স্বামীর অত্যাচার পর্ব ১২

#স্বামীর অত্যাচার !!
#Part_12

নিলয় তাহিনের রাগ দেখে মুচকি মুচকি হাসছে….সেই ও যে হাল ছাড়ার পাত্র নই….তাহিনের থেকে শাস্তি আদায় করেই ছাড়বে…..

তাহিন রান্নাঘরে গিয়ে তনিমার পাশে দাঁড়াল…. তনিমা রান্নার কাজে ব্যস্ত..এতদিন পর মেয়ে জামাই এসেছে বলে কথা….কথার বলার মত সময় ও যে নেই তার হাতে…এতটায় ব্যস্ত হয়ে পড়েছে….এসব দেখে তাহিনের আরো রাগ লাগছে……আর কয়েক মুহূর্তে এই রান্নাঘর থাকলে রাগটা যেন আরো বেশি বেড়ে যাবে এসব দেখে৷রান্নাঘর থেকে বের হয়ে যেতে পিছন থেকে তনিমা বলে উঠল….
-আরে মামুনি কোথায় যাচ্ছিস নিলয়কে ডেকে টেবিল বস আমি নাস্তা নিয়ে আসছি…
-আমার এখন খেতে ইচ্ছে করতেছে…আগে একটু ছাদ থেকে ঘুরে আসি তারপর করে নিব…
-ছেলেটাকে আর কতক্ষণ উপাস করিয়ে রাখব… আসার পর থেকে এখনো তো কিছুই মুখে পরেনি…

-এসেছি এখনো আধঘন্টা ও হয়নি কিন্তু এমমভাবে বলতেছে যেন একদিন না খাইয়ে রেখেছ….

-আচ্ছা আমি ডেকে দিচ্ছি…ইচ্চামত খাইয়ে পেট পুরে দিও যাতে আরো দু-তিন না খেয়ে থাকতে পারে….

-কি বলছিস এসব…ছেলেটা একা একা খাবে নাকি…..
স্বামী স্ত্রী মাঝে এক আধটু ঝগড়া হয় তাই বলে ছেলেটার সাথে এভাবে রাগ করে থাকবি নাকি……

এবার মত ক্ষমা করে দে ছেলেটাকে….তুই যখন হসপিটালে ছিলি ছেলেটা না খাওয়া ভুলে তোর কাছে পড়ে ছিল……কখন তুই চোখ খুলে থাকাবি সেই অপেক্ষায় ছিল….

-আসার সাথে সাথে মাকে উল্টো পাল্টে বুঝিয়ে একটা তো কাহিনি রচনা করে দিল……হঠাৎ এসব নাটকের মানেটা কি?কি প্রমাণ করতে চাচ্ছে এসব করে….না জানি আর আর কত নাটক বাকি আছে….?

হঠাৎ করে নিলয়ের চোখ গেল বুক সেলফের রাখা নীল ফ্রেমের ডায়রিটার দিকে….অতি উৎসুকে সামনে এগুতে গেলে… পিছন থেকে তাহিনের কড়া কথায় থমকে যায়…..
-কি শুরু করেছিন কি?এত নাটক কেন করতেছেন….
-কি করলাম
-একদম ন্যাকামি করবেন না……
-ওহহ আচ্ছা বুঝেছি….
তুমি যেমন স্যতিটা এখনো বলতে পারোনি… তেমন আমি ও পারলাম না..জেনে শুনে ওনার টেনশন তো বাড়িয়ে দিতে পারিনা…যতদূর জানি তনিমা আন্টির নাকি হার্টের প্রবলেম ও আছে…..তাই প্রয়োজন বোধে বলেছি তোমার আর আমার মাঝে ঝাগড়া হয়েছে…যার কারণে তুমি আমার সাথে রেগে আছ…
-আমার আম্মুকে নিয়ে আপনার চিন্তা না করলে ও চলবে…কোথয় ছিল আগে সেই চিন্তটা?এখন নাটক করতে আসছেন….
-কে বলেছে ছিল না।ছিল বলেই তনিমাকে আন্টিকে এসবের মধ্য জড়ায় নি…..
-কোনো প্রয়োজন নেই আমার আম্মুকে নিয়ে চিন্তা করার…….তার চিন্তা করার জন্য আমি আছি. ঠিক বুঝিয়ে বলতে পারব তার জন্য শুধু একটু সময়ের প্রয়োজন…..দু তিনমাস পর ডির্বোস পেপার যেতে ঠিক সেই সময়টা হয়ে উঠবে…

