স্বামী পর্ব ২৭ও শেষ পর্ব

#স্বামী( সিজন-২)🥰
#পর্ব —২৭ ( অন্তিম পর্ব)
#সেলিনা_আক্তার_শাহারা
_______________________________”——

“-রোকেয়া বেগম কখন থেকে তিতিলের পিছু হাটছে।আরেহ দুধ টুকু যে খেতেই হবে, নইলে রিদয় এলে বকনি খেলে আমার দুষ নেই।

“- জেঠিমা বার বার উনার নাম নিয়ে আমায় ভয় দেখাও কেন? আমিতো উনাকে মোটেই ভয় পাই না।
—- কাকে ভয় পাওনা!!
” পিছন থেকে ভারি পুরুষ কন্ঠ।কন্ঠটা অচেনা নয়।বেশ পরিচিত মানুষটার।

জিব্বায় কামর দিয়ে রোকেয়া বেগমের হাত থেকে দুধ টা নিয়ে ডগ ডগ করে গ্লাস খালি করে দিলো।
“-হুম good girl …
–তারিফ না ঢং..
“-কিছু বললে??
— না তো আপনার কান বাজছে।
“- আজ কাল আমার চোখে সমস্যা, আজকে কানেও ভুলভাল শুনি।কখন না আমার মেমরি লস হয়েছে বলে বেরাও।

— রোকেয়া বেগম এখানে থেকে তাদের কথা বার্তা শুনে নিজের মাথা পাগল করতে চায় না।
নিজের বহু কাজ বাকি।

_________★

“ঐ দিন তো তিতিলকে নিয়ে গোসল টা সেরে।রিদয় তার বাবার কাছে হাজির হয়েছে।

আজকাল তর দেখাই পাইনা।সারাক্ষন যদি কাজেই মগ্ন থাকিস তাহলে বৌয়ের সাথে সময় কাটাবি কখন! এটাই তো তদের জন্য অনেক সুন্দর সময়।

“- বাবা আসলে আমিও তো চাই তবে, আমার তো বাবার ব্যাবসা নেই,তাই অন্যের চাকরি করি,তাও পুলিশের চাইলেই সব হয় না।

— থাক বাদ দে,যে জন্য ডাকা।
আরিফ রহমান জানালা দিয়ে উকি মেরে শরিফ রহমান কে ডেকে নিলো।
দুই ভাই এক সাথে বসেছে,রিদয়ও বেশ সিরিয়াসলি নিলো বিষয় টা, সত্যি কোন জরুরি কিছুই হবে।

— নে ধর…

” একটা চাবি রিদয়ের দিকে বারিয়ে দিয়েছে আরিফ রহমান।
–বাবা এটা কিসের চাবি??
” এটা সেই চাবি যা ধরার জন্যে দিন রাতে চিন্তায় মরছিস।

মানে??
– বাহিরে গাড়িটা দেখেছিস!!
“- হ্যা দেখেছি ওটা!!!!
চোখ গুলো বড় বড় হয়ে গেছে। আরেহ এটা গাড়ির চাবি এটা আমাদের গাড়ি!!

— যে সন্তানকে দেখিসনি এখনও,তাদের চিন্তায় এত মরিস।আর তুই তো আমারই সন্তান, এই হাতে তোকে মানুষ করেছি খাইয়েছি ঘুম পারিয়েছি।তো তর জন্যে আমার কতটা চিন্তা হয় রে রিদয়???

—বাবা,তুমি এত টাকা কোথায় পেলে!!
” ছেলে বলেকি? আরেহ সেভিংস বলে একটা জিনিস আছে জানিস! তুই চাকরিতে যোগ দেবার পরে আমার বেতনের টাকা কোন কাজে লাগতে দিস নাকি!!!
সেটাই ব্যাংক থেকে নিয়ে এলাম। আর কিছু ছিলো আমার কাছে।
আর শোন তর কাছে লাখ চার টাকা হবে!!

