হঠাৎ ভালোবেসে ফেলেছি পর্ব ১১+১২

#হঠাৎ_ভালোবেসে_ফেলেছি💕
The_unexpected_love
#মুমুর্ষিরা_শাহরীন
Part-11

প্রীতি রেগে নীলাভের দিকে আঙ্গুল তাক করে বলল,

-আপনি…আপনি…উফফফ…আপনি একটা জাস্ট ফালতু লোক…..

নীলাভ-দেখাই যায় মিস.ঝামেলা🙄

প্রীতি -মিস্টার গোমড়ামুখো….

কিছুক্ষনপরেই আবার প্রীতি টেনে টেনে বাচ্চাদের মতো করে বলল,

-ওই….

নীলাভ কিছু বলল না।

প্রীতি আবার বলল,

-ওই শুনেন…….

নীলাভ -একদম এভাবে ডাকবা না।

প্রীতি -ধ্যাত,আপনারে দেখা যায় কিছুই বলা যাবো না।আচ্ছা চলেন ক্যাবল কারে উঠি প্লিজ প্লিজ…

নীলাভ একটা শ্বাস নিয়ে টিকিট কাটতে গেলো পুরোটা ও একাই বুক করছে।কারের মধ্যে শুধু প্রীতি আর নীলাভ।আর কেউ নেই।

ক্যাবল কার চলতে শুরু করলো প্রথমে প্রীতি তো অনেক মজা পেয়েছে।ওর কাছে মনে হচ্ছে ও একটা ডানা ছাড়া পাখি যে উপরে ভাসছে। নিচে পানি দেখা যাচ্ছে।একটু পর যখন ক্যাবল কার টা উপরে উঠা শুরু করলো।

প্রীতি একটু জোরে বলল,

-হায় আল্লাহ…. এটা উপরে কেন উঠতাছে?ও আল্লাহ আমি পইড়ে গেলাম আল্লাহ এতো উপরে উঠে কেন?মনে হইতাছে আমি আকাশে উইঠে যাইতাছি।নিচে শুধু পানি আর পানি।ক্যাবল কার টা এমন খটখট শব্দ করে কেন?লোহা কি ঢিল হয়ে গেছে?এটা কি এখন ডাস কইরে পানিত পড়বো?আম্মা….আমি কি পানিত পইড়ে মইরে যামু…

(ক্যাবল কার উপরে উঠার সময় বা চলার সময় খটাখট শব্দ করে)

ক্যাবল কার টা যেই আরেকটু উপরে উঠলো প্রীতি সাথে সাথে নীলাভকে খামচে ধরে চিল্লিয়ে চিল্লিয়ে বলল,

-আম্মু………..প্লিজ কার টা থামাতে বলেন। প্লিজ থামাতে বলেন।আমি নামবো..আমি নামবো।আমি আর জীবনে এই মেঘলায় আসবো না খোদা গো সব কিছু কেমন ভয়ানক..আমার খুব ভয় লাগছে।

নীলাভ এতোক্ষন প্রীতির কথা হা করে শুনতাছিলো।যে মেয়ে এতো লাফালাফি করলো ক্যাবল কারে উঠবে করে।সে উঠার আগেই এমন ভাবে চিল্লাচিল্লি শুরু করে দিছে।এমনেই অবাক লেগে তাকায় ছিলো প্রীতির দিকে। এবার প্রীতি নীলাভ কে খামচে ধরায় নীলাভ যেনো শকের দোকানে চলে গেছে। ও সামনে শূন্যে তাকিয়ে বিরবির করে বলল,

-আল্লাহ..আমার মাথা ঘুরায়তাছে।হয় এই মেয়েরে পানিত ফেলায় দেও নয় তো এরে আকাশে উঠায় নেও।

নীলাভ কিছু একটা ভেবে প্রীতিকে জিজ্ঞেস করলো,

-তুমি কি পানি ভয় পাও?

প্রীতি ভয়ে ভয়ে উত্তর দিলো,

-না…কিন্তু উপর থেকে নিচে তাকালে ভয় পাই।একবার ছাদ থেকে পড়ে যাইতে ধরছিলাম।পরে আম্মু এসে ধরছে।উপর থেকে নিচে তাকালে আমার মাথা চক্কর দেয়।অন্ধকার দেখি সব।অজ্ঞান হয়ে যাই।

নীলাভ আচমকা চিতকার দিয়ে বলল,

-তাহলে তুমি এটাতে উঠলা কেনো?এখন যদি তুমি অজ্ঞান হয়ে যাও তাইলে আমি তোমাকে কেমনে সামলাবো।কমন সেন্স নাই তোমার মাঝে?তুমি আমাকে আগে বলবা না।

প্রীতি চোখ মুখ খিচে বন্ধ করে আছে।নীলাভের শার্ট খামচে ধরে বলল,

-আমি বুঝতে পারি নি।

নীলাভ-কি বুঝো টা কি তুমি?

