সে আমার মানসিক শান্তি পর্ব -১৮+১৯

#সে_আমার_মানসিক_শান্তি
#পর্ব_১৮
#লেখিকা_Fabiha_bushra_nimu

“কিরে তুই এই ভর সন্ধ্যা বেলা কোথায় গিয়েছিলি।তোকে কতদিন নিষেধ করেছি।চুল খোলা রেখে সন্ধ্যা বেলায় বাসা থেকে বের হবি না।মায়ের কথা শুনে, চুপ রইলো আয়াত।আয়াত কিছু বলছে না দেখে,আয়াতে’র মা আয়াতের দিকে তেড়ে আসতে যাবে।তখনই আয়াত নিজের জিনিস গুলো নিয়ে ওপরে দৌড় দিল।তার মা যদি জানতে পারে, সে আব্রাহাম’কে বাহিরে থেকে কথা বলে বিদায় করেছে।তাহলে সারা রাজ্যের জ্ঞান দিতে শুরু করবে।আয়াতে’র মনটা আজকে ভালো নেই।কারো কথাই শুনতে ইচ্ছে করছে না।

“আবরার’কে বাসায় নিয়ে আসা হয়েছে।আবরার মোটামুটি এখন বেশ খানিক’টা সুস্থ হয়েছে।তবে আব্রাহাম তাকে কয়টা দিন বাসায় থাকতে বলেছে।আবরারের শরীর’টা প্রচন্ড দুর্বল। তাছাড়া অতিরিক্ত ডিপ্রেশনে থাকার কারণে বারবার অসুস্থ হয়ে পড়ছে।ভাইয়ের চিন্তার কারণ ধরতে পারলো না আব্রাহাম।তার ভাই কি নিয়ে এত চিন্তা করে,আবরারের কাছে তো সবকিছু আছে।তাহলে আবরারের এত চিন্তা কিসের?ভেবে পায় না আব্রাহাম।

“স্রোতের ন্যায় গড়িয়ে চলছে সময়।যতদিন যাচ্ছে।ততই কাঙ্খিত দিনের দিকে অগ্রসর হচ্ছে সময়।আয়াত আর আব্রাহামে’র বিয়ের আর মাত্রা পাঁচ দিন বাকি আছে।সবাই প্রচুর ব্যস্ত।দুই পরিবারের খুশি ঝরে ঝরে পড়ছে।নিজের প্রিয় মানুষ’টাকে নিজের করে পাবার মতো সুন্দর অনুভূতি কোথাও নেই।আয়াত’ও তার ব্যতিক্রম নয়।মেয়ে’টা চব্বিশ’টা ঘন্টার মধ্যে যতক্ষণ সজাগ থাকে।তার অধরের কোণে হাসি সব সময় হাসি বিরাজমান করে।সব সুখ যেনো আয়াতে’র দখলে।অপেক্ষার প্রহর গুলো এত দীর্ঘ হয় কেনো? খুব সহজে যেতেই চায় না।কেমন অস্থিরতা বাড়িয়ে তুলে।সে কথা ভেবে পায় না আয়াত।

“আজকে সবাই মিলে,শপিং করতে এসেছে।আয়াত আব্রাহামে’র সাথে ঘুরে ঘুরে নিজের পছন্দের জিনিস গুলো কিনছে।আব্রাহাম অপরাধীর ন্যায় আয়াতে’র দিকে তাকিয়ে আছে।কিছু দিনের ব্যবধানে সে,মেয়েটার সমস্ত হাসি কেঁড়ে নিবে।যে চোখে তার জন্য অফুরন্ত ভালোবাসা দেখেছিল।সেই চোখে তার জন্য ঘৃণার আবরণ তৈরি হবে।আয়াতে’র নিঃস্বার্থ ভালোবাসার প্রতিদানে,সে আয়াত’কে দিবে বুক ভরা দীর্ঘশ্বাস। নির্ঘুম রাত্রি।আর চোখের জল।যে চোখের মায়ায় সে পড়েছিল।সেই চোখে নিজ দায়িত্বে জলে পরিপূর্ণ করে দিবে, ভাবতেই বুকের মধ্যে চিনচিনে ব্যথা অনুভব করল আব্রাহাম।সময় যত অগ্রসর হচ্ছে,আব্রাহামে’র ভেতরে ততই ভয় কাজ করছে।এই প্রথম আব্রাহাম ভয় পাচ্ছে।আয়াত’কে হারিয়ে ফেলার ভয়।

