পর্বঃ১৩
গল্পঃ #সেদিন_দেখা_হয়েছিলো
লেখনীতেঃ #ঈশিতা_ইশা
(কার্টেসি ছাড়া গল্প কপি নিষেধ।)
…
রাইদার চিৎকারে বাড়ির আনাচেকানাচে যে যেখানে ছিলো চিৎকারের উৎস খুঁজতে চলে আসে সিঁড়ির সামনে।
যামিনী তার হবু বরের সাথে কথা বলছিলো পাশে বসে শ্রেয়াও দুষ্টুমি করছিলো।চিৎকারের শব্দ শুনে দু’জনেই বিছানা থেকে নেমে সিঁড়ির দিকে দৌড় দেয়।সিঁড়ির নিচে রাইদাকে পা ধরে কাঁদতে দেখে যামিনীর সিঁড়ি দিয়ে নামতে থাকে।
ততক্ষণে মনিরা বেগম এসে রাইদাকে ধরে রেখেছে।
‘কি হইছে বেতা পাইছো?’,মনিরা বেগম রাইদার পায়ে হাত দিয়ে বলে।
‘রাই আবার কি হলো?আর ইউ ওকে?’,যামিনী রাইদার পাশে বসে ওর অবস্থা বোঝার চেষ্টা করছে।
রাইদাকে ঘিরে সিঁড়ির সামনে ছোট খাটো জটলা পেকেছে। বাড়ির ছোট বড় সকলে চলে এসেছে।
রুবেল আর আরাফ উঠান থেকে দৌড়ে এসে জটলা সরিয়ে রাইদার সামনে আসে।
‘কি হয়েছে রাই?পড়ে গেছো?’,আরাফ রাইদার ধরে রাখা পায়ে হাত দিয়ে বলে।
‘সিঁড়ি দিয়ে উঠছিলাম তখন পিছলে পড়ে বাম পায়ের আবারো ব্যথা পেয়েছি।’,শব্দহীন ভাবে ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কেঁদে বলে রাইদা।
আরাফ খেয়াল করে দেখে রাইদার পায়ের এক অংশ নীল হয়ে গেছে।বোঝাই যাচ্ছে পায়ে ভালো ভাবেই ব্যথা পেয়েছে রাইদা।
‘তোমরা জটলা পাকিয়েছো কেনো?সরো সব।’,সায়ন বিরক্ত হয়ে বলে।
সবাই সরে যায়।রাইদা বাম পা চেপে চোখ বন্ধ করে আছে ব্যথায়।
‘তুই কি ডাক্তার? যা ডাক্তার ডেকে আন জলদি।’,আরাফকে ধমকে বলে সায়ন।
‘হ্যা তাই তো ডাক্তার আনতে হবে।আরাফ চল বাজারে গিয়ে ডেকে আনি।’,রুবেল তাড়া দিয়ে বলে।
আরাফ রাইদার বন্ধ করা চোখের দিকে তাকিয়ে দেখে চোখ থেকে কয়েক ফোঁটা অশ্রু গড়িয়ে পড়ছে। রাইদাকে রেখে তার যেতে ইচ্ছে করছে না কিন্তু জাহিদ এই মূহুর্তে বাসায় না থাকায় যেতে হবে।
‘আরাফ যা দেরি করছিস কেনো?দেখছিস তো মেয়েটা অনেক ব্যথা পেয়েছে।যত দেরি করবি তত সমস্যা বাড়বে।’,যামিনী বলে উঠে।
রুবেল আর আরাফ বেরিয়ে যায় বাজারের উদ্দেশ্যে।
‘ওরে এখানে বসিয়ে রাখলে হবে না।বিছানায় নিয়ে শুইয়ে দিতে হবে।’,সায়ন রাইদার সামনে হাঁটু গেঁড়ে বসে বলে।
‘কিন্তু এই অবস্থায় ও তো সিঁড়ি দিয়ে উঠতে পারবে বলে মনে হয় না।’,যামিনী চিন্তিত হয়ে বলে।
‘এক কাম করো সিঁড়ির লগের একটা ঘরে মাইয়াডারে নিয়ে শোয়াও।’,সায়নের নানা বলে।
‘হ এইহান থেইকে এই রুমে যাইতে সময় লাগবো না।’,মনিরা বেগম সায় দিয়ে বলে।
‘আমার রুম খালি নিয়ে যা সেখানে।’,সায়ন যামিনীকে বলে।
‘না না আমি উপরে উঠতে পারবো।’,হুট করে রাইদা বন্ধ চোখ খুলে বলে।
‘ব্যথায় ঠিক মতো কথা বলতে পারছে না সে নাকি সিঁড়ি বেয়ে উঠবে।’,সায়ন রাইদার দিকে রাগী দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলে।
‘আমি পারবো একটু ধরো আমায়।’,রাইদা যামিনীর হাত ধরে বলে।
যামিনী রাইদার হাত ধরে দাঁড়া করানোর চেষ্টা করে ফল স্বরুপ রাইদা দাঁড়াতে গিয়ে পড়ে যেতে নেয়, মনিরা বেগম এসে রাইদাকে ধরে।
রাইদা মাথা তুলে দেখে সায়ন এখনো ভয়ঙ্কর দৃষ্টিতে তার দিকে তাকিয়ে আছে মনে হচ্ছে চোখ দিয়ে গিলে খাবে।
‘কি হলো যাও উপরের ঘরে।এই ছাড় তো ওরে যেতে দে উপরে।দেখি ওর কত সাহস একা একা উপরে যাক।’,সায়ন রাগ সংযত করে বলে।
‘রাই জেদ না করে আপাতত নিচের রুমে চলো পরে উপরে নিয়ে যাবনি তোমাকে।’,যামিনী রাইদাকে বলে।
রাইদা যামিনীর কথার প্রেক্ষিতে আর কিছু বলে না। যামিনী, মনিরা বেগম মিলে রাইদাকে ধরে নিয়ে যেতে চেষ্টা করে কিন্তু এক পা ও রাইদা ফেলতে পারে না ব্যথায়।
‘সায়ন ও বোধহয় হেঁটে যেতে পারবে না।কি করবো এখন?’,যামিনী সায়নের দিকে তাকিয়ে বলে।
‘তো আমি কি করবো? ও না হেঁটে যেতে পারবে বল এখন যেতে।’,সায়ন বিরক্ত হয়ে বলে।
‘বাবা শোনো মাইয়াডারে একটু ধইরা ঘরডায় নিয়ে যাও বেতায় দেহো না কি কষ্ট পাইতাছে।আমরা তো ওরে নিয়া যাইতে পারতাছি না।’,মনিরা বেগম সায়নের হাত ধরে বলে।
‘হেঁটে তো যেতে পারবে না এখন আমি কীভাবে ওরে নিবো?’,সায়ন মনিরা বেগমকে জিজ্ঞেস করে।
‘কোলে করে নে আর তো উপায় নেই।’,ফোঁড়ন মেরে বলে শ্রেয়া।
সায়ন বোধহয় এই কথাটা শোনার অপেক্ষায় এতক্ষণ ছিলো, মুখ ঘুরিয়ে রাইদার দিকে তাকায় আর রাইদা শ্রেয়ার কথার প্রতিবাদ করতে নিলেই সায়ন এসে রাইদাকে কোলে তুলে নেয়।
রাইদা চোখ বন্ধ করে নেয় তার ইচ্ছে করছে না সায়নের মুখটা দেখে লজ্জায় পড়তে। রাইদাকে নিয়ে নিজের রুমের বিছানায় শুইয়ে দেয় সায়ন।
‘রুমে ভীড় না করে সবাই নিজের কাজে যান।’,সায়ন দরজার সামনে দাঁড়িয়ে বলে।
‘হ সব যাও,আমি পানি গরম কইরা আনি।গরম পানির সেক দিলে বেতনার জায়গায় আরাম পাইবো।’,কথাগুলো বলে মনিরা বেগম রান্নাঘরের দিকে যায়।
শ্রেয়া আর যামিনী বসে আছে রাইদার পাশে।চোখ বন্ধ করে শুয়ে আছে রাইদা।সায়ন চেয়ার টেনে সেটা উল্টো দিকে ঘুরিয়ে দরজার সামনে বসেছে,হাত দু’টো একটার উপর আরেকটা রেখে মাথা ঠেকিয়ে রাইদার দিকে দৃষ্টি ফেলে রেখেছে।
..
