সে আমার মানসিক শান্তি পর্ব -০২+৩

#সে_আমার_মানসিক_শান্তি
#পর্ব_০২
#লেখিকা_Fabiha_bushra_nimu

অন্ধকার রুমের মধ্যে বসে আছে আব্রাহাম।দু-চোখ অসম্ভব ভাবে রক্তিম বর্ন ধারন করেছে।অতিরিক্ত ক্রোধের কারনে কপালে’র রগ গুলো স্পষ্ট ভাবে ফুটে উঠেছে।সামনে হাত,পা বাঁধা অবস্থায় বসে আছে দু’জন ছেলে।নিজের দৃষ্টি শান্ত রেখে বলল।

–এবার বল তোরা ওদের খবর জানিস কি না?বলল আব্রাহাম।আব্রাহামে’র কথা শুনে,ছেলে দু’টো ছোট পিটপিট করে তাকালো।আব্রাহামে’র লোকেরা আগে-ই ছেলে দু’টো ‘কে মেরে আধমরা করে রেখেছে।যার ফলে ছেলে দু’টোর শরীর দূর্বল হয়ে পড়েছে।আব্রাহাম জোরে জোরে শ্বাস নিয়ে,নিজের ক্রোধ নিয়ন্ত্রণ করে যাচ্ছে।তাকে যে,করে-ই হোক।ওদের খুঁজে বের করতে হবে।আব্রাহামে’র কাছে সবকিছু গোলক ধাঁধাঁর মতো লাগছে।দু’হাতে নিজের চুল নিজেই টেনে ধরলো।

–ছোট একটা পৃথিবী তবু-ও কেনো খুঁজে পাচ্ছিস না।পৃথিবীর বাহিরে তো’ আর চলে যায় নাই।আমার থেকে-ও বড় খেলোয়াড় হয়ে গিয়েছে।আমার ভাইয়া!বলল আব্রাহাম।

–স্যার আমরা তো চেষ্টা করছি।শহরের অলিতে-গলিতে খুঁজেছি।আহনাফ স্যার আরোহী ম্যাডাম’কে নিয়ে কোথায় গা ঢাকা দিয়েছে।সেটাই বুঝতে পারছি না।বলল গার্ড।

আব্রাহাম গার্ডের কথা শুনে,মলিন হাসলো।তারপরে সামনে’র ছেলে দু’টোর দিকে তাকালো।আব্রাহামে’র চোখে চোখ পড়তে-ই ভয়ে কলিজা কেঁপে উঠল।আব্রাহাম শান্ত কণ্ঠে বলল।

–সত্য কথা বলো।ওরা কোথায়?সত্য কথা বলে দিলে,
বাঁচলে -ও বেঁচে যেতে পারো।যদি-ও আমি তোমাদের বাঁচিয়ে রাখবো না।আমি শুনেছি!তোমরা খুব বিশ্বাসী লোক।যার খাও তার সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করো না।তোমাদের দিয়ে আমার কোনো কাজ নেই।এই ময়লা পরিষ্কার করতে শুরু করে দে’।আব্রাহামে’র কথা শেষ হবার সাথে সাথে ভারি দেহের কালো পোশাক পড়া একদল লোক এসে,ছেলে দু’টো শরীর’রে ছুরি দিয়ে ছয়বার আঘাত করল।ছেলে দু’টোর চিৎকারে কেঁপে উঠল।রুমের প্রতিটি দেওয়াল।আশেপাশের সবাই স্বাভাবিক হয়েই আছে।তাদের দেখে মনে হচ্ছে,এটা কোনো ব্যপার না স্বাভাবিক।একজন গার্ড এসে,
আব্রাহামের হাতে লবন,আর ম*রি*চে*র* গুঁ*ড়ো* দিয়ে গেল।আব্রাহাম পৈশাচিক হাসিতে মেতে উঠল।লবন,আর ম*রি*চে*র* গুঁ*ড়ো* একসাথে মিশ্রণ করে নিল।তারপরে ছেলে দু’টোর ক্ষত স্থানে দিতে শুরু করল।সাথে সাথে ছেলে দু’টো অসহ্য যন্ত্রনায় ছটফট করতে লাগলো।তবু-ও পাষাণ আব্রাহামে’র মনে এতটুকু মায়া গলো না।কোনো কথা না বলে রুম থেকে বেড়িয়ে চলে গেল।

