#হারানোর_বেদনা
#পর্ব_৯
#লেখক_দিগন্ত
পানিতে পড়ে ভেসে ভেসে নদীর তীরে চলে যায় মেঘলা।কয়েকজন মানুষ তাকে দেখে উদ্ধার করে এবং হাসপাতালে ভর্তি করে।
মেঘলা জীবন মৃত্যুর সাথে পা*ঞ্জা লড়তে লড়তে বেঁচে যায়।তবে এখন তার জেদ আর প্র*তিশো*ধ নেওয়ার আকাঙখা আরো বেড়ে গেছে।নিলয় আর লামিহার উপর প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য আবার নতুন খেলা সাজাতে হবে মেঘলাকে।আর এই খেলায় জয়ও তাকেই ছিনিয়ে নিতে হবে।
১ বছর পর,
লামিহা বিয়ের সাজে অপেক্ষা করছে।আজ নিলয়ের সাথে তার বিয়ে।যদিও নিলয় এই বিয়েতে রাজি ছিলনা।কিন্তু লতিফা আর নিলার জেদের কাছে হার মেনে আজ সে বিয়েটা করছে।
লতিফা আর নিলাও এখন আগের মতো নিলয়কে বিশ্বাস করে।কারণ তারা মনে করে রুদ্রই সব চক্রা*ন্ত করেছিল।মেঘলা এবং পরিবারকেও রুদ্র মে*রেছে এটাই তাদের বিশ্বাস।
নিলা লামিহার কাছে এসে বলে,
-“তোমাকে খুব সুন্দর লাগছে আন্টি।একদম প্রিন্সেসের মতো লাগছে।”
লামিহা নিলাকে কোলে তুলে নিয়ে আদর করে।তারপর বলে,
-“তোমাকেও সুন্দর লাগছে সোনা।”
লতিফা হঠাৎ রুমে চলে আসে এবং লামিহার হাতে একটি পার্সেল দিয়ে বলে,
-“কুরিয়ার সার্ভিসের একজন লোক এই পার্সেলটা দিয়ে গেল।এটা তোমার নামে।”
লামিহা পার্সেলটি খুলে ভয় পেয়ে যায়।তারপর ভয়ে পার্সেলটি ছুড়ে মা*রে।পার্সেলের ভেতরে একটা রক্তমাখা রুমাল।
লামিহা ভয়ে ঘামতে থাকে।লতিফা এক গ্লাস পানি এনে লামিহাকে দিয়ে বলে,
-“ভয় পাচ্ছো না-কি? ভয় পেয়ো না।এখনই যদি ভয় পাও তাহলে সামনে কি করবে?”
লামিহা আড়ষ্ট গলায় বলে,
-“মানে? কি বলছেন টা কি আপনি?”
লতিফা বেগম মুচকি হেসে বলে,
-“কিছু না।মজা করছিলাম।এসব বাদ দাও তাড়াতাড়ি রেডি হয়ে নিচে চলে এসো।তোমার জন্য অনেক বড় সারপ্রাইজ ওয়েট করছে।”
কথাটা বলে নিলাকে সাথে নিয়ে লতিফা বেগম চলে যান।লামিহা বোকার মতো সেখানে দাড়িয়ে থাকে।
____________
মেঘলা আজ ১ বছর পর বাইরের জগতে বের হচ্ছে।গত ১ বছর থেকে সে ধীরে ধীরে নিজেকে প্রস্তুত করেছে।অবশ্য সে একা কিছু করেছি।প্রাক্তন সিআইডি অফিসার আফজাল শেখ তাকে অনেক সাহায্য করেছে।আজ তারই সহায়তায় মেঘলা শুরু করল নতুন খেলা।
আফজাল শেখ মেঘলার হাতে কিছু অ*স্ত্র তুলে দিয়ে বলে,
-“আজ আমি আইনের লোক হয়েও তোমার হাতে অ*স্ত্র তুলে দিচ্ছি।কারণ আমি মনে করি আইনের হাতে ঐ ন*র*পি*শা*চরা উচিৎ শাস্তি পাবে না।আমি চাই তুমি নিজের হাতে ওদেরকে পাপের শাস্তি প্রদান করো।”
মেঘলা অ*স্ত্রগুলো হাতে তুলে নিয়ে বলতে থাকে,
-“অন্যায় যে করে আর অন্যায় যে সহে দুজনেই সমান অপরাধী।আমি ছোটবেলা থেকেই এটা বিশ্বাস করি।আজও আমি নিজের হাতে অন্যায়কারীদের শাস্তি দেব ইনশাআল্লাহ।”
___________
লামিহা ঘরে বসেছিল হঠাৎ কেউ পেছন থেকে এসে তাকে কিডন্যাপ করে নিয়ে যায়।
লামিহার জ্ঞান ফেরার পর সে নিজের সামনে তার স্বামী নজরুলকে দেখতে পায়।তারপর কাপা কাপা গলায় বলে,
-“তুমি…..তোমার তো এখন লন্ডনে থাকার কথা।তুমি এখানে কি করছ?”
