স্ত্রী পর্ব -০৩

#স্ত্রী
পর্বঃ ৩
লেখিকাঃ #তাওহীদা
.
রাত ২ টা! জিনাত বাসর ঘরে বসে আছে।রুমের দেয়াল আর খাট রজনীগন্ধা আর গোলাপ দিয়ে সাজানো।রজনীগন্ধ
া জিনাতের প্রিয় ফুল।কিন্তু আজ এই রজনীগন্ধার ঘ্রান ওর কাছে চরম বিরক্তিকর লাগছে।ওর শুধু মনে হচ্ছে,,আজ ওর সব শেষ হয়ে যাবে একটা গুন্ডার হাতে,,সেই সাথে ওর স্বপ্ন, ওর ভবিষ্যৎও চিরতরে গহীন অন্ধকারে তলিয়ে যাবে।এই কথা ভাবছে,,আর ওর চোখ থেকে টপটপ করে পানি গড়িয়ে পরছে।
হঠাৎ দরজা খোলার আওয়াজ হলো।কিন্তু জিনাত ফিরেও দেখলো না।আগের মতো মাথা নিচু করে খাটের এককোনে পা নামিয়ে বসে আছে।রায়ান ঘরে ঢুকে দরজা বন্ধ করে দিলো।দেখলো, কাদছে জিনাত।
রায়ান কি বলবে বুঝতে পারছে না।জিনাতকে তখন ওই সাজে দেখার পর থেকেই রায়ানের মাঝে কেমন যেনো একটা ঘোর লাগা কাজ করছে।কেমন একটা অচেনা অনুভূতি হচ্ছে,,যা আগে কখনো হয় নি।তাই জিনাতকে জোর করে বিয়ে করলেও,,এখন ওর সাথে কথা বলতে একটু সংকোচ হচ্ছে। বেশ কিছুক্ষণ ও এভাবে দাড়িয়ে রইলো।তারপর আলমারি থেকে ট্রাউজার আর টিশার্ট বের করে চেঞ্জ করে নিলো।
রায়ান দেখলো তখনও জিনাত মাথা নিচু করে নিঃশব্দে কেদেই যাচ্ছে।একবারো ওরদিকে ফিরেও চাইছে না।
-এহেম এহেম,,,,তোমার বাবা, মাকে ছেড়ে দেয়া হয়েছে।তারা সুস্থ শরীরেই আছেন।আমার ছেলেরা ওখান থেকে চলে এসেছে।(শান্ত গলায় বললো রায়ান)
এই কথা শুনেও জিনাত রায়ানের দিকে তাকালো না।আগেই মতোই চোখের পানি ফেলতে লাগলো।
রায়ানের মেয়েদের এই কান্নাকাটি বরাবরই ফ্যাচফ্যাচানি ন্যাকামি মনে হয়।মোটকথা মেয়ে মানেই ওর ঢংগী,ন্যাকা মনে হয়।তাই ও সবসময়ই মেয়েদের থেকে দূরেই থাকতো।তাই তখন থেকে জিনাতের এই কান্নাকাটি, এখন ওর চরম বিরক্তি লাগছে।
–সেই তখন থেকেই তো কেদেই চলেছো,,,এতো চোখের পানি ফেলে কি কিছু বদলাতে পারবে?তারচেয়ে যা হয়েছে, তা মেনে নাও,এতেই সবার মঙ্গল।
রায়ানের এই কথা শুনে জিনাতের চোখমুখ শক্ত হয়ে গেলো। ও চোখের পানি মুছে রাগি চোখে রায়ানের দিকে তাকালো।
–মেনে নেবো!!আপনার মতো একটা অসভ্য, চরিত্রহীন,দাগি আসামিকে আমি মেনে নেবো,তা আপনি ভাবলেন কি করে?
–এই এই,,খবরদার অসভ্য,চরিত্রহীন বলবে না,,,আমি যা না,,আমাকে কেউ তা বললে আমি মোটেও সহ্য করি না।
–কি বললেন,,আপনি অসভ্য চরিত্রহীন না!যেই লোক একটা মেয়েকে এভাবে জোর করে,তুলে নিয়ে গিয়ে বিয়ে করে, তার চরিত্র ঠিক আছে আপনি বলতে চান?
চরম অসভ্য আপনি,,লম্পট, চরিত্রহীন!!
এই শুনে রায়ানের মাথা গরম হয়ে গেলো।ও খপ করে জিনাতের চুলের মুঠি ধরে আগুন ঝরা দৃষ্টি নিয়ে বললো,,
মুখ সামলে কথা বল।আমার মটকা গরম করবি না,,নয়তো কথা বলার জন্য আর মুখটাই থাকবে না।আজ পর্যন্ত কেউ এই রায়ানকে চরিত্রহীন বলতে পারে নি।আর তুই কিনা আজ এসে আজই আমায় কথা শুনাচ্ছিস!!
-কেউ বলতে পারেনি,,কারণ আপনি সবার মুখ বন্ধ করে রেখেছেন।কিন্তু আমার মুখ বন্ধ করতে পারবেন না।আমি বারবার বলবো,,আপনি একটা চরম খারাপ দুশ্চরিত্র মাস্তান!!!
ঠাসসসসসস,,,,
রায়ান কষে একটা থাপ্পড় লাগালো জিনাতের গালে।থাপ্পড়টা জিনাতের গালের নিচের দিকে এতো জোরে লাগলো যে,,সাথে সাথে ওর ঠোঁট ফেটে রক্ত পরতে লাগলো।রায়ান ওদিকে খেয়াল না করে একহাত দিয়ে জিনাতের গাল চেপে ধরে বললো,,,,
-যদি দুশ্চরিত্রই হতাম,তবে তোকে বিয়ে করতাম না,,তুই আর তোর বাপ যা কান্ড করেছিস,,যেভাবে আমার মাকে অপমান করেছিস,,তাতে তোকে রেপ করে ছেড়ে দিতাম। বুঝেছিস!!
