সে_আমারঃ (আপডেট) পর্বঃ ৫

সে_আমারঃ (আপডেট)
পর্বঃ ৫
মোর্শেদা হাবিবঃ
***************
বেলা প্রায় সাড়ে দশটা বাজে!
রাজ বারান্দায় দাঁড়িয়ে ফ্রি হ্যান্ড এক্সারসাইজ করছিলো!ডাম্বল হাতে নিয়ে হাতগুলো ওঠানামা করার সময় ওর পাকানো দড়ির মতো পেশীগুলো চামড়া ভেদ করে আরো ফুটে উঠছিলো!
তখনি সে দেখলো গাড়ী বারান্দায় একটি গাড়ী এসে থেমেছে!রাজ ডাম্বলগুলো ফেলে টাওয়েল টেনে নিয়ে ঘাম মুছল তারপর টাওয়েলটা ঘাড়ে ফেলে দুহাত কোমড়ে রেখে সেদিকে চেয়ে রইল!
কে এলো হঠাৎ এ সময়ে!
গাড়ী থেকে ইসতিয়াককে নামতে দেখে রাজের মুখোভাব আরো গম্ভীর হয়ে গেলো!ইসতিয়াকের সাথে আরেকজন মহিলাও নামলেন।সম্ভবত ওর মা হবেন।
রাজ এগিয়ে গেলো।
ওকে দেখতে পেয়ে ইসতিয়াকও হাসিমুখে এগিয়ে এলো!হ্যান্ডশেকের জন্য হাতটা বাড়িয়ে ধরলো!
-“হাই…কেমন আছেন রাজ সাহেব ? চলে এলাম দেখা করতে…!”
রাজের ইচ্ছে ছিলোনা তবু ভদ্রতার খাতিরে ইসতিয়াকের বাড়ানো হাতটা ধরে ঝাকিয়ে মৃদু হেসে বলল-
-“ভালো করেছেন আসুন!”
ড্রইং রুমে তাদের বসিয়ে রাজ রান্নাঘরের দিকে উঁকি দিলো মা’কে ডাকবে ভেবে কিন্তু উঁকি দিতেই ওর বুকের রক্ত ছলকে উঠল!
মনের তাণপুরায় সমস্ত রাগিনী একসাথে বেজে বলে উঠলো!
আহা…আমার মানসপ্রিয়া!
আমার যৌবন সরসীনীরে মিলনের শতদল!
ওকে যে এখানে দেখবে এটা তো রাজ আশাই করেনি!
পৌষী চায়ের কাপে চা ঢালছে!ওর গায়ে হালকা একটা ওড়নামতো শাল ঝুলে আছে!আর মাথায় বরাবরের মতো ওড়না!তবে আজ ওড়নার ফাঁক গলে ওর কপালের একগোছা চুল বেয়াদবের মতো কানের উপর দিয়ে মুখের একপাশে এসে পড়েছে!
রাজের মনে হলো…আহ্..ঐ চুলগুলো সরানোর অধিকারটা যদি আমি পেতাম তবে ওগুলোকে মৃদু বকে দিতাম ওকে বিরক্ত করার জন্য তারপর সযত্নে সেগুলোকে ওর কানের শাসনে বন্দী করে দিতাম।
পৌষী চায়ে দুধ চিনি মিশিয়ে জিনিসপত্র যথাস্থানে রেখে দিলো।চায়ের কাপটা নিয়ে বেরোবার আগ মুহূর্তে শালটাকে ঠিক করে পড়ার জন্য সেটাকে খুলে দুহাত প্রসারিত করে ঘুরে দাঁড়াতেই দরজায় রাজকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে ঝপ করে হাত নামিয়ে দ্রুত পিছন ঘুরে দাঁড়ালো! ওড়নাটা টেনে মুখ ঢাকলো।
কাঁপা স্বরে বললো-“আ..আপনি…মামী তো তার ঘরে!”
রাজ দরজায় হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে বলল-“চা টা কার জন্য?”
পৌষী নিজের জন্যেই বানিয়েছিলো!তাই মৃদু স্বরে বলল-“আমার জন্যে!”
-“ওহ্…আচ্ছা…আমাকেও এককাপ দিননা প্লিজ…!