নিলয় তাহিনকে হেচকা টান কাছে নিয়ে এসে দুহাত দিয়ে কোমর জড়িয়ে ধরে…….তাহিন চটপট করে যাচ্ছে নিজেকে ছাড়ানোর জন্য..
-ছাড়ুন বলছি…
-ছাড়ার জন্য তো ধরেনি…..
আমি কি করতে পারি সেটা ভাল করেই জান… নেক্সট টাইম যদি ডির্বোসের কথা মুখে এনেছ তাহলে খুব খারাপ হবে বলে দিলাম….এখন মনে হচ্ছো আমার লাইফের সব চেয়ে বড় মিসটেক তোমাকে বিশ্বাস না করাটা…..আর সেই ভুলের খেসারত দিতে ও তো আমি প্রস্তুত।।কিন্তু সেটা তেমাকে ডির্বোস দিয়ে নই…সো নেক্সট টাইম থেকে একথাটা ভুলে ও মুখে আনবে না……..
-আমার কথার নড়নড় হয় না….আমি দেখে নিব আপনি কি করতে পারেন…
-এমন যদি হয় তাহলে কিন্তু তুমি আমাকে আরো নিচে নামাতে বাধ্য করবে……

ঠিক আছে আমি তনিমাকে আন্টিকে গিয়ে এক্ষুনি বলে আসছি….তোমার সাথে প্রথম থেকে করা অন্যায়ের কথা…দিনরাত কিভাবে টর্চার করতাম তোমার উপর সব বলব একদম ফাস্ট টু লাস্ট…তারপর আমার কি হবে সেই তোয়াক্কাটা ও করব না…কিন্তু তনিমা আন্টির কিছু হলে দায়ভারটা সম্পূর্ণ তোমার…
জানি তুমি বলবে কিন্তু কি বলবে তৌহিদ আমামেদ থেকে আমার মাকে বাঁচানোর জন্য তোমাকে বিয়েটা করছি এর বাইরে আর কিছু নই..যার এজন্য তুমি আমার থেকে আলাদা হয়ে যেতে চাচ্ছা..জাস্ট এইটুকুই বলতে পারবে তাও আবার অনেক সময় নিয়ে…এর বাইরে আর কিছুই বলতে পারবে না কারণ সেটা তনিমা আন্টি সহ্য করতে পারবে না….

এখন তুমি যখন সেটাই চাচ্ছ তাহলে তাই হবে….

-আপনি এটা করতে পারেন না…

-কেন পারিনা অবশ্যই পারি…তুমি আমাকে এমন করতে বাধ্য করছ….আর আমি কতটা খারাপ সেটা তুমি ভাল করেই যান..

-আমার সাথে কি করছেন সেটা কেন এর মধ্য টেনে আনছেন…..এটা শুনলে আমার মা সত্যি মরে যাবে…

-আরে তুমি কাঁদছ কেন….একদম কাদঁবে বলে দিলাম…

-আপনি আমার মাকে মেরে ফেলতে চাচ্ছেন আর আমি কাঁদব না তো হাসব…

-তেমাকে তো বলেছি তুমি আমাকে শাস্তি দাও।।তবু ও ছেড়ে যাওয়ার কথা বলো না…

এবার চোখ মুছ তো..হঠাৎ করে তনিমা আন্টি এসে তোমাকে এভাবে দেখলে কি ভাববে বলে তো…..

এখন বড়ই বিশ্বাস করতে চাচ্ছে।।।যখন একটু বিশ্বাস করা সবচাইতে বেশি প্রয়োজন ছিল তখন কোথায় ছিল সেই চিলতে পরিমান বিশ্বাসটুকু…এখন আসছে ভুলের শাস্তি পেতে….

