#সোনার সংসার
#লেখিকাঃ সাদিয়া সিদ্দিক মিম
#পর্বঃ৯
ভার্সিটি আসার জন্য তৈরি হচ্ছিলাম তখন বাবা এসে বলল,,,
“ভার্সিটিতে একা যেতে পারবে তুমি?”
“জি বাবা পারব।তুমি কী কোথাও যাবে?”
“হে আমার একটু কাজ আছে খুব ইম্পর্ট্যান্ট তাই বলছি তুমি আজ একাই চলে যাও।”
“ঠিক আছে বাবা।”
“তোমার চোখমুখ এমন কেন লাগছে?শরীর খারাপ লাগছে!”
“নননা আআমি ঠিক আছি,রাতে ভালো ঘুম হয় নি তাই হয়ত এমন লাগছে।”
“আচ্ছা সাবধানে যেও,আমি আসি।”
“আচ্ছা বাবা।”
বাবা চলে যায়,আমিও রেডি হয়ে ভার্সিটির উদ্দেশ্যে রওনা হই।ভার্সিটিতে আসতে অনেকটা লেট হয়ে যায়,আমি তাড়াহুড়ো করে গেট দিয়ে ডুকতে গেলে একজন পথ আগলে দাঁড়ায়।আমি তার দিকে তাকিয়ে থমকে দাঁড়াই,কারন আমার সামনে শরীফের বড় ভাই সজীব দাঁড়িয়ে আছে।আমি নিজেকে সামলে ভদ্রতার খাতিরে সালাম দিলাম,,,
“আসসালামু আলাইকুম ভাইয়া।কেমন আছেন আপনি?”
“ভালো আর থাকতে দিলে কোথায়!”
“মানেহ?”
“তোমার জন্য আমার ভাইটা হসপিটালে ভর্তি। পরিবারের একটা মানুষও ভালো নেই।”
“শরীফ হসপিটালে মানে?”
“হে হসপিটালে গতকাল বাড়িতে গিয়ে নিজের শরীর থেকে রক্ত ঝড়িয়ে এখন হসপিটালে ভর্তি।একটাবার চলো না আমার ভাইটার কাছে,খুব ভালবাসে তোমাকে।এখন শরীফের পাশে তোমাকে খুব দরকার,প্লিজ চলো একটাবার।”
শরীফের অসুস্থতার কথাটা শুনে বুকের ভিতরটা পুড়ে যাচ্ছে।কাল আমার কথাগুলো হয়ত খুব কষ্ট দিয়েছে তাই এমন করেছে।কালকে আমার ওভাবে বলা হয়ত একদমই ঠিক হয় নি।কিন্তু আমি ত ভুল কিছু বলি নি,তবে কেন করল ও এমন।শরীফ কেমন আছে এখন?এসব ভেবে মন চাচ্ছে এক ছুটে শরীফের কাছে চলে যাই।মনে মনে শুধু একটা দোয়াই করে যাচ্ছি শরীফের যাতে কিছু না হয়,ও যাতে সুস্থ হয়ে উঠে।মনে মনে এমন হাজার ভাবনা ভাবার পরও সেটা প্রকাশ করলাম না।নিজেকে আর কারো কাছে দুর্বল করব না।আমাকে শক্ত হতে হবে,পরে আমি চুপচাপ গিয়ে একবার দেখে আসব না হয়।তাই নিজেকে সামলে বলে উঠলাম,,
“এখন ত আমাকে দরকার পড়ার কথা নয়।আপনার ভাইয়ের নতুন বউ আছে তাকে বলুন আমি যেতে পারব না।আমার ক্লাসে দেরি হয়ে যাচ্ছে আমি আসছি।”
বলেই আসতে নিলে সজীব ভাই তাচ্ছিল্য হেসে বলে উঠল,,,
“এখন আমার ভাইয়ের থেকে তোমার ক্লাস করাটা জরুরি হয়ে গেলো।এই তোমার ভালবাসা আমার ভাইয়ের প্রতি,মা ঠিকই বলে তুমি আমার ভাইয়ের যোগ্য নও।”
“আপনার মা কী বলল না বলল সেটা আমার দেখার বিষয় নয়,আর এখন আমার ক্লাস করাটাই জরুরি আপনার ভাইয়ের থেকে।যখন আমার সবচেয়ে খারাপ সময়ে আপনার ভাইকে পাশে দরকার ছিল আপনার ভাই তখন কী করেছে আমাকে ছেড়ে আরেকটা বিয়ে করেছে।আমাকে একা করে দিয়েছে।এখন আমার প্রতি এত ভালবাসা দোখাচ্ছে কেন?তার নতুন বউয়ের প্রতি বলুন ভালবাসা দেখাতে।আমার কাছে না এসে তার নতুন বউয়ের কাছে গিয়ে বলুন তার পাশে থাকতে।”
“আমার ভাই বিয়ে করে নি।”
কথাটা শুনে অবাকের শীর্ষে পৌঁছে গেলাম আমি।আমি অবাক হয়েই ভাইয়াকে বলে উঠলাম,,,
“বিয়ে করে নি মানে?”
