সে আমার মায়াবতী পর্ব -৭+৮

#সে_আমার_মায়াবতী
#লেখনিতে_ঈশা_ইসলাম
#পর্ব_৭
“ভাবতে লাগলাম কিছু ঘন্টা আগের কথা,,
তুবা মায়া চলে যাওয়ার পরে যখন আমি বাড়ি ফিরছিলাম তখনি আমাকে ফোন করে সামিয়া আপু, ফোন রিসিভ করতেই বলে উঠলাম

” হ্যা আপু আসছি, আসলে আজকে মেলায় এসেছিলাম তুবা, মায়ার সাথে তাই একটু লেট হয়ে গিয়েছে, চিন্তা করো না, আমি আর কিছুক্ষনের মধ্যেই চলে আসবো,।

” ঈশা আমি রাইসা, সামিয়ার ফোন থেকে কল করেছি,

“হটাৎ করে কি হলো সেটাই ভাবছি, কারন রাইসা বা মা আমাকে কখনোই ফোন করে না, বাড়িতে সব ঠিক আছে তো? ভাবতেই জিজ্ঞাস করে ফেললাম!

” রাইসা বাড়ির সবাই ঠিক আছে তো, আর মা তু!

” হ্যা হ্যা সবাই ঠিক আছে কিন্তু তুই বাড়িতে এলে কেউই ঠিক থাকবে না ”

” মানে?

” কারন রাহুল সহ সবাই এসেছে সন্ধায় এখন রাতের ডিনার করে যাবে, আমরাই ইনভাইট করেছি, তাই তুই এখন বাড়ি ফিরিস না, দেখ কোন বান্ধবির বাড়িতে থাক আমি ফোন করে দিবো তখন চলে আসিস,

” এর মধ্যেই সামিয়া আপুর গলা শুনলাম

” ও এই রাতের বেলা কোথায় থাকবে, আর পিছনের দড়জা দিয়ে ওকে আমি নিয়ে আসবো, তুই চিন্তা করিস না,এমনিতেও তুই আর তোর মা আমার বোন কে নিয়ে একটু বেশি পজেসিভ,

” না সামিয়া ও আসবে না, পাত্রের বাড়ির লোক বার বার বাড়িতে উঠা নামা করছে, এর মধ্যে যদি ওকে দেখে ফেলে ভাবতে পারছো কি হবে, আর এইসব কারনে আমি কোন মতেই রাজ্য আর রাজপুত্র হারাতে চাই না,

” দু- জন এক প্রকার ঝগড়া লেগে গিয়েছে, তাই আমি হুট করেই বলে উঠলাম

” আচ্ছা থামো তোমরা, আমি এখন আমার ফ্রেন্ডদের সাথে আছি তাই আমার সমস্যা হবে না, আমি ওদের সাথেই আছি, সামিয়া আপু ওরা চলে গেলে তুমি আমাকে ফোন করে বলো, আমি বাড়িতে চলে আসবো।

“এই কথা শুনে সামিয়া আপু রাইসার থেকে ফোন টেনে নিয়ে বললো,

” তুই কি পাগল,! সেই সকালে বের হয়েছিস কিছু না খাওয়া আর এই শিতের মধ্যে শাড়ি পরে আছি, দেখ ঈশা বাড়িতে চলে আয়,

” চিন্তা করো না আমি ওদের সাথে আছি, ঠিক সময় চলে আসবো, এখন রাখছি, ওরা ডাকছে

” এই ঈসা এই শোন, যাহ কেটে দিল,

“তোর আর তোর মায়ের জন্য যদি ওর কিছু হয় তাহলে আমি কাউকে ছাড়বো না,

” বলেই সামিয়া আপু রেগে ঘর ছেড়ে নিজের রুমে গিয়ে দড়জা দিয়ে দিলো,
রাইসা মুখ বাকিয়ে বলে উঠলো,

” এ্য জন্ম পরিচয়হিন একটা মেয়ের জন্য কি দরদ, ঢং, যাই সুন্দর করে সেজে ফেলি, লা লালা লা, হুম হুম্মু

