#হঠাৎ_ভালোবেসে_ফেলেছি💕
The_unexpected_love
#মুমুর্ষিরা_শাহরীন
Part-17
ব্যস্ততা!ব্যস্ততা!ব্যস্ততা।
চারিদিকে শুধু ব্যাস্ততার সুবাস। এই ব্যস্ততায় বিষনায়ক হয়ে উঠেছে নীলাভের জীবন।সকাল থেকে অফিস।রাত ১০ঃ৩০ টায় বাড়ি ফেরা।এর মধ্যে সে খাওয়ার টাইম টুকুই যা একটু পায়।ইদানীং প্রায় ই তার দেরি হচ্ছে বাড়ি ফিরতে।আজ ও তেমনি একটু লেট হলো।রুমে ঢুকে ফ্রেস হয়ে মায়ের ডাকে সে খেতে চলে গেলো।
,
,
ক্লান্ত শরীর টা বিছানায় এলিয়ে দিয়ে চোখ বুঝলো নীলাভ।
একটুপর ফোন টা হাতে তুলে নিলো।এখন রাত এগারোটা বাজে।ফোন হাতে নিয়ে নীলাভের চোখে পড়লো একটা নাম্বার থেকে ২১ টা মিসকল এসেছে।নীলাভ চোখটাকে বড় করে ফেলল।কোনো দরকারি কল ও হতে পারে ভেবে ফোন টাকে ভালো মতো ঘাটতেই সে আবিষ্কার করলো তার নাম্বারে কেউ ৬০ টাকা পাঠিয়েছে।
নীলাভ এবার কিছুটা আন্দাজ করতে পারছে।ও ফোন লাগালো সেই নাম্বারে।
_________________________
বিছানায় চুপচাপ বসে রাগে অনেকক্ষণ থেকে হাত মুচড়াচ্ছিলো প্রীতি। কিন্তু এখন আর পারছে না।বিছানা থেকে নেমে কোমড়ে হাত দিয়ে সে ঝাঝালো গলায় বলে উঠলো,
-দেখলি দেখলি, কত্ত বড় শয়তান লোক।সারাদিনভর মিসকল দিলাম একটা বার ধরলো তো নাই সাথে পরে ব্যাক ও করলো না।কি ভেবেছে বেটা? আমার টাকা মারবে?দাড়া,বেডার জীবন আমি উষ্ঠাগত করে ফেলবো।আমাকে ৬৩ টাকা ফেক্সি করে দেওয়ার লাগবেই।আগে ভাবছিলাম মাফ করবো কিন্তু এখন আর কোনো মাফ টাফ নাই।
কানে ইয়ারফোন গুজে দিয়ে বিছানার সাথে হেলান দিয়ে স্নেহা বসে থাকলেও তার পুরো মনোযোগ প্রীতির দিকে।স্নেহা আবারো বলল,
-তুই মিসকল না দিয়ে ফোন দে।আর ভাই ৬৩ টাকা তোর কোন শ্বশুরের দোকান ফেক্সি করে দিবে বল তো আমাকে?
প্রীতি স্নেহার মুখের কাছে এসে বলল,
-তুই কমায়ে কথা বলিস চামচিকা।তোর কথা আমার একটু ও শুনতে ইচ্ছে করে না।
স্নেহা প্রীতির কথা গ্রাহ্য না করে বলে,
-বেচারি কেনো লোকটাকে শুধু শুধু পেইন দিচ্ছিস বল তো।তোর কি টাকা কম আছে?
প্রীতি ভেঙচি কেটে বলল,
-জি আমার টাকা কম আছে।কারন সেগুলো আমার বাবার টাকা আমার না। বুঝছিস তুই?
স্নেহা মাথা নাড়ালো।প্রীতি কি যেনো ভেবে ভ্রু কুচকে কিছুক্ষন স্নেহার দিকে তাকিয়ে থেকে বিছানায় ডাস করে হামাগুড়ি দিয়ে বসলো।বিছানার তোষক সহ সরে গেলো প্রীতির এমন কান্ডে।সেদিকে পাত্তা না দিয়ে প্রীতি ভ্রু নাচিয়ে বলল,
-কি ব্যাপার তুই আমার রুমে কেন আজকেও জামাইয়ের লগে ঝগড়া কইরে আইছস?