আর কিছু না বলে নীলাভ চুপ হয়ে গেলো ও বুঝতে পারলো যে এখন এমন ব্যাবহার করলে আরো হীতে বিপরীত হবে।তাই নীলাভ প্রীতির মাথাটা নিজের বুকের উপর রাখলো।

প্রীতি নীলাভের বুকের সাথে একদম লেগে বসে বলে উঠলো,

-প্লিজ থামাতে বলেন প্লিজ প্লিজ…

নীলাভ প্রীতির মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে বলল,

-দেখো এখন তো থামানো যাবে না বলো।ক্যাবল কার টা তো মাঝামাঝি এসে গেছে।তুমি একটু চোখ বন্ধ করে থাকো প্লিজ।চোখ খুলো না ঠিকাছে?

প্রীতি চোখ বন্ধ করেই নীলাভের বুকের উপর পড়ে থাকলো।কিছু একটা ফিল করতে লাগলো ও। প্রীতি একদম শান্ত হয়ে গেলো।ওর কানে একটা সুন্দর সুর ভেসে আসতে লাগলো তার সাথে সুন্দর একটা স্মেল।নীলাভের গা থেকে সুন্দর একটা গন্ধ আসছে।প্রীতির যেনো মাদকের নেশার মতো লাগছে সেই গন্ধ।কিছুতেই ছাড়তে ইচ্ছে করছে না।সাথে নীলাভের বুকের ঢিপঢিপ ঢিপঢিপ সাউন্ড।

প্রীতি চুপচাপ সেটা মন প্রান দিয়ে অনুভব করতে লাগলো।

নীলাভ বলে উঠলো,

-ঘুমিয়ে গেলে না কি?

প্রীতি নিশ্চুপ।ও তো অন্য মগ্নে আছে অন্য নেশায় আছে।

নীলাভ- এই…ঘুমায় গেছো।

প্রীতি ছোট্ট করে জবাব দিলো,

-হু..

নিলাভ বুঝলো প্রীতি ঘুমায় নাই।

নীলাভ প্রীতির মাথাটা নিজের বুকের সাথে আরো চেপে ধরলো।

সাথে নীলাভের হার্টের সাউন্ড আর শরীরের গন্ধ টা গাঢ় হয়ে প্রীতি নাকে কানে বাজতে লাগলো।প্রীতির যেনো আশেপাশে সব থমকে গেছে আর ও থমকে আছে নীলাভের মধ্যে।একদম মিশে আছে ওর মাথাটা নীলাভের বুকে।নীলাভের বুকে থেকেই প্রীতির সব ভয় সব কিছু দূর হয়ে গেলো।ভাবতে লাগলো,

-আমার এমন কেনো হচ্ছে?এমন নেশা কেনো লাগছে?যে ছেলেটাকে চিনি না জানি না তার জন্য এমন অদ্ভুত ফিল কিভাবে আসছে?আমি কি এই ছেলের প্রেমে পড়ে গেলাম?

পরক্ষণেই আবার নিজেই নিজেকে ঝাড়ি মেরে বলল,

-ধ্যাত কি সব ভাবছি….২দিনের চেনা একটা ছেলে।২দিনের ছেলের প্রেমে কিভাবে পরতে পারি?আমি আসলেই একটা ফাজিল।

প্রীতির ভাবনার ঘোর কাটলো নীলাভের ডাকে।প্রীতি নীলাভের বুকে থেকে মুখ উঠিয়ে দেখলো কার থেমে গেছে। আর ওদের নামতে বলছে।

প্রীতির ঘোর কাটতেই ও ছিটকে সরে গেলো নীলাভের বুক থেকে।নীলাভ ও সরে নেমে পরলো।প্রীতি ও নেমে পড়লো।

প্রীতি একটা কথাও বলছে না।একদম চুপচাপ আছে।

নীলাভ বলে উঠলো,

-তোমাকে ঝামেলা বলে কি আর আমি এমনি এমনি ডাকি?

