পর্বঃ৫১
গল্পঃ #সেদিন_দেখা_হয়েছিলো
লেখনীতেঃ #ঈশিতা_ইশা
(গল্প কপি পোস্ট সম্পূর্ণ নিষেধ।)
…
এই মাসে পিরিয়ডের ডেট মিস হওয়াতে রাইদা বিষয়টা পাত্তা দেয়নি। তার প্রায় অনিয়মিত পিরিয়ড হয়। কথায় কথায় পায়েলের সাথে বিষয়টা শেয়ার করলে সে বুদ্ধি দেয় প্রেগন্যান্সি টেস্ট করাতে। পায়েলের কথা মতো মনের সন্দেহ দূর করতে কিট এনেছিলো। জোরে জোরে শ্বাস নিয়ে আরেকটা কিট নেয় রাইদা কনফার্ম হওয়ার জন্য।
মিনিট কয়েক অপেক্ষা করার পর কিটটা চেক করে দেখে দুটো লাল দাগ নেই আছে একটা দাগ অর্থাৎ প্রেগন্যান্সি নেগেটিভ। এবার রাইদা পুরো কনফিউজড হয়ে যায় টেস্টের রেজাল্ট নিয়ে।
হাত মুখ ধুয়ে বাথরুম থেকে বের হয়। জামাকাপড় নিয়ে রেডি হয়ে বাসা থেকে বের হয় হাসপাতালের উদ্দেশ্যে। হাসপাতালে গিয়ে টেস্ট করায়। টেস্টের রেজাল্ট আগামীকালকে দিবে সেইজন্য রাইদা ভার্সিটিতে চলে যায়।
ক্লাস শেষ করে গাছতলায় এসে বসে। পায়েল এসে রাইদার পাশে বসে।
‘কিরে তোর কি মন খারাপ? ‘,পায়েল রাইদাকে জিজ্ঞেস করে।
পায়েলের প্রশ্ন শুনে রাইদা তাকায়।
‘তেমন কিছু না। ভালো লাগছে না কিছু।’,রাইদা জবাব দেয়।
‘বরের সাথে ঝগড়া করেছিস আবার?’
পায়েলের কথার প্রতিউত্তরে রাইদা হাসে।
‘এহেম এহেম তোমার ফোন কই? কল দিলাম রিসিভ করো না কেনো?’
সায়ন্তিকার গলা পেয়ে রাইদা তাকায়। রাইদা ব্যাগ হাতরে খুঁজতে থাকে কিন্তু ফোন খুঁজে পায় না।
‘আমি বোধহয় বাসায় ফোনটা ফেলে এসেছি।’,রাইদা জবাব দেয়।
‘বিকালে আমরা বিয়ের শপিংয়ে যাবো রেডি থেকো।’,সায়ন্তিকা রাইদাকে বলে।
‘আমরা মানে কে কে?’,রাইদা প্রশ্ন করে।
‘কে কে আবার আমি,তুমি,মা আর তোমার সাথে কেউ গেলে যাবে।’,সায়ন্তিকা জবাব দেয়।
সায়ন্তিকার কথার উত্তরে রাইদা কোনো জবাব দেয় না।
‘আমার ক্লাস আছে গেলাম আমি। বিকালে দেখা হবে।’,কথাটা বলে সায়ন্তিকা চলে যায়।
‘ভাগ্য করে এমন ননদ পেয়েছিস। মেয়েটাকে যতটা খারাপ ভেবেছিলাম ততটা খারাপ নয়।’,পায়েল বলে।
‘তোর কি খবর? রুবেল ভাইয়ার সাথে তোর বিষয়টা কতদূর গেলো?’,রাইদা পায়েলকে জিজ্ঞেস করে।
‘আমার গ্রাজুয়েশনটা শেষ হোক আপাতত আমরা এ বিষয়ে ভাবছি না।’,সায়ন্তিকা জবাব দেয়।
‘রুহির কি খবর? গত দুইদিন তো ওকে অনলাইনে দেখলাম না আবার ভার্সিটিতেও আসেনি।’
‘তোকে তো বলতেই ভুলে গেছি রুহির গ্রামে গেছে ওর মা নাকি অসুস্থ সেইজন্য ওর ভাই জলদি ওকে যেতে বলেছিলো।’
‘ফিরবে কবে কিছু বলেছে? অর্ক জানে এ বিষয়ে?’
