সোহাগী পর্ব -০১

রাত্রির শেষ ভাগ। গভীর ঘুমে মগ্ন ছিলো সোহাগী। আকস্মিক গলায় কারো হাতের শীতল ছোঁয়া পেতেই তার ঘুম পাতলা হয়ে এসেছে। ক্রমশ শীতল হাতটা যেন গভীর থেকে গভীরতর ভাবে তার গলা চেপে ধরছে। ঘুমের মাঝেই তার দম বন্ধ হয়ে আসছে। তৎক্ষণাৎ জোরে জোরে নিশ্বাস ফেলে নড়েচড়ে উঠলো সোহাগী।‌ ঘুমের মধ্যেই অস্ফুট স্বরে বললো,

— সাফিদ ভাই, আমি আর কোন দিনই আপনাদের ভিটায় পা রাখবো না। এবারের মতো ছেড়ে দেন।

ঘুমের ঘোরে বিরবির করে কথাগুলো শেষ করলো সোহাগী। মুহুর্তেই তার গলায় দু ফোঁটা উষ্ণ জল গড়িয়ে পড়লো! কেঁপে উঠলো সে। না আর চোখে বুঁজে থাকা যাচ্ছে না, আপনি আপনি তার চোখ জোড়া উন্মুক্ত হয়ে এলো। তার মানে এতোক্ষণ স্বপ্ন দেখেছে সে! মিনিট খানিক জোরে জোরে নিশ্বাস গ্রহণ করে, বিছানায় পেতে রাখা কাঁথা খামচে ধরলো। গলায় হাত দিতেই স্যাঁতস্যাঁতে পানির মতো তরল তার হাতের আঙুল গুলোতে চিপচিপ করে উঠে। হাল্কা গরম জল! তারমানে সত্যিই তার ঘরে কেউ এসেছিলো? মাথা ভনভন করছে। এখন অবধি কারো শীতল হাতের ভয়ঙ্কর ছোঁয়ার ধ্বক কাটিয়ে উঠতে পারছে না। ভয়ে সোহাগীর সারা গা কাঁটা দিয়ে উঠলো। ওই দূর জঙ্গল থেকে খ্যাঁক শিয়ালের ভয়ঙ্কর হুককা হুয়া ডাকের সঙ্গে একদল কুকুরের আর্তনাদ ভেসে এলো তার কর্ণকুহরে। যার দরুন সোগাগীর বুক কেঁপে উঠলো। মাথা তুলে দরজার দিকে দৃষ্টিপাত ফেললো। হ্যারিকেনের মৃদু হলদেটে আলোয় সবকিছু ঝাপসা, অপরিষ্কার দৃশ্যমান হলো। না, দরজা বন্ধ। তাহলে কেউ কী করে তার ঘরে প্রবেশ করবে! কিন্তু গলায় উষ্ণ জল! তার পাশে নাক স্বল্প স্বরে নাক ডেকে ঘুমাচ্ছেন তার নানী আমেনা। অতঃপর সাত পাঁচ না ভেবেই নানীর বাহুতে হাত রাখলো সোহাগী। স্বল্প ধাক্কা দিয়ে কাঁপা কাঁপা গলায় বললো,

— ও নানী, ও নানী, ওঠো না।

বার পাঁচেক ডাক দেওয়ার পর আমেনার সাড়া পেলো সোহাগী। তিনি চোখ বন্ধ অবস্থায় ঘুম জড়িত কন্ঠে বললেন,

— ওই ছেমরি ডাকিস কে? কি হয়ছে?