স্নেহা অন্যদিকে মুখ ঘুরিয়ে বলল,
-ঝগড়া ছাড়া আর কি পারিস তোরা?
প্রীতি দাত কেলিয়ে জবাব দেয়,
-অনেক কিছুই পাই। এখন তুই আমার রুম থেকে বের হ।না হলে একটু পর দেখমু তোর জামাই ও খেতা বালিশ নিয়ে আমার রুমে আইয়ে পড়ছে।যাহ,দূর হ।
স্নেহা রেগে কিছু বলতে যাবে ঠিক সে সময় প্রীতির ফোন বেজে উঠলো।ফোনের স্কিনে চোখ রেখেই প্রীতি লাফিয়ে উঠলো।স্নেহার উদ্দেশ্যে বলল,
-চুপ চুপ চুপ…একটা কথাও বলবি না।ওই বেটার নাম্বার থেকে ফোন আসছে।
,
নীলাভ ফোন কানে ধরে বসে আছে।
ফোন টা রিসিভ হওয়ার সাথে সাথেই কেউ এমন জোরে এক চিৎকার দিলো যে নীলাভের ফোন আচমকা এমন ভয়ানক চিতকারে পরেই গেছিলো।নীলাভ অনেক কষ্টে আটকেছে।
ফোন রিসিভ করার প্রায় সাথে সাথে প্রীতি চিল্লিয়ে উঠলো,
-ওই মিয়া ওই।মিসকল দেই ফোন ধরেন না কেনো হ্যা?চোখে দেখেন না?না কি কানে শুনেন না?কি আমার টাকা মারার ধান্দা?তাহলে শুনে রাখেন।এই আমার টাকা মারা এতো সহজ না চুম্বক দিয়ে পেট থেকে টাকা বের করে আনবো একদম।
নীলাভ এবার অস্থির হয়ে বলে উঠে,
-আরে আমাকে একটু বলতে দেন ভাই।
প্রীতি ফোন টা কানে থেকে সরিয়ে হাতে নিয়ে নাম্বার দেখে বিরবির করল,
-কন্ঠটা কেমন চেনা চেনা লাগছে।
নীলাভ-শুনেন, আমি আপনার টাকা কাল ই পাঠিয়ে দিবো ঠিকাছে। ৬০ টাকা তো?কাল ই পাঠিয়ে দিবো।এখন রাখি ঠিকাছে।
নীলাভ ফোন রাখতে গেলেই প্রীতি চিল্লিয়ে উঠলো। স্নেহা ওর ফোনের সাথে কান লাগিয়ে বসে ছিলো।এমন চিল্লানিতে ওর কান তব্দা খেয়ে গেছে।
-একদম ফোন রাখবেন না।আমি কি ফোন রাখতে বলছি? আমার কথাই তো শেষ হয় নাই।
নীলাভ ফোন রেখে দিচ্ছিলো।প্রীতির কথায় চোখ মুখ কুচকে আবার ফোন কানে ধরে জোরপূর্বক বলল,
-জি বলেন।
প্রীতি দাত কেলিয়ে বলল,
– আমাকে ৬৩ টাকা ফেক্সি করে দিতে হবে।তা না হলে এই মিসকল চলতেই থাকবে।
নীলাভ হঠাৎ এমন কথা শুনে ভ্যাবাচেকা খেয়ে বলল,
-৬৩ টাকা?আপনি কি সিক?৬৩ টাকা কি কখনো ফেক্সি হয় না কি?
প্রীতি -আমি তো জানি না।
নীলাভ -আচ্ছা।আমি আপনাকে ১০০ টাকা ফেক্সি করে দিচ্ছি।
প্রীতি -জি না।৬৩ টাকাই ফেক্সি করে দিতে হবে তা না হলে এই মিসকল কন্টিনিউয়াসলি চলতে থাকবে।এটা আপনার পানিশমেন্ট।
নীলাভ এবার বেশ বিরক্ত। বিরক্তিতে চু শব্দ করে বলে উঠলো,
-তা আপনি আমাকে ৬০ টাকা পাঠায়ছেন আমি কেনো আপনাকে ৬৩ টাকা পাঠাবো?