“-হ্যা বাবা হবে তো, পাঁচ লাখ টাকার মতই জোগাড় করতে পেরেছিলাম। গাড়ি নেবার জন্যে।
— জানি তুই যে রুজ ঐ গাড়ির শো-রুমে তাকিয়ে নিজের সপ্নটা দেখিস তা আমার থেকে লুকিয়ে নয়।
তবে তোকে নিয়ে যাইনি তোকে সারপ্রাইজ দিবো তাই।রাগ করলি না তো??

” বাবা কি যে বলো। একটা চিন্তা মাথা থেকে নামলো।তিতিলকে যে কোন সময়ই হাসপাতালে নিতে পারব। গাড়ি বা এম্বুলেন্সের জন্যে অপেক্ষায় থাকতে হবে না।

—- হুম যা টাকা টা নিয়ে আয়। তর জেঠুর ব্যাবসার থেকে টাকাটা নেয়া তো দিয়ে দিই। ভাইয়ার কাজ বন্ধ হবে নয়তো।

________★

“-

“- ৯ মাসে তিতিলের অবস্থা আরো বেহাল।শুকিয়ে কাঠ।চোখের নিচে ছানি পরে গেছে। রাত ভর শুয়ে শুয়ে কি চিন্তায় নির্ঘুম রয় কে জানে!!!

— আরেক জেদ ধরেছে গাড়ি চালানো শিখবে।নিজের জান নিয়ে টানা টানি সে কিনা গাড়ি চালাবে।
তবে রিদয় প্রমিস করেছে শিখাবে বেবিরা আসার পর ও সুস্থ হলেই।

“– সেতুর ১০ বছরের সাজা হয়েছে। পুলিশকে গুমরা করার জন্যে আর রিদয়কে হত্যার অপচেষ্টা ও ওর কাছে অবৈধ অস্ত্র থাকার কারনে।

— জেলে গেলেই কি! রুহিকে তো ছারবেই না।আর না তিতিলকে।এত গুলো মানুষের সামনে আমার চুল ছিরেছে। গালে চর দিয়েছে সময় ওর হাতের নখ আমার গালে আচর কেটেছে, যা গালে দাগ হয়ে আছে।
এই দাগ যত দিন থাকবে ভুলবে না তাদের।

————★★

“- ঘুরতে ইচ্ছা করছে বাবা।
তিতিলের হুট হাট বায়নায় রিদয় নয় বরং বাড়ির সকলে হয়রান।
ঐ দিন তো সায়নকে ডেকে বলছে নাচতে,সায়নের নাচ দেকতে চায় বেবীরা৷ হাস্যকর হলেও সায়নের কাছে কাজ টা সহজ ছিলো না।নাচের ণ না জানা ছেলে তার ভাবির মন রাখতে পাগলের মত লাফিয়ে লাফিয়ে নাচছিলো। দিলবার দিলবার গানটায়।😀
আর সবাই হেসে মরছিলো।

— এই সময় ঘুরতে যাবি? তর শরিল তো ভালোনা মা।
না বাবা চলুন না একটু বেরিয়ে আসি গাড়ি করে।
আচ্ছা রিদয় আসুক তার পর না হয়.৷
না না আপনি এখনই আমায় নিয়ে যাবেন।উনি এলে যেতে দেবে না। সামনের রাস্তা পার হয়ে একটু দূরে যে ঝিলটা রয়েছে সেখানে যাবো।

“- নাহ এই মেয়েকে নিয়ে পারিনা। যখন তখন বায়না।গাড়িতো আরিফ রহমান চালাতে জানেনা
★সায়ন!!
হ্যা গাধাটাকে নিয়ে গেলেই হল।
রোকেয়া বেগম তো বারনই করেছিলো।তবে তিতিলের নাকি বাহিরে ঘুরতে ইচ্ছা জেগেছে। তাই মানা করে পারল না।
-______________

__★★★

“- সারা দেশের সমস্যা মনে হয় আজকে রিদয়ের থানায় উপস্থিত।
একের পর এক পেন্ডিং কেসের ফাইল তার টেবিলে হানা দিয়েছে।
উপর থেকে চাপ এসেছে।

