সেদিন দেখা হয়েছিলো পর্ব -৩৬+৩৭

পর্বঃ৩৬
গল্পঃ #সেদিন_দেখা_হয়েছিলো
লেখনীতেঃ #ঈশিতা_ইশা
(গল্প কপি পোস্ট সম্পূর্ণ নিষেধ।)

ভ্যাপসা গরমে গাছের ছাওনিতে বসে রাইদা বিরক্তিতে বারবার চোখমুখ কুঁচকে আশেপাশে তাকাচ্ছে। মাঠের তেমন ছাত্র-ছাত্রীদের আনাগোনা নেই বেশিরভাগই নিজেদের ক্লাসে। গাছের সাথে মাথা হেলান দিয়ে কানে ইয়ারফোন গুঁজে চোখ বন্ধ করে বসে থাকে রাইদা।

সকাল বেলা ঘুম থেকে উঠেই ফ্ল্যাটে ফিরতে চেয়েছিলো রাইদা কিন্তু মান্নান রাফায়েত বকা দিয়ে নিজে বসিয়ে সায়ন আর রাইদাকে নাশতা খাইয়ে বের হতে দিয়েছে।

জ্যাম ঠেলে ভার্সিটিতে আসতে আসতে প্রথম ক্লাসের বিশ মিনিট ততক্ষণে অতিক্রম। রাইদা আর ফাহিমের একত্রে প্রেজেন্টেশন ছিলো প্রথম ক্লাসে তা সত্বেও রাইদাকে দেরি হওয়ার কারনে ক্লাসে স্যার ঢুকতে দেয়নি। ফাহিম প্রেজেন্টেশন সামলে নিবে এটা রাইদা জানে তাই তো স্যার যখন ক্লাসে প্রবেশ করতে দেয়নি সে নিশ্চিন্তে এসে গাছ তলায় বসে আছে।

প্রথম ক্লাস শেষ হলে ফাহিম রাইদাকে খুঁজতে গাছ তলায় আসে। বাকিরা ক্লাসেই আছে। ফাহিম ভালো করেই জানতো রাইদা কই আছে। ফাহিম এসে দেখে রাইদা চোখ বন্ধ করে বসে আছে।

‘প্রথম ক্লাস শেষ পরের ক্লাস করবিনা?’,রাইদার কান থেকে ইয়ারফোন খুলে জিজ্ঞেস করে ফাহিম।

‘প্রেজেন্টেশন কেমন দিলি?’,চোখ খুলে রাইদা পাল্টা প্রশ্ন করে।

‘তুই অনুপস্থিত তাই স্যার এক মার্ক কাটবে বলছে বাকিটা জানি না।’,ফাহিম জবাব দেয়।

‘পরের ক্লাসটা করবো কিন্তু ক্লাস শেষ হলে গত কালকের ভিডিও গুলো দেখাবি।’

রাইদার কথা শুনে ফাহিম কোনো প্রতিক্রিয়া দেখায় না বসা থেকে উঠে ক্লাসের দিকে হাঁটা দেয়। রাইদাও ব্যাগ নিয়ে ফাহিমের পিছনে ছুটে। ক্লাসে গিয়ে দেখে রুহি অনুপস্থিত। অর্কের পাশে থাকা ফাঁকা সিটটায় গিয়ে বসে রাইদা।

ক্লাস শেষ করে রাইদা দু’হাত উপরে তুলে আড়মোড়া ভেঙে বসা থেকে উঠে দাঁড়ায়। সবাই এখন ক্যান্টিনে যাবে তাই রাইদা নিজের ব্যাগ অর্কের হাতে ধরিয়ে দিয়ে নিজে আগে বের হয়।

‘আপু আপনাকে স্যার ডাকছে।’,এক জুনিয়র মেয়ে এসে রাইদাকে বলে।

‘কোন স্যার? চলো দেখি তো।’,রাইদা মেয়েটার সাথে যায়।

‘এখানে দাঁড়ান আমি স্যারকে ডেকে আনছি।’,কথাটা বলে মেয়েটা দৌড় দেয়।

রাইদা কিছু বুঝে উঠার আগেই রাইদার উপর বিনা বৃষ্টিতে পানির বর্ষণ হয়। চোখ বন্ধ করে রাইদা সরে দাঁড়ায় কিন্তু তার বর্ষণ কমে না। রাইদা রাগে জোরে চিৎকার দেয়। রাইদার গভীর চিৎকারে বর্ষণও থেমে যায় সকলে দৌড়ে আসে। চোখের চশমা খুলে রাইদা হাত দিয়ে চোখের পানি মুছে দ্বিতীয় তলায় তাকালে কাউকে দেখতে পায় না।
রাইদার চিৎকারে বাপ্পি,অর্ক,ফাহিম, পায়েল দৌড়ে এসেছে। এই রৌদ্রময় দিনে রাইদাকে কাক ভেজা অবস্থায় দেখে রাইদার বন্ধুরা হাসতে হাসতে রাইদার দিকে এগিয়ে আসে। রাইদা রাগে দাঁতে দাঁত চেপে ধরে।

‘কাজটা কে করছো? যে করছো লক্ষি বাচ্চার মতো এসে বলো আমি কিছু বলবো না কিন্তু আমি যদি নিজে খুঁজে পাইছি কে এটা করছো তাহলে এই ভার্সিটির চেহারা আর তোমার দেখা লাগবে না। আমি পাঁচ মিনিট সময় দিলাম বের হও।’,রাইদা চিৎকার করে বলে।

রাইদার চিৎকার শুনে উপস্থিত জুনিয়ররা ভয়ে গুটিয়ে যায়। অর্ক এসে নিজের গায়ের গেঞ্জির উপর পরিহিত শার্ট খুলে রাইদাকে গায়ে দেয়। পায়েল নিজের ব্যাগ থেকে ছোট তোয়ালে বের করে রাইদার চুল মুছে দিতে থাকে। রাইদা শর্ট টপস আর জিন্স পরেছে যার কারনে পানিতে পুরো শরীর ভিজে গায়ের সাথে টপসটা লেগে আছে। অর্কের শার্টটা গায়ে না দিয়ে হাত নিয়ে বাথরুমে চলে যায় রাইদা। ভেজা টপসটা পাল্টে শার্ট গায়ে দিয়ে বের হয়। পায়েল নিজের গলার স্কার্ফ খুলে রাইদার গায়ে পেচিয়ে দেয়।

‘উপর থেকে পানি আমি ফেলেছি তবে ইচ্ছাকৃতভাবে না সম্পূর্ণ অনিচ্ছাকৃত ঘটনা। আমি তো আর জানতাম না আপনি এখানে দাঁড়িয়ে আছেন না দেখেই ফ্লোর মোছার বালতির পানি গুলো ঢেলে দিয়েছি দুষ্টুমি করে। ‘,রাইদার সামনে দাঁড়িয়ে কথাগুলো বলে সায়ন্তিকা।

সায়ন্তিকাকে দেখে রাইদার রাগ কমে যায়। চোখ জোড়া ছোট করে তীক্ষ দৃষ্টি সায়ন্তিকার দিকে ফেলে রাইদা।

‘কাজটা ঠিক করোনি তুমি। ছোট ভেবে মাফ করে দিলাম। আজকে মাফ করেছি বলে বারবার মাফ করবো এটা ভেবো না পরেরবার এমন কিছু করলে এর পরিণাম খারাপ হবে কথাটা মাথায় রেখো।’,কথাগুলো বলে রাইদা সায়ন্তিকার গাল টেনে হাঁটা দেয়।

উপস্থিত সকলে অনেক অবাক হয় রাইদার ব্যবহারে। সবাই জানে রাইদা রাগ করলে সিনিয়রদের সাথেও ঝামেলা করে সেখানে সায়ন্তিকা এতো বড় একটা কাজ করলো রাইদা কেনো সায়ন্তিকাকে মাফ করে দিলো কিছু কেনো বললো না?