প্রীতি দাত বের করে জবাব দিলো,
-এই যে আজ সারাদিন আমার ফোন ধরলেন না।তারপর আপনার জন্য আমার দুইবার রিচার্জ করা লাগছে তাই।
নীলাভ ফোন কানে ধরে এবার একটু জোরে বলল,
-আরে ভাই আপনাকে তো বলতাছি যে আমি ১০০ টাকা ফেক্সি করে দিচ্ছি।দরকার হলে তার থেকেও বেশি দিবো।কিন্তু এমন অহেতুক কথা কেনো বলছেন ৬৩ টাকা কি ফেক্সি হয়?
প্রীতি দায়সারা ভাবে জবাব দেয়,
-সেটা আমার দেখার বিষয় না।টাকা না আসলে মিসকল চলতেই থাকবে।আর হ্যা আমি ভাই না বোন।কন্ঠ শুনেও বুঝেন না না কি?
নীলাভ চোখ ঘুরিয়ে বলল,
-ওটা কথার কথা ছিলো।
প্রীতি -এনিওয়ে নেক্সট টাইম ভুল করবেন না। গুড নাইট।
নীলাভকে আর কোনো কথা বলার সুযোগ না দিয়ে প্রীতি গ্যাচ করে ফোন টা কেটে দিলো।
নীলাভ কিছুক্ষন ফোনের দিকে তাকিয়ে থাকলো।এই মুহুর্তে হঠাৎ করেই ওর প্রীতির কথা ভীষণ ভাবে মনে পড়ছে।নীলাভ বিরবির করে বলল,
-আমি ভেবেছিলাম পৃথিবীতে এক পিস এমন পাগল আছে।কিন্তু এটা দেখছি আরেক তারছিড়া।এ তো মিস ঝামেলাকেও ছাড়িয়ে যাবে।বুঝি না আল্লাহ সব পাগল আমার কপালেই কেন দেয়।
___________________________
সকাল ৭ টা❤️
প্রীতি ঘুম থেকে উঠে ছাদে বসে আছে।ও মাঝে মাঝেই আগে ঘুম থেকে উঠে।আবার মাঝে মাঝে সকাল দশ টা বারোটা বাজলেও উঠে না।প্রীতি ফোনটা হাতে নিয়েই মিসকল লাগালো নীলাভের নাম্বারে।
,
একটু পর পর বার বার ফোন বাজছে।নীলাভ কম্বলের নীচ থেকে হাত টা টা বের করে ফোন নিয়ে দেখলো আবার সেই নাম্বার থেকে মিসকল।ইতিমধ্যে পাচটা মিসকল দিয়ে দিয়েছে।নীলাভ যদি ফোন না ধরে তাহলে মনে হয় এই মিসকল চলতেই থাকবে।নীলাভ ঘুম ঘুম চোখে কল ব্যাক করলো সেই নাম্বারে।ফোন রিসিভ করার সাথে সাথে প্রীতি বলে উঠলো,
-কি ব্যাপার আমার টাকা?
নীলাভ ঘুম ঘুম চোখেই অনুনয় সুরে বলল,
-আরে বইন কালকে রাতেই তো কথা হইলো।আর আজ সকাল এই ভোরে আপনি টাকা চাচ্ছেন।মনে হচ্ছে এই ৬৩ টাকা আপনার জান প্রানের প্রশ্ন।
প্রীতি -হ্যা তাই।এখন কথা বাদ দিয়ে টাকা দেন আমার।
নীলাভ একটা দীর্ঘশ্বাস নিয়ে বললেন,
-আমি অফিসে যাওয়ার পথে পাঠায় দিবো নি।
এই বলে নীলাভ ফোন রেখে ফ্রেস হতে গেলো।একটু পর অফিসের জন্য বেরোবে ও।
_____________________________
অফিসের বসের সাথে আজ নীলাভের একটা জরুরি মিটিং আছে।আর সেই মিটিং রুমেই বসে আছে নীলাভ আর ওর বস।বিভিন্ন প্রোডাক্ট সম্পর্কে বিস্তারিত জানাচ্ছে নীলাভ তার বসকে।কোন ব্রাঞ্চ কেমন চলছে তাও বলছে।
★
নীলাভ -জি স্যার বনানীর কন্ডিশন ভালো।
কথার মাঝেই নীলাভের ফোন বেজে উঠলো।আবার একা একাই কেটে গেলো।নীলাভ আর ওর বসের নজর ফোনের দিকে পড়লো।নীলাভ ফোন টা রেখে আবার কথা বলা শুরু করলো।
একটু পর নীলাভের আবার ফোন বেজে উঠলো।
নীলাভের বস এবার বলে উঠলো,
-মিস্টার নীলাভ আপনি ফোন টা রিসিব করুন।
নীলাভ ইতস্তত করে বলল,
-না স্যার দরকার নেই।
