সে আমার মায়াবতী পর্ব -২৯+৩০

#সে_আমার_মায়াবতী
#লেখনিতে_ঈশা_ইসলাম
#পর্ব_২৯
সেদিনের পর কেটে গিয়েছে প্রায় এক সপ্তাহ্। আজ মিঃ চৌধুরী নিজে আমাকে আর মায়া কে ভার্সিটি দিয়ে আসবে। টেনশেন এ ছিলাম, না জানি লোকটা আমাকে পড়তে দেয় কি না?কিন্তু আমার ধারণা কে সম্পুর্ন ভুল প্রমান করে উনি নিজেই আমাকে পরার অনুমতি দিয়েছে। ওনার কাজে আম্মু আর আব্বুও ভিসন খুশি। কিন্তু এর বদলে উনি গুনে গুনে প্রায় একশত চুমু খেয়েছে। লোকটার বাচ্চামো দেখে আমি প্রতি পদে তার প্রতি নতুন করে প্রেমে পরি।

— জান আ’ম রেডি আর ইউ রেডি বেবি? ( মিঃ চৌধুরী)

— হুমম একটু ওয়েট করুন।
চুলটা আটকে গিয়েছে। ( আমি)

— দেখি আমি ঠিক করে দিচ্ছি। এভাবে করলে তোমার চুল তো ছিড়ে যাবে। কাম পাখি। ( মিঃ চৌধুরী)

আমি ওনার সামনে দাড়াতেই লোকটা আলতো হাতে আমার চুল স্পর্শ করে ছাড়িয়ে দিলেন। আমি মুগ্ধ নয়নে তার দিকে তাকিয়ে আছি। উনি মুচকি হেসে কি ইশারা করতেই আমি হুট করেই পা উচিয়ে ওনাকে জরিয়ে ধরি। উনি প্রথমে অবাক হলেও হালকা হেসে আমাকে আকড়ে নেয়। কানে চুমু খেয়ে বলে —

— কি হয়েছে জান। আজ নিজে থেকেই জড়িয়ে ধরলে যে, শরির খারাপ লাগছে? ( মিঃ চৌধুরী)

— উফফ মিঃ চৌধুরী আমি কি এখন জড়িয়ে ধরতেও পারি না। সব সময় কি আমার শরীর খারাপ থাকে? ( অসহায় চোখে)( আমি)

— আচ্ছা সরি জান। তুমি তো জানো পাখি তোমার চুপ থাকা, শরির খারাপ আমাকে কতটা পোড়ায়। (মিঃ চৌধুরী)

কথা বলার মাঝেই মায়ার চিৎকার অনুসরন করে দেখি মায়া চোখ ঢেকে দাঁড়িয়ে আছে। আমি সরে যেতে চাইলেও উনি আমাকে আরও কাছে টেনে নিয়ে আসেন। মায়ার দিকে দৃষ্টি দিতেই বলে উঠে-

— সরি সরি বড় ভাইয়া, সরি ঈশু আমি খেয়াল করি নি। মাই মিস্টেক। ( মায়া)

— তুই নক করিস নি কেন? (মিঃ চৌধুরি)

— আমি খেয়াল করি নি, আসলে অনেক লেইট হয়ে গিয়েছে৷ ( মায়া)

— আহ মিঃ চৌধুরী আপনি ছাড়ুন না প্লিজ। সত্যি তো দেরি হচ্ছে। আর আপনি ইচ্ছে করে দেরি করাচ্ছেন। ( আমি)

— দেরি করিয়ে আমার তো লাভ হলো না জান। সেই তো একটু আদ!! (মিঃ চৌধুরি)

— এই আপনি থামুন। আপনি এত নির্লজ্য কেন হ্যাঁ? সামনে আপনার বোন দাঁড়িয়ে আছে আর আপনি ওর সামনেই এসব বলছেন। ( আমি)

— এই আমি কিছু দেখি নি আর শুনিও নি, কান্টিনিউ বড় ভাইয়া। সময় দিয়ে গেলাম, লাস্ট টেন মিনিট’স তোমাদের। ( মায়া)

কথাগুলো বলেই মায়া আমাকে চোখ টিপ দিয়ে চলে গেলো। মিঃ চৌধুরী আমার দিকে তাকিয়ে ফ্লাইং কিস ছুঁড়ে দিয়ে চেপে ধরলেন।

— দেখলে তো টেন মিনিট’স সময় আছে। আর এই সময়ে তো অনেক কিছু করা যায়। তাই না পাখি। ( মিঃ চৌধুরী)

— ভাই বোন দু-টোই এক। লুচু টাইপ, আর আপ!

