#স্বপ্নের_প্রেয়সী_সিজন_2
#ফাতেমা_তুজ
#part_31
বিরিয়ানি রান্না প্রায় শেষের পথে। ফারহানের কেন জানি মেয়েটাকে জ্বালাতে ইচ্ছে হচ্ছে।
ফারাবি কড়া নজরে বিরিয়ানি দেখছে। ফারহান এই প্রথম ওর জন্য রান্না করলো। মনের ভেতরে কেমন জানি অনুভূতি হচ্ছে।
ফারহান বেশ কিছুক্ষণ ভেবে নিজের মনের দমিয়ে রাখা ইচ্ছে টা পূরন করেই ফেললো।
ফারাবির কানে সুরসুরি দিতে লাগলো ।
ফারাবি বিরক্তি তে চোখ মুখ কুঁচকে নিলো। ফারহান মেকি হাসি দিলো । ফারাবি বোকার মতে চেয়ে রইলো। ফারহান বিরিয়ানি নাড়তে নাড়তে বলল
_ কি হয়েছে এমন করে তাকিয়ে আছিস কেন ?
_ আপনি একটু আগে এটা কি করলেন?
_ আমি ? মাথা ঠিক আছে ফারাবি।
ফারহান ফারাবির মাথায় হাত দিয়ে বলল
_ কই না তো , জ্বর তো নেই। কি সব আবোল তাবোল বকে যাচ্ছিস।
_ আমি আবোল তাবোল বকছি ?
ফারহান বাঁকা হেসে বলল
_ তা নয়তো কি ? আমি উল্টো পাল্টা কিছু বলছি ?
_ ফারহান ভাইয়া আপনি
_ হোয়াট দ্যা ফারহান ভাইয়া? আমি তোর ভাই ?
ফারাবি ফিকে হেসে বলল
_ হ্যাঁ অবশ্যই আমি তো সব সময় ফারহান ভাইয়াই বলেছি।
_ স্টুপিট । বর কে ভাই বলতে লজ্জা করে না ?
_ ভাই কে ভাই বলেছি লজ্জা কেন করবে?
তাছাড়া আপনি সব সময় ই আমার ভাই ছিলেন আর থাকবেন ওহ।
ফারাবি রাগিয়ে দিচ্ছিস কিন্তু।
ফারাবি হেঁয়ালি পানা করে বলল
_ আমি ?
_ হ্যাঁ তুই।
_ কখন কবে , আর কিভাবে।
ফারহান দাঁতে দাঁত চেপে বলল
_ ওরে দুষ্টু আমার সাথে দুষ্টুমি করিস।
ফারাবি ফিক করে হেসে দিলো। ফারহান ঘড়িতে টাইম দেখে বলল
_ অনেক দেরি হয়ে যাচ্ছে। তাড়াতাড়ি চল খিদে পেয়েছে।
ফারাবি মাথা ঝাঁকিয়ে খাবার, দুটো প্লেটে বেরে নিলো। ফারহান ভ্রু কুঁচকে বলল
_ দুটো প্লেট কেন ? আমাকে তুই খাইয়ে দিবি আজ।
_ আমি ? আপনি কি বাচ্চা নাকি ?
_ তো কি হয়েছে ? বাচ্চা নই তো দুদিন পর বাচ্চার বাবা হবো।
_ আপনি
_ প্লিজ জান।খিদে পেয়েছে আমার।
ফারাবি আর কথা না বাড়িয়ে একটা প্লেট এ খাবার বেড়ে নিলো।
নিজ হাতে ফারহান কে খাইয়ে দিলো। ফারহান আজ দুষ্টুমির চরম পর্যায়ে। ফারাবির হাতের আঙুলে কামড় দিচ্ছে না হলে ফারাবি কে সুরসুরি দিয়ে যাচ্ছে।
ফারাবি দাঁতে দাঁত চেপে তা সহ্য করে যাচ্ছে।
*
ফারহানের বুকে মাথা রেখে শুইয়ে আছে ফারাবি।
ফারহান তার শক্ত পোক্ত হাতে ফারাবির মাথায় হাত বুলিয়ে যাচ্ছে।
ফারহান নীরবতা ভেঙে বলল
_ আমাদের জীবনের নতুন অধ্যায় শুরু করার জন্য কোনো স্পেশাল ডেকোরেশনের দরকার আছে ফারাবি ?
_ বুঝি নি ।
_ তুই কি ক্লান্ত ?
_ উহুহহ। আপনি এমন এতো ভেবে কথা বলছেন কেন ?
