স্বামী পর্ব ১৯+২০

#স্বামী (সিজন-২)
#পর্ব -১৯
#সেলিনা_আক্তার_শাহারা
___________________________
“— হন হনিয়ে রিদয় বাড়ি ফিরে এসেছে।সেতুকে তো পেলো না তবে তিতিলকে কি জবাব দেবে জানা নেই। কি ভাবছে তিতিল।খুনি তো ছিলো এখন মাতাল হয়েছে।তবে সেতু এমনটা কেন করবে।

মাথায় কিছুই আসছে না। কিতে কি হচ্ছে।তিতিলকে রাতে বেশ বকনি দিয়েছিলাম নাকি??
যার কারনে আমায় দেখলে ভূত দেখার মত দৌরাচ্ছে।

জুতোটা খুলতে খুলতে রিদয়ের মাথায় একটা কথা এলো।
জুতোটার দিকে তাকিয়ে আচ্ছন্নে ভাবছে।
সকালে নিজেকে যে অবস্থ্যায় পেয়েছিলাম তাতে অন্য রকম কিছু মনে হচ্ছে।
তিতিল কি কাল রাতে এই ঘরেই ছিলো? না না একটা মেয়ে আমার কাছে আসবে আর জানতেই পারব না।
যদি তেমন কিছুই না হবে তাহলে আমার পরনের কাপর …
তিতিলকে জিজ্ঞাসা করব নাকি?

—-সবার খাওয়া হয়ে গেছে।রিদয়ই বাকি ছিলো।তাই তিতিল রিদয়ের খাবার টা ওর রুমেই নিয়ে এলো। তিতিলকে সামনে পেয়ে ভাবনা থেকে বেরিয়ে এলো রিদয়।
বেশ ছোট লাগছে নিজেকে। তিতিলের সামনে মুখ দেখানো দায় হয়ে পরেছে। কি যে করি।

কোন শব্দ ছারাই তিতিল ঘর ছারতে চাইছিলো তবে রিদয়ের ডাকে থমকে দাড়িয়েছে।

তিতিল কাল কি আমার হুস ছিলো না!আমিকি মাতালের মতই আচরন করেছিলাম?
তিতিলের মাথায় হ্যা সূচক জবাবে রিদয় নিরাশ, তাহলে সত্যি সেতুর কাছে বড় রহস্য রয়েছে জানার।

কাল বাবা আমায় এই অবস্থ্যায় দেখে বেশ ক্ষেপেছে তাই না!!

তিতিল দরজায় শেষ মাথায় দাড়িয়ে রিদয়ের ভয় তারালো।
না বাবা ঘুমিয়ে ছিলো, আপনিতো অনেক রাতে ফিরেছিলেন।

“আর আরেকটা কথা তিতিল প্লিজ।
তিতিল তাচ্ছিল্য হাসি হেসে রিদয়ের পানে তাকিয়েছে। কত কথাই তো বলতে ইচ্ছা হয় আপনায়।আপনার সাথে সময় কাটাতে ইচ্ছা হয়।তবে না সেই ইচ্ছা আপনি বুঝেন না বুঝতে চান। কথা তো বলেন তাও না পেরে হয়তো।
কখন জানি এই কথা টুকু বলা বন্ধ করে দেয় কে জানে!!

জ্বি বলুন।

“- আসলে কালকের কথা আমার কিছু মনে পরছে না।তুমিকি কাল রাতে এই ঘরে ছিলে!!
চোখ টা বন্ধ করে একদমে কথাটা জিজ্ঞাসা করেছে রিদয়।কথটা বিছ্রি হলেও জানতে তো হবে।
-লুকিয়ে থাকা ভয়টা আবার সামনে এসেছে। এখন যদি সত্যিটা বলি তাহলে হয়তো উনার চোখে অপরাধি হয়ে যাবো। হয়তো ভাববে অন্যের ভালোবাসা আমি ছিনিয়ে নিয়েছি।বেশ লোভিও ভাবতে পারে।উনাকে আটকাতে চাইছি এ সবই।

