স্বামীর অত্যাচার পর্ব ১৭

#স্বামীর অত্যাচার !!
#Part_17

গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি পড়ছে..রাস্তা ধারে দুহাত মেলে মুক্ত মনে বৃষ্টির সাথে খেলতে খেলতে হেঁটে চলল তাহিন….
.
.
মুগ্ধ নয়নে চেয়ে আছে নিলয়…..মেয়েটা যে এত পাগলী জানা ছিল না নিলয়ের….আশেপাশে কেউ নেই..বৃষ্টি শুরু হতে চারিদিক কেমন যেন স্তব্ধ হয়ে গেছে…..রাত ও অনেক হয়েছে কোনো রিক্সা ও নেই….ল্যম্পপোষ্টের আলোটা ঝাপসা হয়ে আছে…আর মেয়েটা কিনা বৃষ্টি স্বাদ নেওয়ার জন্য একা একা বের হয়ে গেল।।। এজন্য রেস্টুরেন্টে থেকে বের হয়ে যাওয়ার জন্য এতক্ষণ এত তাড়া দিচ্ছেিল…আর না পেরে বিল মিটিয়ে বের হওয়ার আগে টুপ কখন বের হল গেল নিলয় সেটা টেরিই করতে পারেনি…..

বৃষ্টির মাত্রা ক্রমশ বেড়ে চলেছে….তাহিনের ততই ভাল লাগছে…..চারদিকে কিছুই খেয়াল নেই..তবে এটা জানে নিলয় ওর পিছু পিছু ঠিকিই আসবে……

একটু যেতে হঠাৎ পিছন থেকে নিলয় ওকে কোলে তুলে নিতে চমকে উঠল তাহিন…
-কি করছেন কি নামান বলছি….?

-চোখ বন্ধ কর….

-কি?

-চোখ বন্ধ করতে বলছি…

-কেন?

-আগেই করইনা… তারপর বলছি…..

আস্তে আস্তে চোখ বন্ধ করে নিল তাহিন…তারপর নিলয়ের কথা মত চোখ বন্ধ করে উপরের দিকে তাকাতে….বৃষ্টির প্রতিটি ফোঁটা তাহিনের চোখ মুখ ছুঁয়ে দিতে…সারা শরীল শিহরিত হয়ে উঠল…মুহূর্তে অন্যরকম একটা অনুভূতি হচ্ছে যেন বৃষ্টির প্রেমে আজই প্রথম পড়েছে… চোখ মেলে নিলয়ের দিকে তাকাতেই ঠোঁটের কোণে হাসির রেখাটা ফুঁটে উঠল…নিলয়ের মুগ্ধ চাহনীতে এড়াতে পারল না সেই হাসিটা……নিলয় তখনি ফিসফিসিয়ে বলতে লাগল…

-আমার আত্মার সাথে মিশে গেছ তুমি….চাইলে তোমাকে ছাড়তে পারবোনা আমি…..যতই আমার থেকে দূরে যেতে চাইবে ততই তোমার ভালবাসা আমাকে আরো কাছে টেনে যাব….
তোমার নেশায় যে আসক্ত হয়ে পড়েছি..আর সেই নেশাতে ডুব দিয়ে ক্ষনে ক্ষণে শেষ হয়ে যাচ্ছি আমি।।।।কেন সেটা বুঝনা তুমি…..তোমাকে ছাড়া এক মুহূর্ত যেন ভাল থাকতে পারবোনা আমি…হৃদপিন্ডটায় কাজ বন্ধ করে দিবে….প্রচন্ড রকমের ভালবেসে ফেলেছে যে তোমায়……

নিলয়ের কথাগুলো তাহিনের বুকের ভিতর তোলপাড় শুরু করে দিলে ও চোখ বন্ধ করে চুপ করে আছে তাহিন…..চারিদিটা এখন যেন আরো স্তব্ধ লাগছে.. বৃষ্টির রুমঝুম আওয়াজটা যেন আর কানে বাজছে না…..তাহিন নিলয়ের কোল থেকে ছাড়া পাওয়ার চেষ্টা করলে ও নিলয় একটিবারে জন্য ও হাতের বাধনটা আলগা হতে দেইনি…আরো বেশি আঁকড়ে ধরে রেখেছিল তার মায়াবতীকে……