_ তোর ইচ্ছের দাম আছে আমার কাছে। আমি চাই না আমার একার ইচ্ছে তে
ফারাবি হাত কঁচলাতে লাগলো। ফারহান মৃদু হেসে বলল
_ ঘুমিয়ে পর।
ফারহান চোখ বন্ধ করে নিলো।ফারাবির ঘুম আসছে না। প্রচন্ড দ্বিধা তে ভুগছে ওহ। আসলে নিজেকে ফারহানের কাছাকাছি ভাবতেই ওর লজ্জা লাগছে।
বেশ কিছুক্ষণ দ্বিধা দ্বন্দ্ব কাটিয়ে হালকা হাতে ফারহান কে ধাক্কা দিলো।
ফারহান নিজে ও ঘুমোয় নি। ফারাবির দিকে তাকিয়ে বলল
_ ঘুমাস নি কেন ? শরীর খারাপ করবে।
ফারাবি মাথা নিচু করে থেকে ফারহানের টি শার্ট এর বা হাতা ধরে বলল
_ আসলে আমি বলছিলাম যে না মানে
_ কি হয়েছে? শরীর খারাপ লাগছে?
_ নাহহ মানে।
_ কিহহ
_ পানি খাবো ।
ফারহান বিনাবাক্যে ফারাবি কে পানি এগিয়ে দিলো।
ফারাবি ঢকঢক করে পানি গিলে নিয়ে বলল
_ আপনি যেটা বলছিলেন আমি ও সেটাই বলছিলাম।
ফারহান বেশ কিছুক্ষণ ভ্রু কুঁচকে রইলো। বিষয় টা বুঝতে পেরে বলল
_ ইটস ওকে জান । আমার কোনো তাড়া নেই। এখন কোনো কথা না তুই ঘুমোবি।
ফারহান ফারাবি কে বুকে টেনে নিয়ে চোখ বন্ধ করে রইলো। বেশ কিছুক্ষণ পর ফারাবি আবার বলল
_ আমি সত্যি ই চাইছিলাম।
ফারহান এক গাল হেসে ফারাবি কে আর ও শক্ত করে জড়িয়ে বলল
_ সমস্যা নেই জান।
আমি খুব সভ্য নই , আজ ছেড়ে দিলাম। কাল নিজের করে নিবো ।
আর একটা কথা ও না।
_ আপনি কষ্ট পেয়েছেন ?
ফারহান বাঁকা হেসে বলল
_ আমার দায়িত্বশীল বউ চাই না ফারাবি। আমি তোকে তোর মতো করে চাই।
স্বামীর ইচ্ছে রাখার জন্য নিজেকে বোঝাচ্ছিস কেন জান ?
তুই আমার হয়ে গেছিস অনেক আগেই।
ফারাবি মৃদু হাসলো। ফারহান তার উষ্ণ ঠোঁটের স্পর্শ দিতে ফারাবি শিউরে উঠে। ফারহান বিগলিত হেসে বলল
_ যাবি ঘুরতে ? বাইকে করে লং ড্রাইভে ?
ফারাবি চকচকে চোখে তাকিয়ে বলল
_ সত্যি?
ফারহান হেসে বলল
_ যাবি তাহলে ?
ফারাবি মাথা ঝাঁকায় । ফারহান ফারাবি কে পেছন থেকে জড়িয়ে গলায় নাক ঘষতে ঘষতে বলল
_ তাহলে আজ আমি লিপস টু লিপস নিবো।
ফারাবি কেঁপে উঠে। ফারহান তার হাতের বিচরন করে ফারাবি কে নিজের সাথে মিশিয়ে নেয়।
ফারাবির সমস্ত অঙ্গে শিহরন জেগে যায়। ফারহান তার অধরের ছোঁয়া ফারাবির অধরে দিয়ে দেয়।
ফারাবি চোখ বন্ধ করে নেয় ।সাথে গড়িয়ে যায় এক ফোঁটা অশ্রু জল।
ফারহান নাকের সাথে নাক লাগিয়ে বলল
_ এটাকে ভালোবাসা বলে জান। এটাকে সুখ বলে আমি তোকে পরিপূর্ন ভাবে ভালোবাসতে চাই।
আমার ইচ্ছে আমি তোর উপর খাটাতে চাই না জান ।
ফারাবি ছলছলে নয়নে তাকিয়ে ফারহান কে জড়িয়ে ধরে।
মনে মনে প্রতিজ্ঞা করে সে তার সমস্ত দিয়ে ফারহান কে ভালোবেসে যাবে।
মন কে জোড় দিয়ে নয় ভালোবাসার জোড় দিয়ে।
ফারহান কে জড়িয়ে আজ প্রকৃতির হাওয়া গায়ে মাখবে।
দুজনে যাবে বাইকে করে লং ড্রাইভে।
#স্বপ্নের_প্রেয়সী_সিজন_2
#ফাতেমা_তুজ
#part_32
রিফাত মনিকার সাথে ফোনে কথা বলছে। আজ কে ঘটে যাওয়া সব কিছু শুনে মনিকার মন টা খারাপ হয়ে গেল।
রিফাত আশ্বস্ত করে বলল
_ আমি জানি ফারহান কিছু একটা করবেই। প্রথম থেকেই রিক কে আমার পছন্দ না।
কিন্তু ছোট মা কে যেভাবে ব্রেন ওয়াস করেছে মামা মামি এতে আমার মনে হয় না এতো সহজে কিছু হবে।
মনিকা চিন্তিত স্বরে বলল
_ ফারহান ভাইয়া কেন এমন টা করেছে কিছু জানতে পেরেছো ?
