#হলুদ_খাম
লেখিকাঃ #তানজীমা_ইসলাম
___________________[১৯]__________________
তনুর মাথা চক্কর দিচ্ছে। এসব কি বলছে মামি! সেলিনা একটা বিরক্তির নিঃশ্বাস ফেলে বলল,
” ধুর বাপু! কি বলছি তা কি জানি। আচ্ছা শোন, আমি কিন্তু জানি তুই সায়নকে পছন্দ করিস।
কিন্তু মা হয়ে এসব শুনে আমাদের বসে থাকলে তো চলবে না। বিয়ের আগে ছেলেমেয়েদের এমন মেলামেশা ঠিক না, গোনাহ হয়।
আর তোদের বললেও যে শুনবিনা তাও জানি। তাই তোর মা আর আমি ভেবেছি তোদের বিয়ে দিয়ে দেবো। কিন্তু সায়ন তো এখনও চাকরি পায়নি, তুই কি একটা বেকার ছেলেকে বিয়ে করতে পারবি তনু!?
বিস্ময়ে তনুর চোখজোড়া বড়বড় হয়ে গেছে। ঠোঁট চেপে খুশি আঁটকে রাখার চেষ্টা করছে সে।
তার উজ্জ্বল শ্যামলা গাল দুটোতে রক্তিম আভা ফুটে উঠেছে। তনুর ইচ্ছে করছে হবু শ্বাশুড়িকে জড়িয়ে ধরে নাচানাচি করতে।
কিন্তু অতি আনন্দে সে কেমন রিয়াক্ট করবে ভেবে পাচ্ছেনা। তনুর মতিগতি ঠিক বুঝতে পারছেনা সেলিনা। তাহলে কি তনু সায়নকে বিয়ে করবে না! সেলিনা ভ্রুকুটি করে বলল,
” চুপ করে আছিস কেন!? নাকি সায়ন বেকার বলে এখন ওকে বিয়ে করতে চাস না!!?
” কখন বললাম সায়ন ভাইয়াকে বিয়ে করতে চাই না! উনি এখন বেকার তো কি হয়েছে!! চাকরি তো একদিন পাবে। আমার তাকে বিয়ে করতে কোনো সমস্যা নেই।
সাথেসাথেই রুশার চিৎকার শুনে ধড়ফড়িয়ে উঠল সেলিনা। তনুও একরকম লাফিয়ে উঠল।
রান্নাঘরের দরজায় দাড়িয়ে আছে রুশা৷
তার জট পাকানো চুল আর ভয়ংকর মুখভঙ্গি দেখে এখন তাকে সত্যিকারের শাকচুন্নিই মনে হচ্ছে।
রুশা কিছুক্ষণ সেলিনা আর তনুর দিকে অগ্নিদৃষ্টি নিক্ষেপ করে দ্রুত পায়ে চলে গেলো। সেলিনা কিছুটা ধাতস্থ হয়ে বলল,
” এই মেয়ের হয়েছেটা কি! আমার তো মনে হচ্ছে ওকে জ্বীনে ধরেছে!!
” আমারও তাই মনে হচ্ছে মামি।
” দেখি আজ বিকালে হুজুর ডেকে ওকে ঝাড়ফুঁক দিয়ে নেবো। না জানি কিসে ধরেছে ওকে, শেষে বেচারি পাগল টাগল না হয়ে যায়!
