সে আমার মানসিক শান্তি পর্ব -২৪+২৫

#সে_আমার_মানসিক_শান্তি
#পর্ব_২৪
#লেখিকা_Fabiha_bushra_nimu

রজনী সকালে ঘুম থেকে উঠে দেখে আবরার পাশে নেই। কালকে আবরারের বুকে কখন যে, ঘুমিয়ে গিয়েছিল। তা জানা নেই রজনীর। তবে কালকে বেশ শান্তিতে ঘুমিয়েছে সে। আবরার তাকে নিজের সাথে মিলিয়ে নিলে, অদ্ভুত এক শান্তি অনুভব করে রজনী। যে শান্তি পৃথিবীর কোথায় নেই। রজনী ফ্রেশ হয়ে বাহিরে আসলো। আবরারকে দেখার জন্য দু-চোখ উতলা হয়ে আছে। রজনীর মায়ের কাছে গিয়ে বলল।

–আম্মু তোমার জামাই কোথায়?

–আবরার তো সকালে চলে গিয়েছে। কথাটা কর্ণকুহরে আসতেই রজনীর মনটা নিমিষেই খারাপ হয়ে গেল। মলিন মুখ করে বলল।

–আমাকে জানানোর প্রয়োজন মনে করল না৷

–সত্যি করে বলবি। তোর আর আবরারের কিছু হয়েছে?

–আম্মু তোমার আর আব্বুর কোনোদিন ঝগড়া লাগে নাই? তুমি কি রাগ করে, বাবার বাসায় চলে যাও নাই। এসব ছোট খাটো বিষয় আবার বলে দিতে হয়। বলেই রাগান্বিত হয়ে, রজনী নিজের রুমে চলে গেল। রজনীর আম্মু অবাক নয়নে মেয়ের দিকে তাকিয়ে আছে। মেয়ের অকারণে রাগের মানে’টা বুঝলো না সে।

সময় স্রোতের ন্যায় ভেসে গিয়ে, চলে এসেছে কাঙ্খিত দিন। আজাদ শিকদার মেয়েকে মানাতে পারেন নাই। সেদিনের ছেলেটা’কেই বিয়ে করছে আয়াত। আজকে আয়াতে’র বিয়ে! আয়াতের বিয়ের কথা শুনে, আব্রাহাম আর স্থীর থাকতে পারলো না। আবরার নিজেই জানিয়েছে আয়াতের, বিয়ে কথা। আব্রাহাম আয়াতের বাসার সামনে দাঁড়িয়ে আছে। অবাক করা বিষয়! আয়াতদের বাসার দিকে, তাকালে কেউ বলবে না। এটা বিয়ে বাড়ি। বাড়িটা কেমন স্তব্ধ হয়ে আছে। নেই মানুষের কোলাহল। বাড়িটা আগের ন্যায় পড়ে আছে। বিয়ে উপলক্ষে নতুন রুপে সেজে উঠেনি বাড়িটা। আব্রাহাম কোনো কথা না বলে, বাসার মধ্যে প্রবেশ করল। পুরো বাসা একদম ফাঁকা। বাসার কেউ নেই। আশ্চর্য করা বিষয়! বাসায় লোকজন গুলো’ও কেউ নেই। তাহলে বাসার দরজা খোলা কেনো? আব্রাহাম আয়াতের রুমের দিকে গেল। সেখানে গিয়ে আয়াতের দেখা মিলল। এতক্ষণে আব্রাহামের দম বন্ধ হয়ে আসছিল প্রায়।

–এটা কেমন ধরনের মজা আয়াত। তুমি সবকিছু জানার পরে-ও কোন সাহসে বিয়ে করতে চেয়েছো। আমি কিছু বলছি না। তারমানে এই না। তুমি যা খুশি, তাই করবে। আমি তোমাকে কিছু বলবো না। আমার ধৈর্যের পরীক্ষা নিও না। আমি রেগে গেলে ফলাফল ভালো হবে না।

–আমাকে এখন বেরোতে হবে। আমার বিয়ের দেরি হয়ে যাচ্ছে। কথা বলে সময় নষ্ট করতে চাই না। আপনার সাথে পরে কথা বলে নিব। আয়াতে’র কথা’টা আগুনে ঘি ঢালার মতো ছিল। আব্রাহাম রেগে আয়াতে’র গাল চেপে ধরে রাগান্বিত হয়ে বলল।

–আমার সাথে মজা করছো? আমি যদি মজা করতে শুরু করি। মাফ চেয়ে সময় পাবে না। আমার ভুলের শাস্তি তুমি আমাকে, যা খুশি দাও। প্রয়োজনে আমাকে শেষ করে দাও। তবু-ও তুমি অন্য কারো হইয়ো না। আমি তোমাকে ছাড়া বাঁচতে পারবো না আয়াত। যার মুখের দিকে, তাকালে আমার আরো কিছু দিন বাঁচতে ইচ্ছে করে। সেটা তুমি আয়াত। এভাবে আমাকে নিঃস্ব করে দিও না আয়াত। আমি তোমাকে যেতে দিব না। তুমি আমার সাথে যাবে। তোমাকে অনেক ভালোভাবে বুঝিয়েছি। তুমি ভালো কথা শোনার মতো মানুষই না। বলেই আয়াত’কে নিয়ে যাবে। তখনই রজনী আসে।