সোহাগী কাঁপা গলায় বললো,

— না,,নানি আমার মনে হচ্ছে কেউ ঘরে ঢুকেছিল।

— হোপ ছেমরি। কেরা আইবো এতো রাইতে? ঘুমা তো।

— সত্যিই নানি কেউ এসেছিলো।

— চুপ কইরা ঘুমা তো শেমরি। আমারে বিরক্ত করলে তোর কইলাম খবর আছে।

আমেনার ঝাঁঝালো গলা পেয়ে চুপসে গেল সোহাগী। ব্যাথিত মন নিয়ে গায়ের কাঁথা সরিয়ে, চৌকি থেকে নামলো। চৌকির নিচে থেকে হ্যারিকেনের বাতিটা এনে টেবিলের উপর রাখলো। মুহুর্তেই আলোর প্রখরতা স্বল্প বৃদ্ধি পেলো। গ্রামের প্রায়ই লোকের বাড়িতে বছর পাঁচ-সাতেক যাবত বিদ্যুৎ থাকলেও তাদের বাড়িতে নেই। বিষয়টা যন্ত্রনা দায়ের হলেই সাদরে গ্রহণ করতে হয়েছে তাকে। দীর্ঘশ্বাস ফেলে পুনরায় চৌকিতে গিয়ে শুয়ে পড়লো সোহাগী। হ্যারিকেনের নিভু নিভু অবস্থা। খানিকের মধ্যেই বোধহয় তেল ফুরিয়ে যাবে। কিছুক্ষণ আগের ঘটনা স্মরণ হতেই তার গলায় হাত চলে এলো আপনা আপনি। পরক্ষণে মনে পড়লো, আজ সন্ধ্যায় ঢল নেমেছে! শীতল পরিবেশ। টিনের ছিদ্র দিয়ে শো শো করে বাতাসের ঝাপটা সোহাগীর গায়ে এসে লাগছে। পায়ের নিচে থেকে কাঁথাটা টেনে গায়ে ছড়িয়ে নিলো সে। হঠাৎ খুব শীত করছে তার। ভয় কমাতে সোহাগী মনে মনে বললো,

— হাই রে হাই! সামান্য বৃষ্টির ফোঁটায় ভয় পেলাম আমি?

শেষোক্ত বাক্যটা দ্বারা নিজেকে প্রশ্ন করেও থেমে গেল। ফির মনে মনে বললো,

— তাহলে বৃষ্টির জল গরম কেন? তাছাড়া বৃষ্টি তো হয়েছিল সন্ধ্যায়। সেই বৃষ্টির জল কেনই বা মধ্যে রাতে টিনের ছিদ্র দিয়ে গড়িয়ে পড়েছে! না না, তেমন কিছুই হয়নি। যতসব দোষ ওই সাফিদ ভুঁইয়ার। সে কেন আমার স্বপ্নে এলো। এসেই গলা চে’পে ধরলো? সামান্য একটা আমের জন্য ঘুমের মাঝেই এতো বড় শাস্তি! বাস্তবে দেখলে নির্ঘাত শেষ। ছিঃ সোহাগী তুই তো এতো ভীতু না। কোন দিন যাকে সামনাসামনি দেখলি না তার কথা শুনেই স্বপ্নে দেখে ফেললি। লজ্জা পাওয়া উচিত তোর।

কথাগুলো মনে মনে ভেবেই খিলখিলিয়ে হেসে উঠলো সোহাগী। পরক্ষণে তার স্মৃতিতে ভেসে এলো আজ
ঘটে যাওয়া সাংঘাতিক দৃশ্যপট! স্কুল থেকে ফিরার পথে তার প্রাণ প্রিয় সঙ্গী আঁখি, রফিক, তামিম মিলে তাকে অদ্ভুত শর্ত দিয়ে বসেছিল। গ্রামের সবচেয়ে প্রভাবশালী ভুঁইয়া বাড়ির আম বাগান থেকে তাকে আম চুরি করতে হবে! আঁখি মেয়েটা ভীত স্বরে তাকে বলে,

— আপা ভুঁইয়া বাড়ির বড় ছাওয়াল অপরাধ পছন্দ করেন না।‌ যদি জানে তুমি চুরি করছাও তাইলে নিস্তার নাই!

সোহাগী প্রথমে ভেবেছিল সে আম চুরি করতে পারবে না। কিন্তু পরক্ষণে তামিম সোহাগী কে উস্কানি দিয়ে বলেছে,
— তুই ভীতু রে সোহা! তুই হাইরা গেছিস। জানি তোর দ্বারা কিচ্ছু হবো না মুটকি।

ব্যাস সোহাগীর মাথায় আগুন দাউদাউ জ্বলতে শুরু করে। সে ফুঁসতে ফুঁসতে ভুঁইয়া বাড়ির আম বাগানে এসে পড়ে। অতঃপর গাছে চড়ে দেয়াল পেরিয়ে বাগানে প্রবেশ করে। ওরা সবাই গাছের আড়ালে লুকিয়ে পড়ে। সোহাগী গাছে থেকে আম পেরে ওদের হাতে দিয়ে বলে,

— আমাকে আর হেরু বলবি না বুঝতে পেরেছিস? এ নে তোদের আম। লুকিয়ে না থেকে চল মাঠে যাই।