চোখে-মুখে বিষন্নতার ছাপ নিয়ে বাসায় প্রবেশ করল রজনী।রজনী বাসায় আসতে-ই সবাই মিলে,তাকে ঘিরে ধরলো।রজনীর মলিন মুখ দেখে রজনীর ছোট চাঁচি নিলুফা বলল।

–জানি পারোনি।আজকে-ও আয়াত’কে নিয়ে আসতে পারোনি।আমি ভালো করে-ই জানতাম।ঐ’ আব্রাহামে’র থেকে আয়াত’কে নিয়ে আসা এত সহজ না।ঐ ছেলেটা পুরো একটা সাইকো’।দেখলে-ই আমার ভয় লাগে।ঠান্ডা মাথায় খুন করে দিতে-ও দু’বার ভাববে না।

নিলুফার কথা শুনে রজনী’র মা মরিয়ম তেড়ে গেলেন,
নিলুফার দিকে।ঝাঁঝালো কণ্ঠে বলল।

–আমার মেয়ে তা-ও চেষ্টার ওপরে আছে।তোমার ছেলে কি করেছে?দু’দুটো ছেলে জন্ম দিয়েছো!আল্লাহ দিলে,এক ছেল-ও কাজের না।বসে বসে বাপের ভাত নষ্ট করছে।

–মুখ সামলে কথা বলবেন আপা।তিনটা মেয়ে জন্ম দিয়েছেন।বড় মেয়েটা তো পালিয়েছে।এখনো খুঁজে বের করতে পারেন নাই।ছোট মেয়ে পাগল হয়ে হসপিটালে পড়ে আছে।মেজো মেয়েকে এখনো একটা ভালো ছেলের সাথে বিয়ে দিতে পারেন নাই।আপনার মুখে এসব কথা মানায় না।আমার ছেলেদের নামে কেউ একটা বাজে রিপোর্ট দিতে পারবে না।বলল নিলুফা।

আজাদ শিকদার’কে দেখে ড্রয়িং রুমের সবাই চুপ হয়ে গেল।পরিবারের বড় ছেলে এবং প্রচন্ড রাগী হবার কারনে সবাই তাকে প্রচুর ভয় পান।আজাদ শিকদার গম্ভীর মুখে নিজের স্ত্রী এবং নিজের ছোট ভাইয়ের স্ত্রীর দিকে তাকিয়ে আছে।পুরো ড্রয়িং রুম জুড়ে পিনপিনে নীরবতা কাজ করছে।আজাদ শিকদার গম্ভীর কণ্ঠে বলল।

–তোমরা দু’জন বস্তির এলাকার বউদের মতো করছো কেনো?তোমাদের চিৎকার,চেচামেচি পাশের বাসার মানুষের কানে যায় না।ওরা কি ভাবে আমাদের নিয়ে,এলাকায় আমাদের যথেষ্ট সন্মান আছে।আশা করছি আমাদের মান -সন্মান নষ্ট হয়।এমন কোনো কাজ তোমরা করবে না।বলল আজাদ।

–বাবা এদের বুঝিয়ে কোনো লাভ নেই।কি দেখে এরা শিকদার বাড়ির বউ হয়েছে?আমার মাথাতে-ই আসে না।বলেই রাগে গজগজ করতে করতে নিজের রুমে চলে গেল।আজাদ শিকদার মেয়ে যাও’য়ার দিকে তিক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছেন।একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বাজারের ব্যাগ হাতে নিয়ে বাহিরে চলে গেলেন।

