স্বামীর অত্যাচার পর্ব ১

#স্বামীর_অত্যাচার

লেখাঃ ওয়াজিহা

ঘড়িতে ভোর ৪.৪২ বেডের একপাশে অজ্ঞান হয়ে পরে আছে তাহিনের নিস্তেজ দেহ।সারারাত নিলয়ের অত্যাচার সহ্য করতে না পেরে অজ্ঞান হয়ে যায়.নিলয়ের সেদিকে ভ্রুক্ষেপ নেই।থাকবে বা কি করে সেই তো তার কাজ শেষ করে অঘোর ঘুমে তলিয়ে গেল।

বিয়ের প্রথম রাতে নিলয় হিংস্র প্রানীর মত ওর উপর এভাবে ঝাপিয়ে পরতে পারে।সেটা যেন কল্পনার ও বাইরে ছিল তাহিনের।কিন্তু মিসেস তনিমা তো এমন ছেলের হাতে তার একমাত্র মেয়েকে তুলে দেয়নি। তিনি একজন সৎ,দায়িত্ববান, সুদর্শন,নম্ন, ভদ্র ছেলের হাতে তো তার মেয়েকে তুলে দিয়েছেন….যে হাসিমুখে তনিমার কাছ থেকে তার মেয়ের স্বপ্ন পূরণ আর খুশি রাখার দায়িত্ব নিয়েছে।তাহলে নিলয় এমনটা কি করে করতে পারল?
নিলয় চৌধুরী শহরের নামকরা ব্যবসায়ীদের মধ্যে একজন…..আপন বলতে কেউ নেই….হঠাৎ একটা এক্সিডেন্টে পরিবারকে হারায়…তনিমার বাল্যকালের বান্ধবীর ছেলে…..সেই সুবাদে পরিচয়…নিলয়ের আচার ব্যবহার সবকিছু ভাল দেখে নিলয়ের প্রস্তাবে তনিমা রাজি হয়ে যায়…..তাহিনের ও এতে অমত ছিল না.

বেশ কিছুক্ষণ পর জ্ঞান ফিরতেই একটু একটু করে চোখ খুলতে মনে হল সারা শরীল অবশ হয়ে আছে।উঠতে চেয়ে উঠতে পারছেনা….অনেক কষ্টে একটু পাশ ফিরতেই নিলয়কে দেখে হঠাৎ করে নিলয়ের অত্যাচাচের কথা মনে পরতেই দুচোখ বেয়ে অশ্রু ঝরে পরল কি করে নিলয় একজন ধর্ষকের মত নিজের স্ত্রী উপর এভাবে ঝাপিয়ে পড়ল?ভাবতেই সারা শরীল যেন ঘৃনায় গিনগিন করছে….যদি ভালবেসে কাছে ডাকতে তাহলে তো বাধা দিতে না…তাহলে কেন এমন অত্যাচার করল ওর উপর সেটাই ভেবেই পাচ্ছে না…? মুহূর্ত ইচ্ছে করছে বালিশ চাপা দিয়ে মেরে ফেলতে যদি খুন করা অন্যায় না হত তাহলে নির্ঘাত করে ফেলত আর সকালের পত্রিকায় বড় বড় করে লেখা থাকত বাসর রাতে স্ত্রীকে ধর্ষণের দায়ে স্ত্রী হাতে স্বামীর খুন যদিও ব্যাপরটা সমাজের বেশিরভাগ লোকের কাছে হাস্যকর মনে হত…..তারপরে মুখেশধারী একজন ধর্ষক তো কমত.কিন্তু মারার মত শক্তিটুকু ও যে নেই.. আর এতে অন্তরে ও যে সাই দিবে হাজারহোক বাঙালী নারী..মনের ইচ্ছে মনে রেখে বিছানা থেকে উঠে ওয়াশরুমের দিকে পা বাড়াল…… হাটার মত মিনিমাম শক্তিটুকু নেই…….তারপরে কোনোমতে ওয়াশরুমে গেল….শাওয়ারের ঝর্ণা ছেড়ে গলা ছেড়ে চিৎকার করে কাঁদতে লাগল….সারা শরীলে স্বামী নামে জানোয়ারের ক্ষত বিক্ষত চিহ্ন দেখে আওয়াজটা যেন আরো ভারি হয়ে গেল ……..শত চিৎকার করলে যে কেউ এই কান্না শুনতে পাবে না….সেটা যে চার দেওয়ালের মধ্যে সিমাবদ্ধ চেখের সব পানি ঝর্ণার পানির সাথে এক এক করে মিলে যাচ্ছে…

