#সে_জানে
#Part_5
#Writer_Tahsina_Islam_Orsha
দিবসের সব বন্ধুও তাকে আটকানোর চেষ্টা করছে কিন্তু আটকিয়ে রাখতে পারছে না। করুণ আর ভয়ার্ত চেহারা নিয়ে এক পাশে দাঁড়িয়ে কান্না করছে নুপুর। ভয় লাগছে তার।
দিবসকে সাথে পরিস্থিতিকেও৷ নুপুর জানে সব দোষ আবার তার উপরেই আসবে। একজন ছেলে দ্বিতীয় বিয়ে করলে তা লোক মুখে বেশি চর্চা না হলেও একজন মেয়ে দ্বিতীয় বিয়ে করলে তার বদনাম আকাশ ছুঁয়ে যায়। প্রতিটি অলিতে-গলিতে তার গুঞ্জন শুনা যায়। এই সমাজের মানুষ গুলো চায় তালাকপ্রাপ্ত মেয়েরা যেন আজীবন দুঃখী থাকে। মেয়েগুলো যেন সব সময় তালাকপ্রাপ্ত তকমা নিয়ে করুণা নিয়ে বাঁচে। সমাজের নোংরা দৃষ্টির কবল থেকে বাঁচার জন্য অগণিত মেয়েরা আত্নহত্যাও করতে বাধ্য হয়।
দিবস চিৎকার করে
‘ তোর সাহস কি করে হলো বাস্টার্ড।
দিবসের রাগান্বিত চিৎকার শুনে বাড়িতে আসা মেহমান সবাই ওদের কাছে যায়। দিবস তার বন্ধুকে ফ্লোরে ফেলে মারছে কেন কেউই বুঝতে পারছে না৷ দিবসের আরো চার পাঁচজন বন্ধু কাজিন তাকে আটকাচ্ছে৷ নুপুর আতংকে মাথা নুইয়ে কান্না করছে এখনো।
জীবন চৌধুরী দিবসের দিকে রাগী চোখে তাকিয়ে
‘ এই কি অসভ্যতা দিবস! বাড়িতে আসা মেহমানকে তুমি মারছো কেন? এই শিক্ষা দিয়েছি আমি তোমায়? নিজের বন্ধু কে…
দিবস চেচিয়ে উঠে
‘ আব্বু তুমি জানো না এই কুকুরের বাচ্চা আমার স্ত্রীকে বাজে কথা বলছে। নুপুরকে খারাপ চোখে দেখেছে। ও আমার বন্ধু যতই হোক আমার স্ত্রীকে খারাপ কথা বলতে পারেনা। আমি আজকে ওকে শেষ করে ফেলবো।
জীবন চৌধুরী চোয়াল শক্ত করে
‘ তোমার স্ত্রীকে বাজে কথা বলেছে আর তুমি এখনো ওকে বাড়িতে রেখেছো? বাড়ির বাহিরে নিয়ে পিটিয়ে ছেড়ে দাও। একবারে মেরে ঝামেলায় যেতে হবে না। শুধু এমন ভাবে মেরে ছাড়বে যাতে অন্য কোন মেয়েকে বাজে কথা বলার আগে তোমার কথা মনে পড়ে।
তারপর জীবন চৌধুরী সবার উদ্দেশ্য
‘ প্লিজ আপনারা কেউ বিচলিত হবে না। দয়া করে কেউ কিছু মনে করবেন না। ঘরে পোকা মাকড় ঢুকলে তাদের এই ভাবে সাফাই করে বের করতে হয়। চলুন আমরা এনজয় করি।
থমথমে পরিবেশটা যেন একটু শান্ত হলো। দিবস ফুলের টব হাত থেকে ফেলে ওই ছেলেকে কলার ধরে টেনে বাড়ি থেকে বের করে নিয়ে যায়। সবার মুখের ভাজ কেটে গেলেও নুপুরের ভয় এখনো যায়নি। বাহিরে ওই ছেলেকে দিবস নিশ্চয়ই আরো পেটাবে। নুপুরের হাত পা কাঁপছে। স্বাভাবিক হবার চেষ্টা করেও পারছে না। দিশা এগিয়ে এসে নুপুরকে নিয়ে যায় রুমে।
নুপুরকে এক গ্লাস পানি এগিয়ে দিতেই নুপুর ভরা পেটেও সবটুকু পানি এক ঢোকে খেয়ে ফেলে। দিশা বুঝতে পারছে নুপুর এখনো ভয় পাচ্ছে। নুপুরকে দু-হাতে কাপড় দলা পাকাচ্ছে দেখে