নিলয় ভুল করছে তৌহিদ আহমেদ সাথে তাহিনকে জড়িয়ে।। কিন্তু তাহিন বারবার বলার পর ও যদি নিলয় একটু বিশ্বাস করত তাহলে হয়ত ক্ষমা করে দেওয়া সহজ হত…..কিন্তু দিনের পর দিন শুধু কষ্টই দিয়ে এসেছেে… তার বদলে সামান্য বিশ্বাসটুকু করতে পারেনি….তাহলে তাকে কি করে শাস্তি বা ক্ষমা করে তার সাথে সংসার করতে…

চুপচাপ নিলয়ের সাথে ড্রানিং টেবিকে এসে এক কোনায় একটা চেয়ার টেনে বসে পড়ল..নিলয় ও তাহিনের পাশে চেয়ারটাতে বসেছে…তনিমা টেবিলে সব সাজিয়ে রেখেছে…..আপাতত কিছুদিন অভিনয় করে যাওয়ার কথা ভাবছে তাহিন….তারপর কোনো একটা রাস্তা তো নিশ্চয় বেরিয়ে আসবে…

তড়িঘড়ি করে একটুখানি খেয়ে উঠে যেতে নিলয় তাহিনের হাত ধরে বসিয়ে দিল
-সব শেষ করে তারপর উঠবে এখান থেকে….তুমি জান না তোমার শরীল খারাপ… না খেলে সুস্থ হবে কি করে?

তাহিন তনিমার দিকে হা করে তাকিয়ে আছে
-ঠিকিই তো বলছে…না খেলে শরীল ঠিক থাকবে কি করে…কখনো আমার কথা শুনিস নি….নে এবার খা…
-তোমাকে কি বলছিলাম আমার খেতেই ইচ্ছে করতে ছিল না…তবু ও বসেতে হল তোমার জন্য…এখন কিন্তু আর পারব না..
-পারবে না মানে..
দেখি হা কর কি করে না পার সেটা আমি ও দেখি..
-আম্মু
-আমি কিছু জানিনা….
বলেই তনিমা সেখান থেকে চলে গেল…
-হা করতে বলছি না….দেখি হা কর..
-তার প্রয়োজন নেই……
যখন প্রয়োজন ছিল তখন খাওয়ে দেওয়া তো দূরে কথা..খেয়েছি কিনা সেটা জানার ও প্রয়োজন মনে করেননি….এখন এত অাধিক্ষেতা দেখানোর কোনো মানে হয় না।।।

নিলয় তাহিনের কথা তোয়াক্কা না করে জোর করে খাইয়ে দিল…নিলয়কে প্রতি পদে পদে কথাগুলো মনে করিয়ে অপমান করা উচিত…এর থেকে ও বেশি কিছু বলা প্রয়োজন ছিল…নিলয় ও মনে মনে সেটাই চেয়েছিল…কারণ ওটা যে ওর প্রাপ্য….

ডিনার শেষে করে তাহিন তনিমার রুমে শুয়ে পড়ল…নিলয় তনিমার সাথে ড্রয়িংরুমে বসে কথা বলছে….জামাই আর শ্বাশুড়ির মধ্য অনেক কথা থাকতেই পারে…

তাহিনের ঘুমের ঘোরে আচ্ছন্ন…..নিলয় ভাবছে তাহিনকে কি করে তনিমার রুম থেকে নিয়ে যাবে…তনিমা ওয়াশরুম ঢুকতে নিলয় ঝুপ বুঝে কুপ মেরে দিল…এক মিনিট ও দেরি না করে তাহিনেকে পাজোকোলা করে ওর রুমে নিয়ে গেল।।।।

