রজনী চুলের মুঠি ধরে হসপিটালের বেড থেকে,টেনে তুলল আয়াত’কে।মিনিট দশে’ক আগে-ই নিদ্রা দেশে পাড়ি জমিয়েছিল আয়াত।আব্রাহাম না থাকায়,মেয়েটা কে ঘুমের ঔষধ দিয়ে ঘুম পাড়ানো হয়েছে।রজনী ঝড়ের গতিতে এসে,আয়াতে’র চুল টেনে ধরে,আয়াত ব্যথায় কুঁকড়িয়ে উঠে,ঘুমের ওষুধ দেওয়া’র ফলে,চোখ মেলে তাকানো কষ্ট কর হয়ে গিয়েছে।রজনী’কে দেখে একটা নার্স দৌড়ে আসলো।রজনী নার্সের গাল চেপে ধরে বলল।
–আমার বোন আমি যা’ খুশি করবো।পারলে তোদের স্যার’কে গিয়ে বলে দিবি।রজনী আপা এসেছিল।আয়াত’কে নিয়ে চলে গিয়েছে।বলল রজনী।
–দেখুন আব্রাহাম স্যারের অনুমতি ছাড়া।আমরা আয়াত’কে কিছুতে-ই নিয়ে যেতে দিব না।আপনি আগে আব্রাহাম স্যারের থেকে অনুমতি নিয়ে আসুন।বলল নার্স।
–আমাদের বাসার মেয়েকে জোর করে আটকে রাখার আব্রাহাম কে?কিসের এত ক্ষমতা দেখায় আব্রাহাম।একটা কান খুলে শুনে রাখ?আব্রাহাম যদি চৌধুরী বাড়ির ছেলে হয়ে থাকে,তাহলে আমি’ও শিকদার বাড়ির মেয়ে।আজকে আমি আয়াত’কে নিয়ে যাব-ই।আমি’ও দেখি তোদের আব্রাহাম আমেরিকা থেকে, কিভাবে আমাকে আটকায়।বলল রজনী।
–এত-ই যখন আপনার সাহস আব্রাহাম স্যার থাকতে,এভাবে গর্জন করতেন।আব্রাহাম স্যার না থাকার সুযোগ কেনো নিচ্ছেন?বলল নার্স।
রজনী রেগে নার্সের গালে কষে থা*প্প*ড়* বসিয়ে দিল।নার্সটি নিজের রাগ দমিয়ে রাখতে পারলো না।সে-ও রজনীর গালে কষে থা*প্প*ড়* বসিয়ে দিল।রজনী’র হাত পেচিয়ে ধরে বলল।
–অনেকক্ষণ ধরে আপনার পাগলামি সহ্য করছি।কিছু বলছি না।তার মানে এই না।যে,আমি বলতে জানি না।আয়াত ম্যাডামে’র বোন জন্য এতক্ষণ ছাড় দিয়েছি।আর একবার আমার শরীরে আপনার এই হাত উঠুক।আমি আপনার এই হাত’কে ভেঙে টুকরো টুকরো করে ফেলবো।মনে থাকে যেনো।বলে-ই রজনী’র হাত ঝাড়ি দিয়ে ছেড়ে দেয়।রজনী রাগে ফুঁসতে থাকে।
আব্রাহাম সবে মাত্র আমেরিকা থেকে এসে,নিজের কেবিনে বসেছে।ক্লান্ত শরীর’টা চেয়ারে এলিয়ে দিল।দু-চোখ বন্ধ করে,জোরে জোরে কয়েকবার শ্বাস নিল।হঠাৎ করেই আব্রাহামে’র দরজায় কেউ কড়া নাড়লো।আব্রাহাম অনুমতি দিতে-ই,হন্তদন্ত হয়ে একজন নার্স প্রবেশ করল।নার্স’কে দেখে কপাল কুঁচকে গেল আব্রাহামে’র।গম্ভীর মুখ করে নার্সের দিকে তাকিয়ে আছে।নার্সটা উত্তেজিত হয়ে বলল।
–স্যার আট নাম্বার কেবিনে’র পেশেন্টে’র বাসার লোক এসে,আবার ঝামেলা করছে।তারা আয়াত ম্যাডাম’কে নিয়ে যেতে চায়।নার্স মারিয়া নিয়ে যেতে দেয় নাই।সেজন্য নার্সের শরীরে আঘাত করেছে।নার্স মারিয়া-ও ওনাকে আঘাত করেছে।
