#হারিয়েছি_নামপরিচয়
#পর্বঃ১৫
#লেখিকাঃদিশা মনি
মেহের রিফাতকে এসে বলে,
‘তুমি মেঘলাকে সম্পূর্ণ ভুল বুঝেছ। মেয়েটা কোন পরিস্থিতিতে কি করেছে সেটা তোমার জানার দরকার ছিল।’
রিফাত মেহেরের কথাটা শুনে রেগে গিয়ে বলে,
‘আপনার থেকে কোন পরামর্শ আমি চাইনা। আমি যা করেছি একদম ঠিক করেছি। মেঘলার মতো মেয়ে একদম এইরকম ব্যবহারই ডিজার্ভ করে। আমাদের সবাইকে মিথ্যা বলেছে ও। মিথ্যা পরিচয়ে আমার জিবনে এসেছে। সবকিছু জানার পরেও তাকে আমি নিজের জিবনে রাখব। এটা যদি ভেবে থাকেন সেটা ভুল ভেবেছেন।’
‘তুমি আমাকে নিয়ে যাই ভাবো আমি সবসময় তোমাকে নিজের ছেলের মতোই দেখেছি রিফাত। আমার চোখে তোমার আর মুবিনের মধ্যে কোন পার্থক্য নই। আমিও এটা মানছি যে, মেঘলা যা করেছে সেটা অন্যায় কিন্তু ওর পরিস্থিতিটা তুমি একবার জানার চেষ্টা করলা না।’
মেহের রিফাতকে মেঘলার ব্যাপারে সবকিছু খুলে বলে। সবকিছু শুনে রিফাত হতবাক হয়ে যায়। মেহের বলে,
‘এবার নিশ্চয়ই তুমি একটু ধারণা করতে পারছ। আর একটা কথা আমি কিন্তু তোমার ব্যাপারেও সব জানি। মুবিন আমায় বলেছে সব। তুমি শুধুমাত্র মুবিনের থেকে রোদেলাকে আলাদা করতে চেয়েছিলে। সেদিক দিয়ে দেখতে গেলে তুমিও অন্যায় করেছিলে। দুজনেই যখন অন্যায় করেছ তখন শাস্তি একা মেঘলা কেন পাবে? তোমরা দুজনই তো সমান অপরাধী। তোমাদের উচিৎ ছিল একে অপরের থেকে ক্ষমা চেয়ে নিয়ে সবকিছু ঠিক করে নেওয়া। কিন্তু তুমি কি করলে,,,,যাইহোক তোমার ব্যাপার তুমিই বুঝে নাও। আমি তোমার ব্যাপারে কি বলব। আমার পরামর্শ একটাই তুমি সবকিছু ঠিক করে নেও।’
মেহের চলে যায়। রিফাত মেহেরের বলা কথাগুলোই ভাবতে থাকে। রিফাতের মেঘলার মুখটা মনে পড়ে যায়। কিছু একটা মনে করে রিফাত নিজের ড্রয়ার থেকে হাতে আকা একটি ছবি বের করে। তিন বছর আগে প্রথম যেদিন রোদেলাকে সে দেখেছিল সেইসময় ছবিটা একে ছিল।
রিফাত ছবিটার দিকে ভালোভাবে তাকিয়ে দেখে। চশমা পড়া, খোপা করা চুল। এই মেয়েটাকে দেখে তো তার মনে প্রেমের সঞ্চার ঘটেছিল। ফাবিহার থেকে প্রতারণার শিকার হয়ে রিফাত ভেবেছিল আর কোনদিনও সে ভালোবাসতে পারবে না। কিন্তু সেই বৃষ্টির দিনে এই মেয়েটাকে দেখে তার মনে অন্যরকম অনুভূতি খেলে যাচ্ছিল। এরপর মেয়েটার কত খোজ করেছে কিন্তু পায়নি। শেষপর্যন্ত মেয়েটার ছবি একেছিল। আর সেই ছবি দেখেই অদ্ভুত প্রশান্তি লাগত তার মনে।
যেদিন মুবিনের সাথে রোদেলাকে প্রথম দেখেছিল সেদিনই মনে হয়েছিল এটাই তো সেই মেয়ে। তাই রিফাত যে করেই হোক রোদেলাকে নিজের করে পেতে চেয়েছিল। এখন রিফাত বুঝতে পারল সে কতবড় ভুল করেছে।
রোদেলা ও মেঘলা যমজ হওয়ার তার এই ভুলটি হয়েছিল। আসলে যেই মেয়েকে দেখে রিফাতের ভালো লেগে গিয়েছিল সে মেঘলা!
