স্বামী পর্ব ২

#স্বামী (সিজন-২)
#পর্ব-২
#সেলিনা_আক্তার_শাহারা।
__________________________

“— তিতিল আচমকা তার পাশে একটা বড় পুতুল দেখে চমকে গেছে।
আল্লাহ পুতুল কে কি কেও এভাবে শুইয়ে রাখে! আর রাতে তো এটা ছিলো না এটা কোথা থেকে এলো?? উনি আনল না তো?? তবে ঘরে তো কেউ নেই।
-ভাবার সময় কম।কারন দরজায় কেও ঠক ঠক করছে।ভিতর থেকে লাগানো না হলেও কারো রুমে এভাবে ঢুকা তো ঠিক না।
“-মাথায় ঘুমটা টেনে দরজাটা মেলে দিলো তিতিল।
সামনে দাড়িয়ে রিদয়ের জেঠমা। মুখ দেখে বুঝা যাচ্ছে কড়া মেজাজের মানুষ হবে হয়তো। চোখ না জেনো আগুন ঝরার মেশিন।
–জেঠিমা তিতিলকে উপর থেকে মাথা অবদি একবার দেখে নিলো।
রিদয় উঠেছে???
“-কি!!!
তিতিল চমকে গেলো।যে মানুষ টা রাতে ঘরেই আসেনি সে উঠবে কি করে??
–তিতিলের মুখ দেখে জেঠিমা চুপ।হুম স্বামী রাতে এলো কি না তাও জানোনা। বেশ ভালো মাপের বৌ হবে দেখছি।
” এটা বেশ লজ্জা জনক কথা তিতিলের জন্যে।
সত্যি এভাবে ঘুমিয়ে আর দুনিয়ার খুজই রাখা হয়নি।
উনিকি রাতে ঘরে এসেছিলো?? এটা একটা ধাঁধা হয়ে রইলো তিতিলের কাছে।
-চোখ টা পাকিয়ে তিতিলকে শক্ত গলায় জেঠিমার আদেশ।
দেখো এই বাড়িতে আমিই সব সামলেছি।তবে এখন তুমি এসেছো এবার তোমার শশুর স্বামী আর ননদ দের সামলে নাও।আমার দ্বারা হবে না।
-তিতিল মাথা ঝাকিয়ে হ্যা জবাব টা দিয়ে চুপ।

-হুম যাও কাপর টা ছেরে রান্না ঘরে এসো সব বুঝিয়ে দিচ্ছি। কাল থেকে সকাল সকাল উঠে তোমার দায়িত্ব্য তুমি বুঝে নিও।আজকে না হয় আমিই করছি।

★(-আমার হয়েছে যত জ্বালা।বিয়ে মনে হয় ঐ বুড়োকে নয় ওর চোদ্দ গুষ্টিকে করেছি।ওর ভাই ভাইদের ছেলে মেয়ে এখন আরেকটা আপদ সব আমায় সামলাতে হয়। বির বির করে জেঠিমা কথা গুলো বলে চলে গেলো।তবে তিতিল কালা নয়।)★

—–
জেঠিমা চলে গেছে।তবে ধাঁধা টা মাথায় ঘুর পাক খাচ্ছে।
জুই ফুল এসে তিতিলের সাথে রান্না ঘরে হাজির।
-এই তরা এখানে কেন??
“বারে ভাবিমা যেখানে থাকবে সেখানেই তো থাকব…

-মুখ খানা বাকিয়ে জেঠিমার অন্য রকম স্বর।ইশশ ভাবিমা।ভাবি ভাবিই হয় মা হয় না। তবে মা ডাকা ক দিন থাকে তা দেখার বিষয়।নিজের ছেলে পুলে হলে দেখবি তরা বাড়ির কাজের মেয়ে।
“-তিতিল নতুন বৌ।সব কিছুর সাথে অপরিচিত।সবার আচার আচরন জানা থেকে দূরে।তার দিকে কোন খেয়াল নেই জেঠিমার।তার মনে আসা সকল কিছু পেল পেল করে ঝেরে দিয়েছে।
এতে কার মন খারাপ বা কি ভাবলে তাতে যায় আসে না।

—তিতিলের চোখে কিছুটা জলও চলে এসেছে।এত কঠর গলা!!
তবে উনার ধারনা ভুল। জুই ফুল যেভাবে তিতিলকে ভাবিমা ডাকছে ঠিক সেই ভাবিমার মতই হয়ে দেখাবে।
-খাবার টেবিলে কোন চেয়ার টায় তিতিল বসবে তা নিয়ে চিন্তায় আছে।
ভাবতে ভাবতেই দুই জন পুরুষ তার সামনে দিয়ে এসে নিজেদের চেয়ারে বসেছে।
তিতিল দুজনকেই দেখছে। এক জনের মুখেও কোন কথা নেই।নিজেদের প্লেটে খাবার নিয়ে খাওয়া শুরু করেছে।