–তোমার কি শরীর খারাপ লাগছে?তোমার মুখ’টা কেমন মলিন দেখাচ্ছে!তুমি কি বাসায় যাবে।আয়াতে’র কথা শুনে হুস আসলো আব্রাহামে’র।আয়াতে’র দিকে তাকিয়ে মলিন হেসে বলল।

–শরীর খারাপ লাগবে কেনো?তোমার কেনা শেষ হয়ে গিয়েছে।

–হ্যাঁ চলো সবার কাছে যাই।বলেই দু’জন সবার কাছে আসলো।কেনাকাটা শেষ করে।যে যার মতো বাসায় চলে গেল।রজনী বিছানা গুছিয়ে ঘুমোনোর প্রস্তুতি নিচ্ছিল।তখনই আবরার আসে,রজনী’র হাতে ফুল দিয়ে বলল।

–এগুলো তোমার জন্য।

–এই সস্তার দশ টাকার ফুল তুমি আমার জন্য নিয়ে এসেছো।তোমার মন এতো ছোট কেনো?ডাক্তারি করো।মাসে মাসে ভালো টাকা ইনকাম করো।তোমার কাছে থেকে সামান্য ফুল উপহার আশা করা যায় না।

–তুমি খুশি হও নাই।আমি তো জানি মেয়েরা ফুল পেলে, অনেক খুশি হয়।তাই তোমার জন্য ফুল কিনে নিয়ে আসলাম।আচ্ছা তোমার কি লাগবে বলো।আমি তোমাকে তোমার পছন্দের সবকিছু কিনে এনে দিব।

–দেওয়ার মন থাকলে বলা লাগে না।নিজ থেকে দেওয়া যায়।তোমার মতো ছোট মন মানসিকতার মানুষ বুঝবে কিভাবে।

–রজনী আমি জানি আমি একটা ভুল করেছি।আমি তার জন্য অনুতপ্ত।আয়াত আর আব্রাহাম’কে আলাদা করার পরে একটা মুহুর্ত আমি ভালো থাকতে পারছিলাম না। অপরাধবোধ আমার’কে কুঁড়ে কুঁড়ে শেষ করে দিচ্ছিলো। আয়াত আর আব্রাহামে’র বিয়ের কথা শুনে,আমার থেকে বেশি খুশি কেউ হয় নাই।নিজের অপরাধের বোঝা কিছুটা হলে-ও হালকা লাগছিল।আয়াত আর আব্রাহাম যদি আমাকে ক্ষমা করে দিতে পারে।তাহলে তুমি কেনো আমাকে মাফ করে দিচ্ছো না।তোমার মন পাবার আমি জন্য কি করছি না। তবু-ও তোমার মন পাচ্ছি না।তোমার মনের মতো হয়ে চলার চেষ্টা করছি।তোমাকে ভালো রাখা আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।তবু-ও তোমার মনে আমার জন্য এতটুকু মায়া তৈরি করতে পারলাম না।তুমি তো আমার অর্ধাঙ্গিনী।তোমার আমাকে আগে মাফ করা উচিৎ ছিল।সঠিক ভুল চোখে আঙুল দিয়ে দেখানো উচিৎ ছিল।আমি যেনো আর কখনো কোনো ভুল কাজ না করি।সে বিষয়ে সতর্ক করা উচিৎ ছিল। এসব কিছুই করো না।তোমাকে ভালোবেসে আমি পেয়েছি শুধু অবহেলা।দিন দিন তোমার অবহেলার মাত্র বেড়েই যাচ্ছে।সবকিছু ভুলে,আমাদের সম্পর্ক’টাকে একটা সুযোগ দেওয়া যায় না।আমাকে একটা বার ভালোবেসেই দেখো না।আমার মনের রাজরাণী করে রাখবো।