রিফাত আর এক মুহুর্ত অপেক্ষা না করে তাড়াতাড়ি নিজের গাড়ি নিয়ে বেড়িয়ে পড়ে।
২৯.
মেঘলা ও রোদেলা বাসের মধ্যেই ছিল। বাস এখনো চট্টগ্রামে পৌছায় নি। এরমধ্যে একটা ছেলে এসে রোদেলাকে বলে,
‘আমাকে একটু আপনার সিটে বসতে দেবেন?’
রোদেলা ছেলেটার দিকে একবার চোখ বুলিয়ে দেয়। ছেলেটার কাধে একটা গিটার। দেখতে অনেক বেশি সুন্দর। তবুও রোদেলার ছেলেটাকে সুবিধার মনে হয়না।
‘এটা আমার সিট। আপনাকে বসতে দেব কেন?’
ছেলেটা আফসোস করে বলে,
‘আজকাল মানবিকতা বেচে নেই। একটা ছেলে এভাবে এত মোটা একটা গিটার কাধে নিয়ে এতদূর দাড়িয়ে যাবে আর আপনার একটুও কষ্ট হচ্ছেনা।’
রোদেলার খুব রাগ হয় ছেলেটার কথা শুনে। রোদেলা একপ্রকার রেগে গিয়েই বলে,
‘আপনার গিটার, আপনার সমস্যা। এটা আমার সিট। আমি টাকা দিয়ে টিকেট কিনেছি। এখন আপনি যদি সিট না পান তাহলে আমি কি করব? আর আপনাকে গিটার নিয়ে আসতেও আমি বলিনি। তাহলে শুধু শুধু সেক্রিফাইজ করব কেন?’
মেঘলা এতক্ষণ ঘুমিয়ে ছিল। রোদেলা এত জোরে কথা বলছিল যে তার ঘুম ভেঙে যায়। ঘুম থেকে উঠেই রোদেলাকে বলে,
‘কি হয়েছে রোদ?’
‘আরে দেখ না মেঘ। এই ছেলেটা এখানে এসে কিরকম ঝামেলা করছে। আমি এবার বাসের হেলপারকে ডাকছি। আমি টাকা দিয়ে ছিট কিনব আর অন্য কেউ এসে বসতে চাইবে।’
মেঘলা একপলক ছেলেটার দিকে তাকায়। ছেলেটা নিষ্পাপ মুখ করে তাকিয়ে ছিল। ছেলেটার মুখের দিকে তাকাতেই মায়া হয় মেঘলার।
‘ এত ঝামেলা করার দরকার নাই রোদ। ছেলেটাকে ভালোভাবে বুঝিয়ে বললেই তো হয়। ভাইয়া আপনি প্লিজ একটু কষ্ট করে চলুন। দেখবেন একটু অপেক্ষা করলেই ফাকা ছিট পেয়ে যাবেন। আমরা আসলে চট্টগ্রাম যাব তো। এতদূর দাড়িয়ে যাওয়া সম্ভব না। সামনে কোথাও কোন প্যাসেঞ্জার নেমে গেলে সেখানে বসে পড়িয়েন।’
ছেলেটা মৃদু হেসে বলে,
‘হাউ সুইট। আপনি দেখতে যেমন মিষ্টি আপনার ব্যবহারও তেমন মিষ্টি। আর আপনার টুইন সিস্টার তো,,,’
রোদেলা চোখ পাকিয়ে তাকাতেই ছেলেটা চুপ করে দূরে সরে যায়।
মেঘলা এসব দেখে অজান্তেই হেসে দেয়। সেই হাসি দেখে রোদেলারও ভালো লাগে।
৩০.