অতঃপর আমি হাতে করে মাঠে চলে এলো। সবাই তো আম দেখে পাগল প্রায় অবস্থা। ভুঁইয়া বাড়ির আম নাকি ভীষণ বিদেশি আম। তাই আম খাওয়ার জন্য সবাই ওত পেতে বসে থাকে। তাই বুদ্ধি করে সোহাগী কে দিয়ে আম পারিয়ে এনেছে।

তামিম স্কুল ব্যাগের ভেতর থেকে একটা পাত্র বের করে আম গুলো রাখলো। আঁখি আম গুলো কে’টে টুকরো টুকরো করার জন্য ব্লেট বের করলো। রফিক পকেট থেকে কাগজে মুড়ানো মসলা বের করে পাশে রাখলো। ওদের কান্ড দেখে সোহাগী কোমড়ে হাত রেখে তীক্ষ্ম কন্ঠে বলে উঠলো,

— কীরে রফিক তোরা তো দেখি পূর্ব প্রস্তুতি নিয়ে এসেছিস। আমাকে একবার ও তো বললি তো যে তোরা প্লেট, মসলা, আম কাঁটার জন্য ব্লেট ও নিয়ে আসবি ?

আঁখি বোকা হেসে জবাব দিল,

— আফা তোমারে যদি জিত না ধরাইতাম তাইলে তুমি আম লইয়া আইতা না। আমরা ইচ্ছা কইরা তোমারে আগে কই নি। আমি ব্লেট নিয়া আইছি আম কাঁটার জন্য। রফিক ভাই কাঁচা মরিচ আর লবণ নিয়া আসছে। আর তামিম ভাই প্লেট নিয়া।

সোহাগী রফিক এবং তামিমের দিকে গরম চোখে তাকাতে ওরা হেসে দিল। সোহাগী চাপা গলায় বললো,

— আমার কাছে লঙ্কা, নুন, ধনিয়া পাতা আর প্লেটটা দে। আমি কে’টে মাখিয়ে দিচ্ছি।

অবশেষে সোহাগী আম ছিলে কুঁচি কুঁচি কা’টল। মরিচ, ধনিয়া পাতা কুঁচি করে কে’টে লবণ দিয়ে মাখিয়ে নিল। সবকিছু একত্র করে হাত দিয়ে ভর্তার মতো করতেই ঘ্রাণে ম ম করে উঠলো চারপাশ। কাঁচা আমের সঙ্গে মরিচ কুঁচির সুমিষ্ট ঘ্রাণে জিভে জল চলে এলো আপনি আপনি। ইশ! শুকনা ঢোক গিললো সোহাগী। মাখানো শেষ হতে না হতেই রফিক, তামিম থাবা মে’রে খেতে শুরু করলো। আঁখি গাল ভর্তি জল নিয়ে দাঁত চেপে সোহাগী কে বলে উঠলো,

— আপা, আম তো মনে হইতেছে মেলা টক! ধুয়ে মাখাইলে টক ও কমতো আবার কালা কালা কষ বাইর হইতো না।

— ঠিক বলেছিস আঁখি, কিন্তু আম ধুতে হলে আর ও দুই মাইল হেঁটে নদীর পাড়ে যেতে হতো। এমনেই বাগানের এই‌ দিকটা তে আসা উচিত হয় নি। আম্মা জানলে আমাকে আস্ত রাখবে না।

— দূর এসব বাদ দে তো সোহা! আই তুই ও খাওয়া শুরু কর। আহ! এতো টক আম আমি কখনোই খাই নাই। মেলা মজা।

মুচকি হেসে খাওয়া শুরু করলো সোহাগী। আম মুখে দিতেই চোখ মুখ কুঁচকে এলো। ঝাল এবং টকের প্রভাবে মুখ দিয়ে অদ্ভুত শব্দ বেতের হলো। তৃপ্তি এবং আনন্দ নিয়ে ঝালে শুসাতে শুসাতে খাওয়া শেষ করলো সবাই। সবকিছু ঠিকঠাক চললো। কিন্তু হঠাৎ বাড়ি ফেরার পথে রফিক ভীত স্বরে বলে,

— আমার না ডর করতেছে সোহা! এই আম বাগানের মালিক সাফিদ ভুঁইয়া গঞ্জে থাইকা কাল গ্রেরামে আইব। হে নাকি অনেক রাগী। কেউ অপরাধ করলে তারে ছাইরা দেই না। আমাগো গ্রেরামের সাফিউল কাকা কয়েক দিন আগে ভুঁইয়া বাড়ি থাইকা কী যেন চুরি করছিল। তারে সাফিদ ভুঁইয়া এমন শাস্তি দিছে যে এক মাস গঞ্জের হাসপাতালে ছিল। সবাই কয় ভুঁইয়া বাড়িতে বিদেশি ক্যামেরা সেট করা। কাল রাতে আব্বায় আমারে তার কতা কইছে।

