স্বপ্নের প্রেয়সী ২ পর্ব ৩৯+৪০

#স্বপ্নের_প্রেয়সী_সিজন_2
#ফাতেমা_তুজ
#part_39

পড়াশোনার মতো প্যারা সাথে ফারহানের কড়া নজরদারি মোট কথা গলায় দঁড়ি ঝুলিয়ে আছে।
তিন ঘন্টা পড়ার পর ফারহান ফারাবি কে ছেড়ে দিলো।
বেচারির কোমরে ব্যথা হয়ে গেছে। ফারহান এখনো লেপটব হাতে কাজ করে যাচ্ছে। ফারাবি কিছুই বুঝতে পারে না । একটা মানুষ লেপটব নাড়া চাড়া করলে তাতে কি এমন আহামরি কাজ হয় তা ফারাবির বোধগম্য হলো না।
ফারাবি গভীর দৃষ্টিতে ফারহানের দিকে তাকিয়ে রইলো। মানুষটার চোখের নিচে একটু কালি জমেছে। কিন্তু কেন ?
ফারাবি বেশ অনেকক্ষণ মনোযোগ দিয়ে ফারহান কে দেখতে লাগলো। ফারহান গভীর মনোযোগে লেপটবে কাজ করে যাচ্ছে।
ফারাবি ধীর গতিতে ফারহানের দিকে এগিয়ে গেল। ফারহানের মসৃন গালের খোঁচা খোঁচা দাড়ি তে হাত বুলিয়ে বলল
_ সেভ করলেন না কেন ?

_ সময় নেই।

_ তাহলে কিসে সময় আছে ? আমাকে সন্ধ্যা বেলায় টেনে সাওয়ার নেওয়াতে ?

_ হুমম

_ আজব তো। আমার কথার কোনো মূল্য ই নেই দেখছি। ধ্যাত

ফারাবি উঠে চলে যেতে লাগলো। ফারহান এক হাতে ফারাবি কে ধরে ফেললো।
লেপটবে চোখ রেখেই বলল
_ কোথায় যাচ্ছিস ?

_ ছাঁদে যাবো ?

_ একা কেন যাচ্ছিস ?

_ আমি কি বাচ্চা নাকি যে আর ও দশ জন কে সাথে নিয়ে যাবো।

ফারাবির কথাতে ফারহান ভ্রু কুঁচকালো। কিছু একটা ভেবে দম ফেলে বলল
_ যাহহ।

ফারাবি অবাক হয়ে তাকিয়ে রইল। ফারহান গভীর মনোযোগে লেপটব চালাতে লাগল।
ফারাবি খট খট শব্দ করে চলে গেল। ফারহান এক পলক তাকিয়ে চোখ নামিয়ে নিলো।
হঠাৎ এমন করার কারন টা বুঝে উঠলো না ফারহান।

*

ছাঁদের রেলিং ধরে দাড়িয়ে আছে ফারাবি। প্রচন্ড পরিমানে মন খারাপ ওর। একটা মানুষ কি সারাক্ষণ লেপটব নিয়েই থাকবে ?
বউ কে একটু দেখবে না ? আগের মতো বুঝি ভালোবাসা নেই আর। এর জন্য ই বলে সময় ফুরালে ভালোবাসা ও ফুরুত হয়ে যায়।
ছাঁদের এক কোনে এক টা লাইট জ্বলছে। হালকা বাতাস ও বইছে , চন্দ্র মামা পূর্নরূপে তবে ফারাবির মন তাতে নেই। ওর ভাবনা জুড়ে একটাই কথা ফারহান কি আগের মতো ভালোবাসে না আমায় ?