— ফোনটা silent . মুড করে রিদয় নিজের কাজে মন দিয়েছে।

রিদয়ের বাবার এত ফোন সায়নের এত ফোন আসছে কোন খেয়ালই নেই।
—–

“-লান্চ টাইমে একটু ফাঁকা হয়েছে।আজকে সারা দিনও তিতিলের খবর নেয়া হয়নি।মনে হতেই খাবার রেখে ফোনটা হাতে নিলো। এত গুলো ফোন??
কিছু হল না তো??

কল বেক করার আগেই সালাউদ্দিনের ডাক।
স্যার এদিকে আসুন….

ফোন টা হাতে নিয়েই রিদয় সালাউদ্দিনের ডাকে সারা দিতে একটু সাইডে চলে এলো।

—- স্যার এখনই আপনায় হাসপাতালে যেতে হবে।

” সেকেন্ট খানেক চুপ হয়ে ছিলো রিদয়।হাসপাতালে?? কি হয়েছে??

– আপনার স্ত্রীর ডেলিভারি হয়েছে।আপনার বাবা থানার ফোনে ফোন দিয়েছে।জলদি আপনায় যেতে বলেছে।

———★

“– এত কথা না বলে সোজা হাসপাতালে গেলেই সব কিছু জানা যাবে।সকালে তো ভালোই ছিলো. তবে ডেলিভারির পেইন তো খবর দিয়ে আসেনা।
এর জন্যেই বাবা এত ফোন দিয়েছিলো।

“—- মুখের হাসিটা আজকে অন্যরকম বেশ একটা পিতা পিতা ভাব দেখানোর মতই।

” অপেক্ষার পালা শেষ, ঐ তো সায়নকে দেখা যাচ্ছে। তার মানে এই সামনের কেবিনটাতেই আমার তিতিল রয়েছে। আর আমার সন্তান রাও হয়তো।

— এত সুন্দর হাসিটা জেনো কোথায় মিলিয়ে গেলো রিদয়ের। সায়নের হাতে মাথায় ক্ষতর চিন্হ। রক্ত এখনো ঝরছে বাধনের বাহির দিয়ে।
জেঠিমা জেঠু সবাই গালে হাত দিয়ে বসে চোখের পানি মুছছে। ছেলে ব্যাথা পেয়েছে তাই হয়তো।

-” কি হয়েছে সায়ন!! এসব কি করে হল!!
আর তিতিল তিতিল কোথায়? আমার সন্তান রা কোথায়???

——- রিদয়!!!
” একটু দূরেই আরিফ রহমান বসে তার এক হাত মাথায় চেপে রেখেছে।
ব্যান্ডেজ করা কপাল টা ধরে ব্যাথায় কুকরিয়ে উঠছে বার বার।

—– চোখ এবার কপালে।বাবার একি হাল। সায়নেরও একই অবস্থ্যা । কি করে হল এসব!!

বাবা!! কি হেয়েছে এসব কিভাবে হল??

” চোখ দুটো নিভু নিভু হয়ে আসছে আরিফ রহমানের, বেশ ক্লান্তি কর ভাব।কপাল কেটে অনেকটা রক্তই ঝরেছে। জিব্বাহ দিয়ে বার বার শুকনো ঠোটটা ভিজিয়ে নিচ্ছে।

-তবে কি করে হল এসব??
ওরা তিন জন তো একটু ঘুরতে গিয়েছিলো।

-” রিদয়ের হাতটা ধরে টেনে আরিফ রহমান নিজের পাশে বসিয়েছে ছেলেকে।

বাবা রিদয়, তিতিলকে নিয়ে আমরা একটু ঘুরতে বেরিয়েছিলাম।
কিছুটা পথ এসে মেন রোড থেকে কাঁচা রাস্তা ধরলাম।
ঐ ঝিলের রাস্তাটা।