প্রায় ১ঘন্টা পর ওয়াশরুমর থেকে বের হয়…নিলয় তখন ও ঘুমের ঘোরে…..রুম থেকে বের হয়ে নামাজকক্ষটা খুঁজে ওজু করে নামাজ আদায় করে নিল…..পবিত্র কুরআন হাতে নিয়ে কয়েকপাতা তেলোয়াত করে তার উপর চুমু দিয়ে যথাস্থানে রেখে দিল…..আল্লাহর দরবারে দুহাত তুলে চোখের পানি ছেড়ে দিল……..দুনিয়াতে একমাত্র শান্তির স্থান হচ্ছে এটা….যেখানে মনের সব দুংখ দুর্দশা দূর করা যায়……….

এদিকে নিলয় ঘুম ভাঙতে খেয়াল করে তাহিন ওর পাশে নেই…..তাহিনকে দেখতে না পেয়ে রাগে সারা শরীল যেন জ্বলছে……মনের মধ্যে অন্য একটা চিন্তা ভর করল…টিশার্ট গায়ে দিতে দিতে হনহন করে রুম থেকে বের হয়ে সিড়ি দিয়ে নিচে নামতে দেখে তাহিন ড্রয়িংরুম সোপায় হেলান দিয়ে চোখ বন্ধ করে শুয়ে আছে….একটু আগে নামাজ শেষে সোপায় হেলান দিয়ে বসতে চোখ বুঝে আসে……

নিলয় এবার যেন হাপ ছেড়ে বাঁচল.. রান্নাঘরের দিকে গিয়ে এক বালতি পানি নিয়ে এসে তাহিনের উপর ছুড়ে মারে……তাহিন আতঙ্কে চিৎকার করে উঠে দাঁড়ায়……ভিজে সারা শরীল চপচপে হয়ে গেছে……..

নিলয় রান্নাঘরের দিকে গিয়ে এক বালতি পানি নিয়ে এসে তাহিনের উপর ছুড়ে মারে…তাহিন অাতঙ্কে চিৎকার করে উঠে দাঁড়ায়…ভিজে সারা শরীল চপচপে হয়ে গেছে…….

হঠাৎ করে নিলয় এমন কান্ড করবে ভাবতেই পারেনি…….ওর মধ্যে মনুষ্যত্ব বলতেই কি কিছু নেই….শীতের সময় আর যাই করুক পানি নিয়ে খেলতে নেই…..রাগে ইচ্ছে করছে নিলয়ের গালে একটা থাপ্পর বসিয়ে দিতে নাহয় এক বালতি পানি ঠিক ওর মাথায় ঢেলে দিতে তখন কেমন লাগে ব্যাপারটা বুঝত……নিলয়ের দিকে এক পা বাড়াতে ওর মায়ের কথা মনে করে রাগটাকে কন্ট্রোল করে থেমে যায়…তাহিনের নাকের ডগায় রাগটা একটু বেশিই যার কারণে তনিমা ওকে সবসময় বলত…..রাগটাকে প্রশ্রয় দিও না…কারণ রাগ শয়তান হতে আসে…তাই রাগের মাথায় কিছু করতে ও যেও না…যার ফল খারাপ দিকে নিয়ে যায়……..
তাহিন চোখের পানি ছেড়ে দিয়ে করুন সুরে নিলয়কে বলল,
আপনি আমার সাথে এমন করতেছেন কেন…?কিসের শাস্তি দিচ্ছেন……?
কথাটা নিলয়ের কানে বাজতে চোখে মুখে রাগের ছায়া ভেসে উঠল… তাচ্ছিল্যের একটা হাসি দিয়ে…
কোথায় কি করলাম মাত্র তো মাহারানীকে ঘুম থেকে তো জাগালাম……সবেই তো শুরু… সকালে ব্রেকফাস্ট নামে কিছু একটা আছে জানেন না……৫মিনিটের মধ্যে আমার ব্রেকফাস্ট চাই………
কথাটা বলে নিলয় হাত থেকে বালতিটা ফ্লোরে ছুড়ে মারে…বাতিলটা ভেঙ্গে টুকরো টুকরো হয়ে যায়…তাহিন ভয়ে কুকরে উঠে…..পাল্টা প্রশ্ন করতে চেয়ে ও করতে পারল না নিলয়ের এমন ভয়ানক রুপ দেখে…

