স্মৃতিতে তোমার বন্দনা পর্ব ২৬

#স্মৃতিতে_তোমার_বন্দনা
#পর্ব_২৬
#Saji_Afroz
.
.
.
পরশ কি বলবে বুঝে উঠতে পারছেনা । চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছে সে । শফিউল আহম্মেদ মুচকি হেসে বললেন-
কিশোর বয়সে প্রেম করে ধরা খেলে চেহারার যে অবস্থা হয়না? তোর সেই অবস্থা হয়েছে ।
.
সাফিনা আহম্মেদ বললেন-
প্রেম মানে! ছোঁয়া জানে ওর বিয়ে ঠিক হয়ে আছে । তারপরেও ওর সাথে প্রেম করবে কেনো?
.
এবার মুখ খুললো পরশ-
ছোঁয়াকে নিয়ে কিছু বলোনা মা । ওর এসব বিষয়ে আইডিয়াও নেই ।
-মানে?
.
পরশ মা বাবাকে নিয়ে বিছানার উপরে বসলো । সে বসলো দুজনের ঠিক মাঝখানে । লম্বা কয়েকটা নিশ্বাস ফেলে বললো-
আমি ভালোবাসি ছোঁয়াকে ।
.
শফিউল আহম্মেদ খুশিই হলেন কথাটি শুনে । ছোঁয়াকে ছেলের বউ হিসেবে অপছন্দ নয় তার । এ কয়েকটা দিনেই মেয়েটি তার মন জিতে নিয়েছে ৷ কিন্তু সাফিনা আহম্মেদ খুশি হতে পারলেন না ।
তোহার কথাও ভুলতে পারেনা সে । নিজে গিয়ে মেয়েটার বাসায় বিয়ের কথা বলেছিলো!
তিনি বললেন-
তুই কি বলছিস আমি কিছু বুঝতে পারছিনা ।
-আমি প্রেমে পড়েছিলাম । এটা তো তুমি বুঝতে পেরেছিলে । তাইনা?
-হ্যাঁ ।
-এই সেই মেয়েটি মা । ওর প্রেমেই পড়েছিলাম আমি । ওর জন্যই অপেক্ষায় ছিলাম । বিয়েও করতে রাজি ছিলাম না ওর জন্যই ।
-মানেটা কি পরশ? বুঝছিনা আমি কিছুই ।
.
শুরু থেকে সবটা তাদের খুলে বললো পরশ । সব বলার পর সে বললো-
মা তুমিই বলেছিলে, সে যদি আমার হয় তবে ফিরে আসবে আমার কাছে । আজ সে ফিরে এসেছে । কিভাবে নিজেকে আঁটকায় বলো?
-কিন্তু তোহা? মেয়েটার কি দোষ?
-ও সব জানে মা । ওর কোনো সমস্যা নেই ।
-কি বলছিস?
-হ্যাঁ ওকে আমি ছোঁয়ার কথা বলেছি । ওর বাবা না আসা পর্যন্ত আমাকে হেল্প করতে বলেছি । যাতে করে আমি ছোঁয়ার মত জিততে পারি আর ও তোমাদের মন । সময় দরকার ছিলো আমার ।
.
শফিউল আহম্মেদ বললেন-
শুধু মন জিতেনি ছোঁয়া । ভালোবাসাও জিতে নিয়েছে আমাদের ।
.
সাফিনা আহম্মেদ বললেন-
তোহা জানে বুঝলাম, তোহার ফ্যামিলি?
.
পরশ জবাব দিলো-
জানেনা ।
-আমার ওর মায়ের সাথে কথা হয়েছিলো । আমি নিজে গিয়ে তোদের নিয়ে কথা বলেছি ।
-কিন্তু যে পাত্রী সে সবটা জানে ।
-সে চুপ আছে কেনো? তুই বলেছিস তাই? নাকি অপেক্ষা করছে তোর জন্য?
.
পরশ হেসে বললো-
আমরা শুধুই বন্ধু মা!
-দেখ পরশ, ছোঁয়াকে নিয়ে আমার কোনো আপত্তি নেই । কিন্তু তোহাকে আমি ছোঁয়ার আগে থেকে চিনি । ওর মনে কষ্ট দিতে পারবোনা আমি ।
.
সাফিনা আহম্মেদ উঠে চলে গেলেন । শফিউল আহম্মেদ বললেন-
বাবার সাপোর্ট যে পাচ্ছিস শোকর কর ।
-হু করছি । মাকে রাজি করাও না প্লিজ?
-আই উইল ট্রাই মাই বেস্ট ডিয়ার!
.
.
