স্মৃতিতে তোমার বন্দনা পর্ব ২৭

#স্মৃতিতে_তোমার_বন্দনা
#পর্ব_২৭
#Saji_Afroz
.
.
-আমি কিভাবে বের করবো? ছোঁয়াকে জিজ্ঞেস করে?
-নাহ । ছোঁয়া এসব বিষয়ে কথা বলতে পছন্দ করেনা ।
-তবে?
-ওর মাকে জিজ্ঞেস করবে ।
-ওর মাকে আমি কিভাবে জিজ্ঞাসা করবো এসব!
-তুমিও একজন মা । সেই হিসেবে পারোই । সাধারণ ভাবেই জানতে চায়বে, কেনো ছোঁয়া পছন্দ করেনা রাফসানকে ।
-আমি জানতে চাইলেই তিনি বলবেন!
-তুমি চাওনা তোমার ছেলে তার ভালোবাসা পাক?
-দিলিতো ইমোশোনাল করে!
-পারবে তুমি?
-দেখ কিভাবে পেটের কথা বের করে আনি ।
.
মা ছেলে হাসতে থাকলো । শফিউল আহম্মেদ এসে বললেন-
মাকে রাজি না করিয়ে আড্ডায় বসে গিয়েছিস! জানতাম তোর দ্বারা হবেনা । আমাকেই বোঝাতে হবে । দেখো সাফিনা ছোঁয়া ভীষণ ভালো মেয়ে । ওকে আমার পুত্র বঁধু হিসেবে পছন্দ ।
.
সাফিনা আহম্মেদ হেসে বললেন-
হয়েছে এখন আর কষ্ট করতে হবেনা । তুমি না চায়লেও আমি ছোঁয়াকে পুত্রবধূর রূপে এই বাড়িতে আনবো ।
-বাহ! এতো তাড়াতাড়ি মেনে নিলে কিভাবে?
.
পরশ উঠে বললো-
আমি তোহার সাথে কথা শেষ করিনি তখন । কথা বলে নিই । তুমি বাবাকে বোঝাও কেনো রাজি হয়েছো ।
.
.
ঘুম থেকে উঠে বসলো ছোঁয়া । পায়ের দিকে চোখ পড়তেই নূপুর জোড়া দেখলো সে । নূপুর জোড়া খুলে হাতের মুঠোয় নিয়ে উঠে পড়লো । ড্রয়ারে রেখে ফ্রেশ হয়ে নাস্তা সেরে নিয়ে, সাফিনা আহম্মেদের কাছে আসলো ।
সাফিনা আহম্মেদ ছোঁয়াকে ইশারায় কাছে ডাকলেন ।
রুমের মাঝে শফিউল আহম্মেদও ছিলেন । ছোঁয়াকে আষ্ঠেপৃষ্ঠে জড়িয়ে ধরলেন তিনি । সাফিনা আহম্মেদ ছোঁয়াকে নিজের মেয়ের মতো আদর করেন । কিন্তু আজ হঠাৎ এভাবে জড়িয়ে ধরার কারণ বুঝতে পারলোনা ছোঁয়া । সে বললো-
আজ আমার জন্মদিন না কিন্তু ।
-জানি ।
-আমি এই বাড়ি ছেড়েও যাচ্ছিনা ।
-যেতে দিবোওনা ।
-তবে সকাল সকাল এতো মহব্বতের কারণ?
.
ছোঁয়াকে ছেড়ে তিনি বললেন-
ওরে পাগলি? মা কি মেয়েকে এমনিতে আদর করতে পারেনা?
-তা পারে তবে কোনো যেনো রহস্যের গন্ধ পাচ্ছি ।
-আর আদরই করবোনা তোমাকে । খুশি?
.
সাফিনা আহম্মেদকে জড়িয়ে ধরে ছোঁয়া বললো-
ওলে বাবালে! আমিতো একটু রসিকতা করছিলাম ।
.
