সে এক মনগড়া প্রেমকাব্য পর্ব -১০

#সে_এক_মনগড়া_প্রেমকাব্য
১০ম_পর্ব
~মিহি

– “অভি, আমার আপনাকে কিছু বলার আছে।”

– “বলবা, অবশ্যই বলবা কিন্তু এখন না। আগে বলো এই রাত দুটোর আয়োজন কেমন লাগলো?”

– “সুন্দর। এত সুন্দর করে কেউ আমার জন্য কিছু করেনি কখনো।”

– “ধন্যবাদ দাও তাহলে।”

– “ধন্যবাদ।”

– “এখন আমি কিছু চাইলে দিবে?”

– “কী চান সেটার উপর নির্ভর করছে।”

– “তোমাকে চাই।”

– “বুঝলাম না।”

– “আমার কথা না বোঝার মতো বোকা তুমি নও আমি জানি। কিন্তু কেন যেন কেউ প্রপোজ করলে তোমরা মেয়েরা প্রথমেই বলো বুঝলাম না আর যারা এই কথা বলে, সত্তর শতাংশ তারাই পরবর্তীতে প্রেমের জন্য সম্মতি দেয়।”

– “কতবার প্রেমে পড়েছেন জীবনে?”

– “এইসব থিসিস করতে এত প্রেম করতে হয় না। এমনিই বোঝা যায়।”

– “কিছু কথা বলি শুরুতেই। আমি আপনার সাথে কোনরকম তথাকথিত সম্পর্কে জড়াবো না। সরাসরি পারিবারিকভাবেই হবে, যা হওয়ার।”

– “তোমার পরিবারের সাথে আমার কথা হয়েছে। তোমার বাবা তো দীর্ঘদিন বিদেশে, তার সাথে যোগাযোগের সুযোগ হয়নি। তোমার দাদামশাই আর কাকার সাথে কথা বলবো ভাবছিলাম কিন্তু আন্টি বললেন তিনি নিজেই তাদের সাথে কথা বলবেন।”

– “এতকিছু হয়েছে, কেউ আমাকে জানালোই না।”

– “তোমাকে তো এক্কেবারে বিয়ের রাতেই জানাতে চেয়েছিলাম পরে ভাবলাম তুমি যদি আমার বিরহে বিষ-টিষ খেয়ে ফেলো।”

– “আহা! শখের তো কমতি নাই!”

– “এই মেয়ে! শোনো না, তোমায় বড্ড বেশি ভালোবেসে ফেলেছি। এখন আমায় অনুমতি দাও তোমায় আরো বেশি করে ভালোবাসার, একান্তই নিজের করে পাওয়ার, তুমি-আমি মিলে আমরা হওয়ার। দিবে না সুযোগটা?”

– “আমি এখনো শ্রাবণকে ভুলতে পারিনি অভি।”

– “খারাপ অভ্যেসকে সহজে ভোলা যায় না। তবে আমি প্রমিজ করছি তুমি আমায় বিয়ে না করলেও আমি আজীবন তোমার পাশে থাকবো, একজন বন্ধু হিসেবে। তোমার যখনই দরকার পড়বে, আমায় তুমি পাশে পাবেই।”

– “প্রতিশ্রুতিগুলো যেন সত্যি হয়, নতুবা আমার আরো একবার ভেঙে পড়তে হবে। আর দ্বিতীয়বার ভেঙে পড়লে আমি বোধহয় আর কখনো উঠে দাঁড়াতে পারবো না।”

– “মীরা, তোমায় এখানে এনেছি যেন তোমার মন ভালো থাকে কিন্তু তুমি বড়দের মতো সিরিয়াস কথাবার্তা নিয়ে বসলে। তুমি বাচ্চা মানুষ, আহ্লাদি করবে। যে মীরা আমায় আঙ্কেল ডেকে ভেংচাতো, সেই মীরাটাকেই আমি চাই। তার মুখের হাসিটা দেখতে চাই আমৃত্যু।”

– “আমার শরীরটা ঠিক লাগছে না। আমায় বাসায় রেখে আসবেন প্লিজ?”