–আয়াতে’র হাত ছাড়ো আব্রাহাম। তোমার জন্য আমার বাবা মারা যেতে যেতে বেঁচে গিয়েছে। আমার বাবা’কে আর মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিও না। আমার বোনকে একটা সুন্দর জীবন কাটাতে দাও। আয়াত আর তোমার সাথে থাকতে চায় না। তুমি কেনো আয়াত’কে জোর করে নিয়ে যাবে। জোর করে সবকিছু পেলে-ও ভালোবাসা’টা তুমি কোনোদিন পাবে না।

–আয়াত’কে ছাড়া আমার এক মুহুর্ত চলবে না। আমি নিষেধ করে ছিলাম। আয়াতে’র বিয়ে, আমি ছাড়া অন্য কারো সাথে দিবেন না। আপনারা আমার কথা শোনেন নাই। আমি’ও আপনাদের কথা ভাববো না।

–আমি তোমাকে বিয়ে করবো না আব্রাহাম। শুধু শুধু জেদ করে লাভ নেই। তুমি বাসায় ফিরে যাও। আমি মরে যাব। তবু-ও তোমাকে বিয়ে করবো না।

–আমি তোমাকে বিয়ের অনুমতি না দিলে, তুমি বিয়ে করতে পারবে না। একটা স্বামী থাকা সত্বেও, তুমি আরেকটা বিয়ে করতে পারো না। আব্রাহামে’র কথা শুনে, চমকে উঠলো রজনী। চমকালো না আয়াত। আব্রহামের দিকে আগের ন্যায় তাকিয়ে আছে।

–তুমি ডিভোর্স পেপার নিয়ে আসো। আমি সাইন করে দিব।

–আয়াত তোরা এসব কি বলছিস?

–তুমি যদি ডিভোর্স পেপারে সাইন করে দিতে পারো। কথা দিচ্ছি চলে যাব। আব্রাহামের কথা শুনে, মলিন হাসলো আয়াত। আব্রাহাম বাহিরে চলে গেল। একটু পরে আব্রাহাম ডিভোর্স পেপার হাতে নিয়ে, বাসার মধ্যে প্রবেশ করল। আয়াতের দিকে ডিভোর্স পেপারটি এগিয়ে দিল। আয়াত নিঃশব্দে আব্রাহামে’র হাত থেকে পেপারটি নিয়ে নিল। ডিভোর্স পেপারের দিকে তাকিয়ে, একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়লো। দু-চোখ বেয়ে অশ্রুকণা গুলো বেড়িয়ে আসতে চাইলো। আয়াত জোরপূর্বক অশ্রুগুলোকে ধরে রাখার চেষ্টা চালাচ্ছে। কোনো ভনিতা না করে, ডিভোর্স পেপারে সাইন করে দিল।

আব্রাহাম স্থির দৃষ্টিতে আয়াতের দিকে তাকিয়ে আছে। দু-চোখের কার্নিশে অশ্রুকণা চিকচিক করছে। আব্রাহাম কল্পনাতে-ও ভাবেনি। আয়াত তাকে ডিভোর্স দিয়ে দিবে। পুরো পৃথিবী এলোমেলো লাগছে আব্রাহামের। বাকশক্তি হারিয়ে ফেলছে সে। আয়াতের দ্বারা এটা-ও সম্ভব। তবে আয়াত কি তাকে ভালোবাসেনি। সে একাই বোকার মতো ভালোবেসে গিয়েছে।

–তুমি বিয়ের কথা জানতে আয়াত? আয়াত জানতো আব্রাহাম তাকে এই প্রশ্নই করবে। আয়াত হাসিমাখা মুখখানা করে বলল।

–কেনো না জানার কথা ছিল বুঝি? এটা তুমি’ও ভালো করে জানো? আমি’ও জানি। আমি কোনোদিনই অসুস্থ ছিলাম না। সেখানে তুমি একটা মেয়েকে দিয়ে,রেজিস্ট্রি পেপারে সাইন করিয়ে নিলে,তিনবার কবুল বলিয়ে নিলে, এটা তার জানা থাকবে না। আমি মানছি। তুমি আমাকে ভুলে যাবার ঔষধ দিতে। কিন্তু আয়াত যে, এত বোকা না। আমি আরোহী আপুর কথায় তোমার কাছে গিয়েছিলাম। যাবার পরে বুঝতে পারলাম। নিজের জীবন নিজে শেষ করতে গিয়েছি। একটা ষোলো বছরের মেয়ে একটা ছেলের কাছে যাওয়ার মানেটা তুমি বুঝো আব্রাহাম। আমি আরোহী আপুকে অনেক ভালোবাসতাম। আপুর একটা কথা-ও অমান্য করতাম না। তোমার কাছে যাবার পরে সব সময় ভয়ে ভয়ে থাকতাম। এই বুঝি আমার ক্ষতি করে বসলে। কিন্তু তোমার ব্যক্তিত্ব এতই সুন্দর। যা আমাকে মুগ্ধ করেছে৷ কখনো আমার দিকে বাজে নজরে তাকাতে দেখি নাই। আমার যখন আঠারো বছর হয়ে গেল। তুমি আমাকে বিয়ে করে নিলে। বিয়ের পরে-ও কখনো স্বামীর অধিকার নিতে আসোনি। এটা আমাকে বেশি মুগ্ধ করেছে। বিয়ের আগে তোমার কাছে থাকতে, আমার খুব অস্বস্তি হতো। কাউকে বলতে পারতাম না। ভেতরে ভেতরে শেষ হয়ে যেতাম। আমি জানি না। তুমি আমাকে এত বুঝো কিভাবে। ঠিক আমার অস্বস্তি’টা দূর করে দিলে। আমি তোমার কাছে সারাজীবন কৃতজ্ঞ থাকবো। কিন্তু তুমি আমার সাথে যে, অন্যায় করেছো। তা ক্ষমার অযোগ্য। তোমার কারণে তোমাকে কেউ ভালোবাসে না। ডিভোর্স চেয়েছিলে, ডিভোর্স পেয়েছো। এখন চলে যাও। আমাকে কথা দিয়েছিলে।