খটখট আওয়াজে পেছন ঘুরে তাকায় ফারাবি। ফারহান ভেবে ঠোঁটের কোনে এক চিলতে হাসি ফুটে উঠে। কিন্তু কই ফারহান তো নেই।
ফারাবির মুখে কালো মেঘ এসে বসে পরলো। কিন্তু আওয়াজ টা এলো কোথায় থেকে ?
ভ্রু যুগল বাঁকিয়ে ধীর পায়ে চিলেকোঠার সাইটে আসলো। কই কেউ তো নেই।
এই বাড়িতে শুধু ফারহান আর ওহ ই থাকে ।
আর গেটে দাড়োয়ান। ফারাবির বুক টা কেঁপে উঠলো।
বাড়ির পেছনে বিশাল পাইন গাছের সারি।অদূর পর্যন্ত শুধু পাইন গাছ আর পাইন গাছ।ফারাবির চিত্ত কেঁপে উঠলো। সাইন্স ভূত বলতে কিছু আছে তা স্বীকার করে না। কিন্তু নেই যে তা ও তো বলে না।
তাছাড়া জিন জাতি তো রয়েছেই। ফারাবি শুকনো ঢোক গিলে নিলো। হঠাৎ বাম পাশে কিছু পরার শব্দ পেল।
ফারাবি বাম দিকে তাকাবে তার আগেই ডান পাশে শব্দ হলো।
ভয়ে ফারাবির গলা শুকিয়ে কাঁঠ। ছাঁদের পাশে থাকা সুপারি গাছ টা নড়ে উঠতেই ফারাবি চিৎকার করে উঠলো।
মিনিটের মধ্যে ই ওহ জ্ঞান হারালো।

চোখ পিটপিট করে খুলে তাকালো ফারাবি। মাথা টা কেমন ঝিম মেরে আছে। ফারাবি উঠেই মাথা চেপে ধরলো। মাথায় কেমন যন্ত্রণা ও হচ্ছে। কিন্তু ওহহ এখানে কি করে এলো ?
সব কিছু মনে হতেই ফারাবি চিৎকার করে উঠলো। হুরমুরিয়ে রুমে ঢুকলো ফারহান। ফারাবি ফারহানের অবয়ব দেখেই ছুটে ফারহান কে জড়িয়ে ধরলো।
এতো টাই জোড়ে ধরেছে যে ফারহানের হাতে থাকা স্যুপ টা একটু পরে ও গেল।
ফারহান টেবিলে স্যুপ এর বাটি টা রেখে এক হাতে ফারাবি কে জড়িয়ে ধরলো।
ফারাবির শ্বাস ভারী , খুব বেশি ই ভয় পেয়ে ছে ওহহ ।
ফারহান মুখ টা ছোট করে রইলো। মিনিট খানেক পর ফারাবি শান্ত হলো।
_ ফারাবি কি হয়েছে এমন করিস কেন ?

_ ঐ যেযযয আমিমম ছাঁদে ছিললাম এখানে কি কররে এলাম ?

_ তুতলাচ্ছিস কেন ? আগে শান্ত হয়ে বস।

ফারাবি বেডে বসলো , তবে চোখ চারিপাশে ঘুরপাক খাচ্ছে। ফারহান এক গ্লাস পানি এগিয়ে দিতেই ফারাবি ঢকঢক করে গিলে নিলো।
ফারহান দুহাতে ঠোঁটের কোন বেয়ে পরা পানি টুকু মুছে দিলো।
বেশ কিছুক্ষণ নিরবতা চললো। ফারহানের ভেতর থেকে বার বার দীর্ঘশ্বাস বের হয়ে যাচ্ছে।
_ বলেছিলাম একা ছাঁদে যাওয়ার দরকার নেই।
কিন্তু তুই তো বড় হয়ে গেছিস।

ফারাবির কানে সে শব্দ গেল না। ফারাবি কে ঝাঁকিয়ে ফারহান বলল
_ শান্ত হ, কোনো ভুত ছিলো না। ঐ টা আমি ই ছিলাম।

ফারাবি অবাক চোখে তাকালো। ফারহান মেকি হাসি দিয়ে তাকালো। ফারাবির চোখ দুটো কেমন ছলছল করছে। ফারহান অবাক হলো , কিছু বোঝার আগেই ফারাবি ঝাঁপিয়ে পরলো ফারহানের বুকে।
ফারহান যেন স্তব্ধ হয়ে গেল। ফারাবি ফোঁপাতে লাগলো। ফারহান অপরাধীর কন্ঠে বলল
_ সরি। আসলে তুই এতো ভয় পাবি আমি বুঝতে পারি নি।