– “আরেকটু থাকা যেত। আচ্ছা চলো।”

মাথা ঘুরছে আমার। সারাদিন কিছু খাওয়া হয়নি, দুর্বলতায় যেকোন সময় পড়েও যেতে পারি। চেয়ার থেকে উঠতে নিতেই পড়ে যেতে ধরলাম। অভি ধরলো আমায়। হাত ধরে বাইকের কাছে নিয়ে এলো।

___________________________

রূপম অনবরত কল করছে ধ্রুবকে। ছেলেটা কিছুতেই ফোন ধরছে না। রূপমের কিছুটা ভয় লাগছে। নিজের কাছের মানুষদের প্রতি মাত্রাতিরিক্ত দুর্বল রূপম। এই যেমন ধ্রুবর সামান্য কল না ধরাতেই রূপমের ধরাশায়ী অবস্থা। চিন্তায় তার শরীরের তাপমাত্রা চক্রবৃদ্ধি মুনাফার হারে বাড়ছে।

সমানে কল করায় ধ্রুব বেশ ভয়ে ভয়ে রূপমের কল রিসিভ করলো। কল রিসিভ করতেই শুনতে পেল রূপমের উৎকণ্ঠা গলা,

– “কী রে! ঠিক আছিস তো তুই? এতক্ষণ ধরে কল করছি, কোন সমস্যা হয়েছে নাকি তোর?”

– “না…না বস!”

– “মীরার খোঁজ পেলি?”

– “জ..জ্বী বস।”

– “কেমন আছে আমার মীরা? ও ঠিক আছে তো?”

ধ্রুবর এই মুহূর্তে চিৎকার করে বলতে ইচ্ছে হচ্ছে, “বস, আপনার মীরা অন্য কারো বাহুতে ভালোই আছে, আপনিই শুধু তার অপেক্ষা করতে করতে নিজেকে তিলে তিলে শেষ করে দিচ্ছেন।” কিন্তু এই কথাটা বলার ক্ষমতা ধ্রুবর নেই আবার রূপমকে মিথ্যা বলার সামর্থ্যও নেই। ধ্রুবর মিথ্যা ধরে ফেলা রূপমের কাছে কয়েক সেকেন্ডের কাজ। কল ধরেই দু’বার তুতলিয়েছে ধ্রুব। রূপম স্পষ্ট বুঝেছে কোন একটা সমস্যা আছেই!

– “কথা বলছিস না কেন? আমি কিছু জিজ্ঞাসা করেছি ধ্রুব।”

– “ব..বস, আর কত আপনি মীরা ভাবীর জন্য অপেক্ষা করবেন? ভুলে যান তাকে।”

– “তোর সাহস কি খুব বাড়ছে, ধ্রুব? যেটা জিজ্ঞাসা করছি ঐটা বলবি। এত বাড়তি কথা কিন্তু আমার ভালো লাগে না।”

– “মীরা ভাবীকে আমি মাত্রই একটা ছেলের সাথে বাইকে দেখছি। দেখে মনে হলো ভাবী ছেলেটারে…”

– “মীরা ছেলেটাকে কী?”

– “ভা…”

– “সরাসরি বল, ভণিতা ভালো লাগে না আমার।”

– “দেখে মনে হলো ভাবী ছেলেটারে ভালোবাসে।”

রূপমের মনে হলো সে আর কিছুই শুনতে পেল না কানে। শোঁ শোঁ শব্দ কানে এসে বাজতে লাগলো, বাকি সবকিছুই নিস্তব্ধ। সময় কি থেমে গেছে নাকি রূপমের পৃথিবী থমকে দাঁড়ালো?

ভালোবাসা হারানোর যন্ত্রণার চেয়েও মারাত্মক যন্ত্রণা বুঝি চোখের সামনে ভালোবাসার মানুষকে অন্য কারো হতে দেখা। রূপমের এ জীবন থেকে মায়া উঠে গেছে। সবকিছু দূষিত লাগছে তার। কোনোভাবে যদি মীরার থেকে দূরে চলে যাওয়া যেত, অনেক বেশি দূরে! যেখানে গেলে আর মীরার কাছে ফিরতে পারবে না। একটু পর পর দীর্ঘশ্বাস ফেলছে রূপম।