“তোমাকে ভালোবেসেছি। এতটুকু শাস্তি আমার প্রাপ্য ছিল। তুমি অন্য কারো হবার আগে, আমার মৃত্যু হোক। কথা যখন দিয়েছি। কথা রাখবো। ভালো থেকো। নিজের খেয়াল রেখো। আর তুমি সব সব সময় হাসবে। তুমি না হাসলে তোমাকে খুব বিশ্রী দেখায়। আসছি। বলেই আব্রাহাম চলে গেল।

আব্রহাম চলে যেতেই আয়াত রজনী’কে জড়িয়ে ধরে কান্না করে দিল। এতক্ষণ আব্রাহামের সমানে শক্ত থাকলে-ও, আব্রাহাম চলে যাবার পরে নিজের ধরে রাখতে পারলো না।

“সে আমার ভালো চাইলো আপু। কিন্তু আমারে চাইলো না। সে আমাকে ভালো থাকতে বলল। কিন্তু আমার ভালো থাকার দায়িত্ব নিল না। ”

–এটাই স্বাভাবিক ভালো থাকার দায়িত্ব। কেউ নিবে না। কিন্তু ভালো থাকতে বলার মানুষ অনেক পাবি। আল্লাহ যা করেন, ভালোর জন্যই করেন। ভালো হয়েছে। আব্রাহাম তোকে ছেড়ে দিয়েছে। তোরা যে, বিয়ে করেছিলি। এটা আামাদের জানাস নাই কেনো? দেখলি মাঝপথে ঠিক ছেড়ে চলে গেল। আমার মনে হয়। আব্রাহাম তোর যোগ্যই না। তুই আব্রাহামে’র থেকে ভালো কিছু ডিজার্ভ করিস। নিজের জীবন’টা নতুন করে শুরু কর। আব্রাহাম’কে ভুলে যা।

–ভুলে যা বললেই সবকিছু ভোলা যায় আপু। আব্রাহাম আমাকে ছেড়ে যায় নাই। সে গভীর ভাবে আহত হয়েছে। এখন হয়তো নিজেকে শেষ করার পরিকল্পনা করছে। আব্রাহাম জোর করে ছিনিয়ে নিতে জানে না। সে ভালোবেসে আগলে রাখতে জানে। প্লিজ আবরার ভাইয়া’কে বলো। সে যেনো আব্রাহামে’র সাথে থাকে। ওর যে কেউ নেই। ও ভিষণ একা।

–ওকে নিয়ে তোর ভাবতে হবে না। আমি আবরারকে ফোন করে জানিয়ে দিব। আমাদের দেরি হয়ে যাচ্ছে। বাবা-মা অপেক্ষা করছেন। তাড়াতাড়ি যেতে হবে।

রাতের আঁধার নেমে গিয়েছে চারিদিকে। ফুটপাতের ছোট গাছটা’র নিচে বসে আছে আব্রাহাম। দু-চোখ রক্তিম বর্ন ধারণ করেছে। চুলগুলো এলোমেলো হয়ে আছে। চেহারায় মলিনতা এসে ধরা দিয়েছে। দু-চোখ বেয়ে অশ্রুকণা গুলো গড়িয়ে পড়ছে। নিঃশব্দে করা কান্না গুলো খুবই ভয়ংকর। যা কাউকে বলা যায়। আর না সহ্য করা যায়। ভেতরটা’কে দুমড়ে মুচড়ে শেষ করে দেয়। আকাশের দিকে তাকালো। একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়লো।