–প্রথমমত আমি তোমাকে পছন্দ করি না।তুমি আমাকে জোর করে বিয়ে করেছো?আর তুমি এমন একটা মানুষ যাকে কখনো ভালোবাসা যায় না।তোমাকে দেখলেই আমার বিরক্ত লাগে।কি দেখে আমি তোমাকে ভালোবাসবো বলতে পারো।কি গুন আছে তোমার মাঝে,স্বার্থপর ছেলে একটা।রজনী’র কথা শুনে আবরার মলিন হাসলো।

–আমার জানামতে তোমার কোনো রিলেশন ছিল না।যদি থাকতো তাহলে কোনোদিন তোমাকে বিয়ে করতাম না।তুমি তোমার বাবা-মায়ের কথায় বিয়ে করেছো।আজ আমার জায়গায় অন্য কেউ থাকলে,
তুমি ঠিক এই ভাবে তাকে-ও অবহেলা করতে?নাকি আমি বলে প্রতিশোধ নিচ্ছো।

–তোমার জায়গায় অন্য কেউ থাকলে,তাকে মাথায় করে রাখতাম।সবাই তোমার মতো স্বার্থপর আর বিরক্তিকর মানুষ না।তোমার জন্য আমার মনে যা আছে।তা সবই ঘৃণা।তোমার জন্য আমার মনে কোনো দিন ভালোবাসা তৈরি হবে না।এটা তুমি শিওর থাকতে পারো।

–রজনী আমি’ও একটা মানুষ।তোমার বুঝতে হবে।আমার ও মন আছে।চাওয়া পাওয়া আছে।চলো না সবকিছু ভুলে যাই।আবার সবকিছু নতুন করে শুরু করবো।বিশ্বাস করো।আমরা অনেক ভালো থাকবো।দুঃখের ছোঁয়া আর আমাদের গ্রাস করতে পারবে না।

–তোমার সাথে থাকলে সুখ আমার কপালে কোনোদিনই ধরা দিবে না।তুমি তোমার এই ফুল নিয়ে মুখের সামনে থেকে দূর হয়ে যাও।তুমি যতক্ষণ বাসায় থাকো না ।আমি শান্তিতে থাকি।বাসায় আসলেই অশান্তি বোধ করি।কবে যে,তোমার থেকে মুক্তি পাব।তোমার থেকে মুক্তি পেলে,আমার শান্তি হবে।আমার বাবা-মা একটা অশান্তি আমার জীবনে চাপিয়ে দিয়েছে।মাঝে মাঝে মনে হয় সব ছেড়ে চলে যাই।বাবার মুখের দিকে তাকিয়ে বাধ্য হয়ে,তোমার কাছে পড়ে আছি। চাইলে তুমি’ও আমাকে ছেড়ে দিতে পারো।বেঁচে যাই আমি।রজনীর কথা গুলো আবরারের বুকে ধারালো অস্ত্রের মতো আঘাত করলো।রক্তিম চোখে রজনীর দিকে তাকিয়ে আছে।

–যা বলছো ভেবে বলছো তো?

–এত ভাবাভাবির কিছু নেই।তুমি মারা গেলে-ও আমার কিছু যাবে আসবে না।বরং আমি একটা অশান্তির জীবন থেকে মুক্তি পাব।রজনী’র কথা শেষ হবার সাথে সাথে রজনী’র ফ্রেন্ড নিলয়ের ফোন আসলো।রজনী বিরক্ত হয়ে, আবরারের নিয়ে আসার ফুলের ওপরে পা দিয়ে নিচে নামলো।একটা ফুল রজনী’র শাড়ির সাথে বেঁধে যাওয়ায় রজনী ফুলগুলো নিয়ে ময়লার ঝুরির মধ্যে ফেলে দিল।আবরারের দিকে না তাকিয়ে ফোনে কথা বলতে বলতে বেলকনিতে চলে গেল।আবরার একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়লো।আজ বহু বছর পরে আবরারের দু-চোখ বেয়ে নোনাজল গড়িয়ে পড়লো।ভেতর’টা দুমড়ে মুচড়ে যাচ্ছে।সে কি অসহ্য যন্ত্রণা।তা বাহিরে প্রকাশ করে যেত।তাহলে রজনী সব কষ্ট ভুলে আবরারের বুকে মাথা রাখতো।আবরার ফুল গুলোর দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকলো।তারপরে নিঃশব্দে রুম ত্যাগ করলো।

