সেদিন দেখা হয়েছিলো পর্ব -৩৮+৩৯

পর্বঃ৩৮
গল্পঃ #সেদিন_দেখা_হয়েছিলো
লেখনীতেঃ #ঈশিতা_ইশা
(গল্প কপি পোস্ট সম্পূর্ণ নিষেধ।)

মিউজিক আর নাচের সঙ্গী পেলে রাইদা দিন-রাত সব ভুলে যায়। যামিনীর বাসায় এসে হলুদের অনুষ্ঠানে যামিনীর যে সকল কাজিনরা পারফর্ম করবে তাদের সাহায্য করছে রাইদা।

কয়েকঘন্টা আগে রাইদা এসেছ অথচ যামিনীর কাজিনরা যামিনীকে রেখে রাইদাকে মৌমাছির মতো ঘিরে রেখেছে। যামিনী বসে সব দেখছে আর হাসছে।

ফোন বেজে উঠলে যামিনী দেখে সায়ন কল দিয়েছে।

‘হ্যা বল কি মনে করে কল দিলি?’,কল রিসিভ করে যামিনী বলে।

‘আমার বউটারে কি একেবারে রেখে দেওয়ার প্লান করছিস? রাতের কয়টা বাজে সেই খেয়াল আছে তোর?’,সায়ন গম্ভীর গলায় বলে।

‘সারাজীবন তো বউকে কাছে পাবিই একরাত না হয় বউ ছাড়া থাক।’,হেঁসে বলে যামিনী।

‘তুই কি চাস এই রাতের বেলা তোর হবু জামাইয়ের হাড্ডি ভাঙি? ভদ্র মেয়ের মতো আমার বউকে ফোনটা দে বল আমি নিচে অপেক্ষা করছি।’,সায়ন আগের ন্যায় গম্ভীর গলায় বলে।

‘তুই বাসার নিচে কি করছিস উপরে আয়।’,যামিনী ব্যস্ত গলায় বলে।

‘যেটা বলছি সেটা কর।’
সায়নের কথা শুনে যামিনী উঠে রাইদার কাছে যায়। রাইদা নাচের স্টেপ দেখাচ্ছিলো তখন যামিনী এসে হাতে ফোন ধরিয়ে দেয়। গানের শব্দে রাইদা কিছু শুনতে পায় না তাই জানালার পাশে গিয়ে কানে ফোন দেয়।

‘আমি যামিনীর বাসার নিচে আছি পাঁচ মিনিটের মধ্যে নিচে নামবা যদি দেরি হইছে তাহলে আমি উপরে এসে কোলে করে নামাবো।’,সায়ন বলে।

‘এইসব বললে আমি তো আসবোই না।’,রাইদা পাল্টা বলে।

‘ঠিক আছে পাঁচ মিনিট অপেক্ষা করো তারপরই সবাই সিনেমা দেখবে।’

‘ধ্যাত থাকেন আসছি।’

কল কেটে রাইদা নিজের ব্যাগ নিয়ে সকলের থেকে বিদায় নেয় যদিও রাইদাকে কেউ যেতে দিতে চাচ্ছিলো না তাও রাইদা বের হয়।
সিঁড়ি বেয়ে নিচে নেমে রাইদা দেখে গাড়িতে হেলান দিয়ে সায়ন দাঁড়িয়ে আছে হাত দু’টো পকেটে গুঁজে রেখেছে আর দৃষ্টি তার বরাবর।

মুখটা আঁধার করে রাইদা সায়নের দিকে এগিয়ে যায়। ভ্রু কুঁচকে সায়ন রাইদার দিকে তাকিয়ে থাকে।

‘ফোন কই তোমার?’,সায়ন রাইদাকে জিজ্ঞেস করে।

রাইদা ব্যাগ থেকে ফোন বের করে দেখালে সায়ন ফোনটা কেঁড়ে নিজের পকেটে ভরে।

‘আরে ফোন নিলেন কেনো? ফেরত দেন জলদি।’,রাইদা আশ্চর্য হয়ে বলে।

সায়ন জবাব না দিয়ে গাড়িতে উঠে বসে। রাইদাও পাশের সিটে বসে।

‘তোমাকে কল দিলে কখনোই ঠিকঠাক কলে পাই না তো এই ফোন থাকা না থাকা সমান।’,সায়ন জবাব দেয়।

‘ফোন সাইলেন্ট ছিলো আর ব্যাগে ছিলো তাই দেখিনি আপনার কল। দেন এখন ফোন ফেরত।’,সায়নের দিকে হাত বাড়িয়ে বলে রাইদা।

রাইদার বাড়ানো হাত টেনে তালুতে চুমু দেয় সায়ন। সাথে সাথে নিজের হাত সরিয়ে রাগী দৃষ্টিতে তাকায় রাইদা।

‘দুটো অপরাধ করছো আজকে তুমি সেই অপরাধ দুটোর শাস্তি যতক্ষণ না পূর্ণ হবে ততক্ষণ ফোন ফেরত পাবা না। বাসায় চলো তারপর বুঝাচ্ছি আমার সাথে পাঙ্গা নেওয়ার মজা।’

সায়নের কথা শুনে গাল ফুলিয়ে বসে থাকে রাইদা। সায়ন গাড়ি স্টার্ট দিয়ে ফ্ল্যাটের রাস্তা ধরে।

ফ্ল্যাটে ফিরে ক্লান্তিতে হাত মুখ না ধুয়েই বিছানায় হাত পা ছড়িয়ে রাইদা চোখ বন্ধ করে শোয়।

‘শুইলা কেনো উঠো শাস্তির কথা ভুলে গেছো?’,সায়ন রুমে এসে বলে।

‘আপনার শাস্তি মানতে রাইয়ের বয়েই গেছে। লাগবে না ফোন আপনিই রেখে দেন।’,পাশ ফিরে শুয়ে রাইদা বলে।

গায়ের শার্ট খুলে উন্মুক্ত শরীরে রাইদাকে শোয়া থেকে কোলে তুলে নেয় সায়ন। চোখ খুলে রাগী দৃষ্টিতে সায়নের দিকে তাকায় রাইদা।

‘আপনি বহুত চিপকু লোক। না করলে বেশি করে কাছাকাছি থাকেন। কোল থেকে নামান না হলে চিমটি দিবো হাতে।’,সায়নের উন্মুক্ত বুকে কিল দিয়ে রাইদা বলে।

‘তাই নাকি? চিমটি দাও তো দেখি কেমন পারো তবে তুমি চাইলে সাথে চুমুও দিতে পারো। দেখো চুমুর অভাবে এই বাচ্চা ছেলেটা কেমন শুঁকিয়ে গেছে।’,অসহায় মুখ করে সায়ন বলে।

‘বেশি কথা বললে আপনার নাকে কামড় দিয়ে নাক ফাটিয়ে দিবো।’,সায়নের বাহুতে চিমটি কেটে রাইদা বলে।

‘এখানে দাও আমার কোনো সমস্যা নেই। ইমতিয়াজ সায়ন পুরোটাই তোমার যেখানে ইচ্ছে দাও।’,নিজের ওষ্ঠ জোড়া রাইদার মুখের সামনে এনে সায়ন বলে।

রাইদা হাত দিয়ে সায়নে ওষ্ঠ চেপে ধরে।

‘চুপ অসভ্য লোক।’
রাইদার কথা শুনে ভ্রু উঁচিয়ে সায়ন তাকায়। রাইদা সায়নকে ভেঙ্গিয়ে হাত পা নাড়িয়ে নামার চেষ্টা করে।
বাথরুমের নিয়ে রাইদাকে নামিয়ে দেয় সায়ন।

‘এইটা পরে বের হবা না হলে তোমার প্রেজেন্টেশন নষ্ট করে দিবো যা তুমি গতকালকে করছো।’

দুপুরে রাইদা যেই সাদা রঙের শাড়িটা পরেছিলো সেটা সায়ন রাইদাকে আবার দেয় পরতে।।সায়নের হু*ম*কি শুনে রাইদা কাঁদো কাঁদো মুখ করে তাকায়।

‘এটা কিন্তু ঠিক না আপনি দুপুরে আমাকে পাত্তা দিচ্ছিলেন না তাই তো অমন করলাম।’
রাইদার কথা শুনে সায়ন দুষ্টু হাসি দেয়।

‘দুপুরে পাত্তা দেইনি সেইজন্য এখন পাত্তা দিতে চাচ্ছি। জলদি রেডি হয়ে বের হও আমার খিদে পেয়েছে।’

সায়ন তাড়া দিলে মুখ ভাড় করে বাথরুমের দরজা লাগিয়ে দেয় রাইদা।

মিনিট দশেক পর শাড়ি পরে রাইদা বাথরুম থেকে বের হয়। শোবার ঘরে সায়নকে দেখতে না পেয়ে বসার ঘরের দরজার সামনে দাঁড়ায়।