তনু কিছুটা হলেও আচ করতে পেরেছে, রুশা হয়তো সায়নের সাথে তার বিয়ের কথা শুনেই অমন রিয়াক্ট করেছে।
কিন্তু ওকে দেখে মনে হচ্ছে ও কিছু একটা করে বসবে। রুশার ব্যাপারে কথা বলার জন্য সায়নকে খুজতে বেরিয়ে পড়ল তনু।
_________________________
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
পুকুরপাড়ে বসে হাস কাটছে হাসু মিয়া। একটু দূরে বরই গাছ তলায় দাঁড়িয়ে আছে তনিমা আর সায়ন। গত রাতে সেলিনার সাথে যে পুরনো বিষয়ে মিটমাট হয়ে গেছে সেটা সায়নকে জানিয়েছে তনিমা।
এমনকি তারা দুজনে সায়ন আর তনুর বিয়ের কথা ভাবছে সেটাও জানিয়েছে।
সায়ন এতক্ষণ চুপচাপ দাঁড়িয়ে ফুপ্পির কথা শুনছিলো। মায়ের সাথে ফুপ্পির সব মিটমাট হয়ে গেছে জেনে সেও বেশ খুশি হয়েছে।
কিন্তু চাকরি পাওয়ার আগে তনুকে বিয়ে করার বিষয়টা সে মানতে পারছেনা। সায়ন একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল,
” ফুপ্পি! তোমার আর আম্মুর মাঝে সব মিটমাট হয়ে গেছে জেনে আমি যে কত খুশি হয়েছি তা বলে বোঝাতে পারবো না। কিন্তু
” কিন্তু কি?
” আমি এখন তনুকে বিয়ে করতে পারবো না।
” কিন্তু কেন!? তুই তো ওকে ভালোবাসিস!
” হ্যাঁ, বাসি। অনেক বেশি ভালোবাসি। কিন্তু আমি এখনও বেকার। চাকরি পাওয়ার আগে বিয়ে করবো কিভাবে!?
” কিভাবে আবার! মানুষ যেভাবে বিয়ে করে সেভাবে!!
” ফুপ্পি তুমি বুঝতেছো না। আমি ঘরোয়া ভাবে বিয়ে করে তনুকে বউ করতে চাই না। আমি জানি বিয়ে নিয়ে ওর অনেক স্বপ্ন আছে, ইচ্ছে আছে। আমারও অনেক প্ল্যানিং আছে।
” আরে এখন তো শুধু কলমা বিয়ে হবে। তুই চাকরি না পাওয়া পর্যন্ত তনু আমাদের কাছে থাকবে। চাকরি পাওয়ার পরে তোরা যেভাবে চাস সেভাবে অনুষ্ঠান করবি।
” তাহলে বিয়েটাও নাহয় তখনই করবো।
” বেশ, এখন বিয়ে করতে হবে না। তাহলে তোরাও বিয়ের আগে দেখা করতে পারবি না, আর কথা বলাও অফ থাকবে।
তনুর সাথে আবারও কন্টাক্ট অফ করতে ভেবেই সায়নের বুকের ভেতরটা ছ্যাত করে উঠল। সে অবাক হয়ে বলল,
” বিয়ের সাথে কন্টাক্ট অফ করার কি সম্পর্ক!
” অনেক সম্পর্ক আছে। বিয়ের আগে তনুর জন্য তুই পরপুরুষ এবং তনু তোর জন্য পরনারী। আর এমন বিবাহবহির্ভূত কোনো সম্পর্ক থাকা নাজায়েজ। এতদিন তোরা গুনাহ করেছিস, এখন আমরাও তোদের সম্পর্ক জানি। এখন জেনেশুনে তো গুনাহ হতে দেবোনা।
” ফুপ্পি!
” সিদ্ধান্ত তোদের।
তনিমা আর কথা না বাড়িয়ে হেলেদুলে পুকুরপাড়ে গিয়ে বসল। হাসু মিয়ার হাস কাটা শেষ।
সে গোশতের গামলাটা তনিমাকে দিয়ে ময়লা ফেলতে গেছে।
তনিমা গোশতের গামলা নিয়ে বাড়ির ভেতর চলে গেল। আর সায়ন সেদিকে অসহায় চোখে তাকিয়ে আছে।
_____________________
|
|
|
|
|
তনু পুকুরপাড়ে এসে দেখল বরই গাছ তলায় দাঁড়িয়ে আছে সায়ন। তনু সায়নের দিকে এগিয়ে যেতে যেতে বলল,
” আপনি এখানে! আর আমি আপনাকে সারা বাড়ি খুজে বেড়াচ্ছি।
” কেন বিয়ে করার জন্য!?