জবাবে প্রীতি কিচ্ছু বলল না।নীলাভ ও আর কথা বাড়ালো না।ওরা স্বর্ণমন্দিরের উদ্দেশ্যে রওনা দিলো।যাওয়ার পথে প্রীতি একটা কথাও বলে নি।গাড়ির জানালার উপর দু হাত রেখে বাইরের দূর দূরান্তের সব পাহাড়ের দিকে তাকিয়ে থেকেছে।

নীলাভ একটু অবাক প্রীতির এমন চুপচাপ দেখে।পরে আবার ভাবলো,

-হয়তো খারাপ লাগছে তাই এমন হয়ে আছে।

,
,

ওরা এসে নামলো স্বর্ণমন্দিরে।মন্দিরটা এতো সুন্দর… দেখার মতো।প্রীতি আর নীলাভ ভেতরে ঢুকলো না।বিশেষ করে নীলাভ ই না করেছে। বাইরেই ঘুরেছে ওরা।

প্রীতি বলে উঠলো- মন্দির টা দেখতে মনে হচ্ছে স্বর্ণ দিয়ে বানানো কিন্তু আসলে তো এটার উপরে স্বর্ণের প্রলেপ দেওয়া। রঙ করা।

নীলাভ -হমম….

এরপর আবার ওদের মাঝে পিনপিন নিরবতা। চারিপাশে ঘুরে ওরা ফিরে যেতে লাগলো। ওরা আবার গিয়ে উঠলো নীলাচলের সেই রিসোর্টে….

আসতে আসতে প্রায় রাত হয়ে গেছে।স্বর্ণমন্দির থেকে বের ই হয়েছে ওরা প্রায় বিকাল ৫ টার দিকে।

প্রীতি আর নীলাভ রুমে ঢুকে ফ্রেস হয়ে নিলো।

নীলাভ ফ্রেস হয়ে এসে দেখলো প্রীতি মুখে হাত দিয়ে কি যেনো ভেবে চলেছে।সেই ক্যাবল কারে উঠার পর থেকেই কেমন চুপচাপ হয়ে বসে আছে মেয়েটা।

নীলাভ প্রীতির সামনে তুরি বাজিয়ে বলল,

-কি হয়েছে মিস.পকপকানি?এতো চুপচাপ কেন?

প্রীতি চমকে উঠলো।নীলাভের দিকে কিছুক্ষণ এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে ভালোভাবে স্কেন করে নিলো।তারপর মিস্টি হাসি দিয়ে বলল,

-এমনি। কিছু না।

নীলাভ- ওহ…

প্রীতি -কাল তো আমরা চলে যাবো তাই না?

নীলাভ- হম…

প্রীতি -তারপর আর আপনার সাথে দেখা হবে না আর আপনাকে আমার জন্য ঝামেলায় পড়তে হবে না আর কেউ আপনার সাথে ঝগড়া করতে আসবে না।আপনি আপনার মতো আর আমি আবার আমার মতো লাইফ লিড করতে থাকবো।

নীলাভ -হমম

প্রীতি -আচ্ছা আপনাদের না নিজের কোম্পানি?

নীলাভ -হমম

প্রীতি -নাম কি?

নীলাভ-চৌধুরি গ্রুপ অফ ইন্ডাস্ট্রি।

প্রীতি মুখ গোল করে টেনে বলল,

-ওওও… অনেক বড় কোম্পানি তো এইটা।

নীলাভ-হমম

প্রীতি -তাহলে এটা ছেড়ে একটা প্রাইভেট কোম্পানিতে কেনো জব করেন?

নীলাভ-মন চায় নিজের যোগ্যতায় কিছু করি তাই।কেনো?

প্রীতি -না এমনি।নিজের কোম্পানি রেখে কেউ এতো কষ্ট করে অন্য কোম্পানি তে চাকরি করে জানতাম না।

নীলাভ-তো?আমার কোম্পানি খারাপ না কি?আমার কোম্পানি অনেক ভালো বুঝছো?

প্রীতি -আপনার বেতন কতো?

নীলাভ আড়চোখে প্রীতির দিকে তাকিয়ে বলল,

-ছেলেদের বেতন আর বয়স জিজ্ঞেস করতে নেই।

প্রীতি -কোন হাদিসে লেখা আছে?

নীলাভ-কি জানি।

প্রীতি -তাহলে বলে ফেলেন।

নীলাভ-১ লাখ ৬০ হাজার টাকার মতো।

প্রীতি মুখে হাত দিয়ে বলল,

-এতো?এর জন্যই তো ফুটানি বেশি।

নীলাভ-ভালো হইছে।

প্রীতি -হম..

___________________________

সকাল ৫ঃ৩০ টার সময় নীলাভ প্রীতিকে টেনে তুলল।

প্রীতি হাই তুলতে তুলতে বলল,

-কি সমস্যা?এতো তাড়াতাড়ি কেনো জাগাইলেন?