ব্যস এইটুকু যথেষ্ট! তখন থেকেই ভয় এসে জেকে বসেছে সোহাগী অন্তরে। রাতের বেলা সাফিদ ভুঁইয়া কথা ভেবে ঘুমাতে পারে নি।

স্বপ্নের চিন্তা ঝেড়ে ফেলে কাঁথা মুড়ি দিয়ে চোখ বন্ধ করলো সোহাগী। দূর, এসব এখন তাকে মাথা থেকে ঝেড়ে ঘুমতে হবে! সোহাগী চোখ বন্ধ করে ভাবলো কাল বিকেলে একবার বন্ধুদের নিয়ে বাগানের পিছনের জঙ্গলের যাবে।
_________________________

বারান্দায় শক্ত কাঠের চৌকির উপর বসে উদাসীন হয়ে বসে রয়েছেন রাশেদ।‌ হাতে চায়ের কাপ। ইদানিং তার শরীর মোটেও ভালো যাচ্ছে না। রোজ এই সময়ে ভ্যান নিয়ে গঞ্জের দিকে পা বাড়ান। কিন্তু আজ পেটে ব্যথাটা চড়ে বসেছে। তার পাশে হাত পাখা ঘুরাচ্ছেন আমেনা। রাশেদ কে কিছু বলার জন্য উৎসুক করছেন তিনি। তার মুখশ্রীতে চিন্তার প্রাদুর্ভাব ঘটেছে! হঠাৎ আমেনা আমতা আমতা করে রাশেদ কে বললো,

— জামাই, একখান কথা কই।

চৌকিতে চায়ের কাপটা রাখলেন রাশেদ। দীর্ঘশ্বাস ফেলে শাশুড়িকে বললেন,

— বলেন আম্মা। কিছু লাগবে আপনার? গ্যাসের ঔষধ শেষ হয়ে গেছে?

আমেনা নিজেকে ধাতস্থ রেখে বললেন,

— না না আব্বা কিছু লাগবো না। আমি কইতে চাইছিলাম কি যে, আমাগো সোহা তো বড় হইছে। তাই বাজান আর কয় দিন মাইয়া ডারে ঘরে রাখবা? আমি কই এবার ওর বিয়ের কথা মাথায় আনো।

আমেনার কথার প্রেক্ষিতে শীতল দৃষ্টিতে তার দিকে তাকালো রাশেদ। ঠান্ডা স্বরে জবাব দিল,

— আম্মা মেয়ে টা আমার। ওকে আমি পড়ালেখা করাতে চাই। আমার স্বপ্ন ছিল পড়ালেখা করা কিন্তু তা অভাবের তাড়নায় তা পূরণ করতে পারি নি। আমি চাই সোহা আমার স্বপ্ন পূরণ করুক। তাছাড়া মেয়েটা বয়স ই বা কতো! মাত্র চৌদ্দ তে পা রাখলো। এসব বাদ দিন আম্মা।

রাশেদের কথা শেষ হতেই শাক পাতা বাছা ছেড়ে উঠে দাঁড়ালো সোহানা। খোলা আকাশের নিচে শাক বাছতে বসেছিল রাশেদের স্ত্রী সোহানা। এতোক্ষণ আমেনাকে কথা বলতে দেখে চুপ করে থাকলেও এবার যেন রাশেদের উত্তর পেয়ে তার মাথায় আগুন ধরে বসলো। রাশেদের মুখোমুখি দাঁড়িয়ে কর্কশ কন্ঠে বললেন,

— দেখো সোহার বাপ, আমি কিছু হুনতে চাই না। ওই ছেমরির পিছনে কতো খরচ হয় গুনছ একবার? আজ ও বাড়ি চাল নাই কোন তরকারী ও নাই। আমার ছাওয়াল কবে থাইকা মুরগি খামু বইলা কানতেছে আর তুমি বাপ হইয়া ভুইলা গেছো। খালি সোহাগী সোহাগী করতে আমার মাথা খাইয়া হেলাও। তোমার কী একটাও মাইয়া!