আর কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই উনি হেচঁকা টানে আমাকে সামনে নিয়ে এলেন।
আমার কোমড় দু- হাতে উচিয়ে ধরলেন। আমি জানি এখন এই মানুষটার মনে কি চলছে তাই পায়ের পাতায় ভর দিয়ে ওনার কাধ খামছে ধরলাম, চোখ বন্ধ করে অপেক্ষা করছি মিঃ চৌধুরীর স্পর্শ নেয়ার জন্য। উনি ঘার কাত করে হেসে মিলিয়ে দিলেন দুই- ওষ্ঠদয়, এমন ভাবে চুষতে থাকলেন যেন কোন সুধাপান করছেন।ঘড়ির কাটা জানান দিচ্ছে সময় পেরিয়ে যাচ্ছে কিন্তু ওনার ছাড়ার নাম নেই। তাই আমি হাতপা ছুড়াছুড়ি করতেই আমাকে ছেড়ে দিলেন। আমার ঠোঁট মুছিয়ে দিয়ে বললেন-

— উফ পাখি আ’ম কন্ট্রোল লেস, আমাকে তুমি কিন্তু ইচ্ছে করে এবার সিডিউস করছো। ( মিঃ চৌধুরী)

— আপনি ইচ্ছে করে এভাবে বার বার আমাকে জ্বালাতন করছেন। আপ আপনি আর আমাকে কিস করবেন না। (আমি)

— ওহহ তাই আচ্ছা কিস করবো না কিন্তু হ্যাঁ রোমেন্স তো করতেই পারবো। তাই না পাখি? ( মিঃ চৌধুরী)

— আপনি কি যাবেন? নাকি আমি চলে যাবো। অসভ্য মার্কা কথাগুলো আপনি আর বলবেন না কিন্তু। ( আমি)

— আচ্ছা জান চলুন এবার৷ ( মিঃ চৌধুরী)

আমার হাত ধরে নিচে নেমে গেলেন৷ আম্মু আব্বুর থেকে দোঁয়া নিয়ে বেরিয়ে গেলাম। আমি মায়া একসাথে যাবো ভেবেছি কিন্তু আজ বিয়ের প্রথম যাবো তাই উনি নিজেই ড্রপ করে দিবেন৷ ভার্সিটির সামনে গাড়ি দার করাতেই উনি কপালে চুমু দিয়ে চলে গেলেন। আমি আর মায়া ভার্সিটি প্রবেস করতেই তুবা এসে হাজির হলো। গল্প করতে করতে ক্লাস রুমে যাওয়ার পথে খেয়াল করলাম অনেকেই অবাক চোখে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। ভাবতেই মনে পরলো কাল মিঃ চৌধুরীর আর আমার ঘুরতে যাওয়া, শাড়ি ঠিক করে দেয়া, মেলায় হাত ধরে ঘুরার কিছু মুহুর্ত ভাইরাল হয়েছে। এই নিয়ে কিছুদিন কানাঘুষা বের হতেই উনি প্রেস-মিডিয়া ডেকে সবাই কে আমার পরিচয় দেন। সবাই শুভেচ্ছা জানালেও মিঃ চৌধুরীর প্রফাইল ঘুরে দেখি মেয়েদের আত্ম চিৎকার। মেয়েরা রিতিমত এই সেই বলে কমেন্টবক্স ভর্তি করে ফেলেছে। ওনার ভেরিফাইড পেইজ এ আমাদের বিয়ের ছবি সহ কিছু কাপল পিক দিয়ে আমাদের বিয়ের খবর জানিয়েছেন। এজন্যই সবাই এভাবে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। অস্বস্তি নিয়ে কোনমতে ক্লাস শেষ করার পর বের হতে নিলেই থার্ড ইয়ার এর সেই মেয়েগুলো পথ আটকে দাঁড়ায়৷

— বাহ বাহ এই রুপ দিয়েই বুঝি বড়লোকের ছেলেদের কে ফাসাও। আগে তো ভোলাভালা সেজে ছিলে এখন হটাৎ এত ঢং বেড়ে গেলো৷ ( প্রথম মেয়ে)