পৌষী মহাফাঁপরে পড়লো!সে যতক্ষণ নতুন করে চা বানাবে ততক্ষণ রাজ দাড়িয়ে অপেক্ষা করবে এটাতো চরম অস্বস্তিকর! তারচে সে এটা নিয়েই চলে যাক্!
পৌষী মুখ না ফিরিয়েই নিজের চায়ের কাপটা বাড়িয়ে ধরে বলল-“এটা নিন্!আমি আবার বানিয়ে নিচ্ছি!
রাজের চা খাবার কোনো ইচ্ছেই ছিলোনা।এটা ছিলো কথা বলার একটা বাহানা মাত্র!তবু রাজ হাত বাড়িয়ে চা টা নিলো!
চুমুক দিয়ে বলল-
-“উমমম…চা টা বেশ ভালো হয়েছে!থ্যাংক্স।
“এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি সাপ্তাহে জিতে নিন বই সামগ্রী উপহার।
আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে জয়েন করার জন্য এখানে ক্লিক করুন



রাজ দরজা আগলে দাঁড়িয়েই চা খেতে লাগলো!কারন সে জানে দরজা ছেড়ে সরে দাঁড়ালেই তার পরানপাখি দরোজার ফাঁক গলে ফুড়ুৎ করে উড়াল দেবে!
রাজ আরো কিছুক্ষণ ওকে ধরে রাখতে চায়!
ওদিকে পৌষীর ইচ্ছে সে আর চা বানাবেনা,এখান থেকে বেরিয়ে যাবে কিন্তু রাজ যেভাবে দরজা আগলে দাঁড়িয়ে আছে তার বেরোবার কোনো উপায় নেই!
সে রাজের দিকে পেছন ফিরে ঘুরে দাঁড়িয়ে নিচের ঠোঁট কামড়ে ধরে একটু চিন্তা করলো!কি করা যায়!
লোকটা এতো বেয়াদব যে ইচ্ছে করে দরজা আগলে আছে।
পেছন থেকে চায়ের কাপের টুংটাং শব্দ আসছে তারমানে রাজ এখনো সরেনি ওখান থেকে !
রাজ দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ো পুরো চা টা খালি পেটেই চালান করে দিলো!
খালি কাপটা রাখার জন্য পৌষীর দিকে এগিয়ে যেতেই পৌষী দরজা খালি পেয়ে দ্রুত রাজকে পাশ কাটিয়ে বেরিয়ে গেলো!
রাজ হতাশ হয়ে সেদিকে তাকিয়ে থাকলো!তারপর দরজার সামনে এসে পৌষীর গমনপথের দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে বলল-“আজকের সকালটা তো বেশ লাকি ছিলো।সকাল সকাল মানসপ্রিয়ার হাতে চা জুটে যাবে ভাবতেই পারিনি!”
ডান হাতে নিজের চুলগুলো পেছন দিকে ঠেলে শীষ বাজাতে বাজাতে রান্নাঘর ছেড়ে বেরিয়ে ড্রইংরুমে চলে এলো!
সেখানে ইসতিয়াক আর ওর মা বসে আছেন!
রাজ ওদের দেখে জিভে কামড় দিলো!
এই যাহ্,এদের কথা তো ভুলেই গিয়েছিলাম। বলল-“ওহ্…আপনারা…আরে..স্যরি…বসুন মা’কে ডেকে দিচ্ছি!
বলে রাজ দ্রুত মায়ের রুমের দিকে চলে গেলো!
ও আসলে মা কে ডাকতেই রান্নাঘরে ঢুকেছিলো কিন্তু পৌষীকে দেখে সব ভুলে গেছে!
….
মায়ের রুমে যেয়ে মা’কে বললে তিনি বেরিয়ে এলেন! রাজ বলল-“ড্রইংরুমে গেষ্ট এসেছে।”
-“এই সকাল বেলা কে এলো?”
-“ইরার দেবর আর একজন ভদ্রমহিলা এসেছে!”
রানী তটস্থ হয়ে উঠলেন-“সে কি…কখন?রাহেলাকে চা নাস্তা দিতে বলেছিস? দাঁড়া আমিই যাচ্ছি!”
রানী দ্রুত ড্রইংরুমে এসে তাদের সাথে কথা বলতে শুরু করলেন!
