সে_আমারঃ (আপডেট) পর্বঃ-৬

0
1896

সে_আমারঃ (আপডেট)
পর্বঃ-৬
মোর্শেদা হাবিব।
****************
রাজের মুখ গম্ভীর হয়ে উঠলো!
ও স্থির হয়ে কিছুক্ষণ বসে থেকে ডান হাত সোফার হাতলে চাপড়ে হঠাৎ উঠে দাঁড়ালো!
-“ফিন,আমি গেলাম রে….!”
সিঁথি হৈ হৈ করে উঠলো-“অই অই….কই যাস হে দেবদাস!”বলে রাজের টি শার্টের কোনা টেনে ধরলো।
-“ফাজলামি করিসনা সিঁথি,শার্ট ছাড়্….!”
প্রচন্ড বিরক্ত হয়ে বলল রাজ!
সিঁথি শার্ট ছেড়ে দু হাত স্যারেন্ডারের ভঙ্গিতে বললো-“ধরুম না তরে, যাহ্।তরে খালি পৌষী ধরবো।আমরা না!এহন বয়!যাস কই!”
-“না,বসবো না।বাসায় যাবো।ভাল্লাগছেন
া!”
ফিন সিঁথির দিকে তাকিয়ে বললো-“কেন ওকে শুধু শুধু কষ্ট দিচ্ছিস।সত্য কথা বলে দে।”
রাজ বোকার মতো ওদের দুজনের দিকে তাকালো!সিঁথি রহস্যময়ীর মতো হেসে বললো-“তোর এতোবড় একটা কাজ করে দিলাম,আর তুই গাল ফুলিয়ে রওনা দিচ্ছিস!”
-“মানে?”রাজ বসে পড়লো।
সিঁথি আর ফিন দুজনেই হেসে ফেললো! সিঁথি কপালের ঘাম মোছার মতো করে বললো–
-“উফ্…বেশ চিপকু আশিক তোর ঐ ইসতিয়াক ব্যাটা! পিছু ছাড়াতে বহু ঘাম ঝরাতে হলো!নে এবার তোর রাস্তার কাঁটা সরিয়ে দিলাম।রাত্রে ডিনার পার্টি থ্রো কর্!”
-“তাহলে তুই যে বললি..?”রাজের বিস্ময় তখনো কাটছেনা।
-“কি বললাম?ওহ্….রাজ!মানুষ প্রেমে পড়লে বোকা হয় শুধু শুনেছি দেখিনি।তরে দেখতাছি।তুই বোকা না পুরাই আউলায়া গেছোস!এখনো বুঝতে পারস নাই, ইসতিয়াক রে খসাইসি? আরে তোর সাথে ফান করসি!”
রাজ লম্বা নিঃশ্বাস ফেলে সোজা হয়ে বসলো-“তাই বল্…!”
-“আশ্চর্য্য আমি বললাম আর তুই মেনে গেলি?মানে সামনের সপ্তাহে আকদের জন্য যেন পৌষী একপায়ে খাড়া!ঐ ব্যাটা চাইলেই কি তোর পৌষী রাজী হবে?আজিব তুই!”
রাজ হেসে ফেললো!স্বস্তির হাসি।
-“আমারও সন্দেহ হচ্ছিলো অবশ্য!”
-“হুঁ…সন্দেহ না কচু!উঠে তো দৌড় দিচ্ছিলি!এখন ট্রিট দে!”
-“ট্রিট নাহয় দিলাম।তাতে তো সমস্যা নেই কিন্তু কাঁটা সরলে কি হবে!আসল মানুষকেই তো মনের কথা বলতে পারছিনা!সেটার কি করি?”রাজ দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললো!

“এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি সাপ্তাহে জিতে নিন বই সামগ্রী উপহার।
আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে জয়েন করার জন্য এখানে ক্লিক করুন



সিঁথি অবাক হলো-
-“বলছিস..এক বাড়ীতে থাকিস তাহলে আবার বলতে এতো সমস্যা কি? একদিন সুযোগ মতো জাপটে ধরে বলে দে “আই লাভ ইউ জান্…লাভ ইউ মোর দ্যান আই ক্যান সে” ব্যস্ কেল্লা ফতে!”
রাজ তেতে উঠলো-
-“হমম…আমি বলি আর ও সোজা ফুপিকে নিয়ে বাড়ী থেকে বেরিয়ে যাক্…..তাই না?কি বুদ্ধি! তোর বুদ্ধির জন্য ধন্যবাদ!তোরটা তোর কাছেই রাখ!
ফিন বলে উঠল-“এক কাজ কর্…একটা লাভ লেটার লিখে কারো মাধ্যমে ওকে পাঠিয়ে দে….তাহলেই তো হলো!”
-“না রে দোস্ত…বলতে ভয় লাগছে!ও যেমন মেয়ে…আমাকে মন থেকে মেনে নেবে কিনা বুঝতে পারছিনা!আবার ওকে ছাড়া কিছু ভাবতেও পারছিনা!কি যে করি…!”রাজ দু হাতে মুখ ঢেকে হাতদুটো দিয়ে চুলগুলো মুঠো করে ধরল!
-“আন্টিকে দিয়ে বিয়ের প্রস্তাব পাঠা!”সিথি বলল!
রাজ মলিন হাসল-“হুঁহ্….যা বলেছিস।আমার মা এমনিই একদম রাজী না।সে ধনী ঘরের রুপসী মেয়েকে আমার বউ বানাবার স্বপ্ন দেখছে!তাকে বলে তো লাভ হবেইনা উল্টো বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি হবে!”
-“তাইলে ভাইয়া শোন আমার কথা!এই মেয়েকে তুই ভুলে যা!তোর জন্য মেয়ের অভাব হবেনা!এতো ঝামেলা করে আজকাল কেউ বিয়ে করে নাকি?তু নাহি তো অর সাহি…!” হা হা হা করে হেসে উঠল সিঁথি।
রাজ দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল-“তোরা কি ভেবেছিস, আমি এসব ভাবিনি?ওকে বাদ দিয়ে ভাবার চেষ্টা করতে গেলেই নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে আসতে চায়! আমি কোনোভাবেই ওর আকর্ষণ এড়াতে পারছিনা!”
রাজের চেহারায় স্পষ্ট উদ্বেগ!
ফিন সিরিয়াস কন্ঠে বলল-“খুব বুঝি সুন্দরী?”
রাজ মুচকি হাসল-“জানি এটাই ভাববি..!ও সুন্দর এটা ঠিকআছে বাট আমি ওর চেহারা দেখে পাগল হইনি!”
-“তাহলে?”সিঁথি অবাক হলো!
ওর প্রশ্নে রাজ শান্ত স্বরে বলল!
-“ওর মতো মেয়ে আমি আমার লাইফে দেখিনি।একটা মেয়ের মধ্যে লাজনম্রতা, ভদ্রতা,কোমলতা,কর্মদক্ষতা….মানে বলতে পারিস মেয়েলীপনা বলতে যা বোঝায়….তার সবগুলো গুণ আমি ওর মধ্যে দেখেছি! বললাম না…পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়ে,পর্দা মেনে চলতে চেষ্টা করে…শান্ত ভদ্র একটা মেয়ে!কাজকর্ম তো খুব গোছানো আছেই কিন্তু ওর সততা আমাকে মুগ্ধ করেছে!একদিন দেখলাম কাজের মেয়েটার চুল আঁচড়ে দিচ্ছে। বাড়ীর ড্রাইভার কাজের লোকেরা পর্যন্ত পৌষীর ভক্ত হয়ে গেছে!আসলে ওর সম্পর্কে বলে ঠিক তোদের বোঝাতে পারবোনা!আজকালকার মেয়েদের সম্পূর্ণ বিপরীত ও!অস্পৃশ্য একটা ফুল যার দেহমনে কোন মলিনতার ছোঁয়া লাগেনি!”
