সে জানে পর্ব -১০+১১ ও শেষ পর্ব

#সে_জানে
#Part_10+11 (Last part)
#Writer_Tahsina_Islam_Orsha

বাড়ির ভিতরে পা দিয়েই নুপুর চমকে উঠে। চোখদুটো ক্রুদ্ধ আর বিরক্ত। না চাওয়া সত্ত্বেও ভিতরে প্রবেশ করে নুপুর। দিবস আগেই ভিতরে গিয়ে সবাইকে সালাম জানিয়ে দাঁড়ায়৷ এই সেই ছেলে যাকে দেখে নুপুর গাড়ি থামিয়ে গাড়ি থেকে নেমে গিয়েছিলো। আজকে সে এই বাড়িতেও উপস্থিত। দিশাকে দেখতে এসেছে হিমাদ্র আর তার পরিবার। আর হিমাদ্রকে দেখেই নুপুর গাড়ি থেকে নেমে গিয়েছিলো সেদিন। দিশা ওইদিন রাতে হিমাদ্রর ছবি দেখিয়েছিলো বিধায় হিমাদ্র কে চিনতে পেরেছিল নুপুর। কিন্তু বিশেষ বিষয় হচ্ছে ওইদিন হিমাদ্রকে নুপুর একটা মেয়ের সাথে দেখেছিল তাও খুব ঘনিষ্ঠ সম্পর্কযুক্ত বুঝা যাচ্ছিলো। মেয়েটার কাধে কোমড়ে হাত দিচ্ছিলো বার বার, এমনকি ঠোঁট ছুঁয়ে দিচ্ছিলো বার বার মেয়েটার হাতে। নুপুর মেয়েটা দিশা কিনা অন্য কেউ সিউর হওয়ার জন্যই ওই ভাবে বের হয়ে গেয়েছিল গাড়ি থেকে দিবসকে কিছু না বলে।

আর নুপুরের ডাউটই ঠিক হয়েছিলো মেয়েটা দিশা ছিলো না। তারপর থেকেই নুপুরের মনে এই বিষয় নিয়ে কেমন গজগজ করছিলো। আর আজকেই হিমাদ্র বাড়ি চলে এসেছে। নিশ্চয়ই বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে এসেছে। এমনটাই তো চাচ্ছিলো দিশাও৷ তাহলে হিমাদ্র চাইছেটা কি? দিশাকে ভালোবাসলে ওই মেয়ের সাথে এরকম আপত্তিকর আচরণ করতো না। আর ওই মেয়েকে ভালোবাসলে দিশার সাথে এমন করতো না। হয় এই ছেলে এই বাড়ির অর্থ সম্পদের জন্য এমন করছে, নয়তো এই ছেলে নারী লোভী পুরুষ।

নুপুর কথা না বাড়িয়ে ভিতরে গিয়ে সেও সবাইকে সালাম জানায়। এই বিয়ে কোন মতেই হতে দিবে না মনে মনে প্রতিজ্ঞা করছে সে। ভিতরে অস্থিরতা নিয়েই সবাইকে আপ্যায়ন করছে নুপুর।

সবাই চলে যাওয়ার পর নুপুর দিবস আর তার বাবা মায়ের সামনেই দিশাকে ডেকে
‘ দিশা এই বিয়ে হতে পারেনা।

দিশা ভীষণভাবে অবাক হয়ে
‘ মানে? কি বলছেন এসব ভাবি?

নুপুর দিশার কাধে হাত দিয়ে
‘ এই ছেলেটা ভালো না বোন। আমি চাইনা তোমার জীবনটা নষ্ট হোক।

দিশা মলিন মুখে
‘ আপনি ওকে চেনেন না ভাবি। ও অনেক ভালো ছেলে। একটা মানুষকে প্রথম দেখায় বিচার করা উচিত নয়। আর আমি চাইনা আপনি এটা নিয়ে আর নাক গলান। আমি হিমাদ্রকে ভালোবাসি আর ও আমাকে।

দিশা কথা গুলো বলে দ্রুত পায়ে তার রুমে চলে যায়। খালেদা আক্তার নুপুরের দিকে রাগান্বিত হয়ে

‘ তুমি এই বিষয়ে নাক গলানোর কেউ না। আমাদের মেয়ে আমরা বুঝবো কি করবো না করবো। তোমার জন্য আমার মেয়ে ছেলে কষ্ট পেলে খুব খারাপ হয়ে যাবে বলে দিলাম।

খালেদা আক্তার হনহন করে চলে গিয়েছে পিছনে পিছনে জীবন চৌধুরীও। নুপুরের চোখে পানি টলমল করছে।
দিবসের দিকে একবার তাকিয়ে নুপুর রুমে চলে যায়। বেল্কুনিতে দাঁড়িয়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে চোখের জল ফেলছে সে। দিবস হঠাৎ করে পিছন থেকে নুপুরকে জড়িয়ে ধরতেই তাড়াহুড়ো করে চোখের পানি মুছে ফেলার চেষ্টা করে।

দিবস দীর্ঘশ্বাস ফেলে
‘ মন খারাপ করো না। তুমি কিছু জানো ওই ছেলের ব্যপারে?