রাইদার বন্ধু সহ সকলের মনেই একই প্রশ্ন।
রাইদা যেতেই সায়ন্তিকা জয়ের হাসি দেয়। পুরোটা তার প্লান মাফিক হয়েছে ভেবেই সে অনেক খুশি।

অর্ক,বাপ্পি,পায়েল চলে গেছে ক্লাস করতে। ফাহিমকে অর্ক পাঠিয়েছে রাইদাকে পৌঁছে দিতে। ভার্সিটি থেকে বেরিয়ে একটা রিকশা ডাক দেয় ফাহিম। রিকশা চলতে শুরু করলে রাইদা রিকশা থামিয়ে ফাহিমকে বলে ভার্সিটির সামনের টংয়ের থেকে চা আনতে। রাইদার আবদার মেটাতে ফাহিম যায় চা আনতে আর রাইদা রিকশায় বসে থাকে।

‘আজকাল কার মেয়েগুলাকে প্রেমের প্রস্তাব দিলে কত ভাব লয় অথচ ঠিকই পোলাগো লগে একই ফ্ল্যাটে থাকে। ঐ পোলা কি আমার থেকে বেশি সুখ দিবো? আমারে কইলে তো এই জনমের সব সুখ দিতাম।’

ফাহিম টংয়ে দাঁড়ালে তার কানে এই কথাগুলো আসে। ঘাড় ঘুরিয়ে ফাহিম পিছনে তাকিয়ে দেখে মাসুম তার সাঙ্গ পাঙ্গ নিয়ে রাইদার দিকে তাকিয়ে এসব বলছে আর হাসছে।

‘মাইয়াডারে যদি এক রাতের জন্য পাইতাম তেইলে বুঝাই দিতাম। ওর দেমাগে পা মাটিতে পরে না। ঐ পোলারে দিয়া আমারে মাইর খাওয়াইছিলো এর শোধ আমি নিমুই।’,মাসুম রাগে ক্ষোভে কথাগুলো বলে রাইদার দিকে তাকিয়ে।

ফাহিম এতক্ষণ নিজেকে কন্ট্রোল করলেও আর পারে না। হাত মুঠো করে মাসুমের দিকে এগিয়ে যায়। ফাহিমকে দেখে অশ্লীল কথাবার্তা শুরু করে মাসুম। ফাহিম মাসুমকে বুঝানোর চেষ্টা করে যাতে রাইদাকে নিয়ে আজেবাজে কথা না বলে এতে ক্ষেপে ফাহিমকে ঘুষি দেয় মাসুম। ফাহিমও পাল্টা ঘুষি বসায় মাসুমের থুঁতনি বরাবর। সাথে সাথে মাসুমের সাথে থাকা ছেলেরা ফাহিমকে ঘিরে মারতে শুরু করে।

রাইদা এদিক ওদিক তাকিয়ে বুঝার চেষ্টা করে কি হয়েছে। নজর গেলে দেখে ফাহিমকে মাসুমের সহযোগীরা ধরে মারছে। ব্যাগ রিকশায় ফেলে রাইদা দৌড় দেয় ফাহিমকে ছাড়াতে। রাইদা গিয়ে ফাহিমকে আগলে ধরে। রাইদাকে দেখে মাসুমের সহযোগীরা সরে দাঁড়ায়। একজন এসে রাইদার হাত ধরে রাইদাকে সরাতে নিলে রাইদা তার গালে চড় বসিয়ে দেয়। ফাহিম রাইদাকে সরে যেতে বলে রাইদা জেদ ধরে ফাহিমের সামনে দাঁড়িয়ে থাকে।

ডিপার্টমেন্টের এক জুনিয়র এসব দেখে দৌড়ে যায় অর্ককে খবর দিতে। মাসুম রাইদার দিকে এগিয়ে এসে রাইদার হাত টেনে রাইদাকে ফাহিমের সামনে থেকে সরায়। এক ছেলে গিয়ে হকিস্টিক নিয়ে এসেছে সেগুলো সবাই হাত তুলে নিয়ে ফাহিমকে মারতে শুরু করে।

‘ফাহিমকে ছাড় না হলে তোদের ছাড়বো না আমি। মাসুম ওদের থামতে বল। মাসুমের বাচ্চা তোর চ্যালাদের থামতে বল।’,রাইদা চিৎকার করে বলে।

মাসুম রাইদার কথার কোনো জবাব না দিয়ে রাইদার দিকে তাকিয়ে হাসতে থাকে। রাগে মাসুমের গালে চড় বসায় রাইদা এতে রেগে মাসুম উল্টো রাইদার গালে চড় বসায়।

বাপ্পি,পায়েল সহ আরো অনেকে দৌড়ে এসে ফাহিমকে ছাড়ায়। অর্ক মাসুমের সামনে দাঁড়ালে রাইদার হাত ছাড়ে মাসুম। রাস্তার মধ্যে মাসুম আর অর্কের হাতাহাতি লেগে যায়। ভার্সিটির সামনে ঝামেলা দেখে ডিপার্টমেন্টের সিনিয়র এবং স্যাররাও আসে।

রাইদা দৌড়ে ফাহিমের কাছে যায়। ফাহিমের মাথা কিছুটা ফেটে রক্ত বের হচ্ছে। হাতের অনেক জায়গায় ও ছিলে গেছে সেখান থেকেও রক্ত বের হচ্ছে। গলার স্কার্ফটা খুলে ফাহিমের মাথায় বেঁধে দেয় রাইদা।

‘বাপ্পি জলদি ঐ রিকশাটা নিয়া আয়। বলবি সামনের হাসপাতালে যাবো। অর্ক কই তুই আয় এদিকে এখন আগে ফাহিমরে নিয়ে হাসপাতালে যাওয়া লাগবে।’,রাইদা কান্না মিশ্রিত গলায় বলে।

রিকশা ডেকে আনলে পায়েল রাইদার ব্যাগ নিজের কাছে নিয়ে নেয় আর সেই রিকশায় অর্ক,ফাহিমকে তুলে দেয়।
আরেকটা রিকশা ডেকে পায়েল,রাইদা আর বাপ্পি উঠে। রিকশা দুটো রওনা দেয় হাসপাতালের দিকে।
সায়ন্তিকার এতক্ষণ এসব দেখে মনটা খারাপ হয়ে যায়। রাইদাকে সে পছন্দ করে না কিন্তু রাইদাকে ঐভাবে বন্ধুর জন্য কাঁদতে দেখে তার খারাপ লাগছে।

..

ফাহিমের ক্ষতে ড্রেসিং করে ব্যান্ডেজ পেঁচিয়ে দিয়েছে ডাক্তার। মাথায় চোট অল্প লাগলেও রক্ত ক্ষরণ হয়েছে। মাথায়,হাতে,পায়ে ব্যান্ডেজ নিয়ে ফাহিম চুপ করে বিছানায় বসে সব দেখতে থাকে।
অর্ক,বাপ্পি ধরে হাসপাতাল থেকে ফাহিমকে বাসায় নিয়ে এসেছে। ফাহিমের মা এখনো স্কুল থেকে বাসায় ফিরেনি।
ফাহিমের তোয়ালে নিয়ে আধা ভেজা চুলগুলো মুছতে থাকে রাইদা।

‘তোর ভেজা কাপড় গুলো পাল্টানো উচিত এমনিতেই তোর ঠান্ডা লাগে একটুতেই তার উপর এতক্ষণ ধরে ভেজা কাপড়ে আছিস।’,পায়েল বলে।

‘জামা কই পাবো?’,রাইদা জিজ্ঞেস করে।

‘ক্যান ফাহিমের কিছু একটা বের করে পর সমস্যা কি? ওয়েট আমি খুঁজে দিচ্ছি।’,কথাটা বলে পায়েল ওয়ারড্রব খুলে।

‘ঐ ড্রয়ারে হাত দিবি না অন্য ড্রয়ারে দেখ।’,ফাহিম কড়া গলায় পায়েলকে বলে।

পায়েল ফাহিমের কথায় পাত্তা না দিয়ে ড্রয়ার হাতিয়ে একটা পুঁতির কাজ করা থ্রি-পিস খুঁজে পায়।