উল্টো দিকে ঘুরে সায়ন কিছু করছিলো রাইদা কাশি দিলে ঘাড় ঘুরিয়ে সায়ন তাকায়। হাতে থাকা ল্যাপটপটা টি-টেবিলের উপর রাখে।সায়নে গায়ে জড়ানো সাদা রঙের টি-শার্ট।

‘কোন ধরনের গান পছন্দ তোমার? হিন্দি নাকি ইংরেজি? ‘,রাইদাকে জিজ্ঞেস করে সায়ন।

‘বাংলা গান।’
রাইদার উত্তর শুনে সায়ন রাইদার দিকে আবারো তাকায় তারপর ল্যাপটপে বাংলা গান ছাড়ে।

রাইদার দিকে এগিয়ে গিয়ে ডান হাত বাড়িয়ে দেয় সায়ন। চোখ তুলে সায়নের বাড়ানো হাতের দিকে তাকিয়ে আবার সায়নের দিকে তাকায় সে। চোখের পলক ফেলে সায়ন রাইদাকে ইশারায় হাত রাখতে বলে। সায়নের ইশারা পেয়ে রাইদা নিজের হাত সায়নের হাতের উপর রাখে।

রাইদার হাত টেনে নিজের কাছে নিয়ে আসে সায়ন এরপর আরেক হাত রাইদার কোমড়ে রেখে গানের সাথে তাল মিলিয়ে দুলতে থাকে। রাইদা বিষয়টা বুঝতে পেরে সায়নের সাথে তাল মেলায়। মিনিট কয়েকের মধ্যে রাইদার মুখে হাসি দেখা যায়।

ধীরে ধীরে সায়নের সাথে কাপল ডান্স এনজয় করতে শুরু করে রাইদা। রাইদার হাসিমুখ দেখে সায়নের মুখেও হাসি ফুটে উঠে।

‘তোমাকে অনেক ভালোবাসি বউ।’,রাইদার দিকে তাকিয়ে জড়ানো স্বরে বলে সায়ন।

‘কিন্তু আমি তো বাসি না।’,সায়নের দিকে তাকিয়ে রাইদা বলে।

রাইদার কথা শুনে সায়ন হেঁসে দেয়।

‘তাতে কি হয়েছে আমার একার ভালোবাসায় জীবন পার হয়ে যাবে। তোমার আমাকে ভালোবাসতে হবে না শুধু যেভাবে এখন কাছে আছো সেভাবেই থাকো।’,সায়ন আবারো জড়ানো স্বরে উত্তর দেয়।

‘ভালোবাসা বিহীন সংসারে থাকতে কষ্ট হবে না?’, ভ্রু উঁচিয়ে রাইদা জিজ্ঞেস করে।

‘এই কয়দিন যেভাবে সংসার চলেছে সেভাবে চললে আমার কোনো আপত্তি নেই। চলুক না এভাবে শুধু তোমার হাতটা থাকুক আমার হাতে। দিন শেষে বিছানায় গেলে যাতে তোমার ঘুমান্ত মুখটা দেখে ঘুমাতে পারি। ব্যস্ততার ফাঁকে ফাঁকে তোমার দুষ্টুমি গুলো আমাকে বিরক্ত করবে না বরং হাসাবে তোমাকে আরো ভালোবাসতে বাধ্য করবে। তুমি রাগ করলে আমি তোমায় বিরক্ত করে রোজ রাগ ভাঙাবো। তোমার জন্য অসংখ্য পাগলামি করে নিজেকে পাগল বানাবো। থাকুক না আমাদের এই ছোট সংসার যেখানে শুধু থাকবে আমার ভালোবাসা আর তোমার দুষ্টুমি।’

‘আপনি এতো ভালোবাসেন কেনো আমায়? কবে বাসলেন এতো ভালো?’

‘সেটাই তো জানি না কবে যে তোমাতে এতোটা আসক্ত হয়ে গেছে তবে সেদিন তোমায় প্রথম দেখেই ভালো লেগেছিলো। এরপর জেদ করলাম তোমার পিছু যে নিমু আর ছাড়বো না এ জীবনে।’
সায়নের কথা শুনে রাইদা হাসে।

‘লঞ্চে সেদিন সকালে নাকি চিল্লাপাল্লা করেছিলেন?’

‘যেই কাজ তুমি করেছিলে আমার তো মাথা সাথেসাথে গরম হয়ে গেছিলো। তোমাকে তখন সামনে পেলে মেরে ভর্তা বানাতাম।’,কথাটা বলে সায়ন হাসে।

‘আচ্ছা আমার দেখা যদি আর কখনোই না পেতেন তাহলে কি করতেন?’

রাইদার এমন প্রশ্ন শুনে সায়নের হাসি মিলিয়ে যায়।

‘রাত হয়েছে অনেক চলো খেয়ে ঘুমাবা। কালকে তো তোমার ক্লাস আছে সকালে উঠতে হবে।’

রাইদাকে ছেড়ে সায়ন খাবার আনতে রান্নাঘরে যায়। নিজের প্রশ্নের উত্তর না পেয়ে রাইদা মন খারাপ করে ফেলে।

রাতের খাবার খেয়ে রাইদা আগে এসে বিছানায় শোয়। রুমের আলো নিভিয়ে সায়ন এসে নিজের বালিশে শোয়। দু’জনের মাঝে আজও কোল বালিশটা দিয়ে রেখেছে রাইদা। যদিও সায়ন চাইলেই এটা এখন সরাতে পারে কিন্তু রাইদা না ঘুমাতে সে রাইদার কাছে গিয়ে ঘুমাবে না।

কপালে হাত রেখে সোজা হয়ে শুয়ে সিলিং এ তাকিয়ে থাকে সায়ন।
রাইদা পাশ ফিরে সায়নের দিকে তাকায়। কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকার পর সায়নের কাপালে রাখা হাতটা টেনে সেই হাত জড়িয়ে চোখ বন্ধ করে ফেলে। আজকাল রাইদার কাছে সায়নকে নিরাপদ মনে হয়। এতো গুলো রাত-দিন একসাথে থাকছে অথচ কখনো সায়ন তার দিকে বাজে দৃষ্টিতে তাকায়নি কিংবা জোর করেনি নিজের চাহিদা মেটাতে।

প্রথম প্রথম রাইদার ভয় হতো সায়নের সাথে এক বিছানায় ঘুমাতে কিন্তু এখন তার মনে হয় সায়ন যেনো তার সাথেই রাতটা থেকে যায়।

সায়নও পাশ ফিরে রাইদার হাতে ওষ্ঠ ছুঁইয়ে রাইদার চুলের ভাঁজে ভাঁজে আঙুল চালাতে থাকে।

….

দু’দিন পেরিয়ে চলে আসে যামিনীর হলুদের দিন। সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠে ক্লাসে চলে গেছে রাইদা। ল্যাব ক্লাস থাকায় আজকে ভার্সিটিতে এসেছে না হলে আসতো না।

ল্যাব ক্লাস শেষ করে ক্যান্টিনে এসে বসে সকলে। ফাহিম অনেকটা সুস্থ তাই সে আজকে ভার্সিটিতে এসেছে। রুহি ডিউটিতে আছে বিকালে ছুটি নিয়ে হলুদের অনুষ্ঠানে যাবে।

ফাহিম, অর্ক ল্যাপটপে কিছু দেখছে আর কথা বলছে। বাপ্পি ফোনে মনোযোগ দিয়ে গেমস খেলায় ব্যস্ত।

রাইদা গালে হাত দিয়ে পায়েলের কথা শুনছে যদিও রাইদার মনোযোগ এখানে নেই সে ভাবছে সায়নের কথা। আজকাল সায়নের সাথে থাকতে থাকতে বাহিরে বের হলে বাসায় ফেরার জন্য রাইদা ছটফট করে। এই মূহুর্তে সে বাসায় ফিরতে চাচ্ছে কিন্তু আরেকটা গুরুত্বপূর্ণ ক্লাস থাকায় ফিরতে পারছে না।

‘কি বললাম বুঝেছিস?’,রাইদার কাঁধে হাত দিয়ে পায়েল জিজ্ঞেস করে।

‘হ্যা! কি জানি বললি বুঝছি।’,রাইদা এলোমেলো জবাব দেয়।

‘কি বলছি বল তো। আমার মনে হয় না আমার একটা কথাও তুই শুনেছিস।’,পায়েল সন্দিহান দৃষ্টিতে তাকিয়ে রাইদাকে বলে।