-” কি হল তিতিল কিছু বলছোনা যে??
— , আপনি ঘুমিয়ে যাবার পর আমি চলে এসেছিলাম।
বাহ কি বুদ্ধি খাটালাম বটে।না মিথ্যা বললাম। না সবটা বললাম।সত্যিই তো বলেছি উনি ঘুমিয়ে যাবার পরেই তো নিজের ঘরে এসেছিলাম, তবে কখন তা তো জানতে চায়নি….
রিদয় আরেকটু বিচলিত। তিতিলের কথা সন্দেহ জনক বটে।

———-দুই দিন ধরে তিতিল আর রিদয়ের তেমন কোন কথাই হচ্ছে না।জেনো অপরিচিত দুইজন মানুষ হেটে যায় পাশ কাটিয়ে।

“- কাল রুহির সাথে কথা হয়েছে।আর হঠাৎ হাজির হওয়ায় সেতুর দেখাও মিলেছে।
রিদয়কে দেখে দুজনেরই গলার পানি শুকিয়ে গেছে।
তুমি!!
-,কে আশা করোনি??
রুহি মানে মানে কেটে পরেছে এখানে থাকা ওর জন্য বিপদ জনক। কোন দিকে কথা বলা যাবেনা একদিক না একদিক দিয়ে ফাসঁবেই।

—-,সেদিন খাবারের সাথে কি মিশিয়ে ছিলে সেতু??
সেতু:……..!!
কোন উওর না পেয়ে একটু কড়া গলায়ই রিদয় আওয়াজ দিলো।কি হল কি মিশিয়ে ছিলে??

-রিদয়ের পায়ে সেতু জরিয়ে ধরেছে।আমায় ক্ষমা করে দাও রিদয়। আমি তোমাকে পাবার নেশায় এই কান্ড করে বসেছিলাম।

ছি সেতু এতটা নিচে নামলে? বিয়ের আগে যে মেয়ে পর পুরুষকে কাছে পাবার জন্যে এমন নিচ কান্ড ঘটাতে পারে সে আর যাই হক সতি হতে পারে না।

“- না না রিদয় এমন ভাবে বলো না।আমি শুধু তোমাকে পাবার লোভে এমনটা করেছিলাম।
— যে কারনেই করোনা কেন কাজটা ঠিক করোনি।

“-আমি জানি.. পা ছেরে রিদয়ের দুই গালে অল্ত করে চেপে ধরেছে সেতু।
আমি জানি এটা ঠিক নয়।তোমাকে এই ভাবে ধোকা দিয়ে কাছে পাওয়া টা আমাদের ভালোবাসার অপমান করা হত।আর তাই তো, আমার সেই ভুলটা বুঝতে পেরে আমি তোমায় বাড়ি পাঠিয়েছিলাম।

বাড়ি!!হুমমম..তাচ্ছিল্য ভাবে রিদয় হেসে সেতুর বাহুতে শক্ত করে চেপে ধরেছে।
এত কিছু করার পর বাড়ি পাঠালে বাহ..তাও নিজে গেলে না। একটা কন্সট্রেবলের হাতে আমায় পাঠালে।,এ জেনেও এতে আমার ক্যারিয়ারের উপর প্রভাব পরতে পারত!!তার পর একবার আমার খুজ নিলে না..আর ফোনটা করিয়েছো তোমার বান্ধবিকে দিয়ে।এই তোমার প্রেম???

” আসলে রিদয় আমি বেশ ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম।এখন যেই রাগটা তুমি দেখাচ্ছো ঠিক এই ভয়টাই। রুহিকে দিয়ে ফোন আমিই করিয়েছিলাম রিদয়। আমি জানতাম তুমি সহি সালামত বাড়ি পৌছেছিলে..আর তোমার রাগের ভয়ে আমি ফোনটা বন্ধ করে রেখেছিলাম।

—- রিদয় কিছুটা শান্ত হল।বাড়ি থেকে বার বার ওর বাবার ফোন পেয়ে বেশ চিন্তিত রিদয়।

দেখো সেতু আমায় আর আটকাতে চেও না।আমায় আচঁলে বাঁধা বন্ধ করো।আমি আর তোমার থাকতে পারছিনা।

“- সেতু চোখের পানিটা মুছে রিদয়ের কথার মানে খুজছে।অবশ্য সে সবটা জানে।তবে রিদয়কে তো বুঝতে দেয়া চলবে না…
— মানে কি রিদয়??