কাক ভেজা হয়ে ঘরে ঢুকল দুজন…..নিলয় চেঞ্জ করে মাথা মুছতে মুছতে রুমে ঢুকে দেখে তাহিন এখনো চেঞ্জ করে বের হয়নি… মেয়েটাকো বলেছিল তাড়াতাড়ি চেঞ্জ করে বের হওয়ার জন্য নাহলে আবার ঠান্ডা লাগিয়েই ছাড়বে…নিলয় কয়েকবার ডাকার পর ও কোনো সাড়া দিল না তাহিন….

বেশ কিছুক্ষণ পর চেঞ্জ করে বের হয়ে এল তাহিন।।।।
ফ্লোরে পা রেখে আধশোয়া অবস্থায় চোখ বন্ধ করে শুয়ে আছে নিলয়।।।।তাহিন গুটি গুটি পায়ে রুম থেকে বের হয়ে যেতে পিছন থেকে নিলয় খপ করে তাহিনের হাত ধরে ফেলল…..
-কোথায় যাচ্ছে সুইটহার্ট?

-না মানে পানি খেতে।।।

-পানি কি রুমের মধ্যেই নেই….?

-হুম আছে কিন্তু সেটা বাসি……

-এটা একটা বাহানা সেটা আমি বেশ বুঝতে পারছি।।।
নিলয় তাহিনের হাত থেকে টাওয়ালটা নিয়ে ড্রসিং টেবিলের সামনে ওর হাত ধরে টেনে নিয়ে গিয়ে বসিয়ে দিল…..

-আরে সত্যি বলছি আমার পিপাসা পেয়েছে….

-ওকে ফাইন….আগে মাথাটা তো মুছতে দাও তারপর আমি এনে দিচ্ছেি৷…

-আমি পারব…আপনাকে কষ্ট করে যেতে হবে না…..

-চুপ একদম চুপ….
একটা কথা শুনছি না….
আমার হাতের ব্যবহারটা সময়ে সময়ে তোমাকে দেখাব বলছি না……

-দেখাতে হবে না….সেটা আমি এতটা পথে জুড়ে দেখে নিয়েছে…

-কিভাবে দেখলে আমি তো কিছুই করেনি….

-এই যে বৃষ্টি মধ্যে এতটা পথে কোলে করে নিয়ে আসলেন আমাকে…

-এটা আর এমন কি…আমি তো শুধুমাত্র আমার পুতুলটাকেই কোলে করে নিয়ে নিয়ে আসলাম…এর বাইরে আর কিছুই না….

-পুতুল না ছাই এতটা পথ বারী একজন মানুষকে কোলে করে নিয়ে এসে এখন আপনার হাত ব্যথা করছে নিশ্চয়…

-তোমার সাহস কি করে হল আমার বউকে মোটা বলার…..নেক্টম থেকে আমার বউকে নিয়ে কোনো কথা যেন না শুনি…..সেই যেমন হোক না কেন সারাজীবন আমার কাছে পুতুলই থাকবে…আর আমার পুতুলটাকে তুলে সারাজীবন কোলে করে ঘুড়ে বেড়াব বুঝেছ…..

তাহিন বেশ হাসি পাচ্ছে তবু ও হাসিটাকে আটকে রেখে চুপ করে থাকল……৭৮-৮০কেজি একজন মানুষ ৫০কেজি একজন মানুষকে কোলে করে এতটা পথে নিয়ে আসা সহজ কথা না….আর সেই কিনা বলছে একটা পুতুলকে নিয়ে এসেছে….সবসময় এমন একজনকে মানুষকে জীবনসঙ্গী হিসেবে পেতে চেয়েছিল….যে সবসময় তার পাশে থাকবে।।। সবসময় একিই রকমই ভালবাসবে..কখনো বুঝতে দেবে মোটা হয়ে যাচ্ছে কিংবা বয়স বেড়ে যাচ্ছে……বরং বলবে তুমি দিনদিন এত সুন্দরী কেন হচ্ছে বলে তো?জান মোটা হলে তোমাকে আরো বেশি গুলো মুলো লাগছে।। আমার তো এখন আরো বেশি ভাল বাসতে ইচ্ছে করছে……কিন্তু এখন….?নিলয়ের প্রতি বিশ্বাসের জায়গাটা কিছুটা তৈরি হলে ভরসার জায়গাটা এখনো ফাঁকায় রয়ে গেল….যদি নিলয় ওকে আবার কোনোভাবে ধোঁকা দেই….

