পর্বঃ৫২
গল্পঃ #সেদিন_দেখা_হয়েছিলো
লেখনীতেঃ #ঈশিতা_ইশা
(গল্প কপি পোস্ট সম্পূর্ণ নিষেধ।)
…
হাসপাতালের রিসিপশনের দাঁড়িয়ে চিন্তায় নখ দিয়ে ফোনের কভারে আঁচড় কাটছে রাইদা। সকাল বেলা সায়ন তাকে ভার্সিটিতে রেখে গেছে। সায়ন যেতেই ক্লাস ফেলে রাইদা এসেছে রিপোর্ট নিতে।
‘রাইদা রাফায়েত আপনি?’
নার্সের ডাকে রাইদার ধ্যান ভাঙে।
‘জি আমিই।’,রাইদা জবাব দেয়।
‘আপনার প্রেগন্যান্সি টেস্টের রেজাল্ট নেগেটিভ তবে আপনি একবার গাইনেকোলজির ডাক্তারকে দেখিয়ে চেক-আপ করিয়ে নিয়েন।’,কথাটা বলে রাইদার হাতে একটা খাম দেয় নার্স।
রাইদা মাথা নাড়িয়ে খামটা হাতে নেয়। নার্স সেখান থেকে চলে গেলে রাইদা খামটা নিয়ে হাসপাতাল থেকে বেরিয়ে যায়। রিকশায় উঠে খামটা খুলে রিপোর্টে চোখ বুলায়। কাগজটা খামে ভরে ব্যাগে রেখে দেয়।
ভার্সিটিতে এসে বাকি ক্লাস গুলো সেরে বাসায় ফিরে আসে। বাসায় ফিরে খাওয়াদাওয়া সেরে মিসেস রিনা, মারিয়া,মাইমুনাকে নিয়ে বের হয় সায়নের জন্য বিয়ের কেনাকাটা করতে।
কেনাকাটা সেরে বাসায় ফিরে দৈনন্দিন কাজে ব্যস্ত হয়ে যায়।
….
দেখতে দেখতে চলে যায় এক সপ্তাহ। মান্নান রাফায়েত অফিস থেকে তিন দিনের ছুটি নিয়েছে মেয়ের বিয়ে উপলক্ষে। বিয়ের আয়োজন একা হাতে সব সামলাচ্ছে যদিও অর্ক,বাপ্পি,ফাহিম তাকে সাহায্য করছে। রাইদার ইচ্ছে অনুযায়ী বিয়ের আগের দিন ছোট করে গায়ে হলুদের ব্যবস্থা করা হয়েছে। কাছের আত্নীয় এবং প্রতিবেশীদের শুধু দাওয়াত দেওয়া হয়েছে অনুষ্ঠানে।
বিকাল বেলা রাইদাকে সাজাচ্ছে পায়েল। রাইদার পাশে মারিয়া,মনি আর রাইদার কাজিনরা বসে আছে।
‘রুহির সাথে যোগাযোগ করতে পারলি? ‘,রাইদা পায়েলকে জিজ্ঞেস করে।
‘না রুহির নাম্বার তো বন্ধ দেখাচ্ছে।’,পায়েল জবাব দেয়।
‘আমার ফোনটা কোথায়? আমি একটা কল দিয়ে দেখতাম।’,রাইদা বলে।
‘পরে কল দিস আগে সাজানো শেষ করি।’
পায়েলের কথা মতো রাইদা চুপ করে বসে থাকে। রুহির সাথে গত নয় দিন কারো কোনো যোগাযোগ নেই। কল দিলে নাম্বার বন্ধ দেখাচ্ছে। প্রথম প্রথম বিষয়টা কেউ আমলে নেয়নি কিন্তু এখন সবাই চিন্তায় পড়ে গেছে। রাইদা অসংখ্য বার অর্ককে বলেছে একটু গিয়ে রুহির গ্রামের বাড়িতে খোঁজ নিতে কিন্তু অর্ক বারবার জানিয়েছে সে বিয়েটা মিটে গেলে যাবে।
রাইদার সাজ শেষ হলে রুমেই তাকে বসিয়ে রেখে সকলে ছাদে চলে যায় স্টেজ দেখতে। বিছানা থেকে নেমে ফোনটা খুঁজতে থাকে রাইদা। ড্রেসিংটেবিলের উপর ফোনটা পেয়ে রুহির নাম্বারে ডায়াল করে। বরাবরের মতো রুহির নাম্বার বন্ধ। হতাশ হয়ে ফোনটা ছুঁড়ে ফেলে দেয়। খাটের কোনায় বাড়ি লেগে ফোনটা বন্ধ হয়ে ফ্লোরে পড়ে থাকে সেদিকে রাইদা ভ্রূক্ষেপ নেই।
রুমের মধ্যে অস্থির হয়ে পায়চারী করতে থাকে রাইদা। পায়েল রুমে প্রবেশ করে রাইদাকে দেখে এগিয়ে আসে।