ফারাবির কাঁপছে, যেন সর্বাঙ্গে বিদ্যুৎ চলছে। ফারহান ফারাবির কাঁপা কাঁপি দেখে ফারাবি কে শক্ত করে বুকে জড়িয়ে ধরলো।
ফারাবির কাঁপনি খানিকটা কমতেই ফারহান ধীর হস্তে ফারাবির মুখ টা আবদ্ধ করলো।
ফারাবি মুখ ঘুরিয়ে রইলো। ফারহান বুঝে উঠতে পারলো না এর কারন।
ফারাবির হাতে চুমু এঁকে দিয়ে ফারহান বলল
_ রাগ করেছিস তুই ?

_ আপনি খুব বাজে।

_ সরি বউ। আমি তো চাই নি তোকে এতো টা ভয় পাওয়াতে।

_ কিসের বউ। আপনি খুব বাজে , সারাক্ষণ লেপটবে মুখ গুঁজে থাকেন।
আমাকে দেখে ও দেখেন না।

ফারাবির কথাতে ফারহান ভরকে গেল। মেয়েটা বলে কি ?
একটু লেপটবে মুখ গুঁজে ছিলো আর তাই এই অবস্থা।

ফারহান ধীর হস্তে ফারাবির মুখ টা তুললো। থুতনি ধরে খানিকটা উচু করেই চুমু খেল। রন্ধে রন্ধে শিহরন জেগে গেল।
ঘোর লাগানো কন্ঠে উচ্চারন করলো।
_ আমার পিচ্ছি বউয়ের অভিমান হয়েছে ? সে বরের ভালোবাসা কে মিস করছে ?
তাহলে এখন একটু ভালোবাসা হয়ে যাক ?

ফারাবি লম্বা দম ফেলে তাকালো। ফারহানের কথায় স্পষ্ট ইঙ্গিত। ফারাবি নিজেকে ছাড়াতে ছাড়াতে বলল
_ নো নো আমি আর সাওয়ার নিতে পারবো না।
ছাড়ুন আমায় , দেখুন ভালো হচ্ছে না কিন্তু।
আপনি

ফারাবি কে আর কিছু বলার সুযোগ দিলো না। দুজনেই ভালোবাসায় হারিয়ে গেল।

*

মাথা ব্যথা তে উঠতে পারছে না ফারাবি। পচন্ড ক্লান্ত ওহহ , ভোরের দিকে ঘুমিয়েছিল। না জানি এখন কয়টা বাজে, বোধহয় সকাল পেরিয়ে গেছে।
ফারাবি হাই তুলতে লাগলো। ফারহান কে আশে পাশে দেখতে পেল না। আয়নার সামনে গিয়ে চুল আঁচড়াতে লাগলো।
মিররে দেখতে পেল ফারহান ট্রে হাতে রুমে ঢুকছে। ফারহানের পরনে কালো রঙের স্লিভের গেঞ্জি। গায়ে লেপ্টে আছে একদম , ফারাবির চোখ যেন নামছেই না।
ফারহান মিররে তাকাতেই দুজনের চোখাচোখি হয়ে গেল।
ফারহান আলতো হেসে খাবার টা টেবিলে রাখলো।
ফারাবি বাথরুম থেকে ফ্রেস হয়ে আসতেই দেখলো ফারহান মুচকি হাসছে। ফারাবি নাক মুখ কুঁচকে নিলো। ফারহান বাঁকা চোখে তাকিয়ে বলল
_ চুল টা ঘাড়ের কাছে ফেলে রাখ।

_ কেন ?

_ যা বলছি তাই কর। না হলে পরে নিজেই লজ্জা পাবি।

ফারাবি বিরক্তি নিয়ে চুল গুলো ঘাড়ের কাছে দিতে লাগলো।
ঘাড়ে চোখ যেতেই ফারাবির চোখ রসগোল্লা হয়ে গেল।
ফারহানের দিকে তাকাতেই ফারহান দুষ্টু হাসতে লাগলো।

ফারাবি ভ্যাগা ভ্যাগা মুখ করে বলল
_ এটা কখন ?