পরের দিন সকাল বেলা,হসপিটালের কোলাহলে ঘুম ভেঙে যায় আয়াতে’র।আড়মোড়া ভেঙে উঠে বসে।নার্স মারিয়া এসে বলল।

–গুড মর্নিং আয়াতপাখি।অবশেষে আমাদের প্রিন্সেসে’র ঘুম ভাঙলো।জানো কে এসেছে?মারিয়া’র কথায় আয়াত ভ্রু কুঁচকে তাকালো।মুখ’টা গম্ভীর করে বলল।

–কে এসেছে নার্স আন্টি?

–তোমার আব্রাহাম এসেছো গো’।তোমার প্রিয় বন্ধু।

আয়াত বিরক্ত মাখা মুখ করে বলল।আব্রাহাম কে?আয়াতের কথা শেষ হবার সাথে সাথে আব্রাহাম রুমে প্রবেশ করল।আয়াতের কাছে এসে বলল।

–আমার প্রিন্সেসে’র বুঝি খুব রাগ হয়েছে।এখন সে,তার প্রিয় বন্ধুকে চিনতে পারছে না?বলল আব্রাহাম।

–কি অদ্ভুত তুমি কে?আমাকে এসব নামে ডাকছো কেনো?আমি ছোট বাচ্চা নাকি!আমাকে একদম এসব নামে ডাকবে না।বলল আয়াত।আয়াতে’র কথা শুনে,
আব্রাহাম মিষ্টি হেসে বলল।

–তুমি আমার কাছে বাচ্চা!পাঁচ বছর ধরে,লালন-
পালন করে বড় করেছি।পড়াশোনা করাচ্ছি।তুমি এখানো আমার কাছে সেই ষোল বছরের ছোট্ট আয়াত-ই আছো।বলল আব্রাহাম।

–খোঁটা দিচ্ছো?কারা জানি আমাকে নিতে আসে।তাদের হাতে আমাকে তুলে দিলেই পারো।আমি জব পেলে তোমার সব টাকা পরিশোধ করে দিব।বলল আয়াত।

–রাগ শরীরে’র জন্য ভালো না।রাগ শরীরে’র জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর।বলল আব্রাহাম।

–আমাকে নিয়ে তোমার ভাবতে হবে না।আমি বড় হয়েছি।নিজের’টা নিজে ভাবতে পারবো।বলল আয়াত।

–আমার সাথে এভাবে কথা বলছো কেনো আয়াত?

–তাহলে তোমার সাথে কিভাবে কথা বলা উচিৎ!আমাকে একটু পরিষ্কার করে বলবে?তোমাকে কতবার বলেছি।তুমি ছাড়া পৃথিবীতে আমার কেউ নেই।আমাকে একা রেখে যেও না।তুমি চলে গেলে,সবাই আমাকে কষ্ট দেয়।কালকে-ও আমাকে কষ্ট দিয়েছে।ঘুমের মধ্যে বুঝতে পারি নাই।সবকিছু জানার পরে-ও তুমি কিভাবে আমাকে একা রেখে চলে যাও।সবাই স্বার্থপর জানো তো’!স্বার্থ ছাড়া কেউ কাছে আসে না।স্বার্থ ছাড়া কেউ ভালোবাসে না।তুমি’ও স্বার্থপর।তোমার যখন স্বার্থ টান পড়ে,তখন তুমি আমার কাছে আসো।তোমার স্বার্থ শেষ হয়ে গেলে,একা রেখে চলে যাও।আমি’ও আর কষ্ট পাব না।আমি বোকার মতো তোমার জন্য একা কষ্ট পাই।আর তুমি প্রয়োজন ছাড়া,আমার কথা মনেই করো না।একটা সময় আসবে আব্রাহাম তুমি আমার ভালোবাসা পাবার জন্য ছটফট করবে।তখন হয়তো অনেক বেশি দেরি হয়ে যাবে।আমি থাকবো।কিন্তু তোমার প্রতি আমার যে,ভালোবাসা সেটা আর থাকবে না।সেদিন তুমি খুব আফসোস করবে।কথা গুলো বলতে বলতে আয়াতে’র দু-চোখ অশ্রুকণায় ভরে এলো।আব্রাহাম আয়াতে’র দু-চোখের অশ্রুকণা গুলো মুছিয়ে দিতে আসবে।তখন-ই আয়াত আব্রাহাম’কে উদ্দেশ্য করে বলল।