‘কি হয়েছে তোকে এমন অস্থির লাগছে কেনো?’,রাইদার বাহু ধরে জিজ্ঞেস করে পায়েল।
‘অর্ককে ডাক দে কথা বলবো।’,রাইদা পায়েলকে বলে।
‘ একটু পর তোকে নিয়ে ছাদে স্টেজে যাবো তখন কথা বলিস এখন তো সবাই ব্যস্ত।’
‘না এক্ষুণি ডেকে আন কথা না বলে আমি রুম থেকে বের হবো না।’
রাইদার জেদের কাছে পায়েল হার মানে। রুম থেকে বেরিয়ে যায় অর্ককে ডাকতে।
কিছুক্ষণ পর অর্ক রুমে প্রবেশ করে পিছন পিছন পায়েলও আসে।
‘কিরে ডেকেছিস? কি বলবি জলদি বল আমার হাতে কাজ আছে।’,অর্ক রাইদাকে বলে।
‘রুহির কোনো খোঁজ নেই তোর চিন্তা হচ্ছে না?’,রেগে অর্ককে জিজ্ঞেস করে রাইদা।
‘চিন্তার কি আছে? রুহি তো বলেই গেছে ও গ্রামে যাচ্ছে ফিরতে দেরি হবে।’
‘একদম হেঁয়ালি কথা বলবি না। আজকে নয় দিন হলো রুহির সাথে কোনো যোগাযোগ নেই চিন্তায় আমার কিছু ভালো লাগছে না। আমার বিয়ে হচ্ছে আর রুহির উপস্থিত নেই এটা আমি মানতে পারছি না। আমার কত স্বপ্ন ছিলো তোরা সকলে আমার বিয়েতে উপস্থিত থাকবি।’
রাইদার কথা শুনে অর্ক রাইদার মাথায় হাত রাখে।
‘তুই চিন্তা করিস না রুহি খুব জলদি ফিরে আসবে। ওর মা হঠাৎ অসুস্থ হয়ে গেছে তাই ও একটু সে সব নিয়ে ব্যস্ত।’,অর্ক বলে।
‘কি বলিস আমাকে তো এসব বলিসনি। তোর সাথে কথা হয়েছে?’,রাইদা ব্যস্ত গলায় জিজ্ঞেস করে।
‘হ্যা সকালে কল দিয়েছিলো বললো ওর ফোনটা নষ্ট হয়ে গেছে। খুব জলদি ও ফিরে আসবে।’
অর্কের কথা শুনে রাইদা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে।
‘নে শুনলি তো এবার মন খারাপ করিস না আর। আজানের পর তোকে স্টেজে নিয়ে যাবো।’,পায়েল রাইদাকে বলে।
‘রুহি আবার কল দিলে আমার সাথে কথা বলিয়ে দিবি।’
রাইদার কথায় অর্ক মাথা নাড়িয়ে রুম থেকে বেরিয়ে যায়।
রাইদা গিয়ে বিছানায় বসে পায়েল রাইদার চুলগুলো ঠিক করতে থাকে।
সন্ধ্যার পর রাইদাকে ধরে ছাদে নিয়ে যায় পায়েল, মারিয়া আর মনি। ছাদে এসে রাইদা বসে। রাইদার বিয়ে উপলক্ষে গ্রাম থেকে তার নানু, ছোট খালাও এসেছে।
রাইদা স্টেজে বসার পর সকলে এসে ছবি তুলতে শুরু করে। ছবি তোলা শেষ হলে নাচের পর্ব শুরু হয়। নাচের পর্ব শেষ হলে একে একে রাইদাকে হলুদ ছোঁয়ায়। পায়েল হলদু নিয়ে বাপ্পির মুখ ভরে লাগায়। অর্ক আর ফাহিমও বাদ যায় না।
রাইদা হাসিমুখে পুরো সময়টা উপভোগ করছে। সকলকে এতো আনন্দ করতে দেখে তার ভীষণ ভালো লাগছে। হলুদ লাগানো শেষ হতেই পায়েল এসে আবারো পারফর্ম করে।
‘আপা ঘরে চলেন এখানে বেশিক্ষণ থাকলে আপনের মাথা ব্যথা করবে।’,মারিয়া রাইদার হাত ধরে বলে।
‘আরে এসবে আমার সমস্যা নেই। এর থেকে লাউড মিউজিকে আমি পারফর্ম করি আমার অভ্যাস আছে।’,রাইদা জবাব দেয়।
‘আপনের লইগ্গা একটা উপহার আইছে দেখবার চাইলে চলেন।’
‘কিসের উপহার কে দিয়েছে?’
