স্বামী পর্ব ২৫

#স্বামী (সিজন-২)❤️
#পর্ব -২৫
#সেলিনা_আক্তার_শাহারা
___________________________
“—- আলহামদুলিল্লাহ।
রিদয় সুস্থ আছে। খানিকটা টেনশন শেষ হয়েছে সকলের। আরিফ রহমান রিদয়ের কেবিনে ঢুকার সাহস করতে পারছে না।
কি করে তিতিলের সামনে যাবে!!

————-
আরিফ রহমান হতাস হয়ে যখন তার নিজের রাস্তা ধরল।তখনই তিতিলের বাবার ফোনে সায়নের কল আসলো।
বাহিরে কিছু একটা হচ্ছে বেশ চেচামেচি।তার আর ঘুম হল না।তাই উঠে আসার আগে বাবার রুম থেকে ফোনের শব্দ পেয়ে সেখানেই আগে যাওয়া।

-” ফোনটা না তুললে তো জানতেই পারত না।ওর রিদয়ের বুকে গুলি করেছে।তাও ওর ভালোবাসার মানুষটা।এ কেমন ভালোবাসা! যে ভালোবাসায় জীবন নেয় এমন ভালোবাসার কি দরকার?
– কি তে কি হয়েছে সব পরে জানলেও চলবে।তবে এই মূহুর্তে অন্য কিছু জরুরি।
” — পাগল পারা হয়ে যখন তিতিল ঘর ছারছিলো, তখন দেয়াল হয়ে ওরই বাবা দাড়িয়েছিলো পথ আটকে।
তিতিলের করুন স্বরে বাবার নিকট আকুতি।
বাবা উনার গুলি লেগেছে এই এই খানটায়।বাবা উনি হাসপাতালে……

— এত টা নির্দয়তা দেখালে চলবে! কেন মেয়ে নিয়ে যেতে রাজি হল এক কথায়! রিদয়ের জন্যে! মোটেই নয়।বরং মেয়ের চোখের পানির কাছে হেরে পরাজিত সৈনিক হয়ে চলেছিলো।

আবার যখন জানতে পারল রক্ত চাই তখন দান বীর হয়ে রক্তটাও দিলো তিতিলের বাবা।

__________
“- রিদয়ের বেডের একটা পাশে তিতিল গুটি মেরে বসেছে।
কি অবস্থ্যা উনার।ভাবতেই অন্তর কেঁপে উঠছে বার বার। খুলা শরিলে ক্ষতটা বেশ করে দেখছে। সাদা ব্যান্ডেজের উপর দিয়ে শুকিয়ে যাওয়া রক্তের দাগ!

— তিতিলের বাবা মাথাটা নুইয়ে দিয়ে কেবিন থেকে বের হল।আর বের হতেই দুই বেয়াইয়ের মুখো মুখি!!

” _________

সেতুকে দুর্ভাগ্য বসত এই হাসপাতালে এনেছিলো। তবে জানা ছিলো না কারো। যে নাগিন টা এখানেই রয়েছে।
রিদয়ের জ্ঞান ফিরেনি। সায়ন তিতিলের পাশে দাড়িয়ে রিদয়ের কথাই বলছে।

– ভাবি!
তিতিল তো দুই পা ভাজ করে হাটুর মাঝে মাথাটা হেলিয়ে রিদয়ের পানে চেয়ে রয়েছে।
“ডাক পরতেই হাটু থেকে মাথাটা সোজা করে বসেছে তিতিল।মুখে শব্দ না করলেও চোখের জল প্রমান করে সে কতটা ভালেবাসে তার স্বামীকে।
স্বামী হীনা নারীর কি মূল্য!.
আজ উনার কিছু হয়ে গেলে জিন্দা লাশ হবে তিতিল।
স্বামী কাছে নেই চলবে.তবে দুনিয়ায় নেই তা চলবে না মুটেই না।

” ভাবি! ভাই তোমার কাছেই আসতে চাইছিলো তখনই সেতু আসে আর….

