স্বপ্নের প্রেয়সী ২ পর্ব ৩৭+৩৮

#স্বপ্নের_প্রেয়সী_সিজন_2
#ফাতেমা_তুজ
#part_37

গাড়ির জানালায় মাথা ঠেকিয়ে বাইরে তাকিয়ে আছে ফারাবি।
বাতাসের গতি কম হলে ও গাড়ির গতিতে বাতাসের বেগ বেশি মনে হচ্ছে।
ফারহান এতোক্ষন কিছু না বললে ও এখন ফারাবি কে একটা ধমক দিয়ে দিলো।
ফারাবি কাচু মাচু হয়ে সোজা হয়ে বসে রইলো। ফারহান গাড়ির গতি বাড়িয়ে দিলো।
রিফাত রা আগের গাড়িতে চলে গেছে।
ফারাবি কে নিয়ে আসতে একটু লেট হয়েছে ফারহানের।

জামানের বর যাত্রী হিসেবে গাড়ি থেকে বাইরে পা রাখতেই দুটো মেয়ে রিফাত কে এসে ঘিরে ধরলো।
মেয়ে দুটো ফাজলামি করার জন্য ও এসেছিলো কিন্তু মনিকা কে দেখে এক গাল হেসে চলে গেল।
আচমকা এমন ঘটনাতে রিফাত বেশ অবাক হলো।
ফারাবির নাম্বারে কল দিয়ে কথা বলে নিলো।
ফারাবি জানালো প্রায় এসে গেছে। মনিকা দোপাট্টা ঠিক করতে করতে বলল
_ রিফাত দুটো ছবি তুলে দাও প্লিজ।

রিফাত বিরক্ত হলে ও কিছু বলল না। মনিকা মুখ বাঁকা করে পোজ নিয়ে যাচ্ছে।
তা দেখে রিফাতের প্রচন্ড রাগ হলো। কিন্তু মনিকার সাথে ঝগড়া তে পেরে উঠবে না তাই আর কথা বাড়ালো না।
বাসার মেইন ফটকের কাছে সাদা রঙের গাড়িটা থামলো।
রিফাত এগিয়ে গিয়ে ফারহান কে জড়িয়ে ধরলো।
তারপর ফারাবি কে জড়িয়ে ধরে বলল
_ পুরো খাপে খাপ লাগছে। ইসস কারো নজর না লেগে যায়।

ফারাবি লজ্জা হাসলো। মনিকার দিকে তাকিয়ে বলল
_ মনিকা আপু ঐ খানে দাড়িয়ে আছো কেন ?

_ তোদের সাথে ভীষন রাগ করেছি এতো টা লেট করে দিলি।

ফারাবি এগিয়ে গিয়ে মনিকা কে তোষামোদে করতে লাগলো।
রিফাত ভেঙ্চি কেঁটে বলল
_ অনেক হয়েছে রঙ ঢং। প্লিজ মনিকা এবার অফ যাও।

মনিকা কিছু বলার জন্য প্রস্তুত হতেই ফারহান থামিয়ে দিয়ে বলল
_ থাম তোরা আর একটা ও কথা না।

দুজনেই থেমে গেল। ফারহান রিফাত কে নিয়ে হাঁটতে লাগলো।
পেছন ফিরে মনিকার দিকে তাকিয়ে বলল
_ মনিকা ওকে দেখে রাখিস। আমরা জামানের সাথে দেখা করে আসি।

মনিকা মিষ্টি হেসে সম্মতি জানালো।

ফারহান আর রিফাত বাসার এক কোনে দাঁড়িয়ে রিকের বিষয়ে কিছু আলোচনা করে নিলো।
তারপর রানা এসে একটা সিডি দিয়ে গেল।
রানা প্রচন্ড বিজি তাই বেশি ক্ষন থাকবে না বলে লাঞ্চ করতে চলে গেল।
রিফাত আর ফারহান সিডি টা প্লে করে দেখলো রিকের বিরুদ্ধে একটা প্রুফ আছে।
এটা সোসাল মিডিয়ার এক জন কর্মকর্তার কাছে পাঠিয়ে রিকের বিরুদ্ধে আগে থেকেই প্রট্রেকশন নিয়ে নিবে।
যাতে বাই এনি চান্স রিক মেয়ে গুলোর ভিডিও ভাইরাল করতে না পারে।

