#স্বামীর অত্যাচার !!
#Part_13
রাত ১২.৪৫ মিনিট ঘুমের ঘোরে আচ্ছন্ন তাহিন….বাচ্চাদের মত গুটিসুটি মেরেই একপাশ হয় শুয়ে আছে…আর সেই বাচ্চাটাকে অনেকক্ষণ ধরে দেখে যাচ্ছে এক জোড়া চোখ…..ঘুমন্ত বাচ্চাটাকে যে এত মায়াবী লাগতে পারে সেটা জানা ছিল না চোখের মালিকের…চোখ জোড়া থেকে ও যেন এতদিন অন্ধের মত সেজে ছিল….আর এখন ঘুমন্ত মায়াপরীটাকে যেন এক মুহূর্তে ও চোখের আড়াল করার কথা ভাবতেই পারছেনা……
হঠাৎ করে হাতের স্পর্শ পেয়ে ঘোমের ঘোরে চোখ মেলে তাকাতেই চমকে উঠল তাহিন…ঝাপসা আলোয় এক জোড়া ব্রাউন কালারের চোখের চোখাচোখি হতে……সেই চোখের গভীরতায় কখনো পৌঁছাতে না পারলে…চোখ জোড়া যে তার অচেনা নয়..কিন্তু তা কি করে হবে….?সেই তো আজ এখানে নেই……তাছাড়া ভিতর থেকে ও দরজা লক করা…তাহলে…?ভয়ে চেঁচিয়ে উঠলো তাহিন…
-আম্মু আমাকে বাঁচাও……চো..
বলতেই তার এক হাত দিয়ে তাহিনের মুখ চেপে ধরে….
-এই মেয়ে চুপ এত চিৎকার করার কি আছে…
তাহিন লাফ দিয়ে উঠে বসে….
-আপনি……..????এখানে কি করে আসলেন?
-না আমার ভূত…ভূতরা যেকোন দিক দিয়ে আসতে পারে…এই ধর বারান্দা দিয়ে, জানালা দিয়ে তারপর দেওয়াল টপকিয়ে….
-একদম ফাইজলামি করবেন না বলে দিলাম…….
অসভ্যের মত মাঝরাতে এসে এসব কি শুরু করছেন কি….?
-ফাইজলামি কোথায় করলাম যা সত্যি তাই তো বললাম……আর অসভ্য তো তোমারি জন্য হতে হলো সারাদিন ফোন ধরো নি কেন….?
– কি করব আর করব না সেটা আমার ইচ্ছা……
এখানে কে আসতে বলেছে আপনাকে….?
-কেউ কেন বলতে হবে আমার যখন ইছা আমি আসতেই পারি……..
-না পারেন না…সেই অধিকারটা এখন আর আপনার নেই….
কথাটা শুনে চোখ মুখ লাল হয়ে গেছে নিলয়ের।। আচমকা তাহিনের গলা থেকে ওড়না টান দিতে মুখ বেধে দিয়ে তাহিনকে কোলে তুলে নিতেই… ভয়ে চুপসে গেল তাহিন….নিলয় যদি ওকে এখন ওই বাসায় নিয়ে যায় এই ভয়ে… হাত পা ছুটাছুটি করছে নিলয়ের থেকে বাঁচার জন্য….নিলয় এত কিছু তোয়াক্কা না করে তাহিনকে নিয়ে পিছনের গেইট দিয়ে বাসার বাইরে নিয়ে গেল…. তারপর এক হাত দিয়ে গাড়ীর দরজা খুলে তাহিনকে ভিতরে বসিয়ে দিয়ে ধপ করে দরজাটা বন্ধ দিল…..তাহিন মুখের বাঁধন খুলতে খুলতে নিলয় ড্রাইভিং সিটে বসে গাড়ী স্টার্ট দিতে তাহিন চেঁচিয়ে উঠল…..
– কি বলেছি আমাকে শুনতে পান নাই….. অসহ্য লাগছে আমার…আপনার নাটক দেখতে দেখতে….কেন করছেন এসব…?