হঠাৎ ঐ ভাবে কেন বিয়ে করলো ?
_ আমি ঠিক জানি না। তবে ফারাবি নিশ্চয়ই কিছু করেছিলো যার জন্য ওহ ইনসিকিউর ফিল করেছে।
আর মেয়েটাকে জোড় করেই বিয়ে করেছে।
মনিকা ক্লান্তির নিশ্বাস ফেলে বলল
_ হ্যাঁ সে যাই বলো।
ফারাবির জন্য ফারহান ভাইয়া ই তো বেস্ট।
দেখো ওকে কতোটা ভালোবাসে। ছোট আন্টি ফারাবির গায়ে হাত তুলে ঠিক করেন নি।
আচ্ছা তোমার তখন কি করছিলে ঘোড়ার ঘাস তো নিশ্চয়ই কাটছিলে না।
আন্টি কে আটকাতে পারলে না ?
_ উফফ মনিকা আমরা কি ভেবেছিলাম নাকি ?
ছোট মা হঠাৎ করে যা করলো , ছোট আব্বু ও রেগে আছে।
তবে অভিমানের পাল্লা ভারী হয়ে গেছে।
মামা মামি কে কথা দিয়েছিলেন। তবে এখানে আমি পুরোপুরি কারো ই দোষ দিতে পারছি না।
মনিকা ফোঁস করে দম ফেলে বলল
_ ফারহান ভাইয়ার আগেই সব কিছু সামলানো উচিত ছিলো।
সব কিছু তো জানতে পেরেছিলোই তাহলে তখনি কেন আসলো না।
_ এটা আমি জানি। ফারাবি কখনোই ফারহান কে মেনে নিতো না।
কারন ওহ সব সময় ফারহান কে বকেই গিয়েছে অপছন্দ করতো।
আর জোড় করে বিয়ে করার পর নিশ্চয়ই ঘৃনা করতো।
তবে কিছু টা দূরত্ব ওর মন কে আঘাত করেছে। ফারহানের মায়ায় পরে গেছে। আর ফারহান এসেছে যখন তখন ফারাবি কে মানিয়ে নিয়েছে।
আম সিউর এবার জোড় করে নি।
_ কিভাবে বুঝলে ?
_ ফারহান যখন নিজের উপর দোষ নিচ্ছিলো ফারাবি বার বার আটকাচ্ছিল।
কিন্তু ফারহান তো ফারহান ই যাই হোক আমি হ্যাপি কারন আমার বোন সুখী হবে।
_ হ্যাঁ এবার সব কিছু ঠিক হওয়ার পালা। আচ্ছা শোনো না
_ হুমম বলো।
_ রিক ভাইয়ার বিষয়ে একটু খোঁজ নাও।
দেখো কোনো ডিফেক্ট পাও কি না। তাহলে সহজ হয়ে যাবে।
রিফাত কিছুক্ষণ ভেবে বলল
_ আচ্ছা দেখি কি করা যায়
তারপর আর ও কিছুক্ষণ কথা বলে ফোন রেখে দিলো রিফাত।
রাত অনেক টা পানির বোতলে পানি নেই।
তাই রিফাত করিডোর দিয়ে কিচেনের দিকে আসতে লাগলো।
ফারাবির মায়ের ঘরের কাছে এসে থমকে গেল।
ফারাবির বাবা রেগে রেগে কথা বলছেন। ফারাবির মা অঝরে কেঁদে যাচ্ছেন। তার কথা হলো তার ভাই কে তিনি কথা দিয়েছিলেন।
সব শেষ হয়ে গেল । ভাইয়ের সাথে সব সম্পর্ক তার নষ্ট হয়ে গেল।
রিফাত আর শুনতে পারলো না। দ্রুত গতিতে স্থান ত্যাগ করলো।
খুব খারাপ লাগছে ওর। কিন্তু এখন কি উপায় ?