পরের দিন সকাল বেলা আয়াত বাসার দোকানের সামনে ডিম কিনতে এসেছে।আয়াতে’র আম্মুর সাথে আয়াতে’র চাচির একটু মনমালিন্য হয়েছে।তাই সকাল সকাল আয়াত’কে উঠে দোকানে আসতে হয়েছে।আয়াত ডিম কিনে বাসার দিকে আসছিল।হঠাৎ করে কেউ পেছন থেকে আয়াতের মুখে রুমাল চেপে ধরলো।আয়াত হাতের ডিম গুলো ফেলে ছটফট করতে লাগলো।কয়েক সেকেন্ডের ব্যবধানে আয়াত সেন্সলেস হয়ে গেল।আয়াত সেন্সলেস হয়ে যেতেই আয়াত’কে দ্রুত গাড়িতে তোলা হলো।সবকিছু বুঝে ওঠার আগেই যেনো শেষ হয়ে গেল।

চলবে…..#সে_আমার_মানসিক_শান্তি
#পর্ব_১৯
#লেখিকা_Fabiha_bushra_nimu

নিস্তব্ধ রাত,বাঁকা চাঁদ মন খারাপ সাথে নিয়ে,বাসায় ফিরলো আবরার।রুমে এসে কোনো কথা না বলে,
চুপচাপ ফ্রেশ হতে চলে গেল।অন্য দিন হলে,আগে রজনী’কে প্রশ্ন করতো।সে, খেয়েছে কি না?সারাদিন বাসায় তার কোনো সমস্যা হয়েছে কি না?কিন্তু আজকে তার ব্যতিক্রম।আবরারের এমন শান্ত হয়ে যাওয়াটা কেমন জানি ঠেকলো রজনী’র কাছে।ভ্রু কুঁচকে ওয়াশরুমের দিকে তাকিয়ে আছে।একটু পরে আবরার ফ্রেশ হয়ে বেড়িয়ে আসলো।কোনো কথা না বলে, বেলকনিতে চলে গেল।রজনী যেদিকে পাত্তা দিল না।নিজের কাজে মন দিল।একটু পরে রজনীর নাসারন্ধ্রে নিকোটিনের গন্ধ ভেসে এলো।কৌতুহল বশত বেলকনির দিকে এগিয়ে গেল।বেলকনিতে আসতেই রজনী’র চোখ বড় বড় হয়ে গেল।এতদিন হয়ে গেল, আবরারের সাথে তার পরিচয়।কোনোদিন আবরার’কে ধুমপান করতে দেখে নাই।আজকে আবরার ধুমপান করছে।নিজের চক্ষুদ্বয়’কে বিশ্বাস করতে কষ্ট হচ্ছে,
রজনী’র।আবরার নিজের মতো,নিকোটিনে’র ধোঁয়ার সাথে,নিজের দুঃখ গুলো উড়িয়ে দিতে ব্যস্ত।রজনী কঠিন হয়ে আবরারের সামনে গেল।রাগান্বিত হয়ে বলল।

–তোমার সমস্যা কি?তুমি এসব করে,কি প্রমান করতে চাইছো?সবার সামনে আমার খারাপ প্রমাণ করতে চাইছো?যে,আমার জন্য তুমি দিন দিন খারাপ হয়ে যাচ্ছো?আমার সাথে থাকতে হলে,এসব করতে পারবে না।রজনী’র কথা শুনে,আবরার সোজাসাপটা উত্তর দিল।

–তোমার সাথে কে থাকতে চাইছে?

