সোনালী_রোদ্দুর পর্ব ৩

#সোনালী_রোদ্দুর
#ফারজানা_আফরোজ
#পর্ব_৩

স্পর্শী তাকিয়ে দেখলো এক বালতি ময়লা পানি নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে আবির। ময়লা পানি দেখেই গা গুলিয়ে গেলো তার। কাঁদো কাঁদো গলায় তাকালো আবেগের দিকে। কান্না মিশ্রিত কণ্ঠে বলল,

” ক্ষমা চাচ্ছি তো প্লিজ এমন করবেন না।”

কে শোনে কার কথা। আবেগ ময়লা পানির বালতি উঠিয়ে ঢেলে দিলো স্পর্শীর গায়ে। রাজু মাহিম ওরা তো হাসতে হাসতে মাটিতে গড়াগড়ি খাচ্ছে। স্পর্শী তখন রাগী চোখে আবেগের দিকে তাকিয়ে রাগ কন্ট্রোল করতে না পেরে সজোরে থাপ্পড় বসালো আবেগের গালে। আবেগ এইবার রেগে গিয়ে স্পর্শীর হাত জোড়া চেপে ধরে দাঁতে দাঁত চেপে বলল,

” তোর সাহস তো দেখছি কম না। কলেজে পা ফেলতে না ফেলতেই আমাকে বারবার অপমান করছিস। ”

ময়লার গন্ধে স্পর্শী এইবার নিজের অজান্তেই বমি করে দিলো আবেগের গায়ে। আবেগ এইবার খুব রেগে গিয়ে থাপ্পড় বসাতে যাবে তখনি স্পর্শী জ্ঞান হারিয়ে আবেগের গায়ে পরে গেলো।

আবির তখন চিন্তিত মুখ করে বলল,

” একে এইখানে এইভাবে ফেলে রাখা কি ঠিক হবে? মনে হচ্ছে বাড়াবাড়ি হয়ে গিয়েছে।”

রাজু তখন আবিরের পিঠে হালকা চাপড়ে বলল,

” শালা, মেয়ে দেখলেই ইচ্ছা করে হেল্প করতে তাই না? দেখছিস না মেয়েটা আবেগের থাপ্পড় দেখেই অজ্ঞান হয়ে পড়ে গেলো। এই মেয়েকে এইখানে ফেলে চল আড্ডা দেওয়া যাক। কলেজে পা দেওয়ার পর থেকেই ঝামেলা করছে মেয়েটা।”

আবির রাজুর কথায় কান না দিয়ে আবেগের কানে কানে গিয়ে বলল,

” তোর আব্বু শুনলে তোকে কিন্তু বাসা থেকে বের করে দিবে। তাই মেয়েটাকে চল কোনো ভালো জায়গায় রেখে আসি।”

আবেগ মাহিমকে বলে গাড়ি এনে গাড়িতে স্পর্শীকে উঠিয়ে সোজা চলে গেলো। রাজু তখন বলল,

” হঠাৎ কি হলো ওর? আমাদের কাউকেই না নিয়ে চলে গেলো সমস্যা কি ভাই?”

” ও নিজেই জানে।”

______________

রিয়া বসে আছে তার সামনে নীলাদ্রি। রিয়া তখন ভয়ে ভয়ে বলল,

” কি হয়েছে তোমার? বলেছি তো ডিভোর্স পেয়ে যাবে।”

” আবিরকে বিয়ে করবে বুঝি?”

হকচকিয়ে উঠলো রিয়া। বড় বড় চোখে বলল,

” তুমি নিজেই তো ডিভোর্স চাচ্ছো। যেদিন আমার বাচ্চাটা দুনিয়াতে আসবে সেদিন তোমাকে আমার থেকে মুক্তি দেওয়ার কথাটা তুমি বলনি?”