সিঁথি ধীরে ধীরে বলল-“যা বললি তা শুনে তো একটা আশঙ্কা বেড়ে গেলো!”
রাজ ওর দিকে তাকালে সিঁথি আবার বলল-“তোর ফার্ষ্ট লাইফ লিডিংয়ের খবর শুনলে তো এই মেয়ে তো জীবনে তোকে ধরা দেবেনা, বন্ধু!তোর তো গার্লফ্রেন্ডের অভাব নেই..!তুই উত্তর মেরু আর সে দক্ষিণ মেরু।তুই দুনিয়ায় আর মানুষ পেলিনা! নিজের বিপরীত একটাকে ভালোবেসেছিস!কষ্ট হলেও ভুলে যা দোস্ত নইলে তোর অবস্থা মজনু কিংবা দেবদাসের চেয়েও খারাপ হবে বলে দিলাম! ”
রাজ চিন্তিত দৃষ্টিতে মাটির দিকে চেয়ে বললো-
–“আমার সর্বশ্রেষ্ঠ চেষ্টা আমি করে যাবো!এ জীবনে যদি ওকে না’ই পাই,আল্লাহ যদি আমার ভাগ্যে ওকে না রাখেন তাহলে বিয়ে-শাদী আর আমার দ্বারা হবেনা ! এন্ড দ্যাট ইজ ফাইনাল!”
রাজের দৃঢ় প্রতিজ্ঞা শুনে সিথি আর ফিন দুজনেই চুপ হয়ে গেলো!
কিছুক্ষণ পর সিঁথি বলল-“একদিন মেয়েটাকে দেখতে চাই!দেখাবি?”
-“দেখতে পারিস তবে নিজেকে ইরা বা মীরার বান্ধবী পরিচয় দিস।আমার বান্ধবী বলিস না তাইলে আমার খবর হয়ে যাবে!”
-“এখন তাহলে তুই কি করবি।তোর তো সব পথ বন্ধ!”
-“দেখি….!ওকে হারাতে চাইনা বলেই ওকে কিছু বলতে ভয় পাই!ও আমার আশেপাশে আছে এটাই আমার জন্য আনন্দের !দুজনে একই বাড়ীতে আছি।ওর পায়ের শব্দ পাই এটাই বা কম কিসে!”
ফিন শুনে চিন্তায় পড়ে গেলো-“তোর অবস্থাতো তাহলে খুবই খারাপ রে….!” হঠাৎ ফিন বলল-“তোকে একটা পরামর্শ দিতে পারি!আমার দাদু প্রায়ই একটা কথা বলতেন!বান্দার সব পথ যখন বন্ধ হয়ে যায় তখনো একটা পথ তার জন্য সবসময় খোলা থাকে কিন্তু সবাই ঐ পথটা চেনেনা!সে পথটা হলো তার স্রষ্টার দিকে ফিরে যাবার পথ।আমি যদিও এসব এতো বুঝিনা কিন্তু এতটুকু জানি যে ,মন থেকে কোনো কিছু চাইলে আল্লাহর কাছেই চাইতে হয় আর নিজেকে তার উপযুক্ত করে নিজেকে গড়ে তুলতে হয়!ধর্…একজন চোর চায় সে চুরি ছেড়ে দেবে তখন সে কি করবে? গোটা সমাজ জানে সে চোর।কেউ তাকে ভালোমানুষের স্বীকৃতি দেবেনা!কিন্তু আমাদের আল্লাহতা’লা কিন্তু তার তওবা ঠিকই কবুল করবেন এবং তাকে সমাজে ভালো মানুষ হিসেবে সম্মান ফিরিয়ে দেবেন!একবার দাদুর কাছে এক লোকের তওবা গল্প শুনেছি যে ছিলো একশত লোকের হত্যাকারী! আবার এক বেশ্যা মহিলার জান্নাতে যাবার গল্পও শুনেছি…আল্লাহর ঘরের দরজা বান্দার জন্য সবসময় খোলা থাকে।সেই বান্দা হোক ননেককার ককি গুনাহগার।তুই আল্লাহকে বল্,হয় তারে আমার জন্য হালাল করে দাও নয়তো আমাকে ওর কথা ভুলিয়ে দাও!”