–একদম আমাকে স্পর্শ করবে না।আয়াত নিজেই নিজের শক্তি।আয়াতে’র নিজের চোখের পানি মুছিয়ে দেওয়া’র জন্য অন্য কারো প্রয়োজন হয় না।তুমি যে,কাজে এসেছো।তুমি সেই কাজ করো।আমাকে দেখে,তোমার অশান্ত মন’কে শান্ত করো।তোমার ভেতরে যে,মানসিক অশান্তি কাজ করছে।তা’ মানসিক শান্তি’তে পরিনত করো।প্রয়োজন শেষ হলে,এখানে থেকে চলে যাও।তোমাকে দেখলে আমার ভিষণ অস্বস্তি বোধ হচ্ছে,আমার অনেক ক্ষুদা লেগেছে।তুমি চলে যাবার পরে, ফ্রেশ হয়ে খেতে বসবো।কথা গুলো বলে এক মুহুর্ত দাঁড়ালো না।দ্রুত ওয়াশরুমে চলে গেল।আব্রাহাম আহত দৃষ্টিতে আয়াতে’র যাওয়ার দিকে তাকিয়ে আছে।চিন্তিত হয়ে বলল।

–তবে কি মেয়েটা সত্যি বড় হয়ে গিয়েছে।অনেক সুন্দর গুছিয়ে কথা বলতে শিখেছে।এবার কি সত্যি আমাকে ছেড়ে চলে যাবে।আমি তো’ এটা হতে দিব না।তবে আয়াত সত্যি কথাই তো’ বলেছে।আমি নিজের প্রয়োজনে ওকে নিজের কাছে আঁটকে রেখেছি।সত্যি আমি নিজের জন্য স্বার্থপর হয়ে গিয়েছি।আয়াতের বলা কথা গুলো ভিষণ ভাবে আব্রাহামের বুকে ব্যথা দিচ্ছে।একটা মেয়ের জন্য দুর্বল হলে চলবে না।তবু-ও আব্রাহামে’র ভেতর থেকে কেউ একজন বলে উঠছে।দুর্বল তো তুই পাঁচ বছর আগেই হয়ে গিয়েছিস আব্রাহাম।নিজের রাগ নিয়ন্ত্রণ করতে না পেরে রুম থেকে বেড়িয়ে চলে গেল আব্রাহাম।দূর থেকে সবকিছু দেখছিল হিয়া।নার্স রিনা’কে উদ্দেশ্য করে বলল।

–একটা মেয়ে পড়াশোনা করছে।ঘুরতে যাচ্ছে।সঠিক ভুল বুঝতে পারছে।এই মেয়ে নাকি পাগল।আমার তো মনে হয়।পাগল আয়াত না।তোমাদের ডক্টর আব্রাহাম চৌধুরী উনি একটা পাগল।আব্রাহাম’কে ডক্টর কে বানিয়েছেন।ডক্টর আব্রাহাম’কে বয়কট করা হোক।হিয়ার কথা শুনে নার্স রিনা অদ্ভুত দৃষ্টিতে হিয়ার দিকে তাকালো।রিনার অদ্ভুত চাহনি দেখে হিয়া বিরক্ত হয়ে চলে গেল।
#সে_আমার_মানসিক_শান্তি
#পর্ব_০৩
#লেখিকা_Fabiha_bushra_nimu

