সোনার_সংসার পর্ব ১৫

সোনার সংসার
#লেখিকাঃ সাদিয়া সিদ্দিক মিম
#পর্বঃ১৫

বসন্ত প্রায় শেষের দিকে,এই বসন্ত কালে সকল গাছ নতুন সাজে সজ্জিত হয়।এই বসন্তটা খুব পছন্দের আমার,এমনই এক বসন্তের বিকালে শরীফের সাথে আমার দেখা হয়েছিল।কতই না সুন্দর ছিল সে দিনটা,হয়ত আজকের বিকালটাও সেদিনের মত সুন্দর হত কিন্তু কিছু বিষাদময় স্মৃতির জন্য সেটা সম্ভব হচ্ছে না।আশেপাশে কিছু মানুষ রূপি নিকৃষ্ট মানুষের জন্য আজকের দিনটা একটু বেশিই বিষাদময় লাগছে।ব্যালকনিতে বসে এসবই ভাবছি,কখন আমার পাশে সজীব ভাই আর ভাবি এসে দাঁড়িয়েছে টেরই পাই নি।আমাকে এভাবে ভাবতে দেখে ভাবি বলে উঠল,,,

“কী গো এত মন দিয়ে কী ভাবছো হুম?”

ভাবির কথায় আমার ধ্যান ভাঙ্গে,আমি তাকিয়ে দেখি ভাইয়া,আর স্বর্নাকে কোলে নিয়ে ভাবি দাড়িয়ে আছে।আমি বসা থেকে উঠে স্বর্নাকে নিজের কোলে নিয়ে একটা চুমু দিয়ে ভাবিকে বলে উঠলাম,,,

“কার কথা আর ভাবব বলো,তোমার ঐ খবিশ,হিটলার দেওরের কথাই ভাবছি।”

আমার কথা শুনে ভাবি হেঁসে ফেলল কিন্তু সজীব ভাইয়ার মুখে এখনও কোন হাসি নেই।আমি সেটা দেখে বড় ভাইয়াকে বলে উঠলাম,,,

“ভাইয়া আপনার কী মন খারাপ?”

“না বোন আমার মন খারাপ না,তোমাকে কিছু জানানোর ছিল তাই আসা।”

“জি ভাইয়া বলুন না কী বলতে চান!”

“তুমি প্লিজ কথাগুলো মন,মস্তিষ্ক দুটো দিয়েই বিবেচনা করো,হুট করে কোন সিদ্ধান্ত নিও না তুমি।”

“ভাইয়া আপনি এভাবে কেন বলছেন?খারাপ কিছু কী হয়েছে?”

“তুমি কথাটা শুনলেই বুঝতে পারবে।কারন তোমাকে সবটা জানালে তোমার সামনে এগোতে আরো সুবিধা হবে।”(ভাবি)

” ভাইয়া প্লিজ কথাটা বলুন,আপনারা যেভাবে বলছেন তাতে আমার জানার আগ্রহটা বেড়েই চলেছে।প্লিজ বলুন কী হয়েছে,এভাবে না বলে সবটা খুলে বলুন আমাকে।”

“তোমার কী মনে প্রশ্ন জাগে না সেদিনের কথা,যেদিন রাতে শরীফের বিয়ে ছিল আর সেই রাতে তোমার সাথে কী হয়েছে?আর তুমি হসপিটালে কীভাবে পৌঁছালে!”

সজীব ভাইয়ার কথা শুনে কিছুক্ষণের জন্য নিজেকে বোকাদের তালিকায় ফেলতে ইচ্ছে করল।এই কথাটা আমার মাথা থেকে একদম বেরিয়েই গিয়েছিল,সেদিন শরীফ আমার রুমে এসেছিল তারপর কী হয়েছিল?আর আমি হসপিটালে কীভাবে পৌঁছালাম,আর মা-বাবাও কীভাবে খবর পেলো আমি হসপিটালে।তবে কী সেদিন শরীফই সবটা করেছে?এত বড় একটা কথা কীভাবে আমার মনে হয় নি।আমাকে গভীর চিন্তায় মত্ত দেখে সজীব ভাইয়া আবারও বলে উঠল,,,

“নিজেকে এত প্রেশার দিও না,আমি বলছি তোমাকে সেদিন কী হয়েছিল আর কীভাবে তুমি হসপিটালে পৌঁছালে?”

সজীব ভাইয়ার কথা শুনে আমি ভাইয়ার দিকে ভ্রু কুঁচকে জানতে চাইলে ভাইয়া বলে উঠে,,,

“সেদিন রাতে শরীফ তোমাকে সবার আড়ালে সরিয়ে ফেলেছিল এ বাড়ি থেকে।আর হসপিটালে ভর্তি করিয়ে তোমার মাকে খবর শরীফই দিয়েছিল।”

ভাইয়ার কথা শুনে আমি একটুও অবাক হই নি কারন ঘটনাটা এমনই যে এমনটা ঘটতে পারে তা একটু খুঁটিয়ে ভাবলেই বোঝা যাবে।তাই আমি হালকা হেঁসে বললাম,,,

“এই কথা,আমি ভাবলাম কী না কী!”

“সাদিয়া আমার কথা কিন্তু এখনও শেষ হয় নি,এখনও আসল কথাটাই শোন নি তুমি।”

“আসল কথা মানে?”