রাজ “এক্সকিউজ মি’ বলে ওদের পাশ কাটিয়ে নিজের রুমে চলে এলো!
পৌষী নিজেদের ঘরে ঢুকে শালটা রেখে চুলগুলো খোপা করে পড়ার টেবিলে যেয়ে বসলো!একটু বিরক্ত লাগছে ওর!চা টা নিজে খাবার জন্য বানালো হঠাৎ রাজ এসে পড়ায় চা টা আর খেতে পারলোনা,ওকে দিয়ে দিতে হলো!
এদিকে মাথাটা বেশ ধরেছে…চা খেতে হলে ওকে আবার রান্নাঘরে যেতে হবে!
কিন্তু রান্নাঘরে যাওয়া এখন নিরাপদ হবেনা।বলা তো যায়না রাজ আশেপাশেই থাকতে পারে!ইদানীং লোকটা প্রায়ই এদিকটায় চলে আসে।
ওরা এ বাড়িতে আসার পর থেকে ওকে একদমই এদিকে আসতে দেখেনি!বরং রাহেলা বা সাবুমিয়াকেই ওর প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র তার রুমে সরবরাহ করে আসতে দেখেছে।
হঠাৎ এদিকে তার এতো আসার কি দরকার পড়লো ?যাক্,তার বাড়ীঘর সে যেদিকে খুশি যাবে পৌষীর কি বলার আছে।
তবে এখন থেকে একটু সতর্ক থাকতে হবে….এই যা!’

এমন সময় সাহেদা এসে পৌষীর পাশে দাঁড়িয়ে মাথায় হাত রাখলেন-“তোকে তোর মামী ডাকছে তার রুমে!”
-“হঠাৎ?কেন ডাকছেন জানো?”
সাহেদা ইতস্তত করে বললেন-“সেদিনের সেই সমন্ধটার কথা বললাম না,ওই ছেলে আর তার মা এসেছেন!”
পৌষী রেগে গেলো!
-“যখন তখন কেউ এলেই তার সামনে যেতে হবে? আর ওরাই বা হুট করে এসময় কেন আসবেন? আমি যেতে চাইনা মা!তোমাকে তো বলেছি…আমি এখানে বিয়ে করতে চাইনা!”
সাহেদা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললেন-“ডাকছে যখন দেখা করে আয়…দেখলেই তো আর বিয়ে হয়ে যায়না! তাছাড়া ওরা ইরার কাবিনের কাপড় চোপড় দিতে এসেছেন।এই সুযোগে হয়তো তোর সাথে দেখাটা সেরে নেবেন।আমাদের জন্য তো এটাই ভালো হলো!ঘটা করে তোকে দেখতে এলে আমাদেরই আপ্যায়ন-আয়োজন করতে হতো।বরং এখন তুই স্বাভাবিক ভাবে তাদের সামনে যেতে পারবি!”
-“না..না…আমি ঐ ছেলের সামনে যাবোনা।তার মায়ের সাথে দেখা করতে বলছো সেটা করতে পারি!আর আমি যেভাবে আছি সেভাবেই যাবো!কাপড়-টাপড় চেঞ্জ করতে পারবোনা!”
-“আচ্ছা…ঠিকআছে,তোর মামীর ঘরে চল,তিনি তোকে ডাকছেন!
মিনিট দশেকের মধ্যে পৌষী মামীর রুমে এলো!মামী সেই ভদ্রমহিলার সাথে কথা বলছেন!
পৌষি তাকে সালাম দিলে মহিলা মুগ্ধ চোখে তাকিয়ে পৌষিকে কাছে টেনে বসালেন-
-“কি নাম তোমার মা?”
-“জ্বী…..পৌষী!”
-“সুন্দর নাম!কি পড়ছো এখন ?”
-“অনার্স ফার্ষ্ট ইয়ার….!”
পৌষীর সাথে টুকটাক আলাপ চলছে আর পৌষী উসখুস করে মায়ের দিকে তাকাচ্ছে!সাহেদা মেয়ের মনের ভাব বুঝতে পেরে বললেন-“আপা,কিছু যদি মনে না করেন,ওর কলেজের দেরী হয়ে যাচ্ছে তো….!”
-“ওহ্…আচ্ছা তুমি যাও!” বলে মহিলা পৌষীর থুতনী ধরে সেই আঙ্গুলে চুমু খেলেন!