সকাল সকাল ঘুম ভাঙতেই উঠে বসে তোহা । ফোনটা হাতে নিয়ে দেখলো কটা বাজে । মুশফিকের মিসডকল দেখে তার চোখ ছানাবড়া হয়ে গেলো । নীলার সাথে কথা বলার পর প্রায় অনেকক্ষণ মুশফিকের কলের অপেক্ষা করতে করতে, কখন যে ঘুমিয়ে পড়েছে টের পায়নি । মোবাইল সাইলেন্ট থাকার কারণে বুঝতেও পারেনি ।
ইশ! কি ভাবছে মুশফিকটা?
তাড়াতাড়ি ডায়েল করলো সে মুশফিকের নাম্বারে । একবার রিং হতেই রিসিভ করে বললো-
ব্যস্ত হবার কিছু নেই । আমি বুঝেছি তুমি ঘুমিয়ে পড়েছিলে । মন ভালো থাকলে ঘুম আসাটা স্বাভাবিক ।
.
মুশফিকের কথাটা শুনে মনেহচ্ছে অনেকদিনের সম্পর্ক তাদের । কতো সহজে আপন করে নিলো তাকে সে! তোহা হাসলো ।
মুশফিক জানতে চায়লো-
কোনো দ্বিধা নেইতো মনে আমাকে নিয়ে?
-নীলাকে কিন্তু লেহেঙ্গা দিতেই হবে ।
-মানে?
-আমাদের বিয়েতে । ঘটকালি করলোনা ও?
-ওহহো! ঘটক রানীর জন্য উপহারের শেষ থাকবেনা । এবার যেটা শোনার জন্য এতোদিন অপেক্ষা করছি, কাল রাতেতো রীতিমতো ছটফট করেছি সেটা শোনাও?
-কি?
-বুঝোনা?
.
নিশ্চুপ তোহা । মুশফিক বললো-
বলবেনা?
-ভালোবাসি ।
-শান্তি….
.
কিছুক্ষণ মুশফিকের সাথে কথা বলার পর ফোন রেখে ভাবতে থাকলো তোহা-
প্রেমে তো পড়েছিস! এবার সব সামাল দে তোহা ।
.
.
মায়ের রুমে আসলো পরশ । তিনি বিছানার এক পাশে বসে রয়েছেন মুখ গোমড়া করে ।
পরশ তার সামনে হাঁটু গেড়ে মেঝেতে বসে বললো-
তোমার পছন্দ নয় ছোঁয়াকে?
-আমার তোহাকেও অপছন্দ নয় ।
-কিন্তু আমি ভালোবাসি ছোঁয়াকে!
-তোহা তোকে ভালোবাসে, ওর মায়ের সাথে কথা বলে ফেলেছি আমি ।
-কথা বলেছো । বিয়ে হয়নি। এমন তো না মা, আমার একটা বউ আছে আমি আরেকটা বিয়ে করতে চাইছি?
-কিসব বলছিস?
-তুমিই বুঝছোনা আমার কথা ।
-এখন যা একটু ।
.
পরশের ফোন বেজে উঠলো । হাতেই ছিলো ফোনটা । তোহার কল এসেছে ।
-তোহার ফোন এতো সকালে!
-রিসিভ কর। আমি শুনতে চাই কি বলে ৷ আমি জানতে চাই ও ছোঁয়ার কথা জানে কিনা । নাকি তুই আমাকে মিথ্যে বলছিস ।
-তোমার এমন মনেহয়?
-রিসিভ কর! আর লাউডস্পিকার দে ।
.
পরশ বিছানার উপরে পা তুলে বসে পড়লো । রিসিভ করে বললো-
গুড মনিং তোহা । কি খবর তোর?
-আমি ভালো আছি । তোর কি খবর?
-ভালো আছি । আচ্ছা শোন…
-তুই শুন পরশ । আমার কিছু কথা বলার আছে ।
-হ্যাঁ বল ।
-আমি প্রেমে পড়েছি ।
.
কথাটি শুনে যেনো ঝাটকা খেলো পরশ । সাফিনা আহম্মেদের মুখের দিকে তাকালো সে । তার মুখের ভঙ্গি এমন, যেনো পরশ অপরাধী ।
তোহা কি তাকে ভালোবাসার কথা জানাবে! এটা কিভাবে সম্ভব?
পরশ বললো-
এই এই! তুই আবার আমার লাইফে ভিলেনের ক্যারেক্টার প্লে করতে চাস না বললাম!
.
তোহা হাসতে থাকলো ।
পরশের ভয়ে গলা শুকিয়ে আসছে । তোহা কি বলতে চাচ্ছে?