তাহিন পেটের মধ্যে ঠান্ডা একটা হাতের স্পর্শ পেয়ে নড়চড়ে উঠে…হঠাৎ করে হাতটা পেটের মধ্যে হালকা চাপ দিতে তাহিন চিৎকার করে লাফ দিয়ে উঠে বসতে নিলয় তাহিনের মুখ চেপে ধরে…নিলয়ের কথা যেন তাহিনের মাথাতেই ছিলনা..প্রথমে তো ভেবেছিল তনিমা পরক্ষনেই মনে হলে তনিমা তো কক্ষনো থ্রীপিছে ভিতরে হাত ঢুকিয়ে দিয়ে এভাবে চেপে ধরবে না……..রাগে গাঁ জ্বলছে নিলয়ের হাতে একটা কামড় দিতে নিলয় আহ শব্দ করে হাতটা সরিয়ে নেই….
-কি করলে এটা…
-বেশ করছি….কি শুরু করছেন এগুলা….?মাঝরাতে ও অসভ্যতামী করতে চলে আসছেন….
-আমি কোথায় এসেছি তুমি তো নিজেই এসেছ….
-একদম বাজে কথা বলবেন না….
-দেখই না ভাল করে…কে কোথায় এসেছে……
চারদিকে তাকিয়ে চমকে যেও না যেন আবার…..তোমার রুমে তুমি আসতেই পারো…

ভাল করেই বুঝতে পেরেছে এই কাজটা কার… তাহিন রেগে বিছানা থেকে নেমে যেতে নিলয় ওর হাত ধরে
নিজের উপর ফেলে দেয়…..
-তনিমা আন্টি কি ভাববে বল তো…হুট করে ওনার রুমে চলে গেলে…..
-যা ভাবার ভাবুক তবু ও আমি এই রুমে থাকব না…ছাড়েন বলছি….
-আগেই তো জোর করেই থাকতে এখন কেন অসুবিধা হচ্ছে….
ভালো মেয়ের মত চুপচাপ ঘুমাও…..কোনো ঝামেলা না চাইলে…..

নিলয় তাহিনকে নিজের বাহুডোর চেপে ধরে শুয়ে পরে……তাহিনের রাগ হলে ও এখন এভাবে থাকতে হচ্ছে…..

কিন্তু নিলয়কে কিভাবে শাস্তি দিবে সেটাই তো ভেবে পাচ্ছে না…ও তো আছে নিলয় না যে টুসটাস করে দুচারটা থাপ্পর মেরে নিজের জীবন থেকে বের করে দিবে…..এবার তাহিনকে একটু বলে দেন তো কি শাস্তি দেওয়া যায় নিলয়কে…..
ভোরের স্নিগ্ধ আলো জানালার পর্দা ভেদ করে তাহিনের চোখে মুখে পড়তেই লাফ দিয়ে বিছানা ছেড়ে উঠে যেতে নিলয় পিছন থেকে খপ করে তাহিনের হাত ধরে ফেলে
-কোথায় যাচ্ছ…?
-কোথায় যাচ্ছি মানে দেখতেছেন না সকাল হয়ে গেছে…
-না,কি করে দেখব তুমি বলেছিলে আমার চোখের সমস্যা আছে..তাছাড়া এই মুহূর্তে তুমি ছাড়া বাকি সব কিছু আমার কাছে অন্ধকার মনে হচ্ছে….
-এসব নাটকীয় কথা বন্ধ করে…হাতটা ছাড়েন আমি বের হব…
-বের হতে হবে না…এখন বাইরে বের হওয়ার চেয়ে তোমার রেস্টের প্রয়োজন বেশি….এত তাড়াতাড়ি বিছানা ছাড়ার কোনো দরকার নেই।।।শুয়ে পড়ো….
-আমার কোনো রেস্টের প্রয়োজন নেই….
-আমি যখন বলেছি প্রয়োজন আছে তাহলে নিশ্চয় প্রয়োজন আছে….

তাহিন থ মেরে বসে আছে…চোখে মুখে প্রচন্ড বিরক্তির চাপ ফুটে উঠেছে নিলয়ের নাটকীয় কথা শুনে… হাত ছাড়িয়ে চলে যেতে চাইলে নিলয় টেনে পাশে শুয়ে দিল…
-এখন আমি যতক্ষণ অবদি উঠব না ততক্ষণ পর্যন্ত শুয়ে থাকতে হবে বুঝেছ….
-আমি কে? আপনার কথা কেন শুনব আমি.?
-আমি কে জানো না..
-না কারণ আমার স্মৃতি শক্তি লোপ পেয়েছে….মাঝে যে খারাপ স্মৃতিগুলো ছিল সব মাথা থেকে মুছে গেছে।।।
-মুছে যাক..আমি ও সেটাই চাই…তাহলে আবার সবকিছু নতুন করে শুরু করা যাবে…
-সব কিছু চাইলে ও নতুন করে শুরু করা যায় না….
পারবেন আমার মাঝে আমাকে ফিরেয়ে দিতে……যা কেড়ে নিয়েছেন তা ফিরেয়ে দিতে….
……………..
-জানি পারবেন না সেটা সম্ভব ও না…তেমনি সব কিছু নতুন করে শুরু করা ও সম্ভব না….

