সেদিন দেখা হয়েছিলো পর্ব -৩২+৩৩

পর্বঃ৩২
গল্পঃ #সেদিন_দেখা_হয়েছিলো
লেখনীতেঃ #ঈশিতা_ইশা
(গল্প কপি পোস্ট করা সম্পূর্ণ নিষেধ।)

সকাল সকাল এক গাদা কাপড়চোপড় ধুতে বসেছে রাইদা। সায়ন বিছানায় বসে বাথরুমে উঁকি মেরে রাইদার কাজ দেখতে থাকে। কাপড় গুলো কেচে বালতির পানিতে রেখে কোমড়ে দুই হাত দিয়ে রাইদা হাঁপাতে থাকে।

‘আমি কি তোমায় সাহায্য করবো? তুমি বের হও আমি ধুয়ে দিচ্ছি।’,সায়ন বাথরুমের সামনে এসে বলে।

‘আপনি জীবনে নিজের কাপড় ধুয়েছেন?’,ঘাড় ঘুরিয়ে সায়নকে প্রশ্ন করে রাইদা।

‘ধুইনি তবে বউয়ের জন্য না হয় ধুইলাম সমস্যা নেই কোনো।’

‘ঠিক আছে আসেন ধুয়ে দেন।’

রাইদা বালতির সামনে থেকে সরে সায়নকে জায়গা দেয়। সায়ন এসে বালতিতে রাখা কাপড় গুলো পানিতে চুবিয়ে তুলতে থাকে। রাইদার মাথায় দুষ্টু বুদ্ধি চাপলে সে ঝর্ণা ছেড়ে দেয়। ঝুঁকে কাপড়গুলো বালতি থেকে তুলছিলো সায়ন যার ফলে ঝর্ণার পানিতে তার পিঠ ভিজে যায়। রাইদা জোরে জোরে হাসতে থাকে আর সায়ন সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে রাইদার হাসি দেখে নিজেও হাসতে থাকে।

‘জলদি কাপড় গুলো তুলে বারান্দায় আনেন দড়িতে মেলে দেই।’

সায়নকে তাড়া দিয়ে রাইদা বাথরুম থেকে বের হতে নিলে সায়ন হাত টেনে রাইদাকে ঝর্ণার নিচে নিয়ে আসে। সায়নের সাথে রাইদাও কিছুটা ভিজে যায় ঝর্ণার পানিতে। রাইদা হেঁসে সায়নের বুকে কিল বসায়।

‘হাত দিয়ে বুকে মারতে হবে না তোমার ভালোবাসায় আমি বারবার ম*র*ছি।’

সায়নের কথা শুনে রাইদা আবারো কিল দেয় সায়নের বুকে।

‘হয়েছে সরেন কাপড়গুলো এখন নেড়ে না দিলে শুকাবে না।’,সায়নকে সরিয়ে বলে রাইদা।

‘তোমার ক্লাস আছে আজকে? থাকলে ক্লাসে যেতে হবে হবে না।’
রাইদা যেতে নিলে সায়ন আবারো হাত টেনে ধরে।

‘এসাইনমেন্ট জমা দিতে হবে আজকেই শেষ ডেট। গতকালকে জমা দেওয়ার কথা ছিলো স্যার অসুস্থ ছিলো তাই আসেনি বলেছে আজকে আসবে আজকে জমা দিতে।’,সায়নের হাত থেকে হাত ছাড়িয়ে বলে রাইদা।

সায়ন মুখ কালো করে বাকি কাপড়গুলো বালতি থেকে ধুয়ে তুলে। রাইদা কাপড়গুলো নিয়ে বারান্দায় নেড়ে দেয়। সায়ন গোসল সেরে বের হলে রাইদা গোসল করতে যায়।

রাইদা গোসল করে বের হলে সায়নকে রুমে দেখতে পায় না। বারান্দা উঁকি দেয় কিন্তু সেখানেও সায়ন নেই। রান্নাঘর থেকে শব্দ আসলে রাইদা মাথায় তোয়ালে পেঁচিয়ে রান্নাঘরে যায়। সায়ন রান্নাঘরে ডিম ভাজছিলো রাইদা গিয়ে সাহায্য করতে চায় কিন্তু সায়ন তাকে সরিয়ে দেয়। ডিম পাউরুটি খেয়ে রাইদা রেডি হয়ে চলে যায় ভার্সিটিতে। রাইদা যাওয়ার কিছুক্ষণ পর সায়নও বের হয়।

ভার্সিটিতে এসে দৌড়ে ক্লাসে যায় রাইদা। ক্লাসে গিয়ে দেখে স্যার আসেনি। স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে নিজের সিটে গিয়ে বসে। রাইদার দুই পাশে বাপ্পি আর পায়েল বসে ঝগড়া করছে।

‘বাপি দা আমার হাইলাইটার ফেরত দে জলদি।’,বাপ্পির দিকে কলম ছুঁড়ে বলে পায়েল।

‘দিমু না কি করবি কর। এতো মেকআপ করেও সেই জরিনা আপাই আছিস চেহারার কোনো পরিবর্তন নাই। একটা পোলাও পটাইতে পারলি না কি লাভ এই মেকআপ কইরা।’,পায়েলের ছোঁড়া কলম আবার পায়েলের দিকে ছুঁড়ে বলে বাপ্পি।

‘তোর বউ এতো মেকআপ করবে যে তুই ফকির হইয়া রাস্তায় বইসা কানবি।’, বাপ্পির দিকে আঙুল তুলে বলে পায়েল।

‘জরিনার দোয়ায় বাপ্পির কিছু হইবো না দেখে নিস।’,শার্টের কলার উঁচিয়ে বলে বাপ্পি।

রাইদা একবার ডনে তাকিয়ে পায়েলের কথা শুনে আবার বামে তাকিয়ে বাপ্পির কথা শুনে। বিরক্ত হয়ে সামনের সিটে বসে ঝিমানো ফাহিমকে গুঁতা দিয়ে ঘুম থেকে তোলে।

‘কি হইলো আমারে বিরক্ত করিস কেন?’,বিরক্তির স্বরে বলে ফাহিম।

‘লাভ বার্ডস জোড়া কই? কালকের বাকি কাহিনী কি হইছে জানিস কিছু?’,ফিসফিস করে ফাহিমকে জিজ্ঞেস করে রাইদা।

‘তোদের সাথেই তো আমি বাসায় ফিরছি জানবো কীভাবে কি হইছে এরপর।’,ফাহিম হাই তুলে জবাব দেয়।

রাইদা চিন্তিত হয়ে ফোন বের করে ব্যাগ থেকে।

‘আগের ভিডিও কিন্তু সব এডিট করা শেষ এর মধ্যে কিছু আপলোড করা হয়েছে। লাস্ট ভিডিও তো ঐ ভার্সিটির অনুষ্ঠানের সময় করা হয়েছে এরপর তো তোরা ব্রেক নিলি। পরবর্তী ভিডিও এর প্লান করেছিস? তোর ব্লগ পেজে কিন্তু তোর সিঙ্গেল ব্লগ গুলো আপলোড করা হয়নি এখনো।’, ফাহিম বলে।

‘সামনে ফ্রেশারদের ওরিয়েন্টেশন আছে সেখানে নাচের একটা ভিডিও হয়ে যাবে আর যামিনী আপুর বিয়েতে ও পেয়ে যাবি নাচের ভিডিও। আপাতত আমার পেজে বরিশালের ব্লগ গুলো আপলোড কর পরে নতুন ব্লগ করবো এখন ব্লগ করার সময় নেই।’

রাইদার এমন হেলেদুলে উত্তরে ফাহিম বিরক্ত হয়।

‘রাই বি সিরিয়াস অনেকদিন আমরা আউটডোর শুট করিনা সেই খেয়াল আছে তোর? শুধু অনুষ্ঠানের ভিডিও আপলোড করলে পেজের রিচ কমে যাবে।’,ফাহিম রাইদাকে বোঝানোর চেষ্টা করে বলে।

রাইদা ফাহিমকে ইশারা করে ক্লাসের দরজার দিকে তাকাতে বলে। রাইদার কথা মতো ফাহিম ঘুরে তাকায়। রুহি কিছু বলছে আর অর্ক মনোযোগ দিয়ে সেই কথা শুনছে, দু’জনে এক সাথে ক্লাসে আসছে। বাপ্পি পায়েল ঝগড়া রেখে মিটমিট করে হাসতে থাকে। ফাহিম উঠে পাশাপাশি দু’টো সিট খালি করে দেয়। অর্ক এসে ভ্রু কুঁচকে ফাহিমের দিকে তাকায় কিন্তু ফাহিম সেটিকে পাত্তা না দিয়ে ঘুমের ভান ধরে। অর্ক আর রুহি পাশাপাশি সিটে বসে।

বাপ্পি গলা ঝেরে রাইদার দিকে ফিরে গান গাইতে শুরু করে।
‘চোখে চোখে এতো কথা মুখে কেনো বলো না?
একি তবে ছলনা!
কেনো করো তুমি বলো ছলনা..’