–মুখে দেখছি খই ফুটেছে।এগুলো খেতে হলে,বাসার বাহিরে গিয়ে খাবে।বাসার মধ্যে খেতে পারবে না।ধুমপানের ধোঁয়ায় আমার সমস্যা আছে।এই জন্য তোমার সাথে থাকতে ইচ্ছে করে না।দিন দিন বিপথে চলে যাচ্ছো।বলেই আবরারের হাত থেকে সিগারেট’টা নিয়ে,ফেলে দিল।সাথে সাথে আবরার ধমকে উঠলো।রক্তিম চোখে রজনী’র দিকে তাকালো।

–তোমার সাহস কি করে হয়।আমার জিনিসে হাত দেওয়া’র।আমি তোমাকে আমার জিনিসে হাত দেওয়ার অধিকার দিয়েছি।আর কখনো আমার জিনিসে হাত দেওয়ার মতো দুঃখ সাহস দেখাবে না।তা-না হলে আমার থেকে খারাপ কেউ হবে না।আচমকা আবরারের ধমকে কেঁপে উঠলো রাজনী।অবাক নয়নে আবরারের দিকে তাকিয়ে আছে।এক দিনের ব্যবধানের মানুষ’টার এতটা পরিবর্তন হয়ে গেল।কথায় আছে না।অতিরিক্ত কোনো কিছুই ভালো না।আবরার রজনী’কে হালকা ধাক্কা দিয়ে রুমে চলে গেল।রুমে লাইট অফ করে শুইয়ে পড়লো।আবরারের এমন ব্যবহারে না চাইতে-ও রজনী’র ভেতরে খারাপ লাগা কাজ করছে।অদ্ভুত এক খারাপ লাগা কাজ করছে।কেমন জানি নিজেকে অসহায় বোধ মনে করছে।

চারিদিকে মানুষের কোলাহল।দুই পরিবার জুড়ে মেহমান গিজগিজ করছে।আজকে আব্রাহাম আর আয়াতে’র বিয়ে, সবাই নিজ নিজ কাজে ব্যস্ত হয়ে আছে।কেউ বা আড্ডায় জমেছে বেশ।গল্পে গল্পে,আড্ডায় আড্ডায় জমে উঠেছে বিয়ে বাড়ি।চারদিকে সুখের ছোঁয়া দিয়ে পরিপূর্ণ হয়েছে পরিবেশ।
কোনো কালো ঝড় এসে,সবকিছু তচনচ করে দিয়ে যাবে না তো?

“আব্রাহাম’কে সকাল সকাল তৈরি হতে দেখে,ভ্রু কুঁচকালো আবরার।গম্ভীর মুখ করে আব্রাহামের দিকে এগিয়ে আসলো।কণ্ঠে গম্ভীরতা বজায় রেখে বলল।

–এত সকাল সকাল কোথায় যাচ্ছিস।আজকে তোর বিয়ে,সেটা তোর মাথায় আছে?

–ভাইয়া আমি একটু গুরুত্বপূর্ণ কাজে যাচ্ছি।বিয়ে সন্ধ্যায় হবে।আমি দুপুরের আগে ফিরে আসবো।

–আজকে ভাই হিসেবে তোকে একটা কথা বলবো রাখবি।

–তোমার সব কথা শুনবো।আগে আমি কাজ’টা শেষ করে আসি।

–আজকে কোথাও যাস না আব্রাহাম।তোকে নিয়ে সবাই অনেক বড় খেলা খেলছে।তুই ওদের জালে পা দিস না।তুই আহনাফ ভাইকে খুঁজে পাবি না।তুই ওদের কাছে গেলে,ওরা তোকে আঁটকে দিবে।আমি জানি আমি অনেক অন্যায় করেছি।আমার কথা বিশ্বাস করতে চাইবি না।কিন্তু আমার কথা গুলো বিশ্বাস করে দেখ।কথা দিলাম তুই ঠকবি না।এভাবে মেয়েটা’কে হারিয়ে ফেলিস না।আয়াত তোকে অনেক ভালোবাসে,
নিজকে নির্দোষ প্রমাণ করার চেয়ে,প্রিয় মানুষ টাকে আপন করে নেওয়াটাই শ্রেয়।কিছু প্রিয় জিনিস জীবন বারবার আসে না।

–আমি বেশি সময় নিব না।যাব গিয়ে দেখে চলে আসবো।আমি জানিনা তুমি কথা গুলো,কোথায় থেকে জেনেছো?তবে আমাকে বিয়ের আগে যেতে বলা হয়েছিল।এটা-ও বলা হয়েছিল।আয়াত’কে যেনো আমি বিয়ে না করি।কিন্তু আয়াত’কে ছাড়া আমার চলবে না।আয়াত’কে আমার লাগবেই।তাই সকাল সকাল যাচ্ছি।তুমি চিন্তা করো না।আমি দুপুরের আগে ফিরে আসবো।তুমি একটু এদিকটা সামলে নিও।বলেই আব্রাহাম চলে গেল।