‘সায়ন ভাই রাই আপারে পুরা হিরোর মতোন কোলে উডাইছে।ছিনেমায় যেমনে নায়ক নায়িকারে কোলে তুলে একদম সেমই ভাবে।মনে হইলো আমি বাস্তবের নায়ক নায়িকা দেখতাছি।আমার না যা শরম করতাছিলো।’,শিমু তার বান্ধবীর সাথে রসিয়ে রসিয়ে কথাগুলো বলছিলো উঠানে বসে।
ডাক্তারকে নিয়ে আরাফ আর রুবেল ঘরে প্রবেশ করছিলো তখনই শিমুর বলা কথাগুলো আরাফের কানে আসে। শিমুর পানে একবার তাকিয়ে আরাফ ঘরের দিকে যায়।
ডাক্তার রাইদার ক্ষত স্থান চেক করতে থাকে। ব্যথায় রাইদা যামিনীর বুকে মুখ লুকিয়ে আছে।যামিনী রাইদার পিঠে হাত ডলে তাকে ভরসা দিচ্ছে।
‘মাংসে ব্যথা লাইগা রক্ত জমাট বাঁধছে। ঔষধ খাইলে আর গরম পানির সেক দিলে ঠিক হইয়া যাইবো আশা করি।আপাতত আমার কাছে তাই মনে হইতাছে।তয় চেষ্টা করবেন একটা এক্স-রে করাইতে।’,ডাক্তার কিছু ঔষধের নাম লিখে দিয়ে বলে।
‘এখানে এক্স-রে করানোর ব্যবস্থা আছে?’,আরাফ প্রশ্ন করে।
‘না শহরে যাইতে হইবো।আইচ্ছা আমি গেলাম আপানাদের মধ্যে কেউ আমার লগে গিয়ে ঔষধ গুলা নিয়া আহেন।এখনই এই ঔষধডা খাওয়াই দেন আর বাকিগুলা আইনা খাওয়াইয়েন।’,আরাফের হাতে একটা ঔষধ দিয়ে বলে ডাক্তার।
‘আমি যাচ্ছি চলেন আপনি।’,রুবেল ডাক্তারকে বলে।
‘চাচা আপনার ভিজিট।’,সায়ন ডাক্তারের সামনে পাঁচশত টাকার নোট ধরে বলে।
‘আমি দিচ্ছি তুই রাখ।’,আরাফ বলে উঠে।
আরাফের কথা শুনে সায়ন তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে আরাফের দিকে তাকায়।
ব্যথার মধ্যেও রাইদা বুঝতে পারে ভিজিট নিয়েও অজান্তে দুই বন্ধু কিনা ঝামেলা করে বসে।সব কিছুর মূল যে সে এটা ভেবে নিজেকে দু’টো থাপ্পড় দিতে ইচ্ছে করে তার।
‘আপু ব্যথা করছে।’,যামিনীকে ছেড়ে ব্যথায় কাতরাতে থাকে রাইদা।
আরাফ দৌড়ে এসে যামিনীর হাতে ঔষধ আর পানি দিয়ে বলে খাইয়ে দিতে।ততক্ষণে ডাক্তারকে টাকা দিয়ে বিদায় করেছে সায়ন। রাইদা দুই বন্ধুর ঝামেলা এড়াতে ঢং টা করে কারণ সায়ন যদি এই মূহুর্তে আরাফকে নিয়ে সন্দেহ করে তাহলে রাইদার আর ঢাকা ফেরা হবে না।
মনিরা বেগম একবার গরম পানি করে বোতলে ভরে দিয়ে গেছে আবারো গরম পানি করতে।এবার গরম পানিতে তোয়ালে ভিজিয়ে তা দিয়ে ব্যথার স্থান মুছে দিচ্ছে।
রুম থেকে সকলকে বের করে দিয়েছে যামিনী।শ্রেয়া,আরাফ,সায়ন দরজার সামনে দাঁড়িয়ে আছে।রুবেল ঔষধ এনে দিতেই আরাফ তা যামিনীর হাতে দিয়ে যায়।শ্রেয়া উঠে রুমে চলে যায়।আরাফ আর রুবেল গিয়ে বসার ঘরে বসে। আরাফের ইচ্ছে করছে রাইদার পাশে বসতে কিন্তু ইচ্ছে থাকলেও উপায় নেই।
ঔষধ খেয়ে চোখ বন্ধ করে শুয়ে ছিলো রাইদা।যামিনী রাইদার পায়ে গরম পানির বোতল ধরে রেখেছিলো। একটু আরাম পেতেই ঘুমে তলিয়ে যায় রাইদা।
..
রাইদার ঘুম ভাঙে কপালে কারো স্পর্শে।ঘুমের মধ্যে হালকা নড়েচড়ে উঠে সে।ঘুম কাতর চোখ গুলোকে টেনে খোলার চেষ্টা করে।শেষে ঘুমের সাথে যু*দ্ধ করে চোখ খুলে রুমে অন্ধকার ছাড়া কিছু দেখতে পায় না। বালিশের পাশে হাতড়ালে মনে পড়ে তার ফোন তো সানজিদার রুমে চার্যে দিয়েছিলো। শোয়া থেকে আস্তে আস্তে উঠে বসে।নড়াচড়া করতেই পায়ের ব্যথার জায়গায়টা নিজের উপস্থিত জানান দেয়। তবে ঔষধ খাওয়ার কারণে ব্যথা অনেকটা কমেছে।
‘সানজিদা,শিমু,সোনিয়া আন্টি।কেউ কি আছেন এখানে? একটু হেল্প করুন আমায়।’,দরজার দিকে তাকিয়ে রাইদা ডাকতে থাকে।
দরজা খুলে রুমে প্রবেশ করে সুইচ টিপ দেয় কেউ।হুট করে চোখে আলো পড়াতে চোখ বন্ধ করে ফেলে রাইদা।
‘জি আপা কন।’,সানজিদা বলে।
সানজিদার কন্ঠ পেয়ে রাইদা তাকায়।
‘সবাই কোথায়?’,সানজিদাকে জিজ্ঞেস করে রাইদা।
‘সবাই তো উডানে বইছে।আপনার খালা,নানী হেরাও আইছে।’,সানজিদা বাহিরে ইশারা করে বলে।
‘ওহ!আমাকে নিয়ে যেতে পারবা?ব্যথা কমেছে আমি উঠানে যেতে পারবো।’,সানজিদার দিকে হাত বাড়িয়ে বলে রাইদা।
‘কিন্তু আপা ভাই তো বকবে মোরে।’,সানজিদা মুখ কালো করে বলে।
‘কোন ভাই?আমি বলছি আমার পায়ের ব্যথা কমেছে চলো তুমি।’,রাইদা উল্টো ধমক দিয়ে বলে।
‘সায়ন ভাই কইছিলো আজকে রাইতে আপনারে এই বিছানা থেইকা না নড়াইতে।’,সানজিদা এসে রাইদার হাত ধরে বলে।
‘তোমার ভাই যা খুশি বলুক আমার পা আমার থেকে সে কি ভালো জানবে নাকি।’,রাইদা সানজিদার কাঁধে হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে বলে।
রুমের মধ্যে সানজিদার কাঁধে হাত দিয়ে কয়েক কদম হাঁটার পর রাইদা বুঝে সে হাঁটতে পারবে।
‘বাহ্!ডাক্তারের ঔষধ তো ভালোই কাজ করেছে।ব্যথা অনেকটা কমেছে।আশা করি কালকে সকালে একদম সুস্থ হয়ে যাবো।’,রাইদা হাসি দিয়ে বলে।
সানজিদা রাইদাকে ধরে ধীরে ধীরে ঘর পেরিয়ে বসার ঘরের দিকে নিয়ে যায় সেখানে রুবেল ঢুকছিলো।
‘আরে রাই উঠলা কেন তুমি?ব্যথা কমছে? ‘,রুবেল জিজ্ঞেস করে।
‘হ্যা ভাইয়া কমেছে।’,রাইদা হেঁসে বলে।
‘সানজিদা এমমে আয় জলদি।’,রান্নাঘর থেকে সানজিদাকে ডাকে।
‘তুমি যাও আমি রাইকে নিয়ে যাচ্ছি।’,রুবেল হাত বাড়িয়ে রাইদার হাত নিজের কাঁধে রাখে।
‘হ্যা যাও তুমি আমি ভাইয়ার সাথে যাচ্ছি।’,সানজিদাকে বলে রাইদা।
সানজিদাও চলে যায় রান্নাঘরে।
‘রাই তোমার কোনো বইন আছে?’,রুবেল জিজ্ঞেস করে।
‘না কেনো ভাইয়া?’,রাইদা প্রশ্ন করে।
‘আহারে আইজ একটা বইনা নাই দেইখা তুমি এই রুবেলের মতন চমৎকার দুলাভাই মিস করলা।তোমারে শালী বানানোর বহুত ইচ্ছা জাগছিলো কিন্তু পূর্ণ হইলো না।’
রুবেলের কথা শুনে জোরে হাসতে থাকে রাইদা।উঠানের সকলের নজর যায় ঘরের দরজার দিকে।রাইদাকে হাসতে দেখে মারিয়া,যামিনী বসা থেকে উঠে এগিয়ে আসে।
রাইদাকে এনে একটা ফাঁকা চেয়ারে বসিয়ে দেয় যামিনী।
‘তুমি উঠলা কেনো রাই?কিছু লাগলে বলতা আমরা দিয়ে আসতাম।’,যামিনী রাইদার মাথায় হাত রেখে বলে।
‘কয়টা বাজে আপু?’,রাইদা জিজ্ঞেস করে।
‘বেশি না রাইত সাড়ে আটটা,কেনো আপু আপনার বিজনেস মিটিং আছে কোনো?’,রুবেল প্রশ্ন করে।
‘আরে না ভাইয়া।মারু গিয়ে নানু আর খালামনিকে ডাক দে আর শোন উপরে সানজিদার রুমে আমার ফোনটা সেটা এনে দে।’
রাইদার কথায় মারিয়া মাথা নাড়িয়ে ঘরের ভেতরে চলে যায়।
‘ব্যথা কমেছে আর একা একা ভেতরে ভালো লাগছিলো না তাই বাহিরে হাওয়া খেতে এলাম।’,যামিনীর দিকে তাকিয়ে বলে রাইদা।
‘ভালো করেছো তবে সাবধানে তোমাকে চলাচল করতে হবে।অলরেডি বাম পায়ে দুইবার ব্যথা পেয়েছো।’,আরাফ রাইদাকে সতর্ক করে বলে।