নীলাভ -উঠো, দরকার আছে।

প্রীতি বিরক্তি নিয়ে উঠেও আবার ঠাস করে শুয়ে পড়ে বলল,

-কালকে যখন ডাক দিতে বলেছিলাম তখন ডাক দেন নি।আর আজ এসেছেন হুদাই আমার সুন্দর ঘুমের ১৪ টা বাজাতে।

নীলাভ-আরে উঠো তো…

নীলাভ প্রীতিকে ধরে উঠিয়ে গায়ে শাল জড়িয়ে দিলো।এরপর প্রীতিকে ধরে নিয়ে যেতে লাগলো।প্রীতি নীলাভের বুকের সাথে হেলান দিয়ে চোখ বন্ধ করে আছে মানে ঘুমাচ্ছে।আর নীলাভ ওর কাধ ধরে হেটে নিয়ে যাচ্ছে।

নীলাভের বুকের ভেতর তোল-পাড় শুরু হয়ে গেছে প্রীতি ঘুমিয়ে গেছে বলেই নীলাভ এভাবে নিয়ে যাচ্ছে তা না হলে কোনোদিনও নিয়ে যেতো না।

নীলাভ প্রীতির মুখের দিকে তাকালো।ফর্সা মুখ লাল হয়ে আছে।হালকা একটু তেলতেলে মুখে মিস্টি রোদের ঝিলিক দিচ্ছে।চোখ দুটো বন্ধ।এই মুহুর্তে প্রীতিকে দেখে নীলাভের আস্ত একটা কিউটের সমুদ্র লাগছে।যে সমুদ্রের পানি একদম স্বচ্ছ, একদম নীল।কোনো ময়লা নেই কোনো আবর্জনা নেই।আছে শুধু স্রোতের কলকল শব্দ। আর ঢেউ তুলোর সুন্দর দৃশ্য।যা প্রীতির চুল দেখে মনে হচ্ছে।
কিছু চুল উড়ে প্রীতির মুখে এসে পড়ছে।প্রীতি একবার সরাচ্ছে তো আরেকবার বিরক্ত হচ্ছে।

নীলাভ প্রীতির দিকে তাকিয়ে এসব ভাবতে ভাবতে আলতো হাতে চুল গুলো সরিয়ে দিলো।নীলাভ প্রীতির লাল লাল ঠোঁটের দিকে একবার তাকালো।তখনি প্রীতি ঠোঁট দুটো বাচ্চাদের মতো নিজের মুখে পুড়ে ফেলল।
নীলাভ সেটা দেখে একটু হেসে বলল,

-মিস.ঝামেলা তুমি আসলেই একটা ঝামেলা।

পরক্ষণেই নিজেই নিজেকে বলল,

-এটা কি বললাম আমি?আর এই তারছিড়া মেয়ের দিকে কেনো তাকায় আছি আমি?এক্ষুনি উঠে আমাকে বলবে, ওই ওই আপনি আমার দিকে তাকিয়ে নজর দিচ্ছেন?

নীলাভ হেসে ফেলল।প্রীতিকে আরো সামনে নিয়ে গেলো।প্রীতি ঘুমের ঘোরেই বুঝতে পারছে ওকে উপরে উঠানো হচ্ছে।অনেক উপরে…..

প্রীতি সেদিকে নজর না দিয়ে চোখ বন্ধ করে ঘুমিয়েই থাকলো।এটাকে ঘুম ও বলা চলে না।আর কি জেগে জেগে ঘুমানো বলে।

একটা সময় এসে ওরা থেমে গেলো।নীলাভ প্রীতিকে থামিয়ে প্রীতিকে ঝাকালো চোখ খুলার জন্য।

প্রীতি বিরক্তি নিয়ে বলল,

-কি?

নীলাভ-চোখ খুলো।

প্রীতি -পারবো না।ঘুমাবো।

বলেই সে নীলাভকে হালকা করে জড়িয়ে ধরে ঘুম…
নীলাভ অবাক হয়ে চেয়ে আছে প্রীতির দিকে।ওর শরীর বারবার ঝাকুনি দিয়ে উঠছে।কারেন্টের শক লাগছে যেনো।নীলাভ কাপা কাপা গলায় বলল,

-সরো।

প্রীতি ঘুমের ঘোরেই বলল,

-উহু..