“- মানে আমি আটকা পরে গেছি সেতু। কারো খাঁচায় বন্দি হয়ে খুলা আকাশে ঘুরে বেরানোর ইচ্ছাটা বেমানান হবে।আর তা বেশি বেমানান এই জন্য হবে যে খাঁচায় আমি ইচ্ছা কৃত ভাবে বন্দি হয়েছি।

ভুলে যাও আমায়, আমায় নিয়ে সপ্ন আর দেখো না ভালো ছেলে দেখে বিয়ে করে নাও।

“- না না রিদয় এই ছোট একটা ভুলের শাস্তি এত বড় হতে পারে না।তুমি আমার রিদয় শুধুই আমার, তোমায় না পেলে আমি নিজেকে শেষ করে দেবো।
—আহহ সেতু বার বার বাচ্চাদের মত কাজ করোনা প্লিজ। আর তোমায় শাস্তি দিলাম কখন? শাস্তিতো দুজনই পাবো…
আমায় মুক্তি দাও সেতু প্লিজ…

“- কেন তুমি আমার থেকে পিছু ছারাতে চাইছো? কিসের খাঁচায় বন্দি হয়েছো।মজা করছো তাই না রিদয়।

–গাল থেকে সেতুর হাত দুটো শরিয়ে নিয়েছে রিদয়।চোখের কোনায় তার সত্যিকারের জল।সেতুর মত মিথ্যা ছলনাময়ি জল নয়।

” সেতু আমায় ক্ষমা করে দিও।তোমার এতে কোন দুষ নেই।তবে এখন সঠিক সময় না তোমাকে সবটা বলা।তবে এটুকু জেনে নাও।আমায় নিয়ে সপ্ন দেখা তোমার জন্য ঠিক নয়।মন কে শক্ত করো আর আমায় ভুলে যাও।তুমি শক্ত না হলে আমার সিদ্ধান্তেও আমি অটুট থাকতে পারব না।

‘কথা টুকু বলে রিদয় চলে এসেছে।কারন সেতুর চোখের পানি বড্ড নরম করে তুলছে তাকে।তবে সেতু যে কুমিরের মত কাঁন্না করে তা কি জানে।

—আজ আমার কারনে সবার কষ্ট।তিতিল তার স্বামী হারালো আর সেতু ওর ভালোবাসা যাকে জীবনের চাইতেও বেশি ভালোবাসতো।

“- চোখের পানিটা মুখে সয়তানের মত হাসি সেতুর।
খাঁচা তাই তো রিদয়?? ঐ খাঁচাটাই যদি না রয় তখন??? রুহি এবার সেতুর সামনে হাজির হল…এবার কি করবি সেতু???

——
“বাড়ি এসে রিদয় বড় সরো একটা ব্যাগ বের করেছে।তার বাবা এত গুলো ফোন দিলো তা তো তুললোই না এসে দেখাটাও করল না।

–রিদয়!!
আরিফ রহমান পিছনে দুইহাত রেখে ধির গতীতে রিদয়ের ঘরে হাজির হয়েছে।
বাবা!কিছু বলবে??

মানুষ কিছু বলার হলেই ফোন দেয় তুই তো ফোনটাও তুললিনা।আর এসে দেখাও করলিনা।
“–ছেলের চোখের এবার পানি দেখে আরিফ রহমান ভরকে গেছে।
রিদয় তুই! বাবা তুই কাঁদছিস কেন???

–কিছুনা বাবা এমনি।আসলে চোখে কি পরল তো তাই।

আরিফ রহমানের চোখ এবার রিদয়ের ব্যাগের দিকে।
রিদয় ব্যাগ কেন রে? তর কাপর কেন এতে রাখছিস??

-” বাবা কাল সকালে আমি বের হচ্ছি…
—বের হচ্ছি মানে??