‘আরে শুনেছি কিন্তু ভুলে গেছি আবার বল এখন মন দিয়ে শুনবো।’,রাইদা বোকা হাসি দিয়ে বলে।

‘বললাম যামিনী আপুর হলুদে কি পরবি? আমি শাড়ি পরতে চাচ্ছি কিন্তু কি রঙের শাড়ি পরবো বুঝতেছি না।’,পায়েল রাইদাকে জিজ্ঞেস করে।

‘হালকা সবুজ রঙের শাড়ি পরবো হলুদ পরলে একদম কমন লাগবে আর যামিনী আপুও সবুজ রঙের শাড়ি পরবে।’,রাইদা জবাব দেয়।

‘আমার তো সবুজ রঙের শাড়ি নেই তাহলে এখন কি আবার মার্কেটে যাবো?’,যামিনী মন খারাপ করে বলে।

‘রুহি ও তো মনে হয় হলুদ রঙই পরবে তুইও পর সমস্যা কোথায়। আচ্ছা আমিও হলুদ পরবো।’
এতক্ষণ রাইদা আর পায়েলের কথা শুনছিলো অর্ক।

‘ক্লাস শেষ করে চল বাইক দিয়ে মার্কেটে নিয়ে যাই শাড়ি কিনে নিস।’,অর্ক পায়েলকে বলে।

‘থাক বুঝেছি তুই কেনো যেতে বলছিস।’,পায়েল ভেংচি দিয়ে বলে।

এর মধ্যে পায়েলের ফোন বেজে উঠলে পায়েল ফোন হাতে নিয়ে ক্যান্টিন থেকে বেরিয়ে যায়। বাকিরা এগিয়ে যায় পরের ক্লাস করতে।
ক্লাস শুরু হওয়ার কয়েক মিনিট পর পায়েল ক্লাসে আসে তখন পায়েলের হাতে একটা শপিং ব্যাগ দেখা যায়। রাইদা কৌতুহল হয়ে বারবার জিজ্ঞেস করে কি এতে আর কে দিয়েছে কিন্তু পায়েল কোনো জবাব দেয় না।

রাইদা অবশ্য আচঁ করে কে দিতে পারে তারপরও পায়েলের কাছ থেকে সে শুনতে চায়। ক্লাস শেষ হতেই পায়েল রাইদার কানে কানে এসে বলে কে দিয়েছে এটা।
রাইদা হাসিমুখে পায়েলের গাল টেনে দেয়।

ভার্সিটি থেকে সোজা ফ্ল্যাটে চলে এসেছে রাইদা। হলুদে যাওয়ার জন্য সাজতে বসলে অনেক সময় লাগবে তাই জলদি জলদি গোসল করতে বাথরুমে যায়।

সায়নের আজকে অফিসে গুরুত্বপূর্ণ মিটিং থাকায় কল দিয়ে সে বলে গেছে দুপুরে ফিরবে না একেবারে সন্ধ্যায় ফিরে রাইদাকে নিয়ে হলুদের অনুষ্ঠানে যাবে।

গোসল সেরে খেতে বসে যায় রাইদা। সায়ন তার অফিসের সহকারীকে দিয়ে বাসা থেকে খাবার আনিয়ে রাইদার জন্য পাঠিয়েছে।

খাওয়া শেষ করে কিছুক্ষণ বিশ্রাম নিয়ে সাজতে বসে রাইদা। সন্ধ্যা ছয়টা বাজতেই তার সাজ সম্পূর্ণ হয়। ফোন বের করে সায়নকে কল দিলে সায়ন কল রিসিভ করে না।

প্রায় সাতটা বাজে দরজায় নক করার শব্দ হলে রাইদা গিয়ে দরজা খুলে। সায়ন রাইদার দিকে না তাকিয়ে রুমে চলে যায়। তোয়ালে নিয়ে গোসল করতে বাথরুমে ঢুকে। বিছানার উপর সায়নের পাঞ্জাবি, পায়জামা আগেই রেখেছে রাইদা।

রাইদা বিরক্ত হয়ে বসার ঘরের সোফায় বসে থাকে। মিমিট দশেক পর সায়নের গলার স্বর পেয়ে রাইদা পিছনে ঘরে তাকায়।

‘আমার গোল্ডেন রঙের ঘড়িটা পাচ্ছি না কই রাখছো বের করে দাও।’,পাঞ্জাবির বোতাম লাগানোর চেষ্টা করে সায়ন বলে।

হালকা সবুজ রঙের পাঞ্জাবিতে সায়নকে দেখে রাইদা অবাক চোখে তাকায়। ভেজা চুলগুলো এলেমেলো তার সাথে সায়নের বিরক্তিকর মুখটা দেখে হঠাৎ রাইদার মনে ভালো লাগা কাজ করে।

‘এই পাঞ্জাবিটাই পরতে হবে? এটার বোতাম তো লাগছে না।’,সায়ন বিরক্ত হয়ে বলে।

বসা থেকে উঠে এসে সায়নের পাঞ্জাবির বোতাম লাগিয়ে দেয় রাইদা। সাইড ড্রয়ার খুলে সায়নের গোল্ডেন রঙের ঘড়িটা এনে সামনে ধরে। হাতে ঘড়ি পরে চুলগুলো আঁচড়াতে শুরু করে সায়ন। রাইদা নিলর্জ্জের মতো সায়নের দিকে তাকিয়ে থাকে। আয়নার প্রতিবিম্বে রাইদাকে তাকিয়ে থাকতে দেখে সায়ন ভ্রু উঁচিয়ে তাকায়। সায়নের চোখে চোখ পড়ায় রাইদা ভেংচি দেয়।

‘ছেলে মানুষ এতো সুদর্শন হওয়া বড় অন্যায়।’,বিরবির করে রাইদা বলে।

‘বিরবির করে কি বলছো?’,সায়ন প্রশ্ন করে।

‘বলছি এখন কি আমরা বের হবো নাকি এখানেই রাত পার করবো?’,রাইদা উত্তর দেয়।

‘তুমি চাইলে এখানে রাত পার করতে আমার সমস্যা নেই।’,সায়ন সরল গলায় জবাব দেয়।

রাইদা বিরক্ত হয়ে রুম থেকে বেরিয়ে যায়। সায়ন পকেট থেকে ফোন বের করে সাইলেন্ট করে রাখে।

..

জ্যাম ঠেলে রাত সাড়ে আটটায় কমিউনিটি সেন্টারে রাইদা আর সায়ন আসে। গাড়ি থেকে নেমেই সায়নকে ফেলে রাইদা ভেতরে চলে যায়। সায়ন গাড়ি ঘুরিয়ে পার্কিং করতে যায়।

ভেতরে ঢুকে রাইদা দেখে ফাহিম আর বাপ্পি ক্যামেরায় কিছু দেখছে। ওদের দু’জনের দিকে এগিয়ে যায়।

‘বাকি তিনজন কই?’,রাইদা প্রশ্ন করে বাপ্পিকে।

‘লাভ বাডর্স তো এক লগে আইবো বাকি পায়েল কইলো ওর বাপে নাকি গাড়িতে কইরা ওরে নামাইয়া দিয়া যাবে।’,বাপ্পি উত্তর দেয়।

‘তোরা এখানে কি করতেছিস?’,রাইদা আবারো প্রশ্ন করে।

‘ফাহিম ক্যামেরা চেক করতেছে আর আমি সুন্দ্রীদের দেখতেছি।’, বাপ্পি উত্তর দেয়।

বাপ্পির কথা শুনে রাইদা হেঁসে স্টেজের দিকে যায়। যামিনী স্টেজে সকলের সাথে ছবি তুলছিলো রাইদাকে দেখে জোরে জোরে ডাকতে থাকে। রাইদা স্টেজের দিকে গিয়ে যামিনীর পাশে বসে।

রাইদা যামিনীকে জড়িয়ে ধরে ছবি তোলার জন্য পোজ দেয়। হুট করে রাইদার চোখ বরাবর গেলে দেখে ক্যামেরাম্যানের পাশে আরাফ দাঁড়িয়ে নিজের ক্যামেরা দিয়ে ছবি তুলছে তাদের। মূহুর্তেই রাইদার হাসিমুখ মিলিয়ে যায়। যামিনীকে বলে স্টেজ থেকে রাইদা নেমে যায়।

আরাফ বিষয়টা খেয়াল করে রাইদাকে পর্যবেক্ষণ করতে শুরু করে। রাইদাকে যেতে দেখে পিছন পিছন আরাফও যায়।

