সেই তুমি ৩ পর্ব ৯+১০

##সেই_তুমি🍁
#সিজন_০৩
#পর্ব_০৯
#Tabassum_Kotha

হীরকে নিজের বুকের সাথে মিশিয়ে রেখেছে রায়ান। হঠাত্ করে তাকে বুকে জড়িয়ে নেওয়ায় অবাকের শেষ সীমায় পৌঁছে গেছে হীর। হীরের কিছু বুঝে উঠার আগেই রায়ান হীরের ঘাড়ের ওপর পরে থাকা চুল গুলো একহাতে সরিয়ে তার ঠোঁট জোড়া হীরের ঘাড়ে স্পর্শ করালো। এই ঘটনায় ভয়ে আতকে উঠে হীর। এখন সত্যিই হীরের প্রচন্ড ভয় হচ্ছে। সে ভেবেছিল সে রায়ানের বিরুদ্ধে প্রমাণ জোগাড় করে এখান থেকে চলে যাবে কিন্তু রায়ানের এহেম কাণ্ডে হীরের হাত পা কাপা শুরু হয়ে গেছে। অনেক বড় ভুল করে ফেলেছে সে এখানে এসে। এখন নিশ্চয়ই রায়ান তার সাথে খারাপ কিছু করতে চলেছে। নিজেকে রায়ানের বুক থেকে সরানোর জন্য রীতিমতো হাত-পা ছোড়াছুড়ি শুরু করে দিয়েছে হীর। কিন্তু দুর্বল শরীরে রায়ানের মোকাবেলা করতে হিমশিম খাচ্ছে।

কিছু সময় এভাবেই হীরকে নিজের বাহুডোরে আবদ্ধ রাখার পর আস্তে আস্তে রায়ানের বাহুডোর আলগা হতে থাকে। হীরকে নিজের বুক থেকে সরিয়ে রায়ান তার দিকে তাকিয়ে একটা ডেভিল হাসি দিয়ে খানিকটা দূরে সরে দাঁড়ালো। রায়নের সব কর্মকাণ্ড যেন হীরের মাথার উপর দিয়ে যাচ্ছে। সে কিছুই বুঝতে পারছে না কি হচ্ছে। এদিকে রায়হানের প্রতি ভীষণ রাগ হচ্ছে হীরের। ইচ্ছে করছে তার গালে একটা চড় বসিয়ে দিতে।

পিছনে কারো উপস্থিতি টের পেয়ে পিছন ফিরে তাকাল হীর। সারপ্রাইজ দিয়ে ভরা দিনের হয়তো কেবল শুরু।
তুর্যকে দরজার সামনে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে আরেকদফা চমকে উঠল সে। এই সময়ে এখানে তূর্যর উপস্থিতি একদমই আশা করেনি সে। তুর্য কে দেখে মনে হচ্ছে এতোক্ষণ এই ঘরে যা কিছু হয়েছে সবটাই সে দেখে নিয়েছে। এখন হীর সব বুঝতে পারছে। এতোক্ষণ রায়ান ভালোবাসার নাটক কেনো করছিল। তুর্যকে ভুল বোঝানোর জন্যই রায়ান এতোক্ষণ পর্যন্ত এসব কিছু করে গেছে। হয়তো তুর্য ভুল বুঝেও নিয়েছে। হীরের মাথার ওপর যেন আকাশ ভেঙে পড়েছে। শেষ আশার আলো টুকুও নিভে গেছে। তুর্যই তার একমাত্র ভরসা ছিল সেও এখন তাকে এ অবস্থায় পেয়েছে। এখন তুর্যও তাকে অবিশ্বাস করবে। আর কোনো আশা শেষ নেই।

রায়ান মুখে মুচকি হাসি নিয়ে তুর্যর সামনে গিয়ে দাঁড়ায়। তুর্যর চেহারার ভাবমূর্তি ক্রমশ পাল্টে যাচ্ছে। এখানে আসার আগে যদিও সে অনেক ফ্রাস্ট্রেশনে ছিল, কিন্তু এখন তার ভিতর ক্রোধের আগুনে দাউ দাউ করে জ্বলছে।

তুর্যর মনের অবস্থা রায়ান খুব ভালো করেই বুঝতে পারছে। আগুনে ঘি ঢালার জন্য সে ঠোঁটের কোণে হাত রেখে তুর্য কে বললো,
— তুমি এই অসময়ে এখানে? দেখো এমন নয় যে আমার বাড়িতে তুমি আসতে পারবে না। কিন্তু একবার বলে এলেই হতো। আমি আর হীর নিজেকে সামলানোর একটু সময় পেতাম আর কি!