শফিউল আহম্মেদ বেরিয়ে এলেন রুম ছেড়ে । তার চোখে পানি চলে এসেছে এমন একটা দৃশ্য দেখে । বড় ছেলেকে নিয়ে অনেক স্বপ্ন ছিলো তার । ছেলে পর করে দিয়ে বউ নিয়ে অন্য দেশে পাড়ি জমিয়েছে । তার দৃঢ় বিশ্বাস । ছোঁয়া তাদের অনেক ভালোবাসা দিবে । হাসিখুশিতে ভরিয়ে রাখবে এই বাড়িটা ।
.
.
বিকেলে বাগানে বসে ছিলেন আফিয়া জান্নাত । নিজের রুমের বারান্দা থেকে তাকে দেখতে পেয়ে নিচে নেমে এলেন সাফিনা আহম্মেদ ।
আফিয়া জান্নাত তাকে দেখে দাঁড়িয়ে পড়লেন ।
সাফিনা আহম্মেদ বললেন-
আরে বসুন বসুন, গল্প করি দুজনে ।
.
দুজনে বসে পড়তেই সাফিনা আহম্মেদ নয়নতারার কথা তুললেন ।
-নয়নতারা বিয়ে শুনেছি । তা ছেলে কি করে?
-দেশের বাইরে থাকে ।
-জানাশোনা কেউ?
-হ্যাঁ । ছেলের বাবা আমার স্বামীর বাল্যকালের বন্ধু ।
-বাবারা বিয়েটা ঠিক করেছে বুঝি?
-হ্যাঁ ।
-নয়নতারার মত আছেতো?
-বাবার মত মানেই তার মত ছিলো । অনেক আগে থেকেই বিয়েটা ঠিক করা ।
-আর রাফসানকে বিয়ে করতে ছোঁয়া রাজি তো?
.
তার দিকে অবাক হয়ে তাকালেন আফিয়া জান্নাত ।
সাফিনা আহম্মেদ বললেন-
ছোঁয়াকে আমি নিজের মেয়ের মতোই দেখি । আমার কেনো যেনো মনেহচ্ছে ও এই বিয়েতে রাজি নয় । আপনি ওর মা, আমিও ওর মায়ের মতো । তাই জানতে চাচ্ছিলাম । মেয়েটা এই কয়েকদিনেই মনে জায়গা করে নিলোতো ।
-বিয়েতে রাজি না এমন কিছু নয় ।
-রাফসানকে তো অপছন্দ?
.
আফিয়া জান্নাত চিন্তায় পড়ে গেলেন । ছোঁয়া কি তাদের কিছু বলেছে? ছোঁয়ার মা হিসেবে এতোটুকু ভরসা আছে, সে কিছু বলবেনা । তবে তিনি এসব কেনো জানতে চায়ছেন?
সাফিনা আহম্মেদ বললেন-
মেয়েটার জন্য বড্ড চিন্তা হচ্ছে । সে যদি রাফসানকে পছন্দ নাই করে তবে কি দরকার বিয়েটা করানোর?
.
খানিকক্ষণ ভেবে আফিয়া জান্নাত বললেন-
আসলে এই বিয়েটার সাথে নয়নতারার ভবিষ্যৎ জড়িয়ে আছে ।
-মানে?
-তারা দুই বন্ধু ঠিক করেছে বিয়েটা । তাদের প্রথম ছেলের সাথে প্রথম মেয়ের বিয়ে । ছেলেমেয়ে দুটোও বাবাদের কথায় রাজি হলো । আমার স্বামী তো অকালে পরপারে গমন করলেন । কিন্তু রাদিবের বাবা তার কথা খেলাপ করেন নি । বিয়েটা হবে তিনি আশা দিয়েছেন । মাঝখানে ঝামেলা পাকালো রাফসান ।
-মানে?