-তোমাকে আমার প্রয়োজন তাই..
-সবসময় তো আপনার প্রয়োজনের সঙ্গীই হয়েই ছিলাম এই বাইরে তো আর কিছুই ছিলাম না….
-তখনকার প্রয়োজন আর এখনকার প্রয়োজনের মধ্য অনেক পার্থক্য….যে প্রয়োজনে তোমাকে আমার সাথে থাকতে বাধ্য করেছি তাছাড়া ও এখন আরো অনেক বেশি প্রয়োজন তোমাকে…প্রয়োজনটা শুধুমাত্র একদিনের জন্য না সারাজীবনের জন্য তোমাকে আমার প্রয়োজন……
-কিসের এত প্রয়োজন….আর কত প্রয়োজনে ব্যবহার করবেন আমায়?
-ভালবাসি তাই তোমাকে আমার প্রয়োজন।সামান্য কথাটা কেন বুঝতেছ না….
নিলয় চেঁচিয়ে কথাটা বলতেই স্তব্ধ হয়ে গেল তাহিন…..কথাটা বিশ্বাস করতে আজ বড্ড কষ্ট হচ্ছে…এমনটা যেন হতেই পারে না…..নিলয় তো ওকে কখনো ভালবাসেনি আর বাসতে ও পারে না…এটা হয়ত কোনো একটা নাটক…এখন অন্য কোনো প্রয়োজনে হয়ত এমনটা করছে….এমনটা তো হতেই পারে অস্বাভাবিক তো কিছুই নই…. গাড়ীর দরজাটা ধাক্কা দিয়ে খুলে দৌড়ে বের হয়ে যেতে……..নিলয় পিছন থেকে হেচকা টান দিয়ে তাহিনের হাত ধরে থামিয়ে দিতে চিৎকার করে উঠল তাহিন….
-হাত ছাড়ুন বলছি…
-প্লিজ একবার আমার কথাটা শুন……জানতাম হুট করে কথাটা বললে তোমার কাছে অদ্ভুত লাগবে ব্যপারটা..কিন্তু বিশ্বাস কর সেটাই সত্যি.. এভাবে বলতে চাইনি ভেবেছিলাম ধীরে সুস্থে বলব…কিন্তু তুমি এমন ভাবে বললে না বলে থাকতে পারলাম না….
-যদি আপনার বলা শেষ হয়ে থাকে তাহলে হাতটা ছাড়তে পারেন…
-ভুল শুধরানোর সুযোগটা কি একবার ও দেবে না…..?
-…………….
-একটু কি জায়গা নেই তোমার মনে আমার জন্য…..?
-……..
-কি হল বল একটুখানি ও কি ভালবাসনি আমায়….?
এতক্ষণ চুপ থাকলে ও এবার আর চুপ থাকতে পারল না…কথাটা শুনে তাচ্ছিল্যের হাসি হাসতে নিলয় চমকে উঠল….তাহিন কোনোমতে হাসিটা থামিয়ে…
-এমন কোনো কাজ করছেন আপনাকে একটুখানি ভালবাসার মত….কি করেছেন সেটা আর নাই বা বললাম….তাহলে কি করে বলছেন আপনাকে একটুখানি ভালবেসেছি কিনা….? মনে থেকে কখনো সেই কথা বের হতেই দেইনি……তাহলে হয়ত বলতে পারতাম…ভালবাসতাম কি বাসতাম না…..কিন্তু এমন কিছুই হয়নি….যদি মনের অগোচরে এমনটা হয়ে ও থাকে তাহলে সেটা শুধুমাত্র একটা ভুল ছিল…..আর সেই ভুল থেকে অনেক আগে বের হয়ে গেছি….এখন আর কোনো ভুল করতে ও চাই না…..দয়া করে এবার অত্যন্ত আমাকে মুক্তি দিন….একটু একা থাকতে চাচ্ছি আমি…….চলে যান আপনি..আর কক্ষনো আসবেন না আমার সামনে…..কক্ষনো না…..