মানে হল বাবা আমার তিন মাসের ট্রেনিং পরেছে।ঝালকাঠিতে, তিন মাসের জন্য সেখানেই আমার বসস্থান হবে।
—সেকিরে এত দূরে যাচ্ছিস কিছু বললিও না
“বাবা এমন দূরে তো নতুন হয় কতবারই তো জেতে হয়েছে।নিজেকে আপডেট না করলে সাধারন মানুষকে আপডেট করবো কি করে…

হ্যা তখন কার কথা আলাদা। এখন তর বৌ আছে সংসার আছে।আর তুই সব পিছু ফেলে!!!
” রিদয় আলমারি থেকে নিজের কিছু কাপর বের করে ব্যাগে গুজতে থাকে। বাবা সবারই সংসার রয়েছে।আর ঐখানে তো আর একা যাচ্ছিনা। সংসার সংসার করলে চাকরি আর করা হবে না। আর কি বাধাই করা সংসার আমার চরই পাখির ঘর।

“-তিতিল কে বলেছিস!!!
— কথাটা আরিফ শেষ করতে না করতেই তিতিল হাজির।
কোন শব্দ না করে রিদয়ের হাতের কাপর গুলো নিয়ে সুন্দর করে ভাজ সহ ব্যাগে ভরছে।

” তিতিলের কান্ডে আরিফ রহমান আর শব্দ করল না।ওর আপত্তি না হলে আমার এসবে পরার দরকার নেই।
জানিনা এটা তাদের কেমন ঘর।দুজনের চোখেই দুজনের আরাল হবার কষ্ট দেখা যায় তবে মুখ ফুটে বলবে না।
আর কাছে থাকলে তো চোখে চোখ তুলে তাকাই না।
রিদয় সত্যি বলেছে চরই পাখির ঘর।এক চরই যেমন তার সঙ্গীকে ছারা থাকতে পারে না ওরাও ঠিক তেমনই।

আরিফ তার ঘরে চলে গেছেন।তিতিল আপন মনে রিদয়ের সমস্ত দরকারি জিনিস খুজে খুজে ব্যাগে দিচ্ছে।ও কি করে জানে আমার এসব লাগবে??

“- তিতিল!!!
—হুম।তিতিলের চোখে জল তা স্পষ্ট রিদয় দেখতে পারছে।
যাক আমার জন্যেও কেউ কাঁদে।

কথাটা মনেই চেপে গেলো রিদয়।
তিতিলের বেশ কাছে এসেছে রিদয়।ওর দিকে তাকিয়ে হারাতে ইচ্ছা জাগছে তবে না না এটা ঠিক নয়।তিতিল তো আমায় কাছে ডাকেনা আমার থেকে দূরে থাকার জন্যে অন্য রুমে রাত কাটায় তা ভুলে গেলে হবে না।
তিতিলের থুতনিতে ধরে তিতিলের নত মুখটা উচু করে নিয়েছে।

আমি কয়দিন থাকবো না।বাড়ির প্রতিটা মানুষের দায়িত্ব্য তোমার কাঁধে রইল।
তিতিল মাথা ঝাকিয়ে সব শুনছে বলে সম্মতি দিলো।
চোখ খুলে তাকাচ্ছেনা তাকালেই চোখের জমা জল গুলো গরিয়ে পরবে….

——-আমায় দূরে রাখতে চাও। আর দেখো আল্লাহ তোমার কথা শুনেছে তিন মাস আমার মুখ দেখতে হবে না।ভালো না তিতিল..আরামে ঘুরে বেরাতে পারবে..
ঠোটে ঠোট কাপ্টি দিয়ে দাড়িয়ে তিতিল।কোন শব্দ করছে না।

একটা কথা রাখবে তিতিল??
হুম.বহু কষ্টে নিজেকে শান্ত রেখে হুম শব্দ টা বের করেছে।

আমি চলে গেলে ঐ ঘরে থেকো না।এখন তো আর আমি নেই তাই আরামে আমার ঘরটায় থেকো।

তিতিল কোন উওর দিলোনা। দৌড়ে চলে গেলো রিদয়ের থেকে বহু দূরে।
রিদয় তিতিলের চলে যাবার পানে বেশিক্ষন সময় ব্যায় করল না।তার যে সকালে বের হতে হবে।সব গুছিয়ে নিতে হবে রাতের মধ্যেই।

———–

“-ভোর ৫ টা বাজে.রিদয় বের হবে কিছুক্ষনের মধ্যে।খালি মুখে বের হতে হবে না।সকাল সকাল রিদয়ের পছন্দ মত খাবার দিয়ে টেবিল সাজিয়ে রেখেছে।
এত সকালে জুই আর ফুল ভুলেও ঘুম থেকে উঠেনা, তবে ভাই কে বিদায় জানাতে আজ জেগেছে।