‘অর্কই তো এ বিষয়ে জানালো আমাদের।’
‘অর্ক যে কি করছে কিছুই বুঝতে পারছি না। রুহি এবার ফিরলে ওদের দু’জনকে বসিয়ে এ বিষয়টা ক্লিয়ার করাবো।’
রাইদার কথা শুনে পায়েল চুপ করে থাকে। দু’জনে চলে যায় ল্যাব ক্লাসে। সেখানে বাপ্পি,ফাহিম,অর্ক ছিলো। ক্লাসের পুরোটা সময় অর্ক অন্য মনস্ক ছিলো। অর্ককে দেখে রাইদা দীর্ঘ শ্বাস ফেলে। পরিবারের জাতাঁকলে অর্ক পারছে না রুহিকে কাছে টানতে।
ক্লাস শেষ করে রাইদা বাসায় ফিরে আসে। বাসায় এসে গোসল সেরে মাথায় তোয়ালে জড়িয়ে খাবার খেতে বসে। রওশন আরা এসে রাইদার পাশে বসে খাবার বেড়ে দেয়।
‘সকালে জলদি জলদি বেরিয়ে গেলি কোনো সমস্যা হয়েছে?’,রওশন আরা রাইদাকে জিজ্ঞেস করে।
‘ক্লাস ছিলো গুরুত্বপূর্ণ তাই জলদি বেরিয়েছিলাম।’,রাইদা আমতাআমতা করে জবাব দেয়।
‘তোর শ্বাশুড়ি কল দিয়েছিলো বললো বিকালে তোকে নিয়ে বিয়ের কেনাকাটা করতে যাবে। তুই সায়নকে জিজ্ঞেস করিস আমরা কি আমাদের পছন্দে ওর জন্য কেনাকাটা করবো নাকি ও সাথে যাবে। যদি ও না যায় মাপটা দিতে বলিস।’
‘শপিংয়ে মারিয়াকে নিয়ে যাবো সাথে। আর সবাইকে দাওয়াত দিও তোমার আত্নীয় যারা আছে। কার্ড কালকে চলে আসবে।’
‘হ্যা এমনে কল দিয়ে বলেছি কার্ড আসলে তা তো দিবই। তুই খেয়ে বিশ্রাম কর বিকাল হলে তো আবার বের হতে হবে।’
রওশন আরার সাথে গল্প করতে করতে রাইদা খাওয়া শেষ করে।
খাওয়া শেষ করে রুমে এসে রাইদা দেখে মারিয়ে বসে আছে।
‘কিরে তোর আবার কি হলো?’,রাইদা মারিয়াকে জিজ্ঞেস করে।
‘মা বলতেছে তোমার বিয়ের আগেই আমরা চলে যাবো। ভাবলাম বিয়েতে মজা করবো সেটা আর হবে না।’,মারিয়া জবাব দেয়।
‘তোর মা বললেই কি যেতে দিবো নাকি। উনি গেলে যাক তুই থেকে যাবি। বিকালে আমরা শপিংয়ে যাবো রেডি থাকিস।’
রাইদার কথা শুনে মারিয়া খুশি হয়।
..