পৌষী চলে যাবার পর এবার ভদ্রমহিলা নিজের ছেলের গুনগান গাইতে শুরু করলেন।নিজেদের স্ট্যাটাস নিয়েও নানান কথা বলতে লাগলেন!তার কোন্ ভাই কোথাকার এমপি,কোন ননদের জামাই সচিব….তো তার ছেলে আর কদিন বাদেই ডেপুটি হয়ে যাবে….ইত্যাদী গুনকীর্তন করতে লাগলেন!
রাণী বিগলিত ভঙ্গিতে আর সাহেদা অস্বস্তি নিয়ে নিরবে সেসব কথা শুনে যেতে লাগলেন!
চলে যাবার আগ মুহূর্তে রাজ নিজেই ইসতিয়াকের সাথে দেখা করে ওর ফোন নাম্বারটা নিয়ে নিলো!
কাঁধে হাত রেখে বললো-‘আপনার যে কোনো প্রয়োজন আপনি আমাকে আগে জানাবেন,কোনো সমস্যা নেই!আমি তো আছিই…..!”বলে রাজ হাসলো।
ইসতিয়াক হাত ধরে ঝাঁকিয়ে কৃতজ্ঞচিত্তে রাজের প্রশংসা করলেন।
তবে পৌষীর দেখা না পাওয়ায় কিছুটা হতাশও মনে হলো তাকে!
ওরা চলে যাবার পর রাজ মা’কে জিজ্ঞেস করলো-“ওরা কি পৌষীকে দেখতে এসেছিলো মা ?”
-“না,তা না ওরাতো ইরার আকদের কাপড় চোপড় নিয়ে এসেছে।সেই সুযোগে পৌষীর সাথে ইসতিয়াকের মা দেখাও করে নিলেন।খুবই সেয়ানা মহিলা বুঝলি !
ছেলের পীড়াপীড়িতে এসেছেন ঠিকই তবে অন্য কাজের বাহানা দিয়ে এসেছেন।সে সরাসরি মেয়ে দেখতে আসেনি!ইরার কাপড়ের ছুতো ধরে পৌষীকে আরেকবার দেখে নিলেন ভদ্রমহিলা!
ছেলের পছন্দ তার সাথে মিলবে কিনা এটা দেখার জন্য নিজে আবার এসেছেন!সেদিন তো পৌষী সেজে ছিলো আজ সাজ ছাড়া দেখে গেলো…..হুঁহ্..মনে করেছে কিছু বুঝিনা !
-“মানে?এখানে বোঝাবুঝির কি আছে?” রাজ প্রশ্ন করলো!
-“আরে…মেয়েটা তার স্ট্যাটাসের সাথে যাবে কিনা এটা দেখতে হবেনা?খালি দেখতে সুন্দর হলে হবে?”
রানী ভ্রু কুঁচকে বললেন!
রাজ চিন্তিত মুখে বলল-“তা ভদ্রমহিলার আচরণে কি মনে হলো?পৌষীকে পছন্দ হলো তার?”
যদিও রাজ জানে পৌষীকে দেখলে পছন্দ না হবার কোনো কারনই নেই তবু নিশ্চিত হবার জন্যই প্রশ্নটা করা!
রানী কিছুটা বিরক্ত হয়েই বললেন-“আরে বাবা…পৌষিতো পছন্দ না হবার মতো মেয়ে না!যেমন দেখতে তেমন গুনে!পাঁচপদে পুরোই আছে….নেই খালি টাকাপয়সা!সে তো আর মালদার নয়!আর আজকাল শুধু রুপ গুন হলে চলেনা মালপানিও থাকা লাগে!খালি রূপ দেখে কি বিয়ে করাবে নাকি কেউ?”
রাজ একটু ভেবে বলল-“,তুমি নিজেও কি এই ধ্যানধারনায় বিশ্বাসী মা?”
-“কোন্ ধ্যান ধারনা? ওহ্… হ্যাঁ…. অবশ্যই…সমাজে আমাদের একটা মানসম্মান আছেনা?ইরাকে কি আমরা কম দিচ্ছি?ফুল ফার্নিশড ফ্ল্যাট দিচ্ছি!ফার্নিচার সব হাতিলের।তারপর গহনাপত্র যা দিচ্ছি তা তো তুই জানিসই!তোর ফুপু তো বিনা পণে মেয়ে গছাতে চায়!এভাবে কে তার মেয়েকে নেবে?তারা কি রূপ ধুয়ে পানি খাবে নাকি?আমাদের ইরার জামাইকে যে প্লাটিনামের আংটিটা দিলাম তার দামইতো হবে…..!”