রিফাত কে একটু আনমনা দেখাচ্ছে।
ফারহান আগা গোড়া পরখ করে নিয়ে কিছুক্ষণ ভেবে বলল
_ আমার কাছে কিন্তু একটা জিনিস আছে তোদের জন্য।

রিফাত ভ্রু কুঁচকে বলল
_ কি ? আর কাদের জন্য ?

_ আরে তোর আর মনিকার জন্য। তুই যেই রকমের আনরোমান্টিক মনিকা কি করে যে তোর সাথে আছে।

_ দেখ ফারহান আমি মোটে ও

_ আচ্ছা ছাড় না। এখন শোন আসল কথা টা।

_ হুমম বল।

_ আমি আজ তদের জন্য একটা ক্যান্ডেল লাইট ডিনারের ব্যবস্থা করেছি।
তুই যে মনিকার জন্য রিং টা কিনেছিস সেটা দিয়ে আজ আবার প্রপোজ করবি।

_ তুই জানলি কি করে আমি রিং কিনেছি ?

ফারহান রহস্য হেসে বলল
_ এটা সিক্রেট মামা।

_ বল কি করে জানলি ?

_ আরে ভাই তেড়ে আসছিস কেন ?
বলছি তো।

রিফাত ভ্রু বাঁকিয়ে কোমরে হাত গুঁজে বলল
_ বল।

_ তুই যেই শপ থেকে রিং কিনতে গিয়েছিলি আমি ও গিয়েছিলাম একটা পেনডেন্ট কিনতে তখনি দেখলাম তোকে।
তবে কিছু বলি নি আমি , সারপ্রাইজ করবো তাই।

_ হয়েছে হয়েছে। আর যাই হোক না কেন। আমি মনিকার সাথে ডিনারে যাবো না।

_ রিফাত মার খাবি কিন্তু।

_ আমি সবার সাথে বাসর জাগবো আজ।

_ কোনো দরকার নেই। আমরা আজ কেউ ই থাকছি না।
আজ তুই মনিকার সাথে ডিনারে যাচ্ছিস আর আমি ফারাবি কে নিয়ে বাড়িতে ব্যাস।

_ ফারহান শোন আমার কথা। আমি যাবো না।

ফারহান কোনো কথাই শুনলো না। রিফাত কে রেখে চলে গেল।
রিফাত মুখ গোমড়া করে রইলো। মনিকা কে দেখলেই ওর ঝগড়া ঝগড়া ভাব এসে পরে।

এখন কি করবে ওহ ?

*

ফারাবি আর ফারহান এক সাথে দাঁড়িয়ে আছে। জামানের বিয়ে পড়ানো হচ্ছে। ফারহান মুচকি হেসে ফারাবির দিকে বার বার তাকাচ্ছে।
ফারাবি ও মাঝে মাঝে তাকাচ্ছে। যখনি চোখাচোখি হচ্ছে তখনি ফারাবি মাথা নিচু করে নিচ্ছে।
ফারহান ধীর হাতে ফারাবি কে এক হাতে জড়িয়ে ধরলো।
ফারাবি চমকে তাকালো। ফারহান অধর কোনে হাসি ফুটিয়ে চোখ দিয়ে ইশারা করলো।
ফারাবি মাথা নিচু করে নিলো। এই ছেলেটা পাগল করে দিবে ওকে। ফারাবি নিজেকে ছাড়াতে হাঁসফাঁস করতে লাগলো।
ফারহান ছাড়ার বদলে আরো কাছে টেনে নিলো।
ফারাবি আশে পাশে বার বার তাকাচ্ছে। ফারহান একটু ঝুঁকে ফিসফিস করে বলল
_ এতো নড়ছিস কেন ? একটু তো টাচ ই করেছি বেশি কিছু তো নয় ?

