স্বামী পর্ব -১২+১৩

#গল্পঃস্বামী
#পর্বঃ১২+১৩
#পারভেজ_ইসলাম

🥀

আদৃতঃরায়য়হানন।

আমিঃকি!!আদৃত আমার মেয়ে।রায়হান নিয়ে গিয়েছে আমার জাহানকে।

আদৃতঃজান্নাত তুমি শান্ত হও আমি দেখছি।

আমিঃদেখছি মানে আদৃত আপুর এই অবস্থা আমার মেয়েটা।আদৃত আমার মেয়েকে রায়হান কিছু করে ফেললে।

আপুর পাশে বসে অনরবত কানছি আর কথাগুলো বলছি।আপু গায়ের রক্ত আমার জামায়,হাতে,আর চোঁখ মোছার কারণবশত মুখেও লেগে গিয়েছে।আদৃতের অবস্থা বেসামাল।সে নিজেই বুঝছে না সে এখন কি করবে?একদিকে বাবুকে পাওয়া যাচ্ছে না,অন্যদিকে আপু আর একদিকে আমি।আমি তোহ পাগল প্রায়।কেদেই যাচ্ছি।বাবুকে নিয়ে গেলে এমন কিছুই হতো না।আমার জন্যই এতো কিছু হচ্ছে।আমি যদি এতো কিছু না করতাম।একবারেই আদৃতকে বুঝতাম।সবার কথা একবার শুনতাম তাহলে কি কিছু হতো।আমার বাচ্চাটাকে না কিছু করে ফেলে রায়হান।এরই মধ্যে পৌঁছে যাই এ্যাম্বুলেন্স।আপুকে নিয়ে যায় হসপিটালের বয়রা এ্যাম্বুল্যান্স উঠাতে লাগে।আমাকে আদৃত হাত ধরে উঠায়। তার অবস্থাও যে ভালো তা কিন্তু নই।তার মনের অবস্থা করুণ কিন্তু বাইরে থেকে সে নিজেকে শক্ত রেখেছে।

আমি হাসপাতালে বসে কেদে যাচ্ছি।আদৃত, তার দারা যতটুকু সম্ভব তিনি তাই করছেন।পুলিশকেও জানিয়ে দিয়েছেন।তারা রায়হানকে খুঁজছেন।তিনিও তার লোকজন লাগিয়ে দিয়েছেন।কি দিয়ে কি করছেন তার খবর আমার নেই।আমি শুধু আমার মেয়েকে চাই।আর কিছু চাই না।আমার মেয়ের কিছু হয়ে গেলে আমার আর এই দুনিয়াতে থেকে কি হবে।আদৃত বসে বসে আমায় শান্তনা দিচ্ছেন।আপুর অপারেশন চলছে।ডাক্তার জানিয়েছেন ক্ষতটা বেশখানিক গভীর।আর রক্তও বেশ ঝড়ে গিয়েছে।আমি আর আদৃত ওটির সামনেই বসে আছি।আমার মাথায় শুধু বাবুর চিন্তা ঘুরছে। আমি ভুলভাল আওড়াচ্ছি আর আদৃতকে বারেবার বলছি জাহানকে এনে দিতে।আদৃত বার বার,প্রতিবার উত্তরে বলেই যাচ্ছে জাহানের কিছু হবে না।রায়হান তার কিছু করতে পারবে না।কিন্তু মায়ের মন মানে এতো সহজে।জাহানকে আমার কোলে না এনে দেওয়া পর্যন্ত আমি তো শান্ত হতে পারব না।ভয়টা তোহ যত সময় অতিবাহিত হচ্ছে ততোই বেড়ে চলেছে।এরই মধ্যে শুনি হসপিটাল জুড়ে চিল্লাচিল্লি।আমার সেইদিকে কোনো ভ্রুক্ষেপ নেই।আদৃতেরও নেই।কিন্তু আমরা যেখানে বসে আছি তার পাশে এসে দুইজন বলাবলি করছিলেন,