রাজ চুপ করে রইলো।সিঁথি হেসে বলরো-
-“তাছাড়া তুই তো মনের দিক থেকে অনেক ভালো একটা ছেলে!তুই আল্লাহর সাহায্য চা আর এদিকে পরিস্থিতি নিজের অনুকূলে আনার চেষ্টাও চালিয়ে যা!”
তারপর দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল-“তোর জন্য শুভকামনা থাকলো!কিন্তু দোস্ত পার্টি দিস্।পৌষী তোর বউ হইলে তোর সঙ্গে এমনিতেও বন্ধুত্ব তো আর থাকবোনা!”
রাজ হেসে বলল-“আমার সাথে না থাকুক।পৌষীর বন্ধু হয়ে যাস।তাহলেই হবে!
আর দোয়া করিস!পার্টি পেন্ডিং থাকলো!আর কথাটা বন্ধুমহলে বেশী স্প্রেড করিসনা! ভালো কথা ইরার বিয়েতে যখন যাবি তখন দেখতে পারবি ওকে! ” সিঁথির দিকে তাকিয়ে বলল রাজ!
সিঁথি হাসল-“ওকে বাই!”
ফিন উঠে দাঁড়িয়ে সিরিয়াসলি বলল-“দোস্ত,মনের মানুষ যেটা পেয়েছিস…সেটা এই সময়ে বড় দুর্লভ!তাই তুই নতুন করে নিজেকে সেটার জন্য তৈরী কর্।বেষ্ট অফ লাক্!”
-“তোকেও থ্যাংক্স কিছু ভালো উপদেশ দেবার জন্য!রাজ ওদের থেকে বিদায় নিয়ে বেরিয়ে এলো!

ইরার বৌভাতের এক সপ্তাহ আগেই ওর আকদ করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে! মামী প্রতিদিনই কেনাকাটার জন্য মিরাকে সাথে নিয়ে গোটা ধানমন্ডি চষে ফেলছেন।মোটামুটি শপিং মলের দোকানীরা জেনে ফেলেছে তার বড় মেয়ের বিয়ে।বাড়ীতে রান্নার তদারকিটা তিনি সাহেদার উপরই ছেড়ে দিয়েছেন!এমনকি সব্জি কাঁচাবাজারটাও সাহেদা রাহেলাকে সাথে নিয়ে আগোরা থেকে সেরে আসেন।
আজও কিছু সব্জি তরকারী আনতে হবে।মাছ মুরগীও শেষের দিকে! রানীকে জানিয়েছিলেন সেকথা।
রানী টাকা আর লিষ্ট হাতে ধরিয়ে দিয়ে বলেছেন-“মাফ চাই রে ভাই…..একটু কষ্ট করে তুমি গাড়ি নিয়ে যাও নতুবা পৌষির সাথে রাহেলাকে দিয়ে পাঠাও!” বলে তিনি আরেক গাড়ী নিয়ে শপিংয়ে বেরিয়ে গেলেন!আজ তার গুলশানের দিকে যাবার কথা!
অগত্যা সাহেদা পৌষিকে অনুরোধ করলো রাহেলাকে সাথে নিয়ে আগোরা যাবার জন্য! পৌষী দ্বিরুক্তি না করে বোরকা পড়ে নিকাব বেঁধে নিলো।রাহেলাকে সাথে নিয়ে রওনা দেবার সময় দেখলো গাড়ী একটা আছে বটে ড্রাইভার নেই!
পৌষী রাহেলাকে খোঁজ নিতে পাঠালো!