কি করে সব ঠিক হবে ?
*
সা সা করে বাতাস বইছে। সোডিয়ামের আলো তে মোহনীয় চার পাশ। সবাই যে যার মুহুর্ত উপভোগে ব্যস্ত। পাখির সাড়াশব্দ ও পাওয়া যাচ্ছে না।
কি অপূর্ব সুন্দর এক অনুভূতি। ফারহান কে পেছন থেকে শক্ত করে জড়িয়ে আছে ফারাবি।
ফারহান অধর কোনে মৃদু হাসি ফুটিয়ে বাইক চালাচ্ছে।
বাতাসে ফারহানের স্লিকি চুল গুলো উড়ছে। ফারাবির এক অদ্ভুত ভালো লাগা কাজ করছে।
ফারহানের পিঠে মাথা রাখলো ফারাবি ।
ফারহান ঝরা হেসে বলল
_ একটা জায়গায় যাবি ?
_ আচ্ছা।
_ জিজ্ঞেস করবি না কোথায় ?
_ উহুহ
_ কেন ?
_ আপনার উপর বিশ্বাস আছে আমার।
_ এতো বিশ্বাস ভালো নয় ফারাবি।
ফারাবি মৃদু হাসলো। ফারহান রহস্য হেসে বলল
_ আচ্ছা তাহলে যাওয়া যাক।
ফারহান বাইকের গতি বারিয়ে দিলো । ফারাবি চোখ বন্ধ করে ফারহান কে জড়িয়ে ধরলো।
এতো স্প্রিটে খুব ভয় হচ্ছে ফারাবি তবে ভালো লাগার অনুভূতিয কাছে তা ম্লান। ফারহান সমস্ত টাই বুঝতে পেরেছে তাই বাঁকা হাসছে।
প্রায় বিশ মিনিট বাইক ড্রাইভ করার পর বাইক থামালো ফারহান।
ফারাবি ঠান্ডা বাতাসে একদম জমে গেছে।
ফারহান এক নদীর পারে এসে বাইক থামালো। ফারাবি বাইক থেকে নেমে আসে পাশে চোখ বুলালো।
বেশ দূরে দূরে একটি করে লাইট দেখা যাচ্ছে।
ফারাবি বুঝতে পারলো শহর থেকে গ্রামে এসেছে ওরা।
ফারাবি নদীর ঘাটলা পারে গিয়ে পা ভেজাতে লাগলো।
কিছুক্ষন পর পর ফারহানের দিকে তাকিয়ে খিল খিল করে হাসতে লাগলো।
ফারহান মৃদু হাসলো। ফারাবি কে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে ফারাবির শরীরের ঘ্রান নিতে লাগলো।
ফারাবি চোখ বন্ধ করে ফারহানের উষ্ণ নিশ্বাস অনুভব করতে লাগলো।
ফারহান তার খোঁচা খোঁচা দাড়ি দিয়ে ফারাবির গলায় সুরসুরি দিতে লাগলো।
ফারাবি রেগে তাকাতেই ঝরা হাসলো। বেশ কিছুক্ষণ ফারাবি কে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে রইলো ফারহান ।
তারপর কানের কাছে মুখ নিয়ে বলল
_ অনেক বিশ্বাস করিস তাই নারে ?
ফারাবি চোখ বন্ধ করেই উত্তর দিলো
_ হ্যাঁ নিজের থেকে ও বেশি।
ফারহান মোহনীয় হাসলো। ফারহান তার উষ্ণ ঠোঁট ফারাবির ঘাড়ে ছোঁয়াতেই ফারাবি শিউরে উঠলো।
এক হাতে জামা খামচে ধরতেই ফারহান ধাক্কা মেরে ফারাবি কে পানিতে ফেলে দিলো।
আচমকা এমন হওয়াতে ফারাবি চমকে উঠলো। ফারাবি সাঁতার জানে না। পানিতে হাঁসফাঁস করতে লাগলো।
দম বন্ধ হয়ে যাচ্ছে ওর। ফারহান বাঁকা হেসে ফারাবির দিকে তাকিয়ে রইলো।