আয়াত ফ্রেশ হয়ে ওয়াশরুম থেকে বেড়িয়ে আসলো।মলিন মুখ’টা নিয়ে জানালা’র কাছে গেল।জানালা’র পর্দা সরিয়ে দিতে-ই,সকালে’র মিষ্টি রোদ এসে,
আয়াতে’র মুখে ওপরে পড়লো।সাথে সাথে আয়াতে’র চোখ দু’টো ছোট ছোট হয়ে গেল।একটা দীর্ঘ শ্বাস ফেলে বলল।

–আমার কাজ হয়ে গিয়েছে আব্রাহাম!এবার আমাকে চলে যেতে হবে।আমার চলে যাবার সময় হয়ে এসেছে।আমি আমার কাজে সফল হয়েছি।বলে-ই হাসালো।আয়াত’কে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে নার্স রিনা বলল।

–দাঁড়িয়ে আছো কেনো?কত বেলা হয়ে গিয়েছে!আসো খেয়ে নিবে।আয়াত কোনো উওর করল না।চুপচাপ খেতে বসলো।

“দীর্ঘ এক মাস পরে নিজের বাসায় পা রাখলো’ আব্রাহাম।কোনো কথা না বলে,নিজের রুমের দিকে যাচ্ছিলো।তখন-ই আব্রাহামে’র বাবা সফিউল চৌধুরী গম্ভীর কণ্ঠে বলল।

–এভাবে বেয়াদবে’র মতো কোনো কথা না বলে,নিজের রুমে চলে যাচ্ছো কেনো?এখানে বড়রা বসে আছে।তাদের সাথে কথা না বলে-ই চলে যাচ্ছো।

–তুমি তোমার বউ’কে নিয়ে বসে আছো!আমার তো আর বউ নেই।যে,আমি বউয়ের রুমে যাব।এভাবে আমাকে পিছু ডাকবে না।আমি প্রচন্ড ক্লান্ত।বলল আব্রাহাম।

–একটা বাহিরের মেয়ের পেছনে ছুটতে ছুটতে নিজের,কি হাল করেছো দেখেছো?কি হয় ঐ’ মেয়ে তোমার?এভাবে কেনো তার পেছনে পড়ে আছো?মেয়েটা’র পরিবারের কাছে মেয়েটা’কে ফিরিয়ে দিয়ে আসবে।

–আয়াত নাকি,তোমার ছেলের মানসিক শান্তি।তাই ঐ’ মেয়ে’কে জোর করে,নিজের কাছে আঁটকে রেখেছে।অথচ মেয়েটা একদম সুস্থ।আব্রাহাম এটা নিজে-ও জানে,আর মেয়েটা-ও কিছু বলে না।তোমার বড় ছেলে একটা মেয়ে’কে নিয়ে গা ঢাকা দিয়েছে।আর ছোট ছেলে একটা মেয়ে’কে জোর করে আঁটকে রেখেছে।তোমার দুই ছেলের তুলনায়।তোমার মেজো ছেলে কত ভালো তাই না বলো আব্বু।বলল আবরার।

সফিউল চৌধুরী গম্ভীর দৃষ্টিতে মেজো ছেলের দিকে,
তাকালেন।আবরার শান্ত হয়ে দাঁড়িয়ে আছে।নীরবতা কাটিয়ে আব্রাহাম বলে উঠল।

–আয়াত আমার কাছে থাকবে।আয়াত’কে নিয়ে কোনো কথা হবে না আব্বু।

–তুমি একটা বেয়াদব।সেটা কি তুমি জানো?