– রিদয়ের সকালে আসা, এক রাশি খেলনা আনা। তিতিলকে খুজা, তার বাবার সাথে কথোপকোথন সেতুর কান্ড সবটাই তুলে ধরেছে সায়ন।
সায়নের কথায় অন্তরে ঠান্ডা হাওয়া ছুয়েছে।তার মানে আমি ভুল ধারনা করেছি উনাকে নিয়ে,
উনিতো সবই মনে রেখেছেন।তাই তো ছুটে এসেছিলো।তবে বাবা তো আমায় ঐ বাড়িতে ঠাই দিলো না। আর উনিও এমন ভান করেছে যে!!!
___________★

“- ভোরের আলো ফুটতে চললো এক বিন্দু নড়া চরা করেনি তিতিল। রিদয়ের পাশেই বসে।কখন উঠবে সেই আাশায়।আর উঠেই জেনো তিতিলের দেখা পায় সে কারনে নড়ছেই না।
আর ওরা বাহিরেই দাড়িয়ে রয়েছে। জুই ফুলকে সায়ন নিয়ে এসেছে।কারন ভাবি চলে এসেছে ভাইয়ের জন্যে আর কাউকে চাই না।তবে মেয়ে দুটোকে বাড়িতে একা রাখা ঠিক নয়। তাই সায়নের বন্ধুকে দিয়ে তাদের আনিয়ে নিলো।

___________
“- সায়নের মনে প্রতিশোধের আগুন।এই মেয়েকে খুন করে সারা জীবন জেলে পঁচতে আমার আপত্তি নেই।
প্রতিশোধ তো শুধু সায়ন নয় তিতিলও চায়।আজ যার জন্যে স্বামী হিনা হতে চলেছিলো।নিজের গর্ভের সন্তান পিতা হিনা হতে চলেছিলো তাকে ছারবই না।

“- আরিফ রহমান তার কর্মে লজ্জিত আর সেই কারনে সবার থেকে দূরে বসেই ছেলের জন্যে দোয়া করছে।
আর তিতিলের বাবাও বেশ লজ্জিত কোন কথা না শুনেই এভাবে উনাকে তারানো ঠিক হয়নি।সায়ন না বললে তো জানাই বুধহয় হত না।

“- সকাল হয়েছে সবাই অনিদ্রায় রাত পার করেছে।কারো সমস্যা না হলেও এখানে যে গর্ভবতী একজন রয়েছে তার বহু সমস্যা হতে পারে। তার তো খাওয়া হয়নি, এসময় তো একটু পর পর খেতে হয়।

“— ব্যাথায় কিছুটা কুকরিয়ে উমমমহ শব্দ করে ধিরে ধিরে চোখ মেলেছে রিদয়।শত ব্যাথার মাঝেও মুখে তার হাসি।কারন উঠেই তিতিলের দেখা মিলেছে।ওর বৌ বিয়ে করা বৌ।এখন তো তিতিল একা নয় ওর ভিতরে ছোট্ট আরেকটা রিদয়ের বাসস্থান গরেছে।
“- চোখ বুঝেই তিতিল বসেছে।বেশ ক্লান্ত লাগছিলো তাই ঘুমিয়েই গেছে হয়তো।

রিদয় বহু কষ্টে হাতটা নাড়িয়ে তিতিলের পেটে হাত রেখেছে।অনুভুতিটা অন্য রকম।পিতা হবার সুখ বলে বুঝানোর মত নয়।যে হবে সেই শুধু বলতে পারবে। হয়তো সবাই বলবে হ্যা অনূভুতিটা দারুন, তবে সে রকম করে উপলব্ধি করতে পারবেনা।
“- পেটে হাত রেখে পরম আবেশে হাত বুলাচ্ছে রিদয়।
হাতের স্পর্শে তিতিলের ঝিমানি বন্ধ হয়েছে।

— আপনি!!
কেমন লাগছে এখন?
কোথাও ব্যাথা করছে না তো?
কোন সমস্যা লাগছে নাতো
দারান ডাক্তার কে ডাকছি…

“- ব্যাথা জরিত কন্ঠে রিদয়ের হালকা হাসি মাখা উওর।
বাস বাস,থামো আমার কোন ডাক্তারই লাগবে না, তুমি আর আমার সন্তান সাথে থাকলেই আমি সুস্থ…
” রিদয় তিতিলের পেটে এখনও হাত বুলাচ্ছে… তিতিল একটু লজ্জা পেয়ে চোখটা এদিক সেদিক ঘুরাচ্ছে।এই লজ্জা মাখা মুখ দেখেতো রিদয়ও হাসছে।
লজ্জাই নারীর ভূশণ। আর লজ্জা মাখা মুখ দেখে প্রেমেই পরে গেছে রিদয়।

“- তিতিল আমায় ক্ষমা করে দাও।আমার কারনে তোমায় এই অপবাদ নিয়ে তোমারই ঘর ছারতে হয়েছে।আমি আসলে….