নুপুর ঘুরে তাকায় দিবসের দিকে। দিবসের বুকে মাথা রেখে
‘ ওই দিন গাড়ি থেকে চানাচুর মাখানো খেতে নেমে যায়নি। হিমাদ্রকে একটা মেয়ের সাথে দেখে নেমেছিলাম, ওই মেয়ে দিশা কিনা দেখার জন্য। কিন্তু ওটা দিশা ছিলো না। ওরা খুব কাছাকাছি ছিলো। দিশা ওইদিন রাতে আমায় হিমাদ্রর কথা জানায় আর ছবিও দেখিয়ে বলে যেন আপনার সাথে ওর ব্যপারে কথা বলি। ছবি দেখার ফলে চিন্তে অসুবিধে হয়নি আমার। ওই মেয়েটার সাথে ওর সম্পর্ক আছে কোন ওটা স্পষ্ট। সব কিছু এতো তাড়াতাড়ি হয়ে যাবে ভাবিনি।

দিবস নুপুরের মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে
‘ হয়তো তোমার কোথাও ভুল হচ্ছে। আমি দেখছি তুমি এটা নিয়ে দিশাকে কিছু বলো না।

নুপুর মাথা তুলে
‘ আমার ভুল হচ্ছে না দিবস আমি দেখেছি।

দিবস আর কথা বাড়ায়নি নুপুরের সাথে, সে নিশ্চুপ থেকে নুপুরকে জড়িয়ে রেখেছে।

দু’দিন পর দিবসদের বাড়ি থেকে কিছু লোক হিমাদ্রদের বাড়ি যায়। সব কিছু দেখে ঠিকঠাকই মনে হচ্ছিলো সবার। হিমাদ্রর বাবাকে দিশার বাবা আগে থেকেই চেনে তাই দ্বিমত পোষণ করেনি আর। তাই বিয়ের সব কিছু ঠিকঠাক করে ফেলে ওইদিনই। বিয়ের ডেট পনেরো দিন পর ফিক্সট করে।

এইদিকে বিয়ের দিন যত এগিয়ে আসছে নুপুরের মনের শান্তি তত ক্ষুন্ন হচ্ছে। সে জেনে শুনে কিভাবে দিশাকে এমন একটা ছেলের হতে দেখবে। নুপুর চায়না তার জীবনের মতোও দিশার জীবনও এমন এলোমেলো হয়ে যাক। কিন্তু দিশা বুঝতে চাইছে না। অন্ধ হয়ে আছে সে হিমাদ্রর দেখানো মিথ্যা ভালোবাসায়।

বাড়িতে আজ প্রচন্ড হৈচৈ। হবারই কথা বাড়ির একমাত্র মেয়ের গায়েহলুদ বলে কথা আবার কালকে বিয়ে। দিবসের যত আত্নীয়স্বজন আছে সবাই এসেছে। নুপুর সকাল থেকে প্রচন্ডরকম ব্যস্ত থাকায় দিবসকে সময় দিতে পারেনি। তাই সে গাল ফুলিয়ে বসে আছে। নুপুর বুঝতে পারা সত্ত্বেও কাজের জন্য কিছু করতে পারছে না।

নুপুরের চিৎকারের শব্দে হঠাৎ সব থেমে যায়। দিবস দৌড়ে যায় নুপুরের কাছে। রাদিল এসেছে। যাকে দেখে নুপুরের ভিতরে ভয়াবহ ভয় কাজ করে। রাদিল নুপুরকে এসে অনেক ধরনের বাজে কথা বলছে। আজকে অনেক মানুষের আনাগোনা আছে বলেই সে বাড়িতে ঢুকতে পেরেছে। নুপুর কখনো মা হতে পারবে না। কখনো তাকে ভালো থাকতে দেবে না এসব বলছে রাদিল পাগলের মতো। খালেদা আক্তার নুপুর মা হতে পারবে না শুনে চমকে উঠে তাকায় নুপুরের দিকে। সবার সামনেই উনি

‘ নুপুর এটা সত্যি তুমি মা হতে পারবে না কখনো?