–গুড এই জন্য নার্স মারিয়া’কে আমার এতটা ভালো লাগে।বলেই এপ্রন’টা শরীরে জড়িয়ে,কেবিন থেকে বেড়িয়ে গেল।
রজনী আয়াত’কে ঘুম থেকে তোলার জন্য,নানারকমের কৌশল অবলম্বন করছে।বরাবরের মতো-ই ব্যর্থ হচ্ছে।ঘুমের মানুষ’কে টেনে তোলা।এতটা-ই সহজ নাকি।রজনীর টানা হেঁচড়া দেখে আব্রাহাম রেগে রজনী’র হাত সরিয়ে দিল।
–সমস্যা কি তোমার?আব্রাহাম’কে দেখে কিছুটা ভরকে গেল রজনী।ভয়ে শুকনো ঢোক গিলল।নিজকে স্বাভাবিক রেখে ক্রোধিত কণ্ঠে বলল।
–তোর সমস্যা কি?তুই পাঁচ বছর ধরে আমার বোন’কে আঁটকে রেখেছিস কেনো?আজকে আমি আমার বোন’কে নিয়েই যাব।বলল রজনী।
–রিয়েলি আয়াত তোমার বোন।ওকে ফাইন তুমি থানায় যাবে।না কার কাছে যাবে যাও।আয়াত কে নিয়ে যেতে পারবে না।তুমি যদি মেয়ে না হয়ে,ছেলে হতে,তাহলে তোমাকে এখানে-ই জ্যা*ন্ত* পু*তে* রেখে দিতাম।বলে-ই কেবিনে’র দেওয়ালে সজোরে একটা লাথি মারলো।আব্রাহাম কে রেগে যেতে দেখে সবার কলিজা কেঁপে উঠল।সবাই ভয়ে নিস্তব্ধ হয়ে আছে।রজনী ভীত দৃষ্টিতে আব্রাহামে’র দিকে তাকিয়ে আছে।আব্রাহাম চিৎকার দিয়ে বলল।
–নার্স মারিয়া আমার ছুরিটা দিন তো’।আব্রাহামে’র কথা শেষ হবার সাথে সাথে নার্স মারিয়া ছুরি এনে দিল।আব্রাহাম ছুরিটা হাতে নিয়ে রজনী’র দিকে এগোতে লাগলো।রজনী ভয়ে দু’পা পিছনে গেল।আব্রাহাম ছুরির দিকে তাকিয়ে বলল।
–আচ্ছা রজনী।তুমি যে,কণ্ঠস্বর দিয়ে,আমার সাথে উচ্চস্বরে কথা বলেছো।তোমার সেই কণ্ঠ স্বর যদি আর না থাকে?তাহলে কেমন লাগবে?যে,দু-চোখ দিয়ে আমার আয়াতে’র দিকে নজর দিয়েছো?সেই দু-চোখ যদি আমি উপরে ফেলি।তাহলে খুব একটা মন্দ হবে না।এই দু-হাতে আয়াতে’র চুল ধরেছিলে তাই না।তোমার দু-হাত আলাদা করে দিলে,শুধু আয়াত কেনো?আর কারো দিকে হাত বাড়াতে পারবে না।বার বার করে বলেছিলাম।আব্রাহাম’কে রাগিয়ে দিও না।ফলাফল ভালো হবে না।আজকে তুই আমার সামনে থেকে জীবিত হয়ে ফিরে যেতে পারবি না।
–রজনী’কে ভয় দেখিয়ে লাভ নেই।রজনী ভালো করেই জানে আব্রাহাম রজনী’র কিছু করবে না।আয়াতে’র বোন বলে কথা।
আব্রাহাম রেগে রজনী’র গলায় ছুরি’টা হালকা করে চেপে ধরলো।ধারালো ছুরি হওয়ায়,গলায় হালকা চাপ লাগায় কিছু’টা রক্ত বের হয়ে এলো।তা’ দেখে রজনী কিছু’টা ভয় পেয়ে গেল।কাঁপা কাঁপা কণ্ঠে বলল।
–আব্রাহাম স্যরি ভুল হয়ে গিয়েছে।তুমি ছুরিটা সরাও।আমি আর কখনো আয়াত’কে তোমার অগোচরে নিতে আসবো না।বলল রজনী।
–এটা কত নম্বর মিথ্যা কথা?