— হ্যাঁ নইলে ভাব নাহলে এর মতো মেয়েকে কিভাবে সব মেয়েদের ক্রাশ আইকন বিয়ে করবে হাও ফানি? ( দ্বিতীয় মেয়ে)

কথাগুলো বলা মাত্রই সবাই হেসে দিলো৷ এবার মায়া আর তুবা ক্ষিপ্ত দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলতে আরম্ভ করে-

— এই যে সমস্যা কি তোমাদের? মানুষ এর ভালো দেখতে পারো না তাই না। আমার ভাইয়া বিয়ে করছে তাতে খুব জ্বলছে তাই না?(মায়া)

— অন্যর ক্ষুত না ধরে নিজে ঠিক হও। সারাদিন মানুষ এর পিছনে লাগাই তো তোমাদের কাজ। নেক্সট টাইম ভেবে চিন্তে কথা বলবে। ( তুবা)

— এই তোমাদের পাওয়ার আছে বলেই কি যা ইচ্ছা করবে নাকি। মুখ আছে তাই কথা বলবো। আর কয়টা ছেলেকে ফাসিয়েছো এই ভাবে। ( আরেক জন)

আমার প্রিয় মানুষটা আমাকে শিখিয়েছে যখন নিজের দোষ না থাকে কেউ ইচ্ছে করে ছোট করতে চায় তখন তাকে সুযোগ দেয়া উচিত নয়। সে যেই হোক তাকে তার জায়গাটা বুঝিয়ে দিতে হয়।তাই আমি বুকে হাত ভাজ করে বললাম –

— ওহহ রিয়েলি? আচ্ছা আমি ফাসিয়েছি, তবে এসো তোমাকেও কিছু টিপস শিখিয়ে দেই। ( আমি)

আমার কথায় মায়া আর তুবা মুখ টিপে হাসলেও মেয়েগুলো রাগি চোখে তাকিয়ে আছে৷ আমি মুখ ভেংচি দিয়ে চলে এলাম। কিছুটা শান্তি অনুভব করছি। সত্যি তো আমি কেন অন্যের তেতো কথায় কান্না করবো, কেন কষ্ট পাবো। মনে মনে মিঃ চৌধুরীকে ধন্যবাদ দিতেই ফোনে কল এলো। স্ক্রিনে তাকাতেই দেখি প্রিয় মানুষটার নাম্বার জ্বলজ্বল করছে। সময় ব্যয় না করে রিসিভ করার সাথে সাথেই উনি বলে উঠলেন –

— ভালোবাসি বউ। জিবনের সবটা জুড়ে শুধু আপনার বসবাস। আর ঠিক এইভাবেই কিছু মানুষকে এভোয়েড করে চলতে হয়৷ ( মিঃ চৌধুরী)

— আপনি কিভাবে জানলেন? আর হটাৎ করে এই কথাই বা কেন বলছেন। আপনি কি আমার আশেপাশেই আছেন চৌধুরি সাহেব? ( আমি)

— আশেপাশে বলছো? তুমি তো আমার প্রতিটা নিঃশ্বস জুড়ে আছো৷ মিস ইউ পাখি।
(মিঃ চৌধুরি)

— আমিও মিস করছি আপনাকে চৌধুরী সাহেব। (আমি)

উনি মুচকি হেসে ফোনটা বুকে জড়িয়ে ধরলেন। ওনার প্রতিটা নিঃশ্বাস আমার কানে প্রতিফলিত হচ্ছে। শুনেছি ভালোবাসার মানুষ নাকি কাছে এলে রঙহীন জিনিস গুলোও সুন্দর লাগে৷ আমার ব্যপারে কি তা হচ্ছে নাকি?
চোখ বন্ধ করতেই মিঃ চৌধুরীর চেহারা ভেসে উঠলো।