” গুন গুন করতে করতে চলে গেলো,
আমি রাস্তায় দাঁড়িয়ে ভাবছি আমি এখন কোথায় যাবো, না না আমার জন্য আমার বোনের বিয়ে ভাংগুক আমি চাই না, মা কস্ট পাক! ভাবতে ভাবতে দেখলাম মাত্র ৮ টা বাজতে চললো, এখন কোথায় যাবো ভাবতে ভাবতেই মনে পরলো সামনেই তো একটা পার্ক আছে, তাই আপন মনে পার্কে চলে গেলাম, ভয় পেলেও দেখলাম হালকা লাইট এর মধ্যে দু-চার জন কাপল আছে, তাই শান্তির নিঃশ্বাস নিয়ে বসে রইলাম, আস্তে আস্তে যে কখন ঘুমিয়ে পড়লাম টের পেলাম না, শিত শিত অনূভতি হতেই লাফ দিয়ে উঠলাম, হায় আল্লাহ মোবাইল অন করে দেখি ১০টার কাছাকাছি, আমি দ্রুত ফোন নিয়ে সামিয়া আপুকে কল করলাম কল বিসি দেখাচ্ছে নিশ্চিত সায়ন ভাইয়ার সাথে কথা বলছে, একে একে রাইসা, বড় আম্মু সবাই কে কল করলাম, কেউ ফোন তুলে নি, আমি কি করবো ভাবতে ভাবতেই দেখলাম ৩ টা লোক আমার দিকে এগিয়ে আসছে, লাইটের আবছা আলোতে বুঝতে পারলাম মাতাল অবস্থায় আছে, আমি ভয় পেয়ে শাড়ি খামছে ধরলাম

” কি গো সুন্দরি এত রাতে এহানে কি করো,

আরেক জন বলে উঠলো।

” ওওও কাস্টমার পাও নাই বুঝি, সমস্যা নাই আমরা আছি, রেট বলো সবাই আলাদা করেই দিবো, এক রাত থাকলেই হইবো,

“এই কথা শুনে আমি কেঁদে দিলাম, এত জঘন্য কথা বলছে আমাকে, আমি কিছু না ভেবেই শাড়ি উচু করে পালাতে লাগলাম, এর মধ্যেই শুনতে পেলাম ওরা বলাবলি করছে,,

” মাইয়াডা খাশা আছে, আমরা এক রাইত রাইখা বসের কাছে দিয়া দিমু, বস খুশি হইবো

” হ, আর মেলা টাহাও দিবো

“আমি প্রান পনে ছুটে চলেছি প্রায় দশ মিনিটের মতো, কোন গলিতে এসেছি নিজেও জানি না, চারদিকে তাকিয়ে দেখি অন্ধকার, এর মধ্যেই সুনলাম

“আরে ওই তো মাইয়াডা, ধর ধর,

“ভয়ে আমার কলিজা কেপে উঠলো, দিক বেদিক ভুলে দৌরে মেইন রাস্তায় চলে এলাম হুট করেই একটা গাড়ির সাথে ধাক্কা লেগে মাটিতে পরে গেলাম, উঠতে গিয়ে বুঝতে পারলাম হাতে বেশ ভালোই আঘাত পেয়েছি, তবুও নিজেকে বাচাঁতে হবে তাই ব্যথা ভুলে উঠে দাড়াতেই দেখলাম লোক গুলো এগিয়ে আসছে কোন কিছু না ভেবেই সামনের লোকটাকে জরিয়ে ধরে বলতে শুরু করলাম!

“আ আমা কে হে হেল্প করুন প্লিয, ওরা ওরা আমা কে

” বলেই কেঁদে উঠলাম, হটাৎ করেই তিনটি শব্দ শুনে চমকে উঠলাম, পেছন ফিরে দেখি তিন জন মাটিতে শুয়ে কাতরাচ্ছে, আমি ভয়ে মুখে হাত দিয়ে ফেললাম,মুখ দিয়ে কোন কথাই বের হচ্ছে না, আচ্ছা উনি কি আমাকেও মেরে ফেলবেন ভাবতেই সরে আসতে চাইলে লোকটা চেপে ধরে নিজের সাথে মিশিয়ে নেয়, আমি চোখ তুলে তাকাতেই দেখি মি:চৌধুরি, আমি অবাক হয়ে কিছু ভাবার আগেই শুনতে পেলাম

“স্যার স্যার আর হইবো না, এবারের মতন মাফ কইরা দেন, আর আমরা এই কাম করমু না,

“এর মধ্যেই উনি রাশভারি কন্ঠে বলে উঠলেন,

” যা ছেড়ে দিলাম, আর যেন না দেখি,

” বলতে বলতেই আমি খেয়াল করলাম মোবাইলে কিছু টাইপ করে বাকা হাসছে, লোক গুলো কোন মতে উঠে দাঁড়িয়ে পালিয়েছে, আমাকে হুট করেই বলে উঠলেন

” এই মেয়ে এখন কয়টা বাজে, এত রাতে বাহিরে কি হ্যা,( চিল্লিয়ে)

” আ আমি

” বলতে বলতেই কেঁদে উঠলাম ওনার ধমকানিতে,

” এই তুমি কাদঁছো কেন, আমি কিছু বলেছি,?