আরাফের কথা শুনে তখনকার ঘটনা মনে পড়ে রাইদার।সায়নের রুম থেকে বের হয়ে আশে পাশে দেখছিলো কেউ দেখছে কিনা তারপর সিঁড়ি দিয়ে উঠার সময় সায়নের রুমের দিকে তাকিয়ে ছিলো তার খালি মনে হচ্ছিলো সায়ন এই বুঝি রুম থেকে বেরুবে।সিঁড়ির দিকে না তাকিয়ে পা ফেলে ফলাফলা দুই সিঁড়ির উপর থেকে নিয়ে পড়ে যায়।রাইদার কপাল ভালো বেশি উপর থেকে পড়েনি না হলে পা টা ভেঙে বসে থাকতো।
‘কিছু ভাবছো রাই?’,যামিনী রাইদার কাঁধে হাত রেখে জিজ্ঞেস করে।
‘না আপু।কিছু বলছিলেন?’,রাইদা হালকা হেঁসে জিজ্ঞেস করে।
‘কি ব্যপার রাই বইসা আছো এখানে আর তোমার মন কই উড়তাছে?কতডি প্রশ্ন করলাম আমার গলা শুকিয়ে মরুভূমি হইয়া গেছে।’,রুবেল নিজের গলায় হাত দিয়ে বলে।
‘রাই তোর পায়ের কি অবস্থা? হুনলাম দুইবার ব্যাতা পাইছিস?’,সাবিনা রাইদার পাশে বসে বলে।
‘ব্যথা তো একটু কম আশা করি বাড়ি ফিরতে পারবো।’,রাইদা সাবিনার হাত ধরে বলে।
‘না না যতদিন না তুমি পুরা সুস্থ হইবা এই বাড়ি থেইকা এক পা ও বাহিরে দিবা না।’,মনিরা বেগম পিছন থেকে বলে।
সানজিদা এক ট্রে চা এনে সবার হাতে একটা করে কাপ দিতে থাকে।আরাফের হাতে কাপ দিতে নিলে সে ট্রে থেকেই কাপ তুলে নেয়।আরাফের পাশে বসা রুবেল সানজিদার হাতের কাপটা নেয় এতে সানজিদা মুখ কালো করে ফেলে।
‘মামি আসলে আমার কিছু কাজ আছে তো তাই ফিরতে চাচ্ছিলাম।কাজ শেষ করে আমি আবার ফিরবো।’,রাইদা মনিরা বেগমকে বুঝিয়ে বলার চেষ্টা করে।
‘আমার কথাই শ্যাষ কথা এক্ষণ যদি চেয়ারম্যান সাব আইসাও কয় লাভ নাই।’,মনিরা বেগম গম্ভীর মুখ করে বলে।
‘হ ঠিকই কইছে মনিরা।’,আলেয়া বেগম সায় দিয়ে বলে।
‘পোলাপান এখানে থাকুক চল আমরা ভেতরে গিয়ে রান্না সারি আর গল্প করি।’,সাবিনাকে ডেকে বলে মনিরা।
‘তোমার লগে পরে আলাপ করুমনি।’,রাইদাকে কথাটা বলে সাবিনা উঠে চলে যায়।
মারিয়া ফোন এনে রাইদার হাতে দেয়। রাইদা দীর্ঘ শ্বাস ফেলে সামনে তাকালে দেখে সায়ন বসে আছে তার বরাবর তাবে দৃষ্টি ফোনে।সায়নের বাম পাশে বসেছে আরাফ আর তার পাশে রুবেল। সায়নের ডান পাশে বসেছে শ্রেয়া,শ্রেয়ার পাশে সানজিদা,সানজিদার পাশে যামিনী আর যামিনীর পাশে রাইদা।রাইদার পাশেই মারিয়া আর শিমু বসা।
জাহিদ এসে একটা গিটার সায়নের হাতে দেয়।রাইদা অবাক হয়ে তাকিয়ে বোঝার চেষ্টা করছে হচ্ছে টা কি।
সায়ন গিটারের তার ঠিক করে টুংটাং শব্দ তুলে গিটার বাজাতে শুরু করে।জাহিদ একটা চেয়ার টেনে শিমুর পাশে বসে।
‘উনি গান করবেন?’,যামিনীর কানে কানে জিজ্ঞেস করে রাইদা।
‘হ্যা ও তো আমাদের বন্ধুমহলের আরজিৎ সিং।একবার কথায় কথায় বলেছিলো এক মেয়েকে ইম্পেস করার জন্য গিটার শিখেছে তবে এত বছরে আজও আমরা সেই মেয়েকে দেখলাম না।ওর গাড়ির ডিঁকিতে গিটার থাকে জাহিদকে দিয়ে আনালাম যাতে ও আমাদের গান শোনায়।’,ফিসফিস করে রাইদার কানে বলে যামিনী।
সায়নের গিটারের শব্দ ধীরে ধীরে বাড়তে থাকে।চোখ বন্ধ করে গিটারে সুর তুলে চলেছে সে। রাতের নির্জনতা, ঝিঁঝি পোকার ডাক,ঠান্ডা হাওয়া বইছে আর সাথে সায়নের তোলা গিটারের সুর পুরো পরিবেশটা অন্য রকম করে তুলেছে।সকলে আরেক জগতে চলে যায়।আরাফ দুই হাত ভাজ করে রাইদার দিকে তাকিয়ে আছে। রাইদার দৃষ্টি মাটির দিকে।
গলা ঝেরে চোখ খুলে সায়ন গাইতে শুরু করে।
‘পারবো না আমি ছাড়তে তোকে,
পারবো না আমি ভুলতে তোকে,
পারবো না ছেড়ে বাঁচতে তোকে,
হয়ে যা না রাজি একবার।’
রাইদার দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে গাইতে থাকে সায়ন।সায়নের গাওয়া প্রতিটা শব্দ যেনো রাইদার শরীরে কাঁটার মতো বিঁধতে থাকে।মুখে তুলে সায়নের দিকে তাকালে দেখে সায়ন তার দিকেই তাকিয়ে গাইছে,চোখ সরিয়ে ফেলে রাইদা।
সায়নের গান শেষ হলে রাইদা বাদে সবাই হাত তালি দেয়।রাইদা অপ্রস্তুত হয়ে যায় এমন পরিস্থিতিতে।
‘পুরাই ভার্সিটির পরিবেশে চলে গেছিলাম।’,রুবেল বলে উঠে।
‘একদম সেই ক্যান্টিনের আড্ডা আর সায়নের গিটারের সুর সব কিছু প্রচন্ড মিস করি।’,রুবেলের কথার সাথে একমত হয়ে বলে শ্রেয়া।
‘এরপর কে কোথায় থাকবো ঠিক নেই।’,আরাফ বলে।
সায়নের ফোন বেজে উঠে।পকেট থেকে ফোন বের করে সায়ন দেখে তার মা কল দিয়েছে।
‘তোরা গল্প কর আমি আসছি।’,বসা থেকে দাঁড়িয়ে সায়ন বলে।
‘আন্টি?’,যামিনী প্রশ্ন করে সায়নকে।
‘হ্যা মা কল দিয়েছে।গত এক সপ্তাহ ধরে কল দিয়ে বলছে মেয়ে দেখতে যাবে আমি কবে ফিরবো।তাকে ফাইনাল সুখবর দিতে হবে।’,শেষের কথাটা বলে ঠোঁট চেপে হাসি দেয় সায়ন।
ফোন নিয়ে পুকুর পাড়ে চলে যায় সায়ন। এই দিকটা অন্ধকার তাই উঠান থেকে কেউ সায়নকে দেখতে পাবে না তবে উঠানে আলো থাকায় সায়ন স্পষ্ট সব দেখতে পায়।
‘সানজিদা তো ভালো গান পারে ও গাক একটা গান।’,আরাফ সানজিদার দিকে তাকিয়ে বলে।
‘আপনি জানলেন কীভাবে?’,চোখ জোড়া ছোট করে আরাফের দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করে রাইদা।
‘আরে গাইতে শুনেছিলাম।সানজিদা গান ধরেন।’,আরাফ জবাব দেয়।
সানজিদা গাইতে শুরু করে কিন্তু রাইদা মুখ গোমড়া করে বসে থাকে।পায়ে ব্যথা থাকায় সে পারফর্ম করে দেখাতে পারছে না,ব্যথা না থাকলে এতক্ষণে উঠানে ভিড় জমিয়ে দিতো সে।
‘হ্যা মা বলো।’,পুকুর পাড়ে দাঁড়িয়ে ফোন কানে বলে সায়ন।
‘তুই আমার কল ধরিস না কেন ? এ কেমন ছেলে আমি পেটে ধরলাম খোদা!এই তুই কি ঠিক করেছিস আমার কোনো কথাই কোনো কালে শুনবি না?’,ফোনের অপর পাশ থেকে ন্যাকা কান্না করে বলতে থাকে রিনা।
‘আহা মা কান্না থামিয়ে আসল কথা বলো।’
‘শোন আমার বান্ধবীর বোনের মেয়ের ছবি দিয়েছে একটু আগে।আমি দেখলাম কি য়ে সুন্দর, তোকে ছবি পাঠাবো তুই একটু দেখ।’
‘তোমাকে না আমি আগেই নিষেধ করছি আমার জন্য মেয়ে দেখতে হবে না।কতবার এক কথা বলবো? ‘,সায়ন বিরক্ত হয়ে বলে।
‘বাবা শোন ঐ মেয়েকে কি তুই খুঁজে পাবি নাকি?কত বছর হয়ে গেছে এতোদিনে মেয়ের বিয়ে হয়ে বাচ্চার মা হয়ে বসে আছে আর ঐ মেয়ের মাকে আমার একদম পছন্দ না।’
রিনার কথায় সায়ন হেঁসে দেয়।
‘বেয়াদপ ছেলে মায়ের কথার দাম দেয় না আবার হাসে।এই দেখ সায়ন্তিকা তোর ভাই আমার কোনো কথাই কানে নেয় না।’,রিনা আবারো ন্যাকা কান্না করতে থাকে।
‘মা তোমার ছেলের বউকে পেয়েছি।সে এখনো সিঙ্গেল। বাচ্চা তো দূর বয়ফ্রেন্ডও নেই,আমার রাস্তা একদম ক্লিয়ার।আমি ঢাকা ফিরলেই সব ব্যবস্থা করবা। ‘,রাইদা দিকে তাকিয়ে সায়ন বলতে থাকে।
কেউ হয়তো হাসির কিছু বলেছে সেটা শুনে রাইদা হাসতে হাসতে মারিয়ার গায়ে ঢলে পড়ে দূর হতে এই দৃশ্য দেখে সায়ন বুকের বা পাশে হাত দিয়ে হাসতে থাকে।
‘এই তুই মেয়েটাকে কই পেলি?মানে এত বছর পর এই মেয়ে বের হলো কই থেকে?’