ফারহান খানিকটা অপরাধী মুখ করে ফেলল। তারপর আবার চকচকে চোখ করে বলল
_ আসলে আমি তখন হুসে ছিলাম না তাই ঘাড়ে কামড় দিয়ে ফেলছি।
বাট ট্রাস্ট মি আমি কাল সহস্র বার দাগের স্থানে চুমু খেয়েছি।

_ আপনি কি ভুত যে কামড়ে দিবেন ? ইসস কেমন লাল হয়ে আছে।

_ আম সরি জান। আমি তো

কলিং বেল বেজে উঠলো। ফারহান এক গাল হেসে ফারাবি কে খাবার খেয়ে তৈরি হতে বলল।
ফারাবি কারন জিঙেস করতেই ফারহান ঝরা হেসে বলল
_ সারপ্রাইজ।

ফারাবি বোকার মতে তাকিয়ে রইলো। ফারহান দরজা লক করে দিলো। না হলে ফারাবি যে নিচে চলে আসবে।

নিচে গিয়ে দরজা খুলে দিতেই রিফাত জড়িয়ে ধরলো ফারহান কে।
রাফাজের সাথে হাই ফাইফ করে নিলো। সবাই এসেছে শুধু ফারহানের বাবা আর ফারাবির মা বাবা ছাড়া।

সকালে দুজন সার্ভেন্ট কে এনেছে ফারহান। বাইরের খাবার খাওয়াবে না তাই। সার্ভেন্ট রা সবাই কে নাস্তা দিয়ে গেল।
ফারহান মৃদু হেসে বলল
_ তোমরা সবাই বিশ্বাস করো তো আমি ফারাবি কে ভালোবাসি তাই জোড় করে বিয়ে করেছি।
তবে আমি অন্য কিছুতে ওকে জোড় করি নি।

রিফাতের বাবা খানিকটা হেসে বললেন
_ চুপ কর তুই। আমরা জানি সব , ভুল করেছিস তবে ভালোবাসা দিয়ে তা পুষিয়ে ও দিয়েছিস।

সবাই তাতে সায় জানালো। ফারহান কৃতঙ্গতার হাসি তে হাসলো। তারপর বেশ কিছুক্ষণ সবার সাথে কথা বলতে লাগলো। মিসেস চৌধুরী ছেলেকে জড়িয়ে কেঁদেই যাচ্ছেন।
রাফাজ এসে ওনাকে বোঝালেন। সবাই ফারাবি কে দেখার জন্য বসে আছে।
ফারহান আলতো হেসে জানালো ওকে উপরে লক করে রেখেছে।
সবাই একটু ভাবুক হতেই ফারহান বলল
_ সারপ্রাইজ এর জন্য।

সবাই সরস হাসলো। ফারহান রুমে গিয়ে দরজা খুলে দেখলো ফারাবি গালে হাত দিয়ে বসে আছে।
ফারহান ভ্রু নাচিয়ে বলল
_ কিরে গালে হাত দিয়ে বসে আছিস কেন ?

_ এমনি ভালো লাগছে না তাই।

_ আজব , আচ্ছা চল নিচে যাবো।

_ কেন ?

_ এমনি চল।

ফারাবি বেড থেকে উঠে থমথমে মেজাজে চলে আসলো। করিডোর দিয়ে যেতে যেতে নিচে চোখ গেল।
ফারাবির সরু চোখ দুটো কুঁচকে গেল।
এতো মানুষ জন দেখে খানিক টা অবাক হলো।
তবে তাদের ফেস দেখা যাচ্ছে না। একটু কাছে আসতেই ফারাবির চোখ চকচক করে উঠলো।
সবাই কে দেখে যেন পা থমকে গেছে। একবার ফারহানের দিকে তাকাচ্ছে আর একবার সবার দিকে।
আবেগে আপ্লুত মন টা হো হো করে কেঁদে উঠলো।
ফারহান ছোট্ট হাসিতে হাসলো। মেয়েটার এই চোখের জল সুখের । তাই আর কাঁদতে বারন করলো না। এক হাতে জড়িয়ে ধরতেই ফারাবির কান্নার বেগ বেড়ে গেল।
#স্বপ্নের_প্রেয়সী_2
#ফাতেমা_তুজ
#part_40