বুকের ভিতর মোচড় দিয়ে উঠল নিলয়েের কথাগুলো শুনে।কি করে ওর দূরে থাকবে….সেটা ও যে কক্ষনো সম্ভব না…কিন্তু মেয়েটাকে কি করে বুঝাবে কথাটা….তাহিনের দুহাত আরো শক্ত করে চেপে ধরে..
-একবার নয় হাজারবার বলতে বাধ্য অন্যায় করিছি..অনেক বড় অন্যায়…তার জন্য শাস্তি দাও…তবু ও দূরে যেতে বলো না…প্লিজ….জানি তুমি এসব অভিমান করে বলছ….কিন্তু ভুল শুধরানো একটা সুযোগ ও কি দিবে না…..?
-ভুল শুধরানো সুযোগ তো আপনি অনেকবার পেয়েছিলেন….কিন্তু একটিবার ও আপনি আমায় বিশ্বাস করে দেখেননি…আর এখন সেই সুযোগটা আপনি হারিয়ে ফেলেছেন…..কথাগুলো মোটেই আমি অভিমান করে বলছি না… অভিমান তো মানুষ শুধু তার উপর করে যাকে ভালবাসে…তাহলে অভিমান করার তো কোনো প্রশ্নই আসে না…….
নিলয়ের থেকে জোর করে হাতটা ছাড়িয়ে নিয়ে চলে যেতেই……
-আমায় খারাপ হতে কেন বাধ্য করছ…..?
থমকে দাঁড়াল তাহিন…..একটু ভেবে ঘুরে দাঁড়িয়ে বলল..
-জানি আপনি কখনো শুধরাবেন না..হাজার সুযোগ দিলে ও না…….
আপনি খারাপ আর আরো খারাপ হোন সেটা আমি ও চাই তবে একটা কথা মাথায় রাখবেন…..এমন কিছু হবার আগে এবার আমি নিজেই নিজেকে শাস্তি দিতে বাধ্য হব…..তার জন্য কিন্তু আপনি নিজেই দায়ী থাকবেন…..এবার কি করবেন সেটা আপনি নিজেই ভেবে দেখেন……
এতদিন পর যেন নিলয়কে জব্দ করতে পারল…..কিন্তু তবু ও কেন এত কষ্ট হচ্ছে নিলয়ের চোখের দিকে তাকাতে…..সেই চোখে আজ যেন অন্য কিছু দেখতে পাচ্ছে…না না সেই চোখের দিকে যে আর থাকাবেনা……..তাহলে যে আরো কষ্ট পেতে হবে…..এবার যে পথটা অতিক্রম করা দরকার…..
ধপ করে মাটিতে হাটু গেরে বসে পরল নিলয়…..চোখ দিয়ে টুপ করে এক ফোঁটা অশ্রু বেয়ে পড়ল…..না পারছে পথ চলটা থামিয়ে দিতে,না পারছে জোর করে নিজের কাছে সারাজীবন জন্য আটকে রাখতে…..তাহলে যে তাকে সারাজীবন জন্য নিজের জীবন থেকে হারিয়ে ফেলতে হবে….এমনটা যে কুছুতেই হতে দিতে পারে না….তাহিনের পথচলার দিকে চেয়ে…..
-এটা তুমি করতে পার না….যা শাস্তি দেওয়ার দাও তবু আমাকে ছেড়ে যেও না প্লিজ….আমি নিজেও যে শেষ হয়ে যাব…..