তোহা হাসি থামিয়ে বললো-
সবাই জানে তোর সাথে আমার বিয়ে । তুই আমাকে ঠকাতে পারিস না পরশ । দেখ আমিই তোকে সুখে রাখতে পারবো । তোর ছোট ছোট চাহিদা গুলোও আমি জানি । এখন আমি তোকে ভালোওবাসি । প্লিজ না করিস না এই বিয়েতে । ভুলে যা ওই ছোঁয়াকে ।
.
পরশের হাত থেকে মোবাইলটা পড়ে গেলো বিছানার উপরে । সাফিনা আহম্মেদ তার হাতে ধরিয়ে দিলেন ফোনটা আবার । ইশারায় বললেন কথা বলার জন্য ।
পরশ কিছুক্ষণ চুপ থেকে উচ্চশব্দে হেসে উঠলো । সাফিনা আহম্মেদের সাথে অবাক হলো তোহাও ।
পরশ হাসতে হাসতে বললো-
তোকে আমার থেকে ভালো কে চিনে? তুই মজা করছিস আমার সাথে । আসল কাহিনী কি বলতো?
-যাহ বাবা! ধরা খেয়ে গেলাম!
.
হাফ ছেড়ে যেনো বাঁচলো পরশ । কয়েক সেকেন্ডের জন্য এসব সত্য ভেবেছিলো । ভালোবাসা যে কোনো বাঁধ মানেনা । কিন্তু তার বন্ধুত্বের উপরে পূর্ণ বিশ্বাস ছিলো । তাই তোহার দুষ্টুমি বুঝতে দেরী হলোনা তার ।
.
পরশ বললো-
কাহিনী কি?
-মুশফিক নামক এক ছেলের প্রেমে পড়েছি ।
.
সাফিনা আহম্মেদ চমকে উঠলেন। পরশ বললো-
কি বলছিস!
-হ্যাঁ ।
-কবে?
-এই কয়েকদিনেই । এতো জলদি কারো প্রেমে পড়বো বুঝিনি ।
-বুড়ি হয়ে যাচ্ছিস জলদি লাগছে?
-সেই জলদি নয় । তার সাথে পরিচয় বেশিদিনের নয় ।
-আরে ছোঁয়াকে প্রথম দেখেই প্রেমে পড়েছিলাম আমি ।
-তোর ব্যাপারে সব জানা আমার । এখনের কি অবস্থা?
-এখনের অবস্থা আমার বাসায় সব জেনে গিয়েছে ।
-এ!
-হ্যাঁ। তুইও তোর বাসায় সব জানাতে পারিস । আর অপেক্ষা করতে হবেনা ।
-ছোঁয়া জানে?
-জানেনা । একটু সমস্যা আছে ।
-কি?
-পরে বলবো । এখন রাখছি।
-আচ্ছা ।
.
ফোন রেখে মায়ের দিকে তাকালো পরশ । সাফিনা আহম্মেদ হেসে বললেন-
তার মানে তুই আর তোহা শুধুই বন্ধু ছিলিস ।
-বিশ্বাস হলো তো?
-হ্যাঁ ।
-তাহলে কোনো আপত্তি আছে আর?
-উহু নেই!
.
খুশিতে মাকে জড়িয়ে ধরলো পরশ । তিনি বললেন-
আমি আজই ছোঁয়ার মায়ের সাথে কথা বলবো ।
.
পরশ মাকে ছেড়ে বললো-
একটু সমস্যা আছে মা ।
-কি?
-ছোঁয়ার না বিয়ে ঠিক হয়ে আছে ।
.
কথাটি শুনে হাসবেন নাকি মন খারাপ করবেন বুঝলেন না সাফিনা আহম্মেদ । তিনি বললেন-
কি শুরু করলি তোরা! এখন আবার ছোঁয়ার বিয়ে ঠিক । তাহলে কিসে কি হবে? আমি কারো বিয়ে ভাঙতে পারবোনা ।
-ভাঙতে হবেনা । কারণ ওই পাত্রকে ছোঁয়ার পছন্দ নয় ।
-মতের বিরুদ্ধে বিয়ে ঠিক করেছে?
-এমনি কিছু ।
-এখন কি হবে?
-ছোঁয়ার তো ওকে পছন্দ নয় । তাই আমি ওর মনে জায়গা করতেই পারি ।
-হ্যাঁ ।
-তবে জানতে হবে কেনো রাফসানকে ওর অপছন্দ ।
-কিভাবে জানবি?
.
মায়ের দিকে তাকিয়ে দুষ্টু একটা হাসি দিলো পরশ । তিনি বললেন-
কি কুবুদ্ধি করছিস?
-একমাত্র তুমিই আমাকে হেল্প করতে পারো । তুমিই বের করবে রাফসানকে ছোঁয়া কেনো পছন্দ করেনা ।
.
চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here