একজনঃমেয়েটার বয়স বেশি নই ২৭-২৮ হবে।এই অকালেই প্রাণ হারালো।

আরেকজনঃহে।শুনলাম মার্ডার নাকি।ইচ্ছা করে নাকি গাড়ি মেয়েটার উপর দিয়ে চালিয়ে দিয়েছে।মেয়েটার মা কানছিল বলছিলো আজকে রাতেই নাকি মেয়েটার বাইরে চলে যাওয়ার কথা ছিলো।কিন্তু তার আগেই।

একজনঃমার্ডার নাকি এক্সিডেন্ট ওতো জানিনা বাপু কিন্তু শুনলাম মেয়ে নাকি মেলা বড় অফিসে কাজ করত মেলা বড় লোক মানুষ।ওইযে কি সিআই কম্পানি সেইখানের।

কথাগুলো আমি বা আদৃত কেউই এতোক্ষণ তেমন মনোযোগ দিয়ে কথাগুলো শুনছিলাম না।কিন্তু এবার আদৃতের টনক নড়ল কম্পানির নাম শুনে।কারণ এই কম্পানিতে তো হৃদিতা কাজ করে।২৭-২৮ বছর,কম্পানির বস,রাতে ফ্লাইট তথ্য গুলো কোথাও না কোথাও হৃদিতার সাথেই মিল খায়।তাহলে কি হৃদিতা?না না কি করে সম্ভব।আদৃত সেই মেয়ের লাশ দেখার জন্য ব্যস্ত হয়ে পড়ে।কিন্তু কিভাবে যাবে আমাকে এই অবস্থায় একা ফেলে।তিনি তাদের মধ্যের একজন মহিলাকে আমার সাথে থাকতে বলে ওপাশটাই গেলেন।আমি আদৃতের উঠে যাওয়া দেখে বেশ অবাক হয়েছি।তাই আর সাত-পাঁচ না ভেবে উঠে আদৃতের পিছন পিছন যেতে লাগলাম।

আদৃত সেইখানে গিয়ে দেখল লাশটার উপর সাদা চাদর বিছানো।সেই চাদর জুড়ে ছাপ ছাপ রক্ত।মুখ যে স্থানে সেই স্থানে রক্তের পরিমাণ তুলনামূলক বেশি।আদৃত পাশে তাকিয়ে দেখে হৃদিতার আম্মু বসে কেঁদেই যাচ্ছে।আদৃতের আর বুঝতে বাকি রইল না যে মেয়েটা হৃদিতা।আদৃত জলদি গিয়ে হৃদিতার আম্মুকে সান্ত্বনা দিতে থাকে।কিন্তু একটা জিনিস ভাবাই তাকে কে করল হৃদিতার খুন?

আমি গিয়ে আদৃতের সামনে দাঁড়িয়ে বলি,

আমিঃআদৃত…..

আদৃত মুখতুলে আমার দিকে তাকিয়ে বলে ওঠে,

আদৃতঃজান্নাত আপনাকে না ওইখানে বসতে বললাম।

আমিঃইনি কে আদৃত?আর ইনার হয়েছেই বা কি?

আদৃতঃজান্নাত তুমি শান্ত হও।তুমি গিয়ে বসো।

আমিঃনা আদৃত আমায় বলেন কোনো খারাপ কিছু হয়নি তো?আর আদৃত বাবুর ব্যাপারেও কি কিছু জানেননি।

আদৃতঃজান্নাত এমন কিছুই না।আপনি এখন ঠিক নেই আপনাকে আমি সব পড়ে বলছি।(উঠে দাঁড়িয়ে)

আমিঃনা আদৃত।যা বলার এখন বলেন।নইলে দম বন্ধ হয়েই মরে যাব। প্লিজ বলেন হয়েছে টা কি?

