#হবে-কি-আমার(2)
#writer_Ruhi-mondal
#পর্ব_5
আকাশটা পুরো নীল হয়ে আছে তারমধ্যে কোথাও কোথাও সাদা গুচ্ছ গুচ্ছ মেঘ ভেসে বেড়াচ্ছে! রোদ্দুর ও পড়েছে বেশ! অরিন্দম আর মৃন্ময় বাসস্ট্যান্ডে দাঁড়িয়ে আছে তাদের ফ্রেন্ড দ্বীপ আর তার ওয়াইফ পায়েলের জন্য! বিয়ের আর মাত্র এক সপ্তাহ বাকি তাই তারাও চলে এসেছে মৃন্ময় দের বাড়ি! আজ তারা এলে একটু রেস্ট নিয়ে শপিং এর উদ্দেশ্যে বার হবে তনু’দের নিয়ে! কারণ এইখান থেকে বেশ খানিকটা দূরেই তারা শপিং করতে যাবে! আর মৃন্ময় অরিন্দমের যেহেতু নিজেদের গাড়ি আছে তারা তনুদের পরিবারে কে সাথে নিয়ে যাবে!
বাস থেকে দ্বীপ নামতেই অরিন্দম আর মৃন্ময়ের ঠোঁটের কোনে হাসি ফুটল তারা এগিয়ে গিয়ে তাকে জড়িয়ে ধরে বলল,
_’আরে তুই একা!পায়েল দি কোথায়?’
দ্বীপ চোখ সরু করে বলল,
_কেন তোরা আমাকে দেখে খুশি হোসনি?
অরিন্দম বলল,
_আরে তেমন ব্যাপার নয়!তবে দি এলো না কেন?
_এসেছে কিন্তু আগের স্টপে সে নেমে পড়েছে, কারণ ও আগেই তনুশ্রী দের বাড়ি যাবে!
মৃন্ময় হাতে থাকা ব্যাগটা নিয়ে এগিয়ে যেতে যেতে বলল,
_চল বাড়িতে গিয়ে কথা হবে ওরা বেস্ট ফ্রেন্ড একসাথে পড়েছে এখন কি আর আমাদের মনে থাকবে!
পায়েল তনু একসাথে কলেজে পড়তো তাই তারা আগে থেকেই একে অপরকে চেনে!
______
তনুশ্রী আমার ভেবে খুশি হচ্ছে যে ক’দিন পর থেকে তুই আর আমি প্রায় একই জায়গায় থাকবো! আমরা যখন খুশি দেখা করতে পারি ওয়াও আ’ম সো এক্সাইটেড! খুশি হয়ে কথাটা বলল পায়েল!
তনুশ্রী হেসে বলল,
_হ্যাঁ সেটা তো হবেই! তোকে খুব মিস করতাম রে!
অনু বলল,
_আমি যে তোকে খুব মিস করবো দি!কিন্তু টেনশন নট যখন আলুর দমের সাথে আমারও বিয়ে হয়ে যাবে তখন আমি তোদের জয়েন করব!
পায়েল ভ্রু কুঁচকে বলল,
_আলুর দমটা কে?
তনুশ্রী হেসে বলল,
_ও অরিন্দম দা’র কথা বলছে!
পায়েল চোখ ছোট ছোট করে বলল,
_অরিন্দম এর সাথে বিয়ে মানে?
অনু পাশে বসে পায়েলের দুহাত ধরে স্বভাবসুলভ চঞ্চলতা ভাব নিয়েই বলল,
_আরে পায়েলদি তুমি জানো না?আমার যে উনাকে খুব ভালো লাগে!আমি উনাকে বিয়ে করতে চাই!
পায়েল তাজ্জব বনে গেল অনুর এমন সোজাসাপ্টা কথা শুনে সে কিছুক্ষণ বিষ্ময় নিয়ে তাকিয়ে থেকে বলল,
_’তুমি মজা করছ নাকি সিরিয়াস বলছ?’
তনুশ্রী ড্রেসিং টেবিলের সামনের চুল বাঁধতে বাঁধতে বলল,
_ও মজা করছে না ও সিরিয়াস কিন্তু অরিন্দম দাভাই ওকে হয়তো পছন্দ করেন না! কিন্তু মেয়েটা বুঝতেই চায় না!
কথাটা শুনতে অনুর মুখটা কালো হয়ে গেল সে মুখ ফুলিয়ে বলল,
_তুই ভুল ভুল জানিস! উনি আমাকে পছন্দ করেন!
পায়েল তাল বলল,
_পছন্দ না করলেও পছন্দ করতে হবে!এত মিষ্টি মেয়েকে কেউ কি করে না পছন্দ করে থাকতে পারে!
সে অনুর দিকে তাকিয়ে বলল,
_তুমি চিন্তা করো না আমি আছি! তোমাদের সেটিং করিয়ে দেবে!
অনু গলা জড়িয়ে ধরে বলল,
_”থ্যাংক ইউ দিদি!’