আনমনে কথাগুলো ভেবে যাচ্ছে তাহিন…..তখনি নিকয় চুল মুছতে মুছতে বলল….
-এমনটা কখনো হবে না….তোমাকে ধোঁকা দেওয়া মানে এখন নিজেকে ধোঁকা দেওয়া……নিজে কে তো নিজে কখনো ধোঁকা দিতে পারে না…..

একটু বিশ্বাস রেখো তাতেই হবে….প্রমিস করছি কখনো এই বিশ্বাটা ভাঙতে দেব না…..

মুগ্ধ দৃষ্টিতে নিলয়ের প্রতিচ্ছবির দিকে তাকিয়ে আছে তাহিন…মানুষটা এখন যেন খুব সহজে চেহারা দেখে মনের ভাষাটা ও পড়ে ফেলতে পারে৷সত্যি কি তার আত্মার সাথে মিশে আছি আমি?

-উত্তরটা না হয় তুমিই খুঁজেই নিও….
এবার ভাবনাটা শেষে হলে…শুয়ে পড়বে আসো…..

-পা…পানিটা তো খেয়ে আসতে দিন…

-তা তো হবে না সুইটহার্ট…আমি এনেই দিচ্ছি।।

-কি এমন হবে গেলে…

-অনেক কিছু হতে পারে বলা তো যায় না….

বলেই নিলয় রুম থেকে একটু বের যেতে আবার রুমে ঢুকে তাহিনের হাত ধরে রান্নাঘর নিয়ে গেল…..পানি খাওয়া শেষ হতে।। একটু পর রুমে নিয়ে গেল…সাথে একজগ পানি ও নিয়ে গেল…….তাহিন বড় বড় নিংশ্বাস ফেলে বলল….

-আপনি মানুষটা আসলে বড্ড খারাপ…..

-হুম জানি তো…..
তুমি একথাটা বললে তখন আরো বেশি খারাপ হতে ইচ্ছে করে আমার….

নিলয় বাঁকা হাসি দিয়ে তাহিনকে বিছানায় শুয়ে দিয়ে ওড়নাটা টান দিয়ে ফেলে দিতে চমকে উঠল তাহিন…
-কি করছেন কি?

-আই নো সুইটহার্ট।।।কেন তুমি আমার কাছে আসতে এজন্য ভয় পাও।।।সেটা আমি বেশ ভাল করেই বুঝতে পেরেছি….তারপরে ও সেটা ক্লিয়ার করার জন্য আজকে এমনটা করলাম……..নাউ আম রাইট…….

হুম এমনটা তুমি ভাবতেই পারো কারণ আমি তোমার সাথে অন্যায় করেছি….শুধু এইটুকু বলে রাখছি তুমি না চাইলে এমনটা কখনো হবে না…..দ্বিতীয় কোনো ভুল ও আমি করতে চাই না……আমার প্রয়োজন শুধু মাত্র তোমার একটুখানি ভালবাসার……এছাড়া আর কিছু চাওয়ার নেই আমার…..

কথাটা বলে হুট করে তাহিনের বুকে মাথা রেখে শুয়ে পরল নিলয়….চোখ দিয়ে পানি আসতে চাইলে ও আটকে রাখল সেটাকে….আজ কোনো প্রকার বাধা দিল না তাহিন….সে ও তো মানুষটাকে অকারণে ভালবেসেছে……এখন ও বাসে…সে টান টায় যেন নিলয়কে দূরে সরাতে দিচ্ছে না…..নিলয়ের মাথার উপর একটা হাত রেখে ঘুমের রাজ্য পাড়ি জমাল তাহিন…..