চিৎকার করে কথাটা বলছে নিলয়….কিন্তু তাহিন একবার ঘুরে তাকাল না……গেইট লক করে আস্তে করে ভিতরে ঢুকে নিজের রুমে চলে গেল…..রুমের দরজা বন্ধ করে ওয়াশরুম ঢুকে শাওয়ারের ঝরনাটা ছেড়ে…..চিৎকার করে কাঁদতে লাগল…নিজে ও জানে না কেন এত কষ্ট হচ্ছে….শুধু চোখের পানি ফেলে যাচ্ছে……
কিন্তু নিলয় ও যে এত সহজে হাল ছেড়ে দিবে না…
অনেকক্ষণ পর শাওয়ারের ঝরনাটা বন্ধ করে উঠে দাঁড়াল তাহিন………চোখ মুখ ফুলে লাল হয়ে গেছে…কান্না করলে নাকি নিজেকে হালকা লাগে…কিন্তু তাহিনের অস্থিরতা যেন আরো বেড়ে গেছে….এমনটা তো হওয়ার কথা ছিল না…সেই তো নিলয়ের থেকে মুক্তিই পেতেই চেয়েছিল।। আর এখন হয়ত এটায় হবে…..তাহলে নিজে কেন কষ্ট পাচ্ছে…..কেন বা কষ্ট পাবে সেই.?যা হয়েছে তো ভালই হয়েছে এবার সে ভালই থাকবে……যদি ও অতীতের অাঘাতটা সহজে ভুলার নই তবু ও যে সেটা ভুলে থাকার চেষ্টা করবে সে……নিজের জীবনটাকে এবার যে নিজের মত গুছিয়ে নিতে হবে….নিজের মত করে বাঁচবে…বড় সড় একটা নিশ্বাস নিয়ে ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে গেল……
কিন্তু নিলয়ের হঠাৎ পরিবর্তনটা ও বেশ ভাবাচ্ছে ….ভাবতে না চাওয়ার স্বত্তে ও…যাকে কিনা সেই দুচোখে দেখতে পারত না আর এখন বলছে তাকে ভালবাসে….ব্যাপারটা সত্যি হলে ও তাহিনের কাছে বেশ নাটকীয় মনে হচ্ছে…..
কয়েকদিনের মধ্য তনিমাকে সব বুঝিয়ে এখান থেকে কোথা একটা চলে যাবে….কারণ নিলয়ের কোনো বিশ্বাস নেই….এর পরে ও যে সেই কোনো নাটক করবে না…তার ও কোনো গ্যারান্টি নেই….
অাদৌ কি সেই অনুতপ্ত..নাকি সব তার নাটক…… যদি কেউ মন থেকে তার ভুল শুধরে নেওয়ার জন্য ক্ষমা চেয়ে থাকেো তাহলে তাকে ক্ষমা করে দেওয়াটাই তো শ্রেয়….যদি সত্যি সেই অনুতপ্ত হয়ে থাকে তাহলে কি ভুল শুধরানোর জন্য একবার স…না না এসব কি ভাবছে আবার…..মন আর মস্তিষ্ক দুইটায় একসাথে কাজ করলে সিধান্তটা ও নিতে যে বড় বিপাকে পড়ে যায়…..কিন্তু সিধান্ত কেন নিবে সেই তো সিদ্ধান্ত নিয়েই নিয়েছে নিলয়ের থেকে আলাদা থাকার তাহলে আর কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়ার তো প্রয়োজন নেই…..
জামাকাপড় ছেড়ে রান্নাঘর দিকে পা বাড়াল…..এক কাপ কপি বানিয়ে নিজের রুমে নিয়ে আসল….মাথাটা বড্ড ধরেছে…এখন হয়ত কিছুটা ভাল লাগবে…… কয়েক চুমুক দিয়ে কপির মগটা টেবিলে রেখে দিয়ে..হাটুর উপর দুহাত রেখে মাথাটা তার উপর নুয়ে রেখেছে………..