জেঠিমা জেঠু রিদয়ের বাবা ওরাও চলে এসেছে।এদের তো চেনা তবে ঐ দুইজনের মধ্যে একজন তিতিলের স্বামী।তবে কোনটা??
–কি হল খেতে বসছো না যে??
বসো বসো খেয়ে নাও মা।
” বাবা মানে রিদয়ের বাবা আরিফ রহমান। তিতিল কে খেতে তো বলছে তবে কোথায় বসবে তা এখনও ভাবছে।
-কো মানে…ঐ
“আরিফ প্লেটে খাবার নিতে নিতে বললো বুঝেছি মা।
দেখো এটা তোমার বাড়ি তাই যা খুশি তা করতে পারো।যে চেয়ারে ইচ্ছা বসতেও পারো।
–তিতিল জুইয়ের পাশের চেয়ার টা টান দিতেই জেঠিমার গলা…
ওমা বৌ মা ননদের পাশে বসে কি করবে! যাও নিজের স্বামীর পাশে গিয়ে বসো দেখো ওর কি চাই?

— এর চাইতে ভালো জেঠিমা মাথায় দুটো বারিই মেরে দিতো।এখন কি করে বুঝবে রিদয় কোনটা!!
আশ্চর্জ ভাবে একজন তাকিয়ে আছে শ্যামলা বর্ন মুখটা।
আরেক জন তো খেয়েই যাচ্ছে। মুখটা ভালো করে দেখার উপায় কই। তবে চোখ গুলো সেদিক ঘুরাচ্ছে।তা বুঝা যাচ্ছে।
তবে বেশ মায়াবী লাগছে এটাকে।এখন অনুমান ছারা উপায় নেই।
একজনের পাশে বসে পরি যা করার আল্লাহই করবে।
চুপ করে বসে থাকা মানুষটার পাশে তিতিল থপ করে বসে পরেছে।
“-তিতিলের কান্ডে সবাই অবাক।এটা কি করে হয়!!!!
–জেঠিমা সব চাইতে বড় অবাক।
রিদয়কে বিয়ের আগে দেখেনি, না কাল রাতে রিদয় তিতিলকে দেখা দিয়েছে।তাহলে বুঝলো কি করে এটা ওর স্বামী? রুমে ছবিও তো ছিলো না।সরিয়ে রেখেছিলাম।
–জেঠু এবার হু হু করে হেসে দিয়েছে। রোকেয়া কি আমার বৌ মা বুদ্ধিমান তো!!তোমার পরিক্ষায় পাশ তো!!!
সবাই চুপ চাপ টিপা হাসি।আসলে সবাই জানে তিতিল রিদয়কে দেখেনি।আর সেই সোজগ টা কাজে লাগিয়ে ওর কান টানা হচ্ছিলো।তবে তিতিল ঠিক মানুষটাকেই বেছে নিয়েছে।

-রিদয় এর মধ্যে নেই।হাসি তো দূর একটা কাশি অবদি দেয়নি।নিজের খাবার শেষ করে রুমে ঢুকে গেছে।
তিতিল তো আন্ধারে তীর মেরেছিলো শুধু। সে কোথায় জানত!

-খাবার শেষে নিজ রুমে যেতে ভয় পাচ্ছে তিতিল।আসলে ঠিক ভয় না।
তবে ভিতরে কিছু একটা কাজ তো করছে। এই সময় টা যে যার ঘরে চলে গেছে।বাবা জেঠু তাদের কাজে চলে গেছে। জুই ফুল স্কুলে যাবে হয়তো রেডি হচ্ছে।
এক পা দুই পা করে নিজ রুমে ঢুকেছে তিতিল।শাড়ির আচল টা মুস্টি করে পেঁচিয়ে রেখেছে।
রুমে পা রাখার সাথে সাথে রিদয় ঘর থেকে বেরিয়ে গেলো।
ব্যাপার টা তিতিলের মাথায় ঢুকলো না।
উনি এমন করছে কেন? বিয়ের আগে আমায় দেখেনি।এখনও একবার তাকিয়ে দেখল না।আমায় কি পছন্দ হয় নি? আর পছন্দ তো তখন হবে যখন আমায় দেকবে।
উনি আমায় বিয়ে করল কেন??? কথাটা ভাবতে ভাবতে বিছানায় ধম করে বসে পরেছে তিতিল।
অচেনা বাড়ি অচেনা শহর।কেউ আপন বলতে নেই।বিয়ের পর তো স্বামী আপন হয়।এখানে স্বামীও পর করে রাখছে।
,ভাবতেই তিতিলের মনে আরেকটা প্রশ্ন ঘুরপাক খেলো।
আমার আগের বিয়ের খবর টা ওরা জানে!নাকি না জানিয়ে বাবা আমায় পার করল।?