‘সায়ন ভাই দিছে।’
‘কি বলিস! কখন দিলো? আচ্ছা চল দেখি।’
রাইদা স্টেজ থেকে নেমে মারিয়ার সাথে যায়। লিফটে উঠে চার তলায় নামে। লিফটের দরজা খুলতেই মারিয়া আর রাইদা বের হয়।
‘আরে আমি তো ভুইলাই গেছি খালাম্মা আমারে কইছিলো তাই লইগ্গা সরবত নিতে। আপনে ঘরে যান আমি আইতাছি।’
কথাটা বলে মারিয়া আবার লিফটে চড়ে ছাদে চলে যায়।
রাইদা কিছুই না বুঝে ফ্ল্যাটের দিকে পা বাড়ায়। ফ্ল্যাটের দরজা খোলা তাই সে সরাসরি ঢুকে আশেপাশে তাকায়। পুরো ফ্ল্যাট খালি তা বুঝতে অসুবিধা হয় না রাইদার। বাসার সব মানুষ ছাদে এমনকি বিল্ডিং এ যারা ছিলো তাদেরকেও হলুদে দাওয়াত দেওয়া হয়েছে।
মাথা থেকে শাড়ির আঁচলটা সরিয়ে নিজের ঘরের দিকে যায় রাইদা। অন্ধকারে রুমে প্রবেশ করে হাত থেকে চুড়ি গুলো খুলে বিছানায় রাখে। চুড়ি গুলো খুলে রুমের আলো জ্বালাতে সুইচবোর্ডের দিকে এগিয়ো যেতে নিলে দরজা লাগানোর শব্দে পিছনে ঘুরে তাকায়। বারান্দা দিয়ে আসা বৈদ্যুতিক আলোতে শুভ্র রঙের পাঞ্জাবিতে মানবটার মুখ স্পষ্ট হয়।
বড়বড় কদম ফেলে রাইদার সামনে এসে হাতজোড়া টেনে ধরে চুমু খায় সে।
‘ফোন বন্ধ কেনো তোমার? ইচ্ছে করছে তোমাকে আর তোমার ফোনকে মাথায় তুলে আছাড় দেই। তুমি তো আমার একমাত্র তোমাকে তো আছাড় দিতে পারবো না তাই তোমার ফোনটাকে আজকে আছাড় মেরে লন্ডভন্ড করে দিবো।’
সায়নের কথা শুনে রাইদা আলতো হাসে।
‘হাসছো কেনো আমি কিন্তু হাসির কিছু বলেছি? কতক্ষণ ধরে তোমার অপেক্ষা করছিলাম এই অন্ধকারে আর তুমি এলে মাত্র। শালিকাকে ঘুষ দিলাম তাও কাজটা এতো দেরি করে করলো।’
‘তার মানে মারিয়াকে আপনি বলেছেন আমাকে রুমে আনতে? তাই তো বলি মারিয়া হুট করে আমাকে নিচে কেনো আসতে বলছে বারবার।’
‘আমি ছাড়া আর কে আছে যে তোমাকে দেখতে চাইবে? তোমায় দেখেছি এখন আমাকে একটু হলুদ লাগিয়ে দাও আমি চলে যাবো। বেশি দেরি করলে আমার আবার যেতে ইচ্ছে করবে না। জানো তো বউকে ছেড়ে যেতে আমার কষ্ট হয়।’
সায়নের কথা শুনে রাইদা নিজের গাল থেকে হলুদ নিয়ে সায়নের গালে লাগিয়ে দেয়। হলুদের ছোঁয়া পেয়ে সায়নের মুখে হাসি ফুটে উঠে। রাইদার মাথায় হঠাৎ দুষ্টু বুদ্ধি চাপে। দু’হাতের তালুতে হলুদ ঘষে তা সায়নের পাঞ্জাবিতে লাগিয়ে দেয়। রাইদার হাতের ছাপ সায়নের পাঞ্জাবিতে স্পষ্ট। রাইদার এহেন কান্ডে রাগ করার বদলে সায়ন হাসতে থাকে। রাইদাকে টেনে জড়িয়ে ধরে।
‘থাকো বউ চলে যাচ্ছি কালকে এসে একেবারে তুলে নিয়ে যাবো। আর একটা রাত তোমাকে ছাড়া পার করতে হবে এরপর একরাতও আমাকে ছেড়ে তোমাকে কোথাও থাকতে দিবো না এমনকি তোমার বাবার বাসায় এসেও থাকতে পারবা না।’