“কি এমন ক্ষতি হতো। আমাকে মাফ করে দিয়ে, আমাকে একটা সুন্দর জীবন দিলে, এত বিষাক্ত জীবন তো আমি চাইনি। তবে আমাকে কেনো বিষাক্ত জীবন দেওয়া হলো? আপন বলতে, আমার কেউ রইলো না। যারে এতদিন আপন ভেবেছি। সেই ছিল পর৷ যার প্রতি আমার অগাধ বিশ্বাস ছিল। সে দিয়েছে, আমার বিশ্বাস ভেঙে। আমার যে, বাঁচতে ইচ্ছে করছে না। এখন আমি কি করবো। খারাপ সময় গুলো এত দীর্ঘ হয় কেনো? খুব সহজে যেতেই চায় না। শক্ত মনের মানুষ’ট কবে এত আবেগী হয়ে উঠলো। আবেগ যে, বড্ড ভয়ংকর জিনিস। মানুষকে একটু একটু করে শেষ করে দেয়। আব্রাহাম আর ভাবতে পারলো না। নিজেকে বড্ড অসহায় লাগছে। মস্তিষ্ক একদম ফাঁকা হয়ে গিয়েছে। হিতাহিত কেন শূন্য হয়ে পড়েছে। কেমন উন্মাদ হয়ে আশেপাশে ঘোরাঘুরি করছে। গাড়িতে উঠে ফুল স্পিডে গাড়ি চালানো শুরু করে দিল। একটু দূর যেতেই যেতেই আব্রাহামে’র গাড়ির সামনে একটা গাড়ি এসে দাঁড়ালো। আব্রাহাম দ্রুত ব্রেক কষলো। গাড়ি থেকে ঝড়ের গতিতে নেমে আসলো আবরার। কষে আব্রাহামের গালে থাপ্পড় বসিয়ে দিল।

–পাগল হয়ে গিয়েছিস তুই। এভাবে কেউ গাড়ি চালায়। কিছু একটা হয়ে যেতে পারতো। আবরারকে জড়িয়ে ধরে আব্রাহাম কান্না করে দিল।

–আমার আর বাঁচতে ইচ্ছে করছে না ভাইয়া। আয়াত আমাকে রেখে অন্য কাউকে বিয়ে করে নিচ্ছে, বেঁচে থাকতে এটা আমি সহ্য করতে পারবো না। আমি ওর জন্য কি করি নাই। আমার একটা ভুলের জন্য সবাই মিলে, আমাকে এত বড় শাস্তি দিল।

–তুই সবাই’কে ভরসা দিস। তোর থেকে এমন কাজ আশা করি নাই। আমি জানি প্রতিটি শক্ত মনের মানুষের-ও, একটা না একটা দুর্বলতা থাকে। তাই বলে, নিজের জীবন নিজে, শেষ করে দেওয়াটা কোনো সমস্যার সমাধান নয়। তোর আমার ওপরে ভরসা আছে না। চিন্তা করিস না। আয়াতের থেকে ভালো মেয়ে তোকে এনে দিব। তখন আয়াত আফসোস করবে। তোর যদি দ্বিতীয় বউকে পছন্দ না হয়। আমাকে জানাবি। আমি রেখে দিব। জানিস তো আমি আবার কত দয়ালু। সিরিয়াস মুহুর্তে আবরারের মজাটা আগুন ঘি ঢালার মতো ছিল। আব্রাহাম রেগে ভাইয়ের দিকে তাকালো।

–এভাবে তাকাস না বেয়াদব। আমি তোর বড় ভাই। আমাকে ভয় করতে শিখ। উল্টো আমাকে ভয় দেখান কেনো? এখন চুপচাপ আমার সাথে চল। আমরা আয়াতে’র বিয়ে দেখতে যাব। আমি’ও দেখবো। আয়াত তোর সামনে অন্য কাউকে কিভাবে বিয়ে করে। ভাইয়ের কথা শান্ত হয়ে গেল আব্রাহাম। দু-চোখের অশ্রু মুছে। রক্তিম চোখে ভাইয়ের দিকে তাকালো। পৃথিবীর মানুষের সাথে তাল মিলিয়ে চলতে চলতে বড্ড ক্লান্ত আব্রাহাম। এবার যে তার মুক্তি চাই। তবে কি মুক্তি পাবার সময় এসে গিয়েছে। আবরার কোনো কথা না বলে, আব্রাহাম’কে নিজের গাড়িতে তুলে নিল। ড্রাইভার কে বলল আব্রাহামে’র গাড়ি বাসায় নিয়ে যেতে৷

কিছু সময়ের ব্যবধানে আয়াতে’র বিয়ের কমিউনিটি সেন্টারে এসে পৌঁছালো আবরার আর আব্রাহাম। চারিদিকে সুন্দর করে সাজানো হয়েছে। যাকে বলে চোখ জুরানো সাজ। সবকিছু দেখে আব্রাহামের বুকে ব্যথা করতে শুরু করল।

চলবে…..#সে_আমার_মানসিক_শান্তি
#পর্ব_২৫
#লেখিকা_Fabiha_bushra_nimu

রক্তিম চোখে আয়াতে’র দিকে তাকিয়ে আছে আব্রাহাম। বুকের বা’পাশে এক হাত চেপে ধরে রেখেছে। মনে হচ্ছে বিশাল একটি পাথর তার বুক থেকে নেমে গিয়েছে। অসহায় দৃষ্টিতে ভাইয়ের দিকে তাকালো। আব্রাহাম’কে তাকাতে দেখে আবরার হাসলো। আব্রাহাম দু-চোখ বন্ধ করে, একটা দীর্ঘশ্বাস নিল।