সেদিন মনে হয়েছিল আপনি আমাকে পতিতালয় থেকে তুলে নিয়ে গেছেন… নিজের রাগ আর ক্ষোভ মিটানোর জন্য…….সারারাত ছটপট করেছিলাম অত্যন্ত একটু ভালবাসার চিহ্ন খুঁজে পাওয়ার জন্য কিন্তু এমন কিছুই ছিল না রাগ আর ক্ষোভ ছাড়া…নিজের প্রয়োজনে শুধু আমায় ইউজ করছেন…বউ হবে স্বীকৃতি দেওয়ার জন্য নয়…….এখন তো সব প্রয়োজন শেষ…আপনার সব ইচ্ছা ও পূরণ হয়ে গেছে…তাহলে কেন এত নাটক করছেন….

নিলয় একটুখানি চুপ থেকে…বড় সড় একটা নিশ্বাস ফেলে….
-রাগ মানুষকে বিকৃত মস্তিষ্কেের বানিয়ে দেই…আর সেই বিকৃত মস্তিষ্ক মানুষের হিতাহিত জ্ঞানটুকু ও কেড়ে নেই…জানার বা বোঝার মত কোনো ক্ষমতা রাখেনা…..তোমার প্রতি রাগ আর ঘৃণা ছাড়া আমার মনে আর কিছুই ছিল না….শুধু এতটুকু মাথায় ছিল তুমি একবার আমার হয়ে গেলে পালানোর চিন্তা মাথাতে ও আনতে পারবে না…..তোমাকে যেমন ঘৃনা করতাম তেমনি আমার মায়ের জন্য তোমাকে আমার কাছে আটকে রাখা ও অনেক প্রয়োজন ছিল…যাতে পালানোর কথা ভাবার আগে আমার সাথে কাটানো রাতটা তোমাকে বারবার তাড়া করে বেড়ায়…আর সেটায় ছিল আমার আরেকটা বড় ভুল…যা এখন আমি স্বীকার করছি….

আর এখন যদি তোমার কাছে এসব নাটক মনে হয় তাহলে নাটকেই শ্রেয়…..তবু তোমাকে আমার সাথে থাকতেই হবে….

-ছাড়েন বলছি…আমার আর এসব শুনতে ভাল লাগছে না….এই একদিনে জাস্ট অসহ্য লাগছে আপনার নাটকীয় কথাগুলো শুনতে শুনতে…..চলে যাচ্ছেন না কেন এখান থেকে..?

-তাহলে চল…..এক্ষুনি চলে যাব…

-আমি কেন যাব…আমি এখান থেকে কোথা ও যাব না বুঝেছেন…
-যেতে তো হবে….না গেলে কি করে নিয়ে যেতে হবে সেটা ও আমার জানা আছে…..

-যতসব নাটক…..ছাড়েন বলছি……

-ছাড়ার জন্য তো ধরনি….
এভাবে থাকতে হবে……

তাহিন নিলয়ের থেকে নিজেকে ছাড়নোর চেষ্টা করে যাচ্ছে…..এতদিন কষ্ট দিয়ে এখন আসছে নাটক করতে……সব কিছু শেষ করে দেওয়ার মুহূর্তে এমন নাটক বেমানান মনে হচ্ছে….অসহ্য হয়ে উঠেছে নিলয়ের এমন নাটকের অত্যাচারে….

ঘন্টা তিনেক পর ছাড়া পেল নিলয়ের থেকে…..তড়িঘড়ি করে ফ্রেশ হয়ে রুম থেকে বের হল…তনিমা রান্নাঘর আছে….. তাহিন রান্নাঘর দিকে এগিয়ে যেতে..তনিমা চুলায় পানি দিয়ে
-নিলয় কি এখন চা খাবে না কফি…
-এলাচ চা…
-মানে এলাচ চা খাবে….
তিন চারটা এলাচ আর দুই একটা তেজপাতা
তারপর লবনটা পরিমানের চেয়ে একটু বেশি দিবে..