_ ছাড়ুন প্লিজ। সবাই এখানে আছে , দেখে নিলে কি ভাববে।

_ উহহুহ কেউ দেখবে না। সবাই যে যার মতো ব্যস্ত আছে। কারো সময় নেই তাকানোর।

_ প্লিজ।

_ আজব তো , আমার বউ আমি ধরবো তাতে কার কি ?

_ আপনি।

_ হুসসসস।

ফারাবি চুপ করেই রইলো। জামানের বিয়ে টা হয়ে গেল। সবাই হৈ হুল্লর করতে লাগলো।
মিষ্টি হাতে মিষ্টি খেতে লাগলো। ফারহানের সামনে মিষ্টি নিতেই ফারহান বারন করে দিলো।
ফারাবি সরু চোখে তাকিয়ে রইলো। ফারহান এক গাল হেসে বলল
_ আমার স্পেশাল মিষ্টি থাকতে এই ভেজাল মিষ্টি কেন খাবো ?

_ আপনি একটা

_ হুসসস। তোর বর কতোটা অসভ্য তা তোর ধারনা ই নেই।

ফারাবি ভেঙ্চি কেঁটে নিলো। ফারহান রহস্য হেসে ফারাবি কে হেচকা টান মেরে আড়ালে নিয়ে গেল।
ফারাবি ফিস ফিস গলাতে বলল
_ আপনি ঠিক আছেন ? এভাবে টেনে নিয়ে আসছেন কেন ? জ্বর টর হলো নাকি?

_ উহহুহহ। জ্বর তো এবার বাঁধাবো।

_ মানে ?

_ মানে টা হলো

ফারহান আর বলতে পারলো না। তার আগেই রিফাত আশ পাশ থেকে ফারহান কে ডাকতে লাগলো।
রাগে ফারহান গজগজ করতে করতে চলে গেল।
ফারাবি ফিক করে হেসে উঠলো।

বউ বিদায় দেওয়ার সময় বরাবরের মতোই সবার মন খারাপ।
ফারাবি ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে থেকে ফারহানের দিকে তাকালো।
ফারহান এক দৃষ্টি তে আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে।
ফারাবি নিঃশব্দে হাসলো। পিনপতন নিরবতা চলছে।

_ শুনছেন ?

_ হুমমম বল।

_ আমি যদি আপনাকে না ভালোবাসতাম তাহলে কি করতেন ?

ফারাবির হঠাৎ এমন কথাতে ফারহান ভ্রু কুঁচকে তাকালো। তারপর মোহনীয় হেসে বলল
_ নাহহ ছাড়তে পারতাম, আর না তোকে ধরে রাখতে পারতাম।
দুটোই চরম যন্ত্রনা দায়ক হয়ে যেত। কারন আমি বিশ্বাস করতাম , তুই আমাকে ভালোবাসবি। যদি এমন টা নাই হতো তাহলে আমি তোকে ছেড়ে দিতাম।

ফারহান একটু থামলো। তারপর বুকের বা পাশে হাত রেখে বলল
_ এই খান থেকে তোকে মুক্ত করে দিতাম। সাথে সাথে ফারহান নাম টা কে মুক্ত করে দিতাম।
পারতাম না আমি তোকে অন্য কারো সাথে মেনে নিতে।

ভালোবাসা বড্ড যন্ত্রণা দায়ক। আমি মানি জোড় করে ভালোবাসা পাওয়া যায় না।
হ্যাঁ আমি তোর উপর জোড় খাটিয়েছিলাম শুধু মাত্র ইনসিকিউর ফিল করেছি তাই।
তবে এটা ও সত্যি তুই আমাকে মেনে না নিলে আমি কখনোই তোর কাছা কাছি যেতাম না।