“ধমকাচ্ছেন কেন, আমি কিছু করে নি তো

” আমার কথা শুনেই লোকটা ঠোট কামড়ে হাসলেন,
আমাকে বললেন।

” গাড়ি তে উঠো, বাড়ি পৌছে দিবো,

“আমি জানি এইখানে আমাকে কেউ সাহায্য করবে না, কারন কেউ নেই আশে পাশে তাই ভেবে চিনতে গাড়িতে ওঠার জন্য পা বাড়াতে,

” আহহ

“কি হয়েছে,ব্যথা পেয়েছো, কথা বলছোনা কেন?

“আপনি বলার সুযোগ দিলে তবে তো বলবো,।

“আচ্ছা এসো,

” কোন মতে হেটে গাড়িতে উঠলাম, হেটে বুঝতে পেরেছি পায়ে ও ব্যথা পেয়েছি, উনি আমার দিকে এক পলক তাকিয়েই আমার কাছে এগিয়ে এলেন।

“আমি ভয় পেয়ে চোখ বন্ধ করে নিলাম, উনি বলে উঠলো,,

” এই মেয়ে তুমি এত বেশি ভাবো কেন, সিট বেল্ট বাধো নি কেন তাই আমি বেধে দিয়েছি, তোমরা মেয়েরা কি একটু বেশি ভাবো নাকি,,

“আমি ওনার কথায় হা হয়ে আছি, লোকটা কি বললো,, এর মধ্যেই টের পেলাম গাড়ি চলতে শুরু করেছে,,এক এক করে সন্ধার কথা গুলো ভেবে চলছিলাম,, এর মধ্যেই মনে হলো হাতে কেউ গরন খুন্তি লাগিয়ে দিয়েছে, হালকা চেচিয়ে কেঁদে দিলাম, চোখ পিট পিট করে দেখলাম লোকটা হাতে মেডিসিন লাগিয়ে দিচ্ছে, আমি ফুপিয়ে কেঁদে উঠলাম,উনি বেশ কাছে এসে গালে হাত দিয়ে বলতে শুরু করলো

“বেশি ব্যথা করছে জা!

” কিছু বলতে গিয়েই থেমে গেলেন, আমি সরে আসার আগেই হাত সরিয়ে নিলেন, তারপর বললেন,,

“বাড়ি যেতে পারবে? নাকি হেল্প করবো?

“আমি কাদো কাদো সুরে বললাম

” প্লিজ আপনি আমাকে এই মাঝ রাস্তায় নামিয়ে দিবেন না, আমি খুব ভয় পাবো, প্লিজ আমার বাড়িতে একটু লিফট দিন,

” লোকটা আমার দিকে কেমন করে তাকিয়েই যেনো হা হা করেই হেসে দিলেন, আমি তাকিয়ে দেখছি আসলেও মেয়েরা তার প্রতি কেন ফিদা,মানুষটা কি সুন্দর হাসে,এর মাঝেই ভাবলাম আমাকে কি সত্যি গাড়ি থেকে নামিয়ে দিবে?

“এই মেয়ে কি ভাবো এতো?
তাকিয়ে দেখো তোমার বাড়ির সামনেই আছি,

” ওহহ, হ্যা😯 আমি তো আপনাকে আমার বাড়ির ঠিকানা বলি নি, কিভাবে চিনলেন,

“এই আয়ান আরাভ চৌধুরীর পক্ষ্যে কিছুই অজানা নয়, এবার আসতে পারো,,

” কেমন লোক রে বাবা কিভাবে তাড়িয়ে দিচ্ছে, আমি মুখ ভেংচি দিয়ে যেন না নামতে যাবো ওমনি দেখি সামিয়া আপু আর বড় মা দৌরে আসছে।

” ঈশা কি হয়েছে, কিভাবে ব্যথা পেলি, আমার কত টেনশন হচ্ছিল,

“মা রে তুই এত দেরি করলি কেন, ফোন ধরিসনি কেন ( কান্না করে দিয়ে)

” তাকিয়ে দেখলাম ফোন বন্ধ হয়ে আছে, তখন হাত থেকে পরেই এই অবস্থা হয়েছে বুঝতে পারলাম,