দিবসের আজ রাগে রক্ত টগবগ করছে। দিবস রাদিলকে মারতে তার কাছে যাবে তখনি নুপুর তার জ্ঞান হারিয়ে ফেলে।

নুপুরকে ডাক্তার দেখে মিটমিট করে হাসছে। দিবসের মা বাবা, দিবস দিশা আরো কিছু রিলেটিভ চিন্তিত হয়ে তাকিয়ে আছে ডাক্তারের দিকে।

ডাক্তার দিবসের দিকে তাকিয়ে
‘ এই সময় উনাকে একদমি স্ট্রেস দেওয়া যাবে না। হাসিখুশি রাখার চেষ্টা করবেন।

দিবস উদ্বিগ্ন হয়ে
‘ মানে? ওর কিছু হয়নি তো?

ডাক্তার হেসে দিয়ে
‘ আরে আপনি বাবা হতে চলেছে মিঃ দিবস। মিষ্টি নিয়ে আসুন জলদি। আর আমি কিছু ঔষধ লিখে দিচ্ছি এই গুলো নিয়মিত খাওয়াবেন উনাকে। আর সম্পুর্ণ রেস্ট নিতে বলবেন।

দিবসের বাবা মা অবাক হলেও খুশি সব চেয়ে বেশি হয়েছে। দিবস মনে হচ্ছে খুশিতে পাগল হয়ে যাবে। দিবস তার বাবাকে ধরে ঘুরছে আর খুশিতে চিল্লাচ্ছে
‘ বাবা আমি বাবা হবো। ইয়ায়ায়া হুউ।

দিবসের বাবা- মায়ের চোখে পানি নিজের ছেলেকে এতো খুশি দেখে। দিবস এতো খুশি অনেক দিন পর হয়েছে।

ডাক্তার প্রেসক্রিপশন দিবসের হাতে দিয়ে
‘ উনার জ্ঞান কিছুক্ষণের মাঝে চলে আসবে ডোন্ট ওয়ারি। আমি আসি তাহলে।

দিবস ডাক্তারকে এগিয়ে দিয়ে মিষ্টি আনতে যায়। নুপুর রেস্টে থাকার জন্য সবাই চলে যায় রুম থেকে , ওই দিকে দিশারও গায়েহলুদ তাই।

কিছুক্ষণ পর নুপুর চোখ খুলে দেখে সে বিছানায় শুয়ে আছে। কি হয়েছিলো ওই সময়! নুপুরের মাথা ব্যথা করছে। রাদিলই বা কোথায়? কি হয়েছিলো তখন? বুঝতে পারছে না, কিছু বুঝতে পারছে না সে।

নুপুর উঠে বসে। সবাই হয়তো টেনশন করছে তার জন্য। নুপুর উঠে বিছানায় বসে ফ্লোরে পা রাখতেই বমি করে দেয়। নিজের কাপড় আর বিছানায় লেগে যায় বমি। কিছুক্ষণ বসে থেকে আস্তে আস্তে উঠে কাপড় বদলিয়ে বিছানার চাদর বদলাতে চাদর নিতে যাবে তখনি কাবার্ডে দেখে কিছু নীল চিরকুট। খুব পরিচিত মনে হচ্ছে সেই চিরকুট গুলোকে।

নুপুর একটা একটা করে চিরকুট গুলো খুলছে আর অবাক হচ্ছে। চোখ বেয়ে অবাধে জল গড়িয়ে পড়ছে তার। সব গুলো চিরকুট নুপুরের লেখা। সব গুলো সে লিখেছিলো কোন এক আগন্তুকের জন্য। যে আগন্তুকও তার জন্য চিরকুট রেখে যেতো। কিন্তু একদিন নুপুর জানতে পারে সে সব চিরকুট রাদিল রাখতো তাকে এমনটাই বলা হয়েছিলো। রাদিল কত সুন্দর করে বলেছিলো সব চিরকুট সে দিতো। কিন্তু পরিচিত হবার পর নুপুর চাইলেও তাকে আর চিরকুট দেয়নি সে। বিয়ে হবার পর রাদিলের বাড়িতে গিয়েও নুপুরের দেওয়া চিরকুট গুলো পায়নি নুপুর। রাদিল বলেছিলো তার মা রাগ করে পুড়ে ফেলেছিলো। তার মানে সবই ছিলো অভিনয়! আর সব চিরকুট রাখতো দিবস!

আর দিবস ! দিবস কি জানে নুপুরই তার নুর!