নীলাভের বস-আরে করুন কোনো দরকারি হতে পারে।
নীলাভ নিচু স্বরে বলল,
-না স্যার তেমন দরকারি না কেউ ফোন দেয় নি।
নীলাভের বস এবার একটু হেসে বলে উঠে,
-নীলাভ সাহেব এই ভাবে বার বার কারা মিসকল দিতে পারি আমি জানি।আপনি বাইরে গিয়ে ফোনটা ব্যাক করুন।আর নেক্সট টাইম ফোন সাইলেন্ট করে মিটিং রুমে ঢুকবেন।আসুন।
-জি স্যার।
বলেই নীলাভ উঠে চলে গেলো।অফিসের বাইরে বের হয়ে রাগে ফুসতে ফুসতে ফোন লাগালো সেই নাম্বারে।প্রীতি ফোন রিসিভ করার সাথে সাথে নীলাভ বলে উঠে,
-এই আপনার সমস্যা কি হ্যা?যখন তখন ফোন কেনো দেন?মানুষ তো কোনো দরকারি কাজেও থাকতে পারে না কি?
প্রীতি নিজের নখ দেখতে দেখতে ফোন কানে নিয়ে জবাব দিলো,
-কেনো বলেছিলাম না যতক্ষণ পর্যন্ত আমার টাকা না দিবেন এই মিসকল চলতেই থাকবে।৬০ টাকা ফেক্সি করে দিছি আপনাকে। কম মনে করেন?জানেন ৬০ টাকা দিয়ে কত এমবি পাওয়া যায়?
নীলাভ -আরে ভাই আপনার এই ৬০ টাকার জন্য আমি আমার এক লাখ ষাট হাজার টাকার বেতন হারাতে বসছিলাম।
প্রীতি অবাক হওয়ার ভান করে বলল,
-আপনি এক লাখ ষাট হাজার টাকার বেতনের চাকরি করেন দেখে তো মনে হয় না।তা না হলে আমার এই ৬৩ টাকা দিতে কিপটামো করেন কেনো।
শেষের কথাটা একটু ধমকের সুরেই বলল প্রীতি।
নীলাভ মাথায় হাত দিয়ে বলল,
-দেখেন আপু। শোনেন,আমি অফিসে আসার সময় বেশ কয়েকটা দোকান ঘুরছি। সবাই আমাকে পাগল বলে তাড়িয়ে দিয়েছে।আরো বলেছে, ৬৩ টাকা ফেক্সি হয় না কি?পাগল ছাগল কোথাকার।আচ্ছা আপনি ই বলেন ৬৩ টাকা ফেক্সি হলেও আমি টাকাটা দিবো কিভাবে।এখন কি এক টাকা দুই টাকার চল আছে?
প্রীতি -সেটা আমার দেখার বিষয় না।আচ্ছা এতো ছেছড়ামো কেনো করতাছেন?আপনার নাম্বার আমি ছেছড়া মিসকিন দিয়ে সেভ করে রাখতাছি দাড়ান।ছেছড়া মিসকিন একটা।
নীলাভ গম্ভীর মুখে বলে,
-দাড়ান আপনার নাম্বার আমি ৬৩ টাকা ফকিন্নি দিয়ে সেভ করে রাখবো।
প্রীতি ফোনের মাঝেই বলল,
-ছেছড়া মিসকিন।
সেটা স্পষ্ট শুনা গেলো তাই নীলাভ ও ফোন কানে ধরে বলল,
-৬৩ টাকা ফকিন্নি।
#হঠাৎ_ভালোবেসে_ফেলেছি💕
The_unexpected_Love
#মুমুর্ষিরা_শাহরীন
Part-18
প্রতিদিনের মতো আজ ও সূর্য নতুনরুপে ফিরে এসেছে।নতুনভাবে নতুন আলোয়।
ঘড়ির কাটায় এখন সকাল ১০ টা বাজে তাই সূর্যের তাপ টা বেশ ভালোই।থেকে থেকে ঝিলিক দিয়ে উঠছে চারিপাশ।এমতাবস্থায় রাফিয়া আহসান মেয়ের ঘরে এসে জানালা বারান্দার সব জায়গা থেকে পর্দা সরাতে সরাতে হাক ছাড়লেন,
– প্রীতি উঠ। অনেক বেলা হয়ে গেছে।
জানালা দিয়ে রোদের ঝিলিক প্রীতির মুখে পড়তেই ও ধরফর করে উঠে বসলো।কিছুক্ষণ চুপ থেকে মাথা টা চেপে ধরলো।হুটহাট এভাবে ঘুম ভাঙালে ওর মাথা কাজ করে না।অসম্ভব ব্যাথা করে।
প্রীতির কাছে এসে ওর মাথায় হাত বুলিয়ে রাফিয়া আহসান আবার ও বলে উঠলেন,
-উঠ মা,আজ বাসায় মেহমান আসবে।
প্রীতি দায়সারা ভাবে জবাব দিলো,
-তো?