রাইদা অন্যমনস্ক হয়ে হাঁটছিলো আর ভাবছিলো আরাফকে কীভাবে কথাটা বলবে নাকি বলবে না। আরাফকে সে মানুষ হিসেবে পছন্দ করে ঠিকই কিন্তু কখনো অন্য কিছু চিন্তা করেনি তাকে নিয়ে। এখন আবার সায়নের সাথে সময় কাটিয়ে তার যে সায়নের প্রতি মায়া জন্মে গেছে এটাও বেশ বুঝতে পারছে সে।

‘আমি কি কোনো ভুল করেছি? তুমি আমাকে দেখলে পালাচ্ছো কেনো?’,আরাফ জিজ্ঞেস করে।

আরাফের কন্ঠ পেয়ে রাইদা পিছনে তাকিয়ে দেখে আরাফ দাঁড়িয়ে আছে। শ্যামবর্ণের গায়ে সাদা রঙের পাঞ্জাবিতে আরাফকে সুন্দর লাগছে কিন্তু কেনো জানি রাইদার ইচ্ছে করছে না আরাফের দিকে তাকাতে। রাইদা চোখ সরিয়ে ফেলে অথচ এখানে সায়ন থাকলে সে নিলর্জ্জের মতো তাকিয়ে থাকতো।

আরাফ আশেপাশে তাকিয়ে কাউকে দেখতে না পেয়ে রাইদার পিছনে এসে দাঁড়ায়। রাইদা কিছু বলতে ঘুরতে নিলে আরাফের সাথে মৃদু ধাক্কা লাগে। আরাফ কিছুটা দূরে সরে যায় সাথে সাথে।

‘আপনি বোধহয় জানেন না এরমধ্যে আমার জীবনে অনেক কিছু ঘটে গেছে। যখন আপনার সাথে আমার দেখা হয়েছিলো তখন আমার জীবন এক রকম ছিলো কিন্তু এখন আরেক রকম।’, দীর্ঘ শ্বাস ফেলে রাইদা জবাব দেয়।

‘তুমি বোধহয় এখনো বুঝনি তোমার সাথে দেখা হওয়ার পর থেকে আমার দিন-রাত পাল্টে গেছে। প্রতি মূহুর্তে ফোন হাতে নিয়ে দেখি তুমি কোনো মেসেজ পাঠিয়েছো কিনা। অনেকবার চেয়েছি তোমায় মেসেজ দিতে কিন্তু বারবার মনে হয়েছে তুমি নিজেই আমার খোঁজ করবে কিন্তু প্রতিবারই আমি নিরাশ হয়েছি। তাই তো আজ আমাকেই আসতে হলো সব কথা ক্লিয়ার করতে।’

আরাফের কথা শুনে রাইদা আরাফের দিকে তাকায়।
আরাফকের কন্ঠে কি ছিলো কে জানে কিন্তু হঠাৎ রাইদার মধ্যে অনুশোচনা কাজ করে। রাইদা কিছু বলতে নেয় এর আগেই আরাফ বলে উঠে।

‘তোমার নতুন জীবনের জন্য শুভকামনা। অতীত ভেবে বর্তমানটাকে নষ্ট করার কোনো মানে হয় না। তুমি এতো লুকোচুরি না করে বিয়ের কথাটা আমাকে বললেই পারতে। শুনেছি সায়ন নাকি তোমাকে অনেক আগে থেকেই ভালোবাসে। তোমার উচিত সায়নকে একটা সুযোগ দেওয়া। বাহির থেকে ছেলেটা রগচটা হলেও ভেতর থেকে ও অনেক নরম মানুষ। ও তোমাকে অনেক সুখে রাখবে।’

আরাফের কথা শুনে রাইদার বুকের উপর থেকে পাথরটা নেমে যায়। আরাফ যে বিষয়টা এতো সহজ ভাবে নিবে বুঝতে পারেনি রাইদা।

‘আমাকে ভুল বুঝবেন না প্লিজ। আপনি মানুষ হিসেবে অনেক ভালো আর আমিও আপনাকে একজন ভালো মানুষ হিসেবে পছন্দ করি। আপনার জীবনে একদিন আপনি সব সুখ পাবেন যা আপনি ডিজার্ভ করেন।’,রাইদা হেঁসে বলে।

‘সায়নকে নিয়ে সুখী হও দোয়া করি আর এবার বিয়ের অনুষ্ঠান হলে অবশ্যই দাওয়াত দিও সুন্দর সুন্দর ছবি তুলে দিবো।’

আরাফের কথা শুনে রাইদা হেঁসে দেয়।

‘আমি যদি কখনো জেনে বা না জেনে তোমাকে কষ্ট দিয়ে থাকি আমায় ক্ষমা করে দিও। তোমাকে তো বলাই হয়নি আমার প্রমোশন হয়েছে খুব জলদি চট্টগ্রামে শিফট হবো আর এটাই বোধহয় আমাদের শেষ দেখা।’, মৃদু হেঁসে আরাফ বলে।

রাইদা কিছু বলার আগেই আরাফকে শ্রেয়া ডাকতে থাকে। হাসিমুখে আরাফ সেখান থেকে চলে যায়।

স্টেজের সামনে এসে শ্রেয়ার ছবি তুলতে থাকে আরাফ। আজকে অনুষ্ঠানে এসেছিলো শুধু রাইদার সাথে কথা বলে ভুল বুঝাবুঝি ক্লিয়ার করতে। যামিনীর সাথে যখন কলে কথা হয় তখনই সে বিয়ের ব্যপারে বিস্তারিত জানে।

ছবিতোলা শেষ করে পকেট থেকে ফোন বের করে আরাফ যেটার ওয়ালপেপারে সমুদ্রের পাড়ে তোলা পায়েল পরিহিত রাইদার পায়ের ছবিটা দেওয়া। ছবিটার দিকে তাকিয়ে আরাফ দীর্ঘ শ্বাস ফেলে ফোন লক করে আবার পকেটে রাখে।

‘এ জীবনে মানুষ যা চায় সব পায় না কিছু চাওয়া আজীবন অপূর্ণ থাকে। তুমি আমার জীবনের সবচেয়ে দামী ইচ্ছে যাকে পাওয়া অপূর্ণ থেকে যাবে তাও আমার আফসোস নেই। তোমার সাথে কাটানো মূহুর্ত গুলো আমার জীবনের স্মৃতির পাতায় আজীবন থাকবে। আমি তোমার জায়গায় আর কাউকে বসাতে পারবো না ক্ষমা করে দিও আমায়।’

রাইদার পায়েলের সাথে কথা বলছিলো আর হাসছিলো দূর থেকে রাইদার দিকে তাকিয়ে আরাফ ধীর গলায় কথাগুলো বলে। অনুষ্ঠানের গানের শব্দে আরাফের ধীর গলায় বলা কথা গুলো মিলিয়ে যায় সেখানেই।


(চলবে..)

(কমেন্টে অবশ্যই জানাবেন কেমন লাগলো।)পর্বঃ৩৯
গল্পঃ #সেদিন_দেখা_হয়েছিলো
লেখনীতেঃ #ঈশিতা_ইশা
(গল্প কপি পোস্ট সম্পূর্ণ নিষেধ।)
….

রুবেল ফোন হাতে গেটের একপাশে দাঁড়িয়ে পায়েলকে কল দেয়। ফোনের রিংটোনের শব্দ পেয়ে পাশ ফিরে তাকালে দেখে পায়েল চুল ঠিক করতে করতে এদিকেই আসছে। কান থেকে ফোন নামিয়ে পায়েলের দিকে রুবেল তাকায়।

‘জ্যামের কারণে একটু দেরি হয়ে গেলো আসতে।’,পায়েল হেঁসে রুবলকে বলে।

‘আমিও মাত্রই আসলাম তখনই ফোন বের করে দেখি আপনি কল দিয়েছিলেন তাই কল ব্যাক করলাম। আপনার বন্ধুরা সবাই এসেছে?’,রুবেল প্রতিউত্তরে বলে।

‘হ্যা সবাই ভেতরে আছে, চলুন।’,পায়েল উত্তর দেয়।

পায়েলের কথা শুনে রুবেল কমিউনিটি সেন্টারের ভেতরে যায়। মন খারাপ করে পায়েল সেখানেই দাঁড়িয়ে থাকে। সে ভেবেছিলো রুবেল তাকে দেখে খুশি হয়ে একটু প্রশংসা করবে কিন্তু তা না করে রুবেল তার দিকে ঠিক ভাবে তাকায়নি।

পরিহিত শাড়িটার দিকে তাকিয়ে পায়েল নিজেকে নিজে তিরস্কার করে।

‘কেনো যে তার থেকে শাড়িটা নিয়েছিলাম। শাড়িটা উপহার দিয়েছে অথচ ঠিক ভাবে একবারো আমার দিকে তাকিয়েই দেখলো না।’,বিরবির করে একা একা কথাগুলো বলে পায়েল।