‘কিরে তোর ড্রয়ারে মেয়েদের নতুন জামা? আন্টি তো এইসব পরে না তেইলে কার জন্য কিনছিস? তারমানে তুই তলে তলে প্রেম করিস আমরা জানি না?’,পায়েল জামাটা উঁচু করে ফাহিমকে জিজ্ঞেস করে।

‘যার জন্যই কিনুক এখন আমি পরবো দরকার হলে ওর সেই গার্লফ্রেন্ডকে নতুন আবার কিনে দিবে।’
পায়েলের হাত থেকে জামা আর সেলোয়ার কেঁড়ে নিয়ে রাইদা বাথরুমে চলে যায়।

‘মাসুম কি করছে?’,অর্ক গম্ভীর গলায় ফাহিমকে জিজ্ঞেস করে।

‘রাইকে নিয়ে বিছানায় যেতে চাচ্ছিলো।’,ফাহিম ঠান্ডা গলায় জবাব দেয়।

‘শালারে ঘুষি না দিয়া ওর হাত ভাঙলি না ক্যান? শালায় বহুত বাড় বাড়ছে আমার তো মন চায় ওরে..’,বাপ্পি কথা শেষ করার আগেই অর্ক থামিয়ে দেয়।

‘তুই তো হুট করে মাথা গরম করার ছেলে না। তোর মতো ঠান্ডা মাথায় মানুষ আমাদের পুরো ডিপার্টমেন্টেও নেই সেই তুই এই কাজ করেছিস তার মানে মাসুম আরো কিছু বলেছে যেটা শুনে এই কাজ তুই করেছিস। মাসুমকে দেখে নিবো চিন্তা করিস না।’,অর্ক ফাহিমকে আশ্বস্ত করে বলে।

‘আন্টিকে কি বলবি? উনি দেখলে তো তোর হাত পা ভাঙবো।’,বাপ্পি বলে ফাহিমকে।

‘আন্টি খালি ওর হাত পা ভাঙবে না ওর কাবাব বানাবে। ওর যে গার্লফ্রেন্ড আছে এইটা কি আন্টি জানে? এতো বড় কথা আমাদের থেকে ও লুকাইছে কত সাহস ওর।’,পায়েল বলে।

‘চান্দু একটু সুস্থ হ তারপর তোর লুকায়িত গার্লফ্রেন্ডকে খুইজ্জা বাইর করুম।’,বাপ্পি বলে উঠে।

‘জলদি খুঁজে বের কর আমি ও সেই মেয়েকে দেখতে চাই। আমাদের এই চুপচাপ, অল্পভাষী বন্ধুটারে কীভাবে মেয়েটা ফাঁসাইলো বুঝলাম না।’,রাইদা বলে।

রাইদার কথা শুনে সকলে রাইদার দিকে তাকায়। সাদা রঙের জামার উপর রঙিন সুতো আর পুঁতি দিয়ে হালকা কাজ করা। জামাটা রাইদার গায়ে বেশ ফুটে উঠেছে। ব্যাগ থেকে এক জোড়া ছোট দুল বের করে রাইদা কানে পড়ে নেয়। ফাহিমের মায়ের রুমে চলে যায় চুল আঁচড়াতে।

ফাহিমের মা মিসেস ফিরোজা বাসায় এসে ফাহিমের এ অবস্থা দেখে প্রথমে কান্না করে পরে বিস্তারিত শুনে কান্না থামায়। মিসেস ফিরোজা রুম থেকে বের হয়ে রান্নাঘরে যায় তার পিছন পিছন, অর্ক,বাপ্পি,পায়েল যায়। রাইদা এসে ফাহিমের পাশে বসে। ফাহিম ভেবেছিলো সবাই চলে গেছে তাই সে চোখ বন্ধ করে ছিলো। রাইদা ফাহিমের হাতের উপর হাত রেখে ফাহিমের দিকে তাকায়। ফাহিমও চোখ খুলে রাইদার দিকে তাকায়।

‘জানি না কি ভালো কাজ করেছি যার ফল সরুপ তোদের মতো বন্ধু পেয়েছি যারা নিজের কথা না ভেবে সর্বদা আমার বিপদে ঝাঁপিয়ে পড়ে। চিন্তা করিস না দ্রুত সুস্থ হয়ে যাবি আর সুস্থ হয়েই তোর সেই গার্লফ্রেন্ডের সাথে আমাদের দেখা করাবি। আচ্ছা আন্টি কি জানে সেই মেয়ের বিষয়ে?’
একের পর এক কথা রাইদা বলতে থাকে।

‘বিরক্ত করিস না রাই ঘুমাবো এখন আমি।’,চেখ বন্ধ করে ফাহিম বলে।

‘আন্টি বাদ দে সেই মেয়ে কি জানে? তুই যেই ছেলে মেয়েকে গিয়ে বলবি না সেটা আমি জানি। মেয়েটা কি আমাদের ভার্সিটির জুনিয়র?’,রাইদা আবারো প্রশ্ন করে।

‘রাই এবার যদি এখান থেকে না যাস তাহলে তোরে ছাদ থেকে ফেলে দিবো।’

ফাহিমের কড়া কথায় রাইদা ফাহিমকে কিল দিতে গিয়েও থেমে যায়। ফাহিমের শরীরে এতো আঘাত তার উপর সে আঘাত করলে ফাহিমের ব্যথা বাড়বে সেটা ভেবে রাইদা রুম থেকে বের হয়ে যায়। রাইদা যেতেই ফাহিম চোখ বন্ধ করে শুয়ে থাকে। ব্যথায় তার হাত পা ভেঙে আসছে।

রাইদা রান্নাঘরে এসে দেখে মিসেস ফিরোজা ভাত বসিয়েছে। অর্ক,বাপ্পি,পায়েল সোফায় বসে টিভি চালিয়ে গল্প করছে। রাইদা এসে ওদের পাশে বসে।

ভাত রান্না হলে ডিম ভেজে সকলকে খেতে দেয় মিসেস ফিরোজা। ফাহিমের জন্য চুলায় দুধ গরম করতে দেয় যদিও ফাহিম এখন ঘুমাচ্ছে।

‘আন্টি তোমার ছেলে লুকিয়ে প্রেম করছে জানো সেই খবর?’,মিসেস ফিরোজাকে পায়েল বলে।

‘এখনো প্রমাণ হয়নি ও প্রেম করে। আমার মনে হয় নতুন সেমিস্টারের কাউকে ও পছন্দ করে ইদানীং দেখলাম কয়েকটা জুনিয়র মেয়ে ফাহিমের আশেপাশে ঘুরে ওদের মধ্যে কাউকে শিওর ওর মনে ধরেছে। তা ছাড়া ফাহিমকে কল দিলে নাম্বার ব্যস্ত দেখায় প্রায় সময়ই।’,রাইদা বলে উঠে।

‘তোরা থামবি কি শুরু করলি। এক থ্রি-পিস পেয়ে প্রেম পর্যন্ত চলে গেছিস।’,অর্ক বিরক্ত হয়ে বলে।

‘থ্রি-পিসটা আমার বোনের মেয়ের জন্য কিনেছিলাম সেটা ফাহিমকে দিয়ে বলেছি ও যাতে সময় করে দিয়ে আসে।’,মিসেস ফিরোজা বলে।

মিসেস ফিরোজার মুখে এমন কথা শুনে অর্ক ব্যতিতো সকলে হতাশ হয়।

খাওয়া শেষ করে ফাহিমের বাসা থেকে সকলে বিদায় নেয়। রাইদার ফোন বেজে উঠলে ফোন বের করে দেখে যামিনী কল দিয়েছে।

‘কেমন আছো রাই?’,রাইদা কল রিসিভ করে যামিনী জিজ্ঞেস করে।

‘আমি ভালো আছি তুমি কেমন আছো আপু?’,রাইদা হেঁসে বলে।

‘আর বলোনা বিয়ে যত আগাচ্ছে চিন্তায় খাওয়া ঘুম সব শেষ আমার।’,যামিনী বলে।

যামিনীর কথা শুনে রাইদা হাসতে থাকে।

‘শুনো দু’দিন পর তো মেহেদী আর হলুদের অনুষ্ঠান তো আমি চাই তুমি তোমার বন্ধুদের নিয়ে অনুষ্ঠানে পারফর্ম করো।’,যামিনী আবারো বলে।