—————————————————————

আজকে প্রতিটা মানুষ এর মনে অস্থিরতা আর চিন্তা কাজ করছে। কারন মিঃ চৌধুরীর ভোটের রেজাল্ট আজ দিবে। পার্টি ক্লাবে মানুষটা শান্ত হয়ে বসে আছে। তার মধ্যে ও কম চিন্তা কাজ করছে না মানুষটা কয়েকটা দিন যে পরিশ্রম করেছে তা সকলের চোখে পরেছে। সারাদিন রাত পরিশ্রম করেও মানুষটা একটা মুহুর্ত এর জন্য আমার যত্ন নিতে ভুলে নি। আস্তে আস্তে যে মানুষটার মায়ার গভির ভাবে জড়িয়ে পরছি তা আমি বেশ ভালো বুঝতে পারছি। আর কিছুক্ষন এর মধ্যে ফল প্রকাশ হবে তাই বাড়ির প্রত্যেকটা মানুষ টিভির স্ক্রিনে তাকিয়ে দোঁয়া করছে। অবশেষে ফল প্রকাশ করার জন্য কাউন ডাউন শুরু হলে আমার হাত পা কাপাকাপি শুরু হয়ে যায়। মানুষটার এত কষ্টের পরিশ্রম কি বৃথা যাবে? ভাবনার মাঝেই মায়া ইয়াহহহুউউ বলে চিল্লিয়ে আমাকে জড়িয়ে ধরে। টিভির স্ক্রিনে চোখ দিতেই জানতে পারি বিপুল ভোটে জয়ি হয়ে এবার এর পলিটিক্স নেতার পথটা মিঃ চৌধুরী পেয়েছে। আনন্দে পুরো বাড়ি গমগম করছে। আম্মু ও আমায় জড়িয়ে ধরলো। সামনে তাকিয়ে দেখছি আমার প্রিয় প্রেমিক পুরুষ এর মুখে বিশ্বজয় এর হাসি। যেখানে তাকে সম্মানওনা জানানো হচ্ছে। এর মধ্যেই মনে হলো আচ্ছা আমিও যদি আজ ওনাকে একটা সারপ্রাইজ দিয়ে চমকে দিতে পারি। তাই মায়া কে ডেকে নিয়ে প্লেন করলাম, আজ ওনার দেয়া শুভ্র শাড়ি, হালকা সাজে, কাঁচের চুরি, আর খোলা চুলে ওনার বাগানের কাঠঁগোলাপ, ব্যস রেডি হয়ে আম্মু, আব্বু কে বলে বেরিয়ে গেলাম। গার্ড যেতে চাইলেও আব্বুর থেকে কড়া পারমিশন নিয়ে তাদের ছাড়াই বেরিয়ে গেলাম। গল্প করতে করতে পার্টি ক্লাবের সামনে চলে এলাম। গাড়ি থেকে নেমেই চোখ বন্ধ করে ভাবতে লাগলাম, আচ্ছা আমাকে দেখলে কি উনি চমকে যাবেন? খুশি হয়ে জড়িয়ে ধরবেন? ভাবনার মাঝেই হাতে টান পরায় বাস্তবে ফিরি।মায়ার দিকে তাকিয়ে দেখি নিচে বসে আছে।কি হলো,কিভাবে হলো
এসব ভাবনা চিন্তা সাইডে রেখে যেই না ওকে তুলতে যাবো ওমনি কতোগুলো কালো পোশাক পরিহিত মানুষ এসে আমাকে টানতে লাগলো। টেনে গাড়িতে তুলে নিলো৷। সাই সাই করে গাড়ি চলে গেলো বহুদুর। এর মধ্যেই হইচই পরে গেলো। মিঃ চৌধুরী দৌরে এসে মায়াকে তুলে নিলেন। কিছু জিজ্ঞাস করার আগেই মায়া কেঁদে বলে উঠলো –

— ভা ভাইয়া ঈশা কে ফিরিয়ে দে প্লিজ। (মায়া)

— মানে? ( মিঃ চৌধুরী)

— ওরা ওরা ঈশা কে নিয়ে গিয়েছে প্লিজ ওকে এনে দেও না। ( মায়া)

— মায়া কান্না করে কথাগুলো বলার এক পর্যায় মিঃ চৌধুরী ওনার চুলে হাত বুলিয়ে ঘার কাত করে বাকা হাসে।