“আপু বড় আম্মু কিছু হয় নি পড়ে গিয়ে ব্যথা পেয়েছি রেস্ট নিলেই ঠিক হয়ে যাবে।

” সামিয়া আপু আমাকে গাড়ি থেকে নামিয়ে নিলেন,
বড়আম্মু মি:চৌধুরী কে বলে উঠলেন,

“বাবা আমার মেয়েটাকে সাহায্য করার জন্য ধন্যবাদ,

“মেনশন নট আনটি, এটা আমার কাজ ছিলো, আ আই মিন দ্বায়িত্ব ,

“আচ্ছা বাবা ভালো থাকবে।

” বলেই আমাকে ধরে নিয়ে যাওয়ার সময় আমি হালকা ঘুরে মুচকি হাসি দিয়ে বলি,

” ধন্যবাদ চৌধুরি সাহেব।

” বলেই বেড়িয়ে গেলাম আর ওনার ফোন এ একটা কল এলো, ফোন কানে দেয়ার সাথে সাথে একজন বলে উঠলো

” স্যার মেম এর বোন কে কল করে বলেছি, আপনি যা বলতে বলেছেন

” গুড,

” বলেই ফোন কেটে বুকে হাত দিয়ে বিরবির করে বলতে শুরু করলেন,

“কি জাদু করেছো শ্যামবতি,তোমার দহনে আমি বার বার পুড়ছি,বাচ্চামি,বোকা চাহনি,মুচকি হাসি উফফ এক দিনেই এই আরাভ চৌধুরী কে পাগল করেছো,তোমার নিস্তার নেই মায়াবতি, আমার ভালো থাকার জন্য চাই মায়াবতি, হ্যা আমি বুঝতে পেরেছি তুমি আমার মায়াবতি , চাই চাই তোমাকে আমার।
#সে_আমার_মায়াবতী
#লেখনিতে_ঈশা_ইসলাম
#পর্ব_৮
“বাড়িতে পা রাখা মাত্রই , মা চেচিয়ে বলে উঠলেন,,

” দাড়াও

“আহ ছোট আপা মেয়েটা পরে ব্যথা পেয়েছে, তাই আগে ঘরে যাক পরে তুমি ওর সাথে কথা বলো।

“না, ও এত রাত পযর্ন্ত কোথায় ছিলো,বাড়ির যে একটা মান সম্মান আছে তা নিশ্চই তুমি ভুলে যাও নি?

“এবার আমি আর না পেরে মুখ খুললাম,

“মা আমি ফোন করেছিলাম, আর তাছাড়াও আমি চাই নি আমার জন্য তোমার মেয়ে বিয়ে ভেংগে যাক, চাচিমা সারাদিন বাহিরে ছিলাম আমার খুব খিদে পেয়েছে, আমাকে একটু খায়িয়ে দিবে!

“এভাবে বলে না আম্মুটা,, তুমি ফ্রেস হও আমি এক্ষুনি খাবার নিয়ে আসছি,

“আচ্ছা,

“বলেই হাটতে শুরু করলাম, সামিয়া আপু আমাকে ধরে নিয়ে গেলো আমার রুম এ, আমি ফ্রেশ হয়ে বসতেই আপু আমাকে মেডিসিন লাগিয়ে দিতে শুরু করেছে আর কিছু মনে পরতেই লাফিয়ে বলতে শুরু করলো

” ঈশু ঈশু তুই কার গাড়িতে ছিলি তুই জানিস( চোখ বড় বড় করে)

“আমি কিছু বলবো তার আগেই বলতে শুরু করলো,

“দ্যা গ্রেট আরাভ, ও মাই গড, তুই সব মেয়েদের ক্রাস বয়ের গাড়িতে ছিলি, ভাবতে পারছিস, আরে ওনাকে তো সবাই মাফিয়া নামে চিনে রে, পলিটিক্স করে, বোন রে সামনে টুস টুস করে গুলি করে দেয়,

“তা আমি নিজেও দেখেছি, আপু!

” তুই কিভাবে দেখলি?

” আমি জানি মেয়েটাকে বললে অযথাই চিন্তা করবে তাই কথা ঘুরিয়ে বললাম

” ওই যে তুমি বললে তা তাই আরকি,

“কথার মাঝেই হটাৎ চাচিমা খাবার নিয়ে ঘরে এলো,, আমাকে যত্ন সহকারে খাইয়ে দিতে লাগলো,এই মানুষ দু-টো না থাকলে আমার কি হতো তাই ভাবছিলাম, এর মধ্যেই আমি জিজ্ঞাস করে বসলাম

“রাইসার বিয়ের ডেট কি দিয়েছে? না তাহলে আমি ক-দিনের জন্য হোস্টেল এ উঠতাম, বিয়ে শেষ হলে চলে আসবো,

“চাচিমা হু হু করে কেঁদে দিয়ে বলে উঠলো, বিয়ে হলেও আমার মা টা কে নিয়ে আমার বাড়িতে যেতাম কোন হোস্টেল এ যেতে দিতাম না,,

” এর মাঝেই আমি বলে উঠলাম,

“বিয়ে হলে মানে?