‘ঠিক আছে আপু সমস্যা নেই।’,রাইদা জবাব দেয়।

‘রাখছি তাহলে পরে কথা হবে।’
যামিনী কল কেটে দিলে রাইদা রিকশা ডেকে বাসার উদ্দেশ্যে রওনা দেয়।

ফ্ল্যাটের সামনে এসে দেখে দরজা ভেতর থেকে আটকানো। সে বুঝে যায় সায়ন বাসায় রয়েছে। দরজায় কয়েকবার নক করতে থাকে। এক সময় সায়ন দরজা খুলে। রাইদা চোখ তুলে তাকিয়ে দেখে সায়ন উন্মুক্ত শরীরে দাঁড়িয়ে আছে। চুলগুলো এলোমেলো সাথে চোখ জোড়া দেখেই বুঝা যায় চোখে ঘুমের রেশ। সায়ন হাই তুলে দরজার সামনে থেকে সরে দাঁড়ায়।

‘এই অসময়ে ঘুমাচ্ছেন? আপনি না বলেছিলেন অফিসের কাজ আছে? ‘,ফ্ল্যাটে ঢুকে রাইদা প্রশ্ন করে।

‘কাজ সেরে বাসায় ফিরে দেখি তুমি এখনো ফিরোনি তাই অপেক্ষা করতে করতে ঘুমিয়ে গেছি। মনে তো হচ্ছে সন্ধ্যা নামবে একটু পর তা তুমি এতো দেরি করে ফিরলা যে?’,দরজা লাগিয়ে সায়ন জিজ্ঞেস করে।

রাইদা শোবার ঘরে গিয়ে কাঁধের ব্যাগ রেখে বিছানায় বসে।

‘তেমন কিছু না এক্সট্রা ক্লাস ছিলো তাই দেরি হয়েছে।’
সায়নের কাছ থেকে মাসুমের ঘটনা চেপে যায় রাইদা।

‘তোমার জামা কি করে পরিবর্তন হলো? জিন্স পরা ছিলা এখন সেটা থ্রি-পিস কীভাবে হলো?’,সায়ন চোখ ডলে জিজ্ঞেস করে।

‘সব আপনার ছোট বোন করছে।’

‘সায়ন্তিকা আবার কি করলো? ‘

‘সে আজকে আমার উপর এক বালতি পানি ঢেলে দিয়েছে দ্বিতীয় তলা থেকে। পরে এসে বলে সে নাকি ইচ্ছে করে এটা করেনি কিন্তু আমি তো জানি সে কাজটা ইচ্ছে করে করেছে। আগে তো সিনিয়র হিসেবে দেখতে পারতো না এখন সে আপনার সাথে আমাকে দেখার পর উল্টাপাল্টা কিছু ভাবছে।’

রাইদার কথার কোনো মানেই সায়ন বুঝতে পারে না। গতকালকে সায়ন্তিকার বলা কথাগুলো সহ আজকে পানি ঢালার ঘটনাও রাইদা সায়নকে বিস্তারিত বলে।
সব শুনে সায়ন চরম আশ্চর্য হয়।

‘সেই জন্যই আমাকে গতকালকে ভার্সিটি থেকে বের করে দিলো! তার মানে ও ভাবছে আমি বউ রেখে তোমাকে নিয়ে ঘুরছি?’

‘জানি না কি ভাবছে ও কিন্তু ওর কথা শুনে তাই বুঝলাম।’
সায়ন রাইদার কথা শুনে ভাবতে থাকে সায়ন্তিকাকে কীভাবে সামলাবে। এরকম সায়নের ফোন বেজে উঠে। ফোন হাতে নিয়ে সায়ন দেখে তার মা কল দিয়েছে। কল রিসিভ করে সায়ন বারান্দায় চলে যায়। রাইদা উঠে বাথারুমে যায় কাপড় পাল্টাতে।

‘কই তুই? বউ মা কোথায়?’,মিসেস রিনা প্রশ্ন করে সায়নকে।

‘আমি বাসায় আর তোমার বউমা ব্যস্ত একটু।’,সায়ন উত্তর দেয়।

‘তুই এখনই বাসায় আয় এসে দেখা করে যা, তোর সাথে খুবই গুরুত্বপূর্ণ কথা আছে আমার।’

কথাটা বলে মিসেস রিনা কল কেটে দেয়। সায়ন বুঝতে পারে না তার মা হঠাৎ এতো ক্ষেপে গেলো কেনো।

বারান্দা থেকে রুমে এসে দেখে রাইদা জামা পাল্টে বিছানায় বসেছে প্রেজেন্টেশন রেডি করতে।

রাইদাকে বাসায় একা রেখে রেডি হয়ে সায়ন ফ্ল্যাট থেকে বেরিয়ে রওনা দেয় তার মায়ের সাথে দেখা করতে।

..

বাসায় এসে সায়ন কলিং বেল দিলে নিপা দরজা খুলে দেয়। সায়ন সরাসরি তার মায়ের রুমে গিয়ে দেখে তার মা চুপ করে বিছানায় বসে আছে।

‘কি হলো হঠাৎ তুমি কল দিয়ে জরুরী তলব করলা কেনো?’,মিসেস রিনার পাশে বসে সায়ন জিজ্ঞেস করে।

‘তুই নাকি কোন মেয়েকে গাড়িতে তুলছিস? ঘরে বউ রেখে এখন বাহিরের মেয়েদের সাথে ঘুরে বেড়াস?’,মিসেস রিনা রাগান্বিত স্বরে সায়নকে জিজ্ঞেস করে।

‘আরে আজব কি বলো এইসব! কে বলছে এইগুলা? সায়ন্তিকা বলছে তাই না?’, সায়ন বিরক্ত হয়ে জবাব দেয়।

‘একদম কথা ঘুরাবি না কথার জবাব দে।’

‘ঠিক আছে বলছি সব শুনো। ‘
সায়ন তার মাকে সায়ন্তিকা আর রাইদার মধ্যে ঘটা সকল ঘটনা বলে। সব শুনে মিসেস রিনার রাগ কমে যায় এরপর উনি হাসতে থাকে।

‘সায়ন্তিকা যেভাবে বলেছিলো আমি তো বউমার কথা ভেবে কষ্ট পাচ্ছিলাম কিন্তু শেষে কিনা এই কাহিনী। ‘,হাসতে হাসতে মিসেস রিনা বলে।

‘সায়ন্তিকাকে এসব এখন বলোনা। তোমার বউমা যেদিন চাবে সেদিনই জানবে সব।’

সায়নের কথায় মিসেস রিনা মাথা নাড়ায়।
‘তুই বস আমি রান্না সেরে খাবার দিয়ে দিচ্ছি।’,কথাটা বলে মিসেস রিনা রান্নাঘরে চলে যায়।

সায়ন চলে যায় নিজের রুমে কিছু একটা খুঁজতে। সায়ন এসেছে বাসায় বিষয়টা সায়ন্তিকার কানে আসতেই সে সায়নের রুমে চলে আসে তাকে বিরক্ত করতে।

..