আদৃতঃজান্নাত হৃদিতা মারা গিয়েছে।কেউ আজকে সকালে ওর উপর দিয়ে প্রাইভেট কার চালিয়ে দিয়েছে।কিন্তু তুমি এসব নিয়ে ভেবো না।

আমি হৃদিতার মার্ডার হয়েছে এইটুকু শোনার পর আর কিছুই শুনতে পাচ্ছিনা।দুইহাত দিয়ে মুখচেপে জোরে জোরে নিঃশ্বাস নিচ্ছি আর পিচাচ্ছি।মাথায় শুধু একটাই খেয়াল ঘুরছে রায়হান এমনটা করেননি তো?রায়হান যদি হৃদিতাকে খুন করে থাকে আমার মেয়ে ওকেও কি মেরে ফেলেছে।কিন্তু রায়হান এসব করছেই বা কেনো?আদৃত এসে আমার বাহু ধরে ঝাকিয়ে বলে,

আদৃতঃজান্নাত!জান্নাত!

আমিঃআদৃত রায়হান হৃদিতাকে মেরেছে,ওর জন্য লায়লাপু ওর জন্য মৃত্যুর সাথে লড়ছে ও আমার মেয়েকে কিছু করে ফেললে আদৃত তখন কিহ হবে আদৃত।

আদৃত আমার কথা শুনে বেশ বিস্মিত হন।এ কাজ যে রায়হান করতে পারি এই জিনিসটা তার মাথায় একটাবারের জন্যও আসেনি।রায়হান তাহলে প্রতিশোধের জন্য সবার জানের পিছনে ছুটছে।সে সবার খুন করে তার প্রতিশোধ পূরণ করতে চাই।তার মানে সে জান্নাত আজকে ওই বাড়িতে উপস্থিত থাকলে জান্নাতকেও মেরে ফেলত।জান্নাত যদি আজকে আদৃতের সাথে সকালে না দেখা করতে যেত তাহলে তোহ হৃদিতা বা লায়লা কারো স্থানে আজকে জান্নাত থাকত।ভাবতেই আদৃতের বুক কেপে উঠে।

আমি একনজরে হৃদিতার সাদা চাদরে ঢাকা লাশটার দিকে তাকিয়ে রয়েছি।আজ সকালেও মেয়েটার সাথে কথা হলো আমার।একদম সুস্থ।আমি আমার ২১ দিনের মেয়েকে রায়হান নিয়ে গিয়েছে এই কষ্টেই মরে যাচ্ছি আর হৃদিতার মা তার ২৭ বছর বয়সী মেয়েকে হারিয়েছেন।তার মনের অবস্থা কতোই না করুণ।এরই মধ্যে শুনি ডাক্তার এসে আদৃতকে ডাকদিলেন।আদৃত আমার সামনে থেকে সড়ে গিয়ে ডাক্তারের সামনে গিয়ে দাঁড়ালেন।আমিও ঘুরে ডাক্তারের দিকে তাকালাম।হয়তবা আপু এখন সুস্থ কিন্তু ডাক্তার যা বললেন সেটা আমি স্বপ্নেও কল্পনা করিনি।লায়লা আপুও নাকি আমাদের ছেড়ে পরকালে পাড়ি জমিয়েছেন।অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ এর জন্য তিনি মারা গিয়েছেন।ভাবতে পারছি না আর কিছু।রায়হান এতো নিষ্ঠুর হলো কিভাবে?কিভাবে করল এমন কাজ।আমার শরীরটা হঠাৎ করে কেমন লাগছে।আমি আদৃতের দিকে তাকাতেই আসতে আসতে তার চেহারাটা ঝাপসা হিয়ে আসলো আর আমি সেইখানেই লুটিয়ে পরলাম।মাথায় একটা জিনিসই ঘুরছিলো আমার মেয়ের সাথে কি করেছে রায়হান?

