স্বামী পর্ব ২২

#স্বামী (সিজন-২)❤️
#পর্ব -২২
#সেলিনা_আক্তার_শাহারা
____________________________
“-তিতিলের সমস্যার সমাধানের জন্যে একজন গাইনি ডক্টরের কাছে সে এসেছে।
—-কেন গাইনি ডক্টরই লাগবে? জ্বর হলে তো উনার কাছে কি দরকার!!আর মেয়েদের কত সমস্যাই তো আছে।তাই হবে হয়তো কোন কারন।তাই সায়ন এই নিয়ে কোন জিজ্ঞাসা বাদ করল না। চুপ চাপ তিতিলের মন মতই হতে দিলো।
এই হাসপাতালে আরিফ রহমান ভর্তি ছিলো আর একটু পরিচিত তাই সায়ন এখানেই তিতিল কে নিয়ে এসেছে।

“—-
” রিপোর্ট গুলো হাতে পেয়ে আর ডক্টর ম্যাডামের কথা শুনে হাবা হয়ে গেছে তিতিল।
নিজের অজান্তেই পেটে হাত চলে যাচ্ছে বার বার।
এটা কি হয়ে গেলো,এখন কি করব! এই এইখানটায় কে বলেছিলো তোকে আসতে?তর বাবা শুনে স্টোক না করে বসে।

“সায়ন তার বাবার পরিচিত একজনের সাথে দেখা করতে গেছে।আর সে হল ডক্টর মিজান। মিজানের কাছে এসে সায়ন একটু কুশল বিনিময় করে তার আসার কারন জানায়।অবশ্য ডক্টর মিজানই জিজ্ঞাসা করেছে। আজ রাস্তা ভুল করে এই পথে কিনা!

” তিতিল সায়নের কোন ডাকেই সারা দিচ্ছেনা।কাধে হাত দিয়ে ডাক দিতেই তিতিলের হুস ফিরল।কি ভাবি কখন থেকে ডাকছি শুনছো না কেন?
– না কিছুনা চলো বাড়ি যাই।
দারাও না ভাবি।তোমার রিপোর্টে কোন খারাপ কিছু ধরা পরেনিতো? আর ডাক্তার কি বললো?
না তেমন কিছুই নয় চলুন বাড়ি যাই।
আরেহ ভাবি রিপোর্ট গুলো একবার দাও না মিজান আঙ্কেল দেখতে চেয়েছেন।
“আহা বললাম না কোন সমস্যা নেই। চলুন তো চলুন আমার এখানে ভালোলাগছে না।
সায়নের কোন কথার জন্য সময় তিতিল দিলো না। রিপোর্ট গিলো নিজের ব্যাগে রেখে হন হন করে ছুটছে।আসলে পালাতে চাইছে।যে কারনে পালাতে চাইছে সেই কারন টা মিজানের জানতে সেকেন্ট সময়ও লাগবে না। তা ভুলে গেলে হবে!!

— ভাবির কি হল।এমন করছে কেন?
” তিতিলের ভয়ে হাত পা কাঁপছে।মিজান আঙ্কেলকে রিপোর্ট দেখালে বাড়ির সবাই ব্যাপার টা জেনে যাবে।আর আমি চাই আগে রিদয় কে বলতে।কোন মুখে বলব তা জানিনা।ফোন করব নাকি বাড়ি আসার অপেক্ষা?


ভাবি ঐ দেখো ফুচকা!!
“আরেহ বাহ।মেঘ না চাইতেই জল।তিতিলের বেশ ইচ্ছা করছিলো ঝাল ঝাল কিছু খাওয়ার আর পেয়ে গেলো।
রিক্সা থেকে নেমে সায়ন আর তিতিল ফুচকা ওয়ালার দিকে পা বারিয়েছে।

” ভাবি চলো বাজি হয়ে যাক কে কত পিস খেলো…
— তিতিলের মুখে একটা বরাই গিরি হাসি চলে এসেছে।কি যে বলেন না, আমার চাইতে বেশি খেতে পারবেন?? কখনোই না ফুচকা তো আমি চোখ বন্ধ করে পুরো দোকানের সাফা করতে পারি।শুধু খাই না অন্যরা ভাগে পাবেনা বলে।

“-আচ্ছা লাগলো বাজি দেখি তুমি কত টুক খাদক।

——-

“- বহুখন বাহিরে দেরি করেছে তিতিল মন টা বড্ড ফ্রেস লাগছে।তবে এবার বাড়ি যেতে হবে। সায়ন ইচ্ছা করে দেরি করিয়েছে।রিদয় ভাই বলেছে ভাবিকে হাসাতে।আর আজ মুখে বেশ হাসি ফুটেছে।বাহিরে বের হয় না তো কখনো তাই একটু ঘুরাও হল।
” _______