নুপুর সব চিরকুটের নিচে লিখে দিতো নুর। নুপুর বানানের মধ্যের প বাদ দিয়ে লিখতো যাতে কখনো তাকে চিনতে না পারে কেউ। কিন্তু হঠাৎ একদিন নুপুর চিরকুট রাখতে যাবে তখনি রাদিল এসে বলে সব চিরকুট ও লিখে আর ও-ই নেয়। আর চিরকুট না লিখে সে বলতে চায় সে নুপুরকে ভালোবাসে। ধোকা চরম ভাবে ধোকা খেয়েছে সে।

নুপুর চিরকুট হাতে নিয়ে কাঁদছে। আজকে তার জীবনটা অন্য রকমও হতে পারতো। যদি সে জানতো দিবসই সেই আগন্তুক। কিন্তু দিবস? #সে_জানে! সে জানে কি নুপুরই তার নুর। কথাটা বলতেই দিবস পিছন থেকে
‘ আমি জানি নুপুর। তুমিই আমার নুর আমি জানি।

নুপুর অবাক হয়ে পিছনে তাকায়।
দিবস বলতে থাকে
‘ সেদিন তোমাদের বাড়িতে গিয়েই জানতে পারি তুমিই আমার নুর। যখন আমার দেওয়া চিরকুট গুলো পাই তোমার ড্রয়ারে। তখনি আমি বুঝতে পারি তুমিই সেই। যে জানে আমার ভিতরের খবর। যে আমার প্রতিটা অনুভূতি ছু্য়ে দিতে পারতো। আমার নুর।

জানো যখন থেকে আর চিরকুট রাখতো না ওই খানে কেউ। আমার ভীষণ খারাপ লাগতো। দম বন্ধ হয়ে যেতো আমার। অনেক খুঁজেছি তোমায় কিন্তু পায়নি। কত যে বসে থেকেছি ওখানে জানো! তোমার মতো কেউ ছিলো না
কেউ বুঝতো না এই ভাবে নুপুর। কিন্তু কথায় আছে না কেউ কারো জন্য মরে না। আবার ভালোবেসেছিলাম। কিন্তু ধোকাই পেয়েছিলাম।
ভেবেছিলাম আর কাউকে কখনোই ভালোবাসবো না।

আর ওই দিন যখন জানতে পারি তুমিই আমার নুর। আমি আর একটুও দেরি করিনি তোমায় আপন করতে। অনেক তো হলো দেরি।

নুপুর একটা কথাও বাড়ায়নি। ঝাপ্টে ধরে দিবসকে। তার বিশ্বাস হচ্ছে না, সব কিছু কাল্পনিক মনে হচ্ছে যার অস্তিত্ব হয়তো বাস্তবে খুঁজে পাবে না সে। চোখ খুললেই হয়তো হাওয়ায় মিলিয়ে যাবে সব। সে পেয়েছে কিন্তু দেরিতে তবুও তো পেয়েছে। আল্লাহ কাউকেই নিরাশ করেনা।

দিবস ভেজা চোখে
‘ আস্তে কি করছো। এইভাবে কেউ লাফায় নাকি! আমাদের বাচ্চা তো পরে হয়েই লাফাবে।

দিবসের কথা শুনে নুপুর অবাক হয়ে যায়। বাচ্চা! আমাদের বাচ্চা! দিবসের দিকে ভয়ার্ত চোখে তাকিয়ে কাঁপা কাঁপা কন্ঠে
‘ আ আমাদের বাচ্চা!

দিবস মুচকি হেসে
‘ হুম আমাদের বাচ্চা। তোমার গর্ভে এখন আমাদের বাচ্চা নুপুর। তুমি মা হতে চলেছো আর আমি বাবা। রাদিল আমাদের সবার সামনে স্বীকার করে রাদিল ওর চাচাতো বোনের সাথে মিলে জাল রিপোর্ট বের করেছিলো যে তুমি মা হতে পারবে না। তোমায় ডিভোর্স দেওয়ার বাহানা খুঁজেছিলো আর এটাই সেই বাহানা যে তুমি কখনো মা হতে পারবে না। যাইহোক ওর জন্যই কিন্তু আমি তোমাকে আবার পেয়েছি। আর ও এখন পুলিশের হেফাজতে আছে। ওর মেন্টাল সমস্যা হয়েছে। চাচাতো বোন মানে ওর বউ নাকি সত্যি সত্যিই মা হতে পারবে না। আর তাই তোমায়ও ভালো থাকতে দেবে না। ও তোমায় চায় এখন। দেখো কত সুন্দর বিচার হয়ে গিয়েছে তার।