হীর তুর্যর দিকে ছুটে এসে কান্না জরানো কন্ঠে মিনতি করতে লাগলো।
— বিশ্বাস করুন তুর্য রায়ান যা যা বলেছে সব মিথ্যা। ও আপনাকে পেছন থেকে দেখে ফেলেছিল তাই এমনটা করেছে। রায়ান আর আমার মধ্যে কোনো সম্পর্ক নেই। বিশ্বাস করুন। আমি একটা কথাও মিথ্যা বলছিনা। এসবকিছু রায়ানের সাজানো নাটক। রায়ান তাফসি কে বিয়ে করতে চায় না তাই আমাকে নিজের উদ্দেশ্য হাসিল করার জন্য ব্যবহার করছে। কাল আমি কিভাবে অজ্ঞান হয়ে ছিলাম আমার কিছুই মনে নেই আর কিভাবে রায়ান আর আমি একসাথে একই ঘরে ছিলাম তাও মনে নেই। আমি নিশ্চিত এই সবকিছু রায়ানের সাজানো নাটক। বিশ্বাস করুন আমার কথা।

তুর্য হাতের ইশারায় হীরকে চুপ করতে বলে। তুর্যর মুখের অবস্থা দেখে হীর নিশ্চিত হয়ে যায় যে তুর্য তাকে অবিশ্বাস করেছে। এক নিমিষেই হীরের মন ভেঙে টুকরো টুকরো হয়ে যায়। কিছু না করেও তার ভালোবাসার মানুষটির সামনে তাকে চরিত্রহীন প্রমাণিত হতে হলো। বহু চেষ্টা করেও নিজের কান্না ধরে রাখতে না পেরে হীর সেখান থেকে দৌড়ে বেরিয়ে যায়।
তুর্য হীরের যাওয়ার দিকে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে।

রায়ান তুর্যর দিকে এগিয়ে এসে গলা ঝেরে বলতে শুরু করে,
— ভালোই হলো তুমি এখানে এসেছো। আসলে আমরা বিয়ে করতে চাচ্ছি!

তুর্য ভ্রু কুচকে রায়ানের দিকে সংশয়ের দৃষ্টিতে তাকায়।
— “আমরা” মানে?

তুর্যর সংশয় দূর করার জন্য রায়ান আবার বলতে শুরু করে।
— আমরা মানে আমি আর হীর। এখন আর কোনো বাঁধা নেই আমাদের এক হওয়ার পথে।

নিজের রাগ কে আর নিয়ন্ত্রণ করতে না পেরে রায়ানের কলার চেপেধরে তুর্য।
— হাউ ডেয়ার ইউ? তুই আমার বোনের জীবন নষ্ট করে এখন আবার হীরের দিকে নজর দিয়েছিস!

— আমি তাফসির জীবন নষ্ট করেছি? কিভাবে? তাফসির সাথে কি আমার প্রেমের সম্পর্ক ছিল? নাকি ফিজিক্যাল হয়েছিলাম?

— একদম চুপ। তোর ঐ নোংরা মুখ থেকে আমার বোনের নাম শুনতে চাই না আমি।

— আমিও চাই না। সত্যি বলছি! আমিও তাফসিকে চাই না। কখনই চাই নি। বাবার প্রেশারে বিয়ের জন্য রাজি হয়েছিলাম।

— তাহলে কেনো আমার বোনের সাথে এমন করলি? আর হীর ই কেনো? কেনো হীর কে ব্যবহার করলি নিজের নোংরা খেলায়?

তুর্য রাগে যেনো পাগল হয়ে গেছে। একপর্যায়ে সে রায়ানের উপর হাত তুলতেও দ্বিধা করে না। হাতাহাতি তে রায়ানের অবস্থা বেশ কাহিল হয়ে পরে। নাক দিয়ে অঝোরে রক্ত পরতে থাকে। রায়ানকে আরও কয়েক ঘা দিয়ে দরজার পাশে রাখা ফুলদানি টা ছুড়ে ফেলে দিয়ে সেখান থেকে হনহন করে বেরিয়ে আসে তুর্য।
যাওয়ার আগে শেষ বারের মতো রায়ানের দিকে ফিরে তাকিয়ে বলে যায়,
— তোর এই প্ল্যানে তুই কখনও সফল হতে পারবি না। আমি হতে দেবো না।

এদিকে নাকে মুখে রক্ত লাগা অবস্থায় অবচেতন হয়ে পরে রায়ান। হট্টগোলের শব্দে রায়ানের বাবা মাও তার ঘরে এসে পরে। যদিও তারা তাদের ছেলের অপকর্মে ভীষণ ক্ষেপে ছিল কিন্তু ছেলের এই অবস্থায় কোনো মা বাবা ই ঠিক থাকতে পারে না।

.
.

কালো মেঘে ছেয়ে আছে পুরো আকাশ। মনে হচ্ছে বৃষ্টি শুরু হবে কিছু সময় পরে। ইদানিং অসময়ে বৃষ্টি হওয়া বেড়ে গেছে। আদৌ বৃষ্টি হবে নাকি আকাশও হীরের সাথে দুঃখবিলাস করতে চাইছে বোঝা মুশকিল। রায়ানদের বাড়ির কিছুটা সামনে রাস্তার ধারের একটি বেঞ্চিতে বসে আছে হীর। এক দৃষ্টিতে মেঘাচ্ছন্ন আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে। এখন আর কাঁদছে না সে। তার ভাগ্যের পরিহাস দেখে প্রচন্ড হাসি পাচ্ছে।

হঠাত্ একটা গাড়ি সজোরে ব্রেক কষলে চমকে উঠে হীর। গাড়ি টা হীরের পরিচিত। তুর্যর গাড়ি। কিন্তু তুর্য তাকে দেখে গাড়ি কেনো থামালেন? তবে এসব নিয়ে এখন আর মাথা ঘামাতে চায় না হীর। যার যা ইচ্ছা মনে করুক তাতে আর বিচলিত হবে না হীর। অনেক হয়েছে। এখন নিজের পথ আর নিজের জীবন সে নিজেই দেখবে। বসা থেকে দাঁড়িয়ে সোজা সামনের দিকে হাঁটা ধরলো হীর।