ভিতরে রিদয় তৈরি হচ্ছে। তিতিল খাবার সব রেডি করে ফুলকে পাঠালো তার ভাইয়াকে জেনো খেতে বলা হয়। তিতিলের যাওয়ার ইচ্ছা নেই ওর কাছে।এমন কোন মন্ত্র থাকতো যা দিয়ে উনাকে আমার মনের ইচ্ছাটা বুঝাতে পারতাম।

–আরিফ শরিফ রোকেয়া সায়ন সবাই উপস্থিত।
ফুল রিদয়কে ডেকে এনেছে।এত সকালে এত কিছু দেখে সবাই অবাক।তিতিলকি রাতে ঘুমায়নি?? চোখ এত লাল বর্ন কেন? বেশ ফুলেও রয়েছে।

সারা রাত জেগে জেগে কি রান্না আর কাঁন্না দুটোই করেছে?
জানিনা বাপু ওদের কেমন মায়া…কাছে থাকলে পাত্তা নেই দূরে যাচ্ছে এখন উতলে উঠছে।

খাবার টেবিলে সবাই বসেছে তবে খেতে নয়।

রিদয়ের প্লেটে দুটো রুটি আর ওর পছন্দের সবজি দিয়ে তিতিল আবার কিছুটা দূরে সরে এসেছে।
রিদয় সবার উদ্দেশ্যেই বলে উঠলো,আজকে সবাই একসাথে বসুন না খাই।রোজ তো যে যার মতই খেয়ে নেয়।
আসলে রিদয় তিতিলকে উদ্দেশ্য করেই কথাটা বলেছে।কারন সবার সাথে বসে খাওয়া হলেও ওর সাথে একদিনও খেতে বসা হয়নি।কি খায় না খায় কে জানে।আমার পছন্দ তো সব জেনে নিলো।কিন্তু ওর পছন্দ তো দূর অপছন্দ গুলোই জানা নেই।

——আরিফ তিতিলকেও বসতে বললে তিতিল মানা করে দেয়।
আপনারা খান বাবা আমি এত সকালে খেতে পারিনা।
কথাটা বলার সাথে সাথে রিদয় চেয়ার ছেরে উঠে পরেছে।
বিলম্ব না করে তিতিল চট করে একটা চেয়ারে বসে প্লেটে একটা রুটি নিয়ে নিয়েছে।
ঠোটের কোনায় চিতল হাসি রিদয়ের বসবেনা মানে এখন বসলে কেন???

—-ট্যাক্সি এসে গেছে।এটা করেই স্টেশন অবদি যাবে।
“বাবা আর জেঠু জেঠিমাকে সালাম করে দো’আা নিলো। জুই ফুলের হাতে বেশ কয়েকটা টাকা গুজে কি জেনো বললো ওদের।

” সায়ন সামনে আসতেই রিদয় চোখটা বাকিয়ে ওর সাথে কথা বলতে শুরু করল।

সায়ন–
হ্যা ভাই।
ঐ যে দেখা যাচ্ছে ঐটা তর ঘর বুজলি…
“হ্যা ভাইয়া আমি জানিতো। কেন বললে এই টা।

-কারন তুই তো তর ঘর ছারা অন্যের ঘরে আড্ডা দিতে ভালোবাসিস তাই। (কারন হল তিতিলের সাথে ওর মেশাটা একদম পছন্দ নয়।)
সায়ন কথাটা কিভাবে নিলো জানতে চায়না রিদয়।বেরহতে হবে নয়তো ট্রেনমিস করবে।যা মোটেই ভালো নয়, বাকি অফিসার রা ঐখানে ওর অপেক্ষা করবে।

বাড়ির গেট অবদি সবাই রিদয়কে বিদায় জানালো। তবে তিতিল মনের অজান্তেই রিদয়ের পিছু পিছু চলে ট্যাক্সি অবদি হাজির।
সবাই বিদায় দিয়ে ভিতরে এলেও তিতিল আসল না।