নির্দিষ্ট মানুষ’টার সামনে বসে আছে আব্রাহাম।চোখ মুখে তার হাজারো প্রশ্ন।সামনে থাকা মানুষ’টা মাথা নিচু করে বসে আছে।আব্রাহাম তিক্ষ্ণ চোখে সামনের মানুষ’টার দিকে তাকিয়ে আছে।গম্ভীর মুখ করে বলল।

–কেনো আমার সাথে বেইমানি করলে ভাইয়া?আমার দোষ’টা কি ছিল বলতে পারো।নাকি আমি তোমাকে পালাতে সাহায্য করেছি।এটাই আমার দোষ ছিল।যার শাস্তি তুমি আমাকে এভাবে দিলে,তুমি আজকেই বাসায় যাবে।আর বাবাকে সব সত্যি কথা বলবে।তোমার জন্য বাবা আমাকে ভুল বুঝে আছে।বাবা আমাকে ভালোবাসে না।আম্মু ভালোবেসে দু’টো কথা বলে না।নিজের প্রিয় মানুষ’টার কথা চিন্তা না করে,নিজের কথা ভেবে তোমার কাছে চলে এসেছি।এবার অন্তত আমাকে তোমরা সবাই মিলে বাঁচতে দাও।আমি বড্ড ক্লান্ত হয়ে গিয়েছি।এই অভিশপ্ত জীবন থেকে আমার মুক্তি চাই।আমার একটা সুন্দর জীবন চাই ভাইয়া।

–তুই আমাকে মাফ করে দিস।আমার জন্য তোকে অনেক কথা শুনতে হয়েছে।আমার জন্য তুমি অনেক কষ্ট পেয়েছিস।তোকে আর কষ্ট পেতে দিব না।চল ভাই আমার,আজকেই বাবার সামনে দাঁড়াবো।

–তুমি একা যাবে?ভাবি কোথায়?ভাবি যাবে না ভাইয়া?

–হ্যাঁ যাবে।তোর ভাবি একটু অসুস্থ।তাই গাড়িতে বসে আছে।তোর ফোনটা একটু দিবি।আমার ফোনে ব্যালেন্স শেষ হয়ে গিয়েছে।আরোহীকে ফোন করে,
এদিকে এগিয়ে আসতে বলি।আব্রাহাম ভাইয়ের কথা বিশ্বাস করে,ভাইয়ের দিকে ফোনটা এগিয়ে দিল।আহনাফ ফোন’টা নিয়ে দেখলো।আবরার আব্রাহাম’কে মেসেজ দিয়েছে।

“আহনাফ ভাইয়ের ছলনায় ভুলিস না আব্রাহাম।”
আহনাফ ভাইয়ের ছলনা,নারীর থেকে-ও বেশি ভয়ংকর।”

মেসেজ’টা পড়ে রহস্যময় হাসি দিল আহনাফ।আব্রাহামে’র ফোন থেকে কাকে জানি ফোন দিল।একটু পরে একটা কালো গাড়ি এসে সামনে দাঁড়ালো।মুহুর্তের মধ্যে কালো পোশাক পড়া দশ-বারো জন লোক গাড়ি থেকে নেমে আসলো।আব্রাহাম কিছু বুঝে ওঠার আগেই,আহনাফ আব্রাহামে’র মুখ চেপে ধরলো।আব্রাহাম রক্তিম চোখে ভাইয়ের দিকে তাকালো।মুহূর্তের মধ্যে আব্রাহাম সেন্সলেস হয়ে গেল।সবাই মিলে আব্রাহাম’কে গাড়িতে তুলে নিল।