রাহেলা কাউকে খুঁজে না পেয়ে অবশেষে ভয়ে ভয়ে রাজের রুমে গিয়ে ড্রাইভারকে ফোন দিয়ে আনিয়ে দেবার অনুরোধ জানালো !
রাজ শুয়ে শুয়ে বই পড়ছিলো! হাই তুলে বলল-“কে যাবে এখন বাজারে? ফুপি না আম্মু ?”
-“না খালাম্মাতো বাসাত নাই,ঐ খালাম্মার শইলডাও ভালো না…এর লাইগ্যা আমি আর পুষি আফায় যাইতাছি!”
রাজের বেশ অলস লাগছিলো!কিন্তু শেষ লাইনটা শুনে একেবারে চাঙ্গা হয়ে তড়াক করে লাফিয়ে উঠল-
-“কি বললি,তোরা যাবি বাজার করতে?চল্…চল…চল্…আমি যাচ্ছি!”
বলে রাজ উঠে কোনমতে শার্টটা গায়ে গলিয়ে গাড়ীর দরোজা খুলে রাহেলাকে বলল-“যা তোর পুষি আপারে ডেকে নিয়ে আয়!আর আমিই যে গাড়ী চালিয়ে নিয়ে যাবো এসব কিছু বলবিনা, বুঝলি?”
রাজ লাল রঙের একটা ক্যাপ পড়ে সেটা সামনের দিকে টেনে নিয়েছে।সে ড্রাইভিং সিটে বসে অপেক্ষা করতে লাগলো!কিছুক্ষণের মধ্যেই পৌষী আর রাহেলাকে পেছনের সিটে উঠে বসতে দেখলো!
রাজ গাড়ী স্টার্ট দিলো!
গাড়ী মন্থর গতিতে চলছে।রাজ বাম হাত দিয়ে রিয়ার ভিউ মিররটা পৌষীর দিকে ফিট করলো! গাড়ী চালানোর ফাঁকে ফাঁকে ওকেই দেখছিল রাজ।নিকাবের জন্য কেবল চোখগুলো দেখা যাচ্ছে! রাজ সেটাই দেখছিলো চেয়ে চেয়ে !
তারপর হঠাৎ পেছন থেকে রাহেলা চেঁচিয়ে উঠল–“ঐত্তো ভাইজান,মার্কেটটা…!পিছনে ফালায়া থুয়া আইছেন!”
রাজ সচকিত হয়ে খেয়াল করলো সে আগোরা পেছনে ফেলে এসেছে! পৌষীও চমকে সামনের দিকে তাকালো! অবাক হয়ে দেখলো রাজ বসে আছে ড্রাইভিং সিটে।পেছনটা দেখেই বোঝা যায় যে ওটা রাজ।পৌষী মনে মনে অবাক হলো,ড্রাইভার নেই বলে নিজেকে আসতে হবে।বললেই হতো,ওরা সিএনজি করে চলে আসতে পারতো!”
রাজ গাড়ী ব্যাক করে রাইফেলস স্কয়ারে ঢুকলো!পৌষীরা নামতেই রাজও নামলো!
পৌষী নেমে কোনোদিকে না তাকিয়ে সোজা ভেতরে ঢুকে গেলো!
লিষ্ট দেখে দেখে জিনিসগুলো কিনে জমা করলো!কেনাকাটা শেষে সবগুলো প্যাকেট একত্রে বেশ বড় একটা বস্তার মতো হয়ে গেলো! পৌষী ভেবে পেলোনা এতোবড় বস্তা সে গাড়ী পর্যন্ত নেমে কিভাবে!ও এর আগে কখনো এতো বাজার করেনি।
বাধ্য হয়ে রাহেলাকে পাঠালো রাজকে ডাকতে।
রাজ এসে সেখানকার সেলসম্যানদের ডেকে বস্তাটা গাড়ীতে পৌঁছে দিতে বললো!