—— যাচ্ছি ভালো থেকো।
তিতিলের সামনে থাকা চুল গুলো রিদয় পিছনে দিয়ে তিতিলের থেকে বিদায় নিলো তিতিলের ইচ্ছা করছে চিৎকার করে বলি যাবেন না আপনি, কোথাও না।
কেউ বুঝতেই পারছে না ওদের মনে কি!! সারা দিনে একবারও কেউ কারো মুখ দেখেনা সেখানে এত মায়া কোথা থেকে??
চলি…★চলি শব্দটা জেনো তিতিলের রিদয়টা ছিন্ন ভিন্ন করেছে।মায়া ভরা মুখে রিদয়ের পানে তিতিল এখনও তাকিয়ে/
#স্বামী (সিজন-২)❤️
#পর্ব -২০
#সেলিনা_আক্তার_শাহারা
___________________________
“- রিদয় ট্যাক্সিতে করে চলে গেছে।তিতিল বহু ক্ষন তার চলে যাওয়ার পানে মগ্ন ছিলো।তবে রিদয় একটিবারের জন্যেও পিছু ফিরে তাকালোনা।
কেন তাকালোনা এই নিয়ে তিতিলের মাথা ব্যাথা নেই।উনার ইচ্ছা করেনি তাই তাকায়নি আমার বড্ড ইচ্ছা করছে শেষ প্রান্ত অবদি দেখার তাই দেখছি।

———–

” এটা দিয়ে কি করবি?? আর এই টা কোথায় পেলি??
এত টা কাছ থেকে একটা মানুষ মারার যন্ত্র দেখে রুহির গলার পানি শুকিয়ে গেলো বলে।
এই মাএ একটা লোক এসে সেতুর হাতে একটা প্যাকেট ধরিয়ে শব্দহীন ভাবে হাওয়ায় মিলিয়ে গেলো।
প্যাকেটের ভিতর থেকে একটা পিস্তল বার করেছে সেতু।
এটা দেখেই রুহির হাত পা কাঁপছে।

“সেতু এটা কোথা থেকে? বল না। এটার কি প্রয়োজন পরল!!
—-আরেহ My dear frend..এত ঘাবরাচ্ছিস কেন?দরকার আছে বলেই না আনলাম।তুই এত ভয় চুপসে আছিস কেন?

” চুপসে আছি এই কারনে, তর হাতের জিনিসটা কোন খেলনা নয়।যা দেখে খুশিতে নাচবো।তর হাতের পিস্তলটা মানুষ খ্যাকো তাই।
এখন বল এটার সন্ধান পেলি কোথায়???

—– বোকা মেয়ে।পিস্তল টা কে পরম আবেশে হাত বুলাচ্ছে সেতু, মুখে এক রাশী আনন্দ।
জেনো ওর হাতে একশত মানুষের শক্তি সন্চয় হয়েছে।

পিস্তল টা নিজের ব্যাগে রেখে রুহির সাথে তার মনের ভাব শেয়ারে ব্যাস্ত।
তুই ভুলে যাস না রুহি আমরা প্রফেশনালি রিপোর্টার। আমাদের জানা থাকে কোথায় জান দেয়া হয় আর কোথায় নেয়া হয়।সব ধরনের মানুষের খবরই আমাদের রাখা দায়িত্ব.।

“রুহি সেতুর পাশে বসে ওর হাতটা শক্ত করে ধরেছে।সব বুঝলাম তবে এটা আমাদের কাজের কোন অংশ নয়। আর না এটার কোন প্রয়োজন রয়েছে।এটা যেখানের সেখানে ফিরিয়ে দিয়ে আয়।

— পাগল হলি নাকি!
রুহিকে এমন ধমক দেবে জানা ছিলো না। এমন ধমকে রুহিও বেশ আতংকিত।
সেতু এমন চোখ করে চিৎকার করে উঠলো কেন? ঘারে সয়তানের ভর হয়েছে বুধ হয়।
—- এটা ফিরেয়ে দেবার জন্যে এত টাকা নষ্ট করে আনাইনি।
যা করছি শুধু দেখ।চোখ খোলা থাকবে তবে মুখ জেনো না খুলা হয়।
রিতিমত ভয়ই দেখাচ্ছে রুহিকে।কারন রুহি মুখ খুললে সর্বনাশ হবে।তবে সেতু জানে এই মেয়ে ভুলেও মুখ খুলবে না। সেতুকে বড্ড মান্য করে। রুহি আরেক সেতু তৈরি হতে চায় কিনা।