‘যেখানে প্রথম দেখেছিলাম সেখানেই।’
‘মেয়ে কি এবার রাজি?মানে ও রাজি হলে তো ওর চৌদ্দ গুষ্টির পরোয়া করি না।ছেলের জন্য না হয় ছেলের দ*জ্জা*ল শাশুড়ীকে সহ্য করলাম সমস্যা নেই।’
‘তোমার হবু বউমাকে নিয়েই যত সমস্যা। সে এখনো আগের ঘটনার জন্য প্রচুর ক্ষেপে আছে আমার উপর।আমি তো ভেবেছিলাম সব ভুলে গেছে কিন্তু তার গোল্ড ফিশ মেমোরিতে সবই মনে আছে।’
‘দেখ বাপ যেমনে পারিস মেয়েটাকে রাজি করে আমার পুত্র বধু কর।কীভাবে তুই ওর রাগ ভাঙাবি সেটা তোর ব্যাপার।ওর রাগ করার কারণও যথাযথ,তুই যা করছিস তাতে আমারি তোরে মারতে মন চায়।’
‘এখন থেকেই পুত্র বধুর পাল্লা ভারী করছো মা? ঠিক আছে আমি দেখছি কি করা যায়।সায়ন্তিকা কই?’
‘তোর বোন কি জানি কাজে ব্যস্ত বললো পরে কল দিবে।’
‘আচ্ছা রাখছি তাহলে।’
‘এই সায়ন বউয়ের একটা ছবি দে দেখি।’
‘না মা একেবারে সামনাসামনি দেখবা। ‘
‘ঠিক আছে ছবি যখন দিবি না কি আর করার।রাখছি তাহলে।’
কল কেটে সায়ন হাসিমুখে রাইদার দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকে তারপর মুখ গম্ভীর করে উঠানে এগিয়ে যায়।
..
খাবারের টেবিলে সকলে বসে আছে।মহিউদ্দিন অনেকদিন পর সবাইকে পেয়ে বেশ আনন্দিত।
‘রাইদা মামনি তোমার পায়ের ব্যথা কমেছে?বেশি হাঁটাহাটি করো না তাহলে হিতে বিপরীত হবে।’,মহিউদ্দিন রাইদার দিকে তাকিয়ে বলে।
‘না মামা পেইন ক্লিয়ার খেয়ে ব্যথা কমেছে।আশা করি রাতটা বিশ্রাম নিলে একদম সুস্থ হয়ে যাবো।’,জোর পূর্বক হেঁসে বলে রাইদা।
‘তুমি এ বাড়িতে থেকে সুস্থ হও তারপর নানুবাড়ি ফিরে যেয়ো,এটা তো তোমারও বাড়ি।সায়নের নানা বাড়ি মানে তোমারও নানাবাড়ি।’
মহিউদ্দিনের এমন কথায় রাইদা কি জবাব দিবে খুঁজে পায় না।পাশে বসা সায়নের দিকে তাকিয়ে দেখে সায়নের মুখভঙ্গির কোনো পরিবর্তন নেই।
‘তা কেমন ঘুরলা তোমরা?’,মহিউদ্দিন জিজ্ঞেস করে।
‘আরে মামা দারুণ ঘুরেছি।হাতে সময় থাকলে আরো কিছুদিন থকতাম।’,রুবেল জবাব দেয়।
মনিরা বেগম সকলের প্লেটে খাবার বেড়ে দিচ্ছিলো। রাইদার বাম পাশে বসেছে সায়ন আর ডানপাশে মারিয়া।মারিয়া তো এখানে বসতে চায়নি রাইদাই জোর করে বসিয়েছে।আরাফ বসেছে রাইদার বিপরীতে তারই ডান পাশে বসেছে রুবেল।বাম পাশে বসেছে যামিনী, শ্রেয়া আর সানজিদা।
মহিউদ্দিন রুবেল আর আরাফের সাথে গল্প করছে।
রাইদার প্লেটে মারিয়া খাবার দিচ্ছিলো। সায়নের কাশির শব্দে রাইদা বিরক্ত হয়।অনেকক্ষণ ধরে সায়ন কাশি দিচ্ছে।চোখ ঘুরিয়ে সায়নের দিকে তাকায় দেখে সায়ন চুপচাপ খাচ্ছে তবে সায়নের বাম হাত রাইদার দৃষ্টি কাড়ে।সায়ন বাম হাতে রাইদার পায়েলটা নিয়ে হাতটা নিচু করে পায়েলটা ধরে রেখেছে।হাত নিচু করে রাখায় একমাত্র পাশে বসা রাইদা ছাড়া কেউ পায়েলটা দেখতে পায় না।
রাইদা অবাক হয়ে যায় তার সন্দেহ মিলে গেছে এটা বুঝতে পেরে।
‘চোর একটা।’,বিরবির করে রাইদা বলে।
‘কবে জানি মন চুরি করে ফেলি।’,ধীর গলায় বলে সায়ন।
‘একবার শুধু পা টা ঠিক হোক তারপর দেখাবো মজা।’,দাঁতে দাঁত চেপে বলে রাইদা।
‘আম ওয়েটিং’,সায়ন জবাব দেয়।
‘আপা কিছু বলছো?’,মারিয়া রাইদাকে জিজ্ঞেস করে।
‘না কিছু বলিনি তো।পা টা বোধহয় ব্যথা করছে তাই আর কি।’,মারিয়ার কথার জবাবে রাইদা বলে।
মারিয়ার থেকে চোখ সরিয়ে আরাফের দিকে তাকায় রাইদা।আরাফ কথা বলায় এতো ব্যস্ত রাইদার দিকে তাকাচ্ছে ও না। বিরক্ত হয়ে রাইদা একটা কাজ করে বসে।
‘ভাইয়া ডালের বাটিটা দেন তো।’,আরাফকে ডাক দিয়ে বলে রাইদা।
ভাইয়া ডাক শুনে আরাফ মুখটা আমাবস্যার মতো করে ডালের বাটিটা এগিয়ে দেয়।
আরাফের মুখের অবস্থা দেখে রাইদা বেশ খুশি হয়।আরাফ গল্প করা বন্ধ করে খেতে থাকে।খাওয়ার মাঝে মুখ তুলে তাকালে দেখে রাইদা ইশারায় কিছু বলছে। রাইদা হাতের আঙুলের ইশারায় বোঝায় খাওয়ার পর দেখা করার জন্য। আরাফ রাইদার ইশারার কোনো জবাব দেয় না।অভিমান করে বাকি খাবার খেয়ে সকলের আগে উঠে যায় টেবিল থেকে। রাইদা আরাফের এমন ব্যবহারে কি রিয়াকশন দিবে বুঝে উঠতে পারে না। গালে হাত দিয়ে খেতে থাকে রাইদা।
…পর্বঃ১৪
গল্পঃ #সেদিন_দেখা_হয়েছিলো
লেখনীতেঃ #ঈশিতা_ইশা
(কার্টেসি ছাড়া গল্প কপি নিষেধ।)
…
চেয়ারে বসে রাইদার ঝিনুকের পায়েলটা ডান হাতে নিয়ে ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে দেখছে সায়ন।মুখ তুলে বিছানার দিকে তাকায়।রাইদার এই রুম থেকে যাওয়ার পর বিছানা যে রকম এলোমেলো হয়ে ছিলো সেভাবেই আছে।সায়নের চোখে এখনো বিছানায় শোয়া রাইদার ঘুমন্ত মুখটা ভাসছে। সন্ধ্যা কয়েকবার রুমে উঁকি দিয়ে রাইদাকে দেখে গেছে।ঘুমন্ত অবস্থায় রাইদাকে দেখে বার বার মনে হচ্ছিলো লাগেজে ভরে নিয়ে এখান থেকে পালাতে।
শেষবার রুমে ঢুকে নিজেকে সংযত না করতে পেরে রাইদার কপালে চুমু খেয়ে মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়েছিলো।রাইদা নড়েচড়ে উঠতেই চোরের মতো পালিয়ে উঠানে গিয়ে এমন ভান ধরেছিলো যেনো কিছুই হয়নি।
টেবিলের উপর থেকে সিগারেটের প্যাকেট হাতে নিয়ে বিছানার দিকে তাকিয়ে প্যাকেটটা আবার টেবিলে রেখে দেয়। প্যাকেটার পাশের পায়েলটা রাখে। ধপ করে বিছানায় উবুর হয়ে শুয়ে পড়ে সায়ন। বালিশের কভার থেকে রাইদার শ্যাম্পুর ঘ্রাণ নাকে আসতেই চোখ বন্ধ করে ফেলে সায়ন। আজকে সারাদিনে এতো কিছু ঘটেছে সায়নের কাছে এখনো সব কিছু কল্পনার বাহিরে।
‘রি কি শ্যাম্পু দাও বলো তো? ঘ্রানে আমার আত্না বের হয়ে আসতে চাচ্ছে,মনে হচ্ছে তুমিই পাশে শুয়ে আছো।বিয়ের পর এতো ঘ্রানের শ্যাম্পু তোমায় ব্যবহার করতে দেওয়া যাবে না পরে দেখা যাবে এই ঘ্রাণে আমি পাগল হয়ে যাবো।’,বালিশটাকে জড়িয়ে বলতে থাকে সায়ন।
‘তোমাকে এবার আর ছাড়ছি না রি।তোমার মত থাকুক আর না থাকুক বউ তো তুমি আমারই হবে।’,শোয়া থেকে উঠে বসে বিরবির করে বলতে থাকে সায়ন।
বালিশের কভারটা খুলে সেটা লাগেজে ভরে নেয় সায়ন। বিছানায় এসে ফোনটা হাতে নিয়ে গাড়িতে তোলা রাইদার ঘুমন্ত ছবিটার দিকে তাকিয়ে থাকে এরপর ফোনটা বুকের উপর রেখেই ঘুম দেয়।
..