বিকাল হতেই রাইদার ফোন বেজে উঠে। ড্রেসিং টেবিলের সামনে বসে রাইদা চুল আঁচড়াচ্ছিলো। মারিয়া ফোনটা এনে রাইদার হাতে দেয়। সায়ন্তিকার কল দেখে সাথে সাথে কল রিসিভ করে রাইদা।
‘ভাবী হলো তোমার? আমরা তোমার বাসার নিচে জলদি আসো।’,সায়ন্তিকার ফোনের অপরপাশ থেকে বলে।
‘হ্যা নামছি পাঁচ মিনিট।’
কথাটা বলে রাইদা কল কেটে দেয়।
নিজেকে আরেকবার আয়নায় দেখে রুম থেকে বের হয় সাথে মারিয়াও বের হয়।
‘কিরে তোরা বের হচ্ছিস এখন?’,রওশন আরা রাইদাকে জিজ্ঞেস করে।
‘হ্যা সায়ন্তিকা কল দিয়েছে ওরা নিচে।’,রাইদা বলে।
‘ওদের তো গাড়ি আছে তাই না? গাড়ি করে যাবি?’,মাইমুনা রাইদাকে জিজ্ঞেস করে।
‘না পায়ে হেঁটে যাবো।’,বিরক্ত হয়ে রাইদা বলে।
মাইমুনা এসে মারিয়ার ওড়না ঠিক করে কিছু বলে দেয় কানে কানে। রাইদা ততক্ষণে দরজা খুলে বেরিয়ে গেছে। মারিয়া তার মায়ের কাছ থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে রাইদার পিছন পিছন বের হয়।
বিল্ডিং এর নিচে নেমে সায়নের গাড়ি দেখতে পায় রাইদা। এক মূহুর্তে মনে হয় সায়নের সাথে বুঝি এখন দেখা হবে। ধীর পায়ে গাড়ির দিকে এগিয়ে যায় রাইদা। গাড়ির পিছনের দরজা খুলে সায়ন্তিকা হাসিমুখে বের হয়। রাইদাকে ইশারাতে বলে গাড়িতে উঠতে। রাইদা গাড়িতে উঠে বসে। গাড়িতে সায়নকে না দেখে রাইদার মন খারাপ হয়ে যায়।
সায়ন্তিকা উঠে বসলে মারিয়া এরপর বসে। ড্রাইভার গাড়ি স্টার্ট দেয় তারই পাশের সিটে মিসেস রিনা বসে আছে।
জ্যাম ঠেলে গাড়ি এসে থামে শপিং মলের সামনে ততক্ষণে সন্ধ্যা নেমে এসেছে। সকলে গাড়ি থেকে বের হয়। মিসেস রিনা এসে রাইদার হাত ধরে হাঁটা দেয়। এমন ভাবে হাতটা ধরে রাখে যেনো রাইদা ছোট বাচ্চা। রাইদার কাছে বিষয়টা ভীষণ ভালো লাগে।
ঘুরেঘুরে মিসেস রিনা আর সায়ন্তিকা রাইদার জন্য কেনাকাটা করতে থাকে। রাইদাকে জিজ্ঞেস করলে রাইদা শুধু মাথা নাড়িয়ে সম্মতি দিচ্ছে।
কামিজের সেকশনে ঢুকে রাইদা কামিজ দেখছিলো। গোলাপি রঙের একটা কামিজ বের করে দেখে বুঝার চেষ্টা করে তাকে কেমন লাগবে।
‘এই রঙটা একটুও সুন্দর না এটা নাও।’
সায়নের গলা পেয়ে রাইদা পাশ ফিরে তাকায়। সাদা রঙের একটা কামিজ রাইদার সামনে ধরে হাসিমুখে দাঁড়িয়ে আছে সায়ন।
রাইদা নিজের হাতের কামিজটা নিয়ে হাঁটা দেয়। সায়নও নিজের হাতের কামিজটা নিয়ে রাইদার সাথে সাথে যায়।
কাউন্টারে গিয়ে রাইদা কামিজটা রাখে।
‘এই কামিজটা এখনই প্যাকেট করে দেন বিল আমি দিচ্ছি।’,কাউন্টারে দাঁড়ানো ছেলেটাকে বলে রাইদা।
রাইদার কান্ড দেখে সায়ন হেঁসে দেয়।
‘এটাও দেন তবে দু’টো এক সাথে দিবেন।’,সাদা রঙের কামিজটা দিয়ে সায়ন বলে।