-“হয়েছে…থামো!শোনো মা…তোমাকে আমি স্পষ্ট বলে দেই,আমি যে মেয়েকে পছন্দ করবো তার বেলাতে এসব ফালতু সামাজিকতার ধুয়ো তুলতে পারবেনা বলে দিলাম।শ্বশুড়বাড়ী থেকে কিচ্ছু নেবোনা আমি!আমার যা আছে তাই.!মেয়ের বাড়ী থেকে কিছু দাবী করবেনা তুমি…!”
রানী চোখ গোল গোল করে তাকালেন-
-“তুই আবার এর মধ্যে এলি কি করে?
আর কি বললি তুই?মেয়ের বাড়ী থেকে কিছু নিবিনা মানে?তুই আমার একমাত্র ছেলে?কোটিপতির মেয়ে ছাড়া তোকে আমি বিয়ে দেবো মনে করেছিস?আমার কতদিনের শখ একমাত্র ছেলের বিয়েতে ধুমধাম করবো আমি আর তুই এসেছিস নীতিকথা শোনাতে?ঠিক করে বল্…এরকম এক আধটা জুটিয়েছিস নাকি?”
রাজ মৃদু হেসে আপনমনে বললো-“জুটাতে আর পারছি কই…দেখাই তো দেয়না!”
রানী ভ্রু কুঁচকে বললেন-“কি বলিস একা একা?”
রাজ মায়ের দিকে তাকালো-“যদি জুটাতে পারি…তুমি কি তাকে মেনে নেবেনা?”
রানী তড়াক করে সোজা হয়ে বসলেন!তর্জনী তুলে ছেলের দিকে তাক করলেন-
-“রাজ খবরদার বললাম…..খবরদার!আমাকে প্রাণে মারিসনা!তুই আমার একমাত্র ধন।যারে তারে জুটাইস না বাপ আমার! সমাজে আমার মাথা কাটা যাবে যদি তোর জন্য সেরকম পাত্রী না আনতে পারি তো!তোর জন্য মন্ত্রী লেভেল থেকে অফার আসে….জানিস তুই?মেয়ের বাপেরা তোর মত ছেলে পেলে বর্তে যাবে!তাহলে তুই কেন ফকিন্নী মার্কা মেয়ে বিয়ে করতে যাবি? তেমন হলে তো মেয়ে হাতের কাছেই ছিলো! বিয়ে করিয়ে নিজের ঘরে কি রেখে দিতে পারতাম না?”
-“কার কথা বলছো?”
মায়ের এমন কথায় বুক ধড়াস করে উঠলো রাজের!মা কি পৌষীর কথা বলছে?রানী বললেন-
-“আরে পৌষীর কথাই যদি বলি….সে তো দেখতে শুনতে কোন অংশে কম না! কিন্তু আমি আত্মীয়ের মধ্যে বিয়ে করাবোনা…এটা আমার সাফ কথা।তাছাড়া মেয়েটা ম্যানার্সও জানেনা!গাইয়া টাইপের।সারাদিন গ্রাম্য বউঝিদের মতো ঘোমটা দিয়ে চলাফেরা করে!পুরুষ মানুষ দেখলে তিন লাফে ঘরে লুকায়।পুরাই খ্যাত..! কারো সামনেও যেতে চায়না!সে তো আমাদের বর্তমান কালচারে একদম আনফিট!ইসতিয়াকের মা কি দেখে মজেছে কে জানে?”রানী মুখ বাঁকালেন।
রাজ নিরবে মায়ের কথা শুনছে আর মনে মনে দীর্ঘশ্বাস ফেলে ভাবছে!মা কি ওকে সতর্ক করে দিচ্ছেন কথাগুলো বলে? কিন্তু রাজ কিভাবে ফিরবে?ও যে পৌষীকে ছাড়া অন্যকিছু ভাবতে পারছেনা!