“- সারা দিন রুমে কাটিয়েছে তিতিল।দম বন্ধ লাগছিলো তাই সন্ধায় বারান্দায় এসে দাড়িয়েছে।দক্ষিনা বাতাসে মন ফুর ফুরা হয়ে উঠছে।

“- সামনের বাড়িটা রিদয়ের জেঠুর।তা আজ ফুলের কাছ থেকে জানা হয়েছে।
আসলে ওরা আলাদাই থাকে।তবে রান্না বান্না টা শুধু এক সাথে চলছে।
এবাড়িতে তেমন আসে না। আজ সারা দিন এদিকে আসেনি। তবে তাদের ছেলে সায়ন একবার এসেছে।

“-১১ রাত।
জুই ফুল পড়া শেষে আবার একটু তিতিলের পাশে বসেছে।
যাক একটু ভালোই লাগছে।
তবে ওদের থেকে কিছু জানার ছিলো।ওদের ভাই কি এমন কাজ করে সকালে যায় আর নিশি রাত হল আসার খবর নেই।তবে জিজ্ঞাসা করেও করল না।থাক এই পুচকিরা আর কি জানবে।
তবে ওদের থেকে বাড়ির সবার সম্পর্কে ধারনা টা নেয়া হল।

-ওরা চলে গেলে তিতিল আবার একা।কালকের মত আজকেও তিতিল ঘুমিয়ে গেছে, আজ কে সোফায় গুটি মেরে শুয়েছে।

—-
তবে সকালে নিজেকে বিছানায় পেয়েছে।গায়ে চাদর দেয়া।কারন রাতে হয়তো বৃষ্টি হয়েছিলো।তাই শীত পরেছে। তখন গায়ে দিয়েছে।
আজকেও ধাঁধা হয়ে রইলো কে ওকে বিছানায় শুইয়ে দিচ্ছে।উঠে তো কাউকেই দেখছে না
পর পর তিন দিন হল।একই ঘটনা।তিতিল বুঝতে পারছে না।
এদিকে ঘরের সব কাজ কর্ম বুঝে নিয়েছে।
ঘর ঝার দেয়া /মুছা/ রান্নায় সহজোগিতা করার জন্যে একটা মেয়েকে রাখা হয়েছে।তিতিলের শশুর আরিফ রেখেছে।কারন তিতিল এই বাড়ির বৌ কাজের মেয়ে নয়।
তবে রান্নাটা তিতিলকে করতে হয়।ওর রান্নার প্রশংসা বেশ হয়।
হাতে জাদু আছে। আজ তো সকালেও দেখা মিললো না রিদয়ের।
সবাইকে রাতের খাবার খাওয়ানো শেষ করে।জুই আর ফুলকে একটিবার দেখে এসে।শশুরের রুমে পা দিয়েছে তিতিল। শাশুরি থাকলে হয়তো ওর মন টা বুঝতো।এখন নেই তাতে কি বাবার মত শশুর তো আছে।

-এক গ্লাস দুধ হাতে দরজার কড়া নাড়ল তিতিল।
“হ্যা এসো বৌ মা…
-গ্লাস টা টেবিলের উপর রেখে আরিফ রহমানের সামনে দাড়িয়েছে তিতিল।আরিফ রহমান নিশ্চুপ।কারন তিতিলের মনে থাকা প্রশ্ন গুলো হয়তো তিনি জানেন।
—কিছু বলবে মা!!
” মা ডাক তাও এত আদুরে গলায়..বহু বছর পর শুনতে পেলো। মা তো এভাবেই ডাকতো তবে ওর বাবা…
চোখ থেকে কিছুটা জলও বেরিয়ে এলো তিতিলের।
“-বাবা এমন করে আমায় কেউ ডাকেনি.আমার বাবাও না।
-আরিফ এবার হেলান ছেরে উঠে বসে। তিতিলের হাত টা ধরে নিজের পাশটায় বসিয়েছে। কেউ ডাকেনি তাতে কি.আজ থেকে তোকে আমি মা বলেই ডাকব.. তুইও তো আমার জুই ফুলের মত আরেকটা মেয়ে।
“-আরিফ রহমানকে জরিয়ে ধরতে একটু দ্বিধা হল না তিতিলের, এমন শশুর পাওয়া ভাগ্যের ব্যাপার।