কমিউনিটি সেন্টারের ভেতরে গিয়ে আশেপাশে তাকিয়ে যখন পায়েলকে দেখতে পায়েন না তখন আবারো বাহিরে আসে রুবেল।

‘কি হলো দাঁড়িয়ে আছেন কেনো? চলেন অনুষ্ঠান শুরুহয়ে গেছে অনেক আগেই।’,রুবেল এসে পায়েলকে তাড়া দিয়ে বলে।

পায়েল জবাব না দিয়ে ভেতরে চলে যায়। পায়েলের যাওয়ার পানে তাকিয়ে রুবেল মাথা চুলকে হাসে। পায়েলকে দেখতে আকর্ষণীয় লাগছে যে কোনো ছেলে তাকে এখন দেখলে প্রেমে হাবুডুবু খাবে যেটা রুবেলও খাচ্ছে কিন্তু রুবেল পায়েলকে বুঝতে দিতে চাচ্ছে না বিষয়টা।

যেই রুবেল কখনো কারো জন্য কিছু কিনেনি সে যখন শুনেছে পায়েলের সবুজ রঙের শাড়ি নেই ডিউটি শেষ করে চলে গেছে পায়েলের জন্য শাড়ি কিনতে। অফিসে যাওয়ার ফাঁকে সময় করে সেটা পায়েলকে দিয়েও এসেছে।

কথাগুলো ভাবতে ভাবতে রুবেল চলে যায় ভেতরে।

..

ফোন হাতে রাইদাকে কল দিচ্ছে আর এদিক সেদিক তাকিয়ে তাকে খুঁজছে সায়ন। রাইদার এমন কেয়ারলেস কান্ডে প্রচন্ড বিরক্ত সায়ন। চারিদিকে এতো ছেলে দেখে সায়ন চাচ্ছে রাইদাকে নিজের কাছে কাছে রাখতে কিন্তু রাইদাকে এখনো কমিউনিটি সেন্টারে খুঁজেই পায়নি।
মিউজিকের শব্দে সায়ন স্টেজের দিকে তাকালে দেখে পায়েল আর বাপ্পি পারফর্ম করছে। রাইদা স্টেজের আশেপাশে আছে সেটা সায়ন বুঝে যায়। ফোন কান থেকে নামিয়ে এগিয়ে যায় স্টেজের কাছে।

শ্রেয়ার কুঁচি গুলো এলেমেলো হয়ে গেছে সেগুলোই রাইদা ঠিক করে দিচ্ছে খালি রুমে দাঁড়িয়ে। শ্রেয়া প্রথমে রাইদার সাথে আসতে চায়নি পরে কাউকে না পেয়ে বাধ্য হয়ে আসে।

শ্রেয়ার শাড়ির কুঁচি গুলো ঠিক করেই রাইদা রুম থেকে বের হয়ে স্টেজের দিকে পা বাড়ালে দেখে সায়ন স্টেজের সামনে বসা যামিনীর কানে কানে কিছু বলছে আর বারবার ফোনের দিকে তাকাচ্ছে।
রাইদা ভাবে সায়নের কাছে গিয়ে জিজ্ঞেস করবে সে এতক্ষণ কোথায় ছিলো তখনই তার নজর যায় যামিনীর কাজিন বোনদের দিকে। মেয়ে গুলো সায়নের দিকে তাকিয়ে কিছু বলাবলি করছে। হুট করে রাইদার প্রচন্ড হিংসা হয় সায়নের সৌন্দর্য নিয়ে।

যামিনীর সাথে কথা শেষ করে সায়ন এদিক ওদিক তাকিয়ে রাইদাকে খুঁজতে থাকে আর রাইদার নাম্বারে কল দিতে থাকে। রাইদা সরে একটু আড়ালে দাঁড়ায় সায়ন কি করতেছে তা বুঝতে। সায়ন হাঁটতে হাঁটতে এক সাইডে গেলে ওর পিছন পিছন তিনটা মেয়ে যায়। রাইদা পুরোটা দূর থেকে দেখে এর মধ্যে যামিনীর কাজিন বোনও রয়েছে।

‘এক্সকিউজ মি ভাইয়া আপনার সাথে কথা বলা যাবে?’,একটা মেয়ে সায়নকে প্রশ্ন করে।

সায়ন পিছনে ঘুরে বিরক্তিকর চাহনি দেয় মেয়েগুলোর দিকে। এমনিতেই তার মেজাজ খারাপ হয়ে গেছে রাইদাকে খুঁজে না পেয়ে তার উপর মেয়ে গুলোকে দেখে বিরক্ত লাগছে।

‘ভাইয়া আপনি কি যামিনী আপুর বন্ধু? ‘,মেয়েটা আবারো প্রশ্ন করে।

সায়ন কথার জবাব না দিয়ে সেখান থেকে চলে যায়। মেয়েগুলো অবাক হয়ে যায় সায়নের কান্ডে।

রাইদা দূর থেকে মেয়েগুলোকে দেখে এগিয়ে যায়। যেই মেয়েটা সায়নকে প্রশ্ন করছিলো সেই মেয়েটার পিছনে দাঁড়িয়ে কাঁধে হাত দেয় মেয়েটা রাইদার দিকে তাকায়।

‘যেই ভাইয়ার সাথে কথা বলার চেষ্টা করছো সে বিবাহিত আর তার বউ দ*জ্জা*ল। আমার উপদেশ হলো ভাইয়ার থেকে দূরে থাকো।’,দাঁতে দাঁত চেপে জোর পূর্বক মুখে হাসি টেনে রাইদা কথাগুলো বলে।

‘আপনি ভাইয়ার কে হন? এতকিছু কীভাবে জানেন?’,মেয়েটা রাইদাকে প্রশ্ন করে।

‘কারণ আমার সেই দ*জ্জা*ল বউটাই এই আপুটা।’

সায়নের গলা পেয়ে রাইদা পাশে তাকায়। রাগী দৃষ্টিতে সায়ন তার দিকে তাকিয়ে আছে দেখে রাইদা ভেংচি দিয়ে স্টেজের দিকে যায়। সায়ন রাইদার পিছন পিছন হেঁটে গিয়ে শাড়ির আঁচল টেনে ধরে। মেয়েগুলো একে অপরের মুখ চাওয়াচাওয়ি করে। তারা এখনো বুঝতে পারছে না হচ্ছে টা কি।

‘আমি না আপনার আপু হই তাহলে শাড়ির আঁচল ধরছেন কেন? ছাড়েন আমার আঁচল। ‘,আঁচল টেনে রাইদা বলে।

‘তোমার ফোন কই সেটা বলো আগে। আজকে তোমার হাড্ডি আর ফোন দুটোই ভাঙবো।’,রাইদার শাড়ির আঁচল হাতে পেঁচিয়ে সায়ন বলে।

‘ফোন আমার বয়ফ্রেন্ডের কাছে এখন আঁচল ছাড়েন আমার বয়ফ্রেন্ডের কাছে যাবো।’,রাইদা সায়নের হাতে চিমটি দিয়ে বলে।

‘তোমরা এখানে দাঁড়িয়ে আছো কেনো? আমাদের রোমান্স দেখতে চাচ্ছো?’,ঘাড় ঘুরিয়ে মেয়ে তিনটাকে সায়ন বলে।

সায়নের মুখে এমন কথা শুনে লজ্জা পেয়ে মেয়ে তিনজন দ্রুত সেখান থেকে চলে যায়।

‘আপনি দিনদিন অতিরিক্ত অসভ্য হচ্ছেন। বাচ্চা মেয়ে গুলোকে কি বললেন এসব?’,রাইদা কাছে এসে সায়নের পাঞ্জাবির একটা খোলা বোতামটা লাগিয়ে বলে।

‘বেশি কথা বললে এখানেই সবার সামনে অসভ্যতা শুরু করবো তখন আমার দোষ দিতে পারবা না। করবো অসভ্যতা?’,রাইদার দিকে তাকিয়ে দুষ্টু হাসি দিয়ে বলে সায়ন।

‘আরে রুবেল ভাই কাকে খুঁজতেছেন?’