______

“-এক সপ্তাহ হল রিদয় বাড়ি নেই।মাঝে মধ্যে তো কথা হত ফোনে তবে গত কাল রাতে তাদের মধ্যে কথা কাটা কাটি হয়। যার কারনে আজ সারাদিন কাটলো না তিতিল ফোন দিয়েছে না রিদয়।
_______

“- রিদয় নিজের মোবাইল হাতে নিয়ে খানিকটা সময় ব্যায় করেছে।এর মধ্যেই চোখে পরল তিতিলের ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট যা অনেক আগেই পাঠানো হয়েছে।
তা একসেপ্ট করে দেখতে পারলো কত রকমের ছবি।প্রোফাইলের ছবিটা দিয়েছে হলুদ রংঙের শাড়ি পরে চুল গুলো খুলা রেখে।
কই এই পর্যন্ত ওকে এই শাড়িতে দেখিনি।
মেজাজ কিছুটা খারাপ। ওকে বারন করেছিলাম ফোনটা শুধু কথা বলার জন্যে।এসবের জন্য দেয়া হয়নি। একবার বাড়ি যাই তার পর এই ফোনটাই আস্ত রাখবোনা।

তবে অচেনা কয়েকজনকেও ভুল বশত এড করে ফেলেছে তিতিল। সে বুঝতে পারেনি প্রথম, আর এখন বুঝলো দেরিতে আরকি।তাই তাদের আনফ্রেন্ড করার সময় হয়নি।
সায়ন যে চুপি চুপি এমন একটা কান্ড করবে জানাই ছিলো না।

— মেজাজ বেশ খারাপ হল সায়ন তিতিলকে ট্যাগ করে বহু কথাই লিখেছে..
“আর ছবিও পোষ্ট করেছে।

দেরি না করে তিতিলকেই ফোন টা দিয়েছে রিদয়।
–রান্না ঘরে ঘেমে একাকার তিতিল. শত কষ্ট সজৎ করেও সবার জন্যে খাবার তৈরিতে ব্যাস্ত হয়ে রয়েছে।
তবে রিদয়ের ফোন পেয়ে অন্তরে এক রাশি শীতল হাওয়া বয়ে গেলো। তবে সেই শীতল হাওয়া বেশি ক্ষনের জন্যে রইলো না।

না কোন কথা শুনার সময় আছে, রিদয়ের শুধু মন মত তিতিলকে শাষিয়ে ফোন কেটে দিয়েছে।
এক রকম ওর চরিত্রের উপরই আঘাত করেছে।

–তোমাকে বারন করেছিলাম না তিতিল এই সব এপ্স ফোনে জেনো না রাখা হয়। ফোনটা শুধু কথা বলার জন্যেই ছিলো।আর তুমি ফেসবুক থেকে শুরু করে যা আছে সব খানে নিজের একাউন্ট খুলে বসেছো?? এত সময় পাও কোথায়?আর এত সাহস হয় কি করে? আমার কথার অবাদ্ধ্য হয়ে!!
মানুষকে নিজের রুপ দেখানোর শখ তো বাড়িতে বসে রইলে কেন!বেরিয়ে পরো রাস্তায়… .
ফোন টা তুলতেই এত কঠর স্বর রিদয়ের, তিতিল বেশ চমকেই গেছে।কি সব বাজে কথা বলছে?
আমি তো কোন ছবিই আপ দিইনি তাহলে!!

” দেখুন অযথা আমার উপরে রাগ করছেন.আমার কথা তো শুনুন।

—না কোন কথাই শুনার নেই।নিজের মত করে তিতিলকে অপরাধীর কাঠগড়ার দার করিয়ে যা নয় তাই বলে গেছে রিদয়।
সব দুষ এই ফোনটার না থাকবে ফোন না ঝগরা।
ইচ্ছা করছে আছরে ভেংঙে ১০০ টুকরো করে দিই।নিজের স্ত্রীকে কেউ এমন ভাবে বলে? রাস্তায় গিয়ে মানুষকে রুপ দেখাতে বললো,উনি আমায় এতটাই খারাপ ভাবে।