মুগ্ধ নয়নে চেয়ে আছে নিলয়…সারাজীবন এক দৃষ্টিতে চেয়ে থাকলে ও যেন দেখার স্বাদ মিটবে না….মায়াবী মুখটা বড্ড টানছে…..কপালে একটা চুমু দিতে….ঠোঁট চলে গেল ঠোঁটের কাছে….ঠোঁটের উপর ঠোঁট রেখে আলতো করে চুমু দিয়ে সরে গেল নিলয়….

.

.
ঘুমের আড়মোড়া ভেঙে চোখ জোড়া খুলতে
নিলয়কে দেখে চকে গেল তাহিন….
দু’হাতের তালুতে থুথনি রেখে বিছানায় উপুড় হয়ে শুয়ে ড্যাবড্যাব করে তাহিনের দিকে চেয়ে আছে নিলয়…..তাহিন ভ্রু কুচকে মিটমিট করে একটু তাকিয়ে পাশ থেকে একটা বালিশ ছুড়ে মারল নিলয়ের মুখে….নিলয় ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে খপ করে বালিশটাকে কেচ ধরে…..গড়াগড়ি খেয়ে তাহিনকে ধরতে গেলে ধপাস করে বিছানা থেকে পরে যায়…নিলয়ের বিকট চিৎকারে থমকে দাঁড়ায় তাহিন……..পিছনে মুড়ে নিলয়কে ফ্লোরে কাতরাতে দেখে চেহারার রঙ পাল্টে গেল তাহিনের……দৌড়ে এসে নিলয়কে ধরে ভর্য়াত কন্ঠে বলল….
-আমি আসলে…..

এমন সময় নিলয় হো হো করে হেসে উঠে তাহিনকে টান দিয়ে নিজের উপর ফেলে দিল……..অমনিতে মেজজটা বিঘরে গেল তাহিনের……

-আপনার কি মাথা খারাপ হয়ে গেছে করছেনটা কি?

-এবার দেখি পালাও….?

-তারমানে আপনি ব্যাথা পাননি এসব ইচ্ছে করেই করছেন…..?

-তাছাড়া আর কোনো অপশন রেখেছ তুমি….?

-তাই বলে….হাত পা ভাঙলে তখন কি হত…?

-কি আর হত…বউয়ের হাতে সেবা পেতাম….

-আপনি আসলেই খারাপ….
ছাড়ুন আমাকে…..

-আচ্ছা সরি বাবা…

-ছাড়তে বলছি না……

-ওকে ফাইন একটা শর্তে…..

-নো আপনার কোনো শর্ত শুনতে আমি রাজি না…. …..
-ওকে তাহলে আমি ও ছাড়ছি না…..

-ছাড়তে হবে না….আমি নিজেই ছাড়িয়ে নিব নিজেকে হুমমম…….
অনেক প্রচেষ্টার পর নিলয়ের থেকে নিজেকে ছাড়াতে পেরে এক দৌড়ে রুম থেকে বের হয়ে গেল তাহিন…..

ফ্রেশ হয়ে রান্নাঘর দিকে পা বাড়াল তাহিন…..এই কয়েকটা দিন এই বাড়ীতে থাকলে ও রান্নাঘর তেমন একটা যাওয়া হয়ে উঠেনি….আজ বেশ স্বাচ্ছন্দ্যে রান্নাঘর ঢুকে নাস্তা বানিয়ে নিল…..হাতে হাতে ফুলি মেয়েটা ও এটা ওঠা এগিয়ে দিল…নাস্তা বানিয়ে টেবিলের উপর রেখে সরে যেতে মুখ থেকে মৃদু আওয়াজে আহ শব্দ করে ফ্লোরে বসে পড়ল তাহিন….

ঠিক এমন সময় নিচ থেকে চিৎকারের শব্দ শুনে দ্রুতগতিতে ছুটে এল নিলয়….পায়ে হাত দিয়ে ফ্লোরে বসে আছে তাহিন.. ফুলি চিৎকার করে নিলয়কে ডাকছে…পাশে একটা গ্লাস ভাঙা সম্ভবত টেবিল থেকে গ্লাসটা ওর পায়ের উপর পড়েছে…নিলয় এক মুহূর্ত দেরি না করে তাহিনকে কোলে তুলে সোপায় বসিয়ে দিল………ততক্ষণে ফুলি ফ্রিজ থেকে বরফ নিয়ে আসল….তাহিনের পায়ে হাত দিয়ে সেন্ডলটা খুলতে ব্যাথায় আহ করে শব্দ করে উঠল….চোখগুলো ছলছল করছে নিলয়ের ব্যাথাটা যেন সেই পেয়েছে…..ভর্য়াত কন্ঠে ফুলিকে ডাক্তারকে কল করার জন্য বলে বরফ মাসাজ করে দিচ্ছি তাহিনের পায়ে…..