‘ ভাইয়া কিন্তু অনেক ভালো মানুষ। কিন্তু তার রাগ উঠলে কাউকেই পরোয়া করে না একমাত্র আব্বু ছাড়া। আর ফ্যামিলির কাউকে কেউ কিছু বললে ভাইয়ার মাথায় আগুন জ্বলে যায় মনে হয়। কি করে নিজেই জানে না। তাই এতো মেহমানের পরোয়া না করেই এমন মেরেছে রবিন ভাইয়াকে।
নুপুর কিছু না বলে শুধু একটু মুচকি হাসলো। অনেকটা আতংক কেটেছে এখন। তবুও খারাপ লাগছে তার জন্য আবার একটা ঝামেলা পোহাতে হলো দুই পরিবারকে। এতো মেহমানের মাঝে এমন ঝামেলা সত্যিই লজ্জাজনক। আর কারণটা যদি বাড়ির বউয়ের জন্য হয় তাহলে তো কথা-ই নেই।
বিকেলে নুপুরের বাড়ির সবাই বিদায় নেবে। নুপুরকে আর দিবসকে সাথে নিয়ে যেতে চেয়েছিলো ওরা কিন্তু জীবন চৌধুরী শাহীন সাহেবকে উদ্দেশ্য করে বললো
‘ বেয়াই সাহেব ছেলে আর নুপুর মা না হয় কালকে যাবে। আজকে ওরা এখানেই থাকুক। তাছাড়া দিবসের মায়ের রাগ এখনো কমেনি। একবার শুধু সকালে ঘর থেকে বের হয়েছিলো আর বের হয়নি। সব কাজ শেষ হলে দিবসকে পাঠাতে হবে আবার ওর মায়ের রাগ ভাঙাতে।
আমি কাল সকালে দিবস আর নুপুরকে পাঠিয়ে দেবো।
শাহীন সাহেব বিনয়ী স্বরে
‘ কোন সমস্যা নেই বেয়াই সাহেব। কালকে সময় করে ওদের পাঠিয়ে দেবেন। আমরা তাহলে আজ বের হই। অনেকটা দেরি হয়ে গিয়েছে। আমার এখান থেকে আবার দোকানে যেতে হবে।
সবার থেকে বিদায় নিয়ে নুপুরের ফ্যামিলি রওনা দেয়। এই দিকে নুপুর কান্না করছে। কেন যেন অসহায় লাগছে নিজেকে। মাকে বিদায় দেওয়ার ইচ্ছে হচ্ছিলো না একদমই তবু বিদায় দিতে হয়েছে।
দিবস হেলেদুলে তার মায়ের রুমে যায়। খালেদা আক্তার বিছানাতেই বসে আছে হেলান দিয়ে। যেন পণ করেছে নুপুরকে বাড়ি থেকে বিদায় না করলে মাটিতে পা দেবে না। দিবস মায়ের কাছে গিয়েই তার কোলে মাথা রেখে শুয়ে পড়ে৷ খালেদা আক্তার অভিমানী সুরে
‘ মায়ের কথা এতক্ষণে মনে পড়েছে তাহলে তোর?
দিবস মুচকি হেসে
‘ তোমার কথা তো আমার সব সময়ই মনে থাকে মা ওটা আবার পড়তে হবে কেন?
খালেদা আক্তার রাগান্বিত হয়ে
‘ শিখেছিস তো শুধু বাপের মতো যুক্তি দেওয়া। ভালো মন্দ তো কিছুই বুঝিস না দুইটা।
দিবস এবার শুয়ে থেকেই হো হো করে হেসে উঠে বসে মায়ের দিকে তাকায়। খালেদা আক্তার মুখ ফিরিয়ে আবার বললেন
‘ ছোট বেলায় মারের থেকে বাঁচার জন্য এমন হাসতি যেন মারতে না পারি। এখন কোন মতলবে এসেছিস বল। তোর এই হাসির কারণ আর রহস্য দুটোই আমি বুঝতে পারি।
দিবস এবার সিরিয়াস হয়ে
‘ মা তুমি সারাদিনও রুম থেকে বের হওনি গতকাল নিজের ছেলের বউকেও বরণ করনি। তুমি তোমার দায়িত্ব ভুলে গিয়েছো। আমি যতটুকু আমার মাকে চিনি তিনি আর যাইহোক তার দায়িত্ব ভুলেন না। যত যাইহোক নুপুর এখন তোমার ছেলের বউ। তাকে সম্মান দেওয়া আমাদের দায়িত্ব। আমরা যদি তাকে অবহেলা আর অপমান করি তাহলে সে কোথায় যাবে? কার ভরসায় সে সব ছেড়ে এসেছে বলো মা ?