____________________________________

বিয়েতে রাজি হয়েছে শ্রাবণ। সবাই তাকে কয়েক মুহূর্তের জন্য একা ছেড়েছে। সুযোগটা লুফে নিল শ্রাবণ। কোনরকমে হাতে পাওয়া ব্লেডটা দিয়ে কয়েক টান দিল হাতের উপর। ঝরঝর করে রক্ত ঝরছে। সেদিকে তৃপ্তির দৃষ্টিতে তাকিয়ে আওরাতে লাগল শ্রাবণ, “মীরা, একটু যদি বুঝতে আমায়। গত চারটা মাস তোমার থেকে দূরে দূরে থাকতাম। কেন জানো? আমার খালাতো বোন আমার উপর মিথ্যে অভিযোগ করেছিল আমি নাকি তার সন্তানের বাবা। বাড়ি থেকে কিছু না শুনেই বিয়ে দিয়ে দেয়। তোমায় সবটা বলতে চেয়েছিলাম কিন্তু তোমার মায়াবী মুখের কাছে বারবার হেরে গিয়ে সত্যটা লুকিয়েই তোমায় পেতে চেয়েছিলাম। মস্ত বড় ভুলটা করে ফেলি সেখানেই যে ভুলের মাশুল এ..এখ..এখন দি…দি..দিতে..এ যা…যা…” আর কিছু বলতে পারেনা শ্রাবণ। চোখদুটো বন্ধ হয়ে আসে।

গ্রামের লোকজন অনেকক্ষণ যাবত শ্রাবণের সাড়াশব্দ না পেয়ে সেদিকে ছুটে আসে। এসেই দেখে শ্রাবণ মাটিতে লুটিয়ে পড়েছে, হাত থেকে অবিরত রক্ত ঝরছে। লোকজন একে অপরের মুখের দিকে চেয়ে আছে।

কোনো কিছু না জেনে শুধুমাত্র চোখের দেখাকে বিশ্বাস করে একটা মানুষের জীবন শেষ করে দিল লোকগুলো। একটাবার বোঝানোর সুযোগটা অন্তত দেওয়া যেত! তাহলেই হয়তো আজ শ্রাবণকে মরতে হত না।

_________________________________

তিথির প্রচণ্ড খারাপ লাগছে। মীরাকে মিথ্যে বলে অভির সাথে পাঠানোটা ভুল হয়ে গেল না তো? তিথিরই বা কী দোষ! সে তো শুধু এটাই চায় মীরা নিজের লাইফে ভালো থাকুক আর অভির চেয়ে ভালো মীরাকে কেউ রাখতে পারবে না কিন্তু মীরার মা যে মীরার উপর নজর রাখছে এবং তিনিই অভিকে মীরার জন্য ঠিক করেছেন- এই মিথ্যেটা তিথিকে প্রতিমুহূর্তে পীড়িত করছে। অবশ্য বুদ্ধিটা অভির। তিথি প্রথমে রাজি হয়নি কিন্তু মীরার জন্য অভি কল করে যে পাগলামি করল, তাতে স্পষ্ট বোঝা যায় ছেলেটা মীরাকে অনেক বেশি ভালোবেসে ফেলেছে। তিথির শুধু একটাই ইচ্ছে মীরা ভালো থাকুক। অভির প্রতি নিজের অনুভূতিগুলো ব্যক্ত করুক সে, তবেই দুই পরিবারের মতে নিজে দাঁড়িয়ে থেকে অভি আর মীরার বিয়ে দিবে তিথি। আনমনে হাসে সে। একজোড়া মানুষের ভালোবাসাকে পূর্ণতা দিতে পারার মতো আনন্দ বুঝি কোনকিছুতেই নেই। মীরার জন্য এতদিন তিথির যত চিন্তা ছিল, তা মুহূর্তেই অভির ঘাড়ে ফেলে আপাতত রাফসানের সাথে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলতে ফেলতে সাজেকে সূর্যোদয় দেখতে যাবে সে। রাফসানের কথা ভাবতে ভাবতেই রাফসানের কল এলো। এত রাতে জেগে আছে ছেলেটা? কল রিসিভ করে মুচকি হেসে ফোনটা কানে ধরলো তিথি। ঠোঁটের কোণে সামান্য প্রসারিত হাসিটা তখনো বিরাজমান।

চলবে…

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here