নিজের পরিবারের এতো জন কে সামনে বসে থাকতে দেখে ফারাবি নিজেকে সামলাতে পারলো না।
হু হু করে কেঁদে দিলো। সবাই ফারাবির দিকে মৃদু হেসে তাকিয়ে রইলো।
ফারহানের দিকে তাকাতেই ফারহান চোখ দিয়ে আশ্বস্ত করলো।
ফারাবি ছুটে গেল সবার দিকে। রোমা চৌধুরী ফারাবি কে বুকে জড়িয়ে ধরলেন।
ছেলের বউ হিসেবে নয়, ওনি ফারাবি কে নিজের মেয়ে হিসেবেই মানেন।
তার ব্যতিক্রম নন ফারহানের বাবা। কিন্তু তার ছেলে মেয়েটার উপরে জোড় খাটিয়েছে এটাই মেনে নিতে পারছেন না ওনি।
ফারাবির দিকে জল ভরা নয়নে তাকিয়ে আছে বড় মা।
ফারাবি এক পা এক পা করে আগাতে লাগলো। বড় মার স্নেহের হাত ফারাবির গালে স্পর্শ করতেই ফারাবি ঝাঁপিয়ে পরলো।
বড় মা কে শক্ত করে জড়িয়ে কাঁদতে লাগলো। বড় মায়ের চোখের পানি গড়িয়ে পরতে লাগলো।
এ যে ওনার মেয়ে , নিজ হাতে বড় করেছে এই মেয়েটাকে ।
অথচ আজ এত দূরে। ফারাবির মুখে সহস্র চুমু খেয়ে নিলেন। আবেগে কারো মুখ থেকে রা ও বের হচ্ছে না।
বড় আব্বু ঠোঁটের কোনে মৃদু হাসি ফুটিয়ে দু হাত খুলে দিলেন।
ফারাবি মুখ চেপে কাঁদতে লাগলো। বড় আব্বু ফারাবির কাছে এসে বুকে টেনে নিলেন। চোখ দুটো পানি তে টুইটুম্বর , কেউ না থাকলে নিশ্চিত কেঁদে দিতেন ওনি।
শক্ত পোক্ত মনের মানুষ টার মন টা যে খুবি নরম।
ফারাবি চোখের কোন থেকে পানি মুছে নিলো। আবার ভরে উঠলো দু চোখ। ফারাবি ভাঙা গলায় সকালের উদ্দেশ্যে প্রশ্ন ছুঁড়লো।
_ আম্মু আব্বু আসে নি না ?

মুহূর্তেই সবার মুখ টা মেঘবরন রূপ ধারন করলো। ফারাবি ডুকরে কেঁদে উঠলো। ফারহান ধীর পায়ে কাছে আসলো। রিফাত কে চোখ দিয়ে ইশারা করলো ফারাবি কে সামলাতে।
রিফাত মুচকি হেসে বোন কে জড়িয়ে ধরলো। ফারাবি ছলছল নয়নে তাকালো ভাইয়ের দিকে।
রিফাতের মন টা ভেঙে চুরমার হয়ে গেল। বোনের কষ্ট টা কি করে দূর করবে ওহহ ?
তবু ও ঠোঁটের কোনে হাসি রেখে বলল
_ একদম নয়। ছোট মা আর আব্বু আসবে , একটু অভিমান টা কমলেই আসবে।

_ ভাইয়া কেউ আমাকে ক্ষমা করলো না ?