এরইমধ্যে পায়েলের ফোন বেজে ওঠে সে তাকিয়ে দেখল দ্বীপ ফোন করেছে সে কলটা রিসিভ করতেই ওপাশ থেকে দ্বীপ বলল,
_’আমরা রেডি তুমি তাড়াতাড়ি রেডি হয়ে নাও তোমাদের পিক করে আসছি!’
পায়েলের মাথায় একটা বুদ্ধি এলো সে ফোনটা কেটে বলল,
_আঙ্কেল আন্টি তো আগেই চলে গিয়েছে না রে?
তনু মাথা নেড়ে বলল,
__’মায়ের একটু কাজ আছে বলে চলে গিয়েছেন একেবারে শাড়ী সেন্টারে দেখা হবে!’
পায়েল অনুর দিকে তাকিয়ে বলল,
_আমরা মৃন্ময় আর দ্বীপের সাথে যাচ্ছি! তুমি একটু দেরি করে আসবে!
অনু ভীত গলায় বলল,
_তোমরা আমাকে রেখে চলে যাবে!আমাকে সাথে করে নিয়ে যাবে না?
পায়েল ওর দুগাল টেনে বলল,
_আরে পাগলি আমার রেখে যাচ্ছি না!তুমি একটু দেরি করে বার হবে আমি অরিন্দম কে বলব তোমাকে যেন নিয়ে যায়!বুঝেছ?
অনু খুশী হয়ে বলল,
_’সত্যি বলছ দিভাই?’
পায়েল হাসি মুখে বলল,
_’হুম তিন সত্যি!’
________
দুপুর প্রায় দুটো বাজে অনু উঠানে পায়চারি করে চলেছে অনবরত টেনশন হচ্ছে তার!তাকে রেখে তনুশ্রীরা গিয়েছে প্রায় একঘন্টা হলো! কিন্তু তাকে নিতে এখনো অরিন্দম আসছে না!সে মন খারাপ করেই এদিক ওদিক ঘুরছে!তাকে কি কেউ নিয়ে যাবে না তাহলে কি তার সাথে সবাই মজা করল? এই সব ভেবে মন খারাপ করে যখন সে সিঁড়িতে বসতে যাবে তখন পিছন থেকে কেউ তাকে”পুতুল” বলে ডাকে! ডাকটা কর্ণকুহরে পৌঁছেতেই তার মুখে হঠাৎ করেই হাসি ফুটে উঠল কারন জানে এটা কে! হাসিমুখে পিছনে ঘুরে তাকিয়ে দেখল তার দুই বেস্ট ফ্রেন্ড অনুরাগ আর তিশা তার দিকে তাকিয়ে একগাল হেসে এগিয়ে আসছে!অনু হাসিমুখে এগিয়ে গিয়ে বলল,
_’আরে তোরা এত লেট করলি কেন?’
অনুরাগ তিশার মাথায় চাটি মেরে বলল,
_’এই রিধির জন্য লেট হয়েছে!ঘন্টার পর ঘন্টা মুখে পাউডার মাখতে মাখতে এতো লেট করে দিল!’
তিশা নিচের ডান হাতটা মুঠো করে ফু নিয়ে মাথায় দিতে দিতে বলল,
_তোর সাথে আজ আমার একান্নতম ব্রেক-আপ করে নিলাম!বারবার শুধু আমাকে মারা! ভাল্লাগে না যা!
অনু হেসে বলল,
_আর তিপ্পান্নতম প্যাচ আপ 2 মিনিট পরেই হয়ে যাবে!
অনুরাগ তিশাকে একহাতে জড়িয়ে ধরে বলল,
_’আর মারবো না বেবি সরি!’
তিশা কনুই দিয়ে অনুরাগের পেটে মেরে বলল,
_’তোর এই বেবি বলা বার করে দেবো!নাম ধরে ডাকতে তোর কি হয় শুনি? অন্য সবাইকে তো নাম বলে ডাকিস তাহলে আমাদের বেলায় এমন কেন?
অনু ও তাল দিয়ে বলল,
_হ্যাঁ তুই এমন কেন আমাকেও কোনদিন অনু বলে ডাকলি না!
অনুরাগ হেসে দুহাতে দুজন কে কাঁধ জড়িয়ে বলল,
_মা বাবার দেওয়া নাম তো সবাই ডাকে! তাই আমি সেগুলো ধরে ডাকি না!এগুলো যদি আমিও বলি তাহলে বাদবাকি লোকের সাথে আমার কি ডিফারেন্স রইল বল? আমি আলাদা কিছু বললে সেটা মনে থাকবে বেশি তোদের! আর তাছাড়া তোরা দুজন আমার স্পেশাল তাই স্পেশাল পার্সন দের জন্য স্পেশাল নাম দেওয়া বুঝেছিস?
অনু হিহি করে হেসে বলল,
_’তোর বউ’কে স্পেশাল নাম ধরে ডাক আমাকে কেন ডাকবি!’
অনুরাগ মেকি হেসে বলল,
_’ইউ নো হোয়াট, তুই আমার বউ’র থেকে ও বেশি আপন!বউ তো পরের মেয়ে এখন, কিন্তু তুই তো আমার নিজের!তাই তুই বেশি স্পেশাল!’