“- কিছুই বুঝে উঠতে পারলাম না ঐ ছোট্ট রাস্তায় এত বড় ট্রাক কেন আমাদের গাড়ির পিছু পিছুই আসছিলো।

মেন রোডে তো স্বাভাবিক ছিলো ব্যাপার টা পরে বুঝলাম আমাদের ফলো করছে।

কিছু করব তার আগেই পিছন থেকে ইচ্ছা কৃত ভাবেই আমাদের গাড়িতে বেশ জোরে ধাক্কা দেয়।

সামনে সায়ন আর আমি কাঁচ ভেঙে বাহিরে ছিটকে পরি।
আর তিতিল ….

“- রিদয় বসা থেকে উঠে দাড়িয়েছে।গলা শুকিয়ে এসেছে।কেমন জেনো সময় টা থমকে গেছে..

— তিতিল!!
বাবা কি হয়েছে?
আরিফ রহমানের কাঁন্নার বেগ বাড়ছেই।
কিছু বলছোনা কেন??

“- আরিফ আর বাকিটুক বলতেই পারছেনা,কান্নায় কাতর হয়ে উঠেছে। কোন দিশা না পেয়ে রিদয় সায়নের দিকে ছুটে এসেছে।সায়ন ভাই আমার বল না তিতিল কোথায়! ও ভালো আছে তো? আমার সন্তান ওরা, ওরা সুস্থ আছে তো!!!

“- সায়ন মুখে বলার সাহস খুজে পাচ্ছে না। তাই আঙুল দিয়ে সামনের কেবিন টা দেখিয়ে দিলো……

ওখানে যাও ভাই৷৷

———

৫ বছর পর★★★★

“- মাঝারি আকারের একটা..
জাম গাছ, বয়স পাঁচ বছরই হয়তো।
কবরটা যে দিন দিয়েছে এর দুই দিন পরেই এই গাছটা এই খানে জন্ম নিয়েছে।

—- শুক্রবারের জুম্মার নামাজ আদায় করে রিদয় ঐ জাম গাছ তলে কিছুক্ষন সময় কাটালো।
রিদয়ের বাবা কবর টা জেয়ারত করে রিদয়কে রেখেই ভেতরে চলে এলো। থাক ও কিছু সময়। মন টা হালকা লাগবে।
বাড়ির পিছন দিকটায় কবরটা দেয়া হয়েছে।

“— ফুট ফুটে একটা ছোট্ট মেয়ে রিদয়ের হাতের আঙুল ধরে টানছে। আব্বু…আব্বু …

দুটো ডাক পরতেই রিদয়ের ধ্যান গম্ভীরতা ছেরেছে।
ওমা আমার মনি মা দেখছি!!

এসো এসো…

না আতব না,আগে মামনিকে বকনি দিবে তকন তোমার কাতে আতবো।

“- মনি মা রাগ হল কেন??
চোখটা পাকিয়ে সামনে তাকিয়ে রিদয়।
তুমি আজকেও আমার মা কে বকনি দিয়েছো???

—– চুল গুলো খুপা করে মাথায় কাপর দিয়ে কবরের পাশে এসেছে তিতিল।

কবরটার দিকে চেয়ে দুচোখের জল বেয়ে পরছে।

———-★★

” ঐ যে ৫ বছর আগে যে তিতিল রা এক্সিডেন্ট করেছিলো।সেদিন তিতিলের অবস্থ্যা খুব খারাপই ছিলো, ইমারজেন্সী সিজারিয়ানের জন্যে নেয়া হয়েছিলো।

“- তবে পেটের ভিতরেই তিতিল আর রিদয়ের একটি কন্যা সন্তান মারা গিয়েছিলো।

শুধু একজনকেই বাঁচাতে পেরেছিলো.
আর সে হল মহনিতা।.
রিদয় আর তিতিলের কলিজার টুকরো মহনিতা…