রান্না শেষ করে মিসেস রিনা খাবার দিয়ে সায়নকে ফ্ল্যাটের উদ্দেশ্যে পাঠিয়ে দেয়। জ্যামে বসে সায়ন বিরক্তে চোখমুখ কুঁচকে বারবার গাড়ির স্টিয়ারিং এ ঘুষি দিচ্ছিলো। রাত বাজে দশটা অথচ এখনো সে বাসায় ফিরতে পারেনি ঐদিকে রাইদা বাসায় একা সেটা নিয়েও তার চিন্তা হচ্ছে।

ফোন বের করে হাতে নেয় রাইদাকে কল দেওয়ার জন্য কিন্তু এরমধ্যে পরিচিত এক নাম্বার থেকে সায়নের ফোনে কল আসে।
কলটা রিসিভ করে ফোন কানে দিয়ে কথা বলতে শুরু করে সায়ন। অপরপাশ থেকে এমন কিছু বলে যা শুনে রাগে সায়নের মাথা মূহুর্তেই গরম হয়ে যায়। গাড়ি ঘুরিয়ে সে ফ্ল্যাটের বিপরীত রাস্তা দিয়ে কোথাও যেতে থাকে।

(চলবে..)পর্বঃ৩৭
গল্পঃ #সেদিন_দেখা_হয়েছিলো
লেখনীতেঃ #ঈশিতা_ইশা
(গল্প কপি পোস্ট সম্পূর্ণ নিষেধ।)

সায়নের গাড়ি এসে থামে রাইদার ভার্সিটির বিপরীত রাস্তায়। গাড়ি থেকে বের হয়ে ফোন হাতে নিয়ে টংয়ের দিকে এগিয়ে যায় সায়ন। ভার্সিটির এরিয়া হওয়াতে সন্ধ্যার পর এলাকাটা বেশ নিরিবিলি থাকে।

টংয়ে বসে তিনজন ছেলে চা খাচ্ছিলো আর কিছু নিয়ে কথা বলছিলো সায়ন এসে ওদের সামনে দাঁড়ায়।

‘বাস্টার্ডটা কোথায়? ‘,ছেলেগুলোকে জিজ্ঞেস করে সায়ন।

‘ভার্সিটির পিছনের রাস্তায় বাইকের উপর বসে রিল্যাক্স করতেছে।’,ছেলে তিনজনের মধ্যে একজন বলে।

‘তোমার বান্ধবী যাতে এ বিষয়ে কিছু না জানে আর যেটা আনতে বলছিলাম আনছো?’,সায়ন ছেলেটাকে বলে।

‘আপনি এক ধোলাই দিয়ে যাওয়ার পর পরে ও আরেক ধোলাই দিবে। রাইকে তো চিনেন নায় ফাহিমের সাথে করা কাজের বদলা ও নিবেই। আপাতত আপনি আপনার বউয়ের সাথে করা অশ্লীলতার শোধ নেন কড়ায় গন্ডায়। চিন্তা করবেন না কেউ টের পাবে না সব ব্যবস্থা করেই কল দিয়েছি আপনাকে।’,ছেলেটা হেঁসে বলে।

টংয়ের পিছন থেকে চারটা হকিস্টিক আর একটা গামছা বের করে আনে ছেলেটা। সায়নের হাতে গামছা আর হকিস্টিক দিলে সায়ন এক হাতে গামছা পেঁচিয়ে অপর হাতে হকিস্টিক নিয়ে হাঁটা দেয়।

‘অর্ক এই ভাইকে তো চিনলাম না। কে উনি?’,অর্কের সাথে থাকা ছেলেটা অর্কের হাত টেনে জিজ্ঞেস করে।

‘রাইয়ের বর হয় বাকি কথা পরে বলবো এখন আগে কাজ সেরে আসি।’,অর্ক জবাব দেয়।

অর্ক,বাপ্পি আর আরেকটা ছেলে সায়নের সাথে ভার্সিটির পিছনে যেতে থাকে।

মাসুমের করা কান্ডে অর্ক এতো ক্ষেপে সে চিন্তা করে সুযোগ বুঝে ওরে উচিত শিক্ষা দিবে। আজকে পুরো সময় মাসুমের উপর লোক দিয়ে নজর রাখায় তারপর যখন খবর পায় রাতের বেলা মাসুম ভার্সিটির পিছনে থাকবে তখন অর্ক প্লান করে সব। হুট করে সায়নের কথা মাথায় আসে তখন সাথে সাথে সায়নকে কল দিয়ে রাইদার সাথে ঘটনা বলে অর্ক। রাইদার কাছ থেকে শুনেছিলো সায়ন ওকে নিয়ে বেশ সেনসিটিভ তাই তো অর্ক চাচ্ছিলো সায়ন এসে ওদের দল ভারী করুক হলোও তাই সায়ন ঘটনা শুনে আগ্নেয়গিরির মতো রেগে যায়। বাসায় ফেরার বদলে গাড়ি ঘুরিয়ে চলে আসে মাসুমকে উচিত শিক্ষা দিতে।

বাইকের উপর বসে মাসুম তার গার্লফ্রেন্ডের সাথে ফোনে কথা বলছিলো সাথে তিনটা ছেলে পাশে বসে ফোনে কিছু দেখছিলো আর হাসছিলো। ভার্সিটির পিছনের রাস্তায় রাতের বেলা মানুষের আনাগোনা একদম নেই বললেই চলে। আশে পাশে পাছপালা ছাড়া তেমন কিছুই নেই এই রাস্তায়।

মাসুমকে দূর থেকে দেখেই রাগে সায়নের চোয়াল শক্ত হয়ে আসে। দ্রুত কদম ফেলে সামনে এসে গামছা পেঁচানো হাত দিয়ে মাসুমের নাক বরাবর ঘুষি দেয়। আকস্মিক হামলায় মাসুম টাল সামলাতে না পেরে বাইক থেকে পরে যায়।

মাসুমের বন্ধুরা তাকে সাহায্য করতে আসতে নিলে অর্ক,বাপ্পি এসে হকিস্টিক দিয়ে তাদের পিটাতে শুরু করে।

সায়ন নিজের হাতের হকিস্টিকটা বাইকের উপর রেখে মাসুমের শার্ট টেনে রাস্তা থেকে তুলে দাঁড়া করায় এরপর পরপর কয়েকটা ঘুষি বসায় মাসুমের মুখে। নাক ফেটে গলগলিয়ে তাজা রক্ত বের হয়ে মাসুমের নাক থেকে।

হকিস্টিকটা হাতে নিয়ে মাসুমের হাতে পায়ে নির্দয়ের মতো পেটাতে শুরু করে সায়ন। মার খেয়ে রাস্তায় পড়ে যায় মাসুম। সায়নের পায়ে ধরে মাফ চাইতে শুরু করে।

সায়ন রাস্তায় বসে হকিস্টিক পাশে রেখে রাস্তায় শুয়ে হাঁপাতে থাকা মাসুমের দিকে অগ্নি দৃষ্টি ফেলে।

‘তুই কার দিকে হাত বাড়াইছিস জানিস? এই ইমতিয়াজ সায়নের বউয়ের দিকে। দ্যাখ আমার দিকে তাকা আমি ইমতিয়াজ সায়ন আর রাইদা রাফায়েত আমার একমাত্র বিয়ে করা বউ।’,মাসুমের থুতনি শক্ত করে ধরে সায়ন বলে।

‘তুই নাকি আমার বউকে চড় মেরেছিস আবার ওর হাত ধরেছিস? কোন হাত দিয়ে মেরেছিস জলদি বল না হলে দুই হাতই ভেঙে দিবো।’

সায়নের হু*ম*কি*তে মাসুম ভয়ে নিজের ডান হাত দেখায়।

মাসুমের ডান হাত টেনে মুচড়ে দেয় সায়ন। ব্যথায় কুঁকড়ে চিৎকার করতে নিলে গামছাটা মাসুমের মুখের মধ্যে ভরে দেয় সায়ন।

হকিস্টিক হাতে নিয়ে বসা থেকে উঠে দাঁড়ায় সায়ন এরপর হাতে মারতে শুরু করে, অর্ক এসে থামায়।

‘ভাই এভাবে মারলে জানে মরে যাবে। যা মারছেন আমার মনে হয় এই জনমে ও ভুলবে না আর হাতটাও তো ভেঙে গেছে মনে হচ্ছে।’

অর্কের কথা শুনে সায়ন থামে কিন্তু এখনো তার রাগ কমেনি। হাতে থাকা হকিস্টিক রাস্তায় ফেলে দিয়ে আবারো মাসুমের পাশে বসে।
মার খেয়ে ব্যথায় চোখ খুলতে পারছে না মাসুম কিন্তু সায়ন মাসুমকে ঝাঁকাতে থাকে।

মাসুমের সাথের পোলাপানদের মেরে রাস্তায় ফেলে অর্ক,বাপ্পি আর সাথের ছেলেটা বাইকের উপর বসে গান গাইতে শুরু করে।