রাইদা পায়েলও বাপ্পির সাথে তাল মেলায়। অর্ক পিছনে ঘুরে চোখ গরম করে তাকায় তিনজনই গান বন্ধ করে এমন ভান করে কিছুই হয়নি। অর্ক সামনে ঘুরলে তিনজন আবারো গান শুরু করে। অর্ক বিরক্ত হয়ে কানে ইয়ারফোন গুঁজে বসে থাকে আর রুহি আহাম্মকের মতো বন্ধুদের দিকে তাকায়।

একটু পর ক্লাসে স্যার চলে আসে। ক্লাসে এসে আগে সকলের এসাইনমেন্ট জমা নেয়।

পরপর দুটো ক্লাস শেষ করে রাইদা,পায়েল,রুহি চলে যায় অডিটোরিয়ামে। রাইদা দেখতে থাকে অনুষ্ঠানের জন্য মেয়েদের নাচের অনুশীলন কেমন চলে। কিছু মেয়ে নাচের স্টেপ পারছিলো না রাইদা সেটা দেখিয়ে দিচ্ছিলো। অডিটোরিয়ামের জানালা দিয়ে শব্দ হলে রাইদা তাকিয়ে দেখে অর্ক তিনটা ছেলেকে ধমকাচ্ছে। পায়েলকে নাচের বিষয়টা দেখতে বলে রাইদা অডিটোরিয়াম থেকে বের হয়ে দেখতে যায় কি হয়েছে।

‘পারমিশন ছাড়া ভিডিও করছো জানো না কোনো মেয়ের ভিডিও পারমিশন ছাড়া করা অন্যায়। তোমাদের সাহস কীভাবে হয় রাইয়ের ভিডিও করার।’,ছেলেগুলো ধমক দিয়ে অর্ক বলে।

‘কিরে কি হয়েছে?’,রাইদা জিজ্ঞেস করে।

‘তুই নাচের স্টেপ দেখাচ্ছিলি এই ফ্রেশার তিনটা তোর ভিডিও করছিলো।’,অর্ক বলে।

‘আচ্ছা মাফ করে দে ফ্রেশার যেহেতু জানে না এই বিষয়ে।’

রাইদার মুখে এমন কথা শুনে অর্ক সহ বাপ্পি,ফাহিমও অবাক হয়।

‘কিরে তুই কবে থেকে ফ্রেশারদের মাফ করতে শুরু করেছিস?’,বাপ্পি অবাক হয়ে প্রশ্ন করে।

‘আগে কথা তো শোন, ওদেরকে কান ধরিয়ে ঐ গোলত্বরে দাঁড়া করিয়ে রাখ এক ঘন্টার জন্য। এই ভার্সিটিতে কোনো মেয়ের অনুমতি ছাড়া ছবি তুললে কিংবা ভিডিও করলে এটাই তাদের জন্য শাস্তি।’

রাইদার কথা শুনে বাপ্পি হাসতে থাকে।

‘কি হলো দাঁড়িয়ে আছো কেনো জলদি যাও না হলে যতমিনিট দেরি করবার সেই মিনিটের তিনগুন সময় কাউন্ট হবে।’, দুই হাত উপরে তুলে অলস ভঙ্গিতে বলে ফাহিম।

‘শাস্তি শেষ হলে আমার কাছ থেকে ফোন ফেরত নিয়ে যেয়ো।’,অর্ক বলে।

ছেলে তিনটা কাঁদো কাঁদো মুখ করে গোল চত্বরের দিকে যায়। ফাহিম,বাপ্পি,অর্ক ক্যান্টিনের দিকে চলে যায়। ছেলে তিনটাকে কানে ধরে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে সেখানে এসে স্টুডেন্টরা ভীড় করে। রাইদা হেঁটে সেদিকেই যাচ্ছিলো। কারো ডাক শুনে রাইদা থেকে যায়।

‘আপু আপনার সাথে আমার বড় ভাইয়া কথা বলতে চায়।’,সায়ন্তিকা বলে উঠে।

সায়ন্তিকার কথা শুনে রাইদা কোনো প্রতিক্রিয়া দেখায় না।

‘কই তোমার ভাই? ডাকো কি বলতে চায় শুনি।’,সায়ন্তিকাকে মিষ্টি স্বরে বলে রাইদা।

রাইদার কাছ থেকে এমন ব্যবহার সায়ন্তিকা আশা করেনি সে ভেবেছিলো ধমক খাবো রাইদার কাছে।

‘ঐ যে ভাইয়া ফোনে কথা বলছে আপনি একটু কষ্ট করে যান।’,সায়ন্তিকা আঙুল দিয়ে দেখিয়ে বলে।

সায়ন্তিকার কথা শুনে রাইদাও সেদিকে তাকায়। দূর থেকে রাইদার মনে হয় ছেলেটা পরিচিত। কৌতুহল হয়ে সেদিকে এগিয়ে যেতে থাকে। ছেলেটাকে পিছন থেকে দেখে রাইদার কাছে চেনা চেনা লাগে এমন কি পরিহিত শার্টটাও পরিচিত লাগে।

‘এক্সকিউজ মি মিস্টার.. ‘

রাইদার ডাক শুনে সায়ন পিছনে ঘুরে তাকায়। কান থেকে ফোনটা নামিয়ে কল কেটে দেয়।

‘জি বলেন মিসেস ইমতিয়াজ সায়ন।’, রাইদার দিকে ভ্রু উঁচিয়ে বলে সায়ন।

‘আপনি সায়ন্তিকার ভাই? সিরিয়াসলি দুনিয়াতে এতো মানুষ থাকতে আপনি ওর ভাই?’,অবাক হয়ে রাইদা জিজ্ঞেস করে।

‘হ্যা সায়ন্তিকা তোমার ননদিনী। তুমি ও তো দুনিয়াতে এতো মেয়ে থাকতে সায়ন্তিকার সাথেই কেনো ঝামেলা পাকিয়েছো?’
সায়নের পাল্টা প্রশ্নে রাইদা চোখ ছোট ছোট করে তাকায়।

‘এভাবে পাবলিক প্লেসে তাকালে তো সমস্যা চুমু খেতে ইচ্ছে করলেও খেতে পারিনা নিজেকে কন্ট্রোল করতে কষ্ট হয় বড্ড। বউকে সামনে পেয়ে আমি কিন্তু বেশিক্ষণ কন্ট্রোল করতে পারিনা।’, রাইদার কানের কাছে মুখ নিয়ে ফিসফিস করে বলে সায়ন।

‘আপনি অনেক বেশি অসভ্য হয়ে গেছেন কোথায় কি বলছেন খেয়াল থাকে না।’,সায়নের দিকে চোখ গরম করে বলে রাইদা।

‘অসভ্য তো আমি আগে থেকেই তাও তোমার কাছে।’

‘আপনি জানতেন আমি এখানে পড়ি?’