পায়ে ব্যথা নিয়ে সিঁড়ি দিয়ে বারবার উঠানামা করলে রাইদার পায়ের ব্যথা আরো বাড়বে সেই কথা চিন্তা করে মনিরা বেগম রাইদাকে রুবেল আর আরাফের রুমে থাকতে দিয়েছে। আর যেই রুমটা রাইদার জন্য পরিষ্কার করেছিলো দুই বন্ধুকে দিয়েছে সেখানে থাকতে। ঘুমের মধ্যে সানজিদার হাত পা ছোড়াছুড়ির অভ্যাস আছে সেই জন্য মনিরা বেগম রাইদার সাথে সানজিদাকে ঘুমাতে দেয়নি। মারিয়া আর সানজিদাকে এক সাথে শুতে দিয়েছে,রাইদাকে বিশ্রাম করতে একা ছেড়ে দিয়েছে। সাবিনা,আলেয়া বেগম বাড়ি চলে গেছে কিন্তু মারিয়া রয়ে গেছে অবশ্য রাইদাই রেখে দিয়েছে মারিয়াকে।
বিছানায় শুয়ে ভাবছে আরাফের সাথে কীভাবে সানজিদার বিষয়ে জিজ্ঞেস করবে।আরাফ কেনো যে খাবারের টেবিলে ওমন ব্যবহার করলো এটা এখনো বুঝে উঠতে পারছে না।একটু আলাদা কথা বলতে চেয়েছে এতে তো ইগনোর করার কি হলো!
খাবার শেষ করে আরাফকে আর দেখতেই পায় না রাইদা।আরাফের প্রতি এক রাজ্যের অভিমান নিয়ে রাইদা চোখ বন্ধ করে শুয়ে থাকে।
..
রাইদার পেজে গিয়ে ট্রাভেলিং ভিডিও গুলো দেখছে আরাফ। কানে ইয়ারফোন গুঁজে ভিডিওতে বলা রাইদার প্রতিটি কথা মনোযোগ দিয়ে শুনছে। রাইদা যখন ভিডিওতে হুটহাট হেঁসে উঠছে আরাফও হেসে দেয় রাইদার হাসি দেখে।
প্রশ্ন উইথ রাই নামক একটা ভিডিওর টাইটেল দেখে আরাফ দেরি না করে ভিডিওটা প্লে করে।
‘তো মিস রাইদা রাফায়েত আপনার কেমন ছেলে পছন্দ?’,রাইদার দিকে ক্যামেরা তাক করে করা ক্যামেরাম্যান প্রশ্ন করে।
‘সিম্পলের মধ্যে একদম গর্জিয়াস।’,রাইদা মুখটা একদম গম্ভীর করে জবাব দেয়।
‘আপু দর্শক সাহিত্যের ভাষা বুঝে না আপনি একটু খাঁটি বাংলায় বলুন।’,ক্যামেরাম্যান বিরক্ত হয়ে বলে।
‘ধ্যাত একটু ভাব নিলাম দিলি তো নষ্ট করে।অর্ক চুপ আগে আমাকে বলতে দে না হলে তোর বেতন কাট করে দিবো।’,রাইদা ক্যামেরায় একটা থাপ্পড় দেখিয়ে বলে।
‘ওকে মালকিন আপনি বলুন না হয় আমাদের মতোন গরীব শ্রমিকের বেতন কাট করে দিবেন।’,অর্ক রাইদার কান টেনে বলে।
‘তো যা বলতেছিলাম আমার একের ভিতর অনেক গুণ আছে এমন কাউকে চাই বলবো না তবে ছেলেটার মধ্যে আমাকে হ্যান্ডেল করার মতো বুদ্ধি থাকতে হবে।গায়ের রঙ যে কোনো রঙের হলেই হবে তবে স্পেশাল প্রেফার হলো শ্যামবর্ণ। আমার খুব ইচ্ছা শ্যামবর্ণের পুরুষের জন্য পাগলামি করবো।আমি রান্নার ঝামেলা একদম পছন্দ করি না তো সে যদি একটু একটু রান্না পারে চলবে না পারলে সমস্যা নেই বাহির থেকে অর্ডার করে নিবো। লাস্টলি আমাকে এত্তো ভালোবাসতে হবে এ বিষয়ে কিপটামি চলবে না।’
ভিডিওতে রাইদার বলা কথাগুলো মন দিয়ে শুনছিলো আরাফ এইরকম সময় রুবেল তার পা আরাফের গায়ে তুলে দেয়।আরাফ বিরক্ত হয়ে ঘুমন্ত রুবেলের গালে আস্তে থাপ্পড় বসায়।
‘ভূত! ভূত!আল্লাহ ভূতে থাপ্পড় দিলোরে।’,ঘুম থেকে লাফ দিয়ে উঠে বলে রুবেল।
‘চুপ করে ঘুমা না হলে আরেক গালে মারবো আর আমি তোর বউ না যে ইচ্ছে মতো আমার গায়ে হাত পা তুলে দিবি।মনে হচ্ছে সরকারি পাইছে ইচ্ছা মতো গায়ে হাত পা তুলে দেয়।’,আরাফ রুবেলের বাহুতে ধাক্কা দিয়ে বলে।
‘আমার এতো স্বাদের ঘুমটা ভাঙায় দিলি শালা! কি সুন্দর স্বপ্নে ঐশরিয়ার সাথে কাজরা রে ডান্স দিতাছিলাম,দিলি পুরা স্বপ্ন মাটি কইরা।’
আরাফ পাশ ঘুরে চোখ বন্ধ করে শুয়ে থাকে।রুবেল আরো কি কি বলছিলো তা কানে নেয়নি আরাফ।
…
‘মালেকার মাইয়া কলির বিয়া শুক্কুরবার মানে পরশু।কালকে হইলো গায়ে হলুদ।আমগো বাড়ির সবাইরে দাওয়ার দিচ্ছে আর যখন হুনছে সায়নরা আইছে কইছে সবাইরে অবশ্যই হলুদে আর বিয়ায় পাডাইতে।’,টেবিলে নাশতা দিয়ে বলে মনিরা বেগম।
‘মোগোরেও যাইতে কইছে এমনকি আপারেও যাইতে কইছে।’,রাইদার দিকে তাকিয়ে বলে মারিয়া।
‘বাহ্! গ্রামের বিয়ে কখনো খাইনাই ফেরার আগে বিয়ে খাইলে মন্দ হয় না।’,রুটি চিবাতে চিবাতে বলে রুবেল।
‘তোর তো খালি খাই আর খাই।’,শ্রেয়া রুবেলকে ভেংচি দিয়ে বলে।
‘মামি আমরা যেতে আগ্রহী তবে সায়ন যাবে কিনা সেটা আপনাকে জিজ্ঞেস করতে হবে।রাই তুমি তো যাচ্ছো? ‘,যামিনী রাইদাকে প্রশ্ন করে।
‘জানি না আপু পায়ের ব্যথা ঠিক হলে বলতে পারবো।’,অপ্রস্তুত হয়ে বলে রাইদা।
‘আরে আমরা গেলে তোমাকেও নিয়ে যাবো সমস্যা নেই।’,যামিনী রাইদার বাহুতে হাত দিয়ে বলে।
‘দরকার হলে সায়নের কোলে চড়ে যেয়ো গতকালকের মতো।’,শ্রেয়া বলে।
শ্রেয়ার কথা শুনে আরাফ মুখ তুলে শ্রেয়ার দিকে তাকায়।গতকালকের বিষয়টা আরাফ কানে না নিলেও শ্রেয়ার বলার টোনটা তার কাছে ভালো লাগেনি।
‘শ্রেয়া এসব কথা কেনো বলছিস? চুপ কর।’,শ্রেয়াকে ধমক দিয়ে বলে যামিনী।
রাইদা মুখ কালো করে তার এক চেয়ার পরে বসা আরাফের দিকে তাকায়।আরাফ মুখ তুলে একবারো তাকাচ্ছে না কেনো সেই প্রশ্নের উত্তর রাইদা খুঁজে পাচ্ছে না।
মুখ তুলে রান্নাঘরের দরজার দিকে তাকালে রাইদা দেখে সানজিদা আড়ালে দাঁড়িয়ে আরাফকে দেখছে।রাইদার মন চাচ্ছে আরাফের উপর একটা চাদর দিয়ে দিতে যাতে সানজিদা না দেখতে পারে। হঠাৎ এমন অদ্ভুত চাওয়ার কারণ খুঁজে পায়না রাইদা।
মারিয়া হতাশ হয়ে সায়নের রুমের বাহিরে ঘুরঘুর করছে।সায়ন এখনো ঘুম থেকে উঠেনি।সকলে নাশতা করছে আর মারিয়া সায়নের অপেক্ষা করছে তার ইচ্ছে সায়নের সাথে খাবে। পেটের মধ্যে শব্দ করে উঠলে সায়নের রুমের দরজার দিকে তাকিয়ে ক্ষুধা নিবারণ করতে খাবারের রুমের দিকে যায় মারিয়া।
..