তুর্য মূলত হীরকে দেখেই গাড়ি থামিয়েছিল। একেতো বৈরী আবহাওয়া তারওপর শুনশান রাস্তায় হীরকে একা ফেলে যাওয়া তার পক্ষে সম্ভব নয়। কিন্তু হীরের এমন রুঢ় ভাবে চলে যাওয়ায় তুর্যর রাগ আরও বেড়ে যায়।
গাড়ি থেকে নেমে হীরের বাম হাত চেপে ধরে তুর্য।

হীর হাত ছাড়ানোর জন্য হাত ঝারা দিলেও চেষ্টা বিফলে যায়।
— হাত ছাড়ুন আমার।

তুর্য দাঁতে দাঁত চেপে কড়া গলায় বলে,
— চুপচাপ গাড়িতে উঠ।

তুর্যর এমন গম্ভীর কন্ঠ কে বরাবরই ভয় পায় হীর। তবুও আজ সে কোনোকিছুরই তোয়াক্কা করবে না।
— হাত ছাড়ুন বলছি। আমি যাবো না আপনার সাথে।

হাতে হেচকা টান দিয়ে হীর কে নিজের সাথে মিশিয়ে নিলো তুর্য।
— আমি বলেছি তুই আমার সাথে যাবি মানে তুই আমার সাথেই যাবি।

হীর যতোবারই হাত টান দিচ্ছে ততোটাই যেনো শক্ত করে ধরছে তুর্য। অনেক টানাটানি করেও লাভ না হলে হীর চুপচাপ গাড়িতে উঠে বসে। তুর্য গাড়িতে বসে এক পলক হীরের দিকে তাকায়। হলদে ফর্সা মুখটা একদিনেই একদম মলিন হয়ে গেছে। ফোলা চোখ জোড়ার নিচের কালো দাগ গুলো জানান দিচ্ছে ঝরে পরা অশ্রুকণার হিসাব। তুর্যর বুক চিরে একটা দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে আসে।
গাড়ি আপন গতিতে চলে যাচ্ছে। সারা রাস্তা হীর একবারও তুর্যর দিকে তাকায় নি। কিন্তু তুর্য প্রায় প্রতি মিনিট ই আড়চোখে দেখে গেছে হীর কে। যতবার হীরকে দেখি ততবারই যেন তুর্য তার প্রেমে পড়ে। একটা মানুষের কান্না জড়ানো চোখের প্রেমে পড়া যায় এটা না দেখলে হয়তো কখনো বুঝতো না। এর কিছুক্ষণ পরপর ফুঁপিয়ে উঠছে। তুমি যা সেই শব্দ শুনতে পাচ্ছে কিন্তু কোন রিঅ্যাক্ট করছে না। চারপাশের এত সমস্যায় কিছুটা সময় সে হীরের সাথে কাটাতে চায়। হোকনা সেটা কান্নারত অবস্থা। আজ প্রায় কত দিন পর হীরার তুর্য এভাবে পাশাপাশি বসে আছে। তূর্যর ইচ্ছে করছে গাড়ি চালানো বন্ধ করে একদৃষ্টিতে হীরের দিকে তাকিয়ে থাকতে। কিন্তু সে ভয় পাচ্ছে যদি তাকে জিজ্ঞেস করে এটাকে থাকার কারণ তখন সে কি উত্তর দেবে। তার তো সেই সাহস টুকুও নেই যে সে হিরোকে তার ভালোবাসার কথা খুলে বলবে। কেন যেন ভীষণ ভয় হয় তুর্য হয়তো এর জন্য একথা জানার পর তার থেকে আরো দূরে চলে যাবে? এখন অজান্তে একসাথে বসে আছে তখন হয়তো তার চেহারা দেখতে চাইবে না। কিছু কিছু ভুলের শাস্তি মানুষকে সারা জীবন বয়ে বেড়াতে হয়। ঠিক তেমনি তূর্য কেউ এই শাস্তি বয়ে বেড়াতে হবে। কখনো মুক্তি মিলবে না এসব থেকে।

সাত পাঁচ চিন্তা করতে করতে তুর্য তার গন্তব্যে এসে পৌঁছায়। গাড়ি থেকে নেমে পুনরায় হীরের হাত ধরে টানতে টানতে তাকে বের করে।

— আচ্ছা আপনি কি কখনো মানুষ হবেন না এভাবে জীব জন্তুর মত হাত ধরে টেনে আনতে হবে কেন? আমি কি হাঁটতে পারিনা আমাকে স্বাভাবিক ভাবে বললেই আমি গাড়ি থেকে নেমে যেতাম?

— হ্যাঁ, অনেক হয়েছে তোমার কাছে কেউ জ্ঞান যায়নি। আমার সাথে ভেতরে আয়।

— আপনার মতলবটা কি বলুন তো আমা। আপনি আমাকে এখানে কেন এনেছেন। এটাতো কাজী অফিস। আমরাতো বাড়ি যাচ্ছিলাম তাই না। আপন এখানে কেন এসেছেন?