বেশ সাবধানে চলা ফেরা তিতিলের। রিদয়ের কথা মত রিদয়ের ঘরটাতেই তিতিল রাত কাটাচ্ছে।

“-নিজে থেকেই আজ কাল রুজ রাতে এক গ্লাস দুধ ডগ ডগ করে খেয়ে নিচ্ছে।
আরিফ রহমান বেশ খুশি যাক মেয়েটা নিজের খেয়াল রাখছে ভালো করে।
ডাক্তার বলেছে নিজের যত্ন নিতে,তাহলেই বেবী সুস্থ রবে।যাই হক নিজের পেটে যে বড় হচ্ছে তাকে কষ্ট দেয়া চলবে না।
আর রিদয়কে কি বলবে জানিনা৷ তবে এটুকু জানি এই বাচ্চার বাবা যদি উনি হতে না চায়।তাহলে মা হতে আমি কেন ত্রুটি রাখবো না।
রিদয়কি আমায় বিশ্বাস করবে? নাকি আমায় সেদিনের মত খারাপ কিছুর উপাধি দিবে।
বাচ্চাটার খবরে খুশি হবে!নাকি এর কারনে আমার স্বামীর ঘর ছারতে হবে।

—— মেডিকেল টেস্টের রিপোর্ট গুলো বড় বেখেয়ালিতে পরে রয়েছে তিতিলের ঘরে।যা আরিফ রহমানের চোখ এরায়নি।
দ্বিতিয়ত ডক্টর মিজান তাকে ফোন দিয়ে অভিনন্দন জানিয়েছে।তার হাসপাতালে কি কারনে তিতিল এলো সে কি তা জানতে পারবেনা??

– দুপুরেই আরিফ রহমান বাড়িতে হাজির।
মাথা পন পন করছে। এসেছিলো একটু আরাম করতে তবে আর আরাম হবে না।
” তিতিল দুপুরে খেয়ে দেয়ে একটা ঘুম দিয়েছে। রিদয়ের রুমে।

তাই ওর ঘুম থেকে জাগার অপেক্ষায় আরিফ।

–ঘরের দরজাটা খুলতেই আরিফকে দেখতে পেলো তিতিল।বাবা!কখন এলেন?
বসুন চা করছি।চোখ কচলাতে কচলাতে রান্না ঘরের দিকে পা তিতিলের।

“- দারা তিতিল।
বেশ গম্ভির গলা আরিফের।বেশ চিন্তিত লাগছে।আর তার মনে বহু প্রশ্নই উঠছে তা না জানা অবদি গলা দিয়ে কিছু নামবে না।
তাই তিতিলের রান্না ঘরে যাওয়া টা আটকে দিয়েছে আরিফ।

তর হাতের বানানো চা আমার চাই না।
তিতিল বেশ অবাক বাবা হঠাৎ এমন রাগি স্বরে কথা বলছে কেন?? আগেও তো রাগ করত।তবে সেই রাগে ভালোবাসা লোকানো থাকতো, কিন্তু আজকের রাগে কোন ভালোবাসা নেই বরং বেশ কঠরতা দেখা মিলছে।

— বাবা কি হয়েছে আপনার!
আমিকি কোন অন্যায় করেছি?
“- ন্যায় অন্যায় তো পরে দেখা যাবে।আগে আমার এই প্রশ্নের উওর দে।

হাতে থাকা মেডিকেল টেষ্টের রিপোর্ট আল্টার রিপোর্ট সবই আরিফ তিতিলের দিকে ছুরে মেরেছে।
— তিতিলের হাত পা কাপঁনি দেখার মত।এই কারনে বাবা এত রাগ!! আরিফ যে প্রশ্ন করছে তার উওর তো আছে তবে তিতিলের গলা দিয়ে সেটা বের হচ্ছে না।
কন্ঠনালীর ভিতরে কোথাও উওর গুলো আটকা পরেছে, জমে থাকা শব্দ গুলো আওয়াজ হয়ে গলা দিয়ে বের হচ্ছেই না।

আম আ.বা মানে এমনই করে যাচ্ছে তিতিল। শশুর উনি উনাকে কি বলবো? যে উনার ছেলে মাতাল হয়ে সেদিন ছি ছি এসব বলা অসম্ভব।আর তা ছারা যে এর জন্যে দায়ী সে নিজেই তো এখনও জানেনা।

” কথা বলছিস না কেন??
তোকে নিজের মেয়ে মনে করে এই বাড়িতে ঠাই দিয়েছিলাম।এত ভালোবাসা দিতে চেয়েছিলাম যাতে তুই আমাদের মায়ায় আটকে এই বাড়ি না ছারিস,। এই মূল্য দিলি আমাদের অন্ধ ভালোবাসার???