রাফিয়া আহসান -তো মানে?তোর বাবার এক বন্ধু আসবে।
প্রীতি -তো?
রাফিয়া আহসান -মাইর খাবি?তাড়াতাড়ি ফ্রেস হয়ে আয় যাহ….
প্রীতি -ফ্রেস হলেই বা কি?বাড়িতে মেহমান আসবে তোমরা নিজেরা নিয়ে থাকবা আমাকে কিন্তু একটু ও টানাটানি করবা না মনে রেখো।
রাফিয়া আহসান কিছু না বলে একটা শ্বাস নিয়ে চলে গেলেন।
তিনি চলে যাওয়ার সাথে সাথে প্রীতি ফ্রেস হয়ে আসলো।ফ্রেস হয়ে এসে ও আবার কল লাগালো ওই নাম্বারে।রাত দিন শুধু এক ই কাজ ওর।
নীলাভ ঘুমে ছিলো ছুটির দিন কাজ নেই।কিন্তু ফোন বেজে উঠায় ঘুম ঘুম চোখেই তাকালো।সাথে সাথে মুখ ফুলিয়ে একটা নিঃশ্বাস ছেড়ে বিরক্তির সহীত বলে উঠলো,
-উফফফ..এর কি আর কাজ নেই না কি?এতো ছেছড়ামো মানুষ করে না কি?
ফোন টা আবার বেজে উঠলো।নীলাভ ফোন কানে ধরে বলল,
-কি সমস্যা?
প্রীতি -আজ ৫ দিন হয়ে গেলো আমার টাকা পেলাম না।
এবার প্রীতি একটু অবাক হওয়ার ভান করে বলল,
-মানে বুঝলাম না।আপনি এতো ছেছড়া? আমি ভাবছিলাম আপনি ছেছড়া কিন্তু এখন তো দেখি ছেছড়া স্কয়ার।
নীলাভ নিজের মাথার চুল দু হাত দিয়ে মুসষ্টিবদ্ধ করে ধরে জবাব দিলো,
-চুপ থাকেন তো।আপনার কি মনে হয় না আপনি একটু বেশি বেশি করছেন।সকাল সকাল ঘুমের বারোটা বাজায় দিয়ে এখন ছেছড়ার হিসাব মিলাচ্ছে।ফোন রাখেন।আপনার টাকা আমি দেওয়ার চেষ্টা করছি।
প্রীতিকে ধমকে ফোন রেখে নীলাভ একটা স্বস্তির নিঃশ্বাস নিয়ে যেই আবার ঘুমোতে যাবে ওমনি নীলা চৌধুরী ডেকে উঠলেন।
নীলাভ শুতে গিয়েও মাথা টা তুলল।চোখ মুখ বন্ধ করে আরো একবার মুখ ফুলিয়ে নিঃশ্বাস ছেড়ে রাগ কন্ট্রোল করে বিরবির করে বলল,
-আজ আমার কপালে ঘুম নাই। ছুটির দিনেও এতো প্যারা কার ভালো লাগে।
নীলা চৌধুরী নীলাভের উপর থেকে কম্বল সরিয়ে নীলাভ কে ডেকে বলে উঠলেন,
-তাড়াতাড়ি রেডি হ।আমরা এক জায়গায় যাব।
নীলাভ-কোথায়?