ফারাবি লম্বা করে শ্বাস নিলো। আজ ওর চোখ থেকে পানি ঝরলো না। পরম শান্তি তে শরীরে শীতল হাওয়া বয়ে গেল।
ফারহান চাঁদের দিকে তাকিয়ে বলল
_ চাঁদ টা ও আমার ভালোবাসার কাছে ম্লান। আমি হেরে যাই নি।
আমার স্বপ্নের সেই প্রেয়সী টার মুখ আজ দৃশ্যমান।
যার প্রতি টা শিরায় শিরায় এখন আমার ডি এন বইছে।

ফারাবি চোখ বন্ধ করে নিলো। ফারহান মোহনীয় হেসে ফারাবির নাকে ঠোঁট ছুঁইয়ে দিলো।

সা সা করে গাড়ি চলছে। রাতে বাতাসের বেগ বরাবর ই বেশি থাকে। আজ ও তার ব্যতিক্রম নয়।
রাতের পৃথিবী টা একটু বেশি ই সুন্দর নাকি দিনের পৃথিবীটা বেশি সুন্দর ?
ফারাবির উত্তর মিললো না। আসলে প্রিয় মানুষ টার ভালোবাসা থাকলে সব সময় ই সুন্দর।
ফারহান এক লেকের ধারে গাড়ি থামিয়ে দিলো।
ফারাবির দিকে তাকিয়ে বলল
_ ফারাবি লেকের ধারে বসে চাঁদ দেখবি ?

ফারাবি ঝরা হাসলো। ফারহান সম্মতি পেয়ে গাড়ি থেকে নেমে গেল। ফারাবি গাড়ি থেকে নামতেই ফারহান ওকে কোলে তোলে নিলো। ফারাবি এক গাল হেসে ফারহানের গালে চুমু খেয়ে নিলো।
বিস্ময়ে ফারহান হতবাক হয়ে গেল। ফারাবি মোহনীয় হেসে ফারহানের ঠোঁটে ঠোঁট ছুঁইয়ে দিলো।
#স্বপ্নের_প্রেয়সী_সিজন_2
#ফাতেমা_তুজ
#part_38

জামানের বিয়ে শেষ হয়েছে আজ দুদিন হলো।
মনিকা কে সারপ্রাইজ দেওয়ার পর রিফাতের সাথে মনিকার একটু ভাব জমেছে। এই প্রথম রিফাত ওকে ডিনারে নিয়ে এসেছে তাই।
ফারাবি আবার ফারহান কে জমের মতো ভয় পাওয়া শুরু করেছে। ফারহান অফিসে গেছে আজ দুপুরে।
বলেছে সন্ধ্যা সাত টার মধ্যে ফিরে আসবে।
এখন বাজে 6’49 ফারাবি হাত পা গুটিয়ে ড্রয়িং রুমে বসে আছে।
টিভি তে কার্টুন দেখছে আর পপকর্ন খাচ্ছে।
হঠাৎ দরজার কলিং বেল বেজে উঠলো। ফারাবি টিপ টিপ পায়ে এগিয়ে গিয়ে দরজা খুলে দিলো।
ফারহান কে দেখে লম্বা এক হাসি দিলো। প্রচন্ড গরমে ফারহান ঘেমে গেছে। কি জানি এসি গাড়ি থাকতে মানুষ টা ঘামলো কি করে ?
ফারাবির বেশ মায়া হলো। হাজার হোক ওর ই তো হাসবেন্ড।
ফারহান টাই ঢিলে করতে করতে সোফা তে এসে বসলো।
ফারাবি কিচেনে ছুটে গেল। ফারহান সামান্য অবাক হলো। মিনিট খানেক পর ফারাবি গ্লাস হাতে ফিরে এলো।
ফারহান ভ্রু বাঁকিয়ে বলল
_ এটা কিহহ ?