তিতিল কোন শব্দই করছে না। রিদয়ের যদি সব মনে থাকত তাহলে আজ এই দিন দেখতে হত না।আর এটা বাবা নয় বরং রিদয় সহ বাড়ির সকলেই প্রশ্ন করতে পারে।

“তর নিরবতাই জানাচ্ছে তুই একটা খারাপ মেয়ে। আর কোন নষ্টা মেয়ের এই বাড়িতে ঠাই নেই।
— কত রকমের প্রশ্ন / অপবাদ দিচ্ছে অারিফ তিতিলকে।চোখ বন্ধ করে তিতিল সব হজম করছে।

” আমার ছেলেটা বড্ড সরল আর সেই সরলতার সোজগে তুই তাকে এত বড় ঠকান ঠাকলি।
রিদয় জানতে পারলে ওর মনে কি আঘাত লাগবে, তা একটি বার ভাবলিনা।নিজের এত শখ আল্লাদে সংসার ভাসিয়ে দিলি!!

“-বাবা আমি।
-চুপ কর নির্লজ্জ মেয়ে।ছোট ঘরের মেয়ে তাই ছোট লোকের মতই কাজ করবি।বাপ মাতাল মেয়ে চরিত্র হীনা বাধাই করা ফ্যামেলি।

— বাবা আমায় যা বলার বলুন,আমার বাবাকে এর মধ্যে টানছেন কেন??
” চুপ পর ফাজিল মেয়ে।এতটা আদর যত্নে তোকে এই বাড়িতে রেখেছি, বল আজ অবদি তর কোন কষ্ট হয়েছে এখানে বল!!
তার পরেও।
রিদয় তো তোকে আজ না হয় কাল মেনেই নিতো আর তুই কিনা।
এমন একটা কাজ করলি যা বলতেও আমার লজ্জা হচ্ছে।
ভালোই হয়েছে ভাইয়া ভাবি বাসায় নেই।নয়তো ওদের সামনে আমার মাথা কাটা যেতো।বলতো কোন অজাত কুজাতের মেয়েকে বাড়ির বৌ বানালাম।

” চোখের পানিটা গর গর করে বেয়েই চলছে অনবরত।আজকে উনার ছোট্ট ভুলের জন্যে আমার বাবাকে অবদি লান্ছিত হতে হচ্ছে।আর উনি দিব্যি আয়েসে ঘুরে বেরাচ্ছে।
এখন কি করব কাকে বলবো সব খুলে।

“আল্লাহ জানে কার পাপ তর গর্ভে পালিত হচ্ছে।এই পাপ নিয়ে মরলেও দোজখে জ্বলবি তুই।বাড়ির সকলের ভালোবাসার অমর্যাদা করেছিস তুই।
— আরিফ রহমান কপালে চাপরাতে চাপরাতে কান্নায় ভেংঙে পরেছে।
তিতিলের কথা একটি বার শুনতে চাইছে না।
একটি বারও ভাবছে না তিতিল কি এমনটা করতে পারে!!

— বাবা আমার গর্ভে কোন পাপ নয়। ও আমার সন্তান।
হ্যা তরই সন্তান যার বাপ কে জানিনা।
” এমন একটা কথা শুনার পর তিতিলের মরতেই ইচ্ছা করছে।
-আর হ্যা-তুই ভুলেও আমায় বাবা ডাকবিনা, সেই অধিকার তুই হারিয়েছিস।
” আমি চাইনা এই সব লোক জানাজানি হক।তাই তুই এই মূহুর্ত্বে বাড়ি থেকে বের হো।
— আরিফ রহমানের পা জরিয়ে তিতিল কাঁন্না জুরেছে।
বাবা আমায় যা বলবেন তাই করব।বাড়ি থেকে তারিয়ে দিবেন না।
“আরিফের সিদ্ধান্ত অটল এই চরিত্রহীনা মেয়ের এই বাড়িতে ঠাই হবে না।
না তিতিল তর মত মেয়েকে বাড়িতে রাখলে আমার মেয়েরাও খারাপ হয়ে উঠবে।
তর মত মেয়েকে বিয়ে করে রিদয় যে ভুল করেছে সেই ভুল রিদয় এসেই সুধরাবে। তোকে ডিভোর্স দিয়ে তর মত মেয়ের থেকে পিছু ছারাবে। আরিফের কথায় তিতিলের মাথায় বাজ পরল..ডিভোর্স মানে তালাক দিবে আমায়?
— আমি রাগে তোকে আরো কিছুনা বলে দিই।এমনও হতে পারে ইতিহাস হয়ে যাক শশুর নিজ হাতে চরিত্র হীনা ছেলের বৌকে খুন করেছে।