_ ফারাবি এমন নয় বোন। তুই তো জানিস ই সব , প্লিজ কাদিস না বোন।

_ আমি জানি আম্মু খুব কষ্ট পেয়েছে। মামা কে দেওয়া কথা ভেঙে গেছে। কিন্তু আমি কিই বা করতে পারি ?
আমি কি এখন ওনাকে কে ছেড়ে চলে যাবো ?
আমি এটা কিছুতেই করতে পারবো না। কিন্তু আম্মু আব্বুর কষ্ট ও আমার সহ্য হচ্ছে না।
সব এলোমেলো লাগছে , কেন কথা দেওয়ার আগে আমাকে জানায় নি ?
আমি কি করে ওনাকে ছেড়ে যেতে পারি? এটা যে সম্ভব না ।

ফারাবি কাঁদতে লাগলো। রোমা চৌধুরী ফারাবির চোখের পানি মুছিয়ে দিলেন।
কপালে চুমু খেয়ে মৃদু হাসলেন ।
_ একদম কাঁদবি না। সময় টা খারাপ যাচ্ছে তাই বলে এভাবে ভেঙে পরবি ?
আমি তো জানি আমার ফারাবি খুব শক্ত মনের এখন কেন উল্টো মনে হচ্ছে ?

_ আন্টি আমি পারছি না আর। আম্মুর চোখে পানি ভরা মুখ টা বার বার ভেসে আসছে। খুব বাজে আমি ?

_ একদম নয় মা। তুই আমার বাড়ির গর্ব। আমার বাড়ির রাজকন্যা, সে কোনো ভুল করে নি।

_ বড় আব্বু ।

ফারাবির মাথায় হাত রেখে বেশ কিছু কথা বললেন বড় আব্বু। সবাই খানিক টা অবাক হচ্ছে , স্বামীর প্রতি ফারাবির এমন ভালোবাসা সবাই কেই মুগ্ধ করছে।
সবাই ওদের ভালোবাসা দেখে মুগ্ধ। একটি মাত্র ভুলের জন্য এমন দুটি হৃদয় কে আলাদা করার কোনো প্রশ্ন হয় না।
অভিমানের পাল্লা আজ ভারী , তবে খুব শীঘ্রই অভিমান কাটিয়ে হবে সূর্যোদয়।

*

সবাই কে পেয়ে হৈ হুল্লর করছে ফারাবি। মনে হচ্ছে কতো জনম পর প্রিয় মানুষদের দেখা মিলেছে। ফারহানের মা আর রিফাতের মা রান্না করতে চাইছিলেন। কিন্তু ফারহান কাউকেই কিচেনে যেতে দেয় নি। ফারহানের এক টাই কথা আজকের জন্য তোমরা আমার গেস্ট। পরিবার কে গেস্ট হিসেবে আপ্যায়ন করার সুযোগ টা ফারহান মিস করতে চায় না।
অতঃপর কেউ আর জোড়াজোড়ি করে নি। ফারহানের ছোট্ট বাড়িটা ঘুরে দেখেছে সবাই। প্রশংসার কোনো কমতি নেই। বাসাতে আধুনিকতার ছোঁয়া রয়েছে পূর্নরূপে।
অবশ্য এই বাড়ি টার কথা আগে কেউ ই জানতো না। তার জন্য ফারহান সবাই কে সরি ও বলেছে।

আড্ডার এক পর্যায়ে রিফাত চলে গেল। মনিকা ভারসিটি তে গিয়েছিলো তাই ওকে নিয়ে আসতে।
ফারহান রাফাজের দিকে তাকিয়ে বলল
_ ভাইয়া তুই ভাবি কে নিয়ে আসতে পারতি ?

_ তোর ভাবি এখন সিলেটে আছে একটা মেডিকেল কেম্পিনে।

_ আচ্ছা তা বল বিয়ে টা করছিস কবে ?