রানী বকবক করেই চলেছেন-
-“তাছাড়া পৌষীর মায়ের কি আছে তোকে দেবার মতো?যাক্ গে….যা হবার না তা নিয়ে কথা বলছি কেন? তোর জন্য আমি শহরের সেরা রুপসীকে খুঁজে বের করবো!আমার ছেলের বিয়ে সারা শহর জানবে!সবাই জানবে যে বিজনেস টাইফুন ‘আমজাদ চৌধুরীর’ ছেলে “হাসান আবরার চৌধুরী রাজ” এর বিয়ে হচ্ছে!তোর বিয়ে নিয়ে আমার যে কত প্ল্যান! তাই,খবরদার বাবা…পছন্দ করলে বুঝেশুনে করিস।তোর বাবা কিংবা আমি কেউই যা তা পাত্রীর সাথে তোকে বিয়ে করাবো না আগে থেকেই বলে দিলাম!”
রাজ ফোঁস করে দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল-“হমম…বুঝলাম!আচ্ছা আমি একটু বাইরে যাচ্ছি মা!ফিরতে লেট হবে!ফ্রেন্ডরা কেউ এলে সন্ধ্যের পর আসতে বলবে…!”
বলে রাজ বেরিয়ে গেল!গাড়ী বারান্দায় থেমে থাকা দুটো গাড়ীর একটা খুলে তাতে উঠে পড়লো!ড্রাইভার সাথে নিলোনা,সে নিজেই চালাবে বলে!
রানী ছেলের চলে যাওয়া দেখে মনে মনে বাঁকা হাসি হাসলেন!ভাবছেন,’তোমার মতলব আমি বুঝিনা ভেবেছো?তোমার মা আমি….তোমার মনের কথা আমি না বুঝলে মা হলাম কি করতে?ইসতিয়াকের যদি পৌষীকে পছন্দ হতে পারে তাহলে তুমিইবা বাদ যাবে কেন?তাই কথায় কথায় আগেভাগেই জানিয়ে দিলাম,পৌষির দিকে নজর দিয়ে লাভ নেই!আমি এটা কোনোদিনই মেনে নেবো না….কোনো অবস্থাতেই না!ইসতিয়াকের মা মানবে কিনা সেটাই তার ব্যপার!বরং সেটাও এখন প্রশ্ন হয়ে দেখা দেবে যে এমন হতদরিদ্র মেয়ে তারা বিয়ে করাবে কিনা !তাই বাপজান… তোমার মনে এসব চিন্তা এসে থাকলেও নিজে থেকেই সাবধান হয়ে যাও,আমি ইচ্ছে করে বুঝে শুনেই এসব কথা বলেছি….হুঁ হুঁ…!”
ভাবতে ভাবতে রানি আপন মনেই নিজের বুদ্ধির তারিফ করতে লাগলেন!সময় মতোই ছেলেকে সবক টা দিতে পেরেছেন তিনি!এবার ছেলে ঠিকই বুঝেশুনে চলবে!
★★★
রাজকে দেখে সিঁথি অবাক হয়ে চিৎকার দিয়ে উঠলো!
-“হাই…রাজ?মাই হিরো..!এতদিন পর তোর পদধূলি পড়লো?”
রাজ কোনো জবাব না দিয়ে চেয়ার টেনে ধপ করে বসে পড়লো!
এটা ফিনের বাড়ী।
ফিন রাজের এক ঘনিষ্ট বন্ধু।ওর বাড়ীর লনে একত্রিত হয়েছে ওরা!বিরাট ধনী বাবার একমাত্র ছেলে।ওদের বাগানেরই এককোনে চেয়ার পাতা আছে!সেখানেই রাজ, ফিন আর সিঁথি বসেছে!
সিঁথি ওদের পুরোনো বান্ধবী।ভালো ছবি আঁকে।ওর গেটাপ দেখলে ছেলে না মেয়ে বোঝা মুশকিল হয়ে যায়।
গত একমাসে রাজে এমুখো হয়নি।
তাই সিঁথি ওকে দেখেই চেঁচিয়ে উঠেছে!
রাজ কোনো উত্তর না দিয়ে পকেট থেকে মোবাইল বের করে সিঁথিকে বললো-“কথা পরে বল্,আগে তোর মোবাইলটা বের কর্ তো !”