‘একদম না আমি যেটা এনেছি সেটা শুধু আমাকে দিবেন। আরেক জনের জিনিস আমাকে দিবেন না।’,রাইদা রাগী স্বরে বলে।
‘চাকরি বাঁচাতে চাইলো দু’টোই একসাথে বিল করে ব্যাগে দেন।’,সায়ন বলে।
‘আপনাকে যেটা বললাম সেটা করেন আমিও দেখবো কে আপনার চাকরি খায়।’,রাইদা আবারো বলে।
রাইদা আর সায়নের কথা শুনে কাউন্টারে দাঁড়ানো ছেলেটা বিল না করে অসহায়ের মতো চেয়ে থাকে। কি হচ্ছে কিছুই বুঝতে পারছে না। দূর থেকে এসব দেখে সায়ন্তিকার আর মারিয়া হাসছে। মিসেস রিনা কাউন্টারে যেতে নিলে সায়ন্তিকা তাকে আঁটকায়।
‘আরো কাপড় আছে সেগুলোর সাথে এই দু’টোও বিল করে দিয়েন।’,সায়ন বলে।
রাইদা অগ্নি দৃষ্টিতে সায়নের দিকে তাকিয়ে শো-রুম থেকে বের হয়। সায়নের সাথে রাগ করে সে ভুলেই গেছিলো সে কাদের সাথে শপিং করতে এসেছে।
‘কই যাচ্ছো? অন্য কিছু কিনবা? কি লাগবে বলো।’
রাইদা হেঁটে চলে যাচ্ছিলো সায়ন এসে রাইদার হাত ধরে তাকে থামিয়ে কথাগুলো বলে।
‘কিছু লাগবে না আমার হাত ছাড়েন। এতদিন যখন দেখা করতে সময় পাননি আজকে না আসলেও চলতো।’
রাইদার কথায় সায়ন অভিমানের আভাস পায়। রাইদার হাত শক্ত করে ধরে হাঁটা দেয়। রাইদাকে নিয়ে মল থেকে বেরিয়ে হাঁটতে থাকে।
‘আমি আপনার সাথে যাবো না। আমি একাই বাসায় যেতে পারবো।’,রাইদা সায়নের বাহুতে ধাক্কা দিয়ে বলে।
‘আমরা তো তোমার বাসায় যাচ্ছি না।’,সায়ন রাইদার কানের কাছে মুখ এনে মৃদু স্বরে বলে।
‘তাহলে আমরা কোথায় যাচ্ছি?’
‘আমরা আমাদের ফ্ল্যাটে যাচ্ছি।’
‘ফ্ল্যাটে কেনো যাবো?’
‘আমার পাওনা বাকি আছে সেটা বুঝে নিতে।’
সায়নের কথা শুনে রাইদা চমকে তাকায়। সায়নের হাত থেকে নিজের হাত ছাড়িয়ে নিয়ে হাঁটা দেয়। একটা রিকশা ডেকে রিকশায় উঠে। সায়ন আসতে আসতে রিকশা চলতে শুরু করে। আরেকটা রিকশা ডেকে সায়ন চড়ে রাইদার চড়া রিকশার পিছু নেয়।
‘রি রিকশা থামাও কথা আছে তোমার সাথে। জেদ কেনো করছো আমার কথা শুনো।’,চিল্লিয়ে রাইদাকে বলতে থাকে সায়ন।
‘রিকশা কি থামামু?’,রিকশাওয়ালা রাইদাকে জিজ্ঞেস করে।
‘একদম না এই লোকটা আমাকে বিরক্ত করছে আপনি রিকশা থামালেই আমাকে কি*ড*ন্যা*প করে নিয়ে যাবে।’,রাইদা রিকশাওয়ালাকে বলে।
সায়নের রিকশা ততক্ষণে রাইদার রিকশার পাশাপাশি চলে এসেছে।
‘মামা রিকশা থামাও তোমাকে তিন গুন ভাড়া দিবো।’,সায়ন রাইদার চড়া রিকশাওয়ালাকে বলে।
‘আপনারে তো ভদ্র পোলার মতোন দেখা যায় তা রাস্তার মধ্যে মাইয়াগো বিরক্ত করেন কেন? আমি রিকশা থামামু না। বেশি করলে পুলিশে কল দিমু।’,রিকশাওয়ালা জবাব দেয়।