——-

চোখে প্রখর রাগ জ্বলছে। তার পরেও রাগটা গিলে সায়নের রুমে পা বারিয়েছে তিতিল। কারন একজনের রাগ আরেক জনকে দেখিয়ে লাভ নেই।
“সায়ন ভাই।আপনি আমার ছবি আপলোড দিয়েছেন???
-হ্যা ভাবি কেন?
“-সায়ন ভাই ছবি গুলো সখের বসেই তুলেছিলাম। ফেসবুকে আপলোড দিতে নয়। আর আপনায় বারন করা সর্তেও আপনার ভাইকে ফ্রেন্ড রিকেয়েস্ট পাঠিয়েছেন তাই না!!
– হ্যা ভাবি সরি আসলে…. আপনায় বলা হয়নি।আপনি রাগ করেছেন??
“- নিজের ফোনটা সায়নের দিকে বারিয়ে দিয়ে তিতিলের অভিমানি স্বরে কন্ঠ।
এই ফোন থেকে সব কিছু ডিলিট করে দিন। কোন ফেসবুক- বা অন্য কোন এপ্সই জেনো না রয়।

“———

সারাদিন বেশ ধকল গেছে রিদয়ের।বড় স্যারদের হুকুম তো পালন করতেই হয়। তাদের কথা মত কাজ না করলে শিখবে কি করে।
ফোনটা হাতে নিতেই তিতিলের মুখটা দেখে সব ক্লান্তি দূর। কাল সারা দিন কথা হয়নি না আজকে।
ঐ হলুদ রংঙের শাড়িটায় তিতিলকে ঠিক মায়াবী পরী লাগছিলো। তাই ঐটা নিজের ফোনে wall paper দিয়ে দিয়েছে।যাতে ফোনটা হাতে নিলেই ওর মুখটা ভাসে।
এত কষ্ট করে নিজেকে সামলেছি, তিতিল কেন বার বার আমায় কষ্ট দেয়।তোমায় নিয়ে ঘর বাঁধার সপ্ন দেখছি তুমি কি বুঝোই না। এতটা বাচ্চা তো তুমি নও। তুমি কেন শুধু আমার হয়ে থাকতে পারো না।জত চাই তোমার কাছে জেতে ততোই দূরে সরে যাও।এতটাই ঘূন্না করো!এখনও আমায় তোমার স্বামীর খুনি ভাবো!!
তবে তোমার চোখ তো অন্য কিছু বলেছিলো ঐ দিন। আমিকি তোমায় বুঝতে পারছিনা তিতিল!!!

“-বেশ বকুনি দেয়া হয়েছে পরে আর কোন কথাই হয়নি।তিতিল নিশ্চই বেশ রাগ করেছে।
নাহ বকুনি আমিই দিয়েছি তাহলে রাগটা আমিই ভাংঙাবো।
নিশ্চই এগুলো সায়নের কাজ।তিতিল ফোনের এত কিছু বুঝবেনা।এর আগে তো সে ফোন ব্যাবহার করেনি।একবার বাড়ি যাই এই সায়নের খবর আছে।ওর অকর্মের জন্য তিতিল বকা খেলো।

—৫/৬বার ফোন ট্রাই করল বন্ধ বলছে। ওমা বন্ধ??
এবার একটু অনলাইন হয়ে দেখা মিললো তিতিলের কোন কিছুই নেই সব খান থেকে তার সব আইডি ডিলিট করে দিয়েছে।Facebook /whatsapp/imo.
কিছুই নেই!!
বড্ড রাগ করেছে হয়তো, না হয় একটু আকটু সময় কাটাতে খুলেছিলো ধেত আমিও না একটুতে বেশি অভার রিয়েক্ট করে ফেলি।সারা দিন ঘরের কাজ সেরে না হয় একটু সময় নিজের জন্যে কাটাতে চাইছিলো…..
“–নাহ ওর ফোন কখন খুলবে সেই আশায় থাকলে হবে না।বাবার ফোনে কল দেয়া যাক।
একবার বাজতেই আরিফ রহমান ফোন তুলেছে।
বাবার সাথে কুশল বিনিময় সেরে রিদয় চুপ।
আরিফ বুঝতে পারছে রিদয় কি বলবে! তবে আরিফ কি জবাব দেবে তা জানা নেই।

— বাবা তিতিল কোথায়??
তিতিলের কথা শুনেই আরিফ রহমান চুপসে গেছে।এখন এই ছেলেকে কি উওর দিই যে তিতিল…৷৷

(চলবে)
(

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here