_ আহহ আর বিয়ে । ছোট ভাই তো আগেই কাজ সেরে নিয়েছে।
এখন সে বউ নিয়ে আছে সুখে আর আগুন জ্বলে আমাদের বুকে।

বলেই হাসতে লাগলো রাফাজ আর ফারহান।
ফারাবি ফারহানের দিকে রাগি চোখে তাকিয়ে রিমির হাত ধরে চলে গেল।
ফারহান বাকা হেসে ভাইয়ের সাথে কথা বলতে লাগলো।

দুপুরের সবাই এক সাথে লাঞ্চ করে নিলো। ফারহান সবাই কে বললো থাকতে কিন্তু কেউ রাজি হয় নি।
কারন ফারহানের বাবা জানলে রাগ করবেন।
ফারহান ও আর জোড়াজোড়ি করলো না।
সবাই চলে গেল , আর ফারাবির মন টা ও যেন ওদের সাথে চলে গেল।

সন্ধ্যা হতেই ফারাবি মুখ গোমড়া করে বসে আছে।
পরিবারের মানুষ গুলো যখন ছিলো বুক টা কেমন ভরা ভরা লাগছিলো। কিন্তু এখন অশান্তি তে ছেয়ে গেছে মন।
মা বাবার কথা ভাবতেই ফারাবির ভীষন কান্না পাচ্ছে। ফারাবি হাজার চেষ্টা করে ও নিজেকে দমাতে পারলো না।
চোখ দুটো লাল হয়ে টপটপ করে পানি ঝরতে লাগলো।

ফারহান বাথরুম থেকে মাত্র সাওয়ার নিয়ে এসেছে ।
ফারাবি কে মেঝের দিকে এক দৃষ্টি তে তাকিয়ে থাকতে দেখে ফারহান সন্দিহান চোখে তাকালো।
গরমে ঘেমে গেছে ফারাবি। ফারহান এসির রিমোর্ট টা নিয়ে এসি অন করে বলল
_ গরমের মাঝে এসি ফ্যান সব বন্ধ করে রেখেছিস কেন ?

ফারাবি কোনো উত্তর করলো না। কারন ফারহানের কথা তার কান অব্দি পৌছায় ই নি। ফারহান খানিকটা চিন্তিত হলো। একটু আগেই তো কেমন হাসি খুশি ছিলো। ফারহান ট্রাওয়াল টা বেডে রেখে ফারাবির পাশে বসলো।
খ্যাক করে গলা ঝারতেই ফারাবি চমকে তাকালো। দ্রুত মুখ টা আড়াল করে চোখের পানি মুছে নিলো।
হালকা হেসে ফারহানের দিকে তাকালো। ফারহানের কোনো ভ্রুক্ষেপ নেই দেখে ফারাবি একটু চিন্তিত হলো।
বেশ কিছুক্ষণ পর ফারাবি কে বুকে সাথে আষ্ঠে পৃষ্ঠে জড়িয়ে নিলো ।
ফারাবি চমকালো তবে কিছু বললো না।
ফারহান এতো টাই শক্ত করে ধরেছে যে, ফারাবির ভেতর থেকে এক ফালি কান্না এসে থেমে যাচ্ছে।
ইচ্ছে গুলো চাঁপা দিতে চাচ্ছে ওহহ। ফারহানের সামনে কাঁদবে না ওহহ। না হলে ফারহান কষ্ট পাবে। ভাববে সব ওর জন্য ই হচ্ছে।
ফারাবি কাঁপা কাঁপা হাত দিয়ে ফারহানের পিঠ স্পর্শ করলো।
ফারাবির ছোঁয়া তে ফারহান কিঞ্চিত কেঁপে উঠলো।
_ কি হয়েছে এমন করছেন কেন ? শরীর খারাপ লাগছে ?
_ উহুহহ ।
_ তাহলে ?
_ আমি আর নিতে পারছি না। তোর ঠোঁটের কোনে লেগে থাকা হাসি টা কে মিস করছি আমি।
একটু হাঁস না জান। তোকে এভাবে মনমরা হয়ে থাকতে দেখে আমি যে ভেতর থেকে ভেঙে যাচ্ছি।

_ আপনি এমন করছেন কেন ? আমি ঠিক আছি , এই যে দেখুন আমি ভালো আছি। প্লিজ এমন করবেন না। আপনাকে এভাবে দেখে আমার কষ্ট হচ্ছে খুব।