রাইদার কথা শুনে সায়ন পিছনে তাকায় ব্যস শাড়ির আঁচল আলগা পেয়ে রাইদা দৌড় দেয়। সায়ন যখন বুঝে রাইদা তাকে আবারো বোকা বানিয়েছে ততক্ষণে রাইদা লাপাত্তা।

রাইদাকে খুঁজতে স্টেজের কাছে গেলে সায়ন দেখে রাইদা আর অর্ক স্টেজে, সায়নের বুঝতে বাকি থাকে না দুই বন্ধু এখন ডুয়েট পারফর্ম করবে।

গান বাজতে শুরু করলে রাইদা আর অর্ক নাচতে শুরু করে। সায়ন তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে অর্কের দিকে তাকিয়ে আছে। পুরো পারফরম্যান্স ডুয়েট হলেও অর্ক আর রাইদা আগের তুলনায় কিছুটা দূরত্ব রেখে পুরো নাচ শেষ করে।

অর্ক, রাইদার পারফরম্যান্স শেষ হলেই বাপ্পি,পায়েল স্টেজে আসে তখন গ্রুপের একটা পারফরম্যান্স করে।

গ্রুপের নাচের মধ্যেই রাইদা গিয়ে যামিনীর হাত টেনে স্টেজে নিয়ে আসে। হুট করে গান বদলে রোমান্টিক গান বাজতে শুরু করে। স্টেজে কাপলদের ডাকা হয়। যামিনী একা থাকায় রুবেল যামিনীর হাত ঘুরিয়ে নাচতে শুরু করে। পায়েল বাপ্পির সাথে নাচতে থাকে। রুহিকে টেনে এনে অর্কের সাথে জুটি বেঁধে দেয় রাইদা। একটু পরই যামিনী চলে গেলে পায়েল এসে রুবেলের সাথে জুটি বাঁধে। রুবেলের অস্বস্তি হচ্ছিলো কিন্তু পায়েল হেঁসে আশ্বস্ত করলে রুবেলের সকল অস্বস্তি দূর হয়ে যায়।

রাইদা দৌড়ে গিয়ে সায়নের হাত ধরে টেনে সায়নকে স্টেজে নিয়ে আসে। স্টেজের সব আলো নিভে মৃদু আলো জ্বলে উঠে। সায়নের হাত জোড়া টেনে নিজের কোমড়ে রেখে নিজের হাত জোড়া সায়নের কাঁধে রাখে রাইদা এরপর গানের তালে তালে দুজনে দুলতে থাকে। মৃদু আলোতে সায়ন রাইদার দিকে তাকিয়ে থাকে অদ্ভুত চাহনিতে।

‘কি ব্যপার বউ হঠাৎ এতো প্রেম দেখাচ্ছে?’, সায়ন রাইদাকে জিজ্ঞেস করে।

‘কই প্রেম দেখালাম? কাপল ডান্স হচ্ছে এখন যদি বয়ফ্রেন্ডের সাথে না নাচি তাহলে কেমন দেখায় না? বর যাতে দেখে জ্বলে সেই জন্যই তো বয়ফ্রেন্ডকে টেনে আনলাম আমার সাথে কাপল ডান্স করতে।’

রাইদার কথা শুনে সায়ন ঠোঁট কামড়ে হাসে। সায়নের হাসি দেখে রাইদার বলতে ইচ্ছে হয়,’এভাবে হাসবেন না প্লিজ। আপনি এভাবে হাসলে আমার নিজেকে পাগল পাগল লাগে।’

রাইদা কথাগুলো বলে না শুরু সায়নের চোখ জোড়ার দিকে তাকিয়ে থাকে। অপছন্দের মানুষটাকে এখন তার কাছে হঠাৎ ভালো লাগছে কেনো সেই উত্তর খুঁজতে থাকে রাইদা।

‘বাসায় ফিরলে তোমার বর কিন্তু এই বয়ফ্রেন্ডের সাথে করা কাপল ডান্সের শোধ তুলবে মনে রেখো।’

‘আচ্ছা দেখা যাবে মিস্টার বয়ফ্রেন্ড।’

সায়ন হেঁসে রাইদার কোমড় ছেড়ে হাত ধরে ঘুরাতে থাকে রাইদাকে একদম স্লো ভাবে।

স্টেজের আলো জ্বলে উঠলে সবাই হাততালি দিতে শুরু করে। রাইদা সায়নের হাত ছেড়ে যেতে নিলে সায়ন যেতে দেয় না এক সাথে হাত ধরে স্টেজ থেকে রাইদাকে নিয়ে নামে।

আরাফ এক কোণায় দাঁড়িয়ে এতক্ষণ রাইদা আর সায়নের কাপল ডান্স দেখছিলো। সে যামিনীর থেকে শুনেছিলো সায়নকে রাইদা মেনে নেয়নি কিন্তু স্টেজে দু’জনের হাসিমুখ দেখেই বুঝা গেছে রাইদা অনেক সুখে আছে আর সে সায়নকে মেনে নিয়েছে।

আরাফ চোখের পানি লুকিয়ে যামিনীর কাছে যায় বিদায় নিতে। আরাফকে দেখে যামিনীর ভেতরে খারাপ লাগা শুরু হয়। প্রথম থেকেই যামিনী বুঝতো আরাফ রাইদাকে পছন্দ করে। সে খুব করে চাইতো আরাফের একাকী জীবনে রাইদা আসুক কিন্তু ভাগ্যের লেখন কেউ বদলাতে পারে না।

বসা থেকে উঠে এক পাশে গিয়ে দাঁড়ায় যামিনী আর আরাফ।

‘নিজেকে কষ্ট দিস না এতে কারো হাত নেই তুই তো বিষয়টা বুঝতে পারছিস। রাই প্রথমে মেনে না নিলেও ধীরে ধীরে সায়নকে ঠিলই মেনে নিচ্ছে তুই ও মুভ অন কর।’,আরাফের হাত ধরে যামিনী বলে।

‘রাই আজকে বলেই দিয়েছে ও আমাকে সেভাবে কখনো পছন্দই করতো না তাহলে মুভ অনের বিষয়টা আসে কোথা থেকে? আমার পছন্দটা একপাক্ষিক ছিলো বলতে পারিস। হয়তো রাইয়ের মনে সায়ন আগে থেকেই ছিলো কিন্তু রাই সেটা বুঝেনি এতদিন এখন সায়নকে কাছে পেয়ে বুঝতে পেরেছে।’,আরাফ যামিনীর দিকে তাকিয়ে বলে।

‘তোদের দু’জনকে যেদিন এক সাথে সমুদ্রের পাড়ে বসে থাকতে দেখেছিলাম সেদিনই বুঝেছি তুই রাইকে গভীরভাবে পছন্দ করিস তাই তো শেষ পর্যন্ত চেয়েছিলাম তোদের মিল হোক। গ্রামের ঘটনার পর জানলাম সায়ন আগে থেকেই রাইকে পেতে চেষ্টা করে যাচ্ছে। আচ্ছা প্রমোশন পেয়ে তুই যে ঢাকা ছেড়ে চট্টগ্রাম যাচ্ছিস এটা কিন্তু মোটেও ঠিক না যেখানে তোকে আরো কয়েকমাস আগে এই প্রমোশন দিয়ে চট্টগ্রামে চলে যেতে বলেছিলো তুই রাজি হসনি এখন শুধু রাইয়ের থেকে পালাতে এই কাজ করছিস তাই না?’

‘কি করবো বল এখানে আমার কিছুই নেই। যাকে নিয়ে জীবন সাজাবো ভেবেছিলাম সে তো অন্যের স্ত্রী এখন। ঢাকায় থাকলে রাইকে দেখতে ভীষণ ইচ্ছে করবে। পরে দেখা যাবে বেহায়া মনটাকে প্রশ্রয় দিয়ে লুকিয়ে রাইকে দেখছি যেমনটা সেদিন করেছিলাম তখন অবশ্য জানতাম না রাই আর কখনোই আমার হবে না। রাইয়ের থেকে নিজেকে সরাতেই যাচ্ছি এতে রাইয়ের মঙ্গল। ‘

‘দোয়া করি তুই ভালো থাক। যেখানেই থাকিস আমার সাথে যোগাযোগ রাখিস। সায়নের সাথে দেখা করবিনা?’