“- জানিস মা জুই আর ফুল যখন খুব ছোট তখন তর শাশুরি মারা যায়। ওদের কথা ভেবে দ্বিতিয় বিয়েটা করিনি।আর হয়তো কোথাও না কোথাও তর শাশুরির জায়গাটা কাউকে দিতেও চাইনি।
-তিতিল এক মনে তার শশুরের কথা শুনছে।
“— রিদয় টা বড় মা পাগল ছিলো। মা মরে যাবার পর থেকে আমার সাথে তেমন কথা বলে না।হয়তো আমার চোখে পানি দেখতে পায় বলে। আমি একা হয়ে গেছি ভেবে সে কষ্ট পায়।আর সেই কষ্ট আরালে রাখতে এমন করে।

সারা জীবন অফিসে কত হিসাব কষেছি।তবে তর শাশুরি যাবার পর থেকে ঘরের ছেলে মেয়েদের দূরে থাকার হিসাব টা কষতে পারিনি রে মা পারিনি।
এবার তো আরিফের রহমানের চোখেও জল চলে এলো।
-চশমাটা মুছে নিয়ে আবার চোখে দিয়েছে আরিফ রহমান।এবার একটু নিজেকে সামলে তিতিলের মাথায় হাত বুলিয়ে নিয়ে বললো।

তোকে একটা কথা বলি, মা রে রিদয় টা ওর মায়ের মরার পরেও কাঁদেনি। একটা বড় ধাক্কা খেয়েছে ও। চাকরি করছে, আমার আর চাকরি করার দরকার পরে না। তবুও সময় কাটাতে যাই—–জুই ফুলের সব দায়িত্ব্য নিজ কাধে তুলে নিয়েছে।
সব ঠিক দেখালেও কিছুই ঠিক নেই। তবে তুই কেন এসেছিস জানি।তবে ঐ অঠিক কাজ গুলো তকেই ঠিক করতে হবে।
রিদয়কে আসল ভাবে বাঁচতে শেখাতে হবে। আর ওকে বুঝে নে। কিছুটা সময় দে ওকে। দেখবি তোকে চোখে হারাবে।

*-**———
শশুর কে নিরাশা করেনি তিতিল। কথা দিয়েছে সব ঠিক করবে।
মানুষের বাহিরের মুখ আর ভিতরের মুখ বড় ভিন্ন হয়।

-আজকেও বড্ড রাত হয়েছে তবে আজ ঘুমাবে না।আজ ঘুমের ভান করবে।
তবে যে মানুষ টা এত যত্নে ওকে শুইয়ে দেয় তার জন্যে খাবার টা রুমে আনা যাক।নয়তো না খেয়েই হয়তো শুয়ে পরে।

যেমন ভাবা তেমন কাজ।সোফায় আজও শুয়ে পরেছে।
অপেক্ষা শেষ ঘন্টা খানেক পরেই দরজা খুলার শব্দ।
হুম এসেছে জনাব।

-চোখ টা পিট পিট করে মেলে দেখছে আজ রিদয়কে।শার্ট টা খুলে আরেকটা টি শার্ট পরছে। খালি পিঠটা দেখা যাচ্ছে।
হাত মুখ ধুয়ে এসে তিতিলের রাখা খাবার টার স্বাদ নিচ্ছে।
-খাবার টা রেখে খারাপ করিনি।ভালোই হল।খাবার টা না রাখলে তো না খেয়ে ঘুমাতো।খাওয়ার স্পিডে বলে দেয় কত টা খুদার্থ। রুজ কি রাত করে ফেরে ও। আর খালি পেটেই শুয়ে থাকে??
জেঠিমা তো তাই খুজ রাখেনা হয়তো।তবে মা থাকলে ছেলেকে না খাইয়ে রাখত না।
-থাক আর না খেয়ে ঘুমাতে হবে না।রাতের খাবার টা রুমে এনে রাখবো রুজ।
-সুন্দর করে খেয়ে বিছানায় বালিশ দুটো ঠিক করছে।মিট মিট করে চেয়ে সবই দেখছে আজ তিতিল।চোখ খুলবে না খুললেই হয়তো আবার রুম থেকে বেরিয়ে যাবে।

—- রিদয় ধিরে ধিরে তিতিলের পাশে দারিয়েছে।
এবার চোখ সুন্দর করে বন্ধ করেছে একদম ঘুমের অভিনয় যাকে বলে।
“রিদয় হয়তো দারিয়ে সিউর হতে চাইছে তিতিল ঘুমিয়েছে কিনা।
সনতুষ্টি হয়ে রিদয় তিতিলকে পরম আবেশে নিজের কোলে তুলে নিয়েছে।
বেশ ভালো লাগছে তিতিলের।কেউ তো আছে ওর সুখের চিন্তা করছে।এত মায়া ভরা হাতে কত সুন্দর করে আকরে ধরেছে রিদয়।
-ইচ্ছা করছে চোখটা মেলে দিই..মেলব নাকি? না না।
নাহ মেলেই ফেলি….৷

চলবে….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here