“আমার কথার বিপরীতে সামিয়া আপু বলতে শুরু করলো,,

“আর বিয়ে সে বিয়ে ভেংগে গিয়েছে, বলতে গেলে ছেলে নিজেই ভেংগে দিয়েছে।

“আমি হা হয়ে গেলাম, এর মধ্যেই চাচিমা আমার মুখে ভাত পুরে দিয়ে বললো,

“জানিস তো ঈশা আল্লাহ ছাড় দেয়, ছেড়ে দেয় না, আজ কি কান্ড হয়েছে বাড়িতে, শোন মা তুই রাইসার কাছে যাস না, পাগল হয়ে গিয়েছে বড় বাড়ির বউ হওয়ার জন্য,,

“আমি মোটেও এইটা আশা করি না, যেই কারনে আমি আজ এত বড় বিপদে পরতে যাচ্ছিলাম, শেষমেষ কিনা বিয়েটাই হবে না!!
আমি কিছু বলার পূর্বেই সামিয়া আপু বলতে শুরু করলো

” শোন কি হয়েছে? রাতের বেলা ডিনারের সময় সবাই মিলে প্রায় প্লেন করেছিলো যে বিয়ে এর মধ্যেই হবে, সব পাকা পাকি হয়ে গিয়েছিলো,,তার মধ্যেই হটাৎ করে পাত্র বলে উঠে,

“এই বিয়েটা হবে না!

“এসব তুমি কি বলছো, দেখ মজা করবে না, আমার তোমাকে পছন্দ হয়েছে, আর আমি তোমাদের বাড়িতে বউ হয়ে যেতে চাই।

” ওহ রিয়েলি,! আমি যতটুকু জানি এই বাড়িতে আরও একটা মেয়ে আছে, কোথায় সে, আমার জানা মতে আমরা পুরো বাড়ি চক্কর দিয়ে ফেলেছি,কোথায় সে

“এসব তুমি কি বলছো রাহুল ( রাহুলের মা)

” আমি ঠিক বলছি আম্মু, আব্বু জানো সামান্য একটা কারনে ওরা বাড়ি থেকে এই রাতের বেলা মেয়েটাকে বাড়ি থেকে বের করে দিয়েছে, তাও কিনা আমরা যেনো মেয়েটিকে দেখে মত না বদলে ফেলি এই সামান্য কারনে!

“রাহুল এর কথায় ওদের বাড়ির সবার মাথায় আকাশ ভেংগে পরে, এর মধ্যেই দাদি বিলাপ করে বলতে শুরু করলো,

“এসব মিথ্যা কথা,হ্যা আছে কিন্তু সে বাড়িতে নাই এহন , বাহিরে গেছে, আমরা বের করে দেই নাই,

“থামুন আপনারা ছি, আপনারা এখনো সেই আগের মতো চিন্তাধারা নিয়ে বসে আছেন ( রাহুল এর আব্বু)
এই বিয়ে হবে না,আমি বলছি বিয়ে হবে না৷ যেখানে একটা মেয়েকে বাড়ি থেকে বের করে দিতে দ্বিধাবোধ করে না, তাদের বাড়ির সাথে আমরা সমন্ধ্য করবো না,

“এবার আম্মু বলতে শুরু করলো,

“দেখুন একটা সামান্য বিষয় নিয়ে আমরা কথা না বলে বলে বিয়ের ব্যপারে বলি,আর মেয়েটাই বারন করেছিলো এসব বলতে তাই,

“এর মধ্যে রাইসা চেচিয়ে বলে উঠলো

“ছাড়বো না আমি ঈশা কে আম্মু, ও আমার স্বপ্ন, বিয়ে সব ভেংগে দিয়েছে সব, সব কিছু। ( চিল্লিয়ে)

“এই মেয়ে তুমি এত বেয়াদব কেন হ্যা, মেয়েটাকে টানছো কেন এর মধ্যে, তুমি নিজে কি তাও আমরা জানি, তুমি রুপে সুন্দর হলেও মনের দিক দিয়ে একটা অহংকারি, আর এমন মেয়েকে আমি কিছুতেই আমার ছেলের বউ করবো না।