আমি গাড়িতে হাত পা ছুড়াছুড়ি করছি। কিন্তু লোকগুলো আমাকে থামাতে না পেরে মুখে রুমাল চেপে ধরলেন। আস্তে আস্তে সব ঝাপসা হতেই ভাবতে লাগলাম, আচ্ছা আর কি আমার শেষ কথাটা ওনাকে বলা হবে না? আমি কি মারা যাবো? মিঃ চৌধুরী তো বলেছে আমাকে সকল বিপদ থেকে রক্ষা করবে তাহলে কি আসবে উনি? এসে আমার কপালে চুমু খেয়ে আমাকে জড়িয়ে নিয়ে বলবেন, ভালোবাসি জান, সে আমার মায়াবতি। শুনতে পাবো কি তার মুখে এই বাক্য। আর কিছু ভাবতে পারলাম না তার আগেই ঢলে পরলাম ঘুমের কোলে।
#সে_আমার_মায়াবতী
#লেখনিতে_ঈশা_ইসলাম
#পর্ব_৩০
চোখ খুলেই নিজেক আবিষ্কার করি অন্ধকার রুমে।হাত পা নাড়াতেই দেখি দড়ি দিয়ে চেয়ারে বাধা পরে আছি। চারিপাশে চোখ বুলিয়ে দেখি ভেতরে আলো আশার ছিটেফোঁটা নেই। কিন্তু মাথার ওপর ছোট একটা লাইট রয়েছে। যা দ্বারা আমার সামনে বসে থাকা লোকটাকে দেখতে পারছি। সাথে বন্দুক নিয়ে গার্ড দাঁড়িয়ে আছে।
আমি এদিক সেদিক তাকাতেই সামনে বসা লোকটা বন্দুক ঘুড়াতে ঘুড়াতে বললো-

— বাহ পাখির জ্ঞান ফিরেছে। ( লোকটা)

— খবরদার এই নামে আপনি ডাকবেন না। কি ক্ষতি করেছি আমি?আমাকে কেন এখানে নিয়ে এসেছেন? ছাড়ুন বলছি। (আমি)

— বাহ আরাভ এর বউ তো দেখি তার মতো। তেজ আছে মেয়ের। আই লাইক ইট বেবি।(লোকটা)

— সাবধান করছি আমি। আপনি ফের এই নামে ডাকলে জিব ছিড়ে নিবো। (আমি)

— ওহহ রিয়েলি একটু পর বস এলেই বুঝবে কে কাকে কি করে। ( লোকটা)

এদের কথায় এতটুকু বুঝতে পেরেছি এর লিডার অন্য কেউ। কিন্তু আমাকে এখানে তুলে আনার আসল উদ্দেশ্য
কি হতে পারে? আর মিঃ চৌধুরী কি জানেন আমি এখানে? খুজে পাবে তো?.
ভাবনায় মত্ত্য থাকা অবস্থায় কারো বস সম্মোধনে সামনে তাকাই। একি উনি এখানে? অবাক হয়ে ভাবছি এই লোকটা কে তো আমি চিনি উনি আর কেউ না সয়ং আমার ভার্সিটির ইংলিশ টিচার। বিহান স্যার?যদিও দু- দিন ওনার চাহনিতে আমি বাজে একটা আভাস পেয়েছি, কিন্তু এতটা পাত্তা দেই নি,উনি আসতেই সবাই দাঁড়িয় গেলো, আমার দিকে হালকা ঝুকে বললেন –

— ওয়াও মিস ঈশা আ’ম ক্রাশ অন ইউ। ইশ আবার তোমার প্রেমে পরে গেলাম। ( বিহান)

— যাস্ট শাট আপ, আমি আপনার স্টুডেন্ট আর আপনি আমাকে এখানে জোর করে তুলে নিয়ে এসেছেন? ( আমি)

— হ্যাঁ কারন আমি ভালোবাসি তোমায়। সেই প্রথম দেখা থেকেই। আর আমি তোমাকে বিয়ে করতে চাই। খুব সুখি রাখবো। ট্রাস্ট! ( বিহান)

— চুপ করুন আপনি। আপনি একজন শিক্ষক তাই যথেষ্ঠ সম্মান করি। কিন্তু এখানে তুলে এনে আপনি মোটেও ঠিক করেন নি। এর ফল আপনাকে খুব বাজে ভাবে ভোগ করতে হবে। ( আমি)

— উফফ এই কারনেই তো ভার্সিটির সবাইকে রিজেক্ট করে তোমাকে চোখে লেগেছে। একদম ইউনিক তুমি। ভালোবাসি তোমাকে ঈশা। ( বিহান)

— আপনি শুনতে পাচ্ছেন না? বিবাহিত আমি, আরেকবার এই কথাগুলো বলে নিজেকে কুলশিত করবেন না। ছেড়ে দিন আমায়। ( আমি)