তমিমার চোখে মুখে চিন্তার চাপ ভেসে উঠেছে…. মেয়েটা এভাবে মনমরা হয়ে নিজের রুমের মধ্য আবদ্ধ করে বসে থাকতে দেখে….হঠাৎ করে কি এমন হল বুঝতে পারছেনা……ছেলে মেয়ে দুটোর মাঝে এখন ও কি সব ঠিক হয়নি তাহলে…..?মেয়ের রাগের কথা ভালই করেই জানে একবার অভিমান হলে সেটা সহজেই ভাঙে না।।তাহলে কি?মেয়েটা ও না বরাবরই নিজের জেদটাকে আগে রাখে,…..কিছু বলছে ও না।।।কিন্তু না বললে বুঝবে বা কি করে….?আবার জিজ্ঞেস ও করতে পারছেনা….,কারণ মেয়েটা তো কক্ষণো কিছুই লুকায়না ওর কাছ থেকে…..যদি লুকায় মন মেজাজ ভাল হওয়া মাত্র গরগর করে এসে সব বলে দিত..এভাবে জিজ্ঞেস না করে একটু সময় ও দেওয়া দরকার…মন মেজাজ ভাল হলে নিশ্চয় এসে বলবে সেই আশাতে দিন গুনছে তনিমা…
এক সপ্তাহ পেরিয়ে গেল…
এই এক সপ্তাহ তাহিনকে নিলয়ের আর কোনো নাটকীয় কথা শুনতে হয়নি…..ঔদিনের পর থেকে যে নিলয় একবার ও ওর সামনে আসে নি… বড্ড ভয় হয় ওকে হারিয়ে ফেলার ভয় যদি সত্যি সেই নিজেকে শাস্তি দিয়ে বসে… আর যে কোনোভাবে তাকে হারাতে চাই না…..
কিছুটা স্বস্তির মধ্য আছে তনিমা….মেয়েটাকে কয়েকদিন ধরে একটু হাসি মুখে কথা বলতে দেখে।অভিমানটা হয়ত একটু একটু কমেছে…হাসিমুখে যখন আছে এখন আর কিছু জিজ্ঞেস না করাটায় শ্রেয় মনে করল….
হঠাৎ করে তনিমাকে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরল তাহিন…..তনিমা হাতের উপর হাত রেখে….
-কিছু বলবি……?
-না……
-কিছু বলার থাকলে বলতে পারিস….
-না কি বলব……..
ওহ আচ্ছা আমি একটু পর বের হব…
-কোথায়?
-এডমিশন ব্যাপারে একটু খোঁজ নিয়ে আসব…..
-ওহহ আচ্ছা
তনিমা আর কিছু প্রশ্ন করার আগে রুম থেকে বের হয়ে গেল তাহিন…তারপর রেড়ি হয়ে কলেজের উদ্দেশ্য বের হয়ে গেল……..হঠাৎ করে রাস্তার উপারে নীলাকে দেখে আচমকা দৌড়ে রাস্তা পার হতে খুব স্পিডে একটা গাড়ী তাহিনের কাছাকাছি চলে আসতে ভয়ে চোখ মুখ বন্ধ করে রাস্তার মধ্যে দাঁড়িয়ে পড়ল।।। তখনি রাস্তা অপর থেকে একজন ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিল তাহিনকে….ধাক্কার গতিবেগটা বেশি হওয়াও তাহিন সাইডে গিয়ে পড়ল…ভয়ে এখনো চোখ বন্ধ করে আছে..হাতে সামান্য ছিলে গেছে….হঠাৎ করে কি হয়ে গেল কিছুই বুঝতে উঠতে পারল না…..
-এভাবে কেউ রাস্তা পার হয় এখন যদি কিছু একটা হয়ে যেতে……
কন্ঠটা শুনে চমকে উঠল তাহিন…কিছুটা চেনা মনে হল চোখ খুলে তাকাতেই….
-আপনি….
-বলেছিলাম না আমাদের আবার দেখা হবে ফুলটুসি…..
তাহিন চোখ বড় বড় করে উঠে দাঁড়াতে…..
-রাগলে কিন্তু আপনাকে সত্যি ভালই লাগে….
তা এভাবে রাস্তা পার হয়ে কোথায় যাচ্ছে…..
-না আসলে হঠাৎ করে আমার একটা বান্ধবীকে দেখে….
-হুম বুঝেছি…..
তাই বলে না দেখে রাস্তা পার হয়ে যাবেন….
-ধন্যবাদ……
রাহুল মুচকি হেসে…..
-ধন্যবাদ দেওয়ার প্রয়োজন নেই….এটা আমার দায়িত্ব…আর এমন না হলে হয়ত আপনার সাথে দেখাই হতো না…..