_ লেবুর শরবত , গরম থেকে এসেছেন ভালো লাগবে।

_ ওহহ দে।

ফারাবি শরবত দিতেই ফারহান এক ঢোক গিলে নিলো। ফারাবি অসহায় জনতার মতো ফারহানের দিকে তাকিয়ে আছে।
ফারহান খানিকটা বিরক্তি নিয়ে বলল
_ চিনি বেশি কেন ফারাবি ?

ফারাবি অবাক হয়ে বলল
_ আরে আমি মাত্র এক চামচ চিনি দিয়েছি। এতো ডায়েট ফায়েট করার কি দরকার ?

_ বেশি কথা বলিস তুই । যাহহ মাথা টা ব্যথা করছে একটু টিপে দে।

_ আমি ?

ফারহান মাথা টা উঠিয়ে বলল
_ তাহলে কে ?

ফারাবি মুখ টা গোমড়া করে ফারহানের পাশে বসলো। ফারহান বাচ্চা দের মতো সোফা তে পা উঠিয়ে ফারাবির কোলে মাথা রাখলো।
ফারাবি গলা উঁচিয়ে বলল
_ কোলে কেন ?

_ হুসসস। মাথা টিপে দে এখন।

_ দিচ্ছি , কিন্তু আপনি অসভ্যতামু করবেন না বলে রাখলাম।

_ আচ্ছা বাবা আমি কিচ্ছু করবো না।

ফারাবি মুচকি হেসে ফারহানের মাথা টিপে দিতে লাগলো। ফারহানের চুল গুলো কেমন উসকো খুসকো লাগছে।
ফারাবি চুলে হাত বোলাতে বোলাতে শান্ত স্বরে বলল
_ চুল এমন দেখাচ্ছে কেন ? ভালো করে ওয়াস করেন নি নাকি ?

ফারহান সামান্য ভ্রু কুঁচকালো। তারপর লম্বা করে শ্বাস নিয়ে ফারাবির পেটে চুমু খেয়ে উঠে বসলো।
বিস্ময়ে ফারাবি হতবাক , ফারহান এক গাল হেসে ফারাবি কে কোলে বসিয়ে দিলো।

_ আরে আরে কি করছেন কি ? মাথা টা নষ্ট হলো নাকি ?

_ উহহুহহ এবার হবে। আমার সাথে তোর ওহহ মাথা নষ্ট হবে।

_ মানে ?

_ মানে টা প্রাক্টিক্যাল বোঝাবো।

বলেই ফারহান ফারাবি কে টেনে উপরে নিয়ে গেল। ফারাবির মাথা ফাঁকা হয়ে গেছে। এই লোকটার মতলবের কিছুই বুঝতে পারছে না ওহহ।
ফারহান তার অধর কোনে স্টাইলিশ রহস্যময় হাসি টানিয়ে রেখেছে।
ফারাবি মুচরাচ্ছে দেখে ফারহান রাগী চোখে তাকালো।
ফারাবি দমে গেল , তবে বিস্ময় টা কাটিয়ে উঠতে পারলো না।
রুমে এসে ফারহান এক গাল হেসে ফারাবি কে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরলো।
ফারাবি হাঁসফাঁস করতে করতে বলল
_ কি হলো কি আবার ? ছাড়ুন আমার অস্বস্তি হচ্ছে ?

_ অস্বস্তি হচ্ছে ?

_ হুহহ

ফারহান বাঁকা হেসে ফারাবির কানের কাছে মুখ নিয়ে আসলো।
ফারহানের গরম নিশ্বাস ফারাবির কানে এসে আঁচড়ে পরছে। ফারাবির শরীরে অদ্ভুত শিহরন জেগে উঠলো।
ফারহান ফিসফিস করে বলল
_ এবার সব অস্বস্তি ঠেলে দিবো।

ফারাবি কাঁপা স্বরে বলল
_ মানে ?