‘আমি তো এসেছি সায়ন্তিকাকে এক সিনিয়র আপু নাকি খালি বকে সেই আপুকে দেখতে। ও নাচ পারে না ওর নামটা যাতে তুলে নেওয়া হয় সেটাই আমাকে বলতে বলছে। কিন্তু এসে দেখলাম আমার একমাত্র বোন আমার একমাত্র বউয়ের সাথে ঝামেলা পাকিয়ে বসে আছে। এখানো বউয়ের সাথে ঠিক মতো নিজের সেটিং করতে পারলাম না এদিকে বোনের সাথে তার ভাবীর ঝামেলা ঠিক করতে আসছি। ‘

‘ওকে আমি মোটেও বিনা কারণে বকিনি। সায়ন্তিকা বেয়াদবি করেছে আমিও সেটার শিক্ষা দিয়েছি আর নাচের লিস্ট থেকে ওর নামটা আমি কেটে দিয়েছি। ও কি জানে আমার বিষয়ে?’

‘সবই জানে তবে তোমাকে চিনে না। চিনলে তোমার সাথে কখনোই এমন করতো না। ‘

রাইদা কিছু বলার পূর্বে সায়ন্তিকা সায়নকে ডাক দেয়।

‘ভাইয়া কথা হয়েছে না? সবাই দেখো কীভাবে তাকিয়ে আছে।’,সায়ন্তিকা বলে।

রাইদা আশেপাশে তাকিয়ে দেখে মেয়েরা সায়নের দিকে তাকিয়ে আছে বিষয়টা রাইদার কেমন জানি লাগে। চোখের ইশারায় সায়নকে চলে যেতে বলে। সায়ন্তিকা গিয়ে সায়নের পাশে দাঁড়িয়ে কিছু বলতে থাকে। রাইদা ঘুরে অডিটোরিয়ামের দিকে হাঁটা দেয়।

অডিটোরিয়ামে গিয়ে রুহির থেকে নিজের ব্যাগ নিয়ে ফোন বের করে।ফোন হাতে নিয়ে দেখে সায়নের মেসেজ।

‘গাড়িতে বসে আছি আমি যদি তোমার ক্লাস না থাকে চলে আসো।’

সায়নের মেসেজ পড়ে রাইদার ইচ্ছে জাগে সায়নের সাথে যেতে।

‘দশ মিনিট অপেক্ষা করুন আসছি আমি।’,রাইদা রিপ্লাই করে।

সায়ন গাড়ি ঘুরিয়ে ভার্সিটির এক পাশে সাইড করে অপেক্ষা করতে থাকে।

গুরুত্বপূর্ণ একটা ক্লাস থাকা সত্ত্বেও বন্ধুদের বলে শরীর খারাপ লাগছে তাই সে বাসায় ফিরতে চায়। অর্ক এগিয়ে দিতে চায় কিন্তু রাইদা তাকে ক্লাস করতে বলে। ভার্সিটি থেকে বেরিয়ে এদিক ওদিক তাকিয়ে সায়নের গাড়ি খুঁজতে থাকে তখন নজরে আসে। দ্রুত হেঁটে সায়নের গাড়ির দিকে রাইদা এগিয়ে যায়। রাইদা গাড়িতে উঠলে সায়ন গাড়ি স্টার্ট দেয়।

‘সায়ন্তিকা তখন কি বলছিলো?’,সায়নকে প্রশ্ন করে রাইদা।

‘বলছিলো আমাদের ফ্ল্যাটে ওরে আনার জন্য।’

‘কেনো?’,রাইদা সায়নের দিকে তাকিয়ে প্রশ্ন করে।

সায়ন্তিকা তার ভাবীর সাথে দেখা করতে চায় তাই ফ্ল্যাটে আসতে চাচ্ছে।’

‘আপনি কি বলেছেন?’

‘বলেছি আগে ভাবীর থেকে অনুমতি নেই তারপর জানাবো।’
সায়নের কথা শুনে রাইদা কোনো জবাব দেয় না।

‘আপনি বাসা থেকে কখন বেরিয়েছেন?’,রাইদা আবারো প্রশ্ন করে।

‘তুমি বের হওয়ার পরই আমি বেরিয়ে অফিসে গিয়েছিলাম। সায়ন্তিকা কল দিয়ে অনুরোধ করলো ভার্সিটিতে এসে সেই সিনিয়রের সাথে কথা বলার জন্য তাই চলে এলাম। তাছাড়া এসে তোমাকেই খুঁজছিলাম কিন্তু খুঁজে পাইনি পরে তো তুমি নিজেই এসে আমাকে ডাক দিলে।’,কথাটা বলে সায়ন রাইদার দিকে তাকায় রাইদার প্রতিক্রিয়া দেখার জন্য।

‘ও তাহলে আমার বিষয়ে সব গোয়েন্দাগিরি করা শেষ! তাই তো বলি আমার বাসার ঠিকানা কীভাবে পেলেন। এখন দেখছি শুধু বাসার ঠিকানা না ভার্সিটিও খুঁজে বের করে ফেলেছেন আগেই। আর কি কি খুঁজে পেয়েছেন বলেন তো।’,রাইদা সায়নের দিকে তাকিয়ে বলে।

রাইদার কথা শুনে সায়ন হাসে। রাইদা তাকিয়ে সায়নের হাসি দেখে। আজকাল সায়নকে সবসময়ই হাসি মুখে দেখছে রাইদা। বরিশালে দ্বিতীয় বার যখন সায়নের সাথে দেখা হয়েছিলো সায়নকে সব সময় গম্ভীর মুখে দেখেতো কিন্তু এখন বিয়ের পর অনেকটা বদলে গেছে সায়ন। রাইদার সাথে থাকলে তার মুখে হাসি লেগেই থাকে।

‘কি দেখছো রি?’,রাইদার দিকে না তাকিয়ে সায়ন প্রশ্ন করে।

‘কিছু না। আমরা এখন যাচ্ছি কোথায়?’,রাইদা চোখ সরিয়ে জবাব দেয়।

‘বাহিরে খেতে যাচ্ছি এরপর কোথায়ও ঘুরতে গেলে কেমন হয়?’

‘কোথায় যেতে চান? আশে পাশে যাওয়ার মতো তেমন জায়গা নেই তো।’

‘মাওয়া যাই চলো। ইলিশ খাবো আর নৌকায় ঘুরবো দু’জনে। ‘

সায়নের দেওয়া প্রস্তাব রাইদার পছন্দ হয়।

‘হ্যা যাওয়া যায় কিন্তু ক্যামেরা সাথে নেই ভিডিও কীভাবে করবো?’

‘আমাদের ব্যক্তিগত সময়ে কোনো ভিডিও আমি করতে দিবো না। আমরা যখন ঘুরতে বের হবো সময়টা শুধু তোমার আর আমার হবে। অন্য সময়ে তুমি ব্লগ করো সমস্যা নেই কিন্তু আমার সাথে ঘুরতে গেলে এসব চলবে না।’

সায়নের কথা শুনে রাইদা নিজের ভুল বুঝতে পারে।

‘ঠিক আছে বুঝেছি মনে থাকবে। এক কাজ করেন গাড়ি ঘুরান আমরা একেবারে মাওয়া গিয়েই দুপুরে খাবো।’
রাইদার মুখে এমন কথা শুনে সায়ন খুশি হয়।

গাড়ি ঘুরিয়ে সায়ন গুলিস্তানের রাস্তা ধরে। গুলিস্তান পেরিয়ে গাড়ি চলতে শুরু করে মাওয়ার উদ্দেশ্যে। গাড়ির এফএম রেডিও অন করে দেয় রাইদা। রেডিওতে বাংলা গান বাজতে থাকে,গানের সাথে তাল মিলিয়ে সায়নও গুনগুন করে গান ধরে। গাড়ির বন্ধ জানালায় মাথা ঠেকিয়ে সায়নের দিকে তাকিয়ে থাকে রাইদা। সায়ন ভ্রু উঁচিয়ে প্রশ্ন বোধক চাহনিতে তাকালে রাইদা ভেংচি দেয়। হুট করে গাড়ি থামিয়ে নিজের সিট বেল্ট খুলে ফেলে সায়ন। রাইদা ভাবে হয়তো সায়ন বের হবে তাই সে বিষয়টা পাত্তা না দিয়ে ফোন বের করে ফেসবুক স্ক্রোল করতে থাকে।
নিজের সিট থেকে উঠে রাইদার গালে ওষ্ঠ জোড়া ছোঁয়ায় সায়ন। সায়নকে সরাতে নিলে পরপর কয়েকবার শব্দ করে রাইদার গালে চুমু দেয় সে। রাইদাকে ছেড়ে সিট বেল্ট পড়ে গাড়ি স্টার্ট দিয়ে সায়ন। সায়নের বাহুতে কয়েকটা থাপ্পড় দেয় রাইদা। সায়ন হেঁসে রাইদার দিকে তাকিয়ে ঠোঁট জোড়া একত্রে করে চুমু দেওয়ার ভঙ্গি করে। রাইদা বিরক্ত হয়ে চুপ করে বসে গাড়ির জানালা দিয়ে বাহিরের তাকিয়ে মানুষজন দেখতে থাকে।