‘আরে মামা ও আমার বিয়ে করা বউ। আমার সাথে রাগ করে চলে যাচ্ছে তাই তো রাগ ভাঙাতে আসছি। আপনি রিকশা থামান।’,সায়ন অধৈর্য্য হয়ে বলে।
‘মামা আপনি কথা শুনবেন না চালাতে থাকেন।’,রাইদা বলে।
‘রি একবার খালি তোমাকে পাই তারপর এই কাজের মজা বুঝাবো।’,দাঁতে দাঁত চেপে বলে সায়ন।
রাইদা সায়নের কথায় পাত্তা না দিয়ে আরামসে বসে থাকে রিকশায়। রাস্তায় সিগন্যাল পড়লে রাইদার চড়া রিকশাটা সিগন্যালে থেমে যায়। এই সুযোগে সায়ন এসে রাইদার পাশে বসে রাইদার হাত চেপে ধরে।
‘বেশি নড়াচড়া করলে রাস্তার মধ্যে চুমু দিবো তখন সব মানুষ হা করে দেখবে। তুমি তো জানোই এসব বিষয়ে আমার শরম লজ্জা একেবারে নেই।’,রাইদার দিকে ফিরে ঠান্ডা গলায় কথাগুলো বলে সায়ন।
রাইদা নড়াচড়া বন্ধ করে চুপ করে বসে থাকে।
‘মামা রিকশা ঘুরাও। আমরা অন্য দিকে যাবো।’
সায়নের কথা মতো রিকশাওয়ালা রিকশা ঘুরায়।
আধা ঘন্টা পর রিকশা এসে থামে সায়নের ফ্ল্যাটের বিল্ডিং এর নিচে। রিকশা থেকে নেমে ভাড়া মিটিয়ে রাইদাকে নিয়ে হাঁটা দেয় সায়ন। এতক্ষণে একবারো রাইদার হাত ছাড়েনি সে।
লিফট দিয়ে আট তলায় উঠে নিজের ফ্ল্যাটের সামনে আসে। চাবি দিয়ে ফ্ল্যাটের লক খুলে রাইদাকে ইশারায় ভেতরে যেতে বলে। রাইদা নিজের হাতের দিকে তাকালে সায়নের মনে পড়ে সে রাইদার হাত ধরে রেখেছে। হেঁসে রাইদার হাত ছেড়ে দেয় সায়ন।
রাইদা ফ্ল্যাটে ঢুকে অন্ধকারেই শোবার ঘরে যায়। রুমের আলো জ্বালাতে নিলে সায়ন নিষেধ করে।
লাইটার দিয়ে একটা মোমবাতি জ্বালিয়ে একেএকে রুমে থাকা বাকি মোমবাতিগুলো সেই মোমবাতি দিয়ে জ্বালাতে শুরু করে। কয়েক মূহুর্ত পর পুরো ফ্ল্যাট মোমবাতির আলোতে আলোকিত হয়ে যায়।
রাইদা চারিদিকে তাকিয়ে নানান রঙের মোমবাতি দেখছে। ফুলদানিতে সাজানো রয়েছে তাজা ফুল। ফুলের সুবাসে ঘরটা প্রাণবন্ত লাগছে।
বারান্দায় গিয়ে দেখে পুরো বারান্দায় গাঁদাফুল দিয়ে সাজানো হয়েছে। রাইদা এসে ফুলগুলো ছুঁয়ে দেখে।
সায়ন এতক্ষণ রাইদাকে দেখছিলো এক কোণায় দাঁড়িয়ে। রাইদা বারান্দায় গেলে সেও বারান্দায় গিয়ে রাইদাকে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরে রাইদার গলায় মুখ লুকায়।
‘সরি বউ এই কয়দিন তোমাকে কষ্ট দেওয়ার জন্য। কি করবো বলো তুমি তো আমার এমনি কথা শুনো না তাই তো বাধ্য হয়ে আমাকে ঐসব করতে হয়েছে।’,রাইদার গলায় নাক ঘষে সায়ন কথাগুলো বলে।
সায়নের স্পর্শে রাইদা মৃদু কেঁপে উঠে। চোখ বন্ধ করে জোরে জোরে শ্বাস নেয়। রাইদা গলায় গভীর চুম্বন একেঁ দেয় সায়ন।