–তুমি জানোই আমি বেয়াদব তাহলে,তুমি আমার সাথে কথা বলতে আসো কেনো?বলল আব্রাহাম।

–ঐ’ মেয়ে’কে আমি,ওর পরিবারের হাতে তুলে দিব।কথা’টা শেষ হবার সাথে সাথে ড্রয়িং রুমে থাকা কাঁচের ডাইনিং টেবিল’টা টুকরো টুকরো হয়ে গেল।আব্রাহামে’র দু-চোখ মুহুর্তে’ট মধ্যে রক্তিম বর্ন ধারন করল।নিজের ক্রোধ নিয়ন্ত্রণ করতে না পেরে,ডাইনিং টেবিলে সজোরে লাথি বসিয়ে দিয়েছিল।সফিউল চৌধুরী নিজেকে আর নিয়ন্ত্রণ করতে পারলেন না।উঠে এসে ছেলের গালে কষে থাপ্পড় বসিয়ে দিল।আব্রাহাম মায়ের দিকে তাকিয়ে,দু-হাত মুষ্টি বদ্ধ করে রেখেছে।সফিউল চৌধুরী আব্রাহাম’কে উদ্দেশ্য করে বলল।

–কি হয় ঐ মেয়ে তোমার?এভাবে একটা মেয়েকে জোর করে আঁটকে রাখার কারন কি?তুমি সংসারে ক’টাকা দাও।আমার অনুমতি ছাড়া।আমার বাসার জিনিস ভাঙার সাহস কোথায় পেলে তুমি?তোমার মতো অসভ্যের কোনো জায়গা আমার বাসায় নেই।যে,রাস্তা দিয়ে এসেছো?ঠিক সেই রাস্তা দিয়ে বের হয়ে চলে যাও।ক্ষতি ছাড়া,ভালো করতে কখনো আমাদের কাছে আসো না।বলেই নিজের রুমে চলে গেলেন।

আব্রাহাম আগের ন্যায় দাঁড়িয়ে আছে।আব্রাহামে’র মা সায়েলী চৌধুরী দ্রুত গতিতে ছেলের কাছে আসলেন। আব্রাহাম’কে স্পর্শ করতে যাবে।তখন-ই আব্রাহাম সরে দাঁড়ালো।শান্ত দৃষ্টিতে মায়ের দিকে চেয়ে আছে।শান্ত কণ্ঠে বলল।

–আচ্ছা আম্মু আমি আদৌও তোমাদের সন্তান তো’। আব্বু সব সময় আমার সাথে এমন ব্যবহার করে কেনো?আমাকে রাগাতে নিষেধ করবে।আমি রেগে গেলে,ফলাফল ভালো হবে না।উনার বাসায় কে আসতে চায়।আমি কখনো বলেছি।আমি উনার বাসায় আসবো।উনি নিজ থেকে ফোন দিয়ে নিয়ে আসেন।বরাবরের মতোই আমাকে অপমান করেন।উনি আমাকে খাওয়ান না।আবার পড়ান-ও না।তাই উনার মুখে এসব কথা মানায় না।ছোট বেলা থেকে অবহেলা করে আসছেন।উনি এত ভালো।তাহলে উনার বড় ছেলে কেনো?উনার কথা না ভেবে,একটা মেয়ে’কে নিয়ে পালিয়ে গেল?আমাকে কখনো এই বাসায় আর ডাকবে না।বলেই আব্রাহাম চলে গেল।নিজের বাবা হয়ে,কিভাবে নিজের ছেলেকে,এতটা অবহেলা করতে পারে।সেটাই ভেবে পায় না আব্রাহাম।

মারিয়া রুমে প্রবেশ করতে-ই চোখ কপালে উঠে গেল।পুরো রুম এলোমেলো হয়ে আছে।রুমের কিছু আসবাবপত্র ভেঙে টুকরো টুকরো হয়ে পড়ে আছে।মায়িয়া বিরক্ত হয়ে আকাশ’কে বলল।

–সমস্যা কি তোমার?এভাবে রুমের জিনিস গুলো ভেঙে ফেলেছো কেনো?কত কষ্ট করে টাকা রোজগার করি?সেই টাকায় একটু একটু করে,সংসারে’র সবকিছু তৈরি করেছি!আর তুমি সবকিছু ভেঙে ফেলেছো?বলল মারিয়া।

–তুমি একাই কামাই করো?আমি মনে হয়,কিছু করি না।তুমি কামাই করো।আর আমি বসে বসে খাই!বলল আকাশ।

–কি হয়েছে এভাবে কথা বলছো কেনো?