সায়নের কথা শুনে রাইদা মাথা তুলে তাকায় সায়নের দিকে। রাইদার ললাটে ওষ্ঠ ছুঁইয়ে দেয় সায়ন। রাইদাকে ছেড়ে দরজা খুলে বেরিয়ে চলে যায় সে।
রাইদা বারান্দায় গিয়ে দাঁড়ায়। সায়ন বিল্ডিং থেকে নেমে গাড়িতে উঠে বাসায় রওনা দেয়। বারান্দায় দাঁড়িয়ে পুরোটা দেখে রাইদা। সায়ন চলে গেলে রুমে এসে বসে।
রাত বাজে বারোটা হলুদের অনুষ্ঠান ততক্ষণে প্রায় শেষ। রাইদা আরেকবার ছাদে এসেছিলো তবে বেশিক্ষণ থাকেনি চলে গেছে আবারো রুমে। রুমে এসে শাড়ি পাল্টে মেকআপ তুলে বিছানায় এসে বসে। ঘুমে বারবার হাই তুলতে থাকে।
রওশন আরা একটা প্লেট নিয়ে রুমে প্রবেশ করে। প্লেট হাতে রাইদার পাশে এসে রওশন আরা বসে।
‘কিছু বলবা? এতো রাতে রুমে এসেছো।’,রাইদা রওশন আরাকে জিজ্ঞেস করে।
‘সারাদিন তো তেমন কিছু খাসনি তাই তোকে একটু খাওয়াতে আসলাম। খাবারটুকু খেয়ে ঘুমা। হা কর আমি খাইয়ে দিচ্ছি।’,রওশন আরা ভাত মেখে রাইদার মুখের সামনে তুলে ধরে বলে।
রাইদা হেঁসে খেতে শুরু করে।
একটু পর মান্নান রাফায়েত রুমে প্রবেশ করে। সে ও এসে রাইদার পাশে বসে রাইদার মাথায় হাত বুলিয়ে দেয়।
‘দেখতে দেখতে মেয়েটা কবে যে এতো বড় হয়ে গেলো বুঝতেই পারলাম না। সেদিনের সেই ছোট্ট মেয়েটার বিয়ে হয়ে যাচ্ছে ভাবতেই অবাক লাগে আমার।’,মান্নান রাফায়েত বলে।
‘আমি তো মেয়েটাকে কাছেই পেলাম না। তবে তোর বাচ্চা হলে তাকে আমার কাছে দিবি আমিই মানুষ করবো তোর বাচ্চাকে।’,রওশন আরা রাইদাকে বলে।
রওশন আরার কথা শুনে রাইদা কাশতে শুরু করে। মান্নান রাফায়েত উঠে পানির বোতল এনে রাইকে দেয়। পানি পান করে রাইদার কাশি থামে।
‘আমি জানি তোমার শ্বশুড় বাড়ির লোকজন অনেক ভালো তারপরও যদি কখনো কোনো সমস্যা হয় আমাকে একটা কল দিয়ে বলবা আমি সবসময় তোমাকে সাহায্য না করতে পারলেও সুপরামর্শ অবশ্যই দিবো। মনে রাখবা যতদিন তোমার বাবা-মা আছে তুমি একা না।’
মান্নান রাফায়েতের কথা শুনে রাইদা তাকে জড়িয়ে ধরে।
‘বাবাকে যদি কোনো কথা বলতে না পারিস আমাকে বলবি নিরদ্বিধায়। এটা তোর বাসা তুই যখন খুশি চলে আসবি কারো অনুমতি লাগবে না। নতুন পরিবারে যাচ্ছিস নিজের জেদের উপর কন্ট্রোল করতে শেখ। বড়দের সাথে কখনোর খারাপ আচরণ করবি না কিংবা এমন কিছু বলবি না যা শুনে তারা কষ্ট পায়। সকলের সাথে মিলেমিশে থাকবি সবসময়।’,রওশন আরা রাইদাকে বলে।
রওশন আরার কথা শুনে রাইদা মাথা নাড়ায়। খাওয়ানো শেষ করে রওশন আরা আর মান্নান রাফায়েত রুম থেকে চলে যায়।
রাইদা বিছানায় শুয়ে চোখ বন্ধ করে থাকে। কিছুক্ষণের মধ্যে সে ঘুমিয়ে যায়। মারিয়া আর ছোট খালা এসে রাইদাকে ঘুমাতে দেখে চুপচাপ শুয়ে পড়ে।
….