–এখানে তো আসতেই চাইছিলি না। এখন তোর বউ আমার।

–বোনকে বউ বলতে লজ্জা করে না৷ ছিঃ আবরার চৌধুরী, তোমার মন মানসিকতা এতটা নিচু।

–আমার অনেক টাকাপয়সা আছে। এত টাকা পয়সা কে খাবে? আমার টাকায় যদি একটা মেয়ে, বসে বসে খায়। তাতে সমস্যা কোথায়? মেয়েটা-ও একটা সুন্দর জীবন পেল। আর আমি’ও একটা বউ পেলাম।

–চরিত্রহীন।

–সেটা তোর ভাবি’ও বলে।

–তাহলে তুমি ভাবো। তুমি ভাবির সাথে কি কি করো। একটা মেয়ে অকারণে একটা ছেলেকে চরিত্রহীন বলে না৷ ভাইয়া তুমি এত খারাপ।

–চুপ কর বেয়াদব। আমাকে সন্মান দিয়ে কথা বলবি। না হলে, এখানেই আয়াতে’র বিয়ে দিয়ে দিব। আয়াতে’র কথা উঠতেই আব্রাহাম সামনের দিকে তাকালো। আয়াত আরহার পাশে বসে আছে। আজকে আয়াতে’র নয়। আরহার বিয়ে। সেদিন ছেলে আরহাকে পছন্দ করেছিল। আয়াত নিজ দায়িত্বে আরহার বিয়ে দিচ্ছে। ছেলে’টা বেশ ভালো। আরহার বাবা নেই। আরহাদের মাথার ওপরে ছায়া হয়ে দাঁড়াতে পারবে। আরহা রেজিস্ট্রি পেপারে সাইন করছে। আয়াত আরহার সাইন করা দেখছে। কনের জায়গায় অন্য কাউকে দেখে আব্রাহামের অশান্ত মন প্রশান্তিতে ভরে উঠলো। আব্রাহামে’র ভাবনার মাঝে, আজাদ শিকদারের কড়া কণ্ঠে ভেসে আসলো।

–আবরার ও ছেলেকে আর তোমার বাবা-মাকে নিয়ে বারোটারর আগে, আমাদের বাসায় হাজির হবে। বলেই হনহন করে চলে গেলেন আজাদ শিকদার। আব্রাহাম আজাদ শিকদারেরে যাওয়ার দিকে, তাকিয়ে থেকে একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়লো। আগে মানুষটা’র সাথে দেখা হলে, তার সাথে কত যুদ্ধই না লেগে থাকতো। আর আজকে মানুষটা তার দিকে ফিরে-ও চাইলো না। ভাবতেই অজানা দুঃখ এসে, মনে হানা দিল।

আয়াতদের বাসায় ফিরতে ফরিতে রাত দশটা বেজে গেল। প্রচুর ক্লান্ত দেখাচ্ছে আয়াত’কে। নিজের রুমে গিয়ে, ওয়াশরুমে চলে গেল। একটু পরে গোসল করে, বের হয়ে আসলো। বিছানায় শরীর এলিয়ে দিতেই, সারা রাজ্যের ঘুম এসে ধরা দিল আয়াতে’র চোখে। আয়াতের আম্মু আয়াতকে একটু ঘুমিয়ে নিতে বলেছে, সময় করে তিনি ডেকে নিবেন। আয়াতকে বিরক্ত করতে নিষেধ করেছে সবাই’কে।

ঘড়ির কাঁটায় রাত একটা ছুঁই ছুঁই। চৌধুরী বাড়ির সবাই শিকদার বাড়ির ড্রয়িং রুমে বসে আছে। সফিউল চৌধুরী শান্ত ভঙ্গিতে বললেন।

–ভাই কোনো সমস্যা হয়েছে? আব্রাহাম আপনার সাথে বেয়াদবি করেছে? ও যদি কিছু করে থাকে, তার জন্য আমি আন্তরিক ভাবে দুঃখিত।

–আপনি আগে আমার কথাটা শুনুন। আমার কথা না শুনে, কেনো নিজেকে ছোট করছেন? আমি আয়াত আর আব্রাহামে’র বিয়ে দিতে চাই। আরেকবার অনেক’টা সন্মান নষ্ট হয়েছে। সেই সময়টা আমরা কিভাবে পার করেছি। আমরা জানি, আর আল্লাহ জানেন। যেহেতু আয়াতে’র বিয়ে, আব্রাহামের সাথে হবার কথা ছিল। কোনো এক অজানা কারণে তা হয়ে উঠেনি। এমনটা না যে, আব্রাহাম আরেকটা বিয়ে করেছে। সে ভুল করেছে। তার জন্য সে অনুতপ্ত। বাচ্চা ছেলে ভুল করেছে। আমাদের বড়দের উচিৎ। তাকে ক্ষমা করে দিয়ে, একটা সুযোগ দেওয়া। আমি যদি আয়াতকে অন্য কোথাও বিয়ে দেই। তারপরে’ও আয়াতে’র বিয়ে ভেঙে যাবার কথা নিয়ে, শশুর বাড়িতে অশান্তি হতে পারে। যার জন্য আমার মেয়েটার এত অসন্মানিত হলো। তার সাথে বিয়ে হলে, কিছু লোকের হলে-ও মুখ বন্ধ হয়ে যাবে। আমি আব্রাহামে’র ওপরে অনেক রেগে ছিলাম। আমার বাসায় সেদিন এসেছিল। আমি ভেতরে প্রবেশ করতে দেই নাই। আবরার সবটা বলার পরে মনে হলো, তাকে একটা সুযোগ দেওয়া উচিৎ। যেহেতু আপনার ছেলে, আপনার মতামতের একটা ব্যাপার আছে। সেকারণে এত রাতে ডাকা।