নুপুর এতো সব ভাবছে না এখন সে দিবসকে গভীর অনুভুতি নিয়ে জড়িয়ে ধরেছে। মা হতে পারবে সে এটাই অনেক। ওসব ভাবার সময় নেই এখন। এখন ভালো থাকার সময় শুধু।

হিমাদ্র বরাত নিয়ে চলে এসেছে। চারদিকেই হৈ-হুল্লোড়। বরপক্ষের সবাইকে ভালো ভাবেই সমাদর করলো দিবসরা। কিন্তু হঠাৎ কোথায় থেকে একটা মেয়ে এসে হিমাদ্রর গালে চড় বসিয়ে দেয়। তারপর গরম মেজাজে

‘ বউ বাচ্চা রেখে আবার বিয়ে করতে এসেছিস? তুই না তোর মা বাবাকে আমার আর আমার বাচ্চার কথা বলবি তাহলে আরেকটা বিয়ে করতে আসলি কোন মুখে?

সবাই থ হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। দিবস মুচকি মুচকি হাসছে। নুপুরের ওইদিনের কথা দিবস হাল্কা ভাবে নেয়নি। যেখানে নুপুর হিমাদ্রকে দেখেছিলো সেই জায়গার সিসিটিভি ফুটেজ বের করে ওর পুলিশ বন্ধুর সাহায্য নিয়ে। তারপর মেয়েকে খোঁজে বের করে। তখনি জানতে পারে এই বদমাশ বিবাহিত। নারী লোভী একটা ছেলে। তাই দিবস এতো নাটক সাজিয়েছে সবার সামনে হিমাদ্রকে ধরার জন্য। আর ওই মেয়েকেও বিয়ের দিনই আসতে বলে।

দিশা দিশেহারা হয়ে কাঁদছে নুপুরের কাধে মাথা ফেলে। নুপুর শান্তনা দিচ্ছে তাকে। বরপক্ষ বেইজ্জতি হয়ে কোন মতে বের হয়ে গিয়েছে। কাজী বসে আছে এখনো। খালেদা আক্তার নুপুরের কাছে এসে

‘ মা আমাকে মাফ করে তুই কতবার বলেছিলি আমি শুনিনি। আজকে আমার মেয়ের কত বড় সর্বনাশ হতো। তোর জন্য শুধু বেঁচে গিয়েছে।

নুপুর শান্ত গলায়
‘ এমন বলবেন না মা। সব আল্লাহর ইচ্ছেতে হয়। তাই হয়েছে উনি যেটা চেয়েছেন।

দিবশ মুচকি হেসে সামনে এগিয়ে এসে তার বন্ধু ফারহানের দিকে তাকিয়ে
‘ কিরে কি ভেবেছিস আমি জানি না তুই যে দিশাকে ভালোবাসিস? দাঁড়িয়ে আছিস কেন এখনো? তাড়াতাড়ি পাঞ্জাবি আর পাগড়ী পড়। আমি তোকে চিনি আমি জানি তুই আমার বোনকে ভালো রাখবি।

দিবসের কথায় সবার চিন্তার রেশ কেটে যায়। হেসে উঠে একত্রে।

দিশার সম্মতিতে বিয়ে হয়ে যায় ওদের। দিশাকে বিদায় দিয়ে রুমে এসে বেল্কুনিতে দাঁড়ায় নুপুর। পাশে এসে দাঁড়ায় দিবস।

নুপুর দীর্ঘশ্বাস ফেলে
‘সৃষ্টি কর্তা কাউকে ঠকায় না। #সে_জানে কার জন্য কোনটা উত্তম। সে জানে কাকে কিভাবে কি দিতে হবে। সে জানে কখন শুকনো মাটি বৃষ্টির অপেক্ষায় থাকে। সে জানে আপনাকে আর আমাকেও। সব কিছু #সে_জানে।

দিবস দুষ্টুমি হাসি দিয়ে
‘ আমাদের জোড়া বাচ্চা হবে তাও কিন্তু সে জানে। হো হো হো।

নুপুরও মুচকি হেসে
‘ এই যে ভেজাল মিশ্রিত হাসি। আর হুম একটা বাচ্চা হবে। ছোট দিবস।

( জোড়া হবে নাকি একলা তা আপনারাই ভাবুন প্রিয় পাঠকগণ সবাই ওদের জন্য দোয়া করবেন।)

সমাপ্ত।

ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন। দু’দিন গল্প দিতে পারিনি তাই দুই পার্ট এক সাথে দিয়ে শেষ করলাম। কেমন হয়েছে গল্পটা অবশ্যই সবাই জানাবেন। আর নতুন গল্প খুব তাড়াতাড়ি আসবে। সবাই ভালো থাকবেন। ধন্যবাদ।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here