“-হুসসসসস.
কোন কথা নয়।এত কথা শুনতে চাই না।আগে সুস্থ হন তখন শুনবো।
রিদয় তিতিলের একহাত ধরে নিজের কাছে ডাকছে তিতিলকে। একটিবার আমায় জরিয়ে ধরোনা তিতিল..
“-চোখের জমানো জল গুলো বেরিয়ে এসেছে।এই কথাটা তো কবে থেকেই শুনতে চাইছিলো।দেরি হলেও কানে প্রাশন্তি বয়ে এনেছে।

— রিদয়ের বুকে আল্ত করে মাথাটা রেখেছে তিতিল।
রিদয় তার একহাত দিয়ে তিতিলকে আগলে রেখেছে।

“-পেটের দিকে ইশারা করে রিদয়ের আরেক কথা।
সত্যি এখানে কেউ আসছে তিতিল!!!
মাথাটা রিদয়ের বুকে লুকিয়েই তিতিলের মাথা নাড়িয়ে হ্যা সূচক জবাবে রিদয় মন শান্ত..৷

“– হয়েছে হয়েছে এত প্রেম পরে দেখিও এখন জলদি কিছু খেয়ে আমার এই পাশটায় ঘুমাবে তুমি..৷
সায়নকে ডেকে খাবার আনিয়ে যা বলা তাই কাজ….

রিদয় জানে তিতিলের খাওয়া বা ঘুম কোনটাই হয়নি,আর যা শরিরের জন্য মোটেই ভালো নয়।
________♥

“- একবার একবার করে সকলেই রিদয়ের সাথে দেখা করল।এখন বেশ ভালো আছে।
তিতিল কি সুন্দর করে গুটি মেরে একটু জায়গার মধ্যেই ঘুমিয়ে গেছে। রিদয়ের পাশে।

ঘুমাতে তো চাইছিলোনা তবে রিদয়ের রাগ দেখে চুপ চাপ ওর মন মতই চলছে। আর শোয়ার সাথে সাথে এক রাজ্যের ঘুমে তলিয়ে গেছে।
আরিফ দৃশ্যটা দেখে ঠোটে এক কোনে হাসি টেনে ছেলের মাথায় হাত বুলিয়ে চলে গেছে।

———-

“- ২ দিন বাদ রিদয়কে আজ বাড়িতে এনেছে।
সবাই বেশ ভয় পাচ্ছে তিতিলকে,তিতিলের বাবা রিদয়দের বাড়িতে এসেছে…
শরিফ রোকেয়া তারাও ঐদিন চলে এসেছে।
সব ঘটনা শুনে অন্তর কাপঁনি দিয়ে উঠেছিলো তাদের।
আরিফ রহমান তিতিল থেকে ১০ কদম দূরেই থাকছে।
আর এখন তো আরো ভয় করছে।গত কাল তিতিলের ভয়ংকর এক রূপ দেখেছে সকলে……
—–★

“- গত কাল রিদয়কে খাইয়ে দিয়ে, ঔষধ খাইয়ে শুইয়ে দিয়েছিলো তিতিল।
রিদয় যখন ঘুমিয়ে ছিলো তখন একটু বাহিরে এসে সেতুর দেখা মিলেছে…
পুলিশ এসেছে রিদয়ের স্টেটমেন্ট নিতে।কারন সে কিছুটা সুস্থতা অনুভব করছে জানা গেছে।
আর সেতুকেও নিয়ে এসেছে হাতটার ব্যান্ডেজ খুলা হবে। থানায় থাকলেই কি চিকিৎসার কমতি রাখছে না।সরকারি মেহমান বলে কথা।

সেতুকে চোখের সামনে পেয়ে কয়টা চর যে দিয়েছে গালে, কেউ গুনতেই পারল না।স্পিড খুব ছিলো বটে।
তার পর চুল গুলো ধরে মাথার এক গুছা চুল ছিরেই নিয়েছে। গাল বানিয়েছে টমেটো।