–এটা তো ভালো কথা। আপনারা যদি আমার ঘরে মেয়ে দিতে চান। আমার থেকে খুশি কেউ হবে না। আমি তো লজ্জায় আপনার সামনে আসতে পারতাম না। আপনি যদি সত্যি ওদের বিয়ে দেন। আমার বুক থেকে পাথর নেমে যাবে।

–তাহলে আপনার কোনো আপত্তি নেই। আপনাদের যদি আপত্তি না থাকে, তাহলে আমি বিয়েটা আজ রাতের আঁধারে করাতে চাই। আমি চাই না। আমার মেয়ে কারো থেকে আঘাত প্রাপ্ত হোক৷ আয়াত কয়টা দিন সংসার করতে থাকুক। সবার মুখ এমনিতেই বন্ধ হয়ে যাবে। বিয়েটা আজকেই দিব। সেজন্য আমি আপনাদের এত রাতে বাসায় নিয়ে এসেছি।

–আমার ছেলের বিয়ে, এত সাধারণ ভাবে হবে। এটা কেমন জানি লাগছে।

–আগের কথা ভুল গিয়েছেন। আগে বিয়েটা হোক। তারপরে আমরা অনুষ্ঠান করে নিব। অনুষ্ঠান ছাড়া কত বিয়ে হয়। আমি আর কোনো রকম রিস্ক নিতে চাই না। আব্রাহাম যদি আবার চলে যায়।

–আমি আপনাকে কথা দিচ্ছি আংকেল। আমি এবার কোথাও যাব না। আয়াত’কে ভালো রাখার জন্য, আমাকে যা করতে হয়। আমি তাই করবো। আমি আপনার মতো করে, ভালো রাখতে পারবো কি না। তা আমি জানিনা। তবে নিজের বেস্টটা দিয়ে, ভালো রাখার চেষ্টা করবো। নিজে না খেয়ে আয়াত’কে খাওয়াবো। আমাকে একটা সুযোগ দিন। আপনাদের নিরাশ করবো না। অভিযোগ করার সুযোগ দিব না। এবার যদি আমার ভুল পান। তাহলে আমার এই মুখ, আর আপনাদের দেখাবো না।

–তুই যদি না খেয়ে থাকিস। তাহলে আয়াতকে রোজকার করে, খাওয়াবি কি করে? এমন ছেলের সাথে আয়াতে’র বিয়ে দেওয়া যাবে না আব্বু। সিরিয়াস মুহুর্তে আবরারের এমন রসিকতায়, সবাই অট্টহাসিতে মেতে উঠলো। হাসলো না সফিউল চৌধুরী আর আজাদ শিকদার। হয়তো দাঁতে দাঁত চেপে রয়েছেন। পরিবেশ শান্ত হলে, আজাদ শিকদার আব্রাহাম’কে উদ্দেশ্য করে বলল।

–দেখো বাবা ভাঙা কাঁচ আর বিশ্বাস একবার ভেঙে গেলে, আর জোরা লাগানো যায় না। জোড়াতালি দিয়ে ঠিক করা গেলে-ও, সেটার আশা ভরসা থাকে না৷ সারাক্ষণ ভয়ে ভয়ে থাকতে হয়। এই বুঝি ভেঙে গেল। তোমাদের প্রতি আমাদের বিশ্বাসটা এমন হয়েছে। বারবার বিশ্বাস করতে চাইছি। মন বলছে, এই বুঝি আগের মতো চলে গেল। এই প্রথম আজাদ শিকদার আব্রাহামের সাথে নরম কণ্ঠে কথা বলল। কথা গুলোর মধ্যে বাবার ভালোবাসা খুঁজে পেল সে। অদ্ভুত ভাবে মনে হলো, কেউ তো তাকে ভালোবাসে। না হলে এত বড় ভুল করার পরে কেউ সুযোগ দেয়। আব্রাহাম নরম কণ্ঠে বলল।

–আমি যাব না। আমাকে যা খুশি শাস্তি দিন। শুধু আয়াত’কে আমার কাছে দিয়ে দিন৷ খুব যত্ন করে, আগলে রাখবো। ফুলের টোকাও লাগতে দিব। দুঃখরা আয়াতকে গ্রাস করার আগে, আমার সাথে মোকাবিলা করতে হবে। আমাকে বিনাশ করতে পারলে, তবেই আয়াত পর্যন্ত পৌঁছাতে পারবে। হালকা ঝড়ে, ঝরে যাবার মতো ছেলে আমি না। শেষ বারের মতো বিশ্বাস করে দেখুন। ঠকবেন না।