আমার কথায় বিহান স্যার জোরে জোরে হাত তালি দিয়ে হেসে বলে ওঠে –

— ওহহ তাই, তাহলে তোমার প্রেমিক পুরুষ এর নাকের ডগা থেকে তুলে নিয়ে এলাম। ধরতে পেরেছে আমায়? আর এখন আমি বিয়ে ও করবো তোমায়। তোমার এই রুপ, লাবন্য আমাকে পাগল করেছে৷ এত মেয়ে দেখেছি ছুঁয়েছি কিন্তু তোমার মতো এত সুন্দর পাগল করা মেয়ে আমার চোখে আর পরে নি। (বিহান)

— ছি ছাড়ুন আমায়। এতটা নিচ আপনি। একদম আমার কাছে ঘেষার চেষ্টা করবেন না। খুলে দিন আমার হাত। ছাড়ুন বলছি। ( চিল্লিয়ে) ( আমি)

— আহ চিৎকার করে লাভ নেই, কেউ এই গভির জংগলে তোমাকে বাচাঁতে আসবে না। আগে তোমাকে বিয়ে করে খাঁচায় পুড়বো, তারপর তোমার ইচ্ছের বিরুদ্ধে হলেও নিজের করে নিবো। আর তোমার আরাভ আর আসবে না, খুঁজে পেলে তবেই তো আসবে না। ( বিহান)

সত্যি কি আসবেন না মিঃ চৌধুরী৷ আমাকে এই নড়ক থেকে উদ্ধার করবে না? এই অসৎ মানুষটা কি আমাকে সত্যি বাজে ভাবে ছুঁয়ে দিবে।
(মনে মনে)( আমি)

— এই কাজি নিয়ে আয়৷এক মুহুর্ত দেরি করা যাবে না। পাখি উঁরে যাবে। ( বিহান)

— বস শাড়ি গহনা? এসব! ( লোকটা)

— নো নো ভুল করেও দেরি করা যাবে না। আর আগে বিয়ে হোক তারপর সব হবে। আর এমনিতেও বিয়ের কনে শাড়ি পরিহিতোই আছে। (বিহান)

— করবো না আমি বিয়ে। ছাড়ুন বলছি। আমি বিবাহিত। আপনি এগুলো কেন করছেন। করবো না এই বিয়ে। একজন বিবাহিত মেয়েকে আপনি বিয়ে করবেন? এতটা পাপ করবেন না প্লিজ। ( আমি)

— বিয়ে বিয়ে বিয়ে? কিসের বিয়ে? কার বিয়ে।আজ এক্ষুনি তোমাকে বিয়ে করবো। আর সোজা কথায় না হলে আঙুল বাকাতে হবে। আমাকে রাগীয়ে দিলে তোমার ভালো হবে না। তাই চুপচাপ বিয়েটা করে নাও। ( বিহান)

— আমি মরে গেলেও এই বিয়ে কিছুতেই করবো না। এই ঈশার মনে শুধু তার চৌধুরি সাহেবের বাস। আমি শুধু আমার মিঃ চৌধুরী কেই ভালোবাসি। শুনতে পেয়েছেন। ( আমি)

আমার কথায় বিহান স্যার চোখ লাল করে তাকিয়ে, হাতের কাছের চেয়ারটা জোরে আছার মেরে আমাকে টেনে তোলেন।আমি ব্যথা পেলেও খিচে সহ্য করে নিলাম। হাত চেপে ধরে হিসহিসিয়ে বলে উঠলেন –

— আজ পর্যন্ত তোকে ভালো বেসে ভালো চোখে তাকিয়েছি। যেই মেয়ে চোখে লেগেছে তার সর্বনাশ করেছি।কিন্তু তোকে বিয়ে করে পবিত্র ভাবে ছুঁতে চেয়েছি, কিন্তু তুই তোর আরাভ আরাভ করে পাগল হয়ে আছিস। তাই এবার আগে বাসর হবে এরপর বিয়ে হবে। দেখি তোকে কে বাঁচায়। ( বিহান)