— তোর এত প্রশ্নের উত্তর আমি দিতে পারবো না। যা বলেছি তাই কর আমার সাথে ভেতরে চল।

— আপনি যা বলবেন তাই হবে? পেয়েছেন নাকি আপনারা সবাই। যার যা ইচ্ছা আমার সাথে করে যাচ্ছেন। আমি আপনার সাথে ভেতরে যাবো না আপনার যা ইচ্ছা করুন। আমি আপনাকে ভয় পাইনা।

— তোর সত্যি মনে হচ্ছে আমি তোকে ভয় দেখানোর জন্য এখানে এনেছি?

— তাহলে কেন এনেছেন আমাকে এখানে?

— সবকিছু ঠিক করতে।

— মানে?

— মানে একটু পরে এখানে তোর বিয়ে হবে।

— শেষমেষ আপনিও।

— আমিও কি?

— আপনিও সেটাই করছেন যেটা রায়ান চায়। আপনারা কেউ আমাকে বিশ্বাস করছেন না। রায়ান আপনাকে বিশ্বাস করিয়ে ফেলেছে যে আমার সাথে তার সম্পর্ক আছে। কতোবার বলেছি আমি মিথ্যা বলছিনা। রায়ান মিথ্যা বলছে। একবারের জন্য আমাকে বিশ্বাস করেছেন? এখনও রায়ানের কথায় বিশ্বাস করে আমাদের বিয়ে করাতে এসেছেন। আমার কথা না হয় বাদ দিন। তাফসির কথাটা একবার চিন্তা করুন। ওর কি হবে যখন জানতে পারবে আপনি আমার আর রায়ানের বিয়ে করিয়েছেন। একটা জীবিত লাশ হয়ে যাবে। এই ধাক্কাটা কিভাবে সহ্য করতে পারবে আপনি চিন্তা করুন। ভাই হয়ে বোনের এত বড় সর্বনাশ আপনি করতে পারবেন? প্লিজ এমনটা করবেন না। আমি এখান থেকে অনেক দূরে চলে যাবো। আপনাদের আর কোনো সমস্যা হবে না।

হীর এক নাগাড়ে কথাগুলো বলে নিশ্বাস নিলো।

তুর্য হীরের হাত নিজের হাতের মুঠোয় নিয়ে নিলো,
— লুক হীর, আমি ছোট বাচ্চা নই যে আমাকে সবাই যেভাবে বোঝাবে আমি সেভাবেই বুঝবো। আমিও জানি রায়ান মিথ্যে বলছে। কিন্তু এই মুহূর্তে সেটা প্রমাণ করা সম্ভব না। আর প্রমাণ করেও আহামরি কোনো লাভ হবে না।

— প্রমাণ না হয় নাই করলাম কিন্তু আপনি যেহেতু সত্যি টা জানেন তাহলে সবাইকে বলে দিন। আপনার কথা সবাই বিশ্বাস করবে।

— আমি কি বলবো তুই ই বল! আমি সত্যি টার এক অংশও জানি না। কিভাবে রায়ান আর তুই এক ঘরে…. কিছুই জানি না আমি। কি বলবো সবাই কে?

— এইমাত্রই তো বললেন আপনি সব জানেন।

— আমি সব না জানলেও এতোটুকু জানি তুই মিথ্যে বলছিস না। মনে প্রাণে বিশ্বাস করি যে তোর চরিত্রে কোনো দাগ নেই। এজন্যই সবার সামনে তোকে আরও অপমানিত হওয়া থেকে বাঁচাতে চাই।

— কিন্তু কেনো?

— সব কেনো এর উত্তর হয় না হীর।

— কিন্তু আমার এই কেনো এর উত্তর আমার চাই। কেনো চান আপনি আমাকে বাঁচাতে?

— সব প্রশ্নের উত্তর জানতে হবে এমন তো কোনো নিয়ম নেই। কিছু প্রশ্ন প্রশ্ন থাকাই শ্রেয়।

হীর একটা তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে একটু সামনে এগিয়ে দাঁড়ালো। তুর্য হীরের দিকে ফিরে তার পিছনে দাঁড়িয়ে রইলো। ঠিক সেই সময়েই পিচঢালা রাস্তার সব ধুলোবালি উড়িয়ে দমকা বাতাস বইতে শুরু হলো। আচমকা ধুলো উড়াতে বেখেয়ালে হীর দুচোখে ধুলো আটকে যায়। চোখ জ্বলে উঠায় সেখান থেকে সরে যাওয়ার কথা হীর এর মাথা থেকে সরে যায়। এদিকে ধুলোতে পুরো মাখিয়ে যাচ্ছে সে। কিন্তু সামনে কিছু দেখতেও পারছে না। হঠাত্ই তুর্য সামনে থেকে হীর কে বুকে জড়িয়ে ধরে। আস্তে আস্তে হীর চোখ পরিষ্কার করে তুর্যর দিকে তাকায়। তুর্য চোখ বন্ধ করে আছে। হীর এখনও তার বাহুডোরে আবদ্ধ হয়ে আছে। এই স্বপ্ন টা প্রতিনিয়ত দেখতো হীর। একদিন পরম আবেশে তুর্য তাকে বুকে জরিয়ে নেবে, আদরে আদরে ভরিয়ে দেবে তাকে, কপালে এঁকে দেবে ভালোবাসার স্পর্শ। কেনো যেনো আজ খুব লোভী হতে ইচ্ছে করছে হীর এর। ইচ্ছে করছে এই সময় টাকে লুফে নিতে। হ্যাঁ সে আজ তার ভালোবাসাকে আপন করে নেবে। আজ সে তুর্যর নিশ্বাসের শব্দ শুনতে পারছে। হয়তো আজকের পর তুর্য কে এতো কাছে সে কখনো পাবে না। আজকে একটু বেহায়া হলে কি খুব বেশি ক্ষতি হয়ে যাবে! চোখ দুটো বন্ধ করে নিজেকে তুর্যর বুকে পুরোপুরি এলিয়ে দিলো হীর। তুর্য পূর্বের থেকেও বেশি শক্ত করে ধরলো হীর কে।