–স্যরি আমার ভাই।তোকে রাস্তা থেকে না সরালে,
আমার রাস্তা পরিষ্কার হতো না।আমাকে তুই মাফ করে দিস।আবরার নিজে ভাই হয়ে,নিজের ভাইয়ের এত বড় ক্ষতি করতে চাস।বিশ্বাস কর ভাই।আমি খুব স্বার্থপর,
আব্রাহামে’র পরে তোকে তুলে নিয়ে আসবো।বলেই সানগ্লাস পড়ে,গাড়িতে উঠে পড়লো।গাড়িতে ওঠার সাথে সাথে আব্রাহামে’র ফোনটা অফ করে দিল।

গৌধুলি লগ্ন ডুবে গিয়ে,রাতের আঁধার ঘনিয়ে এসেছে।আবরারের ভয়ে হাত-পা ঠান্ডা হয়ে আসছে।সে,যে ভয়টা পেয়েছিল।সেটাই হলো,এখন সবাই’কে কি জবাব দিবে।মুহুর্তের মধ্যে পুরো বাড়ি ছড়িয়ে গেল।আব্রাহাম’কে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না।সফিউল চৌধুরী তরতর করে ঘামতে শুরু করল।সায়েলী চৌধুরী মুখ কালো করে চারদিকে আব্রাহাম’কে খুঁজে চলেছে।আবরার বাহিরের দিকে যাচ্ছিল।তখনই রজনী’র সাথে ধাক্কা খায়।আবরার রজনী’কে দেখে-ও না দেখার ভান করে চলে গেল।এই কয়দিনে আবরার নিজের সাধ্য মতো রজনী’কে ইগনোর করেছে।আজকাল রজনী আর কথায় কথায় রাগ করে না।কেমন জানি শান্ত চোখে আবরারের দিকে তাকিয়ে থাকে।আজকে-ও তার ব্যতিক্রম নয়।রজনী ফোন হাতে নিল।আয়াতে’র নাম্বার বের করে,ফোন দিল।

আয়াত’কে পার্লারের মেয়েরা সাজিয়ে দিয়েছে।খয়েরী রঙের লেহেঙ্গায় আয়াত’কে একটু বেশিই আর্কষণীয় দেখাচ্ছে।পুরো শরীর জুড়ে বাহারি রকমের গহনা।দু-হাত ভর্তি মেহেদী।অধরের কোণে লেগে থাকা লাগুক হাসি।নিজের সাজ কমপ্লিট হয়ে যাবার পরে,নিজেকে পর্যবেক্ষণ করছিল আয়াত।অন্যদিনের তুলনায়।আজকে একটু বেশিই সুন্দর লাগছে।হঠাৎ করেই আয়াতের ফোন বেজে উঠলো।আব্রাহাম কল দিয়েছে ভেবে,দ্রুত পায়ে ফোনের কাছে আসলো।রজনী কল দিয়েছে।দেখে তাড়াতাড়ি কল রিসিভ করল।

–আপু তোমরা কোথায়?কখন আসবে?সন্ধ্যা গড়িয়ে রাত হতে চলল।এখনো আসার সময় হলো না।আমার ডাক্তার সাহেব কোথায়।সে,দেখছি তার বউয়ের থেকে-ও বেশি সময় নিচ্ছে,এত কি সাজছেন উনি?একটা ছবি তুলে পাঠাও তো।

–আয়াত আব্রাহাম’কে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না।

–আপু তুমি আমার সাথে মজা করছো?

–আয়াত আমি সত্যি বলছি।আব্রাহাম’কে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না।কি করবো বুঝতে পারছি না।আমার মনে হলো, বিষয়’টা তোকে জানানো দরকার।তাই জানালাম।আব্রাহামে’র কোনো খোঁজ পেলে,আমি তোকে জানাবো।বলেই বল কেটে দিল।আয়াত কেমন জানি স্তব্ধ হয়ে গেল।ভেতর’টা ফাঁকা হতে শুরু করল।হাত-পা ধীর গতিতে কাঁপছে।পুরো শরীর কেমন অবশ হয়ে আসছে।দু-চোখ বেয়ে নোনাজল গড়িয়ে পড়লো।শান্ত হয়ে বিছানায় বসলো।মনের গভীর থেকে চিন্তা করতে লাগলো।বিষয়’টা বাবা-মাকে জানাবে কি না।পরক্ষনেই মনে হলো,আরোহী যাবার পরে,তার বাবা-মাকে কত কটু কথা শুনতে হয়েছিল।রাস্তায় বের হলে,সবাই তাকে কিসের বোন বলে ডাকতো।আজকে যদি আব্রাহাম সত্যি না আসে।তাহলে তার বাবা-মায়ের সন্মানের কি হবে।সমাজ তাকে কি চোখে দেখবে।তার বাবা এই কথা জানলে,সহ্য করতে পারবে তো।আয়াত আর ভাবতে পারছে না।মাথা কাজ করা বন্ধ করে দিয়েছে।বুদ্ধিরা সবাই জোট বেঁধে পালিয়েছে।বিছানার এক কোণে জড়সড় হয়ে বসে আছে।