–জানা নেই!বলল রজনী।
–পাঁচ বছরে কতবার আমার সাথে ছলনা করেছো?বলল আব্রাহাম।
–হিসেবে নেই।
–তুমি এখনো বেঁচে আছো।এটাই তোমার ভাগ্য ভালো না রজনী।
–আমার বোন’কে আমি নিয়ে যাব।তুমি কেনো আমার বোন’কে তোমার কাছে রেখে দিবে।আমার বোনের-ও তো’ অধিকার আছে।তার পরিবারের সাথে জীবন কাটানোর।
–সত্যি তার পরিবার আছে।কিছুটা ভেবে বলল আব্রাহাম।
এই সুযোগে রজনী দৌড়ে কেবিনে’র বাহিরে চলে গেল।আর একটু হলে,প্রাণটা চলে যেন।রজনী’কে পালাতে দেখে আব্রাহাম মৃদু হাসলো।
–আমি তোমাদের পালাতে দিচ্ছি।তাই তোমরা পালতে পারছো?যেদিন আমার ধৈর্যের বাধ ভেঙে যাবে।সেদিন পুরো শিকদার পরিবার’কে লাশে পরিনত করবো।বলল আব্রাহাম।
কথা গুলো বলে-ই আয়াতে’র মলিন মুখের দিকে তাকালো আব্রাহাম।আয়াতে’র কপালে হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বলল।
–কি আছে তোমার মাঝে,সবার সাথে যুদ্ধ করে তোমাকে এখানে কেনো আটকে রেখেছি।তা’ আমি জানি না।তবে এটা জানি তুমি আমার মানসিক শান্তি।মানুষ মানসিক শান্তি ছাড়া ভালো থাকতে পারে না।ঠিক তেমনই,তোমাকে ছাড়া আমি ভালো থাকতে পারি না আয়াত।আমার মানসিক শান্তির জন্য হলে-ও তোমাকে আমার প্রয়োজন।
রজনী জোরে জোরে হেঁটে হসপিটাল থেকে বেড়িয়ে যাচ্ছিলো।ঠিক তখনই কারো সাথে ধাক্কা খায়।বিরক্ত হয়ে কিছু বলতে যাবে।ঠিক তখনই আবরার’কে দেখে থেমে যায়।কোনো কথা না বলে,পাশ কাটিয়ে চলে যাবে।ঠিক তখনই আরবার বলে উঠল।
–শুনেছি রজনী ফুল তার সুবাস দিয়ে,সবাই’কে মাতাল করে তুলে,কিন্তু আমি একটা রজনী ফুল দেখেছি।যার থেকে সুবাস তো’ দূর।ডিম পঁচা গন্ধ-ও আসে না।একদম বিষাদে ভরা।বলল আবরার।
–কেউ হয়তো জানে না।আমি বিষাদে’র ছোঁয়ায় আসক্ত।যে,আমার সুবাস নিতে আসবে,তাকে-ও বিষাদে’র স্বাদ গ্রহণ করতে হবে।বলেই রজনী চলে গেল।আবরার বিরক্ত মাখা মুখে রজনীর দিকে তাকিয়ে আছে।
–আমি হলাম গিয়ে বিষাদ শুষে,নেওয়া’র যন্ত্র।তোমার বিষাদ শুষে নিয়ে,তোমাকে যদি ভালোবাসার নেশায় আসক্ত না করেছি।তাহলে আমার নাম-ও আবরার না।বলেই হসপিটালের ভেতরে চলে আসলো।
আব্রাহাম আয়াতে’র কেবিন থেকে বেড়িয়ে নিজে’র কেবিনে’র দিকে যাচ্ছিলো।তখন-ই আব্রাহামে’র বেস্ট ফ্রেন্ড হিয়া আসে।আব্রাহামে’র সাথে হাঁটতে হাঁটতে বলল।
–আব্রাহাম আমার মনে হয়।তুই বেশি বেশি করে ফেলছিস।আয়াত’কে তাদের পরিবারের কাছে ফিরিয়ে দেওয়া উচিৎ।তুই কিন্তু নিজে-ও জানিস।আয়াত পা..পুরো কথা শেষ হবার আগেই আব্রাহাম হিয়া’র গাল চেপে ধরলো।ক্রোধিত কণ্ঠে বলল।
–বাকি কথা’টা নিজের ভেতরে-ই রাখ।ভেতরে’র কথা বাহিরে আসলে,তোর অবস্থা আমি কি করবো?তুই নিশ্চয়ই বুঝতে পারছিস।শুধু শুধু কেনো আমার পেছনে পড়ে আছিস।বলল আব্রাহাম।
–আব্রাহাম আমি তোর বেস্ট ফ্রেন্ড।তুই একটা বাহিরের মেয়ের জন্য আমার সাথে এমন ব্যবহার করতে পারিস না।
–বেস্ট ফ্রেন্ড মাই ফুট।তোকে কে বেস্ট ভাবে,তুই আমাকে বেস্ট ফ্রেন্ড ভাবিস।আমি না ওকে।বলেই আব্রাহাম চলে গেল।হিয়া অশ্রুভেজা নয়নে আব্রাহামে’র যাওয়া’র দিকে তাকিয়ে আছে।
অন্ধকার রুমের মধ্যে বসে আছে মারিয়া আর আকাশ।দু’জনের কপালে চিন্তার ভাজ।নীরবতা ভেঙে মারিয়া বলল।
–এত বছরের সাজানো প্ল্যান সবকিছু শেষ হয়ে যাবে।
–উফফ তুমি শুধু শুধু চিন্তা করছো।আমাদের জন্য বোকা আব্রাহাম আর আয়াত তো’ আছেই।বলেই দু’জনে হেঁসে দিল।
চলবে…..
#সে_আমার_মানসিক_শান্তি
#পর্ব_০১
#লেখিকা_Fabiha_bushra_nimu
(আসসালামু আলাইকুম।নতুন গল্প নিয়ে চলে আসলাম।কেমন হয়েছে সবাই জানাবেন।সবার রেসপন্স আশা করছি।এক মুঠো কাঁচের চুড়ি গল্পটা পড়ে যারা কষ্ট পেয়েছেন।তারা সবাই এটা পড়তে পারেন।কাউকেই নিরাশ করবো না।ইনশাআল্লাহ।)