— আমার স্বামীকে খেতে চেয়েছিস রাক্ষসী তোকে আজ আমি খেয়ে হজম করব ডায়নি…
সায়নের এত ভালো লাগছে.. তবে পুলিশের সাথে সাথে তারোতো তিতিলকে আটকাতে হয়।নয়তো বলবে কেউ এগুচ্ছেনা।
তবে সায়নের টানে কোন জোর ছিলোনা।হালকা করে ধরে তিতিলকে টানছে..। এর চাইতে না টানাই ভালো।
মহিলা কন্সট্রেবল রা তিতিলকে সেতুর চুল থেকে হাত ছারিয়ে কিছুটা দূরে নিয়ে এসেছিলো।
তিতিলের হাতে চুলের অভাব ছিলো না।

ম্যাম ম্যাম পাগলামু করবেন না।ওর সঠিক সাজা সে পাবে,আইন তাকে শাস্তি দিবে,আপনি বরং স্যারকে দেখে রাখুন.. শত হলেও সিনিয়র অফিসারের স্ত্রী কিছু বলার সাহস আছে নাকি? তাও গুলি করেছে একজন পুলিশ অফিসারের গায়ে।.

“”—– রিদয় সব শুনে শক খেয়েছে রিতিমত।ওর এত রাগ.. এত শান্ত মেয়ে এমন ঝড় তুলেছিলো!!
আরিফ তো ঘেমে একাকার।আমি তো বাড়ি থেকে বার করেছি এবার কি বাড়ি গিয়ে আমায় বাড়ি ছারা না করে… না না ওর সামনে পরা চলবে না।
বাবাহ কি রাগি মেয়ে দেখে তো কত শান্ত মনে হত….

“—★

রিদয়ের ঘরে রিদয়কে শুইয়ে দিয়ে তিতিল তার কাজে জেতে চাইলে বাধা পরল..।

——–তর কোন কাজ নেই।এত বছর পর বাড়িতে ছোট্ট মেহমান আসতে চলছে তাকে কষ্ট দিতে দিবো না।তুই বসে বসে হুকুম কর, সব তর পায়ের তলায় থাকবে। কোন কাজ আমি তোকে করতে দিবো না এই বলে দিলাম মেয়ে।

” রোকেয়া বেগম যতই কঠর হক না কেন.মনে যে বড় মায়া তার।নয়তো এমন শাষনি গলায় মায়া প্রকাশ করতনা। একদম নাড়িকেলের মতই উনি।
তিতিলতো রোকেয়া বেগমকে জরিয়ে কেঁদেই দিয়েছে।

“– হয়েছে হয়েছে ঢং করতে হবে না।কাজ করতে মানা করেছি মানে এই না মাথায় তুলে নিয়েছি….
বস তোকেও এক
গ্লাস দুধ দিই খেয়ে ঘুমাবি।

—–★
“—–
আপনি আরাম করে ঘুমান, আমি যাই।

তিতিলের কথায় রিদয় হা..
যাই মানে এই রাতে কোথায় যাচ্ছো??
ওমা ঘুমাতে যাচ্ছি..
আগে একটু বাবার সাথে দেখা করব।বাবা কেমন আমার থেকে দূরে সরে আছে দেখলেন না।
বাবার সাথে দেখা করে আমার ঘরে যাবো ঘুমাতে…

“— আসলে বুঝতে পারছেনা রিদয় ঐ ঘরে ঘুমাবে!! এটা শুনে হাসবে নাকি কাঁদবে?
আচ্ছা ঐ ঘরে তুমি থাকলে, এই ঘরে মানে আমার সাথে শোবার জন্যে তো অন্য কাউকে আনতে হয়।

—– জানে মেরে দেবো!!
“-দাও।মেরেই দাও।তবুও দূরে যাবার কথা ভাববে না একদমই না…
তিতিলের আচলটা ধরে নিজের কাছে টেনে এনেছে রিদয়।
কি করছেন আপনি অসুস্থ.. চুপ করে ঘুমান..৷

(চলবে)

★ মুই চাইছিলাম আসকা এই গল্প খানা শেষ করবার লাই..পরে ভাবলাম আরেকটা পর্ব বারাই.. ভালা করলাম নাকি মন্দ করলাম???★🥰🥰🥰🥰

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here