-আচ্ছা ঠিক আছে আমি আসছি আমার লেইট হয়ে যাচ্ছে….
-কোথায় যাবেন আপনি?
-এইতো সামনে***কলজে….
-আমি ওইদিকে যাব চলুন আমনাকে পৌঁছে দিই………
-না আমি ঠিক চলে যেতে পারব….
-এখনো কি বিশ্বাস হয়না আমাকে আমি কিন্তু এমন ছেলে না……
Follow my page = #Update_কাহিনী
দুজনে মধ্য বেশ ভালই কথা হল…ছেলেটা ঔদিন যতটা খারাপ ভেবেছিল অতটা খারাপ ও না….তাহিনকে কলজের সামনে এসে নামিয়ে দেওয়ার হাতে একটা বেন্ডেজ ধরিয়ে বলল এটা লাগিয়ে নিয়েন….তাহিন মুচকি হসে বেন্ডেজটা নিয়ে নেমে যেতে…..
-আমাদের কি আবার দেখা হবে….
তাহিন মুচকি হেসে……
-হতে পারে আবার নাও পারে…..
কথাটা বলে চলে যেতে…..
-নামটা কিন্তু এখনো জানা হয়নি…..
তাহিন পিছন থেকে বলল
-তাহিন….
রাহুল মুচকি হেসে….নাইস বাট আমি তোমাকে ফুলটুসি বলেই ডাকব…..
তাহিন চোখ রাঙিয়ে ঘুরে তাকাতে রাহুল গাড়ী স্টাঁট দিয়ে চলে গেল৷।।।
তাহিন তার এডমিশনপর ব্যাপারে সব ডিটেইলস নিয়ে….ব্যাগ থেকে মোবাইল টা বের করে চেক করতে
চিতিন্ত হয়ে পড়ল তাহিন।।।।তনিমার নাম্বার থেকে এতগুলো মিসডকল দেখে…….সাইলেন্ট মোডে থাকার কারণে শুনতে পাইনি….কিন্তু হঠাৎ তনিমা এতবার কেন কেন কল করল বুঝতে পারছেনা তাহিন??কোনো বিপদ…না এসব কি ভাবছে…….কল ব্যাক করে যাবে এমন সময় সময় আননোন নাম্বার থেকে একটা কল আসে.. রিসিভ করতে শিউরে উঠল তাহিন…..মুখ দিয়ে কোনো কথায় বের হচ্ছে না….ফোনের ওপর পাশে থেকে লোকটার কথা শুনে…..
-যততাড়ি সম্ভব আপনি সিটি হসপিটালে চলে আসেন……
তাহিনের কোনো রেসপন্স না পেয়ে লোজটা টুটু করে লাইনটা কেটে দিল…
স্থির হয়ে দাঁড়াতে পারছে না….কাঁপা কাঁপা হাতে তনিমার নাম্বারে ডায়াল আরো শিউরে উঠল তাহিন… নাম্বারটা এই মুহূর্ত বন্ধ কথা শুনে….তারমানে তনিমার কিছু একটা হয়ছে….চোখ দিয়ে অঝর ধারায় পানি বেয়ে পরছে……
দ্রুতগতিতে একটা সিএনজি নিয়ে সিটি হসপিটালের দিকে ছুটে গেল……হা পা কাঁপছে তাহিনের বুঝতে পারছেনা তনিমার হঠাৎ কি হয়েছে.. সকালেই তো ঠিকিই ছিল দেখে এসেছিল তাহলে……..
ওপপ পথটা যেন শেষ হচ্ছে না…..৪০মিনিটের রাস্তাটা যেন কয়েকঘন্টা মনে হচ্ছে….অবশেষে প্রায় ৪৭ মিমিট পর হসপিটালের দুয়ারে এসে পোছৌল।। ভাড়া মিটিয়ে… ছুটে গেল হসপিটালে ভিতর..হাত পা কাপছে তাহিনের…….