” হুহ। আমার যেন আপনাকে বিয়ে করতে বয়েই গেছে।
” তাহলে তুইও আমাকে বিয়ে করতে চাস না!?
” আমিও মানে! আর কার কথা বলছেন আপনি!!
” গাধী!
” এই! আপনি আমাকে কি বললেন!?
” বয়রা!!
” আপনাকে আমি
” কি করবি!?
তনু রাগে গজগজ করতে করতে কিছু না বলেই চলে আসতে লাগল।
মাঝেমধ্যে তার নিজের ওপরই ভীষণ রাগ হয়। কেন সে সায়ন এর প্রেমে পড়তে গেলো!
দুনিয়ায় কি ছেলের অভাব পড়েছিলো, যে মামাতো ভাইয়ের প্রেমে পড়তে হল তাকে!
তাও আবার যেমন তেমন প্রেম না, একেবারে হাবুডুবু খাওয়া প্রেম। সে না পারে সাতার কাটতে না পারে ডুবে মরতে।
হুমায়ুন আহমেদ এর একটা উক্তি এখন সায়নের মাথায় ঘুরছে,
” ভালোবাসার মাঝে হালকা ভয় থাকলে, সেই ভালোবাসা আরও মধুর হয়। কেননা, হারানোর ভয়ে প্রিয়জনের প্রতি ভালোবাসাটা আরও বেড়ে যায়”
সায়ন একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল, ” তোকে হারানোর ভয়ে, আমি তোকে আরও বেশি ভালোবেসে চলেছি। ধীরে ধীরে এই ভালোবাসা আমার জন্য বিষাক্ত হয়ে উঠছে। তোকে না পাওয়া পর্যন্ত এই বিষ কাটবে না। তোকে আমার চাই তনু!
______________________
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
ফোন হাতে নিয়ে বসে আছে রুশা, তার বড় চাচাকে কল দিয়ে কি কি বলবে তা মনেমনে আওড়াচ্ছে।
সব ঠিকঠাক, সায়নের বাবাকে কল করল সে। রিং হচ্ছে, একবার, দুইবার, তিনবার বাজতেই কল রিসিভ হল। ওপাশ থেকে মোটা স্বর ভেসে এলো,
” হ্যালো! রুশা মা!
” হ্যাঁ চাচু আমি। আপনি কোথায়? বাসায় পৌছাইছেন?
” হুম। তোর কি অবস্থা! চুলের জট খুলেছে?
” আমার চুলের জট পড়ে মরুক চাচু। এবার মনে হচ্ছে আপনাদের সবার চুলে আগুন ধরে যাবে!
” কেন কি হয়েছে!?
” কি হয়নি তাই বলুন। সায়ন ভাইয়া আর তনুর মধ্যে কঠিন ইটিশপিটিস চলছে!
” মানে!? কি যা তা বলছিস!!
” যা সত্যি তাই বলছি। আর তনু কি জিনিস তা যদি জানতেন চাচু। ও আপনার ভোলাভালা ছেলেটাকে একদম খেয়ে ছেড়ে দেবে!
” রুশা!!!
বড় চাচার ধমক খেয়ে রুশার পিলে চমকে উঠল। রুশা আর কিছু বলার আগেই রুশার কল কেটে দিল সআয়নের বাবা।
রুশা ফোন রেখে বুকে হাত দিয়ে জোরে জোরে শ্বাস নিতে লাগল।
ভয়ে তার শ্বাসকষ্ট শুরু হয়ে গেছে। কিছুটা ধাতস্থ হয়ে মনেমনে বলল,
” যা যা কানে ঢেলে দিয়েছি তাতেই চরম রেগে গেছেন চাচা। এবার সেগুলো সায়ন আর তনুর ওপর বিস্ফোরণ হওয়ার পালা।
___________________________
|
|
|
|
[চলবে]