‘তুই তাহলে ফিরবি কবে?’,অর্ক জিজ্ঞেস করে।
‘মনে হচ্ছে আরো দু’দিন থাকতে হবে। কার নাকি বিয়ে সেই দাওয়াতে যেতে বলছে।’,রাইদা জবাব দেয়।
‘বিয়ে খেতে দিয়ে দেখিস তোর আবার না বিয়ে হয়ে যায়।’,ফাহিম রাইদাকে বলে।
‘না দোস্ত এই কাজ করিসনা তাহলে একটা দাওয়াত থেকে আমরা বঞ্চিত হবো।’,বাপ্পি গলা ঝেরে বলে।
‘আমি তো প্লান করে রেখেছি তোদের বিয়ের একমাস আগ থেকে শপিং করা শুরু করবো।’,পায়েল আনন্দিত হয়ে বলে।
‘চুপ কর আম্বানির চাচাতো বইন। আগে তুই বিয়ে করে বিদায় হ।’,বাপ্পি পায়েলের কথার মধ্যে বলে।
‘আমাকে একটা জিনিস বুঝা তুই একই পায়ে দুইবার কীভাবে ব্যথা পাস?’,ফাহিম প্রশ্ন করে।
‘এখন কি আবার পড়ে তোদের দেখাবো?কি আজব প্রশ্ন আমি কি ইচ্ছে করে পড়ছি নাকি!’,রাইদা বিরক্ত হয়ে বলে।
‘এই আরাফ ভাইয়ের মুখটা কেমন হয়েছিলো যখন তুই কান্না করছিলি?’,পায়েল রাইদাকে প্রশ্ন করে।
‘তোর যত আজাইরা প্রশ্ন। তুই যেমন তোর প্রশ্নও তেমন।’,বাপ্পি পায়েলকে ধমক দিয়ে বলে।
‘রুহি তোর কি মন খারাপ?কথা বলছিস না কেনো?’,রাইদা রুহিকে জিজ্ঞেস করে।
‘না তোরা বল শুনছি আমি।’,নিরবতা ভেঙে বলে রুহি।
‘ম্যাডাম কথা বলতে চাইছে না তাও তোরা ম্যাডামকে বিরক্ত কেন করিস?’,অর্ক ফোঁড়ন কেটে বলে।
‘তুই চুপ কর তোরে জিজ্ঞেস করছি নাকি?’,রাইদা ধমক দিয়ে বলে।
রাইদা রুমে বসে বন্ধুদের সাথে অডিও কলে কথা বলছিলো তখন দরজার বাহিরে কারো গলা পায়। দরজায় কেউ নক করে।
‘দরজা খোলা আছে।’,রাইদা জবাব দেয়।
দরজা খুলে রুমে আরাফ প্রবেশ করে।আরাফকে দেখে রাইদা অবাক হয়।
‘আমি পরে কল দিচ্ছি রাখ।’,কথাটা বলে কল কেটে দেয় রাইদা।
আরাফ চুপচাপ এসে নিজের লাগেজটা খুলে রুমে থাকা জামা কাপড় গুলো গুছিয়ে ভরতে শুরু করে।গতরাতে এই রুম থেকে যাওয়ার সময় লাগেজ নেয়নি এখন এসেছে নিতে।
‘আপনাকে গত কাল থেকে খুঁজছিলাম কিছু বলবো তাই।আপনি কি শুনছেন কি বলছি?’,রাইদা আরাফকে বলে।
আরাফ কোনো উত্তর না দিয়ে নিজের মতোন লাগেজ গোছাতে থাকে।রাইদা বিছানা থেকে আস্তে আস্তে উঠে চেয়ার ধরে দাঁড়ায়। কুতকুত খেলার মতো এক পা দিয়ে লাফাতে লাফাতে দরজার সামনে গিয়ে দরজা চাপিয়ে দেয়।আঁড়চোখে সব দেখতে থাকে আরাফ।
‘আমি আপনাকে কিছু বলছি মিস্টার আরাফ।সমস্যা কি?কথা বলছেন না কেনো?’,আরাফের হাতে ধরা শার্টটা টেনে ধরে বলে রাইদা।
‘গত রাতে কি বলে ডেকেছো মনে নেই?’,আরাফ গম্ভীর গলায় বলে।
‘কি বলেছি? ও হ্যা বলেছিলাম একটু দেখা করতে কিন্তু এতে এতো রাগ করার কি আছে?’,রাইদা মাথা চুলকে বলে।
‘সত্যি বুঝতে পারছো না? নাকি ঢং করছো?’,আরাফ সন্দিহান দৃষ্টিতে বলে।
‘আমিই কিছুই বুঝতে পারছি না ভাইয়া।আপনি বুঝিয়ে বলুন।’,রাইদা ঢং করে বলে।
‘আমি তোমার কোন জন্মের ভাই?’,আরাফ রাইদার থেকে শার্টটা টেনে বলে।
‘আপনি আমার ভাই কেন হতে যাবেন? হলে অন্য কিছু হবেন ওয়েট ভাইয়া ডাকের জন্য এতো রাগ করেছেন? আরে বোকামশাই রাগও করতে পারে।আপনি না রাগ করলে গাল গুলো টমাটোর মতো লাল হয়।’,রাইদা নিজের গালে হাত দিয়ে বলে।
‘রাগ করলে কারো গাল লাল হয় নাকি?’,আরাফ অবাক হয়ে প্রশ্ন করে।
‘হ্যা হয় তো আপনার খোঁচা খোঁচা দাড়ি ওয়ালা গাল দু’টো পাকা লাল টমাটোর মতো লাল হয়।আচ্ছা শুনেন অনেক গুরুত্বপূর্ণ কথা আছে।’,রাইদা শেষের কথাটা ফিসফিস করে বলে।
‘আমি তোমার কোনো কথা শুনবো না।’,রাইদার থেকে মুখ ঘুরিয়ে বলে আরাফ।
‘এই শুনেন তো,একদম ভদ্র ছেলের মতোন আমার কথাগুলো শুনবেন। সানজিদা আপনাকে পছন্দ করে।গতকালকে আপনার টি-শার্ট চুরি করতে চাচ্ছিলো আবার লুকিয়ে লুকিয়ে আপনার দিকে কেমন চোখে তাকায়।আপনি এর একটা বিহিত করুন।’,রাইদা আরাফের কানের কাছে গিয়ে বলে।
‘আমাকে লুকিয়ে দেখলে তোমার কি সমস্যা? আর ইউ জেলাস রাই?’,রাইদার দিকে ভ্রু উঁচিয়ে আরাফ প্রশ্ন করে।
‘আম নট জেলাস।কথাটা বলার প্রয়োজন বোধ করেছি তাই বললাম আর কিছু না।’,আরাফের কথা শুনে মুখ গোমড়া করে বলে রাইদা।
রাইদা আরাফের সামনে থেকে সরে বিছানায় যেতে নিলে পিছন থেকে আরাফ খপ করে রাইদার বাম হাত ধরে।
‘এদিকে আসো শুনে যাও।’,আরাফ আদুরে কন্ঠে বলে।
‘না শুনবো না ছাড়ুন হাত।’,রাইদা অভিমানের স্বরে বলে।
রাইদার হাত ধরেই পিছন থেকে ঘুরে রাইদার সামনে এসে দাঁড়ায় আরাফ।
‘এই যে রাগ করেছো এখন তোমার গাল দুটো লাল টমেটোর মতো লাগছে।ইচ্ছে করছে খেয়ে ফেলি।’,হেঁসে রাইদার গালে ইশারা করে বলে আরাফ।
আরাফের কথা শুনে রাইদা হেঁসে দেয়। রাইদার হাত ছেড়ে বাকি কাপড় গুলো লাগেজে ভরে নেয়ে আরাফ।
‘সানজিদা ছোট মানুষ তাছাড়া সায়নের বোন মানে আমারো বোন।ওর মাথায় আমাকে নিয়ে কোনো ভুল ধারণা সৃষ্টি হলে আমি সেটা দূর করার চেষ্টা করবো তুমি এ বিষয়ে চিন্তা করোনা।তুমি শুধু নিজের খেয়াল রাখো।’,আরাফ লাগেজ হাতে বলে রাইদাকে।
আরাফের কাছ থেকে জবাব পেয়ে রাইদা খুশি হয়।আরাফও হাসিমুখে লাগেজ নিয়ে রুম থেকে বের হয়।
..