তুর্য কে জরিয়ে ধরার জন্য তুর্যর পিঠ পর্যন্ত হাত নিতেই বিদ্যুত্ চমকানোর শব্দে ধ্যান ভেঙে যায় হীর এর। ইচ্ছে থাকা সত্ত্বেও সাহস করে উঠতে পারছে না সে। তুর্য কে নিজের করে পাওয়া টা নিছকই স্বপ্ন হীরের। কখনও যেই স্বপ্ন পূর্ণ হবে না সেই স্বপ্ন দেখাটাও অন্যায়। তুর্য কে নিজের থেকে সরিয়ে একটু দূরে সরে দাঁড়ালো হীর।
#সেই_তুমি
#সিজন_০৩
#পর্ব_১০
#Tabassum_Kotha

আকাশের বুক চিড়ে একরাশ জলরাশি বৃষ্টির রুপ নিয়ে ধরাকে ভিজিয়ে দিচ্ছে। একে অপরকে কাছে পাওয়ার তীব্র আকাক্ষা নিয়ে তাকিয়ে আছে দুজন দুজনের দিকে। দুজনের চোখের ভাষা এক হলেও প্রকাশ করার অনুমতি পাচ্ছে। বৃষ্টির প্রতিটি ফোটা হীর আর তুর্যকে ভিজিয়ে একাকার করে দিচ্ছে। আশে পাশে তারা বিহীন কেউ নেই। ঝড়ো বাতাস শুরু হতেই সবাই বৃষ্টি থেকে বাচার জন্য নিরাপদ স্থানে চলে গিয়েছে। কিন্তু হীর আর তুর্য নিজেদের মধ্যে এমন বিভোর রয়েছিল যে, তারা যে বৃষ্টিতে ভিজে একাকার হয়ে যাচ্ছে সেদিকে তাদের বিন্দু মাত্র ভ্রুক্ষেপ নেই। হঠাৎ বজ্রপাতের এর শব্দে তুর্যর ধ্যাণ ভাঙে। হীর কে ছেড়ে দিয়ে সে একটু দূরে গিয়ে দাঁড়ায়। তুর্য ছেড়ে দিলে হীর বেশ লজ্জায় পড়ে যায়।

ক্রমশ সময় পেড়িয়ে যাচ্ছে দেখে তুর্য হীরকে তার পরিকল্পনা বুঝাতে শুরু করে,
— দেখ, হীর আমি যা করতে যাচ্ছি সবার ভালোর জন্য করতে যাচ্ছি।

— রায়ানের সাথে আমার বিয়ে কারো ভালো বয়ে আনবে না।

— তোর কি আমাকে এতোটাই বোকা মনে হয়? তুই ভাবলি কি করে রায়ানের সাথে বিয়ে দেওয়ার জন্য তোকে এখানে এনেছি। তোকে আমি বিশ্বাস করি।

— তাহলে আমাকে এখানে এনেছেন কেন?

— আজ এখানে তোর আর আমার বিয়ে হবে, তাই এখানে এসেছি।

— কীহ! এক মিনিট! বোধহয় বৃষ্টির শব্দের জন্য আমি উল্টাপাল্টা শুনছি। আবার বলুন তো কি বললেন?

— তুই যা শুনেছিস ঠিকি শুনেছিস, আমি তোকে বিয়ে করবো। আজকেই!

— আগে শুধু আমার মনে হতো, আজ প্রমাণ হলো আপনি সত্যি পাগল হয়ে গেছেন। লন্ডনের পানিতে কিছু মেশানো ছিল, যার জন্য আপনার আজ এই অবস্থা।

— ফাজলামো হচ্ছে?

— ফাজলামো তো আপনি করছেন। এভাবে কি বিয়ে করা যায়? আর আমি আপনাকে কেন বিয়ে করবো? আপনি তো আমাকে ভালোবাসেন না, তাহলে আপনিই বা কেন বিয়ে করতে চান আমাকে?

— সবার ভালোর জন্য এটা আমাদের করতে হবে। রায়ান তার বাবা মাকে কনভিন্স করে তোর আর রায়ানের বিয়ে ফাইনাল করে ফেলবে।

— আপনি এতো শিউর কিভাবে হলেন যে রায়ান আমাকে বিয়ে করবে?