সবকাজ শেষে পৌষী গাড়ীতে উঠতে যাবে তখনি রাজ জিজ্ঞেস করলো-
-“আরো কিছু কেনা বাকী আছে?”
পৌষী বুঝলো ওকেই জিজ্ঞেস করা হয়েছে প্রশ্নটা!
সে মাথা নাড়ল-“না…নেই!”
রাজ গাড়ীতে উঠে গাড়ীটা বাড়ীর দিকে না চালিয়ে সামনের দিকে টান দিলো! পৌষী কিছুক্ষণ ধৈর্য্য ধরে অপেক্ষা করলো! রাজ গাড়ীটাকে “ইয়েলো”র সামনে দাঁড় করিয়ে গেট খুলে বেরোবার আগে বলল-
-“ইয়ে…এদিকটায় যখন এসেছি,তখন আমার জন্য দুটো শার্ট কিনে নিয়ে যাই…কি বলেন?”
পৌষী সামান্য মাথা নাড়লো-“যান্…সমস্যা নেই!”
-“আপনি কি একটু কষ্ট করে আমার একটা উপকার করবেন,প্লিজ?”
পৌষী তাকালো-“জ্বী..বলুন?”
-“আমাকে একটু কালার পছন্দ করতে সাহায্য করবেন?”
-“জ্বী….আ..আমি?”
-“বেশীক্ষণ লাগবেনা,এই ধরুন পাঁচ মিনিট!”
পৌষী উসখুস করছে দেখে রাজ ফের বলল-“একা যেতে না চাইলে রাহেলাকে সাথে নিয়ে নিন্…প্লিজ!”
পৌষী গাড়ীর গেট খুলে নামলো!রাজের নিজের সৌভাগ্যে বিশ্বাস হচ্ছেনা!
আজকের দিনটা ওর জন্য যে এতকিছু নিয়ে অপেক্ষা করছিলো কে জানতো?”
পৌষী আর রাহেলা ইয়েলো’তে ঢুকে চুপচাপ একপাশে দাঁড়িয়ে রইলো।
কালো বোরকা পড়ে ওকে এখানে হয়তো বেমানান লাগছে।তবু রাজের সাথে তর্কে না জড়াতে গিয়ে রাজী হতে হলো!
রাজ একটু দুরে দাঁড়িয়ে একেকটা শার্ট দেখিয়ে পৌষীর দিকে তাকায়,পৌষী মাথা নেড়ে না বললে রাজ সেটা রেখে দেয়!এভাবে তিনটা শার্ট দেখার পরে চতুর্থ শার্টটা দেখার পৌষী মাথা সামাণ্য কাত করলে রাজ সেটা প্যাকেট করে দিতে বললো!পৌষী আপনমনে এবার ডলের গায়ে দেয়া শার্টগুলো দেখতে লাগলো!
আনমনে একটা শার্ট ছুঁতেই পেছন থেকে রাজ বললো-“এটা নেবো?”
পৌষী চমকে গিয়ে দ্রুত হাত সরিয়ে ফেললো!রাজ সেটাও প্যাকেট করে দিতে বলল!
গাড়ীতে ওঠার আগে রাজ নিজেই দরজা খুলে দিয়ে মৃদু স্বরে বলল-“আমার দিনটাকে সুন্দর করে দেবার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ!”
পৌষী না শোনার ভান করে দ্রুত উঠে বসলো!
গাড়ী চলছে!
পৌষী চুপ করে বসে আছে পেছনের সিটে।হঠাৎ রিয়ার ভিউ মিররে পৌষিকে দেখে রাজ বললো-“আচ্ছা..মানুষ কোন বিষয়ে আল্লাহকে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতে চাইলে কিভাবে করবে?”
পৌষী কিছুক্ষণ চুপ থেকে ধীরে ধীরে বলল-“মনে মনে শুকরিয়া জানাতে পারে বা শোকরানা সিজদা দিতে পারে!”
-“শুকরানা সিজদা কিভাবে দেয়?”