নজরুল রেগে গিয়ে বলে,
-“এখানে না এলে তো আমি জানতেই পারতাম না তুমি আমাকে ঠকিয়ে আবার একটা বিয়ে করছ।নিলয়কে তো আমি ছাড়ব না।আমি এতদিন ধরে ওর পার্টনার।আর ও কিনা আমার থেকে আমার বউকেই কেড়ে নিচ্ছে।”
-“আরে বুদ্ধু।এটা তো আমাদের একটা প্ল্যান ছিল।মেঘলা বেঁচে থাকতে পারে বলে আমরা সন্দেহ করছিলাম।তাই মেঘলাকে ধরার জন্য আমরা এই নাটকটা সাজাই।”
-“আমাকে বোকা ভেবোনা।আমি সব জানি।ভাগ্য ভালো আমার এক শুভাকাঙ্ক্ষী নিজে ফোন করে আমায় সব জানালো।নাহলে তো আমি কিছুই জানতে পারতাম না।”
-“এক মিনিট, এক মিনিট।কি বললে তুমি? শুভাকাঙ্ক্ষী? কোন শুভাকাঙ্ক্ষীর কথা বলছ তুমি?”
-“যে আমায় কল করে তোমার আর নিলয়ের বিয়ের ব্যাপারে সবকিছু জানালো।”
-“কে সে?”
-“সে তার পরিচয় দেয়নি।শুধু বলেছে সে আমার শুভাকাঙ্ক্ষী।”
-“আরে বুদ্ধু এটা মেঘলা নয়তো?”
লামিহার কথায় নজরুলের হুশ ফেরে।তাইতো এটা মেঘলা নয়তো? তারা দুজন সাথে সাথে বুঝতে পারে কেউ তাদের ফাদে ফেলেছে।তারা জলদি সেখান থেকে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে কিন্তু তখন মেঘলা তাদের সামনে চলে আসে।
মেঘলাকে দেখে দুজনেই ঘাবড়ে যায়।কারণ মেঘলার হাতে ছিল হরেক রকম অ*স্ত্র।আর মেঘলা একা আসেনি।তার সাথে অনেক শক্তপোক্ত চেহারার লোককেও নিয়ে এসেছে।
মেঘলা তার সঙ্গীসাথীদের নির্দেশ দিয়ে বলে,
-“এদের দুজনকে বেধে ফেলো।”
লামিহা আর নজরুল মেঘলার কাছে বারবার নিজেদের প্রাণভিক্ষা চায়।
মেঘলা গগণবিহারী হাসি হেসে বলে,
-“এখন ক্ষমা চেয়ে কি হবে? লামিহা তুই আমার কাছে কোন মুখে ক্ষমা চাচ্ছিস।নজরুল,নিলয় এরা নাহয় বাইরের লোক।কিন্তু তুই নিজের বোন হয়ে আমার সাথে এমন করতে পারলি? নিজের পুরো পরিবারকে এভাবে শে*ষ করে দিতে পারলি? নিজের ভাই,নিজের মা সবাইকে মে*রে ফেলতে, নিজের বোনকে গু*লি করতে একবারও কি তোর হাত কাপেনি? এত পা*ষাণ তুই।”
লামিহা কোন উত্তর দেয়না।সে শুধু বলতে থাকে,
-“আমার ভুল হয়েছে।আমায় ক্ষমা করে দে।”
কিন্তু মেঘলাও ঠিক করে ফেলেছে সে লামিহাকে উচিৎ শিক্ষা দেবে।তাই বলে,
-“আজ আর কোন ক্ষমা না।এটা ঠিক যে ক্ষমা মহৎ গুণ।কিন্তু তোর মতো নিকৃ*ষ্ট মানুষ ক্ষমার যোগ্য না।তুই একমাত্র চরম শাস্তির দাবিদার।”
কথাটা বলে একটা রাম*দা দিয়ে এক চো*টে লামিহার একটা হাত কে*টে দেয় মেঘলা।তারপর একটা লা*ঙ্গল এনে মাথায় আঘা*ত করে।এমন ভয়াবহ মৃত্যু দেখে আশেপাশের সবাই নিস্তব্ধ হয়ে যায়।
এরপর মেঘলা গুটি গুটি পায়ে এগিয়ে যায় নজরুলের দিকে।নজরুলও নিজের প্রাণভিক্ষা চাইতে থাকে।মেঘলা তার কোন কথা না শুনে বন্দু*ক দিয়ে প্রথমে নজরুলের হাতে, তারপর পায়ে, তারপর হাটুতে, তারপর হাতের-পায়ের প্রতিটি ন*খে এভাবে পুরো শরীরে গু*লি চালিয়ে তাকেও মে*রে ফেলে।
মেঘলা যেন এবার একটু তৃপ্তি পায়।এখন শুধু নিলয়ই বাকি আছে।নিলয়কে শাস্তি দিয়েই এখন মেঘলার প্রতি*শো*ধের এই খেলা শেষ হবে।
নিলয়ের উদ্দ্যেশ্যে মেঘলা বলতে থাকে,
-“আর একটু শুধু একটু অপেক্ষা করো নিলয়।তোমার কাছেই যাব এরপর।ওদেরকে শুধু শাস্তি দেব আর তোমাকে নিজের প্রাপ্য শাস্তি থেকে বঞ্চিত করবো সেটা তো হতে পারে না।”
________
নিলয় বিরক্ত হয়ে উঠে আসতে চায়।সেই কখন থেকে লামিহার জন্য বসে আছে অথচ লামিহার আসার কোন খোঁজ খবর নেই।তখন লতিফা বেগম তাকে থামিয়ে বলে,
-“তুই একটু অপেক্ষা কর।আমি নিয়ে আসছি লামিহাকে।”
কথাটা বলে তিনি সিড়ি বেয়ে উপরে উঠে যান।নিলয় আবার অপেক্ষার প্রহর গুণতে থাকে।তবে তাকে বেশিক্ষণ অপেক্ষা করতে হয়না।
লতিফা বেগম একহাত ঘোমটা দেওয়া বউবেশে একটি মেয়েকে নিচে নিয়ে আসে।
(চলবে)
[