আস্তে আস্তে শহরের কোলাহল যুক্ত ব্যস্ত রাস্তা ছেড়ে গাড়িটা নিরিবিলি রাস্তায় প্রবেশ করে। গাড়ির গ্লাস নামিয়ে বাহিরের সৌন্দর্য উপভোগ করতে থাকে রাইদা। বাতাস এসে যখন চোখ মুখে ছুঁয়ে যায় চোখ বন্ধ করে সেই ছোঁয়া অনুভব করতে থাকে সে। ছোট বড় ব্রিজ পেরিয়ে গাড়ি চলেছে গন্তব্যে, ব্রিজের দুই ধারে সবুজ গাছ পালা রাস্তার সৌন্দর্য বহুগুণ বাড়িয়ে দিয়েছে।

রাস্তায় জ্যাম থাকায় প্রায় এক ঘন্টা সময় লাগে মাওয়া পৌঁছাতে। বিকালে মাওয়া ফেরি ঘাটে এসে সায়ন গাড়ি থামায়। দু’জনে গাড়ি থেকে নেমে ফেরি ঘাটের হোটেল গুলোতে ইলিশ ভাজা আর ভাত খাওয়ার জন্য এগিয়ে যায়। সায়ন দেখে শুনে একটা হোটেলে রাইদাকে নিয়ে ঢুকে বসে। কিছুক্ষণ পর টেবিলে গরম ভাত সাথে ইলিশ,বেগুন ভাজা আর শুকঁনো মরিচ ভাজা দিয়ে যায় হোটেলের কর্মচারী। পেটে খিদে থাকায় দু’জনে খেয়ে নিয়ে ঝটপট। খাওয় শেষ করে হোটেল থেকে বেরিয়ে চিন্তা করে পদ্মা নদীতে নৌকায় ঘোরার কথা।

পদ্মার পাড়ে এসে একটা নৌকা ভাড়া করে সায়ন। দু’জনে মিলে নৌকায় উঠে বসলে মাঝি নৌকা চালাতে শুরু করে। রাইদা সকল চিন্তা ঝেরে ফেলে নৌকায় বসে পদ্মা নদী থেকে দূরের গাছপালা গুলো দেখতে থাকে। নদীর জলের শব্দ সেই সাথে মাতাল করা পদ্মার হাওয়াতে রাইদা চোখ বন্ধ করে বসে থাকে।
সায়ন এসে রাইদার পাশে বসে আলতো হাতে রাইদার ঝুঁটি করা চুলটা খুলে দেয়। পদ্মার হাওয়াতে রাইদার খোলা চুলগুলো এলেমেলো হয়ে উঠতে থাকে। রাইদা সবকিছু অনুভব করেও চুপ করে চোখ বন্ধ করে আগের ন্যায় বসে থাকে। ধীরে ধীরে চোখ খুলে পাশ ফিরে সায়নের দিকে তাকায়। সায়নও পাশ ফিরে রাইদার দিকেই তাকিয়ে ছিলো। সায়নের সাথে চোখাচোখি হতেই রাইদা হেঁসে দেয়।

‘এভাবেই কেটে যাক সময় বাড়ুক বয়স,তোমার হাতে হাত রেখে হোক আমার ম*র*ন।’
রাইদার দিকে তাকিয়ে জড়ানো কন্ঠে বলে সায়ন।

‘তাহলে ধাক্কা মেরে পদ্মায় ফেলে দেই?’,দুষ্টুমির স্বরে বলে রাইদা।

‘তোমার প্রেমে হাবুডুবু খেয়ে সেই কবেই আমি হারিয়েছি। সাগরে ফেললেও তোমার টানে ফিরে আসবো তবে তুমি যদি একবার হেঁসে ভালোবাসি বলো আমি হাজারবার তোমার জন্য প্রা*ণ দিতে প্রস্তুত।’

সায়নের কথা শুনে রাইদা চোখ সরিয়ে নদীর পানিতে তাকায়।

সূর্যাস্তের সময় হলে নৌকার মাথায় বসে রাইদা সূর্যাস্ত দেখতে। রাইদার পিছনে বসে সায়ন রাইদার হাত ধরে রেখেছে। ধীরে ধীরে পদ্মার বুকে সূর্য হারিয়ে যায় নেমে আসে ধরণীতে রাত।

পদ্মার ওপারে নেমে সায়ন আর রাইদা চলে যায় ইলিশের খোঁজ করতে। অনেক খোঁজার পর বড় সাইজের একটা ইলিশ মাছ সায়নের পছন্দ হয় যদিও সাথে অন্য মাছ সে কিনতে চেয়েছিলো কিন্তু রাইদা শুধু ইলিশ কিনতে বলে।

ইলিশ কিনে একটা হোটেলে গিয়ে মাছটা দেয়। মাছটা কেটে ধুয়ে তারা ভেজে দেয়। ধোঁয়া ওঠা গরম ভাত, কয়েক রকম ভর্তা,ইলিশ মাছ ভাজা,ইলিশের লেজ ভর্তা, বেগুন ভাজা সাথে শুঁকনো মরিচ ভাজা দেখে।খিদে কয়েকগুণ বেড়ে যায়। রাইদা আর সায়ন নানান গল্প করে খেতে থাকে।

খাওয়া শেষ করে পদ্মার পাড়ে পাশাপাশি হাঁটতে থাকে দু’জনে। রাত বাড়লে সায়ন রাইদাকে নিয়ে আবারো নৌকায় করে এপারে চলে আসে। গাড়িতে উঠে গাড়ি স্টার্ট দেয় বাসায় যওয়ার উদ্দেশ্যে।

সারাদিনের ক্লান্তিতে রাইদার চোখে ঘুম হানা দেয়। সিটে মাথা এলিয়ে রাইদা ঘুমে তলিয়ে যায়। ডান হাত গাড়ির স্টিয়ারিং রেখে বাম হাত দিয়ে রাইদার চোখের সামনে আসা চুল গুলোকে সরিয়ে দেয় সায়ন।
সায়ন আপন মনে গাড়ি চালাতে থাকে আর একটু পরপর রাইদার ঘুমন্ত মুখের দিকে তাকায়। রাইদাকে নিজের কাছে পেয়ে সায়নের মনে হচ্ছে সকল সুখ তার কাছে।

‘এভাবেই থেকে যাও সারা জীবনের জন্য আর কিছু চাই না আমার।’
ঘুমন্ত রাইদার দিকে তাকিয়ে বলে সায়ন।

গাড়ি এসে বিল্ডিং এর নিচে থামে কিন্তু তখনো রাইদা গভীর ঘুমে। সায়ন রাইদাকে ধীর গলায় ডাক দেয় কিন্তু রাইদা কোনো সাড়াশব্দ করে না। গাড়ি থেকে বেরিয়ে সায়ন ঠিক করে রাইদাকে কোলে করে নিয়ে যাবে ফ্ল্যাটে। ফ্ল্যাটের চাবিটা হাতে নিয়ে যেই সিটে রাইদা ঘুমাচ্ছে সেই দরজাটা খুলে আস্তে আস্তে রাইদার সিট বেল্ট খুলে দেয় সায়ন। রাইদাকে ধীরে ধীরে কোলে তুলে নিয়ে গাড়িটা লক করে হাঁটা দেয় লিফ্টের দিকে। রাইদা কিছুটা নড়েচড়ে উঠলে সায়ন হাঁটা থামিয়ে দাঁড়ায়। সায়নকে দেখে দারোয়ান দৌড়ে আসে ভাবে রাইদা অসুস্থ। দারোয়ান কিছু বলার আগেই সায়ন ইশারায় চুপ করতে বলে। লিফ্টে উঠে চলে যায় আট তলায়। চাবি দিয়ে ফ্ল্যাটের তালা খুলে অন্ধকারে ভেতরে প্রবেশ করে সায়ন।