হঠাৎ প্রীতির মনে হলো শরীরে কেউ পানি ঢেলে দিয়েছে।ও তারাতাড়ি চোখ খুলে তাকালো।ও নীলাভ কে জড়িয়ে ধরে আছে।কিছুক্ষণ অবাক চোখে তাকিয়ে থেকে প্রীতি ছিটকে সরে দাড়ালো নীলাভের থেকে।উল্টো ঘুরে দাড়ালো।

একবার আড়চোখে নীলাভকে দেখে নিয়ে চারিপাশ দেখতে লাগলো।চারিপাশ দেখেই ও গালে হাত দিয়ে চোখ বড় বড় করে ফেলল।ওরা অনেক উচু একটা পাহাড়ে আছে।সেখানে মেঘেরা ওদের ভিজিয়ে দিয়ে যাচ্ছে।
#হঠাৎ_ভালোবেসে_ফেলেছি💕
The_unexpected_love
#মুমুর্ষিরা শাহরীন
Part-12

নীলাভ প্রীতিকে হাত দিয়ে ইশারা করলো সামনে তাকানোর জন্য।নীলাভের কথা মতো প্রীতি সামনে তাকালো।

সূর্য কেবল উঠছে।সূর্যের সেই লাল কমলা আভা এসে পড়ছে একদম প্রীতির মুখে।প্রীতি হাস্বোজ্জ্বল মুখ করে সেদিকে চেয়ে আছে।বাদামি চোখ জোড়ায় শুধু সূর্যের লাল কমলা আভা দেখা যাচ্ছে।

নীল আকাশ তাতে লাল কমলা সূর্য চারিপাশে সাদা মেঘ আর আশেপাশে সবুজ পাহাড়।এখন প্রকৃতি বলতে গেলে শুধু নীল সবুজ লাল কমলা সাদা আভা ছড়িয়ে রেখেছে।সত্যি….প্রকৃতির ও কতো মনোমুগ্ধকর রূপ….

প্রীতি চোখের পলক ফেলল।সাথে সাথে চোখ বেয়ে কয়েকফোটা পানি গড়িয়ে পড়লো…..

নীলাভ তো প্রীতির দিকে তাকিয়ে থাকতে ব্যস্ত। ফর্সা সবে ঘুম থেকে উঠা তেলতেলে মুখে লাল কমলা আভা টা কি সুন্দর মানিয়েছে।

মনে হচ্ছে একটা সূর্য পরি নীলাভের সামনে দাঁড়িয়ে আছে।

প্রীতি নীলাভের দিকে একবার ছলছল চোখে তাকালো।

নীলাভ মুচকি হেসে বলল,

-আজ তো চলে যাবো।তাই তোমার ইচ্ছা টা পূরন করে দিলাম। তা না হলে তোমার সাথে আমার যেখানেই দেখা হতো সেখানেই তুমি আমাকে খোচা দিতা আমি তোমাকে কেনো সূর্যোদয় দেখাই নি।তাই দেখিয়ে দিলাম।

প্রীতি হঠাৎ কিছু না বলে চোখটা মুছে চলে যেতে লাগলো।নীলাভ প্রীতির চলে যাওয়ার পানে তাকালো।প্রীতি কিছু দূর যাওয়ার পর নীলাভ হঠাৎ আবেগ মাখানো নরম সুরে ডেকে উঠলো,

-প্রীতি…..

প্রীতির পা থেমে গেলো। শরীর বরফের মতো জমতে শুরু করলো এই ৩-৪ দিনের মধ্যে নীলাভ ওকে এই প্রথমবার নাম ধরে ডেকেছে।কেউ যে এতো সুন্দর করে কাউকে ডাকতে পারে তা প্রীতির জানাই ছিলো না।কি সুন্দর করেই না তার নামটা বলল। প্রীতি!

অনেক জোরে শনশন করে বাতাস বইছে। প্রীতির চুল উড়ছে গায়ের শালটা উড়ে চলে যেতে চাইছে।জামা উড়ছে।গাল বেয়ে পানি পড়ছে।বাদামি চোখ জোড়া পানিতে টইটুম্বুর হয়ে গেছে।ফর্সা মুখ লাল টুকটুক হয়ে গেছে নাক থেকে তো মনে হচ্ছে এখনি রক্ত ঝড়বে।লাল ঠোঁট জোড়া খয়েরী রঙ ধারন করেছে।এই অবস্থা তেও প্রীতিকে মারাত্মক সুন্দর লাগছে।

প্রীতি পিছন ফিরে তাকালো। নীলাভ এখনো ওর দিকে তাকিয়ে আছে।

কি মনে করে প্রীতি চোখ মুছে দৌড়ে এসে নীলাভ কে ঝাপটে জড়িয়ে ধরলো।

নীলাভ অবাক প্রীতির এমন আচরণ দেখে।হঠাৎ করেই এ মেয়েটার প্রতি তার সব বিরক্তিগুলো সরে গিয়ে এক রাশ মায়া ভর করছে।

নীলাভ প্রীতির মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বলল,

-প্রীতি….. কি হয়েছে?কাল থেকে এমন করছো কেনো? একবার কাদছো আবার চুপচাপ থাকছো কি হয়েছে?

প্রীতি নাক টেনে টেনে বলল,

-আপনার সাথে কি আমার আর দেখা হবে না?