পরেরদিন অর্থাৎ বিয়ের দিন ভোর বেলা সকলে উঠে কাজ শুরু করে দেয়। রাইদাকে সকাল আটটায় ঘুম থেকে তুলে মেহেদী পরিয়ে দিচ্ছে দু’টো মেয়ে যাদের পায়েল এনেছে। রাইদা বসে ঝিমাচ্ছেআর মেয়ে দুটো নিজেদের কাজ করছে।
মেহেদী পরানো শেষ হলে দেখা যায় রাইদা সোফায় মাথা ঠেকিয়ে ঘুমাচ্ছে। রাইদাকে ঘুম থেকে ডাকা হয় দু’ঘন্টা পর।
ঘুম থেকে উঠে রাইদা হাতমুখ ধুয়ে নাশতা খেতে বসে। সকলের সাথে আড্ডা আর গল্পে সময় কাটাতে শুরু করে। দুপুর হয়ে আসলে রওশন আরা রাইদাকে খাইয়ে রুমে পাঠায় সেখানে তাকে সাজাতে পার্লার থেকে মেকআপ আর্টিস্ট এসেছে।
রাইদার বিয়ের সময়টা ছিলো আসরের নামাজের পর। সাজগোছ শেষ হলে সকলে মিলে কমিউনিটি সেন্টারে রওনা দেয়। কমিউনিটি সেন্টারে যেতে যেতে আসরের আজান দিয়ে দেয়।
রাইদাকে এনে স্টেজে বসানো হয়। ক্যামেরা ম্যানরা রাইদার ছবি তুলতে শুরু করে একে একে। মেয়েদের চিৎকার শুনে রাইদা বুঝে যায় বরযাত্রী এসেছে। সব মেয়েরা রাইদাকে ফেলে চলে যায় গেট আটঁকাতে। রাইদার ইচ্ছে করে গিয়ে দেখতে গেটে কি হচ্ছে।
সায়নের সাথে তার বন্ধুরা,কাজিন এবং সায়ন্তিকা এসেছে। আরমান শেখ এবং মিসেস রিনা এসেই ভেতরে গেছে মান্নান রাফায়েতের সঙ্গে।
গেটে টাকা নিয়ে পায়েল তুমুল ঝগড়া করে রুবেলের সাথে। রুবেল কিছুতেই পায়েলের দাবি মানবে না আর পায়েলও নিজের দাবি না আদায় করে ভেতরে প্রবেশ করতে দিবে না।
‘পঞ্চাশ এর কম দিলে গেট থেকে সরবো না। এখন সিদ্ধান্ত আপনাদের। ‘,পায়েল বলে।
‘মাথা খারাপ নাকি পঞ্চাশ হাজার টাকা দিবো! এতো দেওয়া যাবে না বিশ হাজার নাও।’,রুবেল বলে।
‘অসম্ভব এক টাকাও কম নিবো না। ভাইয়া দেরি করছেন সামান্য কিছু টাকার জন্য? এমন করলে আপনার বউ কিন্তু দিবো না। ভাইয়া টাকা গেলে টাকা পাবেন কিন্তু বউ গেলে বউ পাবেন না।’,পায়েল সায়নকে বলে।
এক সময় রুবেল না মানলেও সায়ন পায়েলের দাবি মেনে নেয়।
‘রুবেল দে না যত চাচ্ছে। শুধু শুধু সময় নষ্ট করে আমার বিয়েতে দেরি করাচ্ছিস।’,সায়ন রুবেলকে ধমক দিয়ে বলে।