…..তবু ও দ্রুতপায়ে রিসিপশনের সামনে যেতে চমকে উঠল তাহিন…..আফরিন কে দেখে….আফরিন এখানে তাহলে কি কলটা ওই করেছে…?এজন্য কন্ঠটা একটু পরিচিত মনে হয়েছে….দৌড়ে আফরিন এর সামনে গিয়ে….
-আমার আম্মু কোথায়?কি হয়েছে প্লিজ বলেন না…..
কেঁদে কেঁদে কথাটা বলল তাহিন…
আইসিইউ বাইরে দাড়িয়ে আছে তাহিন….চোখ দিয়ে ফোঁটা ফোঁটা পানি বেয়ে পরছে……আইসিইউ ভিতরে থাকা মানুষটাকে এমন অবস্থায় দেখে….বুকের বা পাশে চিনচিন করে ব্যাথা অনুভব করছে…. মানুষটা শুধুমাত্র তার অবহেলা সয়তে না পেরে নিজেকে এত বড় শাস্তি দিয়েছে…সেটা যেন বিশ্বাস করতে পারছেনা তাহিন…কেন সেই এসব নাটকই করছে…কিন্তু নাটক করলে তার জন্য কি এভাবে নিজেকে শেষ করে দিতে চাইবে…?কিছুই বুঝতে পারছেনা তাহিন….তখনি শান্ত কন্ঠে আফরিন বলে উঠল…..
-নিলয় আমার বস হলে আমার বন্ধুর মত..কক্ষনো আমার থেকে কিছুই লুকাত না…..ও রাগি বদমেজাজী আর কঠোর টাইফের মানুষ….আর সেই কিনা এমন একটা করবে সেটা আমার কল্পনার বাইরে ছিল….কোনো কিছুতেই সহজেই ভেঙে পড়ে না…কিন্তু এক সপ্তাহ নিজেকে শুধু বন্ধ একটা রুম আটকে রেখেছিল…হাজার ডাকলে সহজে সাড়া দিত না…কারো সাথে কোনো কথায় না বলে..শুধু নিজেই নিজেই শাস্তি দিয়ে গেছে….যে শাস্তিগুলা সেই তোমাকে দিয়ে এসেছিল……কিন্তু আজ সকালে থেকে ওর কোনো চেন্স না পেয়ে শেষ পর্যন্ত রুমে দরজা ভেঙে ভিতরে ঢুকতে বাধ্য হলাম…আর ভিতরে ঢুকে দেখি. রক্তাক্ত অবস্থায় ফ্লোরে পরে আছে।।।তারপর হসপিটালে নিয়ে আসলাম…….ওকে এই অবস্থায় দেখে নিজেকে আটকাতে না পেরে তনিমার আন্টি থেকে তোমার নাম্বারটা নিয়ে কল করতে বাধ্য হলাম…..
কিছু বলতে পারছে না তাহিন চোখ দিয়ে শুধু পানি পরছে…নিলয় এমন কিছু করবে সেটা তাহিনের ও যে কল্পনার বাইরে ছিল…….
আইসিইউ থেকে কেবিনে শিফট করা হল নিলয়কে এক্ষনো জ্ঞান ফিরে নি….আফরিনের অনুরোধে তাহিন ভিতরে গেল…. ডাক্তারের পারমিশন পেয়ে…সামনে এগুতে পারছে না…হাত পা কাপছে….তবু একটু করে এগিয়ে গেল…নিলয়কে যদি সত্যি তার ব্যবহারে জন্য অনুতপ্ত হয়ে থাকে তাহলে এমনটা করতে পারত না….যদি তার কাছে ফিরে না গেলে হয়ত একদিন না একদিন ক্ষমা করে দিত…. কিন্তু এখন ক্ষমা করার থাকলে ও সেটা আর করবে না……শত রাগ অভিমান মনে পুষে পাশে থাকা মামুষটির হাত ধরে সারারাত ভাবনার মাঝে কাটিয়ে দিল……
চলবে…..
Follow my page = #Update_কাহিনী