-আমি ঠিক আছি এত উত্তেজিত হওয়ার কিছু নেই…..

-…….

-সামান্য ব্যাথা পেয়েছি এজন্য ডাক্তার ডাকার প্রয়োজন নেই…..

নিলয় চুপ করে আছে কোনো কথায় বলছে না…..তাহিন নিলয়ের হাতের উপর হাত রাখতেই….

-সব আমারই জন্য…. দোষটা আমিই করি তার ফলে ভোগ করতেছ তুমি…..

-কি আজেবাজে কথা বলতেছেন এত আপনার দোষ কোথায়…আমি নিজের কারণে তো ব্যাথাটা পেয়েছি…..

-তখন যদি তোমার সাথে মজা না করতাম তাহলে হয়ত এমনটা হতো না…..

-তার সাথে এটার কি সম্পর্ক?
আপনি ও না……
একটু পর এমনিতে ঠিক হয়ে যাবে…..এরকম স্বাভাবিক হয়……

-খুব কষ্ট হচ্ছে।।।

-না,একটু….

একটু পর ডক্টর এসে কয়েকমিনিট ধরে চেকআপ করে চলে গেল…..সিরিয়াস তেমন কিছু হয়নি…..কয়েকটা ঔষধ লিখে একটা প্রেসকিপশন ধরিয়ে দিয়ে দিল শুধু…

নিলয় তাহিলকে কোলে তুলে রুমে নিয়ে গেল…..ফুলিকে বলল নাস্তাটা রুমে দিয়ে যেতে…একটু পর ফুলি নাস্তা নিয়ে রুমে গেল…নিলয় তাহিনকে খাইয়ে দিয়ে ব্যাথার একটা ঔষধ খাইয়ে দিল…..

তাহিনের চুলগুলো কোপা করে রেখেছে নিলয় সেটা খুলে দিয়ে একটা চিরুনি নিয়ে তাহিনের পিছনে বসল….

-কি করছেন কি….

-আমার বউয়ের মাথা আচড়িয়ে দিচ্ছে….

-সেটা তো দেখছি কিন্তু আমার পায়ে সমস্যা হাতে না…..দিন আমাকে আমি আচড়িয়ে নিচ্ছি৷৷

-আমি আঁচড়িয়ে দিলে সমস্যা আছে?

-তা তো নেই কিন্তু…

-তাহলে একদম চুপ করে বসে থাক…..

নিলয় একটু করে তাহিনের চুল আচড়িয়ে চুলের ভাজে নাক ডুবিয়ে বলল….

-তোমার চুলের স্মেলটা এত মিষ্টি কেন…ইচ্ছে করে সারা জীবন সেই সুবাসে ডুবে থাকি……

-সেটা শ্যাম্পু কোম্পানি ভাল জানে….ওরা কিছু একটা মিশাই যার জন্য স্মেইলটা এত মিষ্টি হয় বোধয় ….

-কি বললে….?

-গতকালই তো শ্যাম্পু করলাম তাই বললাম আরকি….
বলে হাসিতে ফেঁটে পড়ল তাহিন….

-বাহ!!!মজা নিচ্ছে।।

-মোটেই না…..

-দাঁড়াও দেখাচ্ছে…..

-এ্যা নাা

তাহিনের ঘাঁড়ে নাক ঘষে যাচ্ছে নিলয়…….সারা শরীল শিহরিত হয়ে উঠল….আগের মত সেই অনুভূতি যেন আবার খুঁজে পাচ্ছে…..

-আচ্ছা সরি আর মজা করবেনা….