খালেদা আক্তার উঠে দাঁড়িয়ে
‘ সব কিছু হয়েছে তোর বাপের জন্য। নয়তো ওই মেয়েকে আমি জিন্দেগীতে এই ঘরে ছেলের বউ করে নিয়ে আসতাম না।
দিবস মলিন চেহারা নিয়ে মায়ের দু-বাহু ধরে
‘ ছেলের জন্য হলেও ছেলের বউকে মেনে নিতে হবে মা। আমি আশা করি তুমি তোমার ছেলের কথা ফেলবে না। আর রাতে সবার সাথে ডাইনিংয়ে খেতে আসবে
দিবস কথা গুলো বলে হনহনিয়ে চলে যায় রুম থেকে।
রাতে নুপুর রুমে এসে দেখে জগে পানি নেই। ক্লান্ত লাগছে সারাদিনের সব মিলিয়ে। দিবসের সাথেও আর একবারের জন্য দেখা হয়নি। দেখা হলে দিবস কি নুপুরকে বকবে? এখানেও কি নুপুরের দোষ? বুঝতে পারছে না নুপুর। ভিতরে অনেক সংশয় কাজ করছে।
রান্না ঘর থেকে পানি নিয়ে আসার সময় নুপুর দিশার রুমের ভিতর থেকে জোরে জোরে কথার শব্দ শুনে ওর রুমের দিকে অগ্রসর হয়৷ দিশা ফোনে কথা বলছে সম্ভবত। নুপুর একটু আগাতেই শুনে
‘ হিমাদ্র তুমি বুঝতে পারছো না কেন? আমি বলেছিলাম তো ভাইয়ার বিয়েটা আগে হয়ে যাক তারপর ফ্যামিলিকে বলবো। আমি….
দিশা আরো কিছু বলার আগেই দেখে নুপুর দরজায় দাঁড়িয়ে আছে। নুপুরকে দেখে ফোন কেটে দিয়ে
‘ আরে ভাবি!!
নুপুর অস্বস্তি নিয়ে
‘ আমি আসলে আওয়াজ শুনে এসেছি তোমার কোন সমস্যা হলো কিনা!
দিশা সামনে এগিয়ে নুপুরের দু’হাতে ধরে
‘ আরেহ ভাবি এতো সংকোচ করার কি আছে। ভিতরে আসেন। আপনাকে একটা জিনিস দেখাবো।
দিশা ফোন থেকে একটা ছবি বের করে নুপুর সামনে ধরে
‘ এটা হিমাদ্র। আমরা একে অপরকে ভালোবাসি। ভাইয়ার বিয়ের জন্য হিমাদ্রর কথা বলতে পারিনি বাড়িতে, ভাইয়া তো একবারে বিয়ে করবে না মানে করবে না। কেউ ভাবিনি ভাইয়াকে বিয়ে করাতে পারবো। এখন তো বিয়ে হয়ে গিয়েছে। এখন আপনি ভাইয়ার কাছে হিমাদ্রর কথা বলবেন। প্লিজ ভাবি প্লিজ।
নুপুর দিশাকে এক হাতে জড়িয়ে ধরে
‘ আচ্ছা বলবো।
আমিই তো এই বাড়ির একজন হয়ে উঠতে পারিনি। ( মনে মনে দীর্ঘশ্বাস ফেলে )
নুপুর দিশাকে আশ্বাস দিয়ে বেরিয়ে পরে রুম থেকে। আজকে দিবসকে অনেক কিছু বলার আছে নুপুরের। অনেক কিছুই দিবসকে জানানো হয়নি। এমন একজন ভালো মানুষকে অন্তত ঠকানো যায় না। মিথ্যা বলা যায়না। নুপুরের জানা নেই দিবস সব কিছু শুনে কেমন রিয়েক্ট করবে…….
চলবে…….
ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন। এবং ভুল ত্রুটি ধরিয়ে দিয়ে উপকৃত করবেন।