“ভাগ্যিস আমার বন্ধু আমাকে ফোন করে সবটা জানিয়েছে, নইলে আমি কত বড় মিথ্যাবাদি একটা ফ্যামিলির সাথে জরিয়ে যেতাম, আর আমার বউ হতো কিনা এমন!
মা চলো আর এক মুহুর্ত নয় এখানে,

“বলেই এক মুহুর্ত না দাঁড়িয়ে
সবাই চলে গেলো,
আমি সব শুনে অবাক হয়ে গেলাম, আপু বলতে শুরু করলো,

“ঈশা তুই রাইসা বা দাদির কাছে যাবি না, রাইসা খেপেছে, তোকে নাকি ছাড়বে না, প্লিজ বোন আমার সাবধানে থাকিস।

“আমি শুধু মাথা নাড়ালাম শুধু, ক্লানতিতে ঘুম আসছে তাই আপু পেইন কিলার খাওয়িয়ে দিয়ে গেল, বালিশে মাথা দেয়ার সাথে সাথে ঘুমিয়ে গেলাম,,
ভোর বেলা কিছু ভাঙার আওয়াজ পেয়ে উঠে পরলাম,, বসার ঘরে গিয়ে দেখি রাইসা একে একে সব ভেংগে ফেলছে, আমি সামনে যেতেই তেড়ে আসলো আমার দিকে, আপু এসে আমাকে বাচিয়েছে, রাইসা চোখ মুখ লাল করে বলে ওঠলো

” তোর জন্য আমার সব শেষ হয়েছে ছাড়বো না তোকে আমি খুন করে ফেলবো, তুই একটা আশ্রী!

” কিছু বলার পূর্বেই চাচ্চু এসে রাইসা কে গালে থাপ্পর বসিয়ে দিয়ে বলতে শুরু করলেন

“তুমি আমাকে মারলে চাচ্চু, এই মেয়েটার জন্য মারলে?

” হ্যা মেরেছি কারন তুমি তোমার সিমা লংঘন করছো, তুমি খুব ভালো করেই যানো বিয়েটা তোমাদের মিথ্যার জন্য ভেংগেছে তাও এই মেয়েটাকে দোষ দিচ্ছো? নাবিলা তুমি মেয়েকে বোঝাও,!

“বলেই চাচ্চু চলে গেলো,দাদি আমার দিকে এগিয়ে এসে বললো,আমার দিদিভাই এর বিয়ে ভাংলি তো দেখিস তুই জিবনে সুখি হবি না, আল্লাহ তোরে সুখ দিবো না,

“বলেই রাগি চোখে তাকিয়ে রাইসা কে নিয়ে চলে গেলো,মা নিজেও চলে গেলো,সামিয়া আপু এসে বললো।

“ঈশা রেডি হয়ে আয় ভার্সিটি যাবি! কি হলো যা,

“যাচ্ছি, বলেই চলে গেলাম আজ কেন জানি না গোলাপি ড্রেস পরতে ইচ্ছা হচ্ছে তাই গোলাপি কালার এর একটা থ্রি – পিস পড়ে নিলাম হালকা কাজল, বেবি লিপস্টিক দিয়ে ঘন চুল গুলো একটা ক্লিপ দিয়েই সেট করে নিলাম, আপু পিছন থেকে দাঁড়িয়ে বলে উঠলো,।

” মাসাল্লাহ, কি সুন্দর লাগছে রে,

” হ্যা তুমি কোন দিন এই কথাটা বলো না,
বলো তো?

” কারন সবসময় তোকে রানী লাগে,,

“হ্যা কোন মহারাজের বউ আমি, হ্যা,,

” গাল ফুলিয়ে কথাটা বলার সাথে সাথে হেসে দিয়ে বললো,

” আমার এই বোনটার জন্য রাজা আসবে রানি করে রাখবে তোকে, এত ভালোবাসবে যে তুই ভেসে যাবি রে, শোন সুন্দরি তেমন ছেলের সাথেই তোমার বিয়ে দিবো ( হেসে দিয়ে)

” আমিও হালকা হেসে নাস্তা সেড়ে ভার্সিটি চলে আসলাম , এসেই দেখি তুবা নখ কামরাচ্ছে আর মায়া ভাবুক হয়ে তাকিয়ে আছে,

“কি রে আজকে দুইটা এমন চুপচাপ কেন?

“হটাৎ করেই দু-জন আমাকে জড়িয়ে ধরে বলে উঠলো

” আম সরি ঈশা, আমাদের দু-জনের অনেক বড় ভুল করে ফেলেছি প্লিজ ক্ষমা করে দে!