–আব্বু তুমি আব্রাহামের সম্পর্কে সবকিছুর জানো না ? সবকিছু না জেনে শুনে, তুমি কেনো আয়াতে’র সাথে আব্রাহামের বিয়ে দিবে? যে, ছেলে একবার পালিয়ে যেতে পারেছে। সে হাজার বার যাবে না। তার কোনো নিশ্চিয়তা আছে৷ তুমি আগে সবকিছু জানো। তারপরে আব্রাহামের সাথে আয়াতের বিয়ে দাও। আব্রাহামে’র সত্যিটা জানলে, আয়াতের সাথে কখনোই আব্রাহামের বিয়ে দিতে না। রজনীর কথা শেষ হবার সাথে সাথে, আজাদ শিকদার রক্তিম চোখে মেয়ের দিকে তাকালো। রজনী বুঝতে পারলো। ভুল জায়গায় ভুল কথা বলে ফেলছে। ভয়ে দৃষ্টি নত করে নিল। আজাদ শিকদার গম্ভীর কণ্ঠে বলল।

–তুমি কি আদব কায়দা সবকিছু ভুলে গিয়েছো রজনী? তুমি জানো না বড়দের মধ্যে ছোটদের কথা বলতে নেই। আমি তোমাকে, এসব বেয়াদবি শিখিয়েছি। আয়াতে’র বাবা আমি না তুমি? আয়াতের কিসে ভালো হবে। সেটা নিশ্চয়ই আমার থেকে, তুমি ভালো জানবে না। যদি ভালে জানতে, তাহলে চোখের সামনে নিজের বোনকে শেষ হয়ে যেতে দেখতে না। একটা বার বাবাকে সত্যিটা জানাতে। তুমি না আয়াতের নিজের বোন। তুমি যেটা করতে পারোনি। আবরার সেটা করে দেখিয়েছে। আয়াত তোমার বোন আবরারের কিসের ঠেকা পড়সে। তোমার বোনের মুখে হাসি তুলে দেওয়ার। সে আমার কাছে ছোট হয়েছে। হরেক রকমের কথা শুনেছে। আমাকে বুঝিয়েছে। তুমি কি করেছো বোনের জন্য? আরোহীর মতো স্বার্থপর হয়ে গেলে মেয়ে। আমি আব্রাহামের সত্যিটা জেনেই আব্রাহামকে মাফ করেছি। আবরার যদি আব্রাহামের সত্যিটা না বলতো। আমি কখনো আব্রাহামকে মাফ করতাম না। তুমি জানো না। আমি যখন কথা বলি। আমার সামনে কথা বললে, তাকে আমি কি করি। নাকি পরের ঘরে গিয়ে, আমাদের বাসার নিয়ম রীতি ভুলে গিয়েছো।

–স্যরি আব্বু আর হবে না। মাথা নত করেই বলল রজনী। দু-চোখ বেয়ে অশ্রুকণা গুলো গড়িয়ে পড়ছে। তার বাবা কোনোদিন তার সাথে বাজে ব্যবহার করে নাই। তবে কি সত্যিই সে বোন হিসেবে ব্যর্থ। সত্যিই তো সে কখনো আবরারের মতো করে ভেবে দেখেনি। আবরার পরের ছেলে হয়ে, যেটা পারলো। সে নিজের বোন হয়ে কেনো পারলো না? সব সময় আয়াতের কষ্টটা বাড়িয়ে তুলেছে। এতগুলো বছর ধরে, একটা মানুষকে ভালোবেসে আসছে। কিছুদিনের ব্যবধানে সেই মানুষটা এত সহজে ভোলা যায়। নিজেকে মনে মনে হাজার বার ধিক্কার জানালো রজনী। আজাদ শিকদার ক্ষিপ্ত কণ্ঠে বলল।

–আয়াতের আম্মু, যাও গিয়ে আয়াতকে নিয়ে এসো। তোমার একটা শাড়ি পড়িয়ে নিয়ে এসো। সাজানোর দরকার নেই। স্বামীর রাগ সম্পর্কে অবগত সে। এক মুহুর্ত দেরি করল না। দ্রুত পায়ে আয়াতের রুমের দিকে ছুটলো। আয়াতের রুমে এসে আদুরে কণ্ঠে মেয়েকে ডাকলো। আয়াত নড়েচড়ে উঠলো। মাকে বিরক্ত করতে নিষেধ করল। কিন্তু তার মা শুনলো না। মেয়েকে তুলে বসালো। আয়াত বিরক্ত হয়ে বলল।

–কি হয়েছে এভাবে ডাকছো কেনো? আমি রাতে খাব না। সকালে খাব। এখন আমাকে ঘুমোতে দাও।

–তোর বাবা প্রচন্ড রেগে গিয়েছে মা। আর কথা বলিস না। দ্রুত ওয়াশরুম থেকে ফ্রেশ হয়ে আয়। তোর বোনকে প্রচুর কথা শুনিয়েছে। তুই যদি কথা শুনতে, না চাস। তাহলে আমি যা বলছি। ঝড়ের গতিতে শোন। আয়াত মায়ের কথা শুনে, চোখ বড় বড় করে তাকালো। ঘুমের কারণে চোখ বারবার ছোট হয়ে আসছে। দু-চোখ ডলে, মায়ের দিকে তাকিয়ে বলল।