‘রাগ কমেছে? আমি ভেবেছিলাম তুমি আমার খোঁজ না পেয়ে বাসায় চলে আসবা কিন্তু উল্টো তুমি রাগ করে আমাকে কল দেওয়াই বন্ধ করে দিলে। বাধ্য হয়ে আবারো বেহায়ার মতো আমাকেই আসতে হলো। তোমার সাথে রাগ করে এই কয় দিন আমার কাটছিলোই না। তুমি ছাড়া রাতগুলো কেটেছে নির্ঘুম। সারাটা জীবন আমি তোমাতে বাঁধা পড়েছি বউ এখানে থেকে কেউ আর আমায় বাঁচতে পারবে না।’,রাইদার কাঁধে থুঁতনি রেখে সায়ন কথাগুলো বলে।
‘আমি প্রেগন্যান্ট।’
হুট করে রাইদার মুখে এমন কথা শুনে বিস্ময়ে সায়নের চোখ বড়বড় হয়ে যায়। রাইদাকে ছেড়ে সোজা হয়ে দাঁড়ায়। রাইদা ঘুরে তাকায় সায়নের প্রতিক্রিয়া দেখার জন্য।
‘কি বলছো এসব? তুমি প্রেগন্যান্ট কীভাবে? আমাদের মধ্যে তো তেমন কিছুই হয়নি শুধু একরাত তোমাকে কাছে পেয়েছিলাম তাও আমি….’
সায়ন আরো কিছু বলতে চাচ্ছিলো রাইদা এসে সায়নের মুখ চেপে ধরে।
‘চুপ আর একটাও কথা না। আমি তো এমনিই বললাম আপনার রিয়াকশন দেখতে।’
রাইদার কথা শুনে সায়ন দুষ্টু হাসি দেয়। মুখ থেকে রাইদার হাত সরিয়ে রাইদার কোমড় জড়িয়ে নিজের কাছে টেনে আনে।
‘তবে খবরটা সত্যি হলে মন্দ হতো না। অবশ্য বিয়ের পর এতো জলদি বাচ্চা হোক সেটা তো আমি কখনোই চাই না। বাচ্চা হলেই সে এসে তোমার ভাগ বসাবে আর আমি তোমার ভাগ কাউকে দিবো না।’
সায়নের বোকা বোকা কথা শুনে রাইদা হেঁসে দেয়। রাইদার হাসি দেখে সায়নও হাসিমুখে তাকিয়ে থাকে।
‘জামা পাল্টে আসো আমরা আজকে এখানেই থাকবো। আলমারিতে এখনো তোমার আর আমার জামা আছে আমি এনে রেখেছি।’
‘আমার জামা কাপড় তো আমি সব নিয়ে গেছি আবার কই পেলেন?’
‘কিনে এনেছি সেগুলো এই ফ্ল্যাটেই থাকবে। তুমি যখন একেবারে আমার কাছে চলে আসবা তখন মাঝে মাঝে আমরা এসে এখানে থাকবো তাই তোমার জন্য কয়েক সেট কাপড় এনে দেখেছি।’
‘কিন্তু আমি তো আপনার মায়ের সাথে শপিং এ বেরিয়েছিলাম সে আমায় খুঁজবেনা? তাছাড়া বাসায় না ফিরলে আমার মা তো কল দিবে তখন কি বলবো?’
‘সে বিষয়ে তোমার ভাবতে হবে না তোমার শ্বাশুরি সব ম্যানেজ করবে। তুমি যে এখানে আমার সাথে আসবা সেটা মা জানে সায়ন্তিকাও জানে সমস্যা নেই কোনো।’
‘তাহলে সব প্লান করেই করেছেন! এই কয়দিন তাহলে আমাকে ইগনোর করলেন কেনো?’
‘ইগনোর করে তোমাকে বুঝাতে চেষ্টা করলাম আমার কেমন লাগে যখন তুমি আমাকে ইগনোর করো।’
সায়নের কথা শুনে রাইদা সায়নের বুকে কিল দিয়ে হাসে। সায়ন চোখ মুখ কুঁচকে রাইদার গালে চুমু দেয়।
সায়নের থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে রাইদা চলে যায় জামা পাল্টাতে। জামা পাল্টে বেরিয়ে দেখে সায়ন টি-টেবিলে খাবার বাড়ছে।
‘বাহ! খাবারেরও ব্যবস্থা করেছেন। রান্নাটা নিশ্চয়ই আপনার মা করেছে?’