আজকে দুইদিন পার হয়ে গিয়েছে না রায়হানের না জাহানের কারো কোনো খোঁজ পাচ্ছিনা।আদৃতের লোক আর পুলিশ পাগলের মতো খুঁজে চলেছে ওদের কিন্তু ওরা জেনো কোথাও নেই।রায়হান যেন হাওয়ায় মিলিয়ে গিয়েছে নইলে বিলুপ্ত হয়ে গিয়েছে।যেসব জায়গায় থাকতে পারে সেই সব জায়গাতেই খোজা হয়েছে কিন্তু কোথাও পাইনি।নিরব ভাইয়াও কিছু জানেন না।আমি জীবিত লাশে পরিণত হয়েছি।দুইদিন নিজেকে রুমে বন্ধ করে রেখেছি।কারো কোনো কথা শুনছি না।দাদিও ফিরে এসেছেন।আদৃত গার্ডের ব্যবস্থাও করেছেন।আমার শুধু আমার মেয়ের চিন্তা।আমার খাওয়া ঘুম কিছু নেই।তাই বেশ দুর্বলও হয়ে উঠেছি।কিন্তু সেইদিকে আমার কোনো ভ্রুক্ষেপ নেই।আমি নিজের রুমে বিছানার উপর বসে বসে কাদছি।কান্না ছাড়া আর আল্লাহর কাছে দুআ করা ছাড়া আমার কিছু করার নেই।এরই মধ্যে দেখি আদৃত আসলেন।তার হাতে খাবারের প্লেট।আমি তাকে দেখে আমি মুখ নামিয়ে অন্যদিকে ঘুরে তাকায়।

আদৃতঃপুলিশ তো চেষ্টা করছে জান্নাত।আর তুমি না খেয়ে থাকলে কি বাবুকে পেয়ে যাবে না?

আমিঃচেষ্টা করে পুরো দুইদিনেও খুঁজে পেল না জাহানকে।কি এমন চেষ্টা করছে তারা?তুমি দেখেছো তাদের কোনো কাজ করতে কিচ্ছু করছে না তারা।তুমি আমাকেও খুঁজতে যেতে দিচ্ছ না।

আদৃতঃযেসব জায়গায় রায়হানের থাকার সম্ভাবনা আছে সব জায়গায় খুঁজেছে রায়হানকে।তোমাদের বাড়ি,হৃদিতার বাড়ি সব জায়গায় খুঁজেছে কিন্তু পাইনি।আর তোমায় যেতে দিতে বলছ রায়হান তোমায় সবার আগে মারতে চাই।আর তুমি অনেক অসুস্থ।

আমি আদৃতের কথাগুলো শুনতে শুনতেই আমার মাথায় একটা কিছু আসলো।আমি রায়হানের দিকে তাকিয়ে বললাম,

আমিঃএকটা জায়গা আছে যেইখানে আপনি বা পুলিশ কেউ খোঁজ নেননি।সেইখানে থাকার সম্ভাবনা আছে।

আদৃতঃকোথাই?

এরই মধ্যে একজন সার্ভেন্ট এসে গেট নক করেন।আদৃত তাকে ভিতরে আসতে বলেন।তার হাতে অনেক বড় একটা বক্স লাল পেপারে মোড়ানো।দেখেই কেমন ছ্যাত করে ওঠে মনটা।আদৃত সেটা বাইরে নিয়ে রাখতে বললেও আমার জোড়াজুড়িতে আমার সামনেই বাক্সটা খুলতে শুরু করন।বাক্সটা খোলার সাথে সাথে বাক্সের মধ্যে তাকাতেই আদৃত উঠে দাঁড়িয়ে দুইকদম পিছিয়ে যান।আর আমি জাহান বলে চিল্লিয়ে উঠি।

চলবে……

(ভুলত্রুয়টি ক্ষমার চোখে দেখবেন)