নীলা চৌধুরী -তোর বাবার বন্ধুর বাড়ি।
নীলাভ -তোমরা যাও আমি যাবো না।
নীলা চৌধুরী -আমি কিচ্ছু শুনতে চাই না।১ ঘন্টার ভেতরে রেডি হয়ে নিচে নামবি।
এই বলে নীলা চৌধুরী ছেলেকে বকতে বকতে চলে গেলেন।নীলাভ ‘ধ্যাত’ বলে উঠে ফ্রেস হয়ে আসলো।
_____________________________
গাড়ির পেছনে বসে আছে নীলা চৌধুরী। আর সামনে বসে গাড়ি চালাচ্ছেন তৌফিক চৌধুরী মানে নীলাভের বাবা।আর তার পাশের সিটেই বসে বসে নীলাভ ভিডিও কনফারেন্সে একটা মিটিং করছে তার বসের সাথে।
নীলাভ আর তৌফিক চৌধুরী পুরো উল্টা।দুজনের মতের মিল কখনো হয় না।তৌফিক চৌধুরী যদি বলেন ‘ক’ নীলাভ বলে ‘খ’।তৌফিক চৌধুরীর যদি ডান পছন্দ হয় তো নীলাভের বাম পছন্দ হয়।যেমন তৌফিক চৌধুরী নীলাভকে বলেছিলেন,তাদের কোম্পানিতে জয়েন দিতে কিন্তু নীলাভ জয়েন হয় নি।তার মতে সে আগে নিজে কষ্ট করে নিজের পায়ে দাঁড়াবে।এ নিয়ে দুজনের মধ্যে মন মালিন্যের শেষ নেই।নীলা চৌধুরী চেয়েও পারেন না বাপ বেটা কে একসাথে করতে।কারন দুজনের যেখানে মতের ই মিল নেই।সেখানে তর্কতর্কি তো হবেই।
,
,
গাড়ি এসে থামলো তাদের গন্তব্যে। নীলাভ কালো শার্ট আর সাদা পেন্ট পড়েছে।চোখে কালো সানগ্লাস ফর্সা মুখ তাতে মুখ ভর্তি খোচা খোচা কালো দাড়ি।গোলাপি ঠোঁট। সব মিলিয়ে…. কি বলি?মানে বলার কোনো ভাষায় খুজে পাওয়া যাচ্ছে না।
নীলা চৌধুরী আর তৌফিক চৌধুরী আগে আগে যাচ্ছেন আর নীলাভ পিছে।ও চোখ মুখ খিচে হাটছে। ওর মতে এভাবে কারোর বাড়ি যাওয়া নিতান্তই ফালতু জিনিস।একটা লজ্জাজনক ব্যাপার মানুষের বাড়িতে যাওয়া। চেনা নেই জানা নেই কেমন হবে তা জানা নেই কোথায় কি আছে তা জানা নেই অপরিচিত মানুষ।তাই এভাবে হুটহাট মানুষের বাড়ি বাড়ি ঘুরার কোনো মানেই হয় না।নীলাভ একদম পছন্দ করে না।শুধু মাত্র নিজের মায়ের জন্য এসেছে ও।
,
প্রনয় আহসান আর তৌফিক আহসান কোলাকুলি করলেন একে অপরের সাথে।নীলা চৌধুরী আর রাফিয়া আহসান আগে থেকেই একে অপরকে চিনেন।তারা দরজায় দাড়িয়েই খোশগল্প শুরু করে দিয়েছে।
রাফান এগিয়ে এসে নীলাভের সাথে হ্যান্ডশেক করলো।
সবাই ঘরের ভেতরে গিয়ে বসলো।স্নেহার সাথেও টুকটাক কথা বলল সবাই।নীলাভ আর রাফান কথা বলার এক পর্যায়ে জানতে পারলো ওরা সেম ব্যাচ।