রিদয় ভালো বেশে মনি মা ডাকে।

“—–

“- তিতিল অচেতন অবস্থায় ছিলো তবে রিদয় নয়। ছোট্ট মৃত মেয়েটাকে কোলে নিয়ে চিৎকার করে উঠেছিলো সেদিন।

রিদয়ের চিৎকারে আরিফ সায়ন সহ পুরো হাসপাতাল কেঁপে উঠেছিলো।
সন্তানের লাশ হাতে নিয়ে এই অধম পিতাকে দেখতে অনেকেই ভির জমিয়েছিলো।
রিয়দকে এভাবে কাদঁতে দেখে হাসপাতালের নার্স ডাক্তার সবাই কেঁদে উঠেছিলো।
মারাত্মক আত্মনাথ ছিলো তার।
বাড়ির সকলে জেনো বেঁচে থেকেও মরা ছিলো।

— প্রথম তিতিলকে না জানালেও, পরে তো জানাতেই হল।লুকানোর মত তো নয় এটা।

“- একদিকে তিতিল আরো অসুস্থ হয়ে পরে৷ অন্য দিকে মেয়ের শোকে কাতর রিদয়।
– তিন দিন নাওয়া খাওয়া ছেরে কবরের পাশে বসে ছিলো।
ইসলামের বিধান অনুযায়ি শিশু মৃত জন্ম গ্রহন করলে তার জানাজা হয় না….
আর তাই ওর ও হল না……..

“- বহু সময় লেগেছিলো রিদয় আর তিতিলের।এক সন্তান হারানোর ব্যাথা থেকে বের হতে ।

“★★
বর্তমানে———


“- সারা দিন টই টই, এক দন্দ বসছেই না।এখনও অবদি খেলোই না।কত ক্ষন পিছু পিছু হাটছি।তাই একটু ধমক…….

বাস এত টুকুই তিতিল বলে চুপ।রিদয় রাগে গজ গজ করছে।এক মেয়ের কবরের সামনে দাড়িয়ে আরেক মেয়ের চোখের পানি মুছছে।

ওর যা ইচ্ছা ও তাই করবে। তুমি বলার কে??
আমার মনি মা ওর মত চলবে…
খবরদার ওকে বকবেনা।
“—-

“- রাতে সবাইকে খাবার দিয়েছে শুধু তিতিল খাচ্ছে না।রোকেয়া বেগম আরিফ রহমান তিতিলকে বার বার বলছে তাও না।
ঐ দুপুরের কথায় নারাজ হয়তো।রিদয় চোখ গরম করেছে কিনা।

“— মহনিতাকে ঘুম পারিয়ে তিতিলের মাথায় হাত রাখতেই তিতিল ফুপিয়ে কেঁদে উঠলো।

আমার উপরে আপনার অনেক রাগ হয় তাই না…

” কি বলছো তিতিল রাগ হবে কেন? তুমি তো জানোই মনি মা আমাদের কি..
ও ছারা আমাদের কে আছে বলো, ওই তো আমাদের মা..
তাও তুমি এই ছোট্ট মা টা কে বকনি দাও৷
তিতিলকে বাহু ডুরে নিয়ে কপালে চুমু আকছে রিদয়।

“– আমার সেদিনের বায়নায় আজকে এক মেয়েকে হারিয়েছি, তাই মাঝে মধ্যে আপনি আমার উপরে রাগ হয়ে থাকেন তাই না??

” ছি তিতিল কি বাজে বকছো।সবই নিয়তি।দুই মেয়ের বাবা ডাক শুনা হয়তো ভাগ্যে নেই তাই।
জানিনা কেন এমন হল তিতিল, জত বার ঐ গাছ তলা যাই মনে হয়, আমি আমার মেয়ের কাছে আছি।ইচ্ছা করে ওখানেই বসে রই।গাছের ছাউনি যেনো আমার মেয়ের ছায়া মনে হয়।
দেখতে পুরো আমার মায়ের রূপ ছিলো মেয়েটা….৷৷