–আমাদের পাশের বাসায় শিহাব আর নিলয় আছে না।ওরা দুই ভাই গাড়ি এক্সিডেন্ট করে মারা গিয়েছে।

–কি বলছো এসব?আকাশ মারিয়া’র কাছে এসে,কিছু একটা বলল।তারপরে দু’জনে-ই ভয়ে চুপসে গেল।

আয়াত কলেজে যাবার জন্য রেডি হয়েছে।পরীক্ষার দিনগুলোতে আয়াত কলেজে যায়।আজকে-ও,তার ব্যতিক্রম নয়।অন্যদিন আব্রাহামে’র সাথে যায়।আজকে সে,একা একা যাবে।আয়াত রুম থেকে বেরোতে-ই,
আব্রাহাম’কে দেখতে পেল।রক্তিম চক্ষু নিয়ে আয়াতে’র দিকে তাকিয়ে আছে।আয়াত পাশ কাটিয়ে চলে যাবে।এমন সময় আব্রাহাম আয়াতে’র হাত ধরে ফেলে।এতে আয়াত বিরক্ত হয়।

–সমস্যা কি?হাত ছাড়ো আমার?আজকে আমার পরীক্ষা আছে।আমাকে যেতে হবে,আমার দেরি হয়ে যাচ্ছে।

–প্রতিদিন আমার সাথে যাও।আজকে একা একা যাচ্ছো কেনো?তুমি কোনো ভাবে আমাকে ইগনোর করছো?

–তুমি কি এমন এসে গিয়েছো?যে,তোমাকে মহামূল্যবান কিছু মনে করতে হবে।আয়াতে’র কথা শুনে,আব্রাহাম আয়াতের গাল চেপে ধরে বলল।

–খুব সাহস হয়ে গিয়েছে তাই না।বেশি আদর দিয়ে,
যেমন মাথায় তুলেছি।মাথা থেকে কিভাবে নামাতে হয়।সেটা-ও আমি ভালো করেই জানি।বলল আব্রাহাম।

–তুমি আমার গায়ে হাত তোলার কে?একদম আমার শরীরে স্পর্শ করবে না।আমার দেরি হয়ে যাচ্ছে।আমাকে যেতে দাও।আয়াতে’র কথা শেষ হবার,সাথে সাথে আব্রাহাম আয়াতে’র হাত ধরে নিয়ে চলে গেল।আয়াত কিছু বলছে না।চুপচাপ আব্রাহামে’র সাথে যাচ্ছে।

আব্রাহাম গাড়িতে আয়াত’কে বসিয়ে দিয়ে,নিজে-ও গাড়িতে উঠে বসলো।তারপরে কোনো কথা না বলে চুপচাপ গাড়ি চালাতে শুরু করল।অন্যদিন আয়াত বকবক করে আব্রাহাম’কে বিরক্ত করে তুলতো।কয়েকদিনের ব্যবধানে মেয়েটা এতটা বদলে গেল।আয়াতে’র বদলে যাওয়াটা,কেনো আব্রাহাম’কে এতটা কষ্ট দিচ্ছে।ভেতর’টা জ্বালিয়ে পুড়িয়ে ছারখার করে দিচ্ছে।বুকের বা পাশে অসম্ভব ভাবে ব্যথা অনুভব করছে,আব্রাহাম।আয়াত আড়চোখে আব্রাহাম’কে বিধস্ত হতে দেখে, অধরের কোণে তৃপ্তির হাসি ফুটিয়ে তুললো।গাড়িটা আয়াতে’র কলেজে’র দিকে যাচ্ছে না দেখে,আয়াত আব্রাহামে’র দিকে প্রশ্ন ছুড়ে দিল।

–এটা তো’ আমার কলেজে’র রাস্তা না।তুমি আমাকে নিয়ে কোথায় যাচ্ছো?