বিছানার পাশে দাঁড়িয়ে রাইদাকে শুইয়ে দেয়। বিছানায় শুতেই হাত পা ছড়িয়ে রাইদা ঘুমায়। ফ্ল্যাটের মেইন দরজা লাগিয়ে সায়ন নিজের পরিহিত কাপড় পাল্টে নেয়। হাত মুখ ধুয়ে বারান্দায় বসে সিগারেট খাওয়ার জন্য।
সিগারেট হাতে নিয়ে জ্বালাতে নিলে রাইদার কথা মনে পড়ে। রাইদার সাথে থাকলে সায়নের ইচ্ছে করে না সিগারেট খেতে। আজকে সারাদিনে একবারো মনে হয়নি সিগারেট খাওয়ার কথা। আট তলার বারান্দা থেকে সিগারেটরা ছুঁড়ে ফেলে দেয় সায়ন।

বারান্দা থেকে উঠে ঘরে এসে বিছানার দিকে এগিয়ে যায়। বিছানার মাঝ থেকে কোল বালিশটা সরিয়ে মেঝেতে রেখে ঘুমন্ত রাইদার কাছে যায়। রাইদার ঘুমন্ত মুখের দিকে তাকিয়ে থেকে ডান হাতের আঙুল দিয়ে আলতো হাতে রাইদার চোখ মুখ স্পর্শ করতে থাকে। শব্দহীন ভাবে রাইদার পাশে শুয়ে রাইদার ঘাড়ে মুখ গুঁজে ঘুমানোর চেষ্টা করে। সায়নের স্পর্শে ঘুমের মধ্যে রাইদা সায়নের টি-শার্ট খামচে ধরে নড়ে উঠে এরপর সায়নকে জড়িয়ে আবার ঘুমিয়ে যায়।


চলবে..পর্বঃ৩৩
গল্পঃ #সেদিন_দেখা_হয়েছিলো
লেখনীতেঃ #ঈশিতা_ইশা
(গল্প কপি পোস্ট করা সম্পূর্ণ নিষেধ।)

রান্না ঘরে সায়ন আর রাইদা সামনাসামনি দাঁড়িয়ে আছে।

‘আপনার কি মনে হয় পারবেন? কাজটা কিন্তু অনেক কঠিন।’,রাইদা গম্ভীর গলায় সায়নকে বলে।

‘চেষ্টা করতে তো দোষ নেই মনে হয় পারবো।’, শার্টের হাতা গুটিয়ে বলে সায়ন।

‘শার্টটা চেঞ্জ করে আসেন না হলে নোংরা হবে।’

‘হোক না সমস্যা কি আমার বউ ধুয়ে দিবে।’

‘এ্যাহ অসম্ভব আমি আর কাপড় ধুতে পারবো না। গতকালকে কাপড় ধুয়ে আমার সাধের নখ ভেঙে গেছে। আপনার ঐ রেখে যাওয়া শার্ট প্যান্ট ধুয়ে দিয়েছি তার মানে এই না সবসময় ধুয়ে দিবো। আমি কিন্তু বলে দিলাম ভবিষ্যতে আপনার কাপড় আমি ধুবো না।’

রাইদার কথা শুনে সায়ন দু’হাতে ভাজ করে বুকের উপর রেখে দাঁড়ায়।

‘তার মানে বউ আমার সাথে থাকার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা করছে।’

সায়নের কথা শুনে রাইদা ভ্যাবাচ্যাকা খায়।

‘ঐইটা কথার কথা বলছি। আপনাকে এখনো আমি অপছন্দ করি।’
কথাটা বলে রাইদা রান্নাঘর থেকে বের হয়ে রুমে চলে যায়। রাইদার যাওয়ার পানে তাকিয়ে সায়ন বুঝে যায় রাইদা তার কথা থেকে পালাতে চাচ্ছে।

‘শুনো বিছানার উপর রাখা আমার টি-শার্ট টা এনে দাও।’,সায়ন গলার স্বর উঁচু করে বলে।

সায়নের সামনে টি-শার্ট টা ধরে রাইদা মুখটা গম্ভীর করে বলে,’এখন এনে দিলাম আর পারবো না। এরপর থেকে নিজের জিনিস নিজে নিয়ে নিবেন।’

‘আচ্ছা নিয়ে নিবো এখন শার্টটা নাও আর কিছু করতে হবে না।’,কথাটা বলে শার্টের বোতাম খুলতে শুরু করে সায়ন।

‘আর বললেও করবো না। আজকে শুধু আমার মন মেজাজ ভালো তাই কথা শুনলাম আপনার।’,সায়নের দিকে চামচ তাক করে বলে রাইদা।

‘যতটুকু করেছো তাতেই আমি খুশি। কয়জনের ভাগ্য হয় বউকে দিয়ে কাজ করানোর তাও তো আমার বউ আমার শার্ট ধুয়ে দিয়েছে এখন আবার টি-শার্ট ও এনে দিয়েছে। এক মিনিট পিছনে ঘুরো এভাবে তোমার সামনে শার্ট খুলতে লজ্জা করে আমার।’,শার্টের বোতাম খোলা বন্ধ করে সায়ন বলে।

‘ইশ আমার বয়েই গেছে আপনাকে দেখতে। এমনি তো গোসল করে উন্মুক্ত শরীরে ঘুরঘুর করেন তখন লজ্জা করে না? এখন একদম লজ্জাবতী লতা হয়ে গেছে।’,ভেংচি দিয়ে কথাটা বলে পিছনে ঘুরে দাঁড়ায় রাইদা।

সায়ন হাসতে হাসতে শার্ট খুলে গেঞ্জি গায়ে দেয়। রাইদার কাঁধে শার্টটা রেখে সায়ন বেসিনে থাকা মাছ গুলোর দিকে তাকায়। গতকালকে পদ্মার ইলিশ রাইদাকে খেতে দেখে সায়ন কয়েকটা ইলিশ কিনে নিয়ে এসেছিলো। রাইদাকে নিয়ে চলে এসেছিলো তাই ইলিশ গুলোর কথা ভুলে গিয়েছিলো সেগুলো অবশ্য দারোয়ানকে দিয়ে নিয়ে এসেছিলো পরে।

সকালে যখন সায়ন ল্যাপটপে একটা মিটিং এ্যাটেন করছিলো তখন রাইদা বায়না করে ইলিশ ভাজা খাবে। মিটিং শেষ করে সায়ন রান্নাঘরে আসে মাছ কাটতে।

রাইদা সায়নের শার্ট হাতে নিয়ে পাশে দাঁড়িয়ে মিটমিট করে হাসতে থাকে। চপিং বোর্ডে মাছটা রেখে ছুরি দিয়ে সায়ন কাটতে শুরু করে।

‘বাহ্ ভালোই তো আপনি দেখছি মাছও কাটতে পারেন সুন্দর করে।’,সায়নের প্রশংসা করে বলে রাইদা।

‘আরো অনেক কিছু পারি তুমি সুযোগ দিলেই দেখাবো।’,রাইদার দিকে তাকিয়ে দুষ্টু হাসি দিয়ে বলে সায়ন।

রাইদা সায়নের বাহুতে থাপ্পড় দিয়ে রুমে চলে যায়। রুমে এসে ফোন হাতে অর্ককে কল দেয় রাইদা।

‘কিরে আজকে কি ক্লাসে আসবি না?’,কল রিসিভ করে অর্ক জিজ্ঞেস করে।

‘না আসলে শরীরটা একটু খারাপ তাই আসবো না। পায়েলকে বল নাচের বিষয়টা দেখাশোনা করতে। আমি একেবারে পরশুদিন ওরিয়েন্টেশনে আসবো।’,রাইদা জবাব দেয়।

‘তোর কি শরীর বেশি খারাপ? আমি কি এসে তোকে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাবো?’,অর্ক ব্যস্ত গলায় জিজ্ঞেস করে।

‘আরে না না তোর আসতে হবে না আমি নিজেই যেতে পারবো। রুহিকে বলিস আমাকে ক্লাসের পড়া গুলো পাঠাতে।’,রাইদা বলে।

রাইদার কথা শুনে অর্ক কি বলবে বুঝতে পারে না।

‘আর শোন ঐ দিকটা কতদূর এগিয়েছে?’,রাইদা প্রশ্ন করে।

‘কোন দিকটা? কিসের বিষয়ে জিজ্ঞেস করছিস?’,অর্ক উল্টো প্রশ্ন করে।

‘রুহির বিষয়ে বলছি। সেদিন টিএসসিতে কি করলি? বলেছিস মনের কথা?’