নীলাভ একটু হেসে বলল,

-আল্লাহ ভাগ্যে রাখলে নিশ্চয়ই হবে।

প্রীতি চোখ মুছে বলল,

-হমম।

নীলাভ একবারো জিজ্ঞেস করলো না প্রীতি কেনো এ কথা বলল কেনই বা জড়িয়ে ধরলো।ওর মতে হয়তো মেয়েটা চলে যাবে এতো সুন্দর প্রকৃতি ছেড়ে তাই আবেগ ধরে রাখতে না পেরে তাকে জড়িয়ে ধরেছে।যে ব্যাপারটা একটু ভাবলেই মিটে যায় সেই ব্যাপার নিয়ে নীলাভ ঘাটাঘাটি করা পছন্দ করে না।ও প্রীতিকে বলল,

-চলো রিসোর্টে যাই।

প্রীতি চোখ টা ভালো করে মুছে আগে আগে চলে গেলো।প্রীতির যাওয়ার দিকে এক পানে তাকিয়ে থাকলো নীলাভ।হঠাৎ করেই মনে হচ্ছে,এই পাগলী মেয়েটাকে তার খুব মনে পড়বে খুব….সে যেখানেই থাকুক না কেনো তার জীবনের এই ৩-৪ দিনের কথা মনে থাকবেই সারাজীবন।স্মৃতির পাতায় থাকবে, ‘যে একটা পাগলি ছিলো।যে একটা কেয়ারলেস,ঝামেলা, ঝগড়ুটে।’

,
,

প্রীতি রিসোর্ট এ পৌছে গাল হাত দিয়ে শুধু ভেবেই যাচ্ছে,

-কেনো এমন হচ্ছে আমার সাথে?কি হয়েছে আমার?আমি কান্না কেনো করলাম?আমি কি সত্যি পাগল হয়ে গেলাম না কি?আমাকে কি আসলেই ডাক্তার দেখাতে হবে?হঠাৎ এই ছেলেটার জন্য এতো কষ্ট কেনো হচ্ছে?হয়তো ৩-৪ দিন একসাথে থাকলাম তাই।

প্রীতির বারবার শরীর শিউরে উঠছে একটা কথা ভেবেই যে একটা ছেলের সাথে সে এভাবে নির্দ্বিধায় কিভাবে থাকলো?কিভাবে?তাও একা। অপরিচিত একটা ছেলের সাথে এভাবে ঘুরলো ফিরলো একসাথে থাকলো লোকে নিশ্চয়ই এটা ভালো চোখে দেখে নি।

প্রীতি এমনই সে সব কাহিনী শেষ হওয়ার পর চিন্তা করে।কাজ শুরু হওয়ার আগে সে কোনো কিছু ভাব্বে না।কিন্তু শেষ হওয়ার পর তার মাথায় রাজ্যের চিন্তা ভর করবে।

প্রীতিকে গালে হাত দিয়ে একমনে কিছু ভাবতে দেখে নীলাভ বলল,

-কি ভাবো?

প্রীতি নির্লিপ্ত ভাবে জবাব দেয়,

-কিছু নাহ।

নীলাভ আর কোনো কথা বাড়ালো না।অপেক্ষা করতে থাকলো সন্ধ্যা হওয়ার।

_____________________________

বাসে উঠে প্রীতি আর নীলাভ পাশাপাশি বসে আছে।কিন্তু কেউ কারোর সাথে কথা বলছে না।এখন প্রীতির ই কথা বলতে ইচ্ছা করছে না।প্রীতি বাসের জানালায় দু হাত রেখে তার উপর নিজের থুতনিটা রেখে বাইরে তাকিয়ে আছে।রাতের পাহাড় গাছপালা দেখছে সে।সাথে মেঘ।আজ আকাশে মেঘ কম।অনেক সুন্দর চাঁদ উঠেছে। চারিদিকে রুপালি আলোয় ছেয়ে গেছে পরিবেশ।মনোরঞ্জন পরিবেশ।

দেখতে দেখতে ওরা চট্টগ্রাম এসে পড়লো।বাস থামলো। ওরা নেমে রাতের খাবার খেয়ে নিলো।

এরপর আবার ওরা অপেক্ষা করতে লাগলো ঢাকার বাসের।অবশেষে বাস এলো।প্রীতি আর নীলাভ বাসে উঠলো।

বাস কিছু দূর যাওয়ার পর পরই প্রীতি মুখ খুলল।বলল,

-আর মাত্র কিছু পথ এরপর আমরা আর একসাথে থাকবো না তাই না?

নীলাভ নির্দ্বিধায় জবাব দিলো,

-হমম।

প্রীতি -আমাদের কি আর জীবনেও দেখা হবে না?