” যখন কোনো স্বামী তার স্ত্রীকে অন্য একজন পুরুষের সাথে রাস্তায় কথা বলতে দেখে তখন ওই স্বামীর কি করতে ইচ্ছা হয় জানো? হয় ওই ছেলেকে খুন করতে নয় নিজের বউকে, নয়তো নিজেই মরে যেতে। প্রতিদিন তার সাথে কথা বলো, রাস্তায় মিট করো এইসব কোনো স্বামীই সহ্য করবে না।”

নীলাদ্রি শান্ত ভঙ্গিতে কথাগুলো বলা সত্ত্বেও সে ভিতরে ভিতরে কান্না করছে। রিয়াকে সে ভীষণ ভালোবাসে তবে জানে রিয়া আবিরকে ভালোবাসে। রিয়ার পেটে তার দুই মাসের অনাগত সন্তান। সখ করে কেউ তার সন্তানের মাকে ডিভোর্স দিতে চায় না। নীলাদ্রিও চায় না ডিভোর্স দিতে। সে চায় রিয়া এবং তাদের সন্তান তার সাথেই থাকুক কিন্তু আবির তাদের মাঝে এসে বাঁধা দিয়ে দাঁড়িয়েছে।

রিয়া চুপচাপ বসে আছে। আবিরকে ভালোবাসলেও তার সন্তানের বাবাকে সে ছেড়ে যেতে পারবে না এরফলে যদি তাকে হাজার কষ্ট সহ্য করতে হয় তাহলে করবে। এক সময় দেখা যাবে একসাথে থাকতে থাকতে নীলাদ্রিকে সে ভালোবেসে ফেলবে। নীলাদ্রির হাত জোড়া নিজের হাতের মুঠোয় রেখে ছলছল চোখে বলল,

” আমি থাকতে চাই তোমার সাথে। আবির কিন্তু আমাদের পিছু ছাড়বে না। আচ্ছা আমরা কি বাংলাদেশ ছেড়ে অন্য কোথাও যেতে পারি না? যেখানে আমরা শান্তিতে থাকতে পারবো?”

নীলাদ্রি চেয়েছিল রিয়া তাকে এমন কিছুই বলুক। মনে মনে ভীষণ খুশি হয়ে আশ্বাস দিলো,

” খুব তাড়াতাড়ি আমরা চলে যাবো। একদিন তুমি আমায় খুব ভালোবাসবে দেখো!”

রিয়া মুচকি হাসি দিয়ে রান্না ঘরে চলে গেল। যেদিন ডক্টরের কাছ থেকে শুনেছিল সে প্রেগনেন্ট তখন থেকেই তার মনে মা হবার এক অশেষ অনুভূতি সৃষ্টি হয়েছে। প্রেগনেন্সির রিপোর্ট যখন নীলাদ্রির সামনে রেখেছিল সেদিন নীলাদ্রিও তার সামনে ডিভোর্স পেপার রাখে। সেদিনের কথা ভেবে শিউরে উঠলো রিয়া…….

____________________

পুরানো একটি বাড়িতে রাখা হয়েছে স্পর্শীকে। আবেগ রাগী চোখে বারবার তাকাচ্ছে স্পর্শীর মুখের উপর। পুরো কলেজের সামনে থাপ্পড় খেয়ে অপমান ও লজ্জা বোধ করছে আবেগ। এখন তার ইচ্ছা করছে কষে কয়েকটি থাপ্পড় লাগাতে স্পর্শীকে কিন্তু সংকোচ বোধ হওয়ায় শুধু রাগী দৃষ্টি নিক্ষেপ করতে লাগলো।

অনেকক্ষণ পর সেন্স ফিরে স্পর্শীর নিজেকে একটি পুরনো বাড়িতে আবিষ্কার করে ভয়ে সামনে থাকা লোকটির দিকে তাকালো। আবেগ তখন বেঘোরে ঘুমাচ্ছে। স্পর্শী নিজেকে দেখে বুঝল তার গায়ে ভালো পানি ঢালা হয়েছে। তাই বেশি বাজে গন্ধ বের হচ্ছে না কিন্তু সে এখন কোথায় বুঝতে না পেরে এদিক সেদিক উকি দিতে লাগলো,

” ভুতের বাড়িতে আছি আমরা সো ওদের বিরক্ত করো না।”

আবেগের কণ্ঠ শোনে দেখলো সে বসে আছে। কান্না মিশ্রিত কণ্ঠে স্পর্শী বলল,

” আমি বাসায় যেতে চাই।”

” ধরে রেখেছে কে?”

” আপনিই তো! আমি বাসায় যাবো।”

আবেগ একটা প্যাকেট স্পর্শীর সামনে ধরে বলল,

” পাঁচ মিনিটের মধ্যে পড়ে রেডি হবে। আমি মাত্র পাঁচ মিনিট ওয়েট করবো। পরে কিন্তু ভিতরে চলে আসবো।”

স্পর্শীকে কথা বলার সুযোগ না দিয়েই বেরিয়ে পড়লো আবেগ। প্যাকেট খুলে দেখলো গাঢ় লাল লং জামা। তাড়াতাড়ি গায়ে দিয়ে ডাক দিল আবেগকে। আবেগ ভিতরে এসে এক পলক তাকিয়ে বলল,

” চলো তাড়াতাড়ি!”