‘তোদের কতবার বলবো রুহিকে আমি এসব বলে বন্ধুত্ব নষ্ট করতে চাই না। আর দেখছিস তো বাসায় আপুর বিষয়ে ঝামেলা চলছে এরমধ্যে আমি সম্পর্কে জড়িয়ে গেলে সেটা যদি বাসায় না মানে তখন রুহিকে তো ধোঁকা দেওয়া হবে।’

‘তাহলে সেদিন শাড়ি পরে যেতে বলেছিলি কেনো?’

‘মা যাতে ওরে দেখে পছন্দ করে তাই বলেছিলাম। বাসায় রুহিকে পছন্দ করলে আমার আর আলাদা করে এ বিষয়ে বাসায় বলতে হবে না সেটা ভেবে বলেছিলাম।’

‘সবই বুঝলাম কিন্তু একটা কথা মাথায় রাখিস রুহির বাসায় ওরে বিয়ে দেওয়ার জন্য পাত্র দেখতেছে। তোর একটা ভুল কদমে রুহিকে সারাজীবনের জন্য হারাবি তাই যা করার ভালো করে ভেবে চিন্তে কর। এখন কল রাখছি পরে কথা হবে।’

‘ঠিক আছে সাবধানে থাকবি আর কোনো প্রয়োজন হলে কল দিস।’,অর্ক বলে।
রাইদা কল কেটে দিলে অর্ক গভীর চিন্তায় ডুবে যায়। কি করবে ভেবে পায় না।

ফোন বিছানায় রেখে রাইদা রান্নাঘরে যায়। সায়ন মাছ কেটে ততক্ষণে ধুতে শুরু করেছে। রাইদা চুলায় বসানো ভাতটা দেখতে থাকে। মাছ ভাজার জন্য মশলা গুলো সব বের করে দেয় রাইদা। শোবার ঘর থেকে সায়নের ফোনের রিংটোনের শব্দ আসে। রাইদা গিয়ে বিছানার উপর থেকে ফোনটা নিয়ে আসে। সায়ন মাছ ধুতে ব্যস্ত থাকায় কল রিসিভ করে রাইদা সায়নের কানে ফোন ধরে।

‘হ্যা মা বলো কেমন আছো?’,সায়ন জিজ্ঞেস করে।

‘তোর তো কোনো খবরই নেই। তোর কথা তো বাদ দিলাম বউমার খবরটাও তো দিস না ঠিক মতো।’,মিসেস রিনা অভিমানীর স্বরে বলে।

‘কলটা স্পিকারে দাও।’,ফিসফিস করে রাইদাকে বলে সায়ন।
সায়নের কথা মতো রাইদা ফোনটা কান থেকে সরিয়ে স্পিকার অন করে।

‘আরে মা তোমার বউমার সাথে ব্যস্ত আমি তাই তো কল দেওয়ার সময় পাইনি।’
সায়নের মুখে এমন কথা শুনে রাইদা চোখ বড়বড় করে সায়নের দিকে তাকায়।

‘আরে তোর সাথে কে কথা বলতে চায় আমি তো বউমার সাথে কথা বলতে চাই। মেয়েটাকে কি বাহিরের খাবার খাওয়াচ্ছিস? তোর একটু সময় হয় না এসে খাবার নিয়ে যেতে?’

‘কালকে একটু বেরিয়েছিলাম তো তাই আসতে পারিনি আচ্ছা আজকে রান্না করো আমি এসে খাবার নিবো।’

‘সকাল বেলা কি খেয়েছিস? বাহিরের খাবার যা অস্বাস্থ্যকর খেয়ে তো মেয়েটা অসুস্থ হয়ে যাবে।’

‘খাইনি এখনো চুলায় ভাত হচ্ছে তারপর মাছ ভেজে ভাত খাবো।’

‘সকালের নাশতার বদলে মেয়েটাকে ভাত খাওয়াবি? আমি নিপাকে দিয়ে রুটি বেলিয়ে রাখবো সেগুলো ফ্রিজে রেখে বউমাকে খাওয়াবি।’

‘ঠিক আছে আম্মাজান আপনার দেওয়া খাবারই আপনার বউমাকে খাওয়াবো।’

‘বউমাকে একটু কলটা দে সায়ন্তিকা কথা বলতে চায়।’

সায়ন্তিকার কথা শুনে সায়ন রাইদার দিকে তাকায়। মাথা নাড়িয়ে রাইদা না বলতে বলে। ঐদিকে সায়ন্তিকা মিসেস রিনার কাছ থেকে ফোন কেঁড়ে নেয়।

‘হ্যালো ভাইয়া ভাবীকে কলটা দাও কথা বলবো।’,সায়ন্তিকা বলে।

‘তোর ভাবী তো এখন গোসলে পরে কল দিয়ে কথা বলিয়ে দিবো। তোর ক্লাস নেই? এই সময় বাসায় কি করিস।’,সায়ন বলে উঠে।

‘না আজকে ক্লাস নেই সবাই অনুষ্ঠান নিয়ে ব্যস্ত তাই যাইনি। শোনো গতকালকে তুমি বলার পর ঐ আপুটা আমার নাম কেটে দিয়েছে। তুমি আপুটাকে কি বলেছিলে যে এক কথায় কাজটা করে দিলো?’

‘কি আবার বলবো দু চারটা হু*ম*কি দিয়েছি বেচারি ভয়ে হাত জোর করলো। আচ্ছা তোর কাছে ঐ আপুকে কেমন লাগে?’

সায়নের মুখে এমন কথা শুনে রাইদা ভ্রু উঁচিয়ে তাকায়। সায়ন বোকা হাসি দেয় রাইদার দিকে।

‘আমার তো আপুটাকে একদমই পছন্দ না। এতো রাগী আর ফ্রেশারদের যেই পানিশমেন্ট দেয় তা দেখে মন চায় মাঝে মাঝে আপুটার মাথায় এক বালতি পানি ঢেলে মাথাটা ওনার ঠান্ডা করে দেই। আমার ভাবী নিশ্চয়ই ওমন না? ঐ আপুর মতো রাগী হলে আমি কিন্তু ভাবীকে বয়কট করবো।’

সায়ন্তিকার মুখে এমন কথা শুনে সায়ন আহাম্মক হয়ে যায়।

‘তুই কল কাট তোরে পরে আমি কল দিয়ে কথা বলবো।’

‘পরে কল দিলে ভাবীর সাথে আগে কথা বলাবা।’
কথা শেষ করে সায়ন্তিকা কল কেটে দেয়।

‘তা মিস্টার ইমতিয়াজ সায়ন আমাকে দু চারটা কি হু*ম*কি দিয়েছিলেন আরেকবার বলবেন প্লিজ আমি না মনে করতে পারছি না।’,রাইদা সায়নকে প্রশ্ন করে।

‘আমি ও ভুলে গেছি পরে মনে পড়লে বলবো এখন আগে মাছ ভাজা শেষ করি।’