“আসল কথা এটাই হল যে তোমার মা শরীফকে সাহায্য করেছে তোমাকে তোমার বাবার বাড়িতে পাঠাতে।”

ভাইয়ার কথায় ৪২০ ভোল্টেজ শক খেলাম,মা সাহায্য করেছে মানে কী?

“মা সাহায্য করেছে মানে কী বলছেন এসব।মা বাবার সাথে ত তখন আমারই কোন যোগাযোগ ছিল না তবে শরীফ কীভাবে কী করল?”

“যোগাযোগ ছিল না বলে যে যোগাযোগ করা যাবে না সেটা কিন্তু নয়।সেদিন আমি তোমাকে আর হৃদয় কে বাড়িতে নামিয়ে দিয়ে তোমার ভাবিকে হসপিটাল থেকে আনতে গিয়েছিলাম সেদিনই আমি সবটা জানতে পারি কারন সেখানে আমার এক বন্ধু ডাক্তার,অর কাছেই আমি এসব জানতে পারি।আমি আর কিছু জানি না,এখন সমস্ত সত্যিটা বের করার দায়িত্ব তোমার।যাই করো একটু ভেবে চিন্তা করে করো।”

ভাইয়ার কথায় মাথার মধ্যে সব গন্ডগোল লেগে যাচ্ছে,এত রহস্য রাখছে না ইচ্ছে করতাছে লেখিকাকে পিডাইতে😤।

________________________________

ঘরের মধ্যে পাইচারি করে চলেছি অনবরত,মাথা কাজ করছে না একদমই।কীভাবে আমি সমস্ত রহস্য ভেদ করব?এসব ভাবছি তখন চোখ পড়ে পানির বোতলের দিকে,সেটা দেখে মাথায় শয়তানি বুদ্ধিরা ভর করে।আমি একটা শয়তানি হাসি দিয়ে নাচতে নাচতে রুম থেকে বেরিয়ে গেলাম।

শরীফ অফিস থেকে ফিরে এসে রুমে গিয়ে দেখে ঘরে সাদিয়া নেই।সেটা দেখে শরীফ একটা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলল,এই মেয়েটা এখন আশেপাশে থাকা মানেই পুরা কাল বৈশাখী ঝড় তুলে ছাড়বে।কিন্তু শরীফকে ভুল প্রমানিত করে সাদিয়া হুট করে শরীফের সামনে চলে আসে,শরীফ ছিটকে কিছুটা দূরে চলে যায়।আর সাদিয়া খিলখিলিয়ে হেসে উঠে,শরীফ নিজেকে সামলে সাদিয়ার দিকে তাকায়।অনেকদিন পর সাদিয়াকে এভাবে হাসতে দেখল,বুকের ভিতর যেন প্রশান্তির হাওয়া বয়ে যাচ্ছে।সাদিয়া হাসতে হাসতেই বলে উঠে,,,

“কী ভেবেছেন জনাব,আমি ঘরে নেই আর আপনাকে জ্বালানোর মত মেয়েটা নেই তাই না।এত সহজে ছাড়ছি না আপনাকে।”

বলেই আবার খিলখিলিয়ে হেঁসে উঠে সাদিয়া,শরীফ এবার রেগে বলে উঠল,,,

“আবারো ফাজলামো করছো আমার সাথে!কাল থেকে অফিসেই থাকব আর বাড়িতে ফিরব না।বাড়িতে ফিরলেই শুরু হয়ে যায় ভাঙ্গা টেপ রেকর্ডার।”

“সে তুমি যাই বলো,আমার কোন সমস্যা নেই।তোমাকে জ্বালানোর জন্য অফিসে পৌঁছাতেও আমার দুই মিনিট লাগবে না।এখন নাও ত এই শরবতটা খেয়ে ফেলো,তবে আজ রাতে আর তোমাকে জ্বালাব না।”

শরীফ সন্দেহ করে তাকায় সাদিয়ার দিকে,কিন্তু পরক্ষণে শরীফ কিছু একটা ভেবে সাদিয়ার হাত থেকে গ্লাসটা নিয়ে টেবিলে রেখে সাদিয়াকে টেনে ঘর থেকে বের করে দিয়ে দরজা বন্ধ করে দেয়।সাদিয়া রাগে ফুঁসছে,,,

“ধন্যবাদ এত সুন্দর ওফার দেয়ার জন্য,আজ সারারাত নিশ্চিন্তে ঘুমাব।আর শরবতে যে গন্ডগোল করেছো সেটা বুঝতে আর বাকি নেই আমার।”

সাদিয়া শরীফের কথা শুনে পুরো অবাক,,,

“বেটায় বুঝল কেমনে?দেৎ একটা কাজও ঠিকঠাক করতে পারি না।এখন এই বজ্জাত বেটার পেট থেকে কথা কীভাবে বের করব।আর আমি রাতে থাকব কোথায়,ভাল্লাগেনা।”

#চলবে…

(রিচেক করি নি,ভুল ত্রুটি ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।ছোট হওয়ার জন্য দুঃখিত,লিখতে একদমই ইচ্ছে করছিল না জোড় করেই লিখা এতটুকু।কাল থেকে বড় করে দিব ইনশাআল্লাহ)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here