— জানি না। কিন্তু আমার মন বলছে এখন যদি আমি কিছু না করি তাহলে আমি সব হারিয়ে ফেলবো।

— কি সব আবোল তাবোল বকছেন! কী হারিয়ে ফেলবেন আপনি? আর আপনারা যেটা মনে করছেন সেটা মোটেও সত্যি না, রায়ান আমাকে ভালোবাসে না। সে এসব করছে যেনো তাফসি কে বিয়ে করতে না হয়।

— আমি ওসব আর জানতে চাই না। আমি শুধু জানি আজকেই আমরা বিয়ে করবো।

— আমি আপনাকে কিছুতেই বিয়ে করবো না।

— কিন্তু কেনো? তুই কি বুঝতে পারছিস না এটাই সবার জন্য ভালো হবে।

— ইচ্ছা করে কারো জীবনে আগুন লাগানোর মতো মেয়ে আমি নই।

— মানে? কি বোঝাতে চাইছিস?

— জানি না। আমাকে বাসায় নিয়ে চলুন।

হীর কে রাজি করাতে না পেরে ক্ষোভে গাড়ির বোনেটে সজোরে ঘুষি মারে তুর্য। তুর্যর এই ক্ষোভের অর্থ হীর বুঝতে পারছে না। কেনো এমনটা চাইছে তুর্য? তার আর তুর্যর বিয়ে হলেও তো তেমন কোনো লাভ হবে না। কারণ রায়ান তাফসি কে এমনিতেও বিয়ে করবে না। তাহলে কি তুর্য ভাবছে রায়ান তাকে বিয়ে করবে? কিন্তু এটা সম্ভব নয়। রায়ান তো তাকে ভালোবাসে না। রায়ান শুধু তার আর তাফসীর বিয়েটা ভাঙতে চায়। সেটা যে করেই হোক।
তুর্য কিছুই স্পষ্ট ভাবে বলছে না। কিন্তু হীর তুর্যকে কিছুতেই বিয়ে করবে না। তুর্য আর জেসিকা একে অপরকে ভালোবাসে। তুর্যর জীবনে জেসিকার জায়গা হীর নিতে চায় না। তার জন্য জেসিকা তার ভালোবাসা হারায় সেটা সে কখনোই চাইবে না। ভালোবাসার মানুষটিকে না পাওয়ার কষ্ট সে জানে, সেই কষ্ট অন্য কেউ পাবে সেটাতো হীর চায় না। আজ তার সাধ্যে থাকলে তাফসিকে তার ভালোবাসা ফিরিয়ে দিতো সে। কিন্তু রায়ান….!

তুর্যর রাগান্বিত মুখের দিকে তাকিয়ে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে গাড়িতে গিয়ে বসলো হীর।
সারা রাস্তা হীরের সাথে আর কোন কথা বলেনি তুর্য। কিছুতেই যে সে হীর কে হারাতে পারবে না। কিন্তু এটা সে কিভাবে বলবে হীরকে। হাজারো জড়তা এসে ভর করে তাকে যখনই সে তার ভালোবাসার কথা, হীরের প্রতি তার দুর্বলতার কথা, হীর কে বলতে চায়! জেসিকার সাথের ক্যাজুয়াল সম্পর্কটা যে তাকে এতোটা যন্ত্রণায় ফেলে দেবে সে কল্পনাও করে নি।

.
.

মাঝরাতে হঠাত্ করেই হীরের ঘুম ভেঙে যায়। মাথাটা প্রচন্ড ব্যথা করছে। অসময়ের বৃষ্টিতে ভেজার ফল এটা। একটা ব্যথার ঔষধ না খেলেই না।
ক্লান্ত শরীর টা কে টেনে বিছানা থেকে নামিয়ে ঔষধ বের করলো হীর। কিন্তু পানির বোতলে এক বিন্দু পানিও নেই। অগত্যা জোর করে শরীর টা কে পুনরায় টেনে নিচে নামতে হলো তাকে। বোতলটা পানি ভর্তি করে ফিরে আসার সময় হঠাৎ তাফসির রুমের সামনে এসে থমকে দাঁড়ায় হীর। ভেতর থেকে কিছু পড়ে যাওয়ার শব্দ আসছে। রাত প্রায় আড়াইটা বাজতে চলেছে। এতো রাতে এমন উদ্ভট শব্দ হওয়া টা মোটেই স্বাভাবিক নয়। কিসের শব্দ হচ্ছে জানার জন্যে দরজা ধাক্কা দিলে দরজাটা আস্তে করে খুলে যায়। হয়তো দরজা লক করতে ভুলে গিয়েছিল। ঘরের ভেতর ঢুকে হীর যা দেখতে পায় তাতে তার অন্তরাত্মা পর্যন্ত কেঁপে উঠে।

তাফসি তার ওড়না দিয়ে গলায় ফাঁসি দেওয়ার চেষ্টা করছে। ঘরের ভিতরে হীর এর প্রবেশ করাটা তাফসির চোখে পরে নি তখনও। তাই সে তার মতো চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। ভয় পেয়ে জোরে চিৎকার করে ওঠে হীর। হীর এর চিৎকারের শব্দে তমা বেগম আর তুর্যর ঘুম ভেঙে যায়।
চিৎকারের শব্দে হীরের দিকে ফিরে তাকায় তাফসি। এই সময়ে তার ঘরে হীর কে দেখে সে বেশ বিরক্ত হয়। কেননা হীর তাকে তার উদ্দেশ্যে সফল হতে দেবে না।

— তুই আমার রুমে এই সময় কি করছিস হীর? বেরিয়ে যা! এক্ষুনি বেরিয়ে যা এখান থেকে।

— তুমি কি পাগল হলে? এসব কি করছো? নিজের জীবন কেনো নিতে চাচ্ছো? নেমে আসো। প্লিজ আপু নিচে নেমে আসো। এমন করোনা।

— হীর তুই আমার ঘর থেকে বের হ।

হীর তাফসির দিকে এগিয়ে গেলে তাফসি বাঁধা দেয়।
— তুই আর এক পা এগিয়ে এলে আমি ফাঁস দেবো।

কান্নায় ভেঙে পড়ে হীর।
— এমন করো না আপু। তোমার সামনে হাত জোর করছি!