রাইদা চুলার সামনে থেকে সরে দাঁড়ায় সায়ন মাছ ধোয়া শেষ করে তাতে হলুদ,মরিচ,লবণ মাখিয়ে ভাজতে শুরু করে। ভাত রান্না শেষ হলে মাছ ভাজা আর গরম ভাত খেয়ে নেয় দু’জনে।
খাওয়া শেষ করে রাইদা আর সায়ন বাজার করতে বের হয়। বাসার প্রয়োজনীয় কিছু জিনিস কিনে নেয়। বাসার বিশাল আয়নার সামনে বসার জন্য সিট আর সাইড ড্রয়ার কিনে সাথে ঘর সাজানোর আরো কিছু জিনিস।

দুপুরের দিকে রাইদাকে ফ্ল্যাটে নামিয়ে দিয়ে সায়ন চলে যায় খাবার আনতে। বাসায় এসে রাইদা ঘর গুছিয়ে গোসল সেরে নেয়।
প্রায় দুপুর তিনটার দিকে সায়ন বাসার দরজা নক করে। রাইদা দরজা খুলতে দেরি করছিলো তাই সায়ন ফোন বের করে রাইদাকে কল দিতে কিন্তু এর মধ্যে দরজা খোলার শব্দ হয়। ফোন থেকে চোখ তুলে সায়ন কিছু বলতে নিলে থতমত খায়।

সুতির একটা শাড়ি পরেছে রাইদা। শাড়িটাতে সুতোর কাজ করা সাথে ম্যাচিং করা কালো রঙের ব্লাউজ। ভেজা চুলগুলো থেকে এখনো পানি পরছে। সায়ন ঢোক গিলে রাইদার পা থেকে মাথা পর্যন্ত দেখতে থাকে। রাইদা ভ্রু কুঁচকে দরজা থেকে সরে শোবার ঘরে চলে যায়। বুকে হাত দিয়ে জোরে জোরে শ্বাস নিতে থাকে সায়ন। ঘরে ঢুকে দরজা লাগিয়ে রান্নাঘরে গিয়ে খাবারের ব্যাগটা রাখে। শোবার ঘরে গিয়ে দেখে রাইদা কপালে টিপ পরছে আবার খুলছে।

‘তুমি কোথাও যাবা এখন?’,গলা ঝেরে প্রশ্ন করে সায়ন।

‘লাগেজ খুলে নানুর শাড়িটা পেলাম ভাবলাম একটু পরে দেখি কেমন লাগে আমাকে।’,রাইদা জবাব দেয়।

‘টিপ পরো শাড়ির সাথে মানাবে।’,সায়ন বলে।

‘কোন রঙের টিপ পরবো বুঝতেছি না। মনে হচ্ছে টিপ মানাবে না।’

সায়ন এগিয়ে গিয়ে রাইদার হাত থেকে টিপের পাতাটা নিয়ে একটা ছোট কালো টিপ তুলে রাইদার কপালে বসিয়ে দেয়।

‘এখন পারফেক্ট লাগতেছে কিন্তু চুলগুলো তো ঠিক করে মুছোনি পানি পরতেছে।’
বারান্দায় গিয়ে তোয়ালে এনে রাইদার চুল মুছে দেয় সায়ন।

‘গোসল করে আসেন আমি ভাত বাড়ছি।’,রাইদা সায়নের দিকে ফিরে বলে।

সায়নও চলে যায় গোসল করতে। গোসল করে সায়ন বাথরুম থেকে বের হলে দেখে রাইদা ভাত বেড়ে বসে আছে। সায়ন এসে রাইদার পাশের সোফায় বসে। রাইদা তরকারি তুলে সায়নের প্লেটে দেয়।

‘এভাবে খেতে তোমার কষ্ট হয় আমার মনে হয় একটা ছোট খাবারের টেবিল আর একটা টিভি কেনা দরকার।’,ভাতের প্লেট হতে নিয়ে সায়ন বলে।

‘কি দরকার মানুষের বাসায় এসব কেনার। কয়দিনই বা আমি এখানে থাকবো। ভাবছি সামনের সপ্তাহে বাসায় ফিরে যাবো। এভাবে আমার জন্য আপনারো কষ্ট হচ্ছে তার উপর খাওয়ার ঝামেলা।’,রাইদা জবাব দেয়।

রাইদার কথায় সায়নের রাগ হয় তাই সে কথার জবাব না দিয়ে খেতে থাকে।

‘আমি ভাবছিলাম বিকালে আশেপাশে কোথায় গিয়ে ঘুরে আসি, কি বলেন?’,রাইদা প্রশ্ন করে।

সায়ন কথার জবাব দেয় না নিজের মতো খেতে থাকে। রাইদা খাওয়া রেখে সায়নের দিকে তাকায়।

‘কি হলো আপনার? কথার জবাব দিচ্ছেন না কেনো?’,রাইদা আবারো জিজ্ঞেস করে।

সায়ন তাও কোনো জবাব দেয় না। চুপচাপ ভাত খাওয়া শেষ করে উঠে যায়। রাইদা বুঝতে পারে না সায়নের হঠাৎ হলো কি। রাইদা খাওয়া শেষ করে বাটিগুলো ফ্রিজে রেখে খাবারের প্লেট ধুয়ে শোবার ঘরের দিকে যায়। সায়ন বালিশে মুখ গুঁজে শুয়ে ছিলো, এভাবে সায়নকে শুতে দেখে রাইদা বিছানায় গিয়ে সায়নের পাশে বসে।

‘আপনার কি শরীর খারাপ লাগছে? হুট করে আপনার হলো কি?’,সায়নকে ডেকে রাইদা জিজ্ঞেস করে।

বালিশ থেকে মুখ তুলে সায়ন রাইদার দিকে তাকায়। সায়নের চুলে রাইদা হাত বুলিয়ে দেয়।

‘কি হয়েছে যদি না বলেন কী করে বুঝবো বলেন। পুরো ফ্ল্যাটে আমরা দু’জন মানুষ এর মধ্যে একজন যদি এভাবে গাল ফুলিয়ে রাখে অপর মানুষের কষ্ট হয় না?’,সায়নের মাথায় বিলি কেটে বলে রাইদা।

‘তুমি বাসায় কেনো যেতে চাইছো বারবার? এখানে কি তোমার খুব কষ্ট হয়?’,বালিশে শুয়ে রাইদার দিকে তাকিয়ে প্রশ্ন করে সায়ন।

‘আমি কখন বললাম আমার কষ্ট হয়? আমি তো আপনার কষ্টের কথা বললাম। ঠিক আছে এই মাসে আমি বাসায় যাবো না এখন খুশি?’,রাইদা সায়নের গালে হাত রেখে জিজ্ঞেস করে।

রাইদার হাতে চুমু খেয়ে হাতটা টেনে ধরে রাখে সায়ন। মাথা নাড়িয়ে না সূচক জবাব দেয়।

‘খুশি না কেনো? আবার কি হলো?’,রাইদা আবারো জিজ্ঞেস করে।

সায়ন আঙুর দিয়ে নিজের ওষ্ঠে ইশারা করে। রাইদা হেঁসে সায়নের পিঠে কিল দেয়।

‘ইশ শখ কত! সরেন অসভ্য লোক।’,সায়নের থেকে হাত ছাড়িয়ে রাইদা বলে।

‘চাইলাম চুমু বউ দিলো কিল! সৃষ্টিকর্তা এ তোমার কি লীলা খেলা?’,সায়ন সোজা হয়ে শুয়ে বলে।

সায়নের কথা শুনে রাইদা জোরে জোরে হাসতে থাকে।

রাইদার ফোন বাজতে থাকে, ফোন হাতে নিয়ে দেখে মান্নান রাফায়েত কল দিয়েছে। হাসি থামিয়ে কল রিসিভ করে রাইদা।

‘কিরে মা কেমন আছিস?’,মান্নান রাফায়েত জিজ্ঞেস করে।

‘আমি ভালো আছি, তোমরা কেমন আছো?’,হেঁসে জিজ্ঞেস করে রাইদা।

মেয়ের হাসি শুনে মান্নান রাফায়েতের মন ভালো হয়ে যায়।

‘এতক্ষণ চিন্তায় ছিলাম এখন তোর হাসি শুনে বেশ ভালো লাগছে। তা জামাই কি তোর সাথে আছে নাকি তুই একা আছিস?’,মান্নান রাফায়েত জিজ্ঞেস করে।

রাইদা ঘুরে সায়নের দিকে তাকায় দেখে সায়ন চোখ বন্ধ করে শুয়ে আছে।

‘হ্যা আছে ঘুমাচ্ছে।’,রাইদা জবাব দেয়।

‘তোর খেয়াল রাখে? ছেলেটাকে তো আমার ভালোই লাগে কিন্তু তোরা মা মেয়ে কেনো পছন্দ করিস না আমি বুঝি না। কথাবার্তা, আচার-আচরণ সব দিকই তো আমার কাছে ভালো মনে হয়েছে।’

‘মানুষ এক ছাদের নিচে বছরের পর বছর থেকেও একে অপরকে চিন্তে পারে না আর তুমি দু’দিন কথা বলেই চিনে ফেললে?’