“হে বিয়ে করে নি,বিয়ের দিন সারাদিনও বাড়িতে ছিল না।আমার ভাই তোমাকে সত্যি খুব ভালবাসে তাই তোমাকে ঠকিয়ে বিয়েটা করতে পারে নি।”
কথাগুলো বলতে গিয়ে ভাইয়ার চোখে পানি ছলছল করছিল।আমি না চাইতেও আমার চোখে পানি চলে এলো,শরীফ তবে বিয়ে করে নি।কথাটা ভেবেই মনের ভিতর খুশির জোয়ার বয়ে গেলো।কিন্তু শরীফ আমাকে এতদিন সত্যিটা কেন বলে নি?আমি সত্যিটা না জেনে কত কষ্ট দিয়েছি শরীফকে।কিন্তু শরীফ আমাকে কেনই বা এখনও ফিরিয়ে নেয় নি?কী কারন আছে এর পিছনে!
আমাকে চুপ থাকতে দেখে ভাইয়া বলে উঠল,,,
“তোমাকে কিছু বলার মত নেই আমার,আসছি আমি।”
বলেই ভাইয়া চলে গেলো,আমি হাঁটু গেড়ে সেখানেই বসে পড়লাম,অঝোর দারায় চোখ দিয়ে পানি পড়ছে।আমার শরীফ তবে বিয়ে করে নি,আমার স্বামী আমারই আছে।আমার সোনার সংসার ভেঙ্গে যায় নি।ভাবতেই মনটা খুশিতে নেচে উঠল,কিন্তু পরক্ষণেই মনটা কালো মেঘের ছায়ারা ভর করল।শরীফের শরীর ভালো না,নিজেকে আঘাত করেছে।আমার জন্য আজ শরীফের এ অবস্থা,আমাকে শরীফের কাছে যেতে হবে।আমি অপরাধী শরীফের কাছে,আমাকে যেতে হবে শরীফের কাছে।কথাগুলো ভেবে চোখের পানি মুছে ছুটলাম সজীব ভাইয়ার পিছন পিছন।আমি ত জানি না শরীফ কোন হসপিটালে আছে,ভাইয়া নিশ্চয়ই এখন হসপিটালে যাবে।তাই উনাকে ফলো করতে লাগলাম।
___________________________
হসপিটালের বেডে শরীফ শুয়ে আছে,সারারাত ঘুমের ঔষধের জন্য ঘুমিয়ে ছিল।বেশি আঘাত না পাওয়ায় আর তাড়াতাড়ি হসপিটালে আনায় বেশি কিছু হয় নি।একটু আগেই জ্ঞান ফিরেছে তার।জ্ঞান ফেরার পর থেকে বাসার কারো সাথে কথা বলে নি।কথা বলবেই বা কেন?তার পরিবারের জন্য আজ তার ভালবাসা তার থেকে দূরে।শরীফের কেবিনে প্রবেশ করল তার বন্ধু হৃদয়,এসেই শরীফকে জড়িয়ে ধরে বলতে শুরু করল,,,
“এমন পাগলামি কেন করলি তুই?যদি তোর কিছু হয়ে যেত তখন কী হত তুই বুঝতে পারছিস।”
“——-”
“তুই এমন চুপ করে থাকলে সাদিয়াকে তোর থেকে অনেক দূরে পাঠিয়ে দিব।”
শরীফ এবার গম্ভীর হয়ে বলে উঠল,,,
“আর কত দূরে পাঠাবি আমার থেকে?এমনিতেই আমাদের মাঝে দুরত্বটা এতটাই বেড়ে গেছে যে সাদিয়া আমাকে ঘৃণা করছে।”
“ঘৃণা করাটা কী জায়েজ নয়?তুই ত ঘৃণা করার মত পথ করে দিয়েছিস,সত্যিটা ওকে কেন বলছিস না?আর ওকে ফিরিয়েই বা আনছিস না কেন?”
“ও আমাকে ঘৃণা করুক,আমি ওকে সারাজীবন ভালবেসে যাব,অর আশেপাশেই থাকব।”
“তারপরও সত্যিটা বলে ওকে ফিরিয়ে আনবি না তুই?”
“না।”
“কিন্তু কেন?কেন এসব করছিস তুই।যাকে এত ভালবাসিস তাকে কেন দূরে রেখে এভাবে কষ্ট দিচ্ছিস আর নিজেকে এভাবে কষ্ট দেয়ার কী মানে?”
“তুই বড্ড বেশি কথা বলছিস,যা ত এখান থেকে।আর তোর ফোনটা দিয়ে যা।”
“ফোন দিয়ে কী করবি তুই?”
“হাতুড়ি দিয়ে ভাঙ্গব,দিলে দে না দিলে যা এখান থেকে।”
“রাগ করছিস কেন?বলেছি কী দিব না?”
“ত ফোন দে আর এখান থেকে ভাগ।”
হৃদয় একটা ভেংচি কেটে ফোনটা শরীফকে দিয়ে বের হয়ে গেলো।শরীফ ফোনটা হাতে নিয়ে বাঁকা হাসল।
#চলবে…
(ছোট হলে দুঃখিত,যত চাই বড় করতে ততই ছোট হয়ে যায়😥)