নিলয় তাহিনকে ছেড়ে দিয়ে চুলটা ঠিক করে আচড়িয়ে দিয়ে একটা বেনি করে দিয়ে বলল…..
-কোপা করতে পারিনা তাই বেনি করে দিলাম…..

-চলবে…..

এবার আপনি রেড়ি হয়ে নিন….অফিস যাবেন না…..
নিলয় তাহিনের মাথাটা বুকে টেসে নিয়ে বলল….
-নো কয়েকদিন আর যাচ্ছি না….
সবকিছু আফরিনকে বুঝিয়ে দিয়েছি….

-মানে…..
Like & Follow my Page — #Update_কাহিনী

-মানে হচ্ছে অফিসের বস আমি…তো আমার ওতো একজন বস থাকতেই পারে….ধরো আমার বস হচ্ছো তুমি….তো এবার বলো কার সাথে বেশি টাইম স্পেড করা প্রয়োজন…..

-তার প্রয়োজন নেই।। আমি তো অবশ্যই বলল আপনাকে অফিসটায় করতে…..

-বউয়ের ন্যায় কথা না বলে একটু প্রমিকার মত কথা বললে কি হয়…..

-ভীমরুতে আপনাকে ধরেছে আমাকে না….

-হুম এজন্য ভাবছি আরেকবার বিয়ে করব…..

-করুন না বারণ করেছে কে…

-কে আবার তুমিই তো করবে…..

-আমি কেন করব? আমার তো আরো খুশি হওয়ার কথা…

-ভেবে বলছ তো….

-হুম

-ওকে ফাইন বিয়ের দিন কিন্তু না করতে পারবেনা…..

-আমি না করার কে…..?

-কে মানে তুমি তো মেইন আকষর্ণ…
তাহলে কয়েকদিনের মধ্যে বিয়েটা করেই ফেলি…..

পরিবেশটা একটু গম্ভীর হয়ে আছে….তবে মনে মনে নিলয়ের বেশ হাসি পাচ্ছে…..মেয়েটা এত বোকা কেন? সোজা ঝাপটা বলার পর তবু ও বুঝতেছে না কি বলতে চাচ্ছে সেটা।।।।

-আচ্ছা তোমার কি একটু ও কষ্ট লাগবে না….

-আমার কেন কষ্ট লাগবে…..?

-তাহলে কথাটা শুনার পর থেকে এভাবে দূরে সরে যেতে চাচ্ছিলে কেন….তার আগে তো চুপচাপ ছিলে?

-বলার প্রয়োজন মনে করছি না….আপনার মত মানুষ কখনো সেটা বুঝবেন ও না…..

-না বুজলে তাদের কি বুঝিয়ে বলা উচিত না…?

উত্তরটা না দিয়ে চুপ করে আছে তাহিন…. ওপপ এই মেয়েটা ও ভাঙবে তো মচকাবে না…..তাহিন নিজেকে ছাড়াতে নিলয় আরো শক্ত করে জড়িয়ে ধরে রেখেছে….চোখগুলো চলছল করছে বুকের ভিতর চিনচিন ব্যাথা করছে তবু মুখ দিয়ে কোনো কথা বের করছে না তাহিন……..

বেশ কিছুক্ষণ আগে নিলয় রুম থেকে বের গেছে….
হঠাৎ কলিং বেলের শব্দ শুনে তাহিনকে ঠিক করে বিছানায় বসিয়ে দিয়ে চলে গেল….ফুলির রুমে আসতে ওর কাছে শুনুছে একটা মেয়ে এসেছে নিলয় মেয়েটার সাথে ড্রয়িং রুমে বসে কথা বলছে…হয়ত নিলয়ের অফিসের কেউ হবে৷ কিন্তু এতক্ষণ একটা মেয়ের সাথে কি এত কথা কথা থাকতে পারে….ব্যাপারটা আরো লাগলে ও নজর আন্দাজ করতে চাচ্ছে…কি করে নিলয় এমনটা করতে পারছে।।।তাহলে কেন এতদিন এতকিছু এত নাটক করল আরেকটা বিয়েই যখন করবে বলে ভেবে রেখেছে….কেন যেতে দিল না……চলে তো যেতে চেয়েছিল….?তাহলে কেন আটকে রাখতে চাচ্ছে তবু ও কিন্তুু এমন ও তো হতে পারে নিলয় ওকে জেলাস ফিল করানোর জন্য এমনটা বলছে…..সেজন্য বারবার ভেবে দেখার জন্য বলছে….এমনটা হবে হয়ত…..