রিফাত মেঘলাদের বাড়িতে এসে জানতে পারে তারা কেউই বাড়িতে নেই। রিফাতের বাবা আমিনুল হক মেঘলাদের বাড়ি, ব্যবসা সব কেড়ে নিয়েছে। যার কারণে তারা সবাই বাড়ি ছেড়ে চলে গেছে। কোথায় গেছে সেটাও কেউ বলতে পারছে না।
রিফাত অসহায় হয়ে এদিক সেদিক খুজতে থাকে। কিন্তু কোন লাভ হয়না। রিফাতের নিজেকে ভীষণ অসহায় মনে হতে থাকে। মেঘলার ফোনে কল করে। কিন্তু মোবাইলও নট রিচেবেল বলছে। মেঘলা নিজের সিমকার্ড সব বদলে ফেলেছে। তাই এমনটা হচ্ছে।
রিফাত এইসব কিছু নিয়ে ভীষণ দুশ্চিন্তায় পড়ে যায়। এখন তার কি করণীয় সেটাই ভাবতে পারছিল না। রিফাত অবশেষে কোন উপায় না পেয়ে নিরাশ হয়ে বাড়িতে ফিরে যায়।
✨
শেষপর্যন্ত চট্টগ্রাম এসে পৌছায় বাস। দীর্ঘ যাত্রার পর চট্টগ্রামে পৌছায় মেঘলা ও রোদেলা। চট্টগ্রামে পৌছে নেমে পড়ে বাস থেকে। রোদেলা বলে,
‘আমি এখানে বেশিদিন থাকব না। আপাতত কয়েকদিন থাকব। দেন আমি মুবিনের কাছে খুলনায় চলে যাব। তার আগে তোর মেডিকেলে ভর্তির সব ব্যবস্থা করে দেব। তুই মেডিকেল হোস্টেলেই থাকতে পারবি।’
মেঘলা ও রোদেলা দুজনে প্রথমে হোটেলে যায়। মেঘলার মেডিকেলে ভর্তির সব ব্যবস্থা হয়ে যায়। মেঘলা মেডিকেল হোস্টেলে সিটও পেয়ে যায়। রোদেলা মুবিনের কাছে খুলনায় চলে যায়। মেঘলা চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজে পড়াশোনা করতে থাকে। এখন তার জিবনে একটাই লক্ষ্য ডাক্তার হওয়া।
অন্য কোন কিছু নিয়ে ভাবতে চায়না মেঘলা। তাই নিজের পড়াশোনায় ফোকাস করে। মেডিকেল কলেজে কিছু ভালো বন্ধুও হয়ে যায় মেঘলার। যার মধ্যে আখি নামের একটি মেয়ের সাথে তার অনেক ঘনিষ্ঠতা হয়ে যায়।
অপরদিকে রিফাতও নিজের জিবনে এগিয়ে গেছে। মেঘলাকে যদিও এখনো ভুলতে পারে নি সে। অনেক যায়গায় মেঘলার খোজ করেছে কিন্তু কোন লাভ হয়নি। মুবিনকেও জিজ্ঞেস করেছিল কিন্তু মুবিন বলেছিল জানে না। রোদেলাই মুবিনকে বলতে নিষেধ করেছিল।
রিফাত মেঘলাকে ছাড়া এখন একদমই ভালো নেই। এখনো আফসোস করে নিজের কাজের জন্য। যদি মেঘলাকে দূরে ঠেলে না দিত তাহলে এরকম কিছুই হতো না। এভাবে মেঘলার থেকে আলাদা হতে হতো না তাকে।
রিফাত এখন চেষ্টা করে কাজের মধ্যে ডুবে থেকে নিজের কষ্ট কমাতে। রোজিয়াও নিজের ছেলের এইরকম অবস্থা দেখে কষ্টে আছে। রিফাতের মুখের হাসি এখন যেন হারিয়ে গেছে।
সবকিছু আবার স্বাভাবিক হবে নাকি এভাবেই সবকিছু চলবে?
চলবে ইনশাআল্লাহ ✨
>>গতকাল রাত থেকে জ্বর হয়েছে। এই অবস্থায় বেশি লিখতে পারিনি। ছোট হওয়ার জন্য দুঃখিত।