মিস।”

” জ্বি বলুন।”

” এই সময়ে বাইরে কি?দেখা যখন হয়ে গিয়েছে চলো তোমাকে তোমার বাড়ি পৌঁছে দিয়ে আসছি।”

” ধন্যবাদ বলার জন্য তবে আমি নিজে চলে যেতে পারবো।আর আমি অপরিচিত কারো সাথে কোথাও যায় না।”

” এখনো কি আমাকে অপরিচিত মনে হচ্ছে?” বাইক ওয়ালাটা হেলমেট খুলে বলে।

” আদ্রিক আপনি?তাও বাইকে?আপনার গাড়ি কোথায়?”

” কেন আমি বাইক চালাতে পারিনা নাকি?”

” না তা না।”

” সেসব বাদ দাও এবার উঠো।তোমাকে পৌঁছে দিয়ে আসি।”

” না……”

” চুপচাপ বাইকে উঠে বসো নয়তো তুলে নিয়ে যাবো।আর তোমাকে তুলে নিয়ে আমি কিন্তু তোমার বাসায় দিয়ে আসবোনা আমি তোমাকে আমার বাসায় দিয়ে আসবো।আর কুকির সাথে…… ”

” হয়েছে হয়েছে আর বলতে হবেনা।বুঝতে পেরেছি আমি।” বিরক্ত নিয়ে কথাটা বলে কায়াসা।কায়াসা আর কথা না বাড়িয়ে চুপচাপ বাইকে উঠে বসে আর বিরবির করে আদ্রিককে উদ্ভব সব গালি দিতে থাকে।

চলবে……..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here