“তিতিল আর রিদয়ের চোখ ভিজে এসেছে।এক মেয়েকে হারিয়ে আজ অবদি শোকে ভুগছে বাড়ির সকলে।

“——★★

প্রথম তো ভেবেছিলো রিদয়ের এত শত্রু আছে তারাই এটা করিয়েছে।

তবে বছর চার আগে সে ভুল ভাঙলো।
সেতু জেলখানায় রিদয়কে ডেকে পাঠিয়েছিলো। কাটা ঘায়ে নূনের ছিটা দিতে।

তোমার মেয়ে আমার কারনে মরেছে রিদয়,আমিই করিয়েছি সেই এক্সিডেন্ট।
আর তোমার আরেক মেয়েকেও জলদি শেষ করব, আর তোমার প্রান প্রেয়সিকেও।বলেই সয়তানের মত হাসি।

—-★ সেদিন রাতে আরেক ভয় রিদয়কে গিলছিলো।তাই কোন চান্স নয়।খুনিতো আগেই ছিলো এবার না হয় আরেকটা… মেয়েকে নিয়ে রিক্স নয়। তিতিলের জানেও আঘাত হতে পারে।

” সপ্তাহ খানেক পরেই জেলখানায় সেতু মারা যায়। আত্মহত্যা করেছে সবার দাবী,গলায় উরনা পেঁচিয়ে আত্মহত্যা করেছে,হয়তো জেলের বন্দি জীবন চায়না বলেই।।তবে ঘটনা অন্য রকমই ছিলো কাজ টা রিদয় করিয়েছে তা ক্লিয়ার।
বাড়িতে কাউকে কিছু জানালোনা। এমন কি তিতিলও না। সে জানে এটা এক্সিডেন্ট এবং সেতু সাজা কাটছে হাজোতে।সবটা চেপে গেছে রিদয়।

তিতিলকে বলে আর কষ্ট দিতে চায়না রিদয়।

— এক মেয়েকে আকরে ধরে বাঁচার চেষ্টা দুজনের।

“- —————★★★

“- আহা মনি মা খেয়ে নাও না।
– আর কত ক্ষন বসে থাকবি থানায় যাবি কখন। চাকরিটা খাবি নাকি!
দে আমি খাইয়ে দিই।

” না জেঠিমা, আমার মেয়ে আমিই পারব তার জন্যে তো দুনিয়া ছারতে রাজি সামান্য চাকরি কি।চাইনা এমন চাকরি যার জন্যে সন্তানের মন নষ্ট হয়।

— রিদয়টা যে কেমন আল্লাহ।

– আরিফ রহমান রিটায়ার করেছে।সারাদিন মহনিতাকে নিয়ে সময় কাটানো কাজ।
তিতিলের বাবা এ বাড়িতেই আছে আপাদত।শরিল ভালোনা বলে এখানে এনেছে। ওখানে দেখার তো কেউ নেই।
জুই কে বিয়ে দিয়েছে।ফুলটা একা হয়ে গেছে।জুইয়ের দেবরের সাথে বিয়ে দেবার জন্যে ফুল কাঁন্না শুরু করে।কারন তার জুইকে চাই।বোনকে ছারা চলেই না। তাই ফুলের মন মতই, জুইয়ের দেবরের সাথে বিয়েটা সেরেছে।
জুইয়ের লাভ ম্যারেজ হলেও ফুলের টা তেমন নয়।
“———

সায়নের জন্যে বৌ দেখা হচ্ছে।কোন মেয়েকে এখন অবদি সিলেক্ট করতে পারছে না।

” সারা দিন খাটনি সেরে, মহনিতাকে কোলে নিয়ে কবরের পাশে সময় কাটানোই প্রথম কাজ রিদয়ের।

তার পর মেয়েকে খাইয়ে অ/ আ/ সূরা এসব হলকা মুখে মুখে পড়িয়ে ঘুম পারানো।
রিদয় যতক্ষন বাড়িতে ততো ক্ষন তিতিলের মহনিতাকে চাই না।