চোখ দিয়ে টোপ টোপ করে পানি পরছে…….করিডোরে থেকে একটা মেয়েকে নিলয়ের গাঁ ঘেঁষে বসে ওর সাথে কথা বলতে দেখে…..দুজনে বেশ হাসাহাসি করে কথা বলছে….মেয়েটাকে কেমন যেন চেনা চেনা মনে হচ্ছে তাহিনের….কিন্তু কোথায় দেখেছে সেটা মনে করতে পারছে না….হুম এটাই তো সেই মেয়ে যাকে একবার পার্টিতে দেখেছিল নিলয়ের সাথে সেদিন ও গা ঘেঁষে কথা বলতে।।।নিলয় অনেক তারিফ করেছিল মেয়েটার।।ওকে একা রেখে মেয়েটার সাথে ডিংক্স নিয়ে মেতে উঠেছিল…তাহলে কি সত্যি নিলয় এই মেয়েটা বিয়ে করার কথা বলেছে…..?মাথাটা ঘুরে উঠল।।অশ্রু মাত্রাটা ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছে….নিলয় কেন বারবার ওকে টকাচ্ছে……কেন?

বেশ কিছুক্ষণ আরিশার সাথে কথা বলে।।। তাহিনের সাথে পরিচয় করিয়ে দেওয়ার জন্য উঠে দাঁড়াল নিলয়।।কথা বলতে বলতে আরিশাকে রুমের দিকে নিয়ে গেল…….আরিশার নিলয়ের ফ্রেন্ড…কয়েকদিন পর ওর বিয়ে আর এজন্য নিলয়কে ইনর্ভাইট করতে এসেছে….

রুমের সামনে আসতে চমকে উঠল নিলয়….রুমের দরজা বন্ধ দেখে……দরজা ধাক্কিয়ে খুলতে চেয়ে পারলনা ভিতর থেকে দরজাটা লক করা….কি হল বুঝতে পারছেনা নিলয়… হঠাৎ করে কেন বলা দরজাটা লক করে রেখেছে…….ওর কিছু হয়নি তো ভাবতেই ঘাবড়ে গেল নিলয়…চিৎকার ডাকতে লাগল তাহিনকে কিন্তু ওপাশ থেকে কোনো সাড়া পাচ্ছে না…..মাথা কাজ করা বন্ধ করে দিয়েছে নিলয়ের কি করবে বুঝতে পারছেনা….হাত পা গুলা কাঁপছে….হঠাৎ মনে পড়ে রুমের এক্সাটা চাবি তো ওর কাছে আছে পাশের রুমে রেখেছিল যদি কখনো প্রয়োজন হয়….সময় যেন সেটা ও খুজে পাইনা….প্রত্যাক ড্রয়ার তন্ন তন্ন করে শেষমেশ খুজে পেল চাবিটা…..নিলয়ের হাত কাজ করছে না আরিশা নিলয়ের হাত থেকে চাবিটা নিয়ে দরজাটা খুলে দিল….

কিন্তু তাহিন রুমের কোথা ও নেই….ঘাবড়ে গেল নিলয়।।তখনি ওয়াশরুম থেকে পানির আওয়াজ পেতে দৌড়ে গেল ওয়াশরুমের কাছে….

-তাহি তুমি ঠিক আছো তো প্লিজ দরজাটা খুল….

-……..

-দেখ আমার খুব টেনশন হচ্ছে…..

-…….

-কি হয়েছে প্লিজ বল?…..

-……..

-প্লিজ দরজাটা খুল না…..
দেখ না খুললে এবার কিন্তু দরজা ভেঙে ফেলছি…..
তখনি ওপাশ থেকে কাঁপা স্বরে আওয়াজ এল

-আ…মি ঠিক আছি।।।

-তুমি ঠিক আছো কি নেই সেটা আমি পরে দেখেছি প্লিজ লক্ষীটি একবার দরজাটা খুল….