-“নামাজের মতই তবে একটা দিতে হয়!”
রাজ আর কোনো প্রশ্ন করলোনা!
বাড়ীতে এসে গাড়ী থামিয়ে রাজ গেট খুলে দিতেই পৌষী দ্রুত নেমে ভেতরে চলে গেলো যেন রাজ ওকে কিছু বলার সুযোগ না পায়!ওর যাবার সময় দ্রুত চলার কারনেই হোক বা বাতাসের কারনেই হোক….পৌষীর হিজাবটা বাতাসে উড়ে তার এক কোণা রাজের গায়ে মৃদু ঝাপটা মারলো।
রাজ আপনমনে হেসে ফেললো!

নীরা শুয়ে শুয়ে গল্পের বই পড়ছিলো! রাজ ওর গেটে টোকা দিয়ে উঁকি দিলো-“এই বুড়ি…আসবো!”
নীরা তাকালো-“কে ভাইয়া? এসো!”
রাজ ঢুকে ওর বিছানায় ধপ করে শুয়ে পড়ে বলল-“কি করছিস…বসে বসে?”
-“দেখতেই তো পাচ্ছো…বই পড়ছি!”
-“হমম….তা বিয়ে উপলক্ষে কি কিনলি?”
-“অনেক কিছুই তো কিনলাম…তা হঠাৎ একথা জানতে চাইছো যে?”
-“আরে এমনি…জেনারেলি..!”
-“উঁউঁ…হুঁ…এমনি এমনি একথা বলতে তুমি আসোনি ভাইয়া!আমি তোমাকে হাড়েমাংসে চিনি!আমাদের চার ভাইবোনের মধ্যে আমি তোমাকে যতটা বুঝি অন্য কেউ ততটা বোঝেনা!এবার ঝেড়ে কাশো! তোমার আসল মতলব বলো! ”
রাজ হেসে নীরার মাথায় হালকা চাঁটি মেরে বলল-“তোর বুদ্ধি তো দিনদিন খুব পেকে যাচ্ছে!হুঁ…সত্যি একটা কথা তোর সাথে শেয়ার করতে চাই! তোকে ছাড়া আর কাউকে পাচ্ছিনা রে!”
-“উফ্…হেয়ালি রেখে বলোনা ভাইয়া!”
রাজ একটু ভেবে নিয়ে বললো-“তুই এর মধ্যে সময় করে আমার সাথে একটু শপিং মলে যাবি!”
-“হমম…গেলাম..তারপর?”
-“আমাকে সুন্দর দেখে একটা থ্রিপীস এবং আবায়া কিনতে সাহায্য করবি!”
নীরা চোখ বড় বড় করে তাকালো!
ফিসফিস করে বললো–“কার জন্য ভাইয়া?”
রাজ শোয়া থেকে উঠে বসে নীরার দিকে তাকিয়ে একচোখ বন্ধ করে হাসলো-
-“বলা যাবেনা! টপ সিক্রেট!”
নীরা বই রেখে ফিসফিসিয়ে জিজ্ঞেস করলো-“কেমন যেন প্রেম প্রেম গন্ধ পাচ্ছি!কার জন্য ভাইয়া বল্ না…নিশ্চয়ই এটা তুই তোর ওনাকে গিফট করবি…তাই না?”
রাজ হাসলো-“সত্যিই তুই বুদ্ধিমতী!”
-“,কিন্তু মানুষটা কে সেটা তো বললিনা!”
-“তোর এতো বুদ্ধি,দেখি তুইই গেস কর্!পারিস কিনা?”
নীরা হাসিমুখে তর্জনী তুলে নাচালো! তারপর প্রশ্ন করার ভঙ্গিতে বললো–“উমমমম…….পৌষী?”
রাজ বেশ অবাক হয়ে গেল-“সর্বনাশ!তুই জানলি কিভাবে?”