‘শোন ভালো খারাপ মিলিয়েই মানুষ। তুই শুধু দেখবি ছেলেটা তোরে ভালোবাসে কিনা আর তোর খেয়াল রাখছে কিনা। একজন দায়িত্বশীল পুরুষ কখনোই নিজের স্ত্রী কে কষ্ট দেয় না। যারা স্ত্রী এর প্রতি উদাস তারাই সংসার ছেড়ে বাহিরে পর নারীর সঙ্গ ধরে।’

রাইদা চুপ করে মান্নান রাফায়েতের কথাগুলো শুনে।

‘তোমার বউ কেমন আছে? কিছু বলেছিলো আর?’,রাইদা জিজ্ঞেস করে।

‘হ্যা বলছিলো তোরে বাসায় ফিরিয়ে নিতে। আর চাচ্ছিলো বেয়াইনের সাথে আলাপ করতে।’

‘এতো সহজে মেনে নিলো?’

‘মেনে নিয়েছে তা না সায়নের পরিবার সম্পর্কে জানতে চায়।’

‘হুম বুঝেছি। তুমি সময় করে এসো আমি বাসাতেই আছি।’

‘আজকে তো কাজে ব্যস্ত আমি কালকে দেখি সম্ভব হলে আসবো।’

‘ঠিক আছে রাখছি এখন।’

‘সাবধানে থাকিস আর জামাইকে কম জ্বালাবি।’

মান্নান রাফায়েতের বলা শেষ কথাটা শুনে রাইদা আবারো সায়নের দিকে তাকায়। তাকিয়ে দেখে সায়নের চোখ বন্ধ। রাইদা বুঝতে পারে না সায়ন সজাগ নাকি ঘুমে।

কল কেটে ফোনটা রেখে সায়নের দিকে এগিয়ে যায়। সায়নকে হাত দিয়ে নাড়া দিলে সায়ন কোনো শব্দ করে না। সায়ন ঘুমিয়ে গেছে ভেবে রাইদা সায়নকে বিরক্ত করতে সায়নের দিকে ঝুঁকে। হুট করে সায়ন চোখ বন্ধ রেখেই দু’হাতে দিয়ে রাইদাকে জড়িয়ে কাছে টেনে নেয়। আচমকা এমন কান্ড হওয়াতে রাইদা পুরো ভ্যাবাচ্যাকা খায়। রাইদা নিজেকে সায়নের কাছ থেকে সরানোর চেষ্টা করতে থাকে।

‘বিরক্ত করছো কেনো রি? ঘুমাতে দাও একটু।’,নিচু স্বরে সায়ন বলে।

‘এই না এখন ঘুমাবো না। এখন ঘুমালে রাতে আমার ঘুম হয় না। আর উঠুন আমরা বের হবো একটু পর।’,রাইদা ব্যস্ত গলায় বলে।

‘কই যাবা আবার? বাসায় ঘুমাই আমার তো এভাবে ঘুমাতে বেশ লাগছে।’
রাইদাকে আরো শক্ত করে জড়িয়ে ধরে সায়ন বলে।

‘রিকশায় ঘুরবো উঠেন। আজকে পুরো শহর ঘুরবো চলেন।’

‘গাড়ি থাকতে আবার রিকশা কেন?’

‘রিকশায় ঘুরলে না মজা বুঝবেন। উঠেন আজকে আপনাকে রিকশাতে ঘুরাই তখন বুঝবেন কেনো রিকশায় ঘুরার কথা বলেছি।’

‘কিন্তু আমার তো তোমাকে ছেড়ে উঠতে ইচ্ছে করছে না একদমই।’

‘ঠিক আছে উঠতে হবে না আমার একটা কথা শুনেন।’

‘কি কথা বলো শুনছি।’

‘ছাড়েন তারপর বলছি এভাবে বলতে সমস্যা হচ্ছে।’

রাইদার কথা শুনে সায়ন হাতের বাঁধন আলগা করে। রাইদা দ্রুত সায়নের হাত সরিয়ে উঠে বসে। সায়ন চোখ খুলে তাকায়।

‘আমি রেডি হচ্ছি আপনিও রেডি হন।’,বিছানা থেকে নেমে দাঁড়িয়ে বলে রাইদা।

‘এই শাড়িটা পরেই চলো। এভাবেই তোমাকে ঘাতক নারী লাগছে।’,সায়ন রাইদার দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলে।

‘ঠিক আছে শাড়িটা ঠিক করে নিচ্ছি। গ্রামে গিয়ে শাড়ি পরাটাও শিখে নিয়েছি তাছাড়াও সুতির শাড়ি পরতে ঝামেলা কম।’,কথাগুলো বলতে বলতে আয়নার সামনে গিয়ে বসে রাইদা।

চিরুনী হাতে নিয়ে চুল আঁচড়াতে শুরু করে। সায়ন পাশ ফিরে আয়নায় তাকিয়ে রাইদার প্রতিবিম্বের দিকে তাকিয়ে থাকে। রাইদা তাড়া দিলে সায়ন উঠে একটা শার্ট বের করে গায়ে দেওয়ার জন্য।

‘এখানে আপনার পাঞ্জাবি নেই?’,সায়নকে প্রশ্ন করে রাইদা।

সায়ন মাথা নাড়িয়ে না সূচক জবাব দেয়।
রাইদা আর কিছু না বলে ঝটপট রেডি হয়। সায়নও গেঞ্জি পাল্টে শার্ট পরে নেয়। বিকাল হতেই বাসা তালা মেরে দু’জনে বের হয়।

একটা রিকশা ডেকে দু’জনে উঠে বসে। হুট করে রাইদা বলে রিকশা থামাতে। রিকশা থামলে সায়নে রেখেই রাইদা একটা দোকানে ঢুকে। সায়নও ভাড়া মিটিয়ে রাইদার পিছন পিছন যায়। দোকানে ঢুকে দেখে এটা ছেলেদের জামা কাপড়ের শো-রুম। রাইদাকে খুঁজতে খুঁজতে ভেতরে গিয়ে দেখে রাইদা ছেলেদের পাঞ্জাবি দেখছে। সায়ন এসে রাইদার পাশে দাঁড়ালে কয়েকটা পাঞ্জাবি সায়নের হাতে ধরিয়ে দেয় রাইদা। ইশারায় বলে ট্রায়াল রুমে গিয়ে পরে দেখতে। বাধ্য ছেলের মতো সায়ন গিয়ে একটার পর একটা পাঞ্জাবি পরে রাইদাকে দেখায়। মারুন রঙের একটা পাঞ্জাবি রাইদা পছন্দ করে। শেষে সায়নকে বলে পাঞ্জাবিটা পরেই বের হতে আর সায়নের পরিহিত শার্টটা রাইদা নিজের ব্যাগে নিয়ে নেয়।

শো-রুম থেকে বেরিয়ে দু’জনে রিকশা ডেকে আবার উঠে বসে। রিকশায় বসে রাইদা নানান গল্প জুড়ে দেয় আর সায়নও মনোযোগী শ্রোতার মতো শুনতে থাকে।

সন্ধ্যা নামার আগ মূহুর্তে রিকশা থেকে নেমে দু’জনে পাশাপাশি হাঁটতে শুরু করে। দু’জনের মধ্যে কোনো বাক্য বিনিময় নেই, হেঁটে চলেছে দু’জনে অজানা গন্তব্যে।


চলবে..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here