#গল্পঃস্বামী
#পর্বঃ১৩
#লেখাঃপারভেজ ইসলাম

একটা রক্তাক্ত পুতুল,জাহানকে শেষবার যে পোশাকে মুড়িয়ে রেখেছিলাম সেই পোশাকে মুড়িয়ে কেউ পাঠিয়েছে।পুতুল টার গায়ে ছুড়ি দিয়ে বেশ কয়েকবার আঘাত করা হয়েছে।ক্ষত বিক্ষত।খুবই নৃশংসভাবে পুতুলটাকে আঘাত করা হয়েছে।পুতুলটার চারিদেকেও রক্ত আর রক্ত।বুকের মধ্যের ভয়টা আরো তীব্র হয়ে উঠলো।বুকটা বারেবার কেঁপে উঠে জাহানের মুখখানা চোঁখের সামনে ভেসে উঠতেই।এইভাবে পুতুল পাঠিয়ে কি বোঝাতে চাই রায়হান?তার মানে কি রায়হান আমার মেয়েকে?আমি এবার সেই বক্সটা ছুড়ে মেরে দিই।বক্সটা নিচে উল্টিয় পড়তেই তার চারিপাশ রক্ত ছিটকে পড়ে।আমি এবার আরো জোড়ে চিল্লিয়ে কানতে থাকি।আদৃত জলদি এসে ওটা আমার সামনে দাড়ান।

আমার চোঁখ এখনো সেই পুতলের উপরই আছে।আমি আদৃত আমার সামনে আসতেই সেই পুতুলের দিকে আঙুল দিয়ে ইশারা করে বলি,

আমিঃআমারর মেয়েএএ(তুতলিয়ে)

আদৃত আমার দুইগালে হাত রেখে আমার সামনে বসেন,

আদৃতঃজান্নাত ওটা শুধু পুতুল। পুতুল ছাড়া কিছু নই।বুঝেছো?কিছু হয়নি জাহানের।

আদৃতের কথা শুনতে পেয়েও শুনতে চাচ্ছিনা।আমি আমার আঙুল দিয়ে সেইদিকে ইশারা করলাম।আদৃত সার্ভেন্টকে বললো জলদি সেটা নিয়ে যেতে।সার্ভেন্ট জলদি করে সেটা সড়িয়ে ফেলল।আমি এখনো সেইদিকেই চেয়ে।আমি যেন এক মূহুর্তেই সব ভূলে গিয়েছি।আদৃত আমায় অনরবত ডেকেই যাচ্ছে।

আদৃতঃতুমি বলছিলে জান্নাত একটা জায়গায় খোঁজ করা হয়নি।কোন জায়গা সেটা জান্নাত?

আমি এখনো মূর্তির ন্যায় বসে আছি।মেঝের এই রক্ত যদি আমার মেয়ের হয় তখন?আদৃত এবার জোরে চিল্লিয়ে বলে উঠেন,

আদৃতঃজান্নাত প্লিজ কথা বলেন।

আমি আদৃতের কথা শুনে কেঁপে উঠে ফ্যাল ফ্যাল করে তার দিকে তাকিয়ে পরি।আমার এখন কথা বলার শক্তি নেই।তাও খুব কষ্টে বলি,

আমিঃআমাদের বিয়ের পর প্রথম যেথায় ঠাই পাই সেইখানে।

আদৃতঃকোথায় সেই জায়গা?ঠিকানা কি?

আমিঃসেখানে রায়হান বিয়ের আগে থেকেই থাকত।জায়গাটা শহর থেকে একটু সাইডে।বস্তি টাইপ।

আদৃতঃআপনি আগে বলবেন না জান্নাত।এইসব জায়গাতেই তো যায় কিডন্যাপার রা থাকে।আপনি আমাকে সব ডিটেইলস দেন।জলদি বলেন।

আদৃত আমার থেকে সব ডিটেইলস নিয়ে পুলিশকে তখনই সব ইনফরমেশন দিয়ে দেই।এবার রুম থেকে বের হতে লাগলেই আমি বলি,

আমিঃআদৃত আপনি পুলিশের সাথে যাবেন না।

আদৃতঃপুলিশ তাদের মতো পৌঁছে যাবে আমি আমার মতো পৌঁছে যাব।

আমিঃকিন্তু পুলিশ যাওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করেন।

আদৃতঃচিন্তা করো না কিছু হবে না।আমার জীবনকে বাঁচানোর জন্য যদি আমিই একটু রিস্ক কাঁধে না তুলে নিই অন্যরা আর কি করবে।