নীলাভ-সকালে না বললাম?আল্লাহ ভাগ্যে রাখলে দেখা হবে।

প্রীতি আচমকা নীলাভের দিকে তাকিয়ে বড় করে হেসে বলে উঠলো,

-আমার বিয়েতে আপনাকে দাওয়াত দিবো।

নীলাভ -দিও।

প্রীতি – আমার জামাইয়ের সাথে আমি আপনাকে নিয়ে গল্প করবো।

নীলাভ -কইরো।

প্রীতি ভ্রু কুচকে বলল,

-এমন খাপছাড়াভাবে জবাব দিচ্ছেন কেনো?

নীলাভ-কেন?ঠিক ভাবেই তো কথা বলতাছি।

প্রীতি -না হচ্ছে না।আচ্ছা,মানলাম আপনি কথা কম বলেন কিন্তু এখন তো কথা বলতে পারেন তাই না?একটুপর তো আর কোনোদিন আমাদের দেখা হবে না।

নীলাভ ফোন টিপছিলো এতোক্ষণ।প্রীতির কথায় সে নিজের ফোনটাকে পকেটে রেখে প্রীতির দিকে মুখ করে বসে বলল,

-এবার বলো,কি বলবো আমি?

প্রীতি মুখ ঘুরিয়ে বলল,

-কি বলবেন মানে?আপনি ও আমাকে কিছু জিজ্ঞেস করেন?শুধু আমি বকবক করতাছি😒

নীলাভ চিন্তা করার ভঙ্গিতে বলল,

-উমমম…🤔কি প্রশ্ন করা যায়? কি প্রশ্ন করা যায়?

প্রীতি মুখ তেরি করে বলে,

-আজকে আর প্রশ্ন করা হবে না তার😏

নীলাভ গুপ্তধন পাওয়ার মতো করে বলল,

-ইয়েস…পাইছি।

প্রীতি -কি?

নীলাভ-আরে আসল কথাই তো জানা হলো না।

প্রীতি -কিইইই🙄

নীলাভ -তুমি বাড়ি থেকে পালায় কেন আসছো?

প্রীতি নীলাভের কথা শুনে বড় করে একটা নিশ্বাস নিলো। কিছু বলতে চেয়েও হেসে ফেলল।তারপর সিটে নিজের পা তুলল।পা দুটো গুটিসুটি করে রেখে সে বলা শুরু করলো,

-আসলে আমি প্রায়ই এমন হুটহাট ভাবে বেরিয়ে যাই।হুটহাট ভাবে এখানে সেখানে ঘুরতে যাই।যেমন বন্ধুদের বাড়ি, বিভিন্ন পার্টিতে বিভিন্ন জায়গায় ঘোরাঘুরি তারপর লং ড্রাইভ। আমার ঘুরতে সেই ভালো লাগে।এর জন্যই তো আমি মাঝে মাঝে একা একা ঘুরতে চলে যাই।

নীলাভ ভ্রু কুচকে বলল,

-একা একাই যাও?তোমার বাড়ির লোক কেউ কিছু বলে না?

প্রীতি -না প্রথম প্রথম অনেক বকা দিতো কিন্তু এখন আর কেউ কিছু বলে না।কারন আমার সাথে কেউ একটু মিসবিহেব করলেই আমি বাড়ি থেকে বের হয়ে আসি। ঘুরতে চলে যাই।

নীলাভ-তো এবার কার সাথে কি হইছে?

প্রীতি মুখ ফুলিয়ে বলল,

-আম্মুর সাথে।

নীলাভ -কেনো?

প্রীতি হাত টাকে প্রসারিত করে দেখিয়ে বলল,

-এত্তো বড় ঝামেলা।

নীলাভ -তা সেটা কি শুনি?

প্রীতি আবার গাল ফুলিয়ে বলল,

-আমি একটু ফ্লোরে পানি ফেলছিলাম।খেয়াল করি নি।সেটা থেকে নিজেই একটু পরে পিছলা খায়ে পড়ে গেছি।এরপর জ্বর ও আসছিলো।পায়ে ছিলেও গেছিলো।কোমড়েও ব্যাথা পাইছিলাম।বুঝছেন?৩-৪ দিন আম্মু খুব বকাঝকা করছে ৫ দিনের দিন একটু সুস্থ হয়েই আমি বের হয়ে আসছি।

প্রীতি নিজের পা দেখিয়ে বলল,

-এই যে এই জায়গায় কেটে গেছিলো।

নীলাভ কিছু বলার জন্য মুখ খুলবে তখনি প্রীতি বলে উঠলো,

-হ্যা, এর জন্যই আরো সেদিন পিছলে পড়ার আগেই শৈলপ্রপাতের পাথরে কেটে রক্ত বের হইছে।

নীলাভ কিছুক্ষণ প্রীতির দিকে তাকিয়ে থেকে আবার বিরবির করে বলতে লাগলো,

-কেয়ারলেস,পাগল,ছাগল,গাধী,ঝগড়ুটে,আল্লাহর অবুঝ বান্দা।এর সাথে আমার ই কেন দেখা হওয়ার লাগলো?