_ মানে এখন তুই আর আমি এক সাথে সাওয়ার নিবো।

ফারহানের কথা তে ফারাবির চোখ দুটো গোল গোল হয়ে গেল। ফারহান দাঁত কেলিয়ে হাসতে লাগলো। ফারাবি নিজেকে ফারহানের বাহুডোর থেকে ছাড়িয়ে বলল
_ দেখুন আমি সাওয়ার নিয়েছি। আমি আর সাওয়ার নিবো না এখন।

_ আচ্ছা ?

_ হুমমম

ফারহান একটু একটু করে ফারাবির কাছে আসতে লাগলো। ঠোঁটের কোনে বিগলিত হাসি।ফারাবি ফাঁকা ঢোক গিলে নিলো। ফারহান দু হাতে খামচে ধরলো ফারাবি কে। দুজনের মাঝে আর এক ইঞ্চি ও দুরুত্ব নেই। ফারাবির হার্ট বিট বেড়ে গেল। ফারহান মোহনীয় হেসে ফারাবির নাকে নাক ঘষতে লাগলো।
_ তাহলে জান তুই চাচ্ছিস আমি এমন কিছু করি যার জন্য তুই ইচ্ছে করেই সাওয়ার নিবি ?

_ দেখুননন আমি সেইই সব কিছু ।

_ আমি বুঝে গেছি, আমার বউ কি চাচ্ছে।

ফারাবি অসহায় মুখ করে তাকিয়ে রইলো। ফারহান ডেভিল স্মাইল দিয়ে ফারাবি কে কোলে তুলে নিলো।
ফারাবি বাচ্চা দের মতো লাফাতে লাগলো।
ফারহান ভ্রু কুঁচকে বলল
_ ওকে ইয়ার , আমি তেমন কিছু করছি না। বাট এখন আমরা এক সঙ্গে সাওয়ার নিবো। এন্ড দ্যাটস ফাইনাল।

ফারাবি থমথমে মুখ করে তাকিয়ে রইলো। ফারহান বাঁকা হেসে বলল
_ বাথটবে কিস করার এক্সপেরিয়েন্স টা আজ হয়ে যাক।

ফারাবি কাঁদো কাঁদো মুখ করে রইলো। ফারহান ঝরা হেসে ফারাবি কে কোলে করেই নিয়ে গেল।
অগত্যা ফারাবি কে ফারহানের সাথে ডাবল সাওয়ার নিতেই হলো।

*

আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে চুল মুছে যাচ্ছে ফারাবি সাথে ফারহান কে হরেক রকমের গালি।
ফারহান বাথরুম থেকে চেঞ্জ করে এসে স্পষ্ট শুনতে পেল ফারাবির বিখ্যাত ভাষন।
তবে কিছুই বলল না কারন মেয়েটাকে শুধু শুধু সাওয়ার নেওয়ালো।
অবশ্য অন্য টাইমে ও এক সাথে সাওয়ার নেওয়া যেত।
কিন্তু ঐ যে ফারহানের ড্রেভিল মন। বউ কে জড়িয়ে গোসল করবে যখন মনে হয়েছে তো এখনি করবে।
ফারাবি পেছন ঘুরে দেখলো ফারহান দাঁড়িয়ে আছে। ফারহান কে দেখে রাগে গজ গজ করতে করতে বেডে ট্রাওয়াল টা রেখে দিলো।
ফারহান হাত দিয়ে চুল ঝারা দিতে লাগলো। যার ফলে ফারহানের চুলের পানি ফারাবির গায়ে এসে পরলো। ফারহানের এমন কান্ডে ফারাবি অবাক হয়ে তাকালো।
ফারহান মেকি হাসি দিয়ে কিছু বলবে তার আগেই গট গট করে ফারাবি রুম থেকে বের হয়ে গেল। ওর এমন কান্ডে ফারহান পেট চেপে হাসতে লাগলো। মিনিট দশেক পর ফারাবি আসলো। ফারহান ভ্রু কুঁচকে বলল
_ কোথায় পালাবি আর সেই আমার কাছে তো ফিরে আসতেই হবে।

ফারাবি থমথমে মুখ করে রইলো। ফারহান ফোন স্ক্রল করতে করতে আড়চোখে ফারাবি কে দেখে যাচ্ছে।
ফারাবি দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল
_ নিচে আসুন ?