–তার কৈফিয়ত তোমাকে দিতে হবে?

–অবশ্যই দিতে হবে,আমাকে নিয়ে যাচ্ছো?আমাকে কৈফিয়ত দিবে না।তাহলে কাকে দিবে?

–আব্রাহাম কাউকে কৈফিয়ত দেয় না।

–আয়াত-ও যার তার সাথে যায় না।তুমি গাড়ি থামাবে,তা-না হলে আমি গাড়ি থেকে লাফ দিব।

–এসব ডায়লগ কমন হয়ে গিয়েছে।নতুন কিছু আবিষ্কার করো মাই প্রিন্সেস।

–তুমি একটা অসহ্যকর ছেলে।

–তুমি এই অসহ্যকর ছেলেটা’র জন্য,দু’দিন আগে পাগল ছিলে,এখন এত ভাব নেওয়া’র কিছু হয় নাই।

–পাগল ছিলাম।এখন আর পাগল নেই।নিজের ভালো নিজে বুঝতে শিখেছি।ভাগ্যে আর মানুষের মন কখন,
কিভাবে বদলে যায়।তা’ বোঝা বড় দায়।বলল আয়াত।

–আমি যতদিন আছি।তোমার মন-ও আমার।তুমি-ও আমার।তাই তোমার এসব অদ্ভুত কথা তোমার কাছে রাখো।

–তুমি আমার কে?

আব্রাহাম প্রশ্নের উত্তর দিল না।গাড়িটা একটা রেস্টুরেন্টের সামনে এসে দাঁড়ালো।আব্রাহাম আয়াত দু’জনে-ই গাড়ি থেকে বের হয়ে আসলো।আব্রাহাম আয়াতে’র হাত ধরে ভেতরে নিয়ে গেল।একটা কেবিনে’র মধ্যে গিয়ে দু’জন বসলো।আশেপাশে কেউ নেই।কেমন সুনশান জায়গা।আয়াতে’র পুরো শরীর কেঁপে উঠল।আব্রাহাম আয়াতে’র দিকে তাকিয়ে বলল।

–ভয় লাগছে?

–ভয় পবার মতো কোনো কাজ করছি?

আব্রাহাম আয়াতে’র হাতের ওপরে হাত রেখে আয়াতের কানের কাছে গিয়ে শীতল কণ্ঠে বলল।

–একটা ছেলের সাথে একা নির্জন জায়গায় বসে আছো?তোমার ভয় লাগছে না।আব্রাহামে’র শীতল কণ্ঠে বলা কথা গুলো আয়াতে’র শরীরে অদ্ভুত এক অনুভূতির জানান দিয়ে গেল।আয়াত নিজেকে স্বাভাবিক রেখে,আব্রাহামে কানের কাছে গিয়ে আস্তে করে বলল বলল।

–একজন স্বামী তার স্ত্রী’কে ভয় দেখাচ্ছে,তার স্ত্রী তার স্বামীর কাছে নিরাপদ কি না?আয়াতে’র কথা শুনে আব্রাহাম চোখ বড় বড় করে তাকালো।গম্ভীর কণ্ঠে বলল।

–কি বললে?

–বললাম যে,আজকে অসভ্যের মতো কথায় কথায় আমার হাত ধরছো কেনো?আগে কখনো ধরতে না।এমন ভাবে আমার হাত ধরছো?মনে হয় আমি তোমার বউ?

–আমাকে ছেড়ে সত্যি চলে যাবে আয়াত?

–তো’ আমি সারাজীবন তোমার কাছে বসে থাকবো নাকি।আমার থেকে দুরত্ব বজায় রেখে চলেব।কথায় কথায় কাছে আসা,আমি একদম পছন্দ করি না।বলেই আব্রাহামের থেকে দুরত্ব বজায় রেখে বসলো।

চলবে…..
চলবে…..

(

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here