‘না রে সায়নের দিকে তাকালে নিজেকে অপরাধী লাগবে। আমি পারবো না ওর সামনে নিজেকে লুকাতে। ওর যেই তীক্ষ্ণ দৃষ্টি আমাকে দেখলে ঠিকই বুঝে যাবে আমি কিছু লুকাচ্ছি। পরে কল দিয়ে কথা বলে নিবো।’

কথাগুলো বলে আরাফ এক হাতে যামিনীকে জড়িয়ে বিদায় জানায়। শ্রেয়ার কাছে গিয়ে শ্রেয়াকেও এক হাতে জড়িয়ে বিদায় নেয়। রুবেলকে গিয়ে জড়িয়ে ধরে অনেকক্ষণ এরপর কমিউনিটি সেন্টার থেকে আরাফ বেরিয়ে যায়। যদিও শ্রেয়া, রুবেল জানতো না আরাফ একেবারে চলে যাচ্ছে ঢাকা থেকে।

শেষ বার রাইদাকে প্রচন্ড দেখতে ইচ্ছে হয় কিন্তু নিজের ইচ্ছেকে দমিয়ে আরাফ চলে যায় অজানায়। যামিনীকে বলেছে চট্টগ্রাম যাবে কিন্তু আসলে সে অন্য কোথায় চলে যাবে সেখানের ঠিকানা কাউকে জানায়নি।

পকেট থেকে রাইদার জন্য কেনা রিং টা বের করে আরাফ। গ্রাম থেকে ঢাকায় ফিরে কাজের ব্যস্ততার মধ্যে যখন বারবার রাইদাকে মনে পড়ে তখনই আরাফ বুঝে সে রাইদাকে ভালোবেসে ফেলেছে আর রাইদাকে তার জীবনে চায়। কাজের ব্যস্ততার মধ্যেই রিং টা কিনে রাখে যাতে রাইদার সাথে দেখা হলে মনের কথাগুলো বলতে পারে।

‘ভালো থেকো মায়াবিনী। এই রিং টা তোমার হাতে দেখার ইচ্ছে ছিলো কিন্তু এখন এটা সারাজীবন আমার কাছে থাকবে তোমার স্মৃতির সাথে জড়িয়ে। তুমি সবসময় সুখী হও সেই দোয়াই করি।’
কথাগুলো বলে আংটিটা হাতের তালুতে মুঠোবন্দি করে ফেলে আরাফ। দু ফোঁটা অশ্রু গড়িয়ে হাতের উপর পড়ে। হাতের উল্টো পাশ দিয়ে চোখ মুছে সে হাঁটা দেয় নিজ গন্তব্যে।
..

যামিনীতে স্টেজে আবারো বসানো হয় হলুদ ছোঁয়াতে। একে একে সবাই যামিনীর গালে হলুদ লাগিয়ে দেয়। রাইদা সায়নকে রেখে যেতে চাইলে সায়ন হাত টেনে ধরে। রাইদাকে সাথে নিয়েই সায়ন স্টেজে উঠে যামিনীকে হলুদ ছোঁয়াতে।

রাইদা যামিনীর গালে একটু হলুদ লাগিয়ে বাকিটা সায়নের গালে লাগিয়ে দেয়। সায়ন কিছু বলার আগেই রাইদা হাসি দিয়ে সেখান থেকে পালায়। হলুদ হাতে নিয়ে সায়নও রাইদাকে ধরতে পিছন পিছন যায়। মানুষের ভীড়ে পালাতে গেলে সায়ন একসময় রাইদার হাত টেনে ধরে দুই গাল ভর্তি করে হলুদ লাগিয়ে দেয়। গালে হলুদ লাগতেই রাইদা চোখ মুখ কুঁচকে ফেলে আর সায়ন রাইদার অবস্থা দেখে হাসতে থাকে।

সায়ন আর রাইদাকে বাচ্চাদের মতো ছুটতে দেখে যামিনীও হাসতে থাকে।

‘রাইদাকে সৃষ্টিকর্তা সায়নের জন্য বানিয়েছে এতে কোনো সন্দেহ নেই।’,যামিনী হেঁসে বলে।

‘সায়ন যে কীভাবে এই মেয়েকে সহ্য করবে কে জানে। আমার তো মেয়েটাকে একদম পছন্দ না।’,শ্রেয়া বিরক্তি নিয়ে বলে।

‘তোর পছন্দ দিয়ে কিছু যায় আসে না সংসার যে করছে তার পছন্দই শেষ পছন্দ। এসব কথা সায়নের সামনে আবার বলিস না।’,যামিনী শ্রেয়ার দিকে ঘুরে বলে।
যামিনীর কথা শুনে শ্রেয়া কোনো প্রতিক্রিয়া দেখায় না।

..

বাপ্পির গুরুত্বপূর্ণ কল আসায় সে অনেক আগেই অনুষ্ঠান থেকে বেরিয়ে গেছে সাথে ফাহিমও চলে গেছে। এদিকে পায়েলও বাসায় কল দিয়ে বলেছিলো একা যেতে পারবে কিন্তু এখন উবার তো দূর কোনো রিকশাও পাচ্ছে না। কি করবে ভাবতে থাকে এর মধ্যে অর্কের বাইক স্টার্ট দেওয়ার শব্দে পায়েলের ভাবনা দূর হয়। অর্কের সাথে যাবে ভেবে এগিয়ে গেলে দেখে রুহি আসছে তখনই পায়েলের মনে হয় ওদের দু’জনকে আলাদা যেতে দেওয়া উচিত।

‘কিরে উবার আসেনি এখনো?’,অর্ক জিজ্ঞেস করে।

‘এই তো চলে আসছে প্রায় তোরা যা আমিও একটু পরই যাবো।’, পায়েল জবাব দেয়।

‘তোর বাসা তো দূর তা ছাড়া এতো রাতে একা যেতে পারবি?’,রুহি বলে।

‘আরে যেতে পারবো সমস্যা নেই উবার তো আসতেছে।’,পায়েল বলে।

পায়েলের কথা শুনে রুহি গিয়ে অর্কর বাইকে উঠলে অর্ক বাইক টান দেয়।
মন খারাপ করে পায়েল আশেপাশে তাকায়। কি করবে ভেবে পায় না।

‘আপনি কি একা? সাথে কেউ নেই?’,রুবেল হঠাৎ প্রশ্ন করে।

রুবেলের কন্ঠ পেয়ে পায়েল পাশে তাকায়।

‘হ্যা একাই যাবো আমার উবার আসলে।’,পায়েল উত্তর দেয়।

‘আমার জানামতে এই এরিয়াতে এখন উবার পাবেন না।আমিও কিছুক্ষণ চেষ্টা করেছি কিন্তু উবার পাইনি আপনি কি করে পেলেন?’

রুবেলের কথা শুনে পায়েল ধরা পরা চোরের মতো চুপ করে থাকে। রুবেল বুঝতে পারে পায়েল মিথ্যা বলছে তাই সে আর লজ্জা দিতে চায়না পায়েলকে।

‘ঐদিকে গেলে রিকশা পাওয়া যাবে আমি যাচ্ছি আপনি চাইলে আমার সাথে যেতে পারেন রিকশা খুঁজতে। ‘
কথাটা বলেই রুবেল হাঁটা দেয়। কোনো উপায় না পেয়ে পায়েলও রুবেলের পিছন পিছন যায়।

কিছুক্ষণ হাঁটার পর একটা রিকশা ডেকে রুবেল উঠে সাথে পায়েলও উঠে। রিকশা চলতে শুরু করলে পায়েল চুপ করে বসে থাকে।

‘আপনাকে আজকে এতো সুন্দর লাগছে কেনো?’
হঠাৎ রুবেলের এমন প্রশ্নে পায়েল বোকা বনে যায়।

‘মনে হচ্ছে খুব কষ্ট করে কথাটা বললেন?’,পায়েল রুবেলের দিকে না তাকিয়ে বলে।

‘কিন্তু সাধারণ বেশেই আপনাকে আরো বেশি মোহনীয় লাগে।’

‘এখন মোহনীয় লাগছে না?’

‘এখন সুন্দর লাগছে ভিন্ন সুন্দর। যেই সুন্দর অস্থায়ী কিন্তু মোহনীয়তা স্থায়ী।’

রুবেলের কথা শুনে পায়েল কোনো জবাব দেয় না। এই লোকটার উল্টাপাল্টা কথা আজকাল তার মন্দ লাগে না। জীবনে এতো ছেলে দেখেছে পায়েল কিন্তু এই ছেলেটা তার কাছে ব্যতিক্রম।
..

রাত বাজে সাড়ে বারোটা সায়ন গাড়ি চালাচ্ছে আর একটু পর পর রাইদার কান্ড দেখছে।

গাড়িতে উঠেই কানের দুল গলার হার খুলে সামনে রেখে দিয়েছে রাইদা। চুলগুলো এলোমেলো করে উইন্ডো খুলে সিটে মাথা এলিয়ে বাহিরে তাকিয়ে আছে। একটু পর উইন্ডো বন্ধ করে হাই তুলে সায়নের হাত টেনে বলে গাড়ি থামাতে। সায়ন রাইদার কথায় পাত্তা না দিয়ে গাড়ি চালাতে থাকে।

সায়নের কাছে পাত্তা না পেয়ে আবারো উইন্ডো খুলে চোখ বন্ধ করে সিটে শুয়ে থাকে সে।

ফ্ল্যাটের নিচে গাড়ি এসে থামলে গাড়িটা পার্ক করে সায়ন বের হয়। রাইদার সিটের সামনে এসে ডোর খুলে রাইদাকে বের হতে বলে।

‘গাড়িতেই থাকতে চাচ্ছো?’