‘একবার এক ছেলে শুধু রি কে ভালোবাসি বলছিলো এরপর ওরে এমন মেরেছিলাম জ্বরে এক সপ্তাহ বিছানায় ছিলো আরেকবার এক লোক রি এর দিকে বাজে দৃষ্টি দিয়েছিলো লোকটাকে…।’

ঠোঁট কামড়ে বাকি কথাগুলো বলে না সায়ন। চোখ মুখ শক্ত করে মাসুমের দিকে তাকায়।

‘এটাই তোর জন্য আমার দেওয়া লাস্ট ওয়ানিং এরপর সোজা জান নিয়ে নিবো যদি আমার বউয়ের দিকে তাকাস।’

কথাটা বলে সায়ন বসা থেকে উঠে হাঁটা দেয়। এখানে বেশিক্ষণ থাকলে নিজেকে সামলাতে না পেরে মাসুমকে শেষ করে দিবে।
হকিস্টিক গুলো নিয়ে অর্ক,বাপ্পি আর সাথে থাকা ছেলেটা টংয়ের দিকে যায়।

টংয়ের বেঞ্চে বসে সিগারেট ধরায় সায়ন। সিগারেট ধরিয়ে চোখ বন্ধ করে মাথা ঠান্ডা করার চেষ্টা করে।
অর্ক আর বাপ্পি হকিস্টিক গুলো ছেলেটার হাতে ধরিয়ে দিয়ে বিদায় করে তাকে।

সায়নের ফোন বেজে উঠলে বিরক্তি নিয়ে ফোন বের করে পকেট থেকে। স্কিনে বউ নামটা দেখে মূহুর্তেই চেহারা থেকে বিরক্তির আভা কেটে যায়।

‘কই আপনি? কয়টা বাজে খবর আছে? বাসায় কি আসবেন না? আমি কিন্তু ঘুমালে দরজা খুলবো না বলে দিলাম। কি হলো জবাব দিচ্ছেন না কেনো? আপনি কি আমার কথা শুনছেন?’

সায়ন কল রিসিভ করে কানে ফোন ধরলে অপরপাশ থেকে রাইদার ঝাঁঝালো কণ্ঠে কথাগুলো শুনতে পায়।

‘আমি জ্যামে আছি বেশিক্ষণ লাগবে না আসতে। মা খাবার রান্না করে দিয়েছে না খেয়ে ঘুমালে তো খাবার গুলো নষ্ট হবে।’,আদুরে স্বরে কথাগুলো বলে সায়ন।

‘রাত এগারোটার বেশি বাজে এখনো রাস্তায় জ্যাম? আপনি কি পুরো পৃথিবী ঘুরে আসতেছেন নাকি এতো সময় লাগছে? আজকে আর ফিরতে হবে না গাড়িতেই ঘুমান।’

কথাগুলো বলে রাইদা কল কেটে দেয়। বসা থেকে উঠে দাঁড়িয়ে হাতের সিগারেট ফেলে দেয়। অর্ক আর বাপ্পি এতক্ষণ সায়ন আর রাইদার ফোনালাপ শুনছিলো।

‘চলি শালা সাহেব বাসায় বউ অপেক্ষা করছে। তোমাদের অনেক ধন্যবাদ বিষয়টা আমাকে জানানোর জন্য। কখনো আমাকে প্রয়োজন হলে কল দিবা। ‘

কথাগুলো বলে সায়ন অর্ক আর বাপ্পির সাথে হাত মিলিয়ে গাড়ির দিকে চলে যায়। গাড়ি স্টার্ট দিয়ে বাড়ির পথ ধরে।
সায়ন চলে যেতেই অর্ক, বাপ্পি নিজেদের বাইক দিয়ে বাসায় ফিরে।
..

কলে ফাহিমের মায়ের সাথে গল্প করছিলো রাইদা তখন দরজায় নক করার শব্দ পেয়ে কল কেটে যায় দরজা খুলতে।

রাইদা দরজা খুলতেই সায়ন তড়িৎ গতিতে রুমে ঢুকে রাইদাকে জড়িয়ে ধরে।
রাইদাকে জড়িয়ে সায়ন জোরে জোরে শ্বাস নিতে থাকে।

রাইদা কিছু বলার আগেই সায়ন রাইদাকে ছেড়ে খাবারের ব্যাগটা টি-টেবিলে রেখে বাথরুমে ঢুকে দরজা লাগিয়ে দেয়। বসার ঘরের আলো নেভানো ছিলো তাই সায়নের চেহারা রাইদা দেখতে পায়নি। দরজা লাগিয়ে রাইদা খাবার বের করে।

গোসল সেরে সায়ন খেতে আসে। রাইদা খাবার বেরে দিয়ে নিজেও খেতে শুরু করে। সায়নকে কোনো প্রশ্ন না করে রাইদা খাওয়া শেষ করে।

খাওয়া শেষে শোবার ঘরে গিয়ে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে চুল আঁচড়াতে থাকে রাইদা। পিছন থেকে সায়ন এসে রাইদাকে জড়িয়ে ধরে।

‘আমাদের দু’জনকে একসাথে কত সুন্দর লাগে কখনো খেয়াল করেছো?’,আয়নার দিকে তাকিয়ে সায়ন রাইদাকে প্রশ্ন করে।

সায়নের কথা শুনে রাইদা আয়নার প্রতিবিম্বের দিকে তাকায়।

‘ছাড়েন ঘুমাবো সকালে ক্লাস আছে।’

রাইদার কথা শুনে সায়ন আরো শক্ত করে রাইদাকে জড়িয়ে ধরে রাইদার চুলে মুখ লুকায়।

সায়নের ফোন বেজে উঠলে রাইদা জোরে হেঁসে দেয়। রাইদাকে ছেড়ে ফোনটা হাতে নিয়ে দেখে তার বাবা কল দিয়েছে। বিরবির করতে করতে বারান্দায় গিয়ে কল রিসিভ করে কথা বলতে থাকে সায়ন।

….

পরেরদিন সকালে ক্লাসে গেলে রাইদা খবর পায় মাসুম আর তার বন্ধুদের মেরে আহত করেছে কেউ। কারা করেছে কেনো করেছে তা মাসুমরা বলেনি।

রাইদা অর্ককে ধরে বায়না করে ওদের হাসপাতালে দেখতে যাবে। অর্ক প্রথমে রাজি হতে চায়নি পরে রাইদার জোরাজোরিতে রাজি হয়।

পায়েল,বাপ্পি যেতে চায়নি তাই রাইদা আর অর্ক হাসপাতালে যায় মাসুমকে দেখতে।

মাসুমের কেবিনের বাহিরে ভিড় দেখে রাইদা উঁকি দেয়। রাইদাকে দেখে পোলাপান সরে জায়গা দেয় প্রবেশের জন্য।
কেবিনে ঢুকে রাইদা বেডের দিকে তাকিয়ে চোখ বড়বড় করে ফেলে। মাসুমের এক হাতে প্লাস্টার করা, নাকে মুখে পট্টি বাঁধা। বেচারার অবস্থা দেখেই বুঝা যাচ্ছে সেই ধোলাই খেয়েছে।

‘কপাল ভালো আপনার আমি মারার আগেই অন্য কেউ আপনার এই অবস্থা করেছে। জলদি সুস্থ হন আমার কাছে আপনার পাওনাটা সুদে আসলে মিটিয়ে দিবো।’
মাসুমের দিকে তাকিয়ে হেঁসে হেঁসে বলে রাইদা।

‘রাই কি বলছি এসব চল এখান থেকে।’,অর্ক রাইদার হাত টেনে বলে।
রাইদা মাসুমের দিকে তাকিয়ে হাত নাড়িয়ে বায় জানায়।

‘জামাই বউ দুইটাই পাগল মনে হয়।’,বিরবির করে মাসুম বলতে থাকে।

হাসপাতাল থেকে বেরিয়ে রাইদা আর অর্ক চলে যায় ফাহিমের বাসায়। বাসায় ঢুকে রান্নাঘর থেকে শব্দ পেলে রাইদা কৌতুহল হয়ে রান্নাঘরে যায়। গিয়ে দেখে রুহি ওড়না কোমড়ে বেঁধে রান্না করছে আর পায়েল পাশেই দাঁড়িয়ে সাহায্য করছে।