প্রীতি এক ভ্রু তুলে বলল,

-কি বললেন আপনি?

নীলাভ-কিছুই বলি নাই।

প্রীতি -আমি কিন্তু সব শুনছি😈

নীলাভ-তাও তো ঠিক হও নাহ..

প্রীতি -হব ও নাহ।সারাজীবন আপনাকে জ্বালামু।

নীলাভ-সারাজীবন আমারে পাইলে তো জ্বালাবা?

প্রীতি -তাও ঠিক…বাট আপনি একটা অসভ্য লোক।

নীলাভ রেগে বলল,

– অসভ্য গিরি না দেখায়েই অসভ্য বললা?আমি কি অসভ্যতামি করছি তোমার সাথে?এইসব কথা কিন্তু আমার একদম ভালো লাগে না প্রীতি। মাইন্ড ইট।

নীলাভের এমন কড়া কথা শুনে প্রীতি একদম বেলুনের মতো চুপসে গেলো এই কয়দিনে নীলাভ এই প্রথম এতো কড়া ভাবে প্রীতির সাথে কথা বলল।প্রীতি বিরবির করে বলল,

-খারাপ লোক একটা।

প্রীতি একটা বড় নিশ্বাস নিয়ে আরেকটা ছুতা খুজতে লাগলো যেটা নিয়ে নীলাভের সাথে ঝগড়া করবে।

সারারাস্তা ঝগড়াই করে এসেছে প্রীতি কিন্তু শেষ রাতের দিকে ওর চোখ লেগে আসছে।ও সিটে হেলান দিয়েই ঘুমিয়ে গেছে।

,
,

বাস এসে থেমেছে ঢাকায়।এরপর এখান থেকে যে যার বাড়ি ফিরে যাবে।

নীলাভ অনেক কষ্টে প্রীতিকে ঢেকে তুলল।প্রীতি এই কিছুক্ষণ আগেই ঘুমিয়েছে।ভালোভাবে ঘুম না হওয়ায় ওর মাথাটা দপদপ করে জ্বলতাছে।

প্রীতি আর কিছু না ভেবে নেমে পড়লো গাড়ি থেকে।

গাড়ি থেকে নেমে নীলাভ বলল,

-যেতে পারবা তো এখন একা না কি?

প্রীতি হাই তুলে হাত নাড়িয়ে বিজ্ঞ দের মতো করে বলল,

-আরে যেতে পারবো ঢাকা শহরের ওলি গলি সব আমার চেনা।এখানে কোনো ভয় নেই।

নীলাভ-ওহ আচ্ছা তাহলে আসো তোমাকে গাড়িতে উঠায় দেই।

প্রীতি কাধ নাচিয়ে বলল,

-ওকে।

নীলাভ-কোথায় থাকো?

প্রীতি -মিরপুর ১২ নাম্বার সেক্টর।

নীলাভ-আচ্ছা আসো সি এন জি তে তুলে দেই।

প্রীতি -হমম..আপনার বাসা কই?

নীলাভ-উত্তরা।

প্রীতি মুখ গোল করে বলল,

-ওও..উত্তরা থেকে তো মিরপুর কাছেই।

নীলাভ-হমম..তাই কি?

প্রীতি -তাই কিছু না।আচ্ছা আপনি চলে যান আমি যেতে পারবো।

নীলাভ-সিউর?

প্রীতি -ইয়াহ…

নীলাভ আর কথা বাড়ালো না।

দুইজন দুইদিকে যেতে লাগলো।কেউ একবার পেছন ফিরে তাকিয়ে দেখলো ও নাহ।দুজন চলে গেলো দুজনের নিজ নিজ পথে আপন গতিতে আপন নিয়মে আপন মানুষদের কাছে।কি জানি হঠাৎ করে আবার কবে ওদের দেখা হবে?কবে আবার ভালোভাবে কথা বলতে বলতে হঠাৎ করেই ওরা ঝগড়া শুরু করে দিবে?না কি কখনো দেখাই হবে না।আর হঠাৎ করে সেই ঝগড়াটাও তাদের করা হবে না।হয়তো আর কখনো নীলাভের ঝামেলা আর প্রীতি গোমড়ামুখো বলা হয়ে উঠবে না।

চলবে🙂
চলবে🙂

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here