রাইদার কথা শুনে সায়ন ঘাড় ঘুরিয়ে তাকায়। এতক্ষণে রাইদা সায়নকে ভালো করে খেয়াল করে। মোমবাতির আলোতে সায়নের মুখের হাসি দেখে রাইদা স্তব্ধ হয়ে যায়। রাইদার ইচ্ছে করে সায়নের ওষ্ঠ জোড়া ছুঁইয়ে দিতে।
‘কি দেখছো বউ? চুমু খেতে ইচ্ছে করছে?’,রাইদার দিকে তাকিয়ে হেঁসে জিজ্ঞেস করে সায়ন।
সায়নের কথায় রাইদা থতমত খায়।
‘কি সব বলছেন আমি কি আপনার মতো নাকি? অসভ্য লোক।’
রাইদার কথা শুনে সায়ন জোরে জোরে হাসতে থাকে।
‘নিজের বউকে চুমু খেলে কেউ অসভ্য হয় জানতাম না। ঠিক আছে চুমু পরে খেয়ো এখন আগে রাতের খাবার খাও।’
‘আমার লাগবে না চুমু আপনার কাছেই রেখে দেন।’
কথাটা বলে রাইদা খেতে বসে।
‘শিওর? ভেবে বলো।’
‘ভেবেই বলেছি। খেয়ে ঘুমাবো টায়ার্ড লাগছে অনেক।’
রাইদার কথার কোনো জবাব সায়ন দেয় না। রাইদার পাশের সোফায় বসে খাবারের প্লেট রাইদার দিকে এগিয়ে দেয়। রাইদা খেতে শুরু করে।
খাওয়া শেষ করে রাইদা এসে বিছায় শোয়। মোমাবাতির আলোতে এখনো ঘরটা আলোকিত। রাইদার কাছে পরিবেশটা ভালোই লাগছে। সায়ন এসে ফ্যান ছেড়ে দেয়। বাতাসে একে একে মোমবাতি গুলো নিভে যেতে শুরু করে।
‘ফ্যান কেনো ছাড়লেন? মোমবাতিগুলো নিভে যাচ্ছে তো।’,রাইদা বলে উঠে।
‘নিভুক এখন মোমবাতির দরকার নেই। গরমে ফ্ল্যান ছাড়া ঘুমাতে তোমার কষ্ট হবে। ঘুমাও রাত হয়েছে অনেক।’
সায়নের জবাব পেয়ে রাইদা মুখ কালো করে শুয়ে থাকে। সায়ন এসে রাইদার পাশে শোয়। অনেকক্ষণ কেটে গেলেও সায়ন রাইদাকে জড়িয়ে না ধরায় রাইদা পাশ ফিরে সায়নের দিকে তাকায়। মৃদু আলোতে দেখে সায়নের চোখ বন্ধ।
‘সায়ন ঘুমাচ্ছেন? সায়ন!’,ধীর গলায় সায়নকে ডাক দেয় রাইদা।
রাইদার ডাকে সায়ন সাড়া না দিলে রাইদা ভেবে নেয় সায়ন ঘুমিয়ে গেছে।
নিজের বালিশ ছেড়ে রাইদা এসে সায়নের হাতের উপর নিজের মাথা রেখে শোয়। মুখ তুলে সায়নের দিকে তাকিয়ে থাকে। লোকটাকে আজকাল তার ভালো লাগে কিন্তু কেনো ভালো লাগে সেই কারণ খুঁজে পায় না। সায়নের গালে নিজের হাত রাখে। হুট করে সায়ন রাইদাকে আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে ধরে কাছে টেনে নেয়। হটাৎ কান্ডে রাইদা কিছু বলতে নিলে সায়ন রাইদার ওষ্ঠ জোড়া আঁকড়ে ধরে।
…
(চলবে..)
(শরীর খারাপ তারপরও আজকে গল্প দিলাম কারণ পরশু থেকে পরীক্ষা তাই কয়েকদিন গল্প পোস্ট গ্যাপ যাবে।)