সায়নের কথা শুনে রাইদা চোখ তুলে তাকায়।

‘উহু ঘুম পেয়েছে রুমে যাবো।’,ঘুম জড়ানো কন্ঠে রাইদা বলে।

‘চলো তাহলে আমরা তো এসেই গেছি।’,সায়ন রাইদাকে বলে।

‘আমি অনেক টায়ার্ড একটুও হাঁটার শক্তি নেই আমার। হেঁটে যে রুমে যাবো সেটাও ইচ্ছে করছে না।’,রাইদা অসহায়ের মতো মুখটা করে বলে।

‘তাহলে আপনার জন্য কি করতে পারি মিসেস ইমতিয়াজ সায়ন? ‘,সায়ন রাইদার দিকে ঝুঁকে জিজ্ঞেস করে।

‘আপনি যদি আমাকে একটু পৌঁছে দেন তাহলে আমার জন্য ভালো হয়।’,রাইদা হেঁসে বলে।

‘কিন্তু আপনাকে পৌঁছে দিলে আমার কি লাভ?’,সায়ন আগের ন্যায় ঝুঁকে জিজ্ঞেস করে।

‘কি লাগবে আপনার বলেন সেটাই দিবো।’,রাইদা বলে।

‘তাই নাকি? যা চাইবো তাই দিবেন? সত্যি তো? পরে কিন্তু অস্বীকার করতে পারবেন না মিসেস ইমতিয়াজ সায়ন।’,সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে বলে সায়ন।

‘ঠিক আছে কথা দিলাম এখন নিয়ে চলুন আমায়।’,দু’হাত সায়নের দিকে বাড়িয়ে ঘুম চোখে বলে রাইদা।

সায়ন হেঁসে রাইদাকে কোলে তুলে নেয়। রাইদা সায়নের গলা জড়িয়ে সায়নের কাঁধে মাথা ঠেকায়।

গাড়ির দরজা লাগিয়ে রাইদাকে নিয়ে লিফটের দিকে হাঁটা দেয় সায়ন। দারোয়ান বসে ঝিমাচ্ছিলো হুট করে সায়নকে দেখে এগিয়ে যেতে চায় কিন্তু পরেই সেদিনের কথা মনে হতে আর এগিয়ে যায় না।
ফ্ল্যাটে ঢুকে এক হাত দিয়ে দরজা লাগিয়ে রাইদাকে নিয়ে বিছানায় শুইয়ে দিয়ে সায়ন সরে যেতে নিলে রাইদা সায়নের হাত টেনে ধরে। জানালায় পর্দা থাকায় অন্ধকার রুমে বাহির থেকে হালকা আলো রুমে আসছে যাতে মানব ছায়াও অস্পষ্ট। রাইদার হাতের চুড়ির শব্দ সায়নকে জানান দিচ্ছে রাইদা শোয়া থেকে উঠে বসে তার পাঞ্জাবির হাতা টেনে ধরেছে।

সায়নের হাত ছেড়ে পাঞ্জাবির হাত টেনে ধরে সায়নকে কাছে আনে রাইদা। নিজের মাথাটা এগিয়ে নিয়ে সায়নের বুকের উপর রাখে সে। রাইদার এলেমেলো চুলের ভাজে নিজের উষ্ণ হাত দিয়ে স্পর্শ করে সায়ন, আবেশে চোখ বন্ধ করে ফেলে রাইদা।

‘বউ জেগে আছো?’,কিছুক্ষণ পর সায়ন আদুরে স্বরে রাইদাকে ডাকে।

‘উহু ঘুমাচ্ছি।’,ঘুম জড়ানো স্বরে বলে রাইদা।

রাইদার কথা শুনে সায়ন হেঁসে দেয়।

‘মেকআপ তুলে চেঞ্জ করে ঘুমাও।’
সায়নের কথা শুনে রাইদা মাথা তুলে দু’হাত দিয়ে সায়নের বুকে ধাক্কা দেয়। ধাক্কা খেয়ে রাইদার হাত জোড়া টেনে ধরে সে।

‘কি হলো ধাক্কা দিচ্ছো কেনো? আচ্ছা মেকআপ তুলতে হবে না এভাবেই ঘুমাও।’,সায়ন রাইদাকে কাছে টেনে বলে।

‘আপনি কাছে আসবেন না সরেন আপনি বহুত খারাপ লোক।’,রাইদা অভিমানের স্বরে বলে।

‘আমি আবার কি করলাম? ‘,সায়ন অবাক হওয়ার ভান করে বলে।

‘আজকে একবারও আমার দিকে তাকাননি ভালো করে এমনকি আমাকে কেমন লাগছে সেটাও বলেননি।’,সায়নের হাত থেকে নিজের হাত ছাড়িয়ে রাইদা বলে।

‘কে বলেছে তোমায় দেখিনি? সবুজ শাড়ির সাথে কাঁচা হলুদ রঙের ব্লাউজ পরেছিলে। দুই হাত ভর্তি হলুদ আর সবুজ রঙের রেশমি চুড়ি, কপালে ছোট্ট সবুজ রঙের টিপ, নাকে নথ..’

সায়ন আর কিছু বলার আগেই রাইদা সায়নের মুখ চেপে ধরে।

‘আপনাকে বিস্তারিত বলতে বলিনি। এভাবে মানুষ কমপ্লিমেন্ট দেয়?’

মুখ থেকে রাইদার হাতটা নামিয়ে সায়ন বলে,’মানুষকে কমপ্লিমেন্ট দিতে হয় কিন্তু বউকে কমপ্লিমেন্ট না দিয়ে মন ভরে দেখতে হয়। এই যে তুমি অন্ধকারে আমার সামনে বসে আছো তাও আমি তোমার ঠোঁটের হাসিটা কল্পনা করে নিচ্ছি।’

রাইদা সায়নের থেকে সরে বিছানা থেকে নেমে হাত তুলে চুলগুলো খোঁপা করার বৃথা চেষ্টা করে। হাতের চুড়িগুলো শব্দ করে রাইদা কোথায় আছে সেই উপস্থিতি সায়নকে জানান দেয়।

রুমের আলো না জ্বালিয়ে বাথরুমের আলো জ্বালিয়ে আলমারি থেকে নিজের জামা আর তোয়ালে নিয়ে বাথরুমে ঢুকে যায় রাইদা।
রাইদা বাথরুমে যেতেই রুমটা আবারো অন্ধকার হয়ে যায়।

মিনিট বিশেক পর রাইদা মেকআপ তুলে শাড়ি পাল্টে বাথরুম থেকে বের হয়। রুমের বিছানায় সায়নকে দেখতে না পেয়ে বারান্দায় যায়। বারান্দায় বসে সায়ন সিগারেট খাচ্ছিলো।

রাইদা বিরক্ত হয়ে সায়নের সামনে গিয়ে দাঁড়ায়। সায়ন মুখ তুলে তাকালে সায়নের থুঁতনি ধরে হাতে থাকা ভেজা কাপড়টা দিয়ে গালে শুঁকিয়ে থাকা হলুদ গুলো মুছতে থাকে।

‘আপনি কি কোনো বিষয় নিয়ে দুশ্চিন্তা করছেন? মানুষ যখন অতিরিক্ত চিন্তা করে তখনই এই রাতের বেলা সিগারেট খায়।’

রাইদার কথা শুনে সায়ন অবাক চোখে রাইদার দিকে তাকিয়ে সিগারেটটা নিভিয়ে ফেলে।

‘দুশ্চিন্তা না তোমায় নিয়ে একটু চিন্তা হচ্ছে যেটা সবসময়ই হয়।’,রাইদার হাত টেনে নিজের গালে রেখে বলে সায়ন।

‘আমাকে নিয়ে এতো চিন্তা করতে হবে না জলদি গিয়ে পাঞ্জাবি পাল্টে হাত-মুখ ধুয়ে আসেন ঘুমাবো।’,সায়নের পান্জাবির বোতামগুলো একটা একটা করে খুলে দিয়ে রাইদা বলে।

চেয়ার থেকে উঠে বরান্দার মেঝেতে বসে সায়ন সাথে রাইদার হাত টেনে পাশে বসায়। রাইদা বসতেই সায়ন রাইদার কোলে মাথা রেখে শুয়ে পড়ে।

‘বউ মাথাটা একটু টিপে দাও অনেক যন্ত্রণা করছে।’,রাইদার হাত টেনে নিজের কপালে রেখে সায়ন বলে।

সায়নের আবদারে মাথায় হাত বুলাতে শুরু করে রাইদা। চোখ বন্ধ করেই সায়ন নানান চিন্তায় মশগুল হয়ে যায়।


(চলবে..)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here