মনিরা বেগম সায়নের রুমের সামনে অনাবরত ডাকাডাকি করতে থাকে।একসময় ঘুম ভেঙে গেলে সায়ন উঠে রুমের দরজা খুলে দিয়ে আবার শুয়ে পরে।
‘অনেক বেলা হইছে উঠো বাবা।’,সায়নের চুলগুলোতে হাত বুলিয়ে বলে মনিরা বেগম।
‘মামি আরেকটু ঘুমাই পরে উঠবো।’,ঘুম কাতুর চোখে বলে সায়ন।
‘এক কাম করো গোসলডা কইরা কিছু খাইয়া আবার ঘুম দাও।’,মনিরা বেগম আগের ন্যায় সায়নের মাথায় হাত বুলিয়ে বলে।
কথার কোনো জবাব না দিয়ে সায়ন উঠে যায়।ঘুম থেকে উঠে সায়ন ফোন হাতে নিয়ে দেখে বেলা বারোটা বাজে।এলোমেলো চুলগুলো হাত দিয়ে পিছনে ঠেলে গায়ে টি-শার্ট জড়িয়ে রুম থেকে বের হয়।
‘এই সানজিদা কোম্মে গেলি? এমমে আয় তোর ভাইয়ের রুমে।’,সায়ন রুম থেকে বের হলে মনিরা বেগম সানজিদাকে ডাক দেয়।
‘হ মা কও। ‘,দৌড়ে এসে দরজায় দাঁড়িয়ে সানজিদা বলে।
‘তোর ভাইয়ের বিছনাডা গুছাইয়া দে আর এই বালিশের কভারডা কই?তোগো কারণে পোলাডায় কভার ছাড়া বালিশে ঘুমাইছে। তোরা কি চোক্ষে দেখোস না বালিশে কভার নাই?’,মনিরা বেগম সায়নের মাথার বালিশটা হাতে দিয়ে বলে।
‘আমি তো গত বেইন্না কালেই বিছনার চাদর লাছলাম তহন কভারও লাগাইছিলাম এহন গেলো কোম্মে হেইডা আমি কি জানি?’,সানজিদা মাতা চুলকে জবাব দেয়।
‘মুহে মুহে তর্ক না কইরা জলদি কভার খোঁজ, খুইজ্জা না পাইলে নতুন চাদর আর কভার লাগা।এই সংসারে সব আমারি দেহোন লাগে।এত বড় দামড়া মাইয়া ঘরে থাকতেও শান্তি নাই। ‘,সানজিদার হাতে বালিশ ছুঁড়ে দিয়ে মনিরা বেগম রুম থেকে বের হয়ে যায়।
সানজিদা রুমের মধ্যে বালিশের কভার খুঁজতে থাকে।
আড়মোড়া ভেঙে সায়ন বসার ঘরের দরজার সামনে এসে দাঁড়ায়। হাই তুলে সামনে তাকালে তার চোখ দু’টো আটকে যায়।
সদ্য গোসল করে রাইদা কল পাড় থেকে বেড়িয়ে পুকুর পাড়ে এসে দাঁড়িয়েছে। চুল থেকে টপাটপ পানি পড়ছে মাটিতে। টাওয়াল হাতে নিয়ে চুল মুছতে ব্যস্ত সে। রাইদা কালো রঙের গোল জামা পড়েছে সাথে চুড়িদার।জর্জেটের ওড়ানাটা গলায় ঝুলিয়ে রেখেছে।
চুল মোছা হলে মারিয়ার হাতে টাওয়ালটা দিয়ে রাইদা পুকুর পাড়ের বসার জায়গাটায় বসে যায়,মারিয়া গিয়ে দড়িতে টাওয়ালটা নেড়ে দেয়।রাইদা পুকুরের দিকটায় মুখ করে বসে কানে ইয়ারফোন গুঁজে ফোন টিপতে থাকে। মারিয়া এক বালতি কাপড় এনে দড়িতে নাড়তে থাকে।
দরজায় দাঁড়িয়ে সায়ন দূরে বসা রাইদার দিকে তাকিয়ে থাকে। মারিয়া এতক্ষণ সায়নকে খেয়াল না করলেও এখন খেয়াল করে।লজ্জায় চোখ তুলে সায়নের দিকে তাকাতে পারছে না সে।
সায়ন উঠানের দিকে পা বাড়ায়। মারিয়ার সামনে এসে দড়ি থেকে টান দিয়ে রাইদার টাওয়ালটা নিয়ে নেয়।আচমকা এমন ঘটনা ঘটায় মারিয়া বোকা বনে যায়। টাওয়ালটা নিয়ে কল পাড়ে হাঁটা দেয় সায়ন।
‘ঐইডা তো রাই আপুর। ‘,মারিয়া তোতলিয়ে বলে সায়নকে।
‘কিছু বলেছো?’,সায়ন ঘাড় ঘুরিয়ে প্রশ্ন করে।
‘না না কিছু না।’,ঢোক গিলে মারিয়া জবাব দেয়।
‘গুড গার্ল।’,কথাটা বলে কল পাড়ে চলে যায় সায়ন।
মারিয়া লজ্জা মাখা মুখে বাকি কাপড়গুলো নেড়ে দেয়।
সায়নের রুমে বিছানার গুছাচ্ছিলো সানজিদা তখনই রুমের দরজা দিয়ে আরাফ রুমে প্রবেশ করে।
‘সরি সরি আমি ভেবেছি রুমে সায়ন আছে।’,রুমে ঢুকে সায়নের বদলে সানজিদাকে দেখে বলে আরাফ।
সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে মাথায় ঘোমটা টেনে দেয় সানজিদা। ঘুরে আরাফ রুম থেকে বের হতে গিয়ে আবার দাঁড়ায়।
‘সানজিদা আপনার সাথে আমার গুরুত্বপূর্ণ কথা আছে।সময় করে আলাদা ভাবে একটু আমার সাথে দেখা করবেন।’,কথাটা বলেই আরাফ রুম থেকে বের হয়ে যায়।
সানজিদা অবাক হয়ে আরাফের যাওয়ার পানে তাকায় তার যেনো বিশ্বাসই হচ্ছে না আরাফ তাকে আলাদা কথা বলতে ডেকেছে। জলদি জলদি সায়নের বিছানা ঠিক করে নিজের রুমে যায়।
গোসল করে বের হয়ে সায়ন দেখে রাইদা এখনো পুকুরপাড়ে বসা।আশেপাশে তাকিয়ে কাউকে দেখতে না পেয়ে সায়নের মাথায় দুষ্টু বুদ্ধি চাপে।রাইদা চোখ বন্ধ করে ইয়ারফোনে গান শুনছিলো।চোখমুখে পানির ছিটে পরায় দ্রুত চোখ খুলে সামনে তাকায় সে। সায়ন মাথা নুইয়ে রাইদার দিকে চুল ঝাড়া দেয় হাত দিয়ে।
‘এটা কি হলো?’,রাইদা রেগে সামনকে প্রশ্ন করে।
‘আমাকে কিছু বলছেন ম্যাডাম?’,সায়ন নিজের দিকে আঙুল তাক করে বলে।
‘না আপনার ভূতকে বললাম।আপনি এতো জায়গা রেখে আমার মুখের সামনে চুল কেনো ঝাড়লেন? ‘,দাঁতে দাঁত চেপে বলে রাইদা।
‘আমার ইচ্ছে যেখানে খুশি সেখানে চুল ঝাড়বো।তোমার সমস্যা হলে নিজের মুখ লুকিয়ে রাখো।’,কথাগুলো বলে রাইদার টাওয়াল গলায় ঝুলিয়ে ঠোঁট চেপে বাঁশি বাজাতে বাজাতে হাঁটতে থাকে সায়ন।
‘আরে আমার টাওয়াল তো ঐইটা।এই আপনি তো চোর যা পান তাই চুরি করেন।আমার টাওয়াল দিয়ে যান।’,সায়নের দিকে ঘুরে বলে রাইদা।
‘সাবধানে থেকো কবে জানি তোমাকেও চুরি করে নিয়ে যাই।’,ঘাড় ঘুরিয়ে নিচু স্বরে বলে সায়ন।
‘আপনি কিন্তু এবার অতিরিক্ত করছেন।আপনার নামে আমি মহিউদ্দিন মামার কাছে নালিশ দিবো।’,রাইদা রেগে কথাগুলো বলে।
সায়ন রাইদার কথার জবাব না দিয়ে ঘরের দিকে যায়। সায়ন বসার ঘরে আসলেই মারিয়ার সাথে মৃদু ধাক্কা লাগে। ধাক্কা লাগায় সায়ন প্রচন্ড বিরক্ত হয় মারিয়ার দিকে না তাকিয়েই নিজের রুমের দিকে যায়।
মারিয়া ভেবে নেয় সায়ন তার মতো লজ্জা পেয়েছে।দু’হাতে দিয়ে মুখ ঢেকে মারিয়া সেখান থেকে দৌড়ে পালায়।
..