অরিন্দম দূর থেকে তাদের তিনজন কে পর্যবেক্ষণ করছে বেশকিছুক্ষন থেকে অনু আজ একটা সবুজ আর লাল সালোয়ার পড়েছে অসম্ভব সুন্দরী লাগছে তাকে অরিন্দম তাকে দেখে যত খুশি না হয়েছিল তার থেকে বেশি রাগ হচ্ছে অনুর ওপর!সে কোনো ছেলের সাথে এতটা ক্লোজ হতে দেখে অরিন্দম হাঁসফাঁস করে ওঠে তাই সে দ্রুত পায়ে বাড়ির উঠানে গিয়ে গমগমে গলায় বলল,
__’চলো!’
অরিন্দমের কথা শুনে তারা তিনজনেরই পিছনে ঘুরে দাড়ালো,অনু অরিন্দম কে দেখে খুশি হয়ে এগিয়ে এসে কিছু বলতে যাবে তার আগেই অরিন্দম খপ করে তার হাত ধরে গাড়ির দিকে এগিয়ে যেতে লাগল অনু কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে রইল বেশকিছুক্ষণ অতঃপর সে কিছু না বুঝতে পেরে পিছনে তাকিয়ে তিশাকে বলল,
_’তোরা দুজনে বাইকে করে আয়।ওখানে দেখা হবে!’
অরিন্দম কথাটা শুনে দাঁড়িয়ে অনুর দিকে ঘুরিয়ে বলল,
_’ওরা আসবে মানে?’
অনু চোখমুখ কুঁচকে বলল,
_’মানে ওরাও শপিং করবে বুঝেছেন এবার প্লিজ চলুন খুব গরম লাগছে সূর্য রশ্মি চোখে মুখে পড়েছে,, বলে সে এগিয়ে গেল গাড়ির কাছে! অরিন্দম গেইট খুলে দিতে অনু ফন্ট সিটে বসে পড়ল অতঃপর অরিন্দম ঘুরে নিজে ও ড্রাইভিং সিটে গিয়ে বসে বলল,
__’সিট বেল্ট পড়ো!’
অনু মুখ ফুলিয়ে বলল,
_’আমি লক করতে পারি না!’
অরিন্দম তপ্ত শ্বাস ফেলে অনুর দিকে ঝুঁকে গেল,অনু পিটপিট করে অরিন্দম কে এতটা কাছ থেকে দেখতে লাগল, অরিন্দম সন্তপর্নে নিজের কাজ সম্পূর্ণ করে স্টেয়ারিং এ হাত রেখে বলল,
_’ওই ছেলেটা তোমার কে?’
অনুর ভ্রু কুঁচকে গেল,সে কিছুক্ষন অরিন্দমের দিকে তাকিয়ে থেকে বিষয়টা নিয়ে না ভেবেই বলল,
__’আমার ফ্রেন্ড হয় বুঝেছেন?এবার চলুন!’
অনুর রুড বিহেভিয়ারে অরিন্দম কিছুটা ভড়কে গিয়ে জিজ্ঞাসা করল,
__’কি হয়েছে তোমার এমন করে কথা বলছ কেন? আগে তো খুব সুন্দর ভাবে কথা বলতে!তবে এখন কি হলো?’
অনু জানালা দিয়ে বাহিরে তাকিয়ে বলল,
__’আপনার ওপর আমি রেগে আছি অরিন্দম!চরম ভাবে রেগে আছে!’
অরিন্দম বুঝল কলি’র ব্যাপারটা নিয়ে সে এখন ও রেগে আছে আবার রাগ করাটা স্বাভাবিক আফটার অল তার জন্য মেয়েটা কেঁদেছে আবার জ্বর ও বাঁধিয়ে ছিল সে সেটা পরে জানতে পেরেছে! কিন্তু তাকে অরিন্দম অরিন্দম বলায় তার মনের সুপ্ত কোনে কেমন অদ্ভুত বেদনা হচ্ছে মেয়েটা তো তাকে নাম ধরে ডাকতে নারাজ ছিল তবে সে এতটা রেগে আছে যে তাকে ভালোবাসে অদ্ভুত অদ্ভুত নামে সমন্ধ করছে না আর তাকে মেয়েটার রাগ ভাঙাতেই হবে! যে কোনো উপায়ে! সে কিছুক্ষন ভাবল অতঃপর কিছু একটা ভেবে সে অনুর কানের কাছে ঝুকে গিয়ে আদুরে গলায় বলল,
__’আমি তোমার কে যেন হবো বলে তুমি বলেছিলে?তবে এখন কেনো নাম ধরে ডাকছো? আমার টিয়াপাখি আমাকে নাম ধরে ডাকুক এটা আমি চাই না!তার দুষ্টু মিষ্টি নাম গুলোয় যে আমি বড্ড অভ্যস্ত হয়ে গিয়েছি! আমি চাই সে আমাকে বারবার সেই সকল অদ্ভুত নামে ডাকুক, বারবার আমার অটকাট করে দিক! বুঝেছ আমার টিয়াপাখিটা!’
#চলবে