তাহিন চেঞ্জ না করে ভিজা অবস্থায় রান্নাঘরে চলে গেল…শীতে থরতর করে কাঁপতেছে তারপরে নিলয় ওকে চেঞ্জ করতে দিল না….হাতের কাছে নুডলসটায় ছাড়া আর কিছুই খুঁজে পেল না…..নুডলস তৈরি করতে গেলে অত্যন্ত ১০-১৫ মিনিট তো লাগবে…৫ মিনেটে কখনো হবে না.. তারপরে কাঁপা কাঁপা শরীল নিয়ে খুব দ্রুত রান্না করার চেষ্টা করল….এই বাড়িতে নতুন।সব কিছুর সাথে পরিচিত হতে গেলে তো একটু সময় লাগবে……..আগে নিলয়ের সবকিছু কাজের মেয়েই করত…কিন্তু বিয়ের একদিন আগেই নিলয় সবাইকে বিদায় করে দেয়……

নিলয় রেড়ি হয়ে এখনো নিচে নামেনি……..তারজন্য আরেকটু সময় পেল….একটু পরে নিলয়েরর আওয়াজ শুনে দ্রুত বাটি ভর্তি নুডলস আর কপি টেবিলের উপর রেখে আসে…..নিলয় মোবাইলে কেউ একজনের সাথে হেসে কথা বলতে বলতে নিচে নামে….তাহিনকে দেখে হাসিটা থামিয়ে ড্রানিং টেবিলের উপর মোবাইলটা রেখে নুডলসের বাটিটা হাতে নিয়ে এক চামচ মুখে দিতেই বাটিসহ ফ্লোরে ছুড়ে মারে….নিলয়ের মুখে যেন বিষ পরেছে….. রাগে এক এক করে টেবিল থেকে কয়েকটা গ্লাস ফ্লোরে উপর ছোড়ে মারে……তাহিন ভয়ে চুপসে যায়…….নিলয় চেয়ার থেকে উঠে তাহিনের চুলের মুঠি ধরে……এটা ইচ্চে করে করেছিস না……বদলা নিচ্ছেস আমার উপর….?তাহিনের মুখ দিয়ে কোনো কথা বের হচ্ছে না…..চোখ দিয়ে শুধু পানি বেয়ে পরছে…..

এমন না জানে তাহিন রান্না করতে জানে না…….যখনো সুযোগ পেত তনিমার থেকে রান্নাবান্না শিখে নিত……কিন্তু আজকে অন্যমনুষ্ক হয়ে নুডলসে দুবার লবন দিয়েছে….. তার জন্য নিলয় এমনটা করল…..

তাহিন ব্যাথায় কুকিয়ে উঠতে নিলয় ওকে ছুড়ে ফেলে হনহন করে বাইরে থালা দিয়ে গাড়ি নিয়ে বেরিয়ে গেল………..তাহিন ধপ করে ফ্লোরে বসে পরে…….

চলবে……

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here