” আমি অবাক হয়ে বললাম,

” এই তোরা কি বলছিস হ্যা? ক্ষমা কেন চাচ্ছিস তোরা দেখি তাকা দু-জন।

“আমরা কালকে চলে না গেলে তুই বিপদে পরতে না, ঈশা, কাল তুহিন ভাইয়া আমাকে ব্যপারটা বলেছে,

“আর আমিও শুনেছি, কারন ভাইয়ার বেস্ট ফ্রেন্ড হলো তুহিন ভাইয়া, কাল রাতে ভাইয়া খুব রেগে ছিলো,আমাকে খুব বকেছিলো কেন তোমাকে বাড়িতে দিয়ে আসি নি সরি ঈশা, ( মন খারাপ করে)

” তোরা না পাগল, এটা কোন সমস্যা না, আর আমরা কি জানতাম , বাদ দে।

” কিন্তু তুই একটা কথা বল তো, এত রাতে বাহিরে কি করছিলি? আমরা তো সাতটার মধ্যেই চলে গিয়েছিলাম, কি হয়েছে ঈশা?

” আমি বুঝতে পেরেছি ওরা না শুনে ছাড়বে না তাই বড় করে নিঃশ্বাস নিয়ে একে একে সব কিছু বলতে শুরু করলাম, আজকের কথাও শুনে দু-জনের মুখ লাল হয়ে গিয়েছে, আমি শান্ত করার জন্য বললাম

” আহা শোন বাদ দে প্লিজ আমার কিন্তু এবার কান্না পাচ্ছে, আমার কথা শুনে দ-জনেই হেসে দিয়েছে এর মধ্যেই মায়ার ফোনে কল এলো,

” হ্যলো মাম্মাম বলো?

” ওয়াটট ছোট ভাইয়া এসেছে, আমি এক্ষুনি আসছি,

” জিজ্ঞেস করার আগেই বলে উঠলো

” জানো আমার ছোট ভাইয়া আসছে, বাট আমাকে সারপ্রাইজ দিবে তাই বলে নি, মাম্মাম বলেছে তোমাদের কেও নিয়ে যেতে, এই চলো না প্লিজ প্লিয না করবে না, একদিন ক্লাস না করলে কিছুই হবে না,

“আমি আর তুবা কিছু বলার আগেই টেনে গাড়িতে নিয়ে গেলো, গাড়িতে অনেক বার বলেছি তাও জোর করে নিয়ে গিয়েছে,, বাড়ির সামনে গাড়ি থামাতে আমাদের চোক্ষু চড়ুকগাছ, এতো রাজপ্রাসাদ পুরো বাহিরে এত সুন্দর না জানি ভিতরে কতটা সুন্দর ভাবতে ভাবতেই বাড়িতে প্রবেস করলাম,আমরা আর তুবারাও উচু টাইপের হলেও এতটা বিত্তশালি না , বাড়ি কি সুন্দর সাজানো গোছানো সারা বাড়িতে বডি গার্ড আর মেইড এ ভর্তি, কি সুন্দর চোখ ধাধানো প্রতিটা ঘর আমি দেখতে ব্যস্ত তখন একজন মহিলা এসে আমাদের সামনে দাঁড়ায়, আমি মুচকি হেসে বলি

” আসসালামু ওয়ালাইকুম আনটি,

“ওয়ালাইকুম সালাম মা, কেমন আছো, যানো মেয়েটা সেই কবে থেকে তোমাদের কথা বলছে আর আজ আমার ছোট ছেলে এসেছে তাই ভাবলাম এক পলক তোমাদের কে দেখি, ( হেসে দিয়ে)

” আমিও মুচকি হাসলাম , এদিকে এক জোরা চোখ যে গভির ভাবে আমাকে দেখছে তা আমি বুঝতে পারছি না, এমন সময় একটা ছেলে আর একটা লোক এলো, আমারা সালাম দিয়ে দাঁড়িয়ে দেখছি, মায়া ভাইদের আদরের বোন যে তা বুঝতে বাকি নেই, কি সুন্দর জড়িয়ে ধরে বোনের রাগ ভাংগাচ্ছে, আংকেল বলে উঠলো

” তো মামনিরা এখন তো অনেক কথা হলো এবার খেতে চলো আম্মুরা কিছু খেয়ে নিবে আর আজ দুপুরেও আমরা একসাথে খাবো, না আম্মুরা কোন কথা না,