নীরা বিজ্ঞের মতো বলল-
–“হুঁ…হুঁ…আমি ঠিক ধরেছি!ইউ আর ইন লাভ!কিন্তু পৌষী কি তোর কাছ থেকে এসব নেবে?একটুও নেবেনা!খামোকা কিনিসনা।টাকাটা আমাকে দিয়ে দে।সওয়াব হবে!”
রাজ বোনের মাথায় চাঁটি মেরে বললো-
-“আবার ফাজলামি?সে নেবেনা মানে?আমি সরাসরি দিলে তো!বোকা কোথাকার! তুই দিবি!তোর নাম করে দিবি!বলবি তুই গিফট করেছিস!”
-“এটা তো মিথ্যে বলা হবে ভাইয়া!পৌষীর কাছে শুনেছি মিথ্যা বলা ক্ববীরা গুনাহ।রাসুল সাঃ কঠোরভাবে মিথ্যা বলতে নিষেধ করেছেন!”
-“আচ্ছা….তাহলে মিথ্যে বলার দরকার নাই!আমি তোকে টাকাটা দান করছি!তুই ঐ টাকা দিয়ে ওকে এসব কিনে দিবি ওকে? তবে….পছন্দটা হবে আমার… কি, ঠিকআছে?”
-“দারুন বুদ্ধি! কবে যাবে মার্কেটে?”
-“কালই চল্!আর শোন্,কেউ যেন না জানে!”
-“জানবেনা।তবে আমাকেও একটা কিনে দিতে হবে কিন্তু!”
-“সে আর বলতে…!”রাজ হেসে নীরার মাথায় টোকা দিলো!
,-“দেন এভরিথিং উইল বি ও…কে!”
নীরা হেসে বললো!
আজ ইরার আকদ হবে!
বাড়ীটাকে নতুন বৌয়ের মতো করে সাজানো হয়েছে!
সবাই পার্লার থেকে সেজে গুছে এসেছে!নীরা প্রবল পীড়াপীড়ি করেও পৌষীকে নিতে পারেনি!
তবে হাত ধরে খুব রিকোয়েস্ট করে অনেক বলে কয়ে গিফটের প্যাকেটটা পৌষীর হাতে গছিয়েছে!
পৌষীতো কোনো অবস্থাতেই নেবেনা!
নীরার কেঁদে ফেলার মতো অবস্থা দেখে পৌষী নিতে বাধ্য হয়েছে!
তখন নীরা বারবার বলেছে এটাই আজকে পড়তে হবে!
নীরার অনুরোধ রাখতে গিয়ে পৌষী জামাটা গায়ে দিয়েছে!সেটার সাথে রঙ মেলানো সুন্দর একটা হিজাব পৌষীর আগে থেকেই ছিলো!সেটা দিয়ে সুন্দর করে মাথা গলা ঘাড় পেঁচিয়ে নিলো! এতেই ওকে চমৎকার দেখাতে লাগলো!
বরপক্ষের আসার এখনো কিছুটা দেরী আছে!নীরা পৌষীকে নিয়ে নিজের রুমে এলো!তারপর বরপক্ষের মহিলাদের দেবার জন্য গিফটগুলো পৌষীর হাতে গিফটগুলো ধরিয়ে দিয়ে বলল-“ওদের মহিলাদের প্রত্যেকের হাতে গিফটগুলো তুমিই তুলে দিও!”
দুজনে কাজ সেরে বেরিয়ে নিচে ড্রইংরুমে যাবার সময় রাজের মুখোমুখি পড়লো।
রাজ থমকে একপাশে মুখ নিচু করে সরে দাঁড়ালো!
পৌষী দ্রুত ওকে পাশ কাটিয়ে চলে গেলো!
নীরা ভায়ের মাথায় টোকা মেরে বলল-“ভালোই শুরু করেছিস!তোর পছন্দের পোশাক ওর গায়ে আর ওর পছন্দের পোশাক তোর গায়ে!আহ্হা……কি প্রেম!
রাজ মৃদু হেসে ভেতরে চলে গেলো!
চলবে……

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here