উনি কথাটা বলেই আমাকে টেনে হিচড়ে অন্যরুমের বেডে ধাক্কা দিয়ে ফেলে। শার্টের বোতাম খুলতে খুলতে এগিয়ে এলেই আমি ঝট করে উঠে ধাক্কা দিতেই আমাকে আবার ফেলে দিলেন। সামনে এগিয়ে আসছে আমি হাতজোর করতে করতে পিছিয়ে যাচ্ছি। উনি আমার শাড়ির আচঁলে হাত দেয়ার আগেই চোখ বন্ধ করে মিঃ চৌধুরীর মুখটা মনে মনে অবলোকন করে নিলাম৷ দু-ফোটা অশ্রু বিসর্জন দেয়ার সাথে সাথেই ভেবে নিলাম, আজ পৃথিবি থেকে চিরতরে মুক্তি নিবো। এই লোকটার বাজে স্পর্শ যে একটু পর আমার ভালোবাসার মানুষ এর পবিত্র ছোঁয়া মুছে যাবে।
ভাবতে ভাবতে ডুকরে কেঁদে উঠলাম। কিন্তু হুট করে হাতে টান খেতেই দেখলাম বিহান স্যার সামনে পরে আছে। আর মিঃ চৌধুরী হিংস্র চোখে ওনার দিকে তাকিয়ে আছে। চারিপাশে গার্ড এ ভর্তি। মিঃ চৌধুরী কে দেখে আর কিছু না ভেবে এলোমেলো পায়ে গিয়ে জড়িয়ে ধরলাম। উনিও আমাকে জড়িয়ে নিলেন। বিহান উঠে মিঃ চৌধুরীকে আঘাত করতে এলেই মিঃ চৌধুরী এক ঘা বসিয়ে দেয়। বিহান স্যার ব্যথায় কুকিয়ে মাটিতে বসে পরেন। উনি এবার আমার দিকে তাকিয়ে হাত দিয়ে দু-গাল আগলে বলে উঠলেন-

— জান কি হয়েছে? কাদঁছো কেন? এই তো আমি এসেছি। এই কুত্তার বাচ্চা কার গায়ে হাত দিতে চেয়েছে তা হাড়ে হাড়ে বোঝাবো। ( মিঃ চৌধুরী)

— আ আমাকে উনি বি বিয়ে করতে চেয়েছে। আমি বারন করেছি তাই জোড় করে আমাকে! ( কান্না করে দিয়ে)(আমি)

— ভয় নেই পাখি, তোমাকে যে ছুঁতে চেয়েছে তার প্রত্যেকটা অংগ আমি জ্বালিয়ে দিবো। কার বুক থেকে তোমাকে ছিনিয়ে নিতে চেয়েছে সেই মাসুল ও আজ দিবে। ও কি জানে না তুমি আমার। আমার মায়াবতি?

মিঃ চৌধুরী রাগে চিল্লিয়ে কথাটা বলেই আমাকে সরিয়ে গার্ডের হাত থেকে রড নিয়ে ইচ্ছেমতো পিটাতে লাগলেন। আমি মুখে হাত দিয়ে ভয়ে কান্না করছি। বিহান স্যার ব্যথায় চিল্লিয়ে হাত জোর করে কান্না করছে কিন্তু উনি থামছে না। তার মুখে একটাই বুলি কেন আমাকে বাজে ভাবে ছুঁতে চেয়েছে। কিন্তু এভাবে তো স্যার মরে যাবে, অবশ্য তাতেও ওনার মাথাব্যথা নেই। আমি তাই পেছন থেকে মিঃ চৌধুরী কে জড়িয়ে ধরলে উনি থেমে আমার গালে হাত দিয়ে বলে –

— না জান এই ভুলটা আর দ্বিতীয় বার করো না। ওই জানোয়ার তোমাকে স্পর্শ করতে চেয়েছে। আমার থেকে আলাদা করতে চেয়েছে। ( মিঃ চৌধুরী)

— ছে ছেড়ে দিন না ওনাকে মরে যাবে। আর! ( আমি)

— ছেড়ে দিবো? তাহলে তো ২৭ টা মেয়ে মুক্তি পাবে না।তাদের কষ্টের কাছে এর মরে যাওয়া নিছক পানি সমান। (মিঃ চৌধুরি)

— মা মানে? ( আমি)

— আজ শুধু তোমাকেই না, এই জানোয়ার ভার্সিটির আরো নিরীহ মেয়েকে তুলে নিয়ে রেপ করেছে। আর শুধু তাই না ও ভিডিও করে ব্যল্ক মিল করেছে। কতগুলো নিস্পাপ প্রান শেষ হয়েছে তার ধারনা নেই জান। এসব সহ্য না করতে পেরে অকালেই আত্মহত্যা করেছে তোমার মতো পবিত্র ফুল গুলো। আর আজ সব সিমানা অতিক্রম করেছে তোমাকে ছোঁয়ার চেষ্টা করে। ( মিঃ চৌধুরী)