“এত আন্তরিকতা দেখে আমি আর তুবা মুগ্ধ, কারন এত কম সময়ের মধ্যে আমদের এত আপন করে নিবে ভাবতেই পারি নি, এর মাঝেই খেয়াল করলাম আনটি আর চোখে অনেক বার আমার দিকে তাকিয়ে আছে, আমিও তাই হালকা হাসি দিলাম,
হাল্কা নাস্তা করার পর আমরা সবাই ছাদে বসে আড্ডা দিতে এলাম, এর মধ্যে আবার মায়ার ছোট ভাইয়া সবার জন্য বিভিন্ন গিফট নিয়ে এসেছে তা দিয়ে আমার আর তুবার সামনে এসে আমাদের হাতে বড় বড় দুইটা গিফট বক্স ধরিয়ে দিলেন আমাদের দিকে তাকিয়ে বললেন

“আমাদের দিকে তাকিয়ে বলে উঠলো,

“আমার বোনটা পাগল, যেদিন থেকে তোমাদের সাথে মিশেছে সেদিন থেকেই সারাদিন তোমাদের কথা বলে, আর এমনিতেও আমাদের সোসাইটির কথা চিন্তা করে আমার বোন কারো সাথে মিশে না, কারন আমাদের সম্পত্তি আর আমাদের স্টেটাস দেখে সবাই আসে এটাই ওর ধারনা, কিন্তু তোমাদের সাথে মিশে ও সারাদিন যা বলে এতেই বোঝা যায় তুমি আর তুমি তোমরা দু-জনেই ওর জন্য কতটা স্পেশাল, তাই আমার ছোট দুইটা বোনের জন্য আমার তরফ থেকে সামান্য
উপহার,!

“আমরাও মুচকি হেসে গ্রহন করলাম,
তারপর দু-জনেই বলে উঠলাম

“ধন্যবাদ ভাইয়া( একসাথে)

“তিনটা বোন আমার আজ থেকে,

“কথাটা শুনেই চোখ ছলছল করে উঠলো, তখন শুনতে পেলাম,

“আপাদত কান্না করে বন্যা বানিও না মেয়ে, কারন তোমার কান্না বাড়িতে বন্যা বয়ে আনতে পারে,

” বলে এক মুহুর্তে না দাঁড়িয়ে চলে গেলো, আমি বোকার মতো দাঁড়িয়ে আছি, এর মাঝেই শুনলাম

” আম্মু তোমার বড় ছেলে কবে থেকে এত কথা বলে, না মানে আমার জানা মতো ভাইয়া তো কাজের কথা ছাড়া কিছুই বলে না,

” আমিও তো সেটাই ভাবছি

” আংকেল বলে উঠলো,

“মনে হয় প্রেম এ পরেছে

” তাহলে তো আমাদের জন্যই ভালো, কারন একটা বউ এবার বাড়িতে আনতেই হবে,

“হ্যা আপাদত আমাদের খেতে হবে প্লিজ বেগম চলুন?

” আংকেল এর কথায় আমরা সবাই হেসে দিলাম , একে একে সবাই নিচে নেমে গেলে আমি পা বাড়াতেই দেখলাম কাঠগোলাপ, আমি হেসে দিয়ে সেখানে হাত বুলিয়ে একটা ফুল ছিড়ে নিয়ে কানের পিছে গুজে নিলাম আর, গুন গুন করতে লাগলাম ,
এর মধ্যেই আমার মনে হলো কেউ ছবি ক্যপচার করলে যেমন সাউন্ড হয় ঠিক তেমন সাউন্ড হলো, আমি চমকে আশে পাশে তাকিয়ে দেখি কেউই নেই আর চার পাশে যে গার্ড তাই বেশি মাথা না ঘামিয়ে নিচে চলে গেলাম,
এদিকে আমি নিচে যাওয়ার পর কেউ ছাদের দড়জা থেকে সরে গিয়ে হাতের মোবাইলে চোখ বুলিয়ে নিলো যেখানে আমি ওর্ধ খোলা চুল, এলোমেলো ওরনায়, কানে কাঠগোলাপ গালে টোল পড়া হাসি নিয়ে দাঁড়িয়ে আছি,,
সেই মানুষটা আর কেউ না মিঃ চৌধুরী যে মোবাইল স্ক্রিন এ তাকিয়ে বিরবির করে বলছে

“আমার প্রেয়সি এত সুন্দর কেন,? সে কি আমাকে পাগল না করে ছাড়বে না, তোমায় ছুতে আমার আত্মা যে ব্যকুল মায়াবতি, আমার মায়াবতি, বি রেডি মাই লাভ, আমার লাভ টর্চার গুলো সহ্য তো করতেই হবে, কারন আমাকে এলোমেলো করেছো, আর গুছিয়ে দিতে তোমাকেই হবে ( বাকা হেসে)

( “”।)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here