— ওর আব্বুই ওর সব, বাপ পাগলি কোথাকার।

“- সব ঠিক চলছে।বেশ সুখ সংসারে তবে সন্তান হারানো ব্যাথাটা কাটেনি।তিতিল মেয়ের জন্যে আজও আরালে কাঁদে।রিদয়ের সামনে একটু চোখ ভেজালেই রিদয় পাগল হয়ে চিৎকার শুরু করে দেয়, মেয়ের জন্যে। জানা নেই কোন পাপে সন্তানের লাশ দেখতে হয়েছে।
___________

“—– সকাল সকাল বাড়ি চলে এলেন যে!!
শরিল খারাপ??
” তিতিলের প্রশ্ন উপেক্ষা করে আগে তার মনি মাকে তার বাবার কাছ থেকে এনে আদর করে নিলো।

— ওমা মেয়েকে নিয়ে মাতলেন। এই মাএ গেলেন আবার ঘন্টা হবার আগেই ফিরে এলেন যে??

” রিদয় তিতিলের হাত টা ধরে সোফায় বসিয়েছে।আরেহ তোমার সমস্যা কোনটা?? এসেই মেয়েকে আদর করলাম এটা?নাকি কেন চলে এলাম ওটা??
নাকি তোমায় আদর করিনি এটা?

— বিরক্তিকর ভাব মুখে টেনে তিতিল মুখ ভেংচি দিয়ে উঠতে চাইলেই রিদয়ের বাধা।
আরেহ এত তেজ কেন হ্যা!!

শুনো বলেছিলাম না বেড়াতে যাবো? মনি মাকে প্রমিস করেছিলাম তো.
তাই পুরো এক সপ্তাহের ছুটি এনেছি। আমরা ঘুরতে যাবো।

“- তিতিল অবাক,সত্যি এই বার ঘুরতে নিয়ে যাবে তো? এর আগে একবার লাস্ট মুহুর্ত্বে উনি মানা করে দিয়েছিলো।কাজ পরেছে উনার থানায়।

— কি হা হয়ে যে??
সারপ্রাইজ হলে তো??

” এর চেয়ে বড় সারপ্রাইজ তো আমার কাছে!!
রিদয় কিছুটা অবাক হয়ে তিতিলের পাশ ঘেসে বসেছে।কি শুনি!!!তাহলেই বুঝবো কার টা বড় সারপ্রাইজ।

চার পাশটায় চোখ বুলিয়ে নিলো তিতিল।কে কখন কোথা থেকে চলে আসে বলা যায় না.

রিদয়ের কপালে ভালোবাসার পরশ বুলিয়ে তিতিল রিদয়ের হাতটা নিজের পেটে হালকা চেপে ধরেছে।

চোখ থেকে অনায়াসে দুফোটা জল গরিয়ে পরেছে।মুখে এক হাসি ঠিক প্রথম বাবা হবে যেদিন শুনেছিলো তখন কার মতই অনূভুতি।

— সত্যি!!
” লজ্জা মাখা মুখটা নত করে মাথায় হ্যা সূচক জবাবে রিদয় খুশিতে গত গত।
কয় মাস তিতিল??
—সারে তিন..
এই পাগলি এত দিন বলোনি কেন??
এটা তো দুনিয়ার সব চাইতে বড় সারপ্রাইজ তিতিল।
আমার আরেক মা আসতে চলছে।হয়তো বাবার কষ্টে থাকতে পারছেনা তাই আবার ফিরে আসছে।

——
গল্পের সমাপ্তি হলেও রিদয় আর তিতিলের ভালোবাসার সমাপ্তি হয়নি।
এক মেয়ে আছে,আরেকজন আসতে চলছে…
রিদয় আবার নতুন করে সুখ খুজছে এবারও তার মেয়েই চাই। বাকিটা আল্লাহর ইচ্ছা।

[এবার কয়েক দিনের ছুটিতে গেলাম, মাস দুই আমারে খুইজেন না]😁😁😁😁

★সমাপ্তি★

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here