বলেই উনি চলে গেলেন।আমি উনার কথা গুলো ভাবতে লাগলান।জাহানের জন্য না নিজের কিছু করে ফেলেন।উঠে দাঁড়াতে লাগলাম বাট পারলাম না।শরীরটা বেশ দুর্বল।জাহানের সাথে সাথে আদৃতকে হারানোর ভয়ও আমাকে গ্রাস করতে লাগল।

আদৃত নিজের গান নিয়ে বাড়ি থেকে বের হতেই গার্ডদের হেড প্রান্ত তার দিকে এগিয়ে আসে তার সাথে যাওয়ার জন্য।কিন্তু আদৃত তাকে সোজা কোথাই না বলে দেই।তাকে বলে সে যেন সর্বক্ষণ বাড়ির চারিদিকে নজর রাখে।কেও যেন কোনোভাবেই এই বাড়িতে না আসতে পারে।আর জান্নাত আর তার দাদির খেয়াল রাখতে।তাদের সিকিউরিটি আর রিস্পনসিব্লিটি তার হাতে।প্রান্ত তার উত্তরে বলে,

প্রান্তঃআপনি চিন্তা করবেন না স্যার আমি আমার দায়িত্ব খুব ভালোভাবেই পালন করতে জানি।জীবনের থেকেও আমার রিস্পন্সিব্লিটি আমার কাছে বেশি দামি।

আদৃত মুচকি হাসি দিয়ে চলে আসে।

জান্নাত যেইখানে বলেছে সেইদিকেই আদৃত গাড়ি ছোটাচ্ছে।এখন সময়টা বিকেলের শেষভাগ।নীলআকাশের মাঝে সাদা মেঘগুলোর মাঝে আগুনের ন্যায় জলজল করতে থাকা সূর্যের ডুবে যাওয়ার সময় আস্তে আস্তে এগিয়ে আসছে।কেই বা জানে এই সূর্যের সাথেই আদৃতের জীবনের সূর্যটাও চিরকালের জন্য ডুবতে চলেছে নাকি?আদেও তার কাল সকালের সূর্যদয় দেখা হয়ে উঠবে?সূর্য নির্দিষ্ট পথেই পশ্চিম আকাশে পৌঁছে অস্ত যাওয়ার অপেক্ষা করছে।কিছুক্ষণের মধ্যেই সূর্যের অস্ত যাওয়ার সাথে সমাপ্তি ঘটবে দিনের,,ঘনিয়ে আসবে আধার,,সন্ধ্যা নেমে আসবে।লাল আভাময় আকাশের নিচ দিয়ে গাড়ি চালিয়ে আদৃত গোন্তব্যের দিকে এগোচ্ছেন।