ওরা কথা বলার সময় ই হঠাৎ কোথা থেকে খুব জোরে গানের সাউন্ড ভেসে আসলো।সবাই একটু কেপে উঠলো।রাফান তো ভয়ে দুরুম করে পা সোফায় তুলে ফেলেছে।একটুপর আস্তে আস্তে পা দুটো নিচে নামিয়ে বুঝার চেষ্টা করলো শব্দ টা কোথা থেকে আসছে।ভালো করে খেয়াল করলেই রাফান আবিষ্কার করলো শব্দ টা প্রীতির ঘর থেকে আসছে।
রাফিয়া আহসান ইশারায় স্নেহাকে উপরে যেতে বললেন।স্নেহা শাশুড়ী মায়ের কথা মতো উপরে গেলো।রাফিয়া আহসান আবার ঘুরে তাকান নীলা চৌধুরী ও তৌফিক চৌধুরীর দিকে।প্রনয় আহসান একটু কেশে জোরপূর্বক হেসে বলে উঠলেন,
-আমার মেয়ে।আসলে খুব আদরে মানুষ হয়েছে তো তাই বাদর হয়ে গেছে।
নীলা চৌধুরী আর তৌফিক চৌধুরী হেসে বললেন,
-সমস্যা নেই।পোলাপান মানুষরা একটু এরকম ই হয়।
,
স্নেহা তারাহুরো করে প্রীতির রুমের দরজা ঢেলে ঢুকলো।স্নেহা রুমে ঢুকেই ভ্যাবাচেকা খেয়ে গেলো।
প্রীতি উল্টো ফিরে,
”দিল মে পাত্থার রাখকে মুখ পে মেকাপ কার লিয়া(ii)
মেরে সাইয়া জি সে আজ মেনে ব্রেকাপ কার লিয়া।
এই গানে নাচছে।
প্রীতি এমন বাদর নাচ দেখে স্নেহা ফিক করে হেসে দিলো এরপর গান টা অফ করে দিলো।প্রীতি নাচ থামিয়ে স্নেহার দিকে তাকালো।সাথে সাথে স্নেহা বলে উঠলো,
-নিচে মেহমান আসছে কই তাদের খাতিরযত্ন করবি তা না এখানে বসে বাদর নাচ নাচছিস?
প্রীতি -মেহমান আসছে তো কি হইছে পাত্রি দেখতে তো আর আসে নি।যে সবার তাদের খাতিরযত্ন করতে হবে।একদিন বাসায় ওই তইন্যা আসবে আরেকদিন মেহমান।কি শুরু হয়েছে এই বাসায়।তুই একাই কর খাতিরযত্ন ।যাহ এখন।
স্নেহা প্রীতির ঝাড়ি শুনে বলে উঠলো,
-আচ্ছা গেলাম আর গান বাজাবি না।
প্রীতি বিছানায় বসে গালে হাত দিয়ে আঙ্গুল নাড়াতে থাকলো।কোনো কাজ নেই কি করবে।প্রীতি ফোন হাতে নিয়ে বলল,
-কাম নাই বুড়ি খেতা সেলাই করে।
এই বলে আবার ওই নাম্বারে ফোন দিলো।
,
কথা বলার এক পর্যায়ে নীলাভের ফোনে কে যেনো মিসকল দিলো।সবার মাঝে ফোনের এমন একটা শব্দ যেনো অনেক জোরে শোনা গেলো।সবাই কথা থামিয়ে নীলাভের ফোনের দিকে তাকালো।ফোনটা কেটে গেলে একটু পর আবার বেজে উঠলো।নীলা চৌধুরী চাপাস্বরে ছেলের পাশ ঘেঁষে ফিসফিস করে বলে উঠলেন,
-তোরে এমন মিসকল কে দেয়?