এই বলে রায়ান ওকে ধাক্কামেরে ছেড়ে দিলো।
থাপ্পড় খেয়ে জিনাতের মাথা ভনভন করতে লাগলো।এতে ওর রাগ আরো বেরে গেলো।
-বর্বর, জানোয়ার,অমানুষ,,, লজ্জা করেনা আমাকে এভাবে জোর করে বিয়ে করে আবার বড়ো বড়ো কথা বলছিস তুই!!তুই আমার সব শেষ করে দিলি,,আমার ভবিষ্যৎ ধ্বংস করে,আমার জীবনটা নষ্ট করে এখন নিজেকে চরিত্রবান বলিস,জানোয়ার!!(
কান্না করতে করতে চিৎকার করে বললো জিনাত,,রাগে,দুঃখে কি বলছে ও নিজেই জানে না।)
জিনাতের মুখে এমন,, গালিগালাজ আর তুইতোকারি শুনে রায়ানের মাথায় যেনো আগুন ধরে গেলো।এবার ও ধাক্কা দিয়ে জিনাতকে বিছানায় ফেলে ওর দুহাত চেপে ধরে বললো,,, তোর তেজ এতো সহজে কমবে না,,,অসভ্য, চরিত্রহীন বলিছিলি না আমাকে?এখন দেখ অসভ্য কাকে বলে!
এতোক্ষণে জিনাতের হুস আসলো।
-আ,আ,আমার ভুল গিয়েছে,, ক্ষমা করে দিন আমাকে,, আমি আর এভাবে বলবো না,,প্লিজ ছেড়ে দিন আমাকে,,ছেড়ে দিন।কাদতে কাদতে বললো জিনাত।কিন্তু অনেক দেরি হয়ে গিয়েছে।রাগের মাথায় রায়ানের মাঝে যে আগুন লাগিয়েছে জিনাত,,সেই আগুনে তো তাকে পুড়তে হবেই।
১ ঘন্টা পরে,,
জিনাত এলোমেলো হয়ে বিছানায় পরে আছে অজ্ঞান হয়ে।
রায়ান বেলকনিতে দাড়িয়ে সিগারেটের ধোয়া উরাচ্ছে।ভীষণ বিরক্তি লাগছে ওর,,কার উপর তাও জানে না,,নিজের উপর নাকি জিনাতের উপর। কোনোদিন কোনো মেয়েদের ধারেকাছেও যায় নি,,রায়ান।আর সেই রায়ানকে এতো বাজে কথা শোনালো জিনাত।এই ভেবে এখনো জিনাতের উপর রাগ হচ্ছে ওর।আবার রাগের মাথায় এমন অমানুষের মতো কাজ করায়, নিজের উপরেও রাগ হচ্ছে রায়ানের।বেশকিছুক্ষণ পরে রুমে ফিরে,,
রায়ান দেখে জিনাত এখনো অজ্ঞান হয়ে আছে।ও জিনাতের কাছে গিয়ে বসে।করুন দৃষ্টিতে তাকায় ওর দিকে।ঠোটের বাম পাশটা কেটে ফুলে আছে।বাম গালে পাচ আঙুলের দাগ রক্তবর্ন ধারন করে আছে।
সুন্দর মুখখানায় যন্ত্রনার ছাপ স্পষ্ট ।
এতোদিন রায়ানের ওর কোনো কাজের জন্য অনুশোচনা হয়নি,,,কিন্তু আজ হচ্ছে।কেনো মাথা গরম করে ওর উপর টর্চার করলো।ওর আরো ধৈর্য ধরা উচিত ছিলো।
এসব ভাবতে ভাবতে রায়ান জিনাতকে ঠিকভাবে শুইয়ে দিলো।রুমে এসি চলছিল। জিনাতের হাত পা ঠান্ডা হয়ে গিয়েছে।তাই ও জিনাতের গায়ে চাদর টেনে দিলো।তারপর নিজে ওর পাশে শুয়ে পরলো।খুব ক্লান্ত লাগছে ওর।

সকাল ৬ টা,,,
পাখিদের কিচিরমিচির আওয়াজ পাওয়া যাচ্ছে।সকালের প্রথম রোদের আলো জানালার কাচ ভেদ করে জিনাতের মুখে এসে পরলো।আস্তে আস্তে চোখ খুললো ও।হঠাৎ চোখ খুলে বুঝতে পারলো না, ও কোথায় আছে,,কিন্তু পাশ ফিরতেই ঘুমন্ত রায়ানকে দেখেই ধরফর করে উঠে বসলো ও।রাতের কথা মনে হতেই জোরে কান্না শুরু করলো ও।ওর শুধুই মনে হচ্ছে ওর জীবন, স্বপ্ন, ভবিষ্যৎ, পড়াশোনা সব শেষ হয়ে গেলো ,, সব,,,,
এখন ওর একমাত্র পরিচয়, ও এই শহরের সবচেয়ে বড়ো গুন্ডার স্ত্রী।যার কোনো সামাজিক মর্যাদা নেই।সমাজের চোখে সেও এখন ঘৃন্য।(চলবে)
প্লিজ এতো দেরী কেনো,ছোটো কেনো,, এসব বলবেন না।আমি ইচ্ছে করে দেরি করি না।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here