দুপুরে খাবারের টেবিলে সকলে বসেছে কিন্তু এখনো রাইদা আসেনি।আজকে মহিউদ্দিন ও সকলেরও সাথে খেতে বসেছে।সায়ন যেই চেয়ারে বসেছে তার পাশে কেউ বসেনি। আরাফ বারবার দরজার দিকে তাকাচ্ছে আর নিজের পাশে থাকা চেয়ারের দিকে তাকাচ্ছে।রাইদা ধীর পায়ে হেঁটে টেবিলের সামনে এসে মহিউদ্দিনের পিছন থেকে ঘুরে গিয়ে আরাফের পাশের চেয়ারটা টেনে বসে।
সায়ন নিজের মতো ফোন টিপছিলো এমন ভাব যেনো কে কোথায় বসেছে তার মাথা ব্যথা নেই। মারিয়া এসে সায়নের পাশে বসে পরে।সায়ন কারো দিকে না তাকিয়ে চুপচাপ খেয়ে নেয়। রাইদা খেতে খেতে বুদ্ধি করতে থাকে কীভাবে সায়নের থেকে নিজের জিনিসগুলো ফেরত আনবে।
খাওয়া শেষ করে সকলে নিজের রুমে যায়।যামিনী, শ্রেয়া,সানজিদা,মারিয়া চলে আসে রাইদার রুমে আড্ডা দিতে। আড্ডার এক পর্যায়ে সানজিদা রুম থেকে চুপিসারে বেড়িয়ে যায়। বসার ঘর থেকে বাহিরে উঁকি দিলে দেখে আরাফ উঠানে দাঁড়িয়ে ফোনে কারো সাথে কথা বলছে। সানজিদা আশেপাশে তাকিয়ে চোরের মতোন হেঁটে আরাফের সামনে গিয়ে দাঁড়ায়। সানজিদাকে হঠাৎ সামনে দেখে ভূত দেখার মতো চমকে উঠে আরাফ। কল কেটে আরাফ সানজিদার দিকে তাকায়।
‘এহন সবাই ঘরে কিছু কওয়ার থাকলে বাড়ির পেছনের বাগানে আহেন।’,কথাটা বলে সানজিদা দ্রুত বাগানের দিকে যায়।
সানজিদার পিছন পিছন আরাফও বাগানের দিকে যায়। গাছের নিচে গিয়ে সানজিদা দাঁড়ায়। ভয়ে আর কৌতুহলে সানজিদার হাত পা ঠান্ডা হয়ে আসে।সে ভেবেই নিয়েছে যেই কথাটা সে আরাফকে বলতে চায় সেই একই কথা আরাফও তাকে বলতে চায়।
‘দেখেন সানজিদা আমি ঘুরিয়ে কথা বলতে পছন্দ করি না।আপনি ছোট মানুষ তারপরও বাধ্য হয়ে আপনাকে আমার এসব বলতে হচ্ছে।আপনার ভুল ধারণা দূর করার জন্য আপনার সাথে কথা বকাটা জরুরী। ‘,গলা ঝেরে বলে আরাফ।
এবার সানজিদার চোখ মুখে আরো কৌতুহল দেখা দেয়।মুখ তুলে আরাফের দিকে তাকায়।আরাফের দৃষ্টি পাশে থাকা গাছের দিকে।
‘আপনার বয়সটা আবেগের বয়স।এ বয়সে কত মানুষকে ভালো লাগবে আবার ভালোবাসতে ইচ্ছে করবে। এই বয়সটা সবারই আসে একদম নরমাল বিষয় তবে নিজেকে সামলে রাখতে হবে।আপনি মেধাবী স্টুডেন্ট সামনে এসএসসি পরীক্ষা। মন দিয়ে লেখাপড়া করে বাবা মায়ের মুখ উজ্জ্বল করুন।সায়ন আপনার বড় ভাই ঠিক আমিও আপনার বড় ভাই।আপনার জন্য আমার দোয়া রইলো ভবিষ্যতে আপনি অনেক বড় কিছু হবেন। আজকে থেকে ভাববেন শুধু সায়ন ভাই না আরাফ ভাইও আপনার পাশে আছে।কোনো সমস্যা হলে আমাকে জানাবেন।আমার কোনো বোন নেই তবে আপনাকে পেয়ে আমার ছোট বোনের অভাবটা পূর্ণ হলো। শিমু আর আপনি আমার ছেট বোন।ও হ্যা বড় ভাইয়ের কাছে কোনো আবদার থাকলে করতে পারবেন সমস্যা নেই।মন দিয়ে লেখাপড়া করুন।এখন আমি গেলাম।’,সানজিদার দিকে না তাকিয়েই কথাগুলো বলে স্থান ত্যাগ করে আরাফ।
সানজিদা টলোমলো অশ্রু চোখে আরাফের যাওয়ার পানে তাকিয়ে থাকে। মুখে হাত দিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদতে শুরু করে।একসময় চোখ মুখ মুছে দৌড়ে ঘরে যায়।সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠে নিজের রুমে গিয়ে দরজা আঁটকে বিছানায় শুয়ে কাঁদতে থাকে।
..
রাইদার রুমে ঘন্টা খানেক আড্ডা দিয়ে সকলে উঠানে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। রাইদাও যামিনীর হাত ধরে উঠানে এসে বসে।বিকাল বেলা উঠানে বসে গল্প করার পরিবেশটা বেশ লাগে।
উঠানে শিমুর বয়সী কয়েকজন মেয়েকে খেলতে দেখে রাইদা ডাক দেয়। মেয়েগুলো ছুটে আসে রাইদার কাছে।
‘কি ব্যপার রাইদা ওদের ডাকলে যে?’,যামিনী জিজ্ঞেস করে।
‘দেখোই না আপু কি করি।এই তোমদের মধ্যে কে কে নাচতে জানো?’,রাইদা প্রশ্ন করে।
কেউই হাত তুলে না। যামিনী, মারিয়া,শ্রেয়া কৌতুহল হয়ে দেখতে থাকে রাইদা কি করবে সেটা।
‘কে কে নাচ শিখতে চাও একদম শর্টকাট নাচ।’,রাইদা আবারো প্রশ্ব করে।
এবার একে একে সকলে হাত তুলে।
‘এই তো ভেরি গুড।মারু রুম থেকে আমার ল্যাপটপ আর ছোট বক্সটা আন।’,রাইদা মারিয়াকে বলে।
‘রাই তোমার তো পায়ে ব্যথা নাচবে কীভাবে?’,যামিনী অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করে।
‘নাচতে পা লাগে নাকি? সিটিং ডান্স করবো।এতো সহজ স্টেপ যে বাচ্চারাও পারবে।’,রাইদা জবাব দেয়।
ততক্ষণে মারিয়া ল্যাপটপ আর ছোট সাউন্ড বক্সটা নিয়ে এসেছে। রাইদা ল্যাপটপ অন করে একটা গান ছেড়ে যামিনীর হাতে ল্যাপটপ দিয়ে দেয়। মাটিতে বসে পরে রাইদা তার দেখা দেখি বাকি মেয়েরাও বসে যায়। হাত নেড়ে রাইদা এক একটা স্টেপ করে বাকিরাও রাইদাকে ফলো করে।যামিনী নিজের ফোনটা মারিয়ার হাতে দিয়ে ভিডিও করতে বলে। মারিয়াও পুরোটা ভিডিও করে দেয়।
..
মাগরিবের আজান দিয়েছে কিছুক্ষণ আগে।সন্ধ্যা গড়িয়ে রাত হয়েছে। রাইদা নিজের রুমে বসে ল্যাপটপে কাজ করছিলো।বাকিরা বসার ঘরে আড্ডায় ব্যস্ত। সায়ন,আরাফ,রুবেল,জাহিদ দুপুর গড়াতেই বাহিরে বেরিয়ে যায়। এই টুকু খবর রাইদা যামিনীর কাছ থেকে শুনেছিলো। এখনো কেউ ফিরেনি, রাইদা ভেবে নেয় তাদের ফিরতে আরো দেরি হবে।
ল্যাপটপটা বন্ধ করে রুমের দরজা খুলে বাহিরে উঁকি দেয়।বসার ঘর থেকে মেয়েদের হাসির শব্দ আসছে। রুম থেকে বের হয়ে রুমের দরজা টেনে দেয় যাতে কেউ না বুঝতে পারে সে রুমে নেই। সায়নের রুমের দরজা খুলে চোরের মতো রুমে ঢুকে যায়। দরজা চাপিয়ে রুমটায় নজর দিলে দেখে চেয়ারের উপর তার টাওয়াল রাখা।
‘টাওয়াল তো পেলাম কিন্তু পায়েলটা কই খুঁজবো? ‘,টাওয়ালটা হাতে নিয়ে রাইদা চিন্তিত হয়ে বলে।
সব চিন্তা বাদ দিয়ে রাইদা আবারো সায়নের রুমে খুঁজাখুঁজি শুরু করে। বিছানা,টেবিল,আলমারি খুঁজে কিছু না পেয়ে হতাশ হয়ে বসে যায় বিছানার উপর। সায়নের তালা বিহীন লাগেজে চোখ গেলে রাইদার চোখ মুখে খুশির ঝিলিক দেখা যায়। তাড়াতাড়ি লাগেজটা এনে চেইন খুলে। লাগেজ খুলে সায়নের জামা কাপড় এলোমেলো করে খুঁজতে থাকে নিজের কাংখিত জিনিসটা। খট করে দরজা খোলার শব্দ হলে এক হাতে সায়নের গেঞ্জি আরেক হাতে শার্ট নিয়ে বোকার মতো দাঁড়িয়ে থাকে রাইদা।
…
(চলবে..)
(৩০০০+ শব্দের পর্ব পোস্ট করেছি আজকে। আপনারা গল্প পড়ে অবশ্যই লাইক,কমেন্ট করে জানাবেন কেমন লাগলো। আপনাদের সুন্দর সুন্দর কমেন্টের অপেক্ষায় রইলাম।)
চলবে..
(বিশাল পর্ব দিয়েছি আজকে।আপনাদের রেসপন্স না পেলে পরবর্তী পর্ব দেরিতে দিবো।লাইক,কমেন্ট করে আপনাদের উপস্থিতি জানানোর অনুরোধ রইলো। )