সিঁথি বোকার মতো নিজের মোবাইলটা বের করে বলল-“বের করলাম…!”
রাজ চেয়ারে হেলান দিয়ে বসছিলো,এবার একটু ঝুঁকে বললো-“তোকে একটা নাম্বার দিচ্ছি..তুই অন্য একটা মেয়ের নাম দিয়ে কথা বলবি এই নাম্বারে!”
বলে ইসতিয়াকের নাম্বারটা বের করে দেখালো!
সিঁথি অবাক হয়ে বলল-“কি বলছিস…? বুঝলাম না?”
-“আরে না বোঝার কি হলো?তুই পৌষী সেজে কথা ববলবি..!”
-“পৌষী কিডা?”
-“পরে বলছি।আগে কথা শেষ কর্।তোর এখানে কোনো রিস্ক নাই!কাজটা তুই করবি জাষ্ট আমাকে হেল্প করতে!”
-“মানে? বুঝলাম না….আর একটু ক্লিয়ার কর্,দোস্ত!”
-“উফ্…..!”
বলে রাজ দুহাতে মুখ ঢাকলো।তারপর হাত সরিয়ে সিঁথিকে বোঝাতে শুরু করলো!
-“শোন্,আমি যে মেয়েটাকে ভালোবাসি সেই মেয়েটার বিয়ে আরেক জায়গায় ঠিক হতে যাচ্ছে! বিয়েটা যে করেই হোক ঠেকাতে হবে..ব্যস! তুই সেই ছেলেটাকে ফোন করে বলবি যে তুই “পৌষী”! আর তুই অন্য একটা ছেলেকে ভালোবাসিস।তাই তোর পক্ষে ইসতিয়াককে বিয়ে করা সম্ভব না।সে যেন এটা থেকে বিয়ের স্বপ্ন দেখা ভুলে যায়। ব্যস…তোর কাজ এতটুকুই!বুঝেছিস কিছু না আবার বোঝাতে হবে?”
রাজ হাত ঝাঁকালো।সিঁথি হা করে ওর কথাগুলো শুনছিলো এবার ‘টুউউ…..করে বখাটে ছেলেদের মতো করে শীষ বাজিয়ে উঠলো সিঁথি!
চিৎকার করে ফিনকে ডাকলো-“অই ফিনের বাচ্চা শুইন্না যা!আমাদের হিরো তার নায়িকা খুঁজে পেয়েছে!একেবারে হাবুডুবু অবস্থা!”
ফিন কাছেই ছিলো!
একটা ট্রে হাতে ওদের পাশে এসে বসল!হাসিমুখে বলল-“তাই নাকি দোস্ত? এতোদিন তো জানতাম মেয়েরা তোর পেছনে লাইন মারে!আজ প্রথম শুনলাম তুই কারো প্রেমে পড়েছিস! কে সেই সৌভাগ্যবতী যে আমাদের হিরোকে একেবারে ল্যাং মেরে ফেলে কুপোকাত করে দিয়েছে?”
-“পরে সব বলবো দোস্তো !আপাতত…এই উপকারটুকু কর্!”মৃদু হাসলো রাজ!
-“আচ্ছা…এই রিকোয়েষ্টটা তোর ডার্লিংকেই করছিস না কেন? সে কি এই ছেলেকে মানে ইসতিয়াককে পছন্দ করে নাকি?”
-“আরে ধুর!সে এই টাইপের মেয়েই না! সে এসবের মধ্যে নাই!সে তো এটাও জানেনা যে আমি ওকে লাইক করি। সে বিয়ের আগে প্রেম থেকে একশ হাত দুরে…মানে সে খালি ওর জামাইয়ের সাথে প্রেম করবে।শালা এক বাসায় থাকি,সারাদিনে একনজর দেখার জন্য চাতক পাখির মতো হা করে থাকতে হয়!দেখা মেলেনা! কথা বলবো তো বহু পরে!”
-“কস কি?এ তো দেখি পাক্ পরহেজগার?এরে পাইলি কই?” ফিন টিটকারীর সুরে বলে উঠল!
-“ও আমার আপন ফুপাতো বোন!”
শান্ত স্বরে বলল রাজ!
-“তাই নাকি? তা আগে জানতি না?”
সিঁথির এ কথায় গম্ভীর মুখে মাথা নাড়লো রাজ!ও টেবিলে নিজের মোবাইলটা আনমনে ঘুরাচ্ছিলো!