— আমাকে বাধা দিস না। আমার কাছে এই একটাই পথ খোলা আছে। তুই চলে যা এখান থেকে। আমাকে মুক্তি দে প্লিজ। রায়ান কে ছাড়া এই জীবনের কোনো মানে নেই।

— এসব বলো না। রায়ানের মতো একটা নিকৃষ্ট মানুষের জন্য নিজের জীবন শেষ করো না। প্লিজ নিচে নেমে এসো

— আমার প্রথম ভালোবাসা রায়ান। জ্ঞান হওয়ার পর থেকে তাকেই জীবনসঙ্গী হিসেবে মেনে এসেছি। আজ কিভাবে পারবো তাকে অন্য কারো হতে দেখতে! যেই জীবনে রায়ান নেই সেই জীবন রাখার কোনো মানে নেই।

— আমি তোমার রায়ান কে তোমার কাছে ফিরিয়ে দেবো। ওয়াদা করছি। নেমে আসো!

— তুই সত্যি বলছিস?

— বিশ্বাস করো। তোমার রায়ান তোমারই থাকবে।

অনেক কষ্টে তাফসিকে বুঝিয়ে নিচে নামিয়ে জরিয়ে ধরলো হীর।
তমা বেগম আর তুর্য দরজার বাইরে থেকে নির্বাক দর্শকের মতো তাদের কলিজার টুকরার এই অবস্থা দেখে যাচ্ছে। তাদের কারোরই সাহস হচ্ছে না তাফসির সামনে যাওয়ার। বেশকিছুক্ষণ কান্না করতে করতে একপর্যায়ে ক্লান্ত হয়ে ঘুমের কোলে ঢলে পরে তাফসি।

নিজের সন্তানকে চোখের সামনে আত্মহত্যার চেষ্টা করতে দেখা কোনো মা বাবার কাছে পৃথিবীতে নরকের থেকে কম নয়। তমা বেগমের বিপি বেড়ে তার অবস্থাও বেশ খারাপ। কিছুই বুঝে উঠতে পারছে না তুর্য। কিভাবে সব ঠিক করবে!
এই সবকিছুর জন্য দায়ী শুধু রায়ান। তুর্যর ইচ্ছে করছে রায়ান কে খুন করে ফেলতে। হয়তো রায়ানকে নিজের হাতে মারতে পারলে সে কিছুটা হলেও শান্তি পেতো। কিন্তু সেটাও পারছে না।

মাথা হ্যাং হয়ে গেছে তুর্যর। অনেক বেশি অশান্তি লাগছে। ব্যালকনিতে গিয়ে সিগারেট জ্বালিয়ে রকিং চেয়ারটায় গা এলিয়ে দিলো। জ্বলন্ত সিগারেটে ঘনঘন টান দিচ্ছে আর চোখ বন্ধ করে নিচ্ছে। ধোয়ার কুন্ডলি রাতের আধারের সাথে মিশে অন্ধকার টা কে আরও বেশি কালো করে দিচ্ছে। হাতে থাকা সিগারেটটা ক্রমশ ফুরিয়ে আসছে। নতুন আরেকটা জ্বালানোর জন্য প্যাকেট হাতে নিলে প্যাকেটের গায়ের ইংরেজি লেখাটা তার চোখে পরে, “Smoking causes cancer.” লেখাটা চোখে পড়তেই তুর্যর দুই ঠোঁট আপনা আপনি কিঞ্চিত প্রসারিত হয়ে যায়। একদিন হীর তার মুখ থেকে সিগারেট টেনে ছুড়ে নিচে ফেলে দিয়েছিল। এই লেখাটা দেখিয়ে বলেছিলো,
“স্মোকিং কজেজ ক্যান্সার। ইট ইজ ইঞ্জুরিয়াস টু হেলথ। জানেন না বুঝি? লন্ডন থেকে পড়াশুনা করে এসেছেন অথচ এতোটুকু জানেন না? স্মোক করেন কেনো? এটা ক্ষতিকর। তাড়াতাড়ি মরে যাওয়ার ইচ্ছা করে বুঝি? আর স্মোক করবেন না।”

প্রায় ফুরিয়ে আসা সিগারেটটা নিচে ফেলে দিয়ে পায়ের সাথে পিষে ফেলে তুর্য। নতুন আরেকটা ধরানো প্রয়োজন। কিন্তু কেনো যেনো ধরাতে গিয়েও থেমে যায় সে। মনে হচ্ছে কোন এক অদৃশ্য বাঁধা তাকে আটকে দিচ্ছে।
সিগারেটের প্যাকেট টা পাশে রেখে দাঁড়িয়ে পড়ে সে। ব্যালকনির রেলিং ধরে বাইরের দিকে কিছুক্ষন এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থেকে ঘরে চলে যায়।

.