নীলাভ ও ফিসফিস করে বলল,
-কেউ না।
নীলা চৌধুরী চোখ গরম করে ছেলের দিকে তাকিয়ে গলার স্বর আরেকটু নিচে নামিয়ে দাতে দাত পিষে বলে উঠলেন,
-মিসকল কারা দেয় আমি জানি না?আমাকে শিখাস তুই?তুই কবে থেকে এগুলা করছিস আমাকে তো একবারো বললি না।এতোই পর হয়ে গেছে আমি তোর।
নীলাভ মায়ের দিকে তাকিয়ে বিরক্তির স্বরে বলল,
-চুপ করো তো মা।না জেনে কথা বলবা না।
তৌফিক চৌধুরী সচেতন দৃষ্টিতে বারবার আড়চোখে বউ আর ছেলেকে দেখছেন আর বুঝার চেষ্টা করছেন তারা কি নিয়ে কথা বলছে।
নীলাভ এবার রাফানের উদ্দেশ্যে বলে উঠলো,
-চলো একটু ছাদে যাই এখানে ভালো লাগছে না।
রাফান -হমম চলো তোমাকে আমাদের বাড়ি টা ঘুরিয়ে দেখাই।
নীলাভ আর রাফান সবার মাঝখান থেকে উঠে ছাদে যাওয়ার জন্য পা রাখলো।
ছাদে ঢুকার ঠিক আগমুহূর্তে রাফানের অফিস থেকে ফোন এলো।ও নীলাভকে বলে কল রিসিভ করতে চলে গেলো।নীলাভ একা একাই ছাদে উঠলো।
ছাদ টা অনেক সুন্দর। বাড়িটা এমন একটা জায়গায় করা হয়েছে যে আশেপাশে বাড়ি খুব কম যার কারনে অনেক ভালো বাতাস পাওয়া যায়।ছাদের চারি পাশে নানানধরনের ফুল আর ফলের গাছ।বাহারি নানা ধরনের পাতার গাছ ও আছে।ছাদ টা দু ভাগে বিভক্ত। নীলাভ ঘুরতে ঘুরতে এবার আরেকপাশের ছাদে চলে গেলো। নীলাভ বেশি ফুলের নাম জানে না।একটা নীল ফুল দেখে সে সেটার নাম গুগলে সার্চ করছে।নামটা বের করার পর নীলাভের নাম্বারে আবার মিসকল আসলো।নীলাভ মুখ ফুলিয়ে নিঃশ্বাস নিয়ে কল ব্যাক করলো।ফোনটা কানে ধরতে না ধরতেই নীলাভের চোখ সামনে পড়তেই চড়কগাছ। ফোনটা কান থেকে নামিয়ে ফেলল ও।এ কি দেখছে।
,
প্রীতি ছাদের রেলিং এ বসে পা নাচাচ্ছিলো।আর এদিক ওদিক বারবার তাকাচ্ছিলো।
কিন্তু আচমকা ভুতের মতো এমন সামনে নীলাভকে দেখে সে পরে যেতে ধরছিলো।নীলাভ দৌড়ে এগিয়ে গিয়ে হাত বারিয়ে প্রীতিকে আগলে নিলো। প্রীতির আত্মা ছমছম করছে।চোখ মুখ বন্ধ করে আছে ও।কিন্তু নীলাভ এখনো ওর দিকে বিস্ময়ে তাকিয়ে আছে।আর ভাবছে। বেশ কিছুক্ষণপর নীলাভ অবিশ্বাসের মতো করে বলল,
-তুমি এখানে কেনো?
প্রীতি এবার চোখ খুলল ধীরে ধীরে।নীলাভের দিকে তাকিয়ে একটু জোর গলায় বলল,
-এই প্রশ্ন তো আমার করার কথা আপনি এখানে কেনো?আমার বাড়িতে।
নীলাভ যেনো আরও অবাক।চোয়াল টা যেনো এখনি নিচের দিকে ঝুলে পড়বে।যতই চায় সে এই মেয়ের থেকে দূরে থাকতে ততই এই মেয়ের কাছে চলে আসে সে।
নীলাভের এমন ভাবান্তর মুখ দেখে প্রীতি লাফিয়ে রেলিং থেকে নামলো।খোলা ভেজা চুলগুলো ঠিক মতো উড়তে পারছে না তাও অনেক চেষ্টা করে উড়ছে । প্রীতির গায়ে রানি গোলাপি কালার কাতানের কামিজ।গাঢ় গোলাপি কালার ওড়না টা যেনো চুলের সাথে প্রতিযোগিতা করে বাতাসে বিরামহীন ভাবে উড়ছে।
আর সামনে একটা সুদর্শন ছেলে কালো শীর্ট আর সাদা প্যান্ট পড়ে তার চোখে চোখ রেখে দাঁড়িয়ে আছে।প্রীতি ও তার গাঢ় বাদামি চোখ জোড়া দিয়ে নীলাভের ওই নীল দুটি চোখের দিকে তাকালো।তাকিয়েই থাকলো…
চলবে🙂
আমার দিকে কেউ তাকায় না কেনো এমন ভাবে?🥺
চলবে🙂