” এত রাগে আজ অবদি তিতিল আরিফ রহমানকে দেখেনি।মাথায় কেমন রক্ত উঠেছে হয়তো।

— আমি চলে যাবো বাবা।হাত জোর করে তিতিল আরিফের পায়ে পরে রয়েছে। কাঁন্নার বেগ এতই যে তার মুখের কথা গুলো অপষ্ট ভাবে বের হচ্ছে।
উনি আসা অবদি আমায় থাকার অনুমতি দিন ঐ বাহিরের রান্না ঘরটায় পরে রবো। একটু দয়া করুন বাবা।উনি এসে যদি বাড়ি থেকে চলে যেতে বলো আমি চলে যাবো।

“রিদয় আমার ছেলে তিতিল।আমার অবাদ্ধ্য সে হবে না।
রিদয় আসতে আরো বহু দিন বাকি।এত দিন তর মুখ আমি সজৎ করতে পারব না।শেষে আমি নিজেই না নিজেকে শেষ করে দিই।এভাবে নিজের ছেলের জীবন টা নষ্ট করলাম বাবা হয়ে।

— বাড়িতে কেউ নেই।সবাই যে যার মত চলে গেছে।সায়ন বাড়িতে নেই না জুই ফুল।
ওরা এলে তর চলে যাওয়া নিয়ে বহু প্রশ্ন করবে।আর এমন কথা চাইনা ওরা শুনুক। জুই ফুলের মনে ভাবি নামটা বিষ হক চাই না তাই ওদের আসার আগে বের হো। দয়া কর আমাদের উপর দয়া কর।

—- রুমে গিয়ে তিতিল তার সব গুছিয়ে নিয়েছে।এই আশায় বের হচ্ছে রিদয় নিশ্চই ওকে ফিরিয়ে আনবেই।ওর নিজের সন্তান কে অস্বিকার করবে না হয়তো। যে কথাটা আমি বাবাকে বলতে পারছিনা তা হয়তো উনি এসে বাবাকে বলবে।
তখন বাবাও বেশ কষ্টই পাবে।
বাবারও দুষ নেই উনিতো সত্য জানেনা তাই।

——ব্যাগটা নিয়ে বেরিয়ে এসেছে তিতিল।আরিফ চেয়ারে এখনও বসে কপালে হাত রেখে ।
কাঁন্না তো ওরো পাচ্ছে।মেয়েটাকে কত আপন ভাবতাম আর সে কিনা।

” আমি চলে যাচ্চি বাবা।দেখবেন আপনার ছেলে আপনার ধারনা টা ভাংঙবেই, আর আমায়ও ফিরেয়ে আনবে।আমার গর্ভে কোন পাপ নয় এটুকুই বলবো।
— তর এই ভুল ধারনাটা এখনই শেষ করছি।
চোখের পানিটা হাতে মুখে পকেট থেকে ফোনটা বার করে রিদয়কে ফোন দিয়েছে।
স্পিকার বারিয়ে তিতিলের সামনে ধরেছে।
নে কথাবল বল তুই অন্তসত্বা… তার পর দেখি রিদয় কি বলে।
আমি চাই না কোন ভুল ধারনা নিয়ে বাড়ি থেকে বের হো।
আর বের হবার পর এই মুখ আমাদের দেখাস।

— হ্যালো, হ্যালো বাবা!!
” রিদয় ফোনটা তুলেছে বাবা অসময় ফোন দিলো এটা নিয়েও ভাবছে।
” তিতিল আর শব্দ পাচ্ছে না কি বলবে।
–আরিফ তাই নিজেই বলে উঠলো। তোকে কিছু বলার আছে-রিদয় তিতিল মা হতে চলেছে।

তিতিল অধির হয়ে রিদয়ের জবাবের অপেক্ষায় রয়েছে।রিদয় কথাটা শুনে নিসতব্দত কেন?
কোন কথা নেই কেন? তাহলে উনিও কি??


কি হবে তিতিলের স্বামীর জবাব।তিতিলকে কি এই মিথ্যা অপবাদ নিয়ে ঘর ছারতে হবে?★

(চলবে)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here