ঘরের মেঝেতে গুটিসুটি হয়ে বসে আছে হীর। কিছুক্ষণ আগে তাফসিকে সে ওয়াদা করেছে, রায়ানকে তার কাছে ফিরিয়ে দেবে। তাফসি কে মিথ্যে বললেও নিজেকে কিভাবে মিথ্যে বলবে সে? রায়ান কে যে আর ফেরানো সম্ভব নয় সেটা সে জানে কিন্তু তাফসিকে কি করে বোঝাবে? আজ একটু দেরি হলেই তাফসিকে হারিয়ে ফেলতো তারা। যেভাবেই হোক তাফসিকে স্বাভাবিক করতে হবে। আর এর জন্য তাফসীর মন থেকে তার আর রায়ানের মধ্যকার মিথ্যা সম্পর্কের ভয় দূর করতে হবে। তার জন্য যা করতে হয় তাই করবে সে। তাফসির জীবনের সামনে এটা নিতান্তই তুচ্ছ।

.
পরদিন রায়ান আর তার বাবা মা চৌধুরী মেনশনে এসে হাজির হন। আফজাল সাহেব বাসায় না থাকায় তমা বেগম তাদের সাথে দেখা করেন। ভোর রাতে তাফসিকে ঘুমের ঔষধ দেওয়াতে সে এখনও ঘুমিয়ে আছে। হীর তাদের সামনে আসে নি কিন্তু আড়ালে লুকিয়ে দেখছে। রায়ানের ভাঙাচোরা চেহারা দেখে মনে হচ্ছে কেউ ইচ্ছা মতো মেরেছে তাকে। হীর খানিকটা চিন্তা করে ধারণা করলো হয়তো কালকে তুর্য তাকে মেরেছে। এমন পরিস্থিতিতেও হীর এর বেশি খুশি লাগছে এই ভেবে যে তুর্য রায়ানকে মেরেছে। নিজের খুশিকে দমিয়ে আবার কান পাতায় মনোযোগী হলো হীর। উদ্দেশ্য তাদের আসার কারণ তাকে জানতে হবে। তবে কারণ টা যে এতো ভয়াবহ হতে পারে সেই সম্পর্কে হীর এর বিন্দুমাত্র আন্দাজ ছিল না। রায়ান আর তার বাবা মা হীর আর রায়ানের বিয়ের কথা বলতে এখানে এসেছেন।
রায়ানদের বিয়ের প্রস্তাবে তমা বেগমেরমাথা চক্কর দিয়ে উঠে। হয়তো এটাই বাকি ছিল। তমা বেগম এমনিতেও হীর কে পছন্দ করে না। এখন তো কোটি টাকার বিনিময়েও বিশ্বাস করবে না। কিন্তু সবচেয়ে বড় সমস্যা হলো তাফসির কি হবে! তাফসি যদি বিয়ের কথা জানতে পারে তাহলে?

আফজাল সাহেবের অনুপস্থিতিতে তমা বেগম তাদের কিছুই বলে না।
— তুর্যর বাবা কিছু কাজে ঢাকার বাইরে গিয়েছে। আমি এখন কিছুই বলতে পারবো না। আপনারা অপেক্ষা করুন কিছুদিন।

রায়ান তার বাবার কানে কানে কিছু বললে রায়ানের বাবা আবার বলতে শুরু করেন,
— আফজাল আসার পর বিয়ের অনুষ্ঠান শুরু হয়ে যাবে। এতে তো কোনো সন্দেহ নেই যে রায়ান আর হীর একে অপরকে ভালোবাসে। তাই শুভ কাজে দেরি করাটা ঠিক না। আর এখানে কারো অনুমতি নেওয়ারও প্রয়োজন নেই। বিয়ে টা অবশ্যই হবে।

তমা বেগম বেশ হতাশ হয়ে উত্তর দিলেন,
— হয়ে গেলেই বোধহয় ভালো। সব সমস্যার মূল ওই মেয়েটাই। ওই মেয়ের জন্য আমার মেয়ে আজ…
কাল রাতের কথা টা বলতে গিয়েও বলতে পারলেন না তমা বেগম।

রায়ান তমা বেগমের কথাকে তোয়াক্কা না করে একটা বিজয় হাসি হেসে সেখান থেকে উঠে চলে গেলেন।

.
বারবার মাথাটা চক্কর দিয়ে উঠছে হীর এর। কিছুই ভেবে কুল পাচ্ছে না সে। কি করলে সব ঠিক করতে পারবে সে! তার কি তুর্যর আইডিয়া টা মেনে নেওয়া উচিত? তার আর তুর্যর বিয়ে হলে কি সব ঠিক হয়ে যাবে? অন্তত তাফসির ভুল ধারণা ভাঙবে এই বিয়ের মাধ্যমে। কিন্তু তবুও রায়ান তো ভালো হবে না। সে তাফসি কে কষ্ট দেবেই! এসব চিন্তা করতে করতে আবার হীরের মাথা ব্যথা শুরু হয়ে গিয়েছে। এমন মাথা ব্যথা নিয়ে মানুষ বাঁচে কি করে!

চলবে..

[

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here