রুহিকে জড়িয়ে কিছুক্ষণ গল্প করে রাইদা চলে যায় ফাহিমের রুমে। রুমে গিয়ে দেখে বাপ্পি,অর্ক আর ফাহিম কিছু নিয়ে কথা বলছিলো রাইদাকে দেখে চুপ হয়ে যায়।

‘সত্যি করে বলতো অর্ক এসব তোর কাজ?’,রাইদা অর্ককে জিজ্ঞেস করে।

‘কোন বিষয়ে জিজ্ঞেস করছিস?’,অর্ক ভ্রু কুঁচকে তাকায়।

‘মাসুমকে মেরে এই অবস্থা করার সাহস তো কারো হওয়ার কথা না।’,রাইদা বলে।

‘আমরা মারলে চার হাত পা ভাঙতাম খালি একটা হাত ভাঙতাম না।’,বাপ্পি বলে উঠে।

‘আমি তো না করি নাই মারতে শুধু বললাম আমারেও সাথে নিতি। থাপ্পড় মেরেছিলো সেই থাপ্পড় টা যতক্ষণ না ফেরত দিবো ততক্ষণ আমার শান্তি হবে না।’,রাইদা দাঁতে দাঁত চেপে বলে।

‘যা গেছে বাদ দে দেখলি তো মাসুমের অবস্থা। মার খেয়ে যেই অবস্থা এক মাসের আগে শালা বিছানা থেকে উঠতে পারবে না।’,বাপ্পি হাই তুলে বলে।

‘কিন্তু কাজটা করলো কে? মাসুমকে মারছে এতো কলিজা কার!’,রাইদা চিন্তিত হয়ে বলে।

‘আরে ওর কোনো শত্রু হবে। কারো সাথে বিরাট ঝামেলা করছে তারাই সুযোগ বুঝে এই অবস্থা করে গেছে। আচ্ছা তুই এসব নিয়ে ভাবছিস কেনো? তুই কি মাসুমের পরিণতিতে খুশি না?’,অর্ক বলে।

‘আশ্চর্য খুশি না হওয়ার কি আছে তবে নিজের হাতে ধোলাই দিতে পারলে ডাবল খুশি হতাম। আচ্ছা আপাতত এই কাহিনী বাদ। ফাহিম তোর কি অবস্থা? ‘

রাইদার কথা শুনে অর্ক আর বাপ্পি স্বস্তি পায়।

‘দেখতেই পাচ্ছিস কি অবস্থা আবার জিগাস কেন?’,বাপ্পি ফোঁড়ন কেটে বলে।

‘তোর কাজই মানুষের কথায় বাম হাত ঢুকানো। বাপি দা ভালো হয়ে যা।’, পায়েল রুমে ঢুকে বলে।

‘কি ব্যপার জরিনা খালা আপনে কই থেকা আইলেন? শুনলাম আপনেরে আইজকাইল এখানে সেখানে কোন খালুর সাথে দেখা যায়?’,বাপ্পি পায়েলের দিকে তাকিয়ে দাঁত কেলিয়ে বলে।

বাপ্পির কথা শুনে পায়েলের হাসিমুখে আঁধার নামে।

‘তুই আমার পিছনে সিসিটিভি লাগাইছিস?’,বাপ্পির সামনে এসে আঙুল উঁচিয়ে জিজ্ঞেস করে পায়েল।

‘ও মাই গড ডোন্ট টেল মি পায়েল প্রেম করছে!’,রাইদা অবাক হওয়ার ভান করে বলে।

‘আরে প্রেমের কথা আসে কই থেকে এখানে? কারো সাথে ঘুরলেই কি মানুষ প্রেম করে নাকি?’,পায়েল বিরক্তির স্বরে বলে।

‘না প্রেম করার জন্য মানুষ ঘুরে না কুতকুত খেলতে ঘুরে। আমরা তো ক্লাস টু এর বাচ্চা আমাদের তুই বলবি আর আমরা তাই শুনবো।’,বাপ্পি ভেংচি দিয়ে বলে।

‘বাপি দা চুপ একদম ফালতু কথা বলবি না।’,পায়েল বাপ্পির চুল টেনে বলে।

‘জরিনা খালা চুল ছাড় না হলে তোর ঐ খালুর কাছে গিয়ে তোর মেকআপ ছাড়া ছবি দেখাবো তখন সেই খালু তোরে রেখে পালাবে।’

বাপ্পির কথা শুনে পায়েল আরো জোরে বাপ্পির চুল টেনে ধরে।

রাইদা ওদের কান্ড দেখে হাসছিলো তখনই ফোন বেজে উঠে। ফোন হাতে নিয়ে দেখে অপরিচিত নাম্বার থেকে কল এসেছে।
ফাহিমের রুমের বারান্দায় গিয়ে কল রিসিভ করে রাইদা।

‘আসসালামু আলাইকুম ভাবী। কেমন আছো?’

রাইদা কল রিসিভ করে কিছু বলার আগেই অপরপাশ থেকে মিষ্টি স্বরে এক মেয়ে জিজ্ঞেস করে। অপরিচিত নাম্বার থেকে এমন কিছু বলায় রাইদা ভ্যাবাচ্যাকা খায়।

‘ওয়ালাইকুমুস সালাম কিন্তু আপনাকে তো চিনলাম না। আমার মনে হয় আপনি ভুল নাম্বারে কল দিয়েছেন।’,রাইদা জবাব দেয়।

‘আরে তুমি রি ভাবী না? ভাইয়া সারাক্ষণ তোমার নাম রি বলে তাই তোমার নামটাও জানি না। আমাকে চিনোনি? আমি তোমার একমাত্র ননদিনী সায়ন ভাইয়ের বোন সায়ন্তিকা বলছি।’,সায়ন্তিকা হেঁসে বলে।

সায়ন্তিকার নাম শুনে রাইদা কান থেকে ফোন নামিয়ে নাম্বারের দিকে তাকিয়ে আবার ফোন কানে দেয়।

‘হ্যা চিনেছি এবার কিন্তু তুমি আমার নাম্বার কোথায় পেলে?’,রাইদা আমতাআমতা করে জিজ্ঞেস করে।

‘গতকালকে ভাইয়া এসেছিলো বাসায় তখন ফোনে ব্যালেন্স নেই বলে ভাইয়ার ফোন নিয়েছিলাম বান্ধবীকে কল দিতে কখনই কল লিস্টে বউ নামে সেভ করা নাম্বারটা মুখস্থ করে নেই।’

সায়ন্তিকার কথা শুনে রাইদা লজ্জা পায়।

‘কেমন আছো তুমি? তোমার মা কেমন আছে?’,রাইদা জিজ্ঞেস করে।

‘আমরা ভালো আছি ভাবী শুধু তোমার অভাববোধ করছি। তুমি আমাদের বাসায় আসোনা কেনো? ভাইয়ার সাথে তোমার ঝামেলা থাকলে সেটা তোমাদের ব্যপার আমরা তো কিছু করিনি। আমরা বাসার সবাই তোমায় না দেখেই নিজের পরিবারের সদস্য মনে করি। তোমাকে তো আজকে থেকে না সেই ছোটবেলা থেকেই ভাবী মনে করি অথচ তোমাকে ছোটবেলায় একবারই দেখেছিলাম ইভেন নামটাও জানি না খালি জানি তুমি আমার ভাবী হও।’

সায়ন্তিকা একনাগাড়ে কথাগুলো বলতে থাকে। সায়ন্তিকার কথা শুনে রাইদা বুঝতে পারে সায়ন্তিকা অনেক মিশুক একটা মেয়ে।

‘আসলে সব এতো জলদি হয়েছে তো তাই আমার একটু সময় লাগবে এডজাস্ট করতে। তোমার সাথে আমার খুব জলদি দেখা হবে আশা করি।’

‘ভাবী শুনো ভাইয়াকে একটু টাইট দিয়ে রেখো আমার ভার্সিটির এক সিনিয়র আপু ভাইয়ার পিছনে আঠার মতো লেগে আছে।’