-সে নাকি ছোঁয়াকে অনেক আগে থেকেই পছন্দ করে । সে প্রস্তাব দিলো ছোঁয়ার জন্য । কিন্তু ছোঁয়ার তাকে পছন্দ নয় ।
-কেনো?
-তার যেমন ছেলে পছন্দ তেমনটা রাফসান নয় । কিন্তু রাফসান এটা মানতে নারাজ । সে বলেছে ছোঁয়া এই বিয়েটা না করলে রাদিবও নয়নতারাকে বিয়ে করবেনা ।
-রাদিব এটা মানলো?
-হ্যাঁ । তাই আমিও জোর করি ছোঁয়াকে ।
-একজন মা হিসেবে এটা করা আপনার উচিত হয়নি ।
-আমি অসহায় আপা । কে বিয়ে করবে এই মেয়ে দুটোকে?
খরচ ছাড়া আমি আর কোথায় এদের গতি করতাম?
-ওরা সুন্দরী, গুণবতী ।
-কিন্তু ওদের মাথার উপরে বাবার হাত নেই । তাছাড়া রাফসান আমাদের যেভাবে আগলে রেখেছে, ছোঁয়াকে আগলে রেখেছে ওর চেয়ে ভালো কেউ ছোঁয়ার জীবনে আসবে আমি ভাবতে পারিনা । একবার বিয়েটা হলে সবটা ঠিক হয়ে যাবে ।
.
.
তোহার মা বসে টিভি দেখছিলেন ।
তোহা আজ ভার্সিটি থেকে তাড়াতাড়ি এসেছে বাসায় । ক্লাস বেশি ছিলোনা তার । সে ফ্রেশ হয়ে খাওয়া দাওয়া সেরে এসে বললো-
কি করছো মা?
-দেখছিস কি করছি । তুই গিয়ে আরাম কর ।
-একটা কথা ছিলো মা ।
-হ্যাঁ বল ।
-জরুরী ।
.
টিভির সাউন্ড কমিয়ে তিনি বললেন-
কি কথা?
-মা আসলে আমি… মানে…
-কি?
-প্রেমে পড়েছি ।
-সেতো জানিই । পরশের….
-নাহ মুশফিকের ।
-কি বললি তুই? আমি কি কোনো মুশফিকের নাম শুনলাম?
-হ্যাঁ ।
.
তিনি কিছুটা গম্ভীর হয়ে বললেন-
কে সে?
.
সব মাকে বললো তোহা । তিনি বললেন-
মুশফিক ভালো হতে পারে । কিন্তু পরশের মাকে কি জবাব দিবো আমি!
-পরশ নিজেই অন্য একজনকে ভালোবাসে, সো কোনো জবাব দিতে হবেনা ।
-সত্যি?
-হু ।
-মুশফিকের জন্যও কোনো জবাব আমি দিচ্ছিনা এখন ।
-মানে?
-তাকে বল ফ্যামিলি নিয়ে আসতে । এমনিতেই মেয়ে দিয়ে দিবো নাকি!
.
মাকে জড়িয়ে ধরে তোহা বললো-
এখুনি বলছি ।
.
.
বাসায় এসে পরশকে সবটা বললেন সাফিনা আহম্মেদ ।
পরশ বললো-
রাফসানকে ছোঁয়ার পছন্দ নয় কেনো এখনো কিন্তু পরিষ্কার নয় মা ।
-নাই হতে পারে পছন্দ । সব দিক থেকে ভালো হলেই যে কাউকে পছন্দ হতে হবে, বিয়ে করতে হবে কথা আছে নাকি!
-তাহলে আমাদের বের করতে হবে ছোঁয়ার কেমন ছেলে পছন্দ । এটা জানতে পারলেই আমার কাজ অনেকটা সহজ হয়ে যাবে ।
-গুড আইডিয়া । কিভাবে বের করবি?
-কিভাবে বের করবে?
-মানে?
-মানে তুমিই বের করবে ছোঁয়ার কেমন ছেলে পছন্দ ।
.
চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here