রাশেদ স্ত্রী কথা শুনে নরম স্বরে বললেন,

— এখনো ওর বিয়ের বয়স হয় নাই সোহানা। আমি ভ্যান চালক হতে পারি কিন্তু তোমার মতো মূর্খ না। সোহাগীর খরচ নিয়ে তোমাকে ভাবতে হবে না। প্রাপ্ত বয়স্ক হওয়া আগ পর্যন্ত আমি সোহার বিয়ে দিব না।

— এখন মাইয়া বিয়া না দিলি যহন কেলেংকারি ঘটাব তহন বুঝবা। এতো ঢং কইরা আমার সামনে কথা কইবা না। ছোট বেলায় কলকাতার থাকছ বাইলা ভাব নিবা না। মাইয়াডাও তোমার মতো কথা কয়। তোমাগো ভাষা শুনলেই আমার গা গতর জ্বইলা যাই।

সোহানার কথাগুলো গুরুত্ব না দিয়ে, চৌকি থেকে উঠে দাঁড়ালেন রাশেদ। আর এতো ঝামেলা তার ভালো লাগছে না! সোহানার চিৎকার চেঁচামেচি উপেক্ষা করে, দ্রুত ভ্যানের গাড়িতে চেপে বসলেন রাশেদ। চাকা ঘুরানোর পূর্বে আমেনা কে জিজ্ঞেস করলেন,

— আম্মা সোহা কই?

আমেনা বেগম কাঁপা স্বরে বললেন,

— ইস্কুলে গেছে।

______________________

ঘড়ির কাঁটায় ছুঁই ছুঁই চার। মনমরা হয়ে শিউলি গাছের তলে বসে রয়েছে সোহাগী। স্কুল ছুটি দিতেই রফিক, তামিম, আঁখি সবাই যার যার বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা দিয়েছে। কিন্তু তাদের বিদায়ে মোটেও সন্তুষ্ট না সোহাগী। সে আজ গ্রামের পূর্ব দিকে অবস্থিত জঙ্গলে ভেতরের নদী দেখতে যেতে চেয়েছিল। তাদের চৌদদি ডাংগি গ্রামে একটা মাত্র নদী। মানুষ জন জঙ্গলের ভেতরে যাই না বললেই চলে। সেই নদীতে মাছ পাওয়া যায়। দুই মাস যাবত সোহাগীদের হাঁড়িতে মাছ চাপানো হয় না। ইতোমধ্যে তার ছয় বছরের ছোট ভাই মাছ খাওয়ার বায়না ধরেছে। তাই সোহাগী বড় ইচ্ছে নিয়ে এসেছিস নদীতে গিয়ে মাস ধরবে। কিন্তু রফিকরা তার সঙ্গে যেতে রাজি হয় নি উল্টো তার মনে ভয় তৈরি করে দিয়েছে। তামিম যাওয়ার পূর্বে তাকে সাবধান করে দিয়ে গিয়েছে।

— দেখ সোহা ওই জঙ্গলে ভয়ঙ্কর জন্তু থাকে। আব্বাই কইছে ওই জঙ্গলে যাওনের কথা যেন কস্মিনকালেও মাথায় না আনি। তুই বাড়ি যা গা।

তামিমদের সতর্কতা সোহাগী কে ভীষণ ব্যথিত করে তুলেছে। ইশ! তার ভাইয়ের ইচ্ছেটা সে পূরণ করতে পারলো না। দীর্ঘশ্বাস ফেলে উঠে দাঁড়ালো সোহাগী। চারপাশ নির্জন পরিবেশ। এই পথে বিকেলে পর মানুষের আনাগোনা খুব কম। ইতোমধ্যে আকাশ লালভ বর্ণ ধারণ করে উঠেছে। না, আর এই পথে থাকাটা তার ঠিক হবে না। সোহাগী ব্যাগ কাঁধে নিয়ে পা চালালো। কিছু পথ অতিক্রম করতেই তার মনে হলো কেউ তার পিছু পিছু হাঁটছে। সোহাগী এক বুক সাহস নিয়ে দ্রুত হাঁটতে লাগলো। কিন্তু তার আর রেহাই হলো না। হঠাৎ কেউ একজন সোহাগীর হাত টেনে ধরলো। শক্ত হাতের বন্ধনে নিজেকে ছাড়াতে ব্যর্থ হলো সে। মুহুর্তেই লোকটার কন্ঠস্বর পেয়ে, সোহাগীর বুক কেঁপে উঠলো।

— এই আদরীনি দাঁড়া তো।
(চলবে?)

#সোহাগী
#সূচনা_পর্ব

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here