নিজের নামে সায়ন্তিকার মুখে বদনাম শুনে রাইদা কাশতে শুরু করে।

‘কি বলো এসব কবে হলো? আমার মনে হয় না এসব কিছু তোমার ভাইয়া করবে হয়তো তুমি ভুল বুঝেছো।’

‘না না ভাবী আমি নিজের চোখে ভাইয়ার গাড়ি থেকে ঐ আপুকে নামতে দেখেছি। তোমাকে সাবধান করে দিলাম আর আমি ঐ সিনিয়র আপুকে শিক্ষা দিবো তুমি চিন্তা করবা না যতদিন তোমার এই ননদিনী আছে ততদিন কেউ তোমাদের মধ্যে ঝামেলা করতে পারবে না।’

সায়ন্তিকার কথা শুনে রাইদা হাসবে না কাঁদবে বুঝতে পারে না।

‘আচ্ছা কল রাখছি এখন পরে তোমার সাথে কথা হবে।’,রাইদা বলে।

‘আমি প্রতিদিন একবার করে কল দিয়ে তোমার খোঁজ নিবো। ভালো থেকো আর জলদি আমাদের সামনে দেখা দাও।’,সায়ন্তিকা বলে।

কল কেটে রাইদা হাতের উল্টো পিঠে কপালের ঘাম টুকু মুছে নেয়। সায়ন্তিকার সাথে কীভাবে ঝামেলা মেটাবে তাই ভাবতে থাকে সে।

..

প্রায় দশ মিনিট ধরে ফ্ল্যাটের দরজার সামনে দাঁড়িয়ে দরজায় নক করতে থাকে রাইদা কিন্তু দরজা খুলে না সায়ন। বিরক্ত হয়ে ফোন বের করে সায়নকে কল দেয়। চার-পাঁচটা কল দেওয়ার পর ষষ্ঠ কলটা সায়ন রিসিভ করে।

‘আমি মিটিং এ আছি তোমায় পরে কল দিচ্ছি।’,কল রিসিভ করে সায়ন বলে।

‘আপনার মিটিং এর গুল্লি মারি জলদি দরজা খুলেন।’,রাইদা রাগী স্বরে বলে।

‘নক করলেই পারতা কল দেওয়ার কি দরকার ছিলো।’

সায়নের এমন কথা শুনে রাইদা তেলেবেগুনে জ্বলে উঠে কিছু বলতে নিলেই সায়ন কল কেটে দেয়। একটু পরই দরজা খোলার শব্দে রাইদা তাকায় দেখে দরজা খুলে দিয়েই সায়ন গিয়ে বসার ঘরের সোফায় বসেছে, টি-টেবিলের উপর সায়নের ল্যাপটপ রাখা তার সামনে সাদা শার্ট পরিহিত সায়ন কানে ইয়ারফোন গুঁজে গম্ভীর মুখে ইংরেজিতে কারো সাথে কথা বলছে। রাইদা বুঝে যায় সায়ন বিদেশি ক্লাইন্টদের সাথে কথা বলছে। দরজা লাগিয়ে রাগে গজগজ করতে করতে রাইদা শোবার ঘরে এসে বিছানায় কাঁধের ব্যাগটা রেখে বাথরুমে চলে যায় গোসলে।

গোসল সেরে মাথায় তোয়ালে পেঁচিয়ে বসার ঘরে উঁকি দিলে দেখে সায়ন তখনো মিটিংয়ে ব্যস্ত। রাইদার মাথায় একটা ভয়ঙ্কর দুষ্টু বুদ্ধি চাপে যা দিয়ে সে সায়নকে জব্দ করবে।

সব ব্যবস্থা করে বিছানার উপর ল্যাপটপ রেখে তাতে গান ছাড়ে রাইদা। সায়ন শোবার ঘরের দিকে মুখ করে সোফায় বসেছিলো হুট করে তার নজর যায় শোবার ঘরের দিকে। একবার তাকাতেই সায়নের নজর আঁটকে যায় শুভ্র রঙের শাড়ি পরিহিত রমনীর দিকে। সব ভুলে সায়ন রাইদার দিকে এক ধ্যানে তাকিয়ে থাকে।

সায়নকে বিরক্ত করতে সাদা রঙের জরজেটের শাড়ী আর চুড়ি পরে গানের তালেতালে রাইদা কোমড় দুলাচ্ছিলো। নাচের তালে তালে সায়নের দিকে রাইদা তাকাচ্ছে আর হাসি দিচ্ছে এটা দেখে সায়নের গম্ভীর মুখ পরিবর্তন হয়ে চোখ মুখে বিস্ময় নেমে আসে।

‘মিস্টার ইমতিয়াজ আর ইউ ওকে? হ্যালো মিস্টার ইমতিয়াজ?’
সায়নের ধ্যান ভাঙে ক্লাইন্টের ডাকে।

‘ইয়েস আম ওকে।’,গলা ঝেরে সায়ন জবাব দেয়।

এতক্ষণ কি বলছিলো সব গুলিয়ে যায় সায়নের। ক্লাইন্টের কথা থেকে মনোযোগ সরে গিয়ে বারবার সে রাইদার দিকে তাকাচ্ছে আর ঢোক গিলছে। টেবিলে থাকা পানির বোতল নিয়ে পানি খেতে থাকে আর ঘামতে থাকে। মাথার উপর ফ্যান চলছে তারপরও ঘেমে সায়নের একাকার অবস্থা।

রাইদা এসব দেখছে আর দুষ্টু হাসি দিচ্ছে। যতবার সায়ন তাকাচ্ছে ততবার রাইদা চোখ মেরে সায়নকে ডাকছে।

‘আম নট ফিলিং ওকে ক্যান উই প্লিজ স্টপ দা মিটিং?’,সায়ন অনুরোধ করে বলে।

‘ইয়াহ শিওর মিস্টার ইমতিয়াজ।’,বিদেশি ক্লাইন্ট জবাব দেয়।

রাইদা যখন বুঝতে পারে সায়ন মিটিং শেষ করেছে এখন রুমে আসবে দৌড়ে গিয়ে বাথরুমে ঢুকে সে। কান থেকে ইয়ারফোন খুলে সায়ন দৌড়ে আসে রাইদাকে ধরতে তার আগেই রাইদা ঢুকে গেছে বাথরুমে।

‘রি জলদি বের হও যে কাজ করছো তার শাস্তি পাওনা তোমার।’,বাথরুমের দরজায় নক করে বলে সায়ন।

‘যা করেছি বেশ করেছি আপনাকে আরেকটু জ্বালাতে পারলে শান্তি লাগতো।’,রাইদা ঝাঁঝালো কণ্ঠে বলে।

‘আমি ও দেখি তুমি কতক্ষণ বাথরুমে বসে থাকো।’,সায়ন বলে।

রাইদা শাড়ি পাল্টে ফোন হাতে নিয়ে সায়ন্তিকাকে মেসেজ দেয় সাহায্যের জন্য। মিনিট পাঁচেক পর সায়নের ফোন বাজার শব্দ পেয়ে দরজায় কান পাতে সে। সায়ন্তিকার কল পেয়ে সায়ন বারান্দায় যায় তখনই বাথরুমের দরজা খুলে বিছানার উপর থেকে ব্যাগ নিয়ে রাইদা দৌড় দেয়। বাথরুমের দরজা খোলার শব্দ পেয়ে সায়ন রুমে আসে কিন্তু ততক্ষণে রাইদা ফ্ল্যাটের দরজা খুলে বেরিয়ে গেছে। অসহায়ের চাহনিতে খোলা দরজার দিকে তাকিয়ে থাকে সায়ন।

সায়ন্তিকার কল কেটে রাইদাকে কল দেয়। রাইদা কল রিসিভ না করে কল কেটে মেসেজ দেয়।

‘থাকেন এখন বাসায় একা আর আমি গেলাম যামিনী আপুর বাসায়। কখন ফিরবো জানি না আবার নাও ফিরতে পারি, ততক্ষণ বাসার মশাদের সাথে গল্প করেন।’

মেসেজটা পড়ে সায়ন কি প্রতিক্রিয়া দিবে বুঝতে পারে না।

(চলবে..)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here