–আম্মু ব্যপার কি? আব্বু এত রাতে রেগে গিয়েছে কেনো? তুমি আব্বুর জন্য সতীন নিয়ে আসার পরিকল্পনা করছো না তো আবার? আয়াতের কথা শুনে, আয়াতের আম্মু চোয়াল শক্ত করে মেয়ের দিকে তাকালো। আয়াত আবার ঘুমোতে যাবে। আয়াতের আম্মু টেনে মেয়েকে তুলে,ওয়াশরুমে নিয়ে চলে গেল। মেয়েকে ফ্রেশ করিয়ে তৈরি করে দিতে লাগলো।

–রাত করে কি তোমাকে ভূতে ধরছে? রাত দেরটার সময় শাড়ি পড়াচ্ছো কেনো? আব্বু কি জানে, তার বউকে ভূতে ধরেছে। আমার শরীরটা বড্ড ক্লান্ত আম্মু। এভাবে বিরক্ত কেনো করছো?

–তোর বাবার আদেশ, নিচে গেলে সবকিছু বুঝতে পারবি। আয়াত ঘুমে ঝিমোচ্ছে। আয়াতের আম্মু আয়াতকে তৈরি করে, মাথায় ঘোমটা টেনে দিল। তারপরে মেয়েকে নিয়ে, নিচে আসলো। ড্রয়িং রুমে সবাইকে বসে থাকতে দেখে, আয়াতের ঘুম নিমিষেই উধাও হয়ে গেল। সবাই আয়াতে’র দিকে তাকিয়ে আছে। এভাবে সবাই তাকিয়ে থাকাতে, আয়াতের বেশ অস্বস্তি হচ্ছে, আয়াতের মা আয়াতকে আব্রাহামের পাশে বসিয়ে দিল। আয়াত আঁড়চোখে সবাইকে দেখছে, বাবার দিকে তাকিয়ে, আত্মা কেঁপে উঠলো। তার বাবা এ কি রুপ ধারন করেছে। আয়াত আন্দাজ করতে পারছে। এখানে কি হতে চলেছে। বাবার মুখের ওপরে যে, বলবে বাবা আমি এই বিয়ে করতে পারবো না। কিন্তু বাবার মুখের দিকে তাকিয়ে সব কথা হারিয়ে গেল। আজকে নিশ্চয়ই আরোহী আপুর কথা কেউ মনে করিয়ে দিয়েছে। সেদিনই আরোহী আপুর কথা বাবার সামনে বলা হয়। সেদিনই আয়াতের বাবা ভয়ংকর ভাবে, রেগে যায়। আয়াতের বাবা আয়াতের দিকে প্রশ্ন ছুঁড়ে দিল।

–আমি তোমার সাথে আব্রাহামের বিয়ে দিব। এতে তোমার আপত্তি আছে।

–আপনার সিদ্ধান্তই আমার সিদ্ধান্ত আব্বু। আপনি যা বলবেন। আমি সেটাই মেনে নিব। কিন্তু বিষয়টি আমাকে আগে জানাতে পারতেন। আমি মানসিক ভাবে প্রস্তুত থাকতাম। সবকিছু ঠিক করে এসে, আমার মতামত নেওয়ার দরকার নেই। আমার জন্য অনেক অসন্মান পেয়েছেন। আর নতুন করে আপনাকে অসন্মানের মুখে ফেলতে চাই না। আপনারা যেটা ভালো মনে করবেন। সেটাই হবে। মেয়ের কণ্ঠে চাপা অভিমান দেখতে পেল আজাদ শিকদার। তার মেয়ের তার সিদ্ধান্তকে, সবার সামনে ছোট করেনি। এটা ভেবেই প্রশান্তির নিঃশ্বাস ছাড়ালেন।

কাজীকে আগেই বাসায় নিয়ে আসা হয়েছিল। কাজীকে ড্রয়িং রুমে নিয়ে আসা হলো। কাজী এসে বিয়ে পড়ানো শুরু করে দিল। আব্রাহামকে কবুল বলতে বললে, আব্রাহাম কবুল বলে, রেজিস্ট্রি পেপারে সাইন করে দিল। আয়াতকে কবুল বলতে বললে, আয়াত বেশ কিছু সময় নিয়ে কবুল বলেছে। কবুল বলতে গিয়ে কান্না’ও করে ফেলছে। আয়াতের আম্মু মেয়েকে বুঝিয়ে, কবুল বলিয়েছে। কবুল বলা শেষ হলে, আয়াত-ও রেজিস্ট্রি পেপারের সাইন করে দিল। অবশেষে পবিত্র বন্ধনে আবদ্ধ হলো আয়াত ও আব্রাহাম। সবাই মিলে বলেই উঠলো আলহামদুলিল্লাহ।

চলবে…..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here