-নিলয় সকালে এলাচ চা খাই তা ও আবার এমন …

-হুম।।।এলাচের সুগন্ধটা নাকি ভাল লাগে….
দেখি তুমি সরো তো আমি করে দিচ্ছি..সারাক্ষণ শুধু রান্না ঘরে পরে আছো….দুপুরের রান্নাটা ও আজ আমি করব…তোমাকে এত কিছু করতে হবে না…

-তার প্রয়োজন নেই মা আমি সব পারব….তুই এখনো পুরোপুরি সুস্থ না কথাটা মনে আছে…

-আর কত রোগী বানিয়ে রাখবে আমাকে…আমি তো একদম ঠিক আছি….

-চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকতো…

তনিমা চা করে তাহিনের হাতে দিল….নিলয়কে দেওয়ার জন্য…..নিলয় ফ্রেশ হয়ে ওয়াশরুম বের হয়ে….টাওয়ালটা বিছানার উপর রেখে মুচকি হেসে তাহিনের হাত থেকে কাপটা নিতে চোখ বড় হয়ে গেল নিলয়ের…এলাচ চা দেখে…এলাচ চা দেখলে নিলয়ের গায়ে জ্বালা ধরে…জীবনে এমন চা খাওয়া তো দূরে কথা ছুঁয়ে পর্যন্ত দেখেনি……
-নিলয় ভ্রু কুচকে তাহিনের দিকে তাকাল…

-চাটা আপনার মত পাগলের জন্য প্রয়োয্য মনে করলাম…ভাল কিছু খেয়ে যদি নাটকটা একটু বন্ধ করেন….

নিলয় তাতে এক চুমুক দিয়ে….
-নট বেড যদি ও স্মেইলটা একটু না অনেকটা অন্যরকম….

নিলয় চায়ের কাপে ফুঁ মেরে ঠান্ডা করছে….তাহিন এখন চোখ বড় বড় করে দেখছে…চাটা একটু ঠান্ডা হতে নিলয় মুচকি হেসে তাহিনের হাত ধরে একটা আঙুল তাতে ডুবিয়ে দিল…

-কি করছেন কি….?হাত সরিয়ে নিয়ে..

নিলয় এক চুমুক দিয়ে…..
-পারফেক্ট চেয়ে ও বেশি পারফেক্ট…
এখন মনে হচ্ছে পৃথিবীর সবচেয়ে মিষ্টি এলাচ চাটা আমার হাতে…

নিলয়ের থেকে তাহিন ছোঁ মেরে কাপটা নিয়ে তড়িঘড়ি করে রুম থেকে বের হয়ে গেল…এমন এলাচ চা খাইয়ে মুখটা একটু বন্ধ করতে চেয়েছিল…এখন তো উল্টা আরো বেশি নাটক শুরু করে দিয়েছে…..তখন তনিমাকে না বলে ও উপায় ছিল না..না বললে ও তনিমা চা কফি যেকোন একটা করেই দিত।।।।তাই ভেবেছিল চা কফি বাদে এমন একটা এলাচ চা খাওয়ানোই টায় ঠিক হবে….ঠিক না এখন পুরায় বেটিক হয়ে গেল…তাহিন তড়িঘড়ি করে কাপটা নিয়ে রুম থেকে বের হতে..

নাস্তা সেরে নিলয় রুমে চলে যেতে…..তাহিন তনিমার হাত ধরে একেবারে ছাদে নিয়ে গেল…..
-কি হল হঠাৎ এভাবে এখানে কেন নিয়ে আসলি…?
কিছু বলবি…..

তাহিনের চোখ ছলছল করছে….মুখ দিয়ে এখন কোনো কথায় বের হচ্ছে না

-চুপ করে আছিস কেন বল না মা কি হয়েছে….?

…….
-আমার কিন্তু টেনশন হচ্ছে….তোর চেহারার এমন অবস্থা দেখে….বল না কি হয়েছে….