_ কেন ?

_ ডিনার করবেন না ?

_ আমি তো এখনো খাবার অর্ডার করি নি ?

ফারাবি ভেঙ্চি কেঁটে বলল
_ আমি রান্না করেছি।

ফারাবির কথা টা ফারহানের মাথা তে ঢুকলো না। তাই ভ্রু কুঁচকে বলল
_ কি বললি ?

_ বললাম যে খেতে আসুন আমি রান্না করেছি।

ফারহান অবাকে চরম পর্যায়। ফারাবি মুখ টা গোমড়া করে বলল
_ এগ ফ্রাইড রাইস রান্না করতে পারি তাই ঐ টাই করেছি।
ইচ্ছে হলে খেয়ে দেখুন।

ফারহান ফোন টা বেডে রেখে উঠে দাঁড়ালো। ফারাবির সামনে গিয়ে আগা গোড়া পরখ করে নিয়ে বলল
_ এগ ফ্রাইড রাইস ?

ফারাবি মাথা কাত করে সম্মতি জানালো। তারপর বলল
_ সব কিছু কেঁটে কুটে রেখেছিলাম। তাই এখন রান্না টা করে আসলাম।

ফারহান আর এক মুহূর্ত দেরি করলো না। ডাইনিং এ বসে এক প্লেট এগ ফ্রাইড রাইস মুহুর্তেই সাবার করে দিলো।
ফারাবি এক চামচ মুখে দিচ্ছে আর ফারহানের দিকে তাকাচ্ছে।
ফারহান চেটে পুটে খেয়ে নিলো। হঠাৎ করেই ফারাবির মনের ভেতর অদ্ভুত শান্তি ছেয়ে গেল।
ফ্রাইড রাইস টা আহামরি টেস্ট হয় নি। তবে ফারহান কে তৃপ্তি করে খেতে দেখে ফারাবির বেশ ভালো লাগলো।
ফারহান এক গাল হেসে বলল
_ আমার লাইফের বেস্ট ডিস ছিলো।

ফারাবির চোখ দুটো ছলছল করে উঠলো। একটা মানুষ আর কতো ভাবে ভালোবাসা বোঝাবে ওর জানা নেই।
এতো কেন ভালোবাসে ওকে ?

ফারহান ফারাবি কে টেনে দাঁড় করিয়ে দিলো। ফারাবির চোখ থেকে পানি গড়িয়ে পরার আগেই ফারহান তা ঠোঁটের সাহায্য শুষে নিলো।
ফারাবি ফারহানের বুকে ঝাঁপিয়ে পরলো। ফারহান মৃদু হেসে ফারাবির মাথায় চুমু এঁকে দিলো।
বেশ কিছুক্ষণ পর ফারহান ফারাবি কে ছাড়িয়ে নিয়ে বলল
_ কাল একটা সারপ্রাইজ আছে।

ফারাবি প্রশ্নবোধক দৃষ্টি তে তাকালো। ফারহান মোহনীয় হেসে বলল
_ সারপ্রাইজ বলে দিলে কি সারপ্রাইজ হয় ?

ফারাবি ঠোঁট প্রশস্ত করে তাকালো। ফারহান চোখ টিপ মেরে বলল
_ অনেক ভালোবাসা হয়েছে। এবার চলুন আপনার বইয়ের সাথে প্রেম করার সময় হয়েছে।

মুহুর্তেই ফারাবি মুখ টা গোমড়া করে নিলো। ফারহান সে দিকে পাত্তা না দিয়ে ফারাবি কে রুমে নিয়ে বই হাতে বসিয়ে দিলো।
ফারাবি এক বার বইয়ের দিকে তাকাচ্ছে একবার ফারহানের দিকে।
দুটোই যন্ত্রণা দায়ক , না ছাড়া যায় আর না সহ্য করা যায়।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here