রুবেল মুখ কালো করে পকেট থেকে একটা বান্ডিল বের করে পায়েলকে দেয়। টাকা নিয়ে পায়েল খুশিতে ভেতরে চলে যায়। রাইদার মা এসে সায়নকে মিষ্টি আর সরবত খাওয়ায়।
ফিতা কেটে সায়নকে প্রবেশ করতে দেওয়া হয়। ভেতরে ঢুকে সায়ন শুধু চাতক পাখির ন্যায় তাকিয়ে থাকে রাইদাকে দেখার আশায়। স্টেজে এসে হতাশ হয় সেখানে রাইদা নেই। সায়ন আসার আগেই রাইদাকে সেখান থেকে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে।
সায়নকে এনে স্টেজে বসানো হলে সে মুখ কালো করে বসে থাকে। একটু পর গান বেজে উঠলে সামনে তাকায়। গানের সাথে তাল মিলিয়ে হাত নাড়াতে নাড়াতে রাইদা স্টেজের দিকে এগিয়ে আসছে। রাইদাকে লাল বেনারসিতে দেখে সায়ন বসা থেকে দাঁড়িয়ে যায়। বুকের বাম পাশে হাত দিয়ে অজ্ঞান হওয়ার অভিনয় করে সায়ন, এসব রাইদা দেখে সায়নকে চোখ রাঙায়। ইশারায় রাইদাকে সায়ন বোঝায় সুন্দর লাগছে।
রাইদা এসে সায়নে পাশে বসে সায়নও বসে। কাজি এসে আবারো বিয়ে পড়ায় এরপর বিয়েটা রেজিস্ট্রি হয়।
বিয়ের অনুষ্ঠান শেষ হতে হতে রাত হয়ে যায় বেশ। এত কিছুর মধ্যে ও রাইদার বারবার রুহিকে খুঁজছিল আর পায়েলকে রুহির কথা জিজ্ঞেস করছিলো। পায়েল কোনো উত্তর না দিয়ে বারবার এড়িয়ে যায় বিষয়টা। অর্ক তো রাইদার সাথে ছবি তুলে আর সামনেই আসেনি।
বিদায়ের সময় রাইদা কান্না করেনি কিন্তু যখন তার মা-বাবাকে জড়িয়ে ধরেছিলো তার খারাপ লাগা কাজ করছিল। সকলের থেকে বিদায় নিয়ে গাড়িয়ে এসে বসে রাইদা। সায়ন্তিকা এসে রাইদার সাথে বসতে চাইলে সায়ন ধমক দিয়ে সায়ন্তিকাকে অন্য গাড়িতে পাঠিয়ে দেয়। মুখ কালো করে সায়ন্তিকা চলে যায়।
সায়ন্তিকা যেতই গাড়ি স্টার্ট দিলে উইন্ডো খুলে মাথা বের করে সকলকে বিদায় জানায় রাইদা।
গাড়িটা সকলের আড়াল হতেই রাইদা ঠিক হয়ে বসে। সায়ন এগিয়ে এসে রাইদার হাতটা টেনে শক্ত করে ধরে। রাইদা চোখ বন্ধ করে সায়নের কাঁধে মাথা রাখে।
..
‘আমাদের সত্যিটা বল অর্ক। রুহি কোথায়?’,পায়েল অর্ককে জিজ্ঞেস করে।
রাইদা যেতেই বাপ্পি,পায়েল,ফাহিম এসে অর্ককে ঘিরে ধরেছে।
‘আমি তো বললাম রুহি..’