তাহিন অনেক ভেবে আমাতা আমতা করে….
-আমি ভাবতেছি কি আমি এখানকার ভার্সিটিতে এডমিশন নিব….
-সেটা তো ভাল কথা।।তার জন্য চেহারার কেন এমন অবস্থা করলি…?
-কিন্তু নিলয় বলতেছে এখানে না…ওখানকার আরেকটা ভার্সিটিতে ভর্তি করাবে….কিন্তু ওই বাড়ীতে আমার একা একা থাকতে ভালো লাগে না…
তাই তুমি যদি ওকে বল….আমি এডমিশন টা এখনকার কলেজে নিব আর এখান থেকেই পড়ালেখাটা চালিয়ে যাব…

Follow my page = #Update_কাহিনী

-এই কথা আচ্ছা আমি কথা বলে দেখব ওর সাথে…..
তার জন্য এত চিন্তা করার কি আছে….পাগলী মেয়ে কোথাকার….

তাহিন তনিমাকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে চলছে….
বলতে চেয়ে বলতে পারল না….বলার মুহূর্ত নিলয়কে আড়ালে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে…..যদি নিলয় এসে সত্যি সব বলে দেই এই ভয়ে….কোনো মা যে সহ্য করতে পারবে নিজের মেয়ের এমন টর্চারের কথা…..

নিলয় রাগি চোখে তাহিনের দিকে তাকিয়ে আছে….
তাহিন দেখে ও না দেখার ভান করে মুখ ঘুরিয়ে রুমে চলে গেল…নিলয় ও ওর পিছন পিছন গিয়ে দরজা বন্ধ করে দিল…
-তুমি একমাত্র মেয়ে যে কিনা মাকে মারতে চাইচ..
-একদম বাজে কথা বলবেন না
-তা নয়তো কি তুমি তো চাইচ আমি তনিমা আন্টি সত্যিটা বলে দিয়..তারপর তনিমার কিছু একটা হয়ে যাক……আমি নিজের ভুল কখনো কাউকে এক্সপেলেন করতে বাধ্য নয়… কিন্তু তোমার কাছে হাজার বার করতে বাধ্য…..

এমন কি সেই ভুলের শাস্তিটা ও পেতে চাই.. কিন্তু এভাবে আলাদা হয়ে নই…..তোমার যদি এখানে থেকে আমাকে শাস্তি দিতে অসুবিধা হচ্ছে…তাহলে তার ব্যবস্থা আজকের মধ্যই করছি….তারপর যত রাগ অভিমান আছে মিটিয়ে নিও….

-কি বলতে চাচ্ছেন..আর করবেনই বা কি?

-সেটা সময়ে দেখতে পাবে…..

নিলয় তাহিনের হাত ধরে আচমকা হাতের উপর একটা চুমু খেল…তাহিন চোখ বড় বড় করে নিলয়ের দিকে তাকাতে…নিলয় চোখ টিপ মেরে….
-আমি বের হচ্ছি….
বিছানার পাশে ফোন রাখে আছে….রিং হতে যেন রিসিভ হয়।।।

-করতে বাধ্য নয়…

-না হলে কি হতে পারে সেটা সময়ে দেখতে পারবে…

বলেই নিলয় বের হয়ে গেল…যাওয়ার সময় ইশারায় একটা কিস ছুড়ে দিল..

যতসব নাটক।।।।।এখন মনে কোন প্লেন আঁকছে সেটা নিয়ে চিন্তিত তাহিন….

নিলয়ের এই পর্যন্ত শতের উপরে কল দেওয়া হয়ে গেছে তাহিনের নাম্বারে ……কিন্ত একবারে জন্য রিসিভ হলো না….খুব রাগ হচ্ছে নিলয়ের কিন্তু এখন নিজের রাগ ইগো সব এক সাইডে রেখে…তাহিনের মনে যে রাগ অভিমান জমে আছে সব উপেক্ষা করে নিলয়কে এখন ওর মনের ভিতর ঢুকতে হবে….

চলবে…….
[ভুল ত্রুটি ক্ষমা করবেন]

Follow my page = #Update_কাহিনী

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here