জান্নাতের বলা ঠিকানায় পৌঁছে আদৃত দেখে স্থানটা বেশ নির্জন।আশেপাশে পুরোনো ২-৪ টা বাড়ি।জান্নাত ঠিকিই বলেছে।আগে মেবি এটা কোনো বস্তিই ছিলো।কিন্তু এখন এইখানে একজন মানুষও আছে বলে মনে হয়না।জান্নাত বলেছিল একতালা বাসা দরজায় ১১৩ লেখা।বাসা খুঁজতে আদৃতের বেশি সময় লাগল না।বাসার গেট ভিতর থেকে বন্ধ।রায়হানের বুদ্ধি দেখে আদৃতের বেশ হাসি পাচ্ছে।আদৃতের সাথে পাঙ্গা নিয়ে,আদৃতের মেয়েকে চুরি করে এই বাসায় এনে রেখেছে।কিন্তু দরজা তো ভাঙা যাবে না।রায়হান বুঝে পালিয়ে গেলে।আর পুলিশেরও কোনো খোঁজ নেই।আদৃত ফোন বের করে ফোন দেই তাদের।এরই মধ্যে ভিতর থেকে ভেসে আসে ছোটো বাচ্চার কান্নার আওয়াজ।আওয়াজ শুনতেই আদৃত কিছুটা হলেও এই ভেবে শান্তি পাই যে জাহান একদম ঠিক আছে।তার কিছু হয়নি।কিন্তু পুলিশ এখনো পৌছাচ্ছে না।বাসাটা যেহেতু একতালা সেহেতু জালনা দিয়েও যাওয়া যাবে।আদৃত সাইডে গিয়েই দেখে জালনা খোলা।কিন্তু জালনায় গ্রিল।কিন্তু তখনই আদৃতের মনে হয় যে যদি গ্রিলি থাকবে তাহলে রায়হান আর বের হতে পারবে না।আদৃত এসে গেট ভেঙে ভিতরে ঢুকে।বেশ অবাক হয়।ভিতরে কেউ নেই।রায়হান বাচ্চাকে একা রেখে চলে গিয়েছে।তারমানে রায়হান পালিয়েছে।আদৃত যেদিক থেকে বাচ্চার কান্নার আওয়াজ ভেসে আসছে সেইদিকে পা বাড়ায়।গিয়ে দেখে বাচ্চাটা খাটের উপর শোয়ানো।দুইধারে বালিস।বাচ্চাটা অনরবত কেঁদেই যাচ্ছে।আদৃত জাহানকে কোলে তুলে নেই।একদম জান্নাতের মতোই সুন্দর।এইটুকু বাচ্চাকে রায়হান এইভাবে একা রেখে গিয়েছে।উফফ ওকে পাইলে যে কি করবে আদৃত।কিন্তু কথা হলো রায়হান জানলো কি করে আদৃত আসছে?তাহলে কিহ সে আদৃতের উপর নজর রাখে?আর রায়হান কি এতো বোকা যে বাবুকে না নিয়েই পালাবে?ওর মাথায় চলছে টাকি?

🥀

রিমি আমার হাতের সেলাইনটা খুলে দিয়ে আমার পাশে বসলো।আমি অনেক বেশি দুর্বল হয়ে পড়েছিলাম তাই সেলাইন দেওয়া লেগেছে।বাইরে যাওয়া বারণ তাই প্রান্ত ভাইয়া রিমিকে বাসায় নিয়ে এসেছেন।প্রান্ত ভাইয়া অনেক ভালো তাকে তো গার্ড মনে হয় না,,নিজের বড় ভাই মনে হয়।টেনশনে এখন আমার আর বাড়ি থাকতেই মন চাইছে না।আদৃত গিয়েছে সেই সন্ধ্যার আগে।এখন রাত ১০ টা আসার নামে খোঁজ নেই।বারেবার ফোন দিয়ে যাচ্ছি।দাদিও দিয়ে যাচ্ছেন।প্রান্ত ভাইয়াকেও বলেছি।ভাইয়া বলেছেন দেখবেন।রিমি এখন জোর করে আমায় স্যুপ খাওয়াচ্ছে।এখন আগের মতো আর দুর্বল লাগছে না।তাও কেমন যেন লাগছে।হঠাৎ করে শুনলাম কলিংবেল।আদৃত এসে গিয়েছে জাহানকে নিয়ে।জলদি করে খাট থেকে নেমে দ্রুত পায়ে নিচের দিকে দৌড়াচ্ছি।আমি নিচে নামতে নামতেই দাদি এসে গেট খুলে দিলেন।কিন্তু গেট খুলতেই আমার পা থেমে গেল।এক এক করে চারজন পুলিশ অফিসার ডাইনিং এ প্রবেশ।কিন্তু আর কেউ আসলো না তাদের পর।তাহলে আদৃত আর জাহান কই?পুলিশ অফিসারের মধ্যে একজন এসে দাদুর সামনে দাঁড়িয়ে জিজ্ঞেস করলেন,

পুলিশঃমিসেস আজাদ খান কি আপনি?(আদৃতের দাদাভাই এর নাম ছিল আজাদ খান।)

দাদিঃজ্বি অফিসার বলুন।আমিই মিসেস আজাদ খান।

পুলিশঃআর মিসেস আদৃত আজাদ খান?