অর্ককে পায়েল থামিয়ে দিয়ে বলে,’আমাদের মিথ্যা বলিস না প্লিজ। রুহির বিষয়টা ক্লিয়ার করে বল।’
‘কি বলবো আমি? রুহি একেবারে চলে গেছে এখানে থেকে। ও যেদিন গ্রামে গেছে তার পরেরদিন ওর বিয়ে ছিলো। ও জানতো ওর বিয়ে ঠিক হয়েছে আর ও বিয়েটা করতেই গ্রামে গেছে। আমাকে জানিয়েছে ওর বিয়ের আধা ঘন্টা আগে।’,কথাগুলো বলে অর্ক নিজের ফোন থেকে একটা মেসেজ বের করে পায়েলের হাতে দেয়।
“অর্ক তুই প্রিয় নাকি অপ্রিয় জানি না তবে তোর জন্য আমার মধ্যে আলাদা একটা স্থান রয়েছে তা কখনোই বলা হয়নি আর কখনোই বলা হবে না। তোকে ভালোবাসি কিনা জানি না তবে ভীড়ের মধ্যে তুই পাশে থাকলে আমার নিজেকে নিরাপদ লাগে। আমি সত্যিই ভাগ্যবতী তোদের মতে বন্ধু পেয়েছি। আমার মতো গ্রামের ইনট্রোভার্ট মেয়েটাকে তোরা আপন করে বন্ধুর মর্যাদা দিয়েছিস এটা আমার জীবনের বড় পাওয়া। তোদের সকলকে ভীষণ মিস করবো। ভালো থাকিস আর রাইয়ের পাশে সবসময় থাকিস। আধা ঘন্টা পর আমার বিয়ে এখন আমি বধু সেজে বসে আছি। যার সাথে বিয়ে হচ্ছে লোকটা বেশ বড়লোক। আমার ভাইকে মোটা অঙ্কের টাকা দিয়ে সাহায্য করেছে তার বদলে ভাই আমাকে তার হাতে তুলে দিচ্ছে। আমার তো কেউ নেই যার জন্য বিয়েটা আটঁকাবো তাই বিয়েটা করে সবাইকে মুক্তি দিচ্ছি। ছোট্ট।এই পৃথিবীতে একদিন হয়তো তোর সাথে দেখা হবে কিন্তু সেদিন আমি অন্যের স্ত্রী থাকবো।
সময়ের মতো মানুষ একবার জীবন থেকে গেলে আর কখনোই ফেরত আসে না।”
রুহির পাঠানো মেসেজটা পড়ে পায়েল অশ্রু সিক্ত নয়নে অর্কের দিকে তাকায়।
‘আমি রুহিকে হারিয়ে ফেলেছি সারাজীবনের জন্য। এখন আমি কি করবো বল? আমার ভুলে আমি রুহিকে হারালাম। আমার উপর রাগ করে বহুদূর চলে গেছে। নিজের পরিবারের কথা রাখতে গিয়ে ভালোবাসার মানুষটাকে হারিয়ে ফেললাম।’
কান্নারত অবস্থায় কথাগুলো বলতে বলতে রাস্তায় বসে পড়ে অর্ক।
‘এই জন্য তুই রাইদার থেকে এসব লুকিয়েছিস যাতে ও ঝামেলা না করে বিয়েটা ঠিক মতো করে কিন্তু আমাদের তো বলতে পারতি?’,বাপ্পি বলে।
‘তোর সাথে বেশ হয়েছে। মেয়েটা থাকতে এক বিন্দু ভালোবাসা দিসনি। শেষ পর্যন্ত তোর সাথে রাগ করে আমাদের সকলকে ছেড়ে চলে গেলো। রুহির যাওয়ার পিছনে তুই একমাত্র কারণ। তোকে আমি কখনোই ক্ষমা করবো অর্ক কখনোই না।’
কথাগুলো পায়েল সেখান থেকে চলে যায়।
অর্ক মাথা নিচু করে অশ্রু বিসর্জন দিতে থাকে। ফাহিম আর বাপ্পি নির্বাক হয়ে অর্কের দিকে তাকিয়ে থাকে।
…
(চলবে..)
(গল্প নিয়ে সমালোচনা করবেন অবশ্যই তবে এমন ভাবে কমেন্ট করবেন না যা পড়ে আমার খারাপ লাগে। অনেক ঘন্টা ব্যয় করে লেখার পর আপনাদের কটু কমেন্ট পড়ে ভীষণ খারাপ লাগে আর গল্পই দিতে ইচ্ছে করে না। আপনাদের মন মতো কাহিনী না হলে আপনারা এমন ভাবে আমাকে বলেন যেনো আমি আপনাদের মন মতো কাহিনী লিখতে বাধ্য! আমার নিজস্ব একটা চিন্তা আছে সেই অনুযায়ী গল্পটা লিখতে দিলে আমি ভালো কিছু উপহার দিতে পারবো নইলে সত্যিই আমার পক্ষে গল্পটা শেষ করা অসম্ভব।)