” কোথায়?”

” গেলেই বুঝতে পারবে।”

স্পর্শী চাচ্ছে না আবেগকে রাগাতে তাই বাধ্য মেয়ের মত আবেগের পিছু পিছু বের হলো।

কাজী অফিসের সামনে গাড়ি থামলো। আবেগ ও স্পর্শী গাড়ি থেকে নেমে দেখলো কাজী অফিসের সামনে আবির,রাজু,মাহিম, নিশীতা ও তারিন দাঁড়িয়ে আছে। স্পর্শী সবাইকে একসাথে দেখে ভীষণ অবাক হয়ে আবেগের দিকে জিজ্ঞাসার দৃষ্টিতে তাকাতেই মুখে ডেভিল হাসি দিয়ে বলল আবেগ,

” আজ আমাদের বিয়ে। তাই তো ওরা সবাই সব কিছু রেডি করে আমাদের জন্য ওয়েট করছে। চলো শুভ সময় চলে যাচ্ছে তো।”

আকাশ থেকে পড়লো মনে হয় স্পর্শী। আবেগের দিকে তাকিয়ে বলল,

” আমাকে আপনি সবার সামনে থাপ্পড় মেরে প্রতিশোধ নিন তবুও প্লিজ এই রকম করবেন না।”

” আমাকে অপমান করার শাস্তি হলো আমাকে বিয়ে করা। আজকের পর তুমি বুঝবে এই আবেগ কি হুম”

স্পর্শীর হাত টানতে টানতে নিয়ে গেলো কাজী অফিসের ভিতরে। স্পর্শীর চোখে পানি বৃষ্টি হয়ে ঝড়তে লাগলো। কিন্তু এতে আবেগের কোনো ভ্রুক্ষেপ নেই। তাকে দেখে মনে হচ্ছে বিয়েটা তার ভালোবাসার মানুষের সাথে হচ্ছে।

কবুল বলার জন্য বারবার তাগাদা দেওয়া হচ্ছে কিন্তু স্পর্শী বলছে না। আবেগ রাগী কণ্ঠে বলল,

” ভালোই ভালো বলবে নাকি এমন কিছু করবো যার ফল তোমাকে ভুগতে হবে।”

ভয় পেয়ে বলে ফেলল কবুল। সিগনেচার দেবার সময় স্পর্শীর হাত কাঁপাকাঁপি শুরু করে দিলো। কিছুতেই সে নাম লিখতে পারছে না। আবেগ তখন স্পর্শীর হাত ধরে নিজেই লেখা শুরু করলো।

বিয়েটা হয়ে গেলো তাদের। স্পর্শীর বিরুদ্ধে গিয়ে বিয়েটা করলো আবেগ। বিয়ের পর আবেগের বন্ধুরা পার্টি দিলো। রাত তিনটা পর্যন্ত পার্টি চলল এদিকে স্পর্শীর চিন্তা করতে করতে মাথা ধরেছে। তার আব্বু আম্মু হয়তো পাগল হয়ে যাচ্ছেন তার চিন্তায়। কি বলবে সে বাড়িতে? কোথায় ছিল? কি হয়েছে তার সাথে? এত রাত পর্যন্ত কেন বাড়ির বাহিরে? এইসবের উত্তর ভাবতে গিয়ে শিউরে উঠলো বারবার। এক প্রকার সহ্য করতে না পেরে চিৎকার করে কাঁদতে শুরু করে সে। তার চিৎকারে পার্টির সেই আমেজ নিমিষেই ধামাচাপা হয়ে গেলো। তারিন এসে স্পর্শীর মাথায় হাত রাখতেই স্পর্শী তখন তারিনের দিকে তাকিয়ে……

চলবে,

বানান ভুল ক্রুটি ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন। জানি গল্পটা ভালো হচ্ছে না। তাই তাড়াতাড়ি শেষ করার চেষ্টা করবো। আমি চেয়েছিলাম গল্পের প্রথম অংশটুকু শেষে সংশোধন করবো কিন্তু আপনাদের কমেন্ট দেখে আজকেই বলে দিলাম। ডিভোর্সের কাহিনী কি বুঝতে পেরেছেন আপনারা?

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here