আমি এগিয়ে গিয়ে বলে উঠি,

আমিঃজ্বি অফিসার বলুন।আমরা সবাই এখানে।

পুলিশঃদেখেন আজকে বিকেলে মিঃআদৃত খান একটা বাড়ির ঠিকানা দিয়ে জানান যে সেইখানে মিঃ রায়হান ফেরদৌসকে পাওয়া যাবে।আমরা উনার তথ্য অনুযায়ী সেইখানে যাই।কিন্তু তিনি আমাদের বেশখানিকটা আগেই সেইখানে পৌঁছে গিয়েছিলেন।তাকে অপেক্ষা করতে বলেছিলেন কিন্তু করেননি।আমার মনে হয় উনি ঠিক ছিলেন।ওই খানেই জাহান ছিল আর…..

আমি আর তাদেরকে কিছু বলতে না দিয়েই বলে উঠলাম,

আমিঃতার মানে আমার মেয়েকে পাওয়া গিয়েছে অফিসার?কই ও আর আদৃত কোথায়।তার তো আপনাদের সাথেই থাকার কথা ছিলো।ওরা ঠিক আছে তো?

পুলিশঃমিসেস আদৃত খান।প্লিজ আপনি শান্ত হন।আগে পুরো কথা শুনেন।মিঃখান আমাদের জন্য অপেক্ষা না করেই চলে গিয়েছিলেন।আর আমরা যখন সেইখানে পৌছায় মিঃখানের লকেশন ট্রেস করে দেখি পুরো বাড়ি ফাকা আর মিঃখানের ফোন এক রুমের ফ্লোরে পরে।আর সেই বাড়িতে বাচ্চাদেরও জিনিস ছিলো।তাই আমরা বুঝে নিয়েছি যে…

আমিঃতাহলে আদৃত আর জাহান কোথায় অফিসার।

অফিসারঃতাদের খোঁজা হচ্ছে কিন্তু পাওয়া যাচ্ছে না।

আমিঃপাওয়া যাচ্ছেনা মানে প্রথমে জাহান আর এখন আদৃত।বারেবার বলেছিলাম আদৃতকে একা না যেতে কিন্তু ও শুনিনি।ও বলেছিল কিছু হবে না। তাহলে কোথাই ও আর আমার মেয়ে।(চোখ থেকে পানি অবরন্ত গড়েই চলেছে)
এতো ধাক্কা সামলানো আর সম্ভব না।রিমি আর দাদি আমায় সামলাচ্ছে।পুলিশরা চলে গেলেন।আমি আর কোনো কুল কিনারা না পেয়ে বললাম যে আমিই এবার যাবো আমার মেয়ে আর আমার স্বামীকে খুঁজতে।

দাদিঃতুই কই খুজবি ওদের।আর এখন তো জাহান যেইখানেই থাক আদৃত আছে ওর সাথে।তুই আর ভয় পাসনা।কেউ কিছু করতে পাবে না ওদের।

রিমিঃহে আপু ওদের কেউ কিছু করতে পারবে না।তুমি রুমে চলো।

দাদি আর রিমি এসে আমায় রুমে বসায়।আমার পাশে বসে আমায় শান্ত্বনা দিতে থাকে।কিছুক্ষণ পর দাদি যাই ঘুমোতে আর একজন গার্ডকে বলা হয় রিমিকে বাড়ি পৌঁছে দিতে।

আমি রুমে বসে আছি।এখন আর না কেদে ভাবছি।আর কোথাই রাখতে পারে তাদের।আর এমন কোন জায়গা আছে?এমন কোনো জায়গা যেইটা কল্পনাতেও আনতে পারবে না কারণ রায়হান অনেক চালাক।এসব ভাবতে ভাবতেই ইলেক্ট্রিসিটি চলে যাই।আমি হকচকিয়ে উঠি।হঠাৎ করে গেট খোলার শব্দে সামনে তাকিয়ে দেখি একজন লোক আমার দিকে এগিয়ে আসছে।অন্ধকারের জন্য সে কে বুঝতে পারছিনা।সেই ব্যক্তি আমি কিছু বলা বা করার আগেই জলদি এসে আমার মুখে রুমাল ঠেসে ধরে।

চলবে………

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here