তখন ফিন বলল-
“-“তুই যখন পাগল হইছিস তো সেইরকম মেয়েই হবে!বল্ না দোস্ত তোর লাভ এ্যাটাকের গল্পটা পুরোটা শুনি?খুব আগ্রহ হচ্ছে!”
-“আজ না দোস্তো,আরেকদিন…তাছাড়া আজ গল্প বলতে তেমন কিছুই না ! তাকে দেখলাম একদিন।একটা লজ্জাশীল মেয়ে তার নারীতাবের পূর্ণ বৈশিষ্ট্য নিয়ে আমার সামনে এসে দাঁড়ালো।একটা মেয়ের মধ্যে যা যা থাকা উচিত তার সবগুণ ওর মধ্যে আছে।উপরন্তু সে নামাজী পর্দানশীন অথচ সে কলেজ গার্ল।ইউনিক একটা কম্বিনেশন।আজকাল যেটা রেয়ার!”
-“হমমম…হুজুর!”
-“ওরকমই বলতে পারিস!”
-“বাট বন্ধু সে তো তোমার বিপরীত হয়ে গেলো।তুই যেরকম গার্লফ্রেন্ড পরিবেষ্টিত ছেলে সে হলো পর্দা করা মেয়ে।সে কি তোকে মন থেকে কোনোদিন মেনে নেবে?”
-“জানিনা।তবে ওকে না পেলে স্রেফ মরে যাবো!”
-“এতোটা সিরিয়াস হইছিস?”
-“আমি জানিনা আমার কেন এমন হচ্ছে।ওর জন্য আমি সব ছেড়ে দেবো। তবু ওকে ছাড়তে পারবোনা!”
-“পোলাপানের মতো কথা বলিস না রাজ।সে এখনো তোর প্রেমে পড়ে নাই তার আগেই তুই দেবদাসের ডায়লগ মারিস না!”
-“আচ্ছা,এসব কথা ছাড়তো! সিঁথি….তুই ইসতিয়াককে একটা ফোন দে তো মা!’
সিঁথি লাফিয়ে উঠলো-
-“ওহ্…এখন আমাকে তো এখন মায়ের মতোই লাগবে……তাই না?শালা বজ্জাত কোথাকার!”
সিঁথি দাঁত কিড়মিড় করে বললো!
রাজ দাঁত বের করে হেসে বললো!
-“কয়েকদিন পরে দেখবি তোরাও আমাকে নানা ডাকবি।আগে সব সেটেল করে নেই তারপর!”
-“হইছে…বুঝছি…তু গায়া…ইয়ার!এখন আমগো নানীর নামটা ক’…বাপ! ”
-“পৌষী!”আস্তে করে বলল রাজ!
-“উঁঊহ্….কি আদুরে ভঙ্গিতে বললি!যেন তোর পুষি ক্যাট!দেখতে খুব ইচ্ছে হচ্ছে রে!” সিঁথি বললো।
-“পরে…..এখন ফোন দে…!’রাজ ধমক লাগালো।
সিঁথি এবার সিরিয়াস ভঙ্গিতে ফোন দিলো!ওপাশ থেকে সম্ভবত ইসতিয়াকই ধরেছে!সিঁথি মিষ্টি স্বরে বলল-
-“জ্বী,আসসালামুআলাইকুম…ইসতিয়াক ভাই বলছেন?”
ফিন তো সিঁথির কথা শুনে পেটে হাত দিয়ে হেসে কুটিকুটি!রাজের মুখও নিরব হাসিতে ভরে গেছে।ডান হাতের দুটো আঙ্গুল ঠোঁটের উপর ঠেকিয়ে সিঁথির কথা শুনে মুচকি মুচকি হাসতে লাগলো রাজ।
ওদিকে সিঁথি কথা বলে চলছে!
প্রায় পনের মিনিট পরে ফোন রেখে হুঁশ করে দম ছাড়লো সিঁথি।হতাশ ভঙ্গিতে বললো-“না রে দোস্তো।এরে কোনোভাবেই কাটানো গেলোনা।সে নাকি আগামী সপ্তাহেই আকদ করবে!”
শুনে রাজের মুখ শুকিয়ে গেলো!
চলবে…..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here