ফারহান ফারাবি কে ছেড়ে দিলো। ফারাবির চোখে কান্নার ছাঁপ স্পষ্ট। তবু ও মেয়েটা ঠোঁটের কোনে প্লাস্টিকের হাসি ঝুলিয়ে রেখেছে।
ফারহান খুব যত্ন করে ফারাবির চোখের নিচে শুকিয়ে যাওয়া পানি টা মুছে দিলো।
ফারাবি চমকালো , পারলো না নিজেকে আড়াল করতে।
ফারাবির ভেতর থেকে এখন কান্না আসছে। ফারহান হালকা হেসে ফারাবির চোখে সময় নিয়ে চুমু খেলো।
ফারাবির মনের ভেতর ঝড়ো হাওয়া টা কেমন মিলিয়ে গেল।
ভালোবাসার মানুষের ছোঁয়া তে ফারাবির অন্তকর্নে শীতল হাওয়া বয়ে গেল।
ফারহান তপ্ত হেসে মেয়েটাকে বুকে জড়িয়ে নিলো।
এ যে তার লক্ষী বউ , তাঁর স্বপ্নের সেই প্রেয়সী।

*

রিকের মাথা ধরে যাচ্ছে। একের পর এক গ্লাস মদ খেয়েই যাচ্ছে। সব এলোমেলো , এত দিনের প্ল্যান সব শেষ হয়ে যাচ্ছে। চেষ্টা চালাচ্ছে ভিডিও গুলো ভাইরাল করার কিন্তু হচ্ছে না।
আর না পারছে ফারহানের থেকে ফারাবি কে ছিনিয়ে নিতে।
আজ সকালেই ফারহানের গাড়ির পেছনে লোক লাগিয়েছিলো।
তখন ফারাবি কে নিয়ে শপিং থেকে ফিরছিলো ফারহান।
এতো চেষ্টা করে ও ওদের গাড়ি ধরতে পারে নি।
তার আগেই ফারহান কোথাও মিলিয়ে গেছে।

কাঁচের গ্লাসে থাকা শেষ ওয়াইন টুকু এক নিমিষে খেয়ে গ্লাস টা ছুঁড়ে ফেলে দিলো।
ঝন ঝন শব্দ তুলে গ্লাস টা মেঝে তে গড়াগড়ি খেল।
তা দেখে রিকের রাগ দ্বিগুন হয়ে গেল।

গ্লাসের গায়ে লাথি মেরে দিলো। খানিকটা ভেঙে গিয়েছিলো গ্লাস টা।
তাই সরাসরি পায়ে আঘাত হানলো। রক্তে ছেয়ে গেল পুরো মেঝে।
আহহ করে আর্তনাদ করে উঠলো। বাড়ির সার্ভেন্ট ছুটে আসলো।
রিক কে ধরতে যেতেই বাঘের মতো হুংকার করে উঠলো।
মনের কোনে যন্ত্রনা হচ্ছে , হেরে যাওয়ার যন্ত্রনা।
ঐ একটা মেয়ের মধ্যে কি এমন আছে যার জন্য এতো দিন ধরে পাগল ওহ।
এক দিনের জন্য হলে ও কাছে পাওয়ার প্রবল ইচ্ছা।
এতো শত মেয়ের সাথে কাটিয়েছে ওহ এমন তো হয় নি।
তাহলে কেন এমন হচ্ছে ?
রিক নিজের মাথা চেপে ধরলো। যন্ত্রণায় ফেঁটে যাচ্ছে ওর মাথা।
বুকের ভেতর কেউ যেন ছুঁড়ি ঢুকিয়ে দিয়েছে।
ওয়াইনের বোতল টা মেঝে তে ফেলে দিয়ে গাড়ির চাবি টা খুঁজতে লাগলো।
পুরো বেড জুড়ে গাড়ির চাবি হাতরিয়ে ও খুঁজে পেল না।
রাগে কটমট করতে লাগলো। চিৎকার করে উঠলো। সার্ভেন্ট রা কাছে আসার ও সাহস পাচ্ছে না।
পকেট থেকে ফোন বের করে একজন কে ফোন করলো।
তারপর নিচে চলে গেল। এখন ওর নারীর সঙ্গ প্রয়োজন।
হেরে যাওয়ার যন্ত্রনা ভোলার জন্য নারী তে মত্ত হবে ওহহ।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here