ঘড়ির কাটায় রাত আটটা ছুঁই ছুঁই।চারিদিকে ইতিমধ্যে কানাঘুঁষা শুরু হয়ে গিয়েছে।এত রাত হয়ে গেল।বর আসছে না কেনো?সবাই কেমন আড়চোখে আয়াতে’র বাবা-মায়ের দিকে তাকিয়ে আছে।আয়াত বাবা-মা সোফায় বসে আছে। সফিউল চৌধুরী ফোন তুলছিলেন না।একটু আগেই ফোন দিয়ে জানালেন।তিনি আসছেন।এসে সবটা বুঝিয়ে বলছেন।গাড়ির আওয়াজে সবাই বাহিরের দিকে গেল।বরের গাড়ি আসলে-ও আসলো না বর।আয়াত নিজের রুম থেকে বেড়িয়ে আসলো।আয়াতে’র শুকনো মুখের দিকে তাকিয়ে আজাদ শিকদারের কলিজা কেঁপে উঠলো।হাত বাড়িয়ে মেয়েকে পাশে বসিয়ে নিল।তখনই সফিউল চৌধুরী বাসার মধ্যে প্রবেশ করল।মাথা নিচু করে আজাদ শিকদার সামনে দাঁড়ালো।

–আসলে আমরা আব্রাহাম’কে খুঁজে পাচ্ছি না।আব্রাহামে’র ফোন’ও বন্ধ।আমাদের কাউকে কিছু না বলে,সকালে বেড়িয়েছিল।আর বাসায় ফিরে নাই।এখন কি করবো।বুঝতে পারছি না।সফিউল চৌধুরীর এই একটা কথাই আগুনে ঘি ঢালার মতো যথেষ্ট ছিল।চারদিকে হাসাহাসির রোল পড়ে গেল।কেউ বা কটু কথা বলতে শুরু করল।আজাদ শিকদার’কে নানান উক্তি শোনাচ্ছে।

–আজকাল কার বাবা-মা গুলো’ও না।বিয়ের আগে ছেলে মেয়েদের মতামত নেওয়া প্রয়োজন মনে করে না।নিজের ইচ্ছে মতো বিয়ে ঠিক করে।বিয়ের দিন ছেলে মেয়েরা পালিয়ে যায়।

–আমার মনে হয়।ছেলেটার অন্য কোনো মেয়ের সাথে সম্পর্ক ছিল।তাই বিয়ে না করে পালিয়ে গিয়েছে।আজাদ সাহেবের বড় মেয়েটা-ও পালিয়ে বিয়ে করেছে।ছোট মেয়েটা কতদিন পাগল হয়ে,হসপিটালে ছিল।এই কথা জেনেই হয়তো ছেলে পালিয়েছে।এরকম হাজারো উক্তি কানে ভেসে আসলো।হঠাৎ করেই আজাদ শিকদার বমি করতে শুরু করল।আয়াত আতঙ্কিত হয়ে উঠে দাঁড়ালো।

–বাবা কি হয়েছে তোমার?কোথায় কষ্ট হচ্ছে,আমাকে বলো। কেউ গাড়ি বের করো।বাবা’কে হসপিটালে নিয়ে যেতে হবে।বাবার পুরো শরীর কেমন ঘামছে।আয়াতে’র কথা শেষ হবার সাথে সাথেই আজাদ শিকদার সোফায় ঢলে পড়লেন।

চলবে…..

(

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here