উনি এতক্ষন রেগে কথাগুলো বললেও শেষ কথাটা ঘার কাত করে বললেন। এবার আর কিছু না বলে উনি আমাকে হেচঁকা টানে নিজের দিকে ঘুড়িয়ে জড়িয়ে ধরলেন। কিছু বুঝে ওঠার আগেই গুলির শব্দে নিস্তব্ধ হয়ে যায় চারিপাশ। তিনটে শব্দ আমাকে ঘিরে ধরেছে। ঘুরে তাকানোর আগেই আরেকটু চেপে ধরে কানের কাছে মুখ নিয়ে বললেন –

— উমমম নো এভাবেই থাকো। তুমি সহ্য করতে পারবে না। রক্তে তোমার ফোবিয়া আছে। (মিঃ চৌধুরি)

কথা শেষেই সাহেল ভাইয়ার দিকে তাকিয়ে কড়া গলায় বললেন –

— এই কিটটাকে জংগলের গভিরে রেখে এসো, যেখানে পশুরা এই পশুকে ছিড়ে খাবে। ( মিঃ চৌধুরী)

কথা শেষ করেই উনি আমাকে কোলে তুলে নিলেন। আমিও দূর্বল থাকার কারনে গলা জড়িয়ে ধরলাম। গাড়িতে নিয়ে বসিয়ে দিলেন। দুম করে গাড়িতে ঢুকে দড়জা লাগিয়ে দিলেন। আমি কিছু বলার আগেই বড় বড় শ্বাস হাত উচিয়ে থামিয়ে দিলেন। রাগি চোখে তাকিয়ে বললেন-

— কার পারমিশন নিয়ে তুমি বের হয়েছিলে? আজ যদি আমি ঠিক সময় না আসতাম কি হতো ধারনা আছে তোমার। স্পিক আপ ডেমেট। (মিঃ চৌধুরি)

ওনার চিৎকারে ভয় পেলেও ওনাকে শান্ত করার জন্য ধরতে গেলে হাত সরিয়ে দেয়। আমি আবার ছুঁতে গেলে একি কাজ করে। তাই মিনমিনিয়ে বললাম-

— আর হবে না। আর অবাধ্য হবো না আপনার কথার। প্লিজ আমাকে! ( আমি)

— চুপ আজ তুমি একটা কথাও বলবে না, আমার চোখের সামনে যেনো না দেখি তোমায়। বেশি চালাকি করতে কে বলেছিলো তোমায়। তুমি জানো না তোমার কাছে আমার রুহ্ আটকে আছে। এতটা অবুঝ কেন তুমি ঈশুপাখি?

আমি আর কিছু না বলেই মিঃ চৌধুরীর গালে টুপ করে চুমু খেয়ে নিলাম। আমি জানি এখন এইভাবেই ওনাকে শান্ত করতে পারবো। চুমু দিয়ে জড়িয়ে ধরে বললাম –

— শান্ত হোন। আমি ঠিক আছি। আপনি ছাড়া আমাকে ছোঁয়ার অধিকার কারো নেই। আমি কিছু বলতে চাই। সেজেছি আপনার শুভ্রপরি। মিঃ চৌধুরী শুনছেন? ( আমি)

——-

— কথা বলবেন না? ভালোবাসি যে। আমি আপনাকে ভালোবাসি চৌধুরি সাহেব। আমার সবটা জুড়েই আপনার বসবাস। ( আম)

আমার কথায় মিঃ চৌধুরী নিশব্দে হেসে আমাকে কাছে টেনে নিলেন। ঘারে চুমু খেয়ে বললেন-

— এমনিতেই দূর্বল তার উপর এই বাক্য। কেন পাখি কেন তুমি এভাবে জিতে যাও। প্রতিটা পদে তুমি আমাকে দূর্বল করে জিতে যাও। আমিও ভালোবাসি জান। আর তুমি শুধু আমার।

ওনার কথায় আমি শান্তির নিঃশ্বাস নিলাম। অবশেষে আমি আমার ভাবনার বাক্য তাকে শুনিয়েছি। আমার ভালোবাসার পুরুষ কে আমি নিজের করে পেয়েছি। যে একান্তই আমার।
#চলবে____________

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here