বেশ কিছুক্ষণ পর দরজাটা খুলে বের হল এল তাহিন..চোখ ফুলে লাল হয়ে গেছে….নিলয় দরজার বাইরে বসে আছে…….তাহিনকে বের হতেই দেখে ঝাপটে ধরল নিলয়।।।

-এই মেয়ে সমস্যা কি তোর…আমাকে না মারা পর্যন্তু তোর শান্তি হবে না,না….

-……………

তাহিন চুপ করে আছে।।।আরিশাটা দাঁড়িয়ে আছে এজন্য কিছু বলছে না…. তাহিনকে কিছু বলছে না দেখে নিলয় ওকে ছেড়ে বিছানায় কাছে নিয়ে গিয়ে বসিয়ে দিল…নিজেই ও তাহিনের পায়ের কাছে হাটু গেরে ফ্লোরে বসে পড়ে বলল….
-কি হয়েছে প্লিজ বল?

-…….

-এমন কেন করছ…?

-……..

আরিশা অবস্থা বুঝে বিদায় নিয়ে চলে গেল….
নিলয় এবার রেগে গিয়ে।।।
-এই মেয়ে বলনা কি হয়ছে?

-বিয়ে করার যখন করবেন তাহলে কেন এত দিন আমাকে আটকে রাখলেন….কেন বারবার আমার সাথে নাটক করে যাচ্ছেন?…

-কি?

-এখন আবার এটা বলবেন না যে আপনি ঔ মেয়েটাকে বিয়েটা করতেছেন না…..

নিলয় এবার আসল কারণটা বলল….
-না করতেছি না….ওকে কেন আমি বিয়ে করতে যাবে…কিছুদিন পর ওরই এমনিতে ও বিয়ে

-এজন্য তো আপনি ওকে বিয়ে করতে চাচ্ছেন…..
আমার সাথে এমনটা না করলে পারতেন….আমি তো চলে যেতেই চেয়েছিলাম….তবু কেন আমার সাথে এমনটা করলেন….

হাসি রাগ দুইটায় একসাথে প্রকাশ পাচ্ছে নিলয়ের….
-আমি বিয়ের কথা বলেছি মানে ওই মেয়েটাকে বিয়ে করব সেটা কে বলছে….?আমি কি বলছে আমি অন্য কাউকে বিয়ে করব….আমি তুকে বিয়ে করার কথা বলেছি গাধা।।

-আমাকে একদম গাধা বলবেন না…

-তুই তো এক নাম্বারের গাধি তুকে কি করে গাধা বলব….

কথাটা না বুঝে ভুল বুজে ফেললি…..এজন্য বলেছিলাম ভেবে দেখ…যেন বিয়ের দিন না করতে পারবু করিস….বিয়ের মেইন আকর্ষণ তুই…..গাধি মেয়ে এসব তুকে বলেছি….আর তুই উল্টাপাল্টা বুজে নিল….এত বেশি বুজিস কেমনে….?

-…..

-আর তুই কি বললি….তোর তো কিছু যাই আসে না..তোর তো আরো খুশি হওয়ার কথা….তাহলে এমনটা কেন করলি?

-……..

-আরেকবার যদি না বুঝে এমন কিছু করিস জানে মেরে ফেলব…….

-যত ইচ্ছা বিয়ে করিয়েন আমি কাল চলে যাচ্ছি।।।।

-গিয়ে দেখা না ট্যাং ভেঙে দিব…..

-তারপরে ও চলে যাবে…..থাকব না আপনার মত একটা খারাপ মানুষের সাথে….

হুম আমি খুব খারাপ এবার আমার খারপ রুপটায় দেখবি….তাহিনকে হালকা করে ধাক্কা দিয়ে বিছানার উপর ফেলে নিজের ভরটুকু ওর উপর ছেড়ে দিয়ে…..এলোপাতাড়ি চুমু দিয়ে যাচ্ছে….ধাক্কা দিয়ে সরাতে চেয়ে সরাতে পারছেনা এমন একটা পালোয়ান মার্কা স্বামীকে….

চলবে……🤔
[ভুল